সত্য সমাগত মিত্যা অপসৃত- ২৩

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১৪ জুলাই, ২০১৭, ০৩:০৪:৫৬ দুপুর

আলেম সমাজের কর্মকান্ডের পর্যালোচনাঃ

তারপর মাওঃ মোজাহিদ বলল, ফিরকাবাজী সম্পর্কে এ পর্যন্ত কোরান হাদীসের আলোচনায় সন্দেহাতিতভাবে প্রমানিত হল যে, ফিরকাবাজরা কাফের। তবে তারা কাফেরে জাহেদ বা পুর্নাংগ কাফের নয়, আংশিক কাফের। কারণ ঐক্য ফরয ও বিভক্তি হারাম, এই ফরয ও হারাম উপেক্ষা করে ফিরকাবাজিতে লিপ্ত হওয়ার কারণে তারা কাফেরে পরিণত হল। যেমন নামায রোযা হজ্ব যাকাত ইত্যাদি ফরয, এসবের কোন একটা অস্বিকার করলে মুসলমান কাফের হয়ে যায়, তদ্রুপ ঐক্যের ফরযিয়্যত অস্বিকার করলে কাফের হয়ে যায়। আবার এটাও প্রমানিত হল যে, ফিরকাবাজ আলেমরা আল্লাহ রাসূল ইসলাম ও উম্মাহর দুষমন। আল্লাহ রাসূল (সাঃ) এর দুষমন এজন্য যে, তারা ফিরকা সম্পর্কে কোরান হাদীসের নির্দেশ তো মানছেই না বরং উল্টো আমল করছে। আবার এরাই ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে। কারণটা পরিস্কার, আজ যদি তারা ফিরকাবাজি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকত, ইসলাম প্রদত্ত মানবাধিকারের বিধানগুলি প্রচার করত এবং ক্ষমতায় থাকত বা থাকার চেষ্টা করত তাহলে ইসলাম ও উম্মাহর এমন লাঞ্চনাদায়ক পতন ঘটত না, আলেমদেরও জঙ্গি মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি অবিধা নিয়ে অভিশপ্ত জীবন যাপন করতে হত না।

যাই হউক, এতক্ষন আমরা কোরান হাদীসের আলোকে ফিরকাবাজী নিয়ে আলোচনা করেছি, এখন বাস্তবতার আলোকে আলেমদের কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করব। রাসূল (সাঃ) এর পর আর কোন নবী রাসূল বা নতুন শরীয়ত আসবে না, এ শরীয়ত কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে যেহেতু কোন নবী রাসূল আসবেন না বিধায় মানুষ গুমরাহ হয়ে যাবে, কোরান সুন্নাহ থেকে দূরে সরে যাবে, তখন তাদেরকে হেদায়েতের পথে কে ডাকবে, দ্বীনের পথে কে ফিরিয়ে আনবে, কে এই মহান দায়িত্ব পালন করবে? এজন্যই রাসূল (সাঃ) উম্মতের আলেমদের উপর এ দায়িত্ব অর্পন করে গেছেন। যেমন তিনি বলেন, .العلماء ورثة انبياء..(আলেমরা নবীদের ওয়ারিশ)। কাজেই আলেমগন নবী রাসুলের দায়িত্ব পালন করবেন, মানুষকে কোরান সুন্নাহর সঠিক পথে চালাবেন, কোনরুপ ইফরাত তাফরীত করবেন না।

কিন্তু খালি চোখেই দেখা যায় তারা চরমভাবে ইফরাত তাফরিত করেছেন। ইফরাত শব্দের অর্থ হলো বাড়াবাড়ি করা, অতিরিক্ত করা, সীমালঙ্ঘন করা, চরমে যাওয়া। পরিভাষায় ইসলামের মধ্যে কিছু সংযোজন করা, মানে বিদাত সৃষ্টি করা। এসম্পর্কে সামনের ‘বিদাত সৃষ্টি ও ফিরকার জন্ম’ অধ্যায়ে আলোচনা করব। আর তাফরীত অর্থ শিথিলতা, শৈথিল্য, অবহেলা। পরিভাষায় শরীয়তের কোন বিধানকে বাদ দেয়া, সংকোচিত করা, গুরুত্ব না দেয়া, প্রকাশ না করা, জনগনের মাঝে প্রচার না করা। এখন বাস্তবতায় আমরা দেখতে পাই আলেমগন তাফরীত করেছেন। যেমন-

কিতমানে ইলমঃ কিতমানে ইলম অর্থ কোরান হাদীসের কোন বিধান গোপন রাখা, যেমন তারা ফিরকা, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থ ব্যবস্থা বিচার ব্যবস্থা, উম্মাহ ও মানবাধিকার সংক্রান্ত কোরান হাদিসের মৌলিক বিধানগুলি গোপন রাখে। মসজিদ, মাদরাসায়, ওয়াজ মাহফিল, সভা সেমিনার, টকশো, গ্রহ্ন রচনা ইত্যাদি কোন মাধ্যমে প্রকাশ করে না। অথচ ফেরকাগুলি পরস্পরের কুৎসা রটনা ও গালাগালির ক্ষেত্রে সকল মিডিয়া মাধ্যম ব্যবহার করে। প্রত্যেক ফিরকার নিজেদের মতবাদ প্রচারের জন্য নিজস্ব পত্র পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও আলাদা প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে। যেমন জামাতের জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির পত্রিকা, টিভি চ্যানেল (বর্তমানে বন্ধ) ও কয়েকটা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আছে। দেওবন্দিদের অনেকগুলি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও পত্র পত্রিকা আছে। তাবলীগের আছে, চরমোনাই পীরের আছে, তরিকতের আছে, সুন্নিদের আছে, হিজবুত তাওহীদের আছে, হিযবুত তাহরিরের আছে, সালাফি- আহলে হাদিসের আছে। অর্থাৎ ছোট হউক আর বড় হউক প্রত্যেক ফেরকার মতবাদ প্রচারের জন্য বিভিন্ন মুখি মিডিয়া মাধ্যম আছে। কিন্তু যা নাই সেটা হল উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটা সিঙ্গেল কোন মিডিয়া মাধ্যমও নাই। ফিরকাবাজরা নিজেদের মিডিয়া মাধ্যমে তাদের মতবাদ প্রচার করে কিন্তু ইসলামের ফরয যেসব বিষয় তা প্রচার করে না, গোপন রাখে, উপেক্ষা করে, তাফরীত করে, সেসবের মধ্যে কিছু তুলে ধরলাম।

১। ফিরকাবাজীর বিধানঃ- ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়ের মধ্যে অন্যতম বিষয় হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ঐক্যবদ্ধ ভাবে তারা আল্লাহ্‌র দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবে। কোরানের অসংখ্য আয়াত দ্বারা ঐক্য ফরয এবং বিভক্তি হারাম প্রমাণিত। কিন্তু আলেম সমাজ এসব আয়াত গোপন রেখেছেন। এ সম্পর্কে পুর্বে যথেষ্ট আলোচনা গত হয়েছে।

৩। রাষ্ট্র ব্যবস্থা/ ইসলাম প্রতিষ্ঠা/ খিলাফতঃ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা ফরয। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-

ۚوَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ [٥:٤ ]

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ [٥:٤٧]

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٥:٤٥]

أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ [٥:٥٠]

১। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, তারাই কাফের। ২। যারা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ি রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, তারাই ফাসেক।

৩। যারা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ি রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, তারাই জালেম।

৪। তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?

