সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- ২৭
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১৯ জুলাই, ২০১৭, ০৮:২৫:৫৮ রাত
দেওবন্দি ধারাঃ
তারপর ময়মনসিংহের বড় মাদরাসার একজন মুহাদ্দিস দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন, ‘অন্যান্য ফেরকাগুলির মতবাদ জানার পর সর্বশেষে দেওবন্দের আলোচনা হওয়াতে সুবিধা এই হল যে, এখন আমাদের ফিরকাবাজী সম্পর্কে বুঝে আসবে। বস্তুত দেওবন্দ হল ইসলামের জন্মলগ্ন থেকে জারি হওয়া মুলধারার শিক্ষা ব্যবস্থার উত্তর ধারক। বাহ্যত আমরা দেওবন্দীরা কোন শিরক বিদাত সৃষ্টি করিনি, আমরা শুধু অন্যান্য ফিরকাগুলির বিভিন্ন মতবাদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে ফেরকায় পরিণত হয়েছি। যেমন বেরেলভীরা বলে রাসূল (সাঃ) গায়েব জানেন ও নুরের সৃষ্টি, আমরা বলি রাসূল (সাঃ) গায়েব জানেন না এবং মাটির সৃষ্টি। মাওঃ মওদুদী বলেন, নবীগণের ছোট খাট গুনাহ হতে পারে এবং সাহাবাগণ মিয়ারে হক নয়, আমরা বলি নবীগণ মাসুম এবং সাহাবাগণ সমালোচনার উর্ধ্বে। আহলে হাদীস বলে, ইজমা কিয়াস শরীয়তের দলীল নয় এবং তাকলীদ জায়য নাই। আমরা বলি, ইজমা কিয়াস দলীল এবং তাকলীদ ওয়াজিব। সালাফিরা বলল, পীর মুরিদি, তাবিজ কবজ ইত্যাদি জায়েয নাই আমরা বললাম, জায়েয। এভাবেই অন্যান্যদের সাথে আমাদের মতান্তর ঘটে। আমাদের বাহ্যত কোন বিদাত নেই কিন্তু উহ্যত এমন দুইটি বিদাত আছে যা ইসলামের ভিত্তিই ধ্বংস করে দিয়েছে।
উদাহরণতঃ, একবার এক ছাত্র আমাকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা হুজুর কাদিয়ানিরা কাফের কেন? আমি বললাম, তারা কোরানের ‘খাতামুন নাবিয়্যিন- সর্বশেষ নবী’ এ দু’টি শব্দ অস্বীকার করে। ছেলেটা বলল, লক্ষ্য লক্ষ্য শব্দের মধ্যে মাত্র দুইটা শব্দ অস্বীকারে কী আসে যায়, সারা কোরান তো মানেই। তখন আমি বললাম, আরে মুর্খ সেই দুইটা শব্দের মধ্যেই তো সম্পূর্ণ ইসলাম নিহিত। কারণ মুহাম্মদ (সাঃ) কে শেষ নবী না মানার অর্থ হল আরো নবী আসবে, ওহী আসবে, নতুন শরীয়ত আসবে, তখন নবী দাবিদার ঘোষণা দিবে মুহাম্মদি শরীয়ত রহিত হয়ে গেছে, আর চলবে না। কাজেই ঐ দু’টি শব্দের মধ্যেই ইসলাম নিহিত। ঠিক একইভাবে আমরা দেওবন্দিরা যে উহ্য দু’টি বিদাত সৃষ্টি করেছি এর মধ্যেই ইসলাম ধ্বংসের বীজ নিহিত। আর সেই দু’টি বিদাত হল, ধর্ম শিক্ষা থেকে বিজ্ঞান শিক্ষা আলাদা করা ও ধর্ম শিক্ষাকে ভিক্ষা বৃত্তির উপর নির্ভরশীল করে দেয়া।
বিজ্ঞান শিক্ষা আলাদা করনঃ ধর্ম শিক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষার সমান গুরুত্ব, একসাথে উভয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে, বিভক্ত করা যাবে না। এটাই কোরানের নির্দেষ। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ ﴿البقرة: ١٢٩﴾
হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। (২: ১২৯)
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। (৬২: ২)
وَلَقَدْ آتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ أَنِ اشْكُرْ لِلَّهِ ﴿لقمان: ١٢﴾
আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (৩১: ১২)
رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ ﴿الشعراء: ٨٣﴾
হে আমার পালনকর্তা, আমাকে হিকমত দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর (২৬: ৮৩)
فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ وَكُلًّا آتَيْنَا حُكْمًا وَعِلْمًا ﴿الأنبياء: ٧٩﴾
অতঃপর আমি সুলায়মানকে সে ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি উভয়কে হিকমত ও জ্ঞান দান করেছিলাম। (২১: ৭৯)
أُولَٰئِكَ الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ﴿الأنعام: ٨٩﴾
তাদেরকেই আমি গ্রন্থ, হিকমত ও নবুয়ত দান করেছি। (৬: ৮৯
وَإِذْ عَلَّمْتُكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ
এবং যখন আমি তোমাকে গ্রন্থ, হিকমত, তওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছি। (৫: ১১০)
وَأَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ﴿النساء: ١١٣﴾
আল্লাহ আপনার প্রতি ঐশী গ্রন্থ ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। (৪: ১১৩
يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ ﴿آلعمران: ١٦٤﴾
তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। (৩: ১৬৪)
وَيُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ ﴿آلعمران: ٤٨﴾
আর তাকে তিনি শিখিয়ে দেবেন কিতাব, হিকমত, তওরাত, ইঞ্জিল। (৩: ৪৮)
كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ ﴿البقرة: ١٥١﴾
যেমন, আমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিনি তোমাদের নিকট আমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও হিকমত। (২: ১৫১)
উল্লেখিত প্রত্যেকটা আয়াতে হিকমত অর্থ বিজ্ঞান, অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। আর কিতাব অর্থ ধর্মীয় জ্ঞান ও বিজ্ঞান উভয়টাই। কারণ কিতাব মানে কোরানই হচ্ছে সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের আধার। কাজেই কোরানের নির্দেশ হচ্ছে ধর্মীয় জ্ঞান ও বিজ্ঞান উভয়টাই শিখতে হবে। তখন একজন আলেম দাঁড়িয়ে বলল, কোরানের হিকমত অর্থ বিজ্ঞান নয় তাফসীর অর্থাৎ তাফসীর শিখতে হবে। তখন বক্তা রাগতঃ স্বরে বলল, হয় আপনি মুর্খ অথবা জেনে বুঝে একটা মিথ্যা দাবী পেশ করলেন। কারণ ইরশাদ হচ্ছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَلِمَةُ الْحِكْمَةِ ضَالَّةُ الْمُؤْمِنِ فَحَيْثُ وَجَدَهَا فَهُوَ أَحَقُّ بِهَا»
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, হিকমতের কথা (বিজ্ঞানের কথা) মুমিনের হারানো সম্পদ, যেখানেই তা পাওয়া যাবে মুসলমান তার শ্রেষ্ঠ হকদার। মুহাদ্দিসিনে কেরাম এর ব্যাখ্যায় বলেছেন-
فاطلب ضالّتك ولو فى أَهل الشرك" أَى المؤمن يلتقطها حيث وجدها، لاستحقاقه إِياها.
তোমার হারানো সম্পদ অন্বেষণ কর যদিও মুশরিকের কাছে হউক না কেন। অর্থাৎ মুসলমান বিজ্ঞানের কথা যেখানে পাবে সেখান থেকে কুড়িয়ে আনবে, কারণ সেই উহার সর্বাধিক হক্বদার।
মোট কথা রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ হচ্ছে মুসলমানই একমাত্র বিজ্ঞানের হকদার। কিন্তু নতুন আবিস্কারের কোন তত্ত্ব ও তথ্য অমুসলিমদের কাছে পাওয়া গেলে নিজের হারানো সম্পদের মত তা নিয়ে আসবে। অর্থাৎ সর্বদা বিজ্ঞান চর্চা করবে। কিন্তু আপনার কথা মত বুঝা যাচ্ছে অমুসলিমের কাছে হিকমত মানে তাফসীর পাওয়া গেছে তার কাছেই শিখতে হবে। সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠল আর আলেম সাহেব লজ্বা পেয়ে গেলেন।