ব্যাখ্যাঃ হা- কাফ-মিম- মুলাক্ষরের মাসদার বা ক্রিয়ামুল যদি হিকমত আসে তাহলে এর অর্থ হবে জ্ঞান- বিজ্ঞান। আর যদি হুকমুন, হুকুমুন, হুকুমাতুন আসে তাহলে অর্থ হবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। কাজেই হুকুমত দ্বারা শুধু বিচার ফয়সালা অর্থ গ্রহণ করা মারাত্নক ভুল। যেমন ইসলামী হুকুমত বলতে শুধু বিচার ব্যবস্থা বুঝায় না বরং রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মকান্ড ইসলামী বিধান মোতাবেক পরিচালিত হওয়া বুঝায়।

অর্থব্যবস্থাঃ রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক সরকারের পোস্য। সরকার সক্ষমদের দেশে বা বিদেশে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করবে আর অক্ষম মুস্তাদআফদের রাষ্ট্রীয় ভাতা দিয়ে প্রতিপালন করবে। আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি হিসাবে খলীফা বা রাষ্ট্র প্রধান এ দায়িত্ব পালন করবে। আর মুস্তাদআফ গোস্টিকে প্রতিপালনের জন্য আল্লাহ তা’লা পার্যায়ক্রমে তিনটি অর্থব্যবস্থা প্রদান করেছেন- যাকাত, ইনফাক ও ইসলামী সমাজতন্ত্র।

১। যাকাতঃ আলেমগণ শুধু যাকাতের কথা মুখে বললেও বাকী দুটি বর্জন করেছেন। কারণ, বস্তুত ইসলামী অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে অনেক আলেমরই কোন ধারনা নাই। এজন্য তারা শুধু যাকাতের কথা বলে আর বাকি দুটির কথা কিছুই বলে না। আর যাকাতের কথা শুধু মুখে বলে কিন্তু কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয় না। অথচ কোরানে নামাযের কথা এসেছে ৮২ বার আর যাকাতের কথা এসেছে ৯২ বার। যেসব আয়াতে নামাযের কথা এসেছে সাথে সাথে যাকাতের কথাও এসেছে। অন্যান্য আয়াতে অতিরিক্ত যাকাত ও ইনফাকের কথা এসেছে। এতদসত্ত্বেও আলেমরা ওয়াজ নসিহত করে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে নামাযের ব্যবস্থা করেছেন। এটা খুবই আনন্দের বিষয়।

কিন্তু ততোধিক দুঃখের বিষয় হল যাকাত আদায়ের জন্য তারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। ইসলামের নির্দেশ মতে ৮২ টা মসজিদ হলে ৯২ টা যাকাত আদায়ের প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত ছিল। অন্তত প্রত্যেক মসজিদের ইমাম সাবের উপর ফরয ছিল নিজ নিজ মহল্লার যাকাত উসুল করে দরিদ্রদের মধ্যে মিলি বন্টনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা তা না করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে লিল্লাহ ফেৎরা ও চাদা কুড়ায়। এর কারণ হল নামায পড়লে তাগুতের সাথে কোন সংঘর্ষ বাধে না কিন্তু যাকাত চাইতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এ জন্যই তারা আল্লাহ্‌র বিধান উপেক্ষা করে, গরীবের হক নষ্ট করে তাগুতের আনুগত্য করে চলেছে। এই ভাবে তারা ইসলাম ধ্বংসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

২। ইনফাকঃ যাকাতে প্রয়োজন না মিটলে বিত্তশালিদের থেকে উশর, খুমুস, খারাজ ইত্যাদি উসুল করে দরিদ্র শ্রেণীর প্রয়োজন মিটাতে হবে। এ সম্পর্কে অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন –

: لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ

কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর আল্লাহ তা জানেন। (৩: ৯২

২। ইসলামী সমাজতন্ত্রঃ যাকাত ও ইনফাকেও যদি দরিদ্রের প্রয়োজন না মিটে তাহলে ইসলামী সমাজতন্ত্র। যেমন-

وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ [٩:٣٤]

আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।

وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ ﴿البقرة: ٢١٩﴾

আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার। (২: ২১৯)

বিচার ব্যবস্থাঃ আল্লাহ তা’লা বলেন-

ۖ فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ

অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।

وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَن بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ [٥:٤٩]

আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন-যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন। অনন্তর যদি তার মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে নিন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের গোনাহের কিছু শাস্তি দিতেই চেয়েছেন। মানুষের মধ্যে অনেকেই নাফরমান।

أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ [٥:٥٠]

তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?

وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿البقرة: ١٨٨﴾

তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না। (২: ১৮৮)

ব্যাখ্যাঃ বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে যে পরিমাণ খুন,ধর্ষণ ও নারী নিযার্তন হচ্ছে তার শত ভাগের এক ভাগেরও বিচার হচ্ছে না। ফলে আকছর দেখা যায়, নিহত ব্যক্তির পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে পথে বসছে। ধর্ষিতা বা এসিড আক্রান্তা মেয়েটির চিকিৎসা খরচ ও মামলার খরচ মিটাতে তার পরিবার সর্বশ্বান্ত হচ্ছে। অথচ এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান মতে দিয়ত বা ক্ষতিপূরণ পেলে নিহত ব্যক্তির পরিবার ও ধর্ষিতা মেয়েটির অন্তত শেষ রক্ষা হত। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে মানবধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে অথচ আলেম সমাজ কিছুই বলছে না। কিতমানে ইলম করছে।

আর কিতমানে ইলম সম্পর্কে আল্লাহ তা’লা বলেন,

) وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ ﴿آل‌عمران: ١٨٧﴾

আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তা মানুষের নিকট বর্ণনা করবে এবং গোপন করবে না, তখন তারা সে প্রতিজ্ঞাকে নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল আর তার কেনা-বেচা করল সামান্য মূল্যের বিনিময়ে। সুতরাং কতই না মন্দ তাদের এ বেচা-কেনা। (৩: ১৮৭)

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُونَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿آل‌عمران: ٧١﴾

হে আহলে কিতাবগণ, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশ্রণ করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ তোমরা তা জান। (৩: ৭১)

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴿البقرة: ١٧٤﴾

নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। (২: ১৭৪)

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ ﴿البقرة: ١٥٩﴾

নিশ্চয় যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত তথ্য এবং হেদায়েতের কথা নাযিল করেছি মানুষের জন্য কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণের ও। (২: ১৫৯)

وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿البقرة: ٤٢﴾

তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বে সত্যকে তোমরা গোপন করো না। (২: ৪২)

উপরোক্ত আয়াতসমুহে আল্লাহ তালা কিতমানে ইলমকারীদের অর্থাৎ যারা জেনে বুঝে কোরান হাদীসের বিধান গোপন রাখে তাদেরকে অভিশম্পাত করেছেন, কঠিন শাস্তির সংবাদ দিয়েছেন। এখন বাস্তবতায় আমরা দেখতে পাই জামাত ব্রাদার হুড ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছে যদিও তাদের অনেক ভুল ভ্রান্তি আছে। আর দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ইংরেজ তাড়িয়ে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য। উত্তরাধিকারী হিসাবে দেওবন্দিদের মনে এমন একটা চেতনা আছে বটে কিন্তু তজ্জন্য তারা কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয় না। ইসলাম প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাদের আন্তরিকতা থাকলে ফিরকাবাজী না করে জামাতের সাথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে পারত, কিন্তু তা তারা করে না। এছাড়া অন্যান্য ফিরকাগুলি ইসলাম প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কিছুই বলে না। এমনকি তাবলীগী ও সুফিবাদীরা তো ইসলামী রাজনীতির নামই শুনতে পারে না। এরা জিহাদ ও দ্বীন প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত কোরানের আয়াতগুলি বর্জন করেছে। কাজেই এরা কিভাবে মুসলমান গন্য হবে তা আমার বুঝে আসে না। এদের সম্পর্কেই আল্লাহ তালা বলেন-

ْ أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ -

তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন। (২: ৮৫)

তারপর মাওঃ মোজাহিদ বলল, ইসলাম হল দুটি হক বা অধিকারের সমষ্টি- হক্বুল্লাহ ও হক্বুল ইবাদ। হক্বুল্লাহ হল নামায রোযা তাসবীহ তাহলীল ইত্যাদি। আর এসব পালন করলে দাজ্জাল ও তাগুতের কোন মাথা ব্যাথা নাই বরং তারাও এটাই চায় যে, মুসলমানরা মসজিদ মাদরাসায় আবদ্ধ থাকবে, নামায রোযায় ব্যস্ত থাকবে, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে নাক গলাবে না। আর হক্বুল ইবাদ হল অর্থনৈতিক সাম্য, ন্যায় বিচার ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা। তজ্জন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। এখানেই ইসলামের সাথে দাজ্জাল ও তাগুতের সংঘর্ষ। আর ইসলাম পন্থীরাও এখানে দুভাগ হয়ে গেছে। একদল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেমন জামাত ব্রাদার হুড ও দেওবন্দিরা। এরা হল দাজ্জাল ও তাগুতের শত্রু। আরেক দল শুধু মসজিদ ও খানকায় পড়ে থাকবে, এরা ইসলামী হুকুমত চায় না। এরা হল দাজ্জালের বশংবদ। যেমন তাবলীগী, সুফীবাদী, বেরেলভী ও অন্যরা। এই শ্রেণীটা জিহাদ ও দ্বীন প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত আয়াতগুলি বর্জন করেছে, গোপন রাখছে।

এখন প্রশ্ন হল, যারা ইসলাম বিকৃত করেছে কোরানের বিধান গোপন রাখছে, জিহাদ ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার আয়াতগুলি বর্জন করেছে, ফিরকাবাজী করে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে তাদের বিচার প্রয়োজন কিনা, সবাই জবাব দিন। সকলেই বলল, হাঁ হাঁ তাদের বিচার হওয়া উচিত। কাজেই আমি তাদের বিচারের আবেদন জানাচ্ছি।

ইহুদী নাসারার দৃষ্টান্তঃ-

ইহুদী-খৃষ্ট পোরুহিত, রাব্বাইরা যেমন তাওরাত ইঞ্জিনের বিধান বিকৃত করে, গোপন করে আল্লাহ্‌র দ্বীনকে ধ্বংস করেছিল, ঠিক একই ভাবে আলেম সমাজও মানবাধিকার বিচার ও ফিরকাবাজী সম্পর্কে কোরান হাদীসের বিধানগুলি গোপন করে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ ধ্বংস করছে। বিশেষত খোদার দ্বীনকে বিকৃত করে, বিভিন্ন ফিরকার জন্ম দিয়ে রাসূলের মূল ইসলামটাকেই নষ্ট করে দিয়েছে।

আজ যদি প্রশ্ন করা হয়-বস্তুবাদ, নাস্তিক্যবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ-এর প্রবর্তক কারা বা কাদের অপকর্মের কারণে পৃথিবীতে এসব মতবাদ ছড়িয়ে পড়েছে ? এর জন্য কারা দায়ী ? অভিজ্ঞ ব্যক্তি মাত্রই এক কথায় জবাব দিবে- এর জন্য ইউরোপীয় খৃষ্টান পোরুহিতরা দায়ী। কারণ পোরুহিতরা তাদের ধর্মগ্রন্থ এতটাই বিকৃত করেছিল যে, এখনো খৃষ্টানরা গর্বের সাথে বলে বেড়ায়- বাইবেলের চব্বিশ হাজার সংস্করণ পাওয়া যায়- যার একটার সাথে অন্যটার কোন মিল নেই। এখানেই বিকৃতির পরিমাণটা বুঝা যায়।

খৃষ্ট ধর্মের মুরুব্বিরা বাইবেলে ইতিহাস, ভুগোল ও বিজ্ঞান সংক্রান্ত এমনসব তত্ত্ব ও তথ্য ঢুকিয়ে দিয়েছিল- যেগুলি তৎকালীন সময় পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়েছিল বা মানুষের বোধ-বিশ্বাস অনুযায়ী ছিল। তাছাড়া তৎকালীন সমাজ ও শিক্ষা অনুযায়ী জ্ঞান-বিজ্ঞান সংক্রান্ত যেসব কথা প্রচলিত ছিল –সেসব বাইবেলের টিকা-টিপ্পনি বা ব্যাখ্যায় তারা জুরে দিয়েছিল। আর এসব কল্প কাহিনীকে .christian topography নাম দিয়ে তাদের শিক্ষার মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছিল। অথচ এসব বিষয়ের ঐশী কোন দলীল ছিল না। আর খৃষ্ট জগতে এ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হল, যারা মানত না তাদেরকে ধর্মদ্রোহি কাফের আখ্যা দিয়ে শাস্তি দেয়া হত। গীর্জা নিয়ন্ত্রিত ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতিত বিজ্ঞান চর্চার কোন সুযোগ ছিল না।

কিন্তু স্পেন ও ক্রুসেড যুদ্ধের মাধ্যমে ইউরোপ মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হল। ফলে তারাও মুক্ত চিন্তা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা শুরু করল। আর বাস্তবতায় দেখা গেল তাদের অভিজ্ঞতা ও আবিষ্কার উদ্ভাবনগুলি বিকৃত ধর্ম গ্রন্থের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। ফলে গির্জা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। শুরু হয়ে গেল গীর্জা আর দার্শনিক বিজ্ঞানিদের মধ্যে সংঘাত। তাদেরকে ধর্মদ্রোহি নাস্তিক আখ্যা দিয়ে শাস্তির জন্য গীর্জা court of inquisition গঠন করল। এই অভিশপ্ত কোর্ট ১৪৮১ থেকে ১৮০১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত তিন লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ৩২ হাজার মানুষকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারে, যার মধ্যে বিজ্ঞানী ব্রুনো ও গ্যালিলিউও ছিলেন।

ব্রুনোর অপরাধ ছিল, এই পৃথিবী ছাড়াও আরো পৃথিবী আছে- যেখানে অন্যান্য প্রাণীর বসবাস রয়েছে, তিনি এই মত পোষণ করতেন। ইঙ্কুইজিশন বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে এই সুপারিশসহ বিচারকদের হাতে অর্পন করেছিল যে, একে যেন খুবই লঘু শাস্তি প্রদান করা হয় এবং তার শরীর থেকে যেন এক ফোটা রক্ত মাটিতে না পড়ে। অর্থাৎ তাকে যেন জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। একইভাবে বিখ্যাত জোতির্বিদ গ্যালিলিওকে এ অপরাধে পুড়িয়ে মারা হয় যে তিনি বলতেন, পৃথিবী সুর্যের চারিদিকে ঘোরে।

পরিণতি যা হবার তাই হল। সমগ্র ইউরোপ গীর্জার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল, গোটা খৃষ্টান জগত নাস্তিকে পরিণত হলো। তারা ধর্মকে ভাগাড়ে ছুড়ে ফেলে নিজেদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি শিক্ষা ইত্যাদি সব কিছুই বস্তুবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতার চাঁচে ঢেলে সাজাল। আর এভাবেই খৃস্টীয় পোরুহিতদের অপকর্মের ফসল বস্তুবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ জন্ম নিল এবং বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ল। কাজেই বুঝা গেল, খৃস্টীয় পোরুহিতদের অপকর্মের কারণেই খৃষ্ট ধর্ম ধ্বংস হয়েছে।

তদ্রুপ মুসলিম আলেমদের অপকর্মের কারণে ইসলাম ধ্বংস হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে উভয় শ্রেণীর কর্ম পদ্ধতি বিপরীতমুখী। যেমন পাদ্রীরা মানুষের পাপ মোচনের ক্ষমতাধিকারী হয়ে মুলতঃ ইশ্বরের আসন দখল করে বসেছিল। গির্জার এতটাই ক্ষমতা ছিল যে, ১০৭৭ সালে পোপ হিল্ডার ভ্রান্ড সম্রাট চতুর্থ হেনরিকে নির্দেশ প্রদান করেন, তিনি যেন ক্যানোসা দুর্গে তার সামনে এসে হাযির হন। সম্রাট এসে নগ্ন পায়ে অবনত মস্তকে পোপের সামনে দাড়িয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অন্যদের সুপারিশে পোপ তাকে ক্ষমা করেন। এভাবে পোরুহিতরা অতুল ক্ষমতার অপব্যবহার করে যুলুম, নির্যাতন ও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে প্রকারান্তরে খৃষ্ট ধর্মকে কফিনে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। অথচ ইহুদি খৃষ্ট বা অন্য কোন ধর্মে এমন বিধান নাই যে, তাদের দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে পোরুহিতরা ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করবে। এরপরেও খৃষ্টান পোরুহিতরা সর্বময় ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করে ক্ষমতার অপ্যব্যবহার করে খৃষ্ট ধর্ম ধ্বংস করেছে।

পক্ষান্তরে ইসলাম প্রদত্ত ক্ষমতা বর্জন করে আলেমরা ইসলাম ধ্বংস করেছে। অর্থাৎ ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে খিলাফত ব্যবস্থার মাধ্যমে আলেমরা সর্বদা ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করবে। কিন্তু যেদিন উমাইয়্যারা খিলাফতকে রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত করল সেদিন থেকে আলেমরা খিলাফত ও ক্ষমতা নিজেদের উপর হারাম করে নিয়েছে এবং উম্মাহ ধ্বংসের দায়িত্ব ওয়াজিব করে নিয়েছে। তদুপরি আলেমগন যদি ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত ইসলামের চির শ্বাশ্বত সুন্দর বিধান গুলি মানুষের মধ্যে প্রচার-প্রসার ও প্রয়োগের ব্যাবস্থা করতেন তাহলে ইউরোপের বস্তুবাদ, ধর্মহিন ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ, নাস্তিক্যতাবাদ ইত্যাদিতে মুসলিম বিশ্ব আক্রান্ত হতে পারত না। কিন্তু আলেম নামের এই পোরুহিতরা নিজেদের প্রকৃত দায়িত্ব পালন না করে ফেরকাবাজি ও দলবাজি সৃষ্টি করে কিভাবে ইসলাম ধ্বংস করেছে এবং করছে তার কিছু সংক্ষিপ্ত নমুনা নিচে তুলে ধরা হল।

বাস্তবতার দর্পনে ইসলামিষ্টদের কর্মকান্ডঃ

মুসলিম জাতি বর্তমানে যে প্রলয়ের মুখোমুখি দাড়িয়ে- এর দায় আলেম সমাজ কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারবেন না। তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করছি।

আফগানিস্তানে রাশিয়ার পরাজয়ের পর তথাকার ইসলামী দল ও আলেমদের উচিত ছিল দেশের জনগণ এবং মুসলিম দেশগুলোর পরামর্শ এবং সমর্থনে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তা না করে তারা তালেবান জন্ম দিয়ে প্রতিপক্ষ মুসলমানদের হত্যা করে জনবিচ্ছিন্ন এবং মুসলিম দেশগুলির সমর্থনহীন একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করল। তারা আমেরিকার সাথে দ্বন্দে জড়িয়ে দেশ ও জাতির ধ্বংস ডেকে আনল। তদুপরি তালেবানরা জিহাদের নামে, ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে মুসলিম হত্যা অব্যাহত রাখল, কিন্তু ফিলিস্তিন, আরাকান চায়না তুর্কিস্থানসহ অন্যান্য মজলুম মুসলমানদের বেলায় তারা নীরব, শান্ত, সুবোধ বালকের ভূমিকা পালন করল।

সর্বশেষ তারা পেশোয়ারে প্রায় ১৫০ নিষ্পাপ শিশু হত্যার মত একটি কুৎসিত ঘটনার জন্ম দিল, তাও আবার ইসলামের নামে। তখন ভারত বর্ষের ইসলামী দল ও আলেম সমাজ হায় হায় করে উঠল না, তারা তালেবানদের নিয়ে বসল না, তারা বলল না, এটা ইসলামের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অপরাধ। কারণ ইসলাম একটি নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা সমগ্র মানব জাতিকে হত্যার সমান অপরাধ বলে রায় দিয়েছে। কাজেই তখন তালেবানদের উৎস দেওবন্দের আলেমগণ এবং উপমহাদেশে এ ধারার আলেমদের উচিত ছিল তালেবানদের নিয়ে বসে আলোচনা করে, জনগণকে সম্পৃক্ত করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক কর্মপন্থা অবলম্বন করা। কিন্তু ইসলামী দল ও আলেমগণ তা করেননি বিধায় ঐসব হত্যাকান্ডের দায় তারা এড়াতে পারেন না। কারণ প্রথমতঃ তালেবানের জন্ম দেওবন্দি ধারা থেকে, দ্বিতীয়তঃ এটা আমরে বিল মা’রুফের কাজ। তৃতীয়তঃ এটা খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ফরয কাজ।

১৯৯১ সালে বুশ সিনিয়র যখন কুয়েত দখলের অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করল, তখন মুসলিম দেশগুলির নেতৃবৃন্ধের উচিত ছিল, বুশকে থামিয়ে সাদ্দামকে সতর্ক করা- এ মুহুর্তে কুয়েত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার কর, অন্যথায় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব মিলে তোমাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করব। ভ্রাতৃঘাতি হানাহানিতে খাল কেটে কুমির আনার সুযোগ তোমাকে দেয়া হবে না। কিন্তু মুসলিম নেতারা নিজেদের ফরয দায়িত্ব পালন না করে বরং উম্মাহকে ধ্বংসের দায়িত্ব কাধে তুলে নিল। তারা সাদ্দামকে ধ্বংসের জন্য শত্রুকে নিজের ঘরে ডেকে আনল, এমনকি নিজেদের স্ত্রী-কন্যা-সম্পদ পর্যন্ত শত্রুর হাতে তুলে দিল।

নেতৃবৃন্ধের গাদ্দারির পর ইসলামী দল ও আলেম সমাজের উপর ফরযে আইন ছিল এ আত্নঘাতি কর্মকান্ড প্রতিহত করা। বিশেষত মক্কা মদিনার ইমামদের কর্তব্য ছিল, প্রত্যেক দেশের ইসলামী দল, জাতীয় ইমাম ও গন্যমান্য আলেমদের নিয়ে সম্মেলন করে তাদের মাধ্যমে সমগ্র মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করা। তারপর নিজেরাই অথবা প্রত্যেক দেশের জনগণের মাধ্যমে শাসকদের ঐক্যবদ্ধ করে বুশকে বিদায় জানিয়ে সাদ্দামের বিচার করা। ইসলামী দল ও আলেমগণ এ পদক্ষেপ নিলে তৎকালীন ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা এড়ানো যেত। কিন্তু তারা ফরয দায়িত্ব পালন করেন নাই বিধায় ঐ পাপের দায়ভার তাদের বহন করতে হবে এবং আল্লাহ্‌র কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

ইতিহাস সাক্ষি, ইউরোপ বারবার পোপের আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে। ১০৯৯ খৃষ্টাব্দে পোপ দ্বিতীয় আর্বানের আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ সম্মিলিত ইউরোপ ক্রুসেড পরিচালনা করেছিল, ফিলিস্তিনকে লোহিত সাগরে পরিণত করেছিল। সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী ১১৮৭ সালে খৃষ্টীয় ক্রুসেডারদের মারতে মারতে নাকের ডগায় দম নিয়ে আসেন এবং জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন। আর এ সংবাদ শুনে পোপ ৩য় আর্বান হার্ট এটাক করে মারা যান। তারপর পোপ ৭ম গ্রিগোরি আবার ক্রুসেডের ডাক দেন।