যাই হউক, অভিধান বেত্তাদের সর্ব সম্মত অভিমত হিকমত অর্থ তথ্য ও তত্ত্ব অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। কিন্তু যদি এর অর্থ তাফসীর ধরে নেয়া হয় তাহলেও তো ঠিক আছে। কারণ কোরান হল সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎস। কাজেই প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান না জানলে তো আপনি কোরানের তাফসীর করতে পারবেন না। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল অসংখ্য আয়াত আছে, সংক্ষেপের খাতিরে আমি একটা উল্লেখ করছি। যেমন –
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ ﴿البقرة: ١٦٤﴾
নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং সমুদ্রে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে। আর আল্লাহ তা’ আলা আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব করে তুলেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে এবং মেঘমালার যা তাঁরই হুকুমের অধীনে আসমান ও যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই সে সমস্ত বিষয়ের মাঝে নিদর্শন রয়েছে বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের জন্যে। (২: ১৬৪)
অত্র আয়াতে উল্লেখিত রাত দিনের আবর্তন বুঝতে হলে জ্যোতির্বিজ্ঞান জানতে হবে। সমুদ্রে ভাসমান জলযান- এটা সমুদ্র বিজ্ঞান। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষন- এটা জলবায়ু বিজ্ঞান। আকাশে মেঘমালার ঘুর্নন এবং বাতাসের দিক পরিবর্তন- এটা আবহাওয়া বিজ্ঞান। কাজেই এখন আমার প্রশ্ন হল, কোরান বা তাফসীরের একজন শিক্ষক যদি জ্যোতির্বিজ্ঞান, সমুদ্র বিজ্ঞান, জলবায়ু বিজ্ঞান ইত্যাদি না জানেন তাহলে আয়াতটি তিনি ছাত্রদেরকে কী করে বুঝাবেন, আর কী বলবেন? নাকি মুর্খ মানুষের মত ছাত্রদের বলবেন, দেখ দেখ আল্লাহ্র কত বড় কুদরত সমুদ্রে নৌকা ডুবে না, কেমন সুন্দর রাত দিন হয়, বৈশাখে উত্তর থেকে আর আশ্বিন কার্তিকে দক্ষিন থেকে বাতাস আসে, আকাশ থেকে কী চমৎকার বৃষ্টি আসে। হাঁ বর্তমানে এমনটাই হচ্ছে, কোরানের শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে মুর্খের মত এমন গাজাখুরি বক্তব্যই শুনায়। আর এ জন্যই ইসলাম ও উম্মাহর এ পতন হয়েছে।অথচ কোরান শিক্ষকের কর্তব্য হচ্ছে ঐসব বিষয়গুলি কেন ঘটে- সে সবের তথ্য ও তত্ত্ব ছাত্রদের জানানো। এটাই বিজ্ঞান, এটাই তাফসীর। কাজেই প্রমাণিত হল, বিজ্ঞান শিক্ষা ও অনুসন্ধান মুসলমানদের উপর ফরয। কারণ বিজ্ঞান ছাড়া কোরান বুঝা সম্ভব নয়।
তখন একজন ছাত্র প্রশ্ন করল, আচ্ছা হুজুর বিজ্ঞান তো অন্যরা শিখছে মুসলমানরাও শিখছে, তাহলে মাদরাসা ছাত্রদের শিখতে হবে কেন? বক্তা উত্তর দিলেন, কোটি টাকা দামের প্রশ্ন, এটা পরিক্ষিত সত্য যে, জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যে জাতি উন্নত থাকে তারাই পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেয়। যেমন মুসলমানরা যতদিন বিজ্ঞানের সাধক ছিল ততদিন তারাই পৃথিবীর শাসক ছিল কিন্তু এক সময় পশ্চিমারা মুসলমানদের জ্ঞান বিজ্ঞান ধারন করে গা ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠল, বিশ্ব নেতৃত্ব দখল করল। আর মুসলমানরা বিজ্ঞান চর্চা বাদ দিয়ে ধর্মীয় অতিবিশ্লেষন, ফিরকাবাজীর মত দাঙ্গা হাঙ্গামা ও হানাহানিতে লিপ্ত হল এবং দাস জাতিতে পরিণত হল। আবার মুসলমানদের যে অংশটা বিজ্ঞান শিখছে ও চর্চা করছে তাদের ধর্মীয় জ্ঞান নাই। কোরানের জ্ঞান নাই বিধায় তারা আবিস্কার উদ্ভাবনে অবদান রাখতে পারছে না। বিজ্ঞান চর্চার জন্য বিজ্ঞান ও কোরানের জ্ঞান উভয়টাই থাকতে হবে। অর্থাৎ মাদরাসায় জ্ঞান বিজ্ঞান পাঠ্যভুক্ত করতে হবে। কাজেই আমাদের সর্বাত্মক দাবী হল, জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখা আরবী মাধ্যমে আফগান থেকে আরাকান পর্যন্ত পাঠ্যভুক্ত করা হউক।