উসমানী খিলাফতের আমলে পোপের আহ্বানে সম্মিলিত ইউরোপীয় নৌবহর মুসলিম নৌবহর আক্রমণ করেছিল এবং পরাজিত হয়েছিল। আরো বিভিন্ন সময় তারা পোপের আহ্বানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। অথচ মুসলমানদের পোপ মক্কা মদিনার ইমামরা কোনদিন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব পালন করেনি। খৃস্টীয় পোপ মুসলমানদের আক্রমণ করার জন্য, ধ্বংস করার জন্য, খৃষ্টানদের একতাবদ্ধ করেছে কিন্তু মক্কা মদিনার ইমামরা আক্রমণ তো দুরের কথা, আক্রমণ প্রতিহত করতে, উম্মাহকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে কখনো ঐক্যের ডাক দেয়নি। অথচ খৃষ্ট ধর্ম এবং বাইবেলে এমন কোন বিধান নেই যে, খৃষ্টানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে বা পোপের উপর ধর্মিয়ভাবে এমন কোন নির্দেশনা নেই যে, ঈসায়ী জগতকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। কিন্তু এর পরেও যুগে যুগে পোপরা সে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পক্ষান্তরে ইসলাম ঐক্য ফরয ও বিভক্তি হারাম করেছে। আর আলেমদের উপর উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ রাখার দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে। হায় আফসোস, ইসলামের আলেমরা উল্টো দায়িত্ব পালন করছেন। তারা জাতিকে শত শত ফিরকায় বিভক্ত করে পরস্পরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছেন। এখন যোগপৎ তারা নিজেরা নিজেরা কামড়া কামড়ি করে তো ধ্বংস হচ্ছেই, সেই সুযোগে কাফেররা তাদেরকে ধ্বংসের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। বিশেষতঃ মক্কা মদিনার ইমামদের উপর ফরয ছিল উম্মতকে ঐক্যবদ্ধ করে এ ধ্বংসলীলা থেকে বাচানো। তারা অন্তত পোপদের নিকট থেকে শিক্ষা নিতে পারত। কিন্তু তারা তো জাতির ইমাম (নেতা) নয় বরং চাকরের দায়িত্ব পালন করছে। কয় টাকার বিনিময়ে চাকরি করছে, উম্মাহর কোন দায়িত্ব পালন করছে না- বিধায় আজ জাতি ধ্বংসের শেষ প্রান্তে উপনিত হয়েছে। কাজেই আমরা চাকর চাই না, ইমাম (নেতা) চাই, যারা উম্মাহকে নেতৃত্ব দিয়ে ঐক্যবদ্ধ করবে, জাতিকে রক্ষা করবে।

বুশ জুনিয়র ২০০১ সালে আবার ইরাক আক্রমণ করে। মার্কিন মুল্লুকের বশংবদ না হওয়ার কারণে সাদ্দামকে শয়তানের অক্ষ ঘোষণা দিয়ে, পরমাণু অস্ত্র মজুদের অপপ্রচার চালিয়ে ইরাকের উপর ধ্বংসলীলা চাপিয়ে দেয়া হয়। তখনো মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ যুদ্ধ মীমাংসার কোন উদ্যোগ তো নেয়ই নি বরং সৌদি আরব, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশগুলি কার আগে কে শত্রুদের নিজের দেশে জায়গা দিতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করল। ফলে রাসূল (সাঃ) যে পুন্য ভুমিতে মুশরিকের প্রবেশ হারাম করেছিলেন, রাসূলের স্মৃতিবিজড়িত জন্মভুমি সেই মক্কায় বসেই খৃষ্টানরা তার উম্মত ধ্বংস করল। ফের একবার ইরাক ধ্বংস স্তূপে পরিণত হল। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা পড়ল। মুসলমানদের ধন-সম্পদ, সহায়-সম্বল সব কিছুই ধ্বংস হল। অথচ তখন মক্কা মদিনার ইমাম ও আলেমগণসহ পৃথিবীর কোন আলেমই এ বর্বরতা প্রতিরোধের কোন উদ্যোগ গ্রহন করেন নি। কিন্তু এ আক্রমণ যদি ইউরোপে হত তাহলে নিশ্চয়ই পোপ খৃষ্টানদের ঐক্যবদ্ধ করে তা প্রতিহত করে দিত।। কিন্তু আলেম নাম ধারি ইসলামের পোরুহিতরা কোন দায়িত্বই পালন করলেন না বিধায় এ পাপের দায়ভার তাদের বহন করতে হবে।

ইরাক ধ্বংসের ষোল কলা পূর্ণ করে মোড়লরা চলে গেল। কিন্তু পশ্চিমারা জানে মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও সম্পদ ব্যতীত তাদের সভ্যতার চাকা অচল হয়ে যাবে বিধায় তারা সেখানে নিজেদের স্থায়ী স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষে আবার মুসলিম জগতকে আগ্নেয়গিরিতে পরিণত করল। শিয়া বনাম সুন্নী, গনতন্ত্র বনাম রাজতন্ত্র ইত্যাদির বিরোধ উস্কে দিয়ে চির সমৃদ্ধ আরব দেশগুলিকে ধ্বংস স্তূপে পরিণত করেছে। মিসরের নির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করে ইসরাইল পন্থী স্বৈর শাসককে ক্ষমতায় বসিয়েছে। ফলে ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, মিসর, লেবানন, কাতার, তিউনেসিয়া ইত্যাদি দেশগুলিতে আজ মুসলমানরা মানব বিপর্যয়ের সম্মুখিন হয়েছে। শিয়া, সুন্নী, রাজতন্ত্রী, গনতন্ত্রী একে অন্যের রক্ত পিপাসু হয়ে উঠেছে। এসব দেশে অন্যুন পনের লক্ষ মানুষ হত্যাযজ্ঞের স্বীকার হয়েছে। তছনছ হয়ে গেছে তাদের জীবন চক্র, ধুলিস্মাৎ হয়ে গেছে সহায়-সম্বল-সম্পদ, বাড়ি-ঘর।

বিত্তবান ধনি সমৃদ্ধ পরিবার গুলি বাস্তুহীন উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ বিভিন্ন দেশে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয়ের আশায় নিজেদের প্রিয় জন্মভুমি ছেড়ে মরুপথে, সমুদ্র পথে দেশ ছাড়ছে। হাজার হাজার মানুষের সলীল সমাধি রচিত হচ্ছে, নারী শিশুর লাশ সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসছে, জলজ ও বন্য প্রাণীর খাদ্য হচ্ছে। কেউ কেউ বিদেশ বিভুইয়ে অনাহারে অর্ধাহারে মারা পড়ছে। কেউ কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে জেলে ঢুকছে। ইরাক, সিরিয়া, ইয়ামেনে মহাকালের শ্রেষ্ঠ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জাতীসঙ্গের ভাষায় এ পরিস্থিতি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের চেয়েও আরো ভয়ঙ্কর। আবাল বৃদ্ধ বনিতা আর অসহায় মানবতার আর্তনাদে গলে যাচ্ছে কঠিন পাষাণ, কেঁপে উঠছে আকাশ কিন্তু গলছে না শুধু মুসলিম নিধনে উন্মত্ত ইহুদী- খৃষ্ট সৃষ্ট দুষ্ট চক্রের হৃদয়, গলছে না মুসলিম জাতির অভিশাপ আলেম সমাজ ও নেতৃবৃন্দের হৃদয়।

এখন প্রশ্ন হল, এ বিপর্যয় যদি ইউরোপে দেখা দিত তাহলে পোপ কি করত ? অবশ্যই পোপ সমগ্র খৃষ্ট জগতকে ঐক্যবদ্ধ করে তা প্রতিহত করত। কাজেই এখন আমাদের মূল প্রশ্নটা হলো, ইসলামী দল ও আলেম সমাজ কি তাদের দায়িত্ব পালন করছে? মক্কা মদিনা, আল আযহার, দেওবন্দ, তেহরান ইত্যাদি মুসলিম কেন্দ্রগুলির ঈমাম ও আলেমগণ কী মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রতি বা ও আই সি-এর প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছে যে, পাকাফগান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, মিসর ইত্যাদি দেশগুলির সমস্যা সমাধান কর, অন্যথায় আমরা জিহাদ ঘোষণা করব।

অথবা তারা আইসিস, তালেবান, বুকো হারাম, আলকায়েদা, সিসি, বাসার ও অন্যান্যদের নিয়ে কি বসেছে, আলোচনা করেছে? অথচ ইসলামী দল ও আলেমগণ এ পদক্ষেপ নিলে অবশ্যই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। তাও না হলে মুসলিম বিশ্বের ইসলামী দল ও আলেমদের নেতৃত্বে খিলাফত বা এ জাতীয় কোন সংস্থা গঠন করে পৃথিবীর সকল আলেমকে ঐক্যবদ্ধ করে, তাদের মাধ্যমে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে খুব সহজেই একতাবদ্ধ করতে পারতেন। আর তখন শুধু ঐসব সমস্যার সমাধানই হতো না বরং ইহুদী খৃষ্ট ও ব্রাহ্মন্য চক্রের গোলামি থেকে উম্মাহ মুক্তি পেত, বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিতও হতে পারত। কিন্তু না, আলেমরা তাদের উপর ফরয দায়িত্ব পালন করলেন না। তবে পালন করলেন হারাম দায়িত্ব, তারা শত শত ফেরকায় উম্মাহকে বিভক্ত করে ফিরকাবাজি করে, একে অন্যের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়ে জাতি ধ্বংসের কাজটি সুচারুরূপে আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।

কাজেই যারা উম্মাহকে রক্ষা করার ব্যাপারে কোন দায়িত্ব পালন করে না, পদক্ষেপ নেয় না, নিতে পারে না বরং উম্মাহ ধ্বংসের ষোল আনা উপকরণ যোগান দিয়েছে এবং দিয়ে যাচ্ছে, তারা কি উম্মাহর শত্রু না মিত্র, তাদেরকে উম্মাহর কি প্রয়োজন? মুসলিম জাতির জন্য বড় শত্রু কে, আলেম নামের এ পোরুহিতরা নাকি ইহুদী খৃষ্টান ও ব্রাহ্মন্য চক্র ? সবাই জবাব দিন। সকলেই জবাব দিল, ফিরকাবাজ আলেমরাই ইসলাম ও উম্মাহর আসল শত্রু। মোজাহিদ বলল, কাজেই আজ উম্মাহর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সর্ব বিধ্বংসি আলেমরা ঐক্যের পথে না এলে তাদেরকে প্রয়োজনে হত্যা করতে হবে, জাতিকে এদের অভিশাপ মুক্ত করতে হবে। পৃথিবীর দৈর্ঘ্যে প্রস্থে এদের নিঃশ্বাস হারাম করে তুলতে হবে। অন্যথায় এ জাতির মুক্তির দ্বিতীয় কোন পথ নেই। তদুপরি আলেম যালেম যে কেউ ঐক্যের পথে না এলে সে কাফের বলে গন্য হবে, তাকে হত্যা করা আবশ্যক। এটাই রাসূলের (সা) নির্দেশ—

20714 - أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلَاقَةَ، عَنْ عَرْفَجَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ خَرَجَ عَلَى أُمَّتِي وَهُمْ مُجْتَمِعُونَ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنَهُمْ فَاقْتُلُوهُ كَائِنًا مَنْ كَانَ»

নবী করীম (সাঃ) বলেন, ঐক্যবদ্ধ আমার উম্মতের বিরুদ্ধে যদি কেউ বের হয় এবং তাদের মধ্যে বিভক্তি আনয়নের চেষ্টা করে তাহলে তোমরা তাকে হত্যা কর। সে যত বড় কেউ হউক না কেন?

অনন্তর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্থ মুসলিম দেশগুলির শরনার্থী আশ্রয়ের জন্য খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ শর্ত দিয়েছে। ফলে শত শত রিফিউজি জীবন বাঁচানোর তাকিদে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। আর ইসলামের বিধান হচ্ছে কেউ ইসলাম ত্যাগ করলে তাকে মৃত্যুদন্ড দিতে হয়। কিন্তু এসব উদ্বাস্তুরা জীবন বাঁচাতে খৃষ্টান হয়ে গেছে বিধায় তাদের উদ্বাস্তু হওয়ার মুল অনুঘটক ইসলামী দল ও আলেম সমাজের উপর সেই বিধান অর্থাৎ মৃত্যুদন্ড প্রযোজ্য হওয়া উচিত। কারণ আলেম সমাজের উপর রাসূল (সাঃ) এর অর্পিত দায়িত্ব তারা পালন করলে কোন মুসলমানকে উদ্বাস্তু হতে হতো না। কাজেই এর দায় আলেমদের উপর বর্তাবে।

সোনার প্রতিমা মোর লুটায়ে সিন্ধু পাড়েঃ

২০১৫ সালের ঘটনা। আয়লান, আয়লান কুর্দি, তিন বছরের শিশু। মানব সভ্যতার কপোলে এক প্রচণ্ড চপেটাঘাত, মুসলিম উম্মাহর এক অশনি সংকেত। পশ্চিমারা মধ্য প্রাচ্যে যে আগুন জ্বালিয়েছে-সেই অগ্নিগর্ভ থেকে বাচতে ইউরোপের দিকে লক্ষ লক্ষ শরনার্থীর ঢল নামে। সিরীয়ার আব্দুল্লাহ কুর্দি স্ত্রী রেহানা ও দুই সন্তান- তিন বছরের আয়লান ও পাঁচ বছরের গালিবকে নিয়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ২০১৫ এর পহেলা সেপ্টেম্বর তুরস্ক থেকে গ্রিস যাওয়ার লক্ষে তারা ভুমধ্য সাগরে ছোট্ট একটি ডিঙ্গি নৌকায় চেপে বসে আর নৌকা ডুবিতে অন্যান্যদের সাথে আব্দুল্লাহ ব্যতিত তাঁর পরিবারের সবাই মারা যায়। কিন্তু আল্লাহ তা’লা মুসলিম জাতীর আত্নসংশোধনের নিদর্শন হিসাবে ভুমধ্য সাগরের প্রমত্ত ঢেউয়ের ডগায় তোলে আয়লানকে তুর্কি সৈকতে নিক্ষেপ করেন। লাল জামা, নিল হাফপ্যান্ট ও জুতা পরিহিত সোনার প্রতিমা আয়লানের দেহ বালুতে মুখ গোজে পড়ে থাকে। না, না এটা আয়লানের দেহ নয়, এটা মুসলিম উম্মাহর শবদেহ, এটা এক অভিশপ্ত জাতীর ক্ষয়িষ্ণু অবয়বের ধ্বংসাবশেষ।

তাঁরপর নিলুফার ডেমির নামক এক তুর্কি মহিলা ফটো সাংবাদিক সৈকতে মুখ থুবরে পরে থাকা আয়লানের দেহটি ক্যমেরা বন্দি করেন। দুনিয়ার ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেই ট্রেজিক দৃশ্য । পৃথিবীতে শোকের ঝঞ্ঝা বয়ে যায়। মানবতা ডুকরে কেঁদে উঠে। কাঁদে ইউরোপ, কাঁদে দূর প্রাচ্য, কাঁদে পৃথিবী। শুধু কাঁদেনা মধ্যপ্রাচ্য, কাঁদেনা উম্মাহর নেতৃবৃন্দ, কাঁদে না ইসলাম ও মুসলিমের রক্ষক অভিশপ্ত আলেমে দ্বীন। তারা স্ত্রী সন্তান নিয়ে মৌজ করে, ফুর্তি করে আর আল্লাহ রাসুল ও কোরান সুন্নাহর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। অথচ খৃষ্টীয় ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের হৃদয় হাহাকার করে উঠল, তিনি গর্জে উঠলেন। ইউরোপের প্রত্যেক দেশে শরনার্থিদের আশ্রয় দেয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন।

খৃষ্টীয় ধর্মগুরুদের উদ্দেশ্যে তিনি ঘোষণা দিলেন “হে ইউরোপের ক্যাথলিক যাজক পল্লী, তোমরা তোমাদের প্রতিটি পল্লীতে একটি করে মোহাজের পরিবারকে গ্রহণ কর। আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, প্রত্যেক যাজক পল্লী, প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়, প্রতিটি আশ্রম, প্রতিটি মঠ, প্রতিটি গীর্জা এবং প্রতিটি ধর্মালয়ে তোমরা সিরীয় শরনার্থীদের আশ্রয় দাও। আজ সিরিয়রা পরিত্যাক্ত, তাদের তোমরা প্রতিবেশী করো এবং তাদের মনে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দাও। ইউরোপের সমস্ত বিশপের প্রতি আমার আহ্বান, আমার আহবানে সাড়া দিন।” ফলে হাঙ্গেরি ব্যতিত সমগ্র ইউরোপ শরনার্থীদের আশ্রয় দিতে সম্মত হল। সর্বাগ্রে জার্মানি এগিয়ে এল, তারা আট লক্ষ রিপিউজি আশ্রয় দানের ঘোষণা দিল এবং সাথে সাথে তাদের জন্য তিনশো কোটি ইউরো (২৬ হাজার কোটি টাকা) বরাদ্দ দিল।

খৃষ্টান ধর্মগুরু হয়েও বিপর্যস্ত মুসলমানদের প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের এই মমত্ববোধ, মানবতাবোধ সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলল। কেউ শিরোনাম করল সৌদি বাদশার চেয়ে ফ্রান্সিস বড় মুসলমান, কেউবা মক্বা মদিনার ঈমামের চেয়ে পোপ বড় ইমানদার ইত্যাদি বিভিন্ন শিরোনামে পোপের শরনার্থি আশ্রয় দানের সংবাদটি প্রকাশ করল। মধ্য প্রাচ্যের পেট্রো ডলার সমৃদ্ধ সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, উমান, আরব আমিরাত ইত্যাদি ধনাঢ্য দেশগুলির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠল, পৃথিবীবাসি এদের উপর অভিসম্পাত বর্ষন করল। কারন ইউরোপ যেখানে লক্ষ লক্ষ শরনার্থিকে গ্রহণ করছে, সেখানে এসব দেশ নীরব, উদ্বাস্তুদের কোন ফয়সালা করছে না, যুদ্ধ বন্ধের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না, শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করছে না। এজন্যই এরা আল্লাহ্‌ ও সমগ্র মানব জাতির ঘৃনার পাত্রে পরিণত হয়েছে। আর কোন জাতি যখন এমন আত্নবিধ্বংসী স্থরে উপনিত হয় তখন আল্লাহ্‌ তা’লা তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। যেমন সম্রাট নেবুচাদ নেজার কর্তৃক জেরুসালেম ও যিহুদার ধ্বংস সাধন এবং হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ ধ্বংস সাধন- যার আলোচনা সামনে আসছে।

মধ্য প্রাচ্যের বর্তমান অবস্থা এশিয়া ও মুসলিম জাতির জন্য এক সতর্ক বার্তা। যতদুর মনে হচ্ছে শরনার্থিদের সাথে সাথে ইসলাম চলে যাচ্ছে ইউরোপে। তারপর হ্য়ত একদিন দেখা যাবে মধ্যপ্রাচ্য প্রাচিন জেরুজালেম ও যিহুদার ভাগ্যবরন করেছে, ইতিহাসের চেড়া পাতায় আশ্রয় নিয়েছে, সেখানে ইহুদীদের কথিত প্রমিজল্যান্ড বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আর ইউরোপ হয়ে গেছে মুসলিম জনপদ। এর প্রমান হচ্ছে এমনিতেই ইউরোপ ব্যাপকভাবে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে তার উপর লক্ষ লক্ষ মুসলিম শরনার্থির মিশ্রন ও সংশ্রব-এটাই প্রমান করে ইউরোপ ইসলামের হতে যাচ্ছে। আর ইসলামের জন্মভুমি ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর এভাবেই আল্লাহ্‌ তা’লা দুষ্কৃতিকারীদের ব্যাপারে তার ওয়াদা পূর্ণ করেন -- وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُم -- যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, এরপর তারা তোমাদের মত হবে না। (৪৭: ৩৮)

এখন প্রশ্ন হল খৃষ্টান পোপ যদি মুসলমানদের আশ্রয় দানের নির্দেষ দিতে পারেন, খৃষ্টীয় ইউরোপ যদি আশ্রয়দানে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে- সেক্ষেত্রে ইসলামের আলেমগন, মক্বা মদিনা, আল-আযহারের ইমামগন ও মুসলিম নেতৃবৃন্দ কী দায়িত্ব পালন করলেন, তাদের ভূমিকা কি ? এখানে, ঠিক এখানেই কথাটা। কারন আলেমদের উপর বিশেষতঃ উম্মাহর ধর্মগুরু হিসাবে মক্বা মদিনার ইমামগনের উপর ফরয ছিল, শরনার্থী সমস্যার সমাধান করা, মুসলিম দেশগুলিকে আশ্রয়দানে বাধ্য করা, মুসলিম নেতৃবৃন্দকে বাধ্য করা, মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা সমাধান করা, ঐক্যের ডাক দেয়া, আলেমদের ঐক্যবদ্ধ করা। আলেমদের ঐক্যের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। তারপর সমস্যা সমাধানে মুসলিম নেতৃবৃন্দকে বাধ্য করা, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনের মিমাংসা করা, আসাদ ও আইসিসের ফয়সালা করা। নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সমাধান না হলে পৃথিবীর আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে খিলাফত/ মুসলিম জাতী সংঘ/ আফ্রেশিয় ইউনিয়ন বা অন্য কোন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে মধ্যপ্রাচ্যসহ উম্মাহর সকল সমাস্যার সমাধান করা।

কিন্তু না, তারা কিছু তো করলেনই না এমনকি একটি বক্তব্য বিবৃতি পর্যন্ত দিলেন না, শোক প্রকাশ করলেন না। আয়লানের জন্য সারা দুনীয়া কাঁদল, বক্তব্য-বিবৃতি দিল, দুঃখ প্রকাশ করল। কিন্তু মক্বা মদিনা আল-আযহারের ইমামগন, তেহরান দেওবন্দসহ বিশ্বের আলেমগন, বাইতুল মুকাররমের ইমামগন ইসলামকে পুঁজি করে সর্বোচ্চ সুবিধা ও সম্মান ভোগ করতেছেন- অথচ আয়লানের জন্য তারা একটি কথাও বললেন না, দুঃখ প্রকাশ করলেন না, তাদের চোখ কাঁদল না, হৃদয় বিগলিত হল না, অথচ কাফেররা কাঁদল। কাজেই এরা আলেম নয়, উম্মাহর অভিশাপ। এদের সম্পর্কেই আল্লাহ্‌ বলেন—

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ - আর আমরা জাহান্নামের জন্য নিশ্চয়ই সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষের মধ্যের অনেককে, তাদের হৃদয় আছে তা দিয়ে তারা বুঝে না, আর তাদের চোখ আছে তা দিয়ে তারা দেখে না, আর তাদের কান আছে তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা গবাদি-পশুর ন্যায়, বরং তারা আরো নিকৃষ্ট। তারা নিজেরাই হচ্ছে উদাসীন। (৭: ১৭৯)

সুতরাং উম্মাহর কাছে আমাদের প্রশ্ন, এখন তোমরা কী করবে ? তোমাদের আলেম সমাজ আশাররুল উলামা হয়ে গেছে। রাসুল (সাঃ) যাদেরকে ইসলাম ও উম্মাহ রক্ষার দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তারা এখন ইসলাম নিয়ে সিন্দবাদের মত বানিজ্যিতে ব্যস্ত। উম্মাহর উত্থান পতন ও ধ্বংস নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না, প্রয়োজনও বোধ করে না। এই ধর্ম ব্যবসায়ী আশাররুল উলামাদের ধ্বংস না করলে তোমাদের মুক্তি নেই। কাজেই হয় ওদের গরু ছাগলের মত হাকিয়ে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর না হয় ধ্বংস কর। অন্যথায় তোমাদেরও এমন দিন আসছে, যখন আয়লানের বাবা আব্দুল্লাহর মত ভিসুভিয়াসের যন্ত্রনা বুকে ধারন করে আজরাইলের সাক্ষাৎ প্রতিক্ষায় তার পথ পানে তাকিয়ে প্রহর গুনা ব্যতিত কোন গত্যন্তর থাকবে না। আল্লাহ্‌ সবাইকে সঠিক সমঝ দান করুন।

দৃষ্টি আকর্ষনঃ

কোথাও আগুন লাগলে কেউ বসে থাকে না, সবাই নেভানোর জন্য আপ্রান চেষ্টা করে। কিন্তু হায় মুসলিম জাতি, আজ জ্বলছে, জ্বলছে মুসলিম দুনিয়া । অথচ সেই আগুনে সবাই ঘৃতাহুতি দিচ্ছে কিন্তু নেভানোর জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। মুসলিম বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই যেখানে মুসলিম গণহত্যা চলছে না, কোথাও কাফেররা মারছে কোথাও নিজেরা নিজেরা কামড়া কামড়ি করে মরছে। আর সন্ত্রাসবাদ তো ইসলামকে কফিনে ঢুকিয়ে দিয়েছে।

আরব মুলুকের গাদ্দার রাজারা ইসরাইলের দাসত্ব করছে আর কাতার ইরান ইরাক সিরিয়া ও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলি ধ্বংসের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে মুসলমান মুসলামানকে ধ্বংস করছে আর ভারতের ডুগডুগি বাজাচ্ছে। কাজেই ভাইটি/বোনটি আমার, ইসলামের এই দুর্দিনে আপনি যদি নিস্ক্রিয় বসে থাকেন, তাহলে কি আপনি মুসলমান হিসাবে গণ্য হবেন, বিবেকের আদালতে ও আল্লাহ্‌র আদালতে কি জবাব দিবেন? একটু এগিয়ে আসুন, আপনার সমর্থন এ জাতির মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে।

এটা সর্ব স্বিকৃত যে ঐক্য ব্যতীত এ জাতির মুক্তি সম্ভব নয়। আর ঐক্যটা খুবই সহজ কঠিন কোন বিষয় নয়। কারণ কোরান হাদীস ঐক্য ফরয ও বিভক্তি হারাম করেছে। আর কোন সংস্থা সংগঠন ব্যতীত একা এ কাজ করা সম্ভব নয়। কাজেই এগিয়ে আসুন। আমরা সামনে কিছু কাজ করতে চাই। যেমন- ১। ঐক্যের জন্য ইসলামী দলগুলোকে চিঠি দেয়া ও একত্রে বসানো। ২। কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসাগুলিতে যোগাযোগ করে বা চিঠি/হ্যান্ডবিল দিয়ে তাদেরকে সচেতন করা ও জনগনকে সচেতন করা। ৩। ফিরকাবাজীর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রীট করা ও সংবাদ সম্মেলন করা, বিচার না হলেও অন্তত ব্যাপক গনসচেতনা সৃষ্টি হবে। ৪। ইসলামী দলগুলোকে লাভ দেখানো যে ঐক্য হলে দেশে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। আর নিম্নোল্লেখিত শর্তে রাজনৈতিক দলের সাথে ঐক্য হবে। (সাম্ভাব্য প্রস্তাব)।

১। মুসলিম জাতীয় অধিকারঃ জাতির বৃহত্তর কল্যাণের লক্ষে মুসলিম জাতিসংঘ/আফ্রেশিয় ইউনিয়ন/ খিলাফত বা এ জাতীয় কোন সংস্থা সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। এ সংস্থা হবে যুক্তরাষ্ট্রীয়-ফেডারেল সরকারের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন। মুসলিম দেশগুলি এর অধিনে প্রদেশের ন্যায় গণ্য হবে। এ সংস্থার কাজ হবে ত্রিব্ব, মানে তিন ব, মানে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও বিশ্ব নেতৃত্বে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। ইউরোপিয় ইউনিয়নের ন্যায় সকল দেশে একই শিক্ষা, আইন, ভিসাহীন উন্মুক্ত কর্মক্ষেত্র প্রবর্তিত হবে ইত্যাদি।

২। নাগরিক অধিকারঃ রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সরকারের পোষ্য। কাজেই সক্ষমদের দেশে অথবা বিদেশে সরকারি খরচে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অক্ষম-প্রলেতারিয়েত-মুস্তাদআফদের সরকারি ভাতায় প্রতিপালন করতে হবে। মুস্তাদআফ হল ইয়াতিম, বিধবা, বয়োবৃদ্ধ, সকল প্রকার প্রতিবন্ধি ও হিজড়া। সর্বোপরি সকল ছিন্নমূলের পুনর্বাসন করতে হবে।

৩। বিচারঃ ইংরেজ প্রবর্তিত গাজাখুরি বিচার ব্যবস্থা বাতিল করে ইসলামী দিয়ত বা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।

৪। চিকিৎসাঃ প্রত্যেক উপজেলায় নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক পৃথক মানসম্পন্ন আধুনিক হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে। প্রত্যেক ইউনিয়নে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। প্রত্যেক হাসপাতালে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য আলাদা বিভাগ থাকতে হবে।

৫। নারী অধিকারঃ নারীর শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্র আলাদা করতে হবে, তবে পঞ্চাশোর্ধ নারী পুরুষ ইন্টারসেঞ্জ হতে পারবে। বৃদ্ধা ও ১৬ বছরের কম বয়স্কা দরিদ্র মেয়েদের ভাতা দিতে হবে। ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিচার ও ক্ষতিপূরণ উভয়টির বিধান রাখতে হবে।

৬। কৃষক শ্রমিক অধিকারঃ কৃষি খাতে সম্পূর্ণ জ্বালানি ফ্রী করে দিতে হবে। শ্রমিকের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্বের যৌক্তিক সমাধান করতে হবে।

৭। শিক্ষাঃ আফগান থেকে আরাকান পর্যন্ত সকল মাদরাসায় আরবী মাধ্যমে জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখা পাঠ্যভুক্ত করতে হবে।

৮। ইসলামী দলগুলির জন্য ১৫০ আসন ছেড়ে দিতে হবে।

সুতরাং যেসব দল এসব শর্তে রাজি থাকবে তাদের সাথে ইসলামী দলগুলোর ঐক্য হবে। আর এটা নিশ্চিত যে, কোন সংগঠন ব্যতীত একাজ আঞ্জাম দেয়া সম্ভব নয়, কাজেই ব্লগার ভাই বোনরা এগিয়ে আসুন। কারো পক্ষে সম্ভব হলে একটা অনলাইন নিউজ চালু করুন। অন্তত একটা ব্লগ খোলে ঐক্য প্রত্যাশিদের লেখার সুযোগ করে দিন। লক্ষ লক্ষ যুবক ঐক্য কামনা করে তাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করুন। ঐক্য সম্পর্কে ব্যাপক লেখালেখি করুন, অন্তত আমার লেখাগুলি সর্বত্র ছড়িয়ে দিন।

আপাতত যারা ঐক্য প্রত্যাশি তারা আমার নামটা প্রিয়তে রাখুন। তাহলে পরামর্শের মাধ্যমে আমরাই একটা সংগঠন গড়ে তুলতে পারব। এভাবে আমরা হতে পারব অভিশপ্ত উম্মাহর তিমির মরুপথে আলোর মিনার