আবার দেওবন্দিদের ইসলাম ধ্বংসের দ্বিতীয় হাতিয়ার হল মাদরাসা শিক্ষাকে ভিক্ষা বৃত্তির উপর নির্ভরশীল করে দেয়া এবং এ শিক্ষায় জাতীয় খেদমত তথা চাকরি নকরির সুযোগ সুবিধা না থাকা। একজন দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া উপায় কি, সরকার তো এগুলি নিবে না। মুহাদ্দিস সাহেব উত্তর দিলেন, ভুলটা হয়েছে গোড়ায়, ইংরেজ চলে যাওয়ার পর আলেমদের উচিত ছিল সরকারে অংশগ্রহন করা, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলামাইজেশন করা, ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা আইন সব কিছু বাতিল করে ইসলামী বিধি বিধান প্রয়োগ করা। কিন্তু তখন তারা উদ্যোগী হয়নি বিধায় আজ ইসলাম ও উম্মাহর এই পতন। ( খিলাফত ইশতিহারে বিস্তারিত আসছে)।
আরেক জন দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, বুঝলাম এ দুটি কারণে মুসলমানদের ক্ষতি হচ্ছে কিন্তু তাই বলে বিদাত হবে কেন আর এ থেকে মুক্তির উপায়ই বা কি? মুহাদ্দিস সাহেব উত্তর দিলেন, বিদাত বলা হয় যা রাসূল (শাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না পরবর্তিতে জন্ম নিয়েছে এবং সওয়াবের নিয়তে অনুশীলন করা হয়। এখন বাস্তবতা হল, ইসলামের জন্ম থেকে ইংরেজ আমল পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা ও বিজ্ঞান শিক্ষা আলাদা ছিল না, এক সাথেই ছিল। আবার মুসলিম দুনিয়ার কোন দেশে কোন কালে ইসলামী শিক্ষিতরা সরকারী চাকরি করতে পারে না এমন নযির নেই। অথচ আমরা দেওবন্দিরা এ দুটি বিষয় সওয়াবের নিয়তে পালন করে যাচ্ছি বিধায় এগুলি বিদাত।
আর এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় হল, আফগান থেকে আরাকান পর্যন্ত সকল কওমি ও আলীয়া মাদরাসায় আরবী মাধ্যমে জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখা কলেজ ভার্সিটির ন্যায় পাঠ্য করে দিতে হবে। আর তজ্জন্য ইসলামপন্থীদের ক্ষমতায় যেতে হবে। আর ক্ষমতায় যেতে হলে ঐক্য হতে হবে। কাজেই দেওবন্দিদের পক্ষ থেকে আমি ঐক্যের ডাক দিলাম। কওমি মাদরাসার সকল ছাত্রের প্রতি আমার আহ্বান, তোমরা ছাত্র শিবির, ছাত্র সেনা, ছাত্র মজলিস ইত্যাদি সংগঠনের ছাত্রদের সাথে গলাগলি কর কোলাকোলি কর, বন্ধুত্ব কর, ঐক্যের বাঁধন দৃঢ় কর। তাহলেই তোমরা বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ পাবে, ভিক্ষাবৃত্তি হতে মুক্তি পাবে, ক্ষমতার আসনে অভিষিক্ত হতে পারবে এবং পরকালিন সাফল্য নিশ্চিত হবে। অন্যথায় তোমাদের ইহকাল পরকাল উভয়টাই ধ্বংস হবে। অনন্তর তোমাদের কোন আলেম আল্লামা উস্তাদ যদি ঐক্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে জানবে সে সাক্ষাৎ আযাযিল, তোমাদের ইহকাল পরকাল ধ্বংস করতে চায়। কাজেই এমন শয়তানকে পাঁচশ গজ মাটির নিচে পুতে ফেলবে, যাতে কিয়ামত পর্যন্ত কোন ফেরকাবাজ মাথা তুলে দাঁড়াতে সাহস না পায়। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন’ বলে তিনি বক্তব্য শেষ করলেন।
বিষয়: রাজনীতি
৮০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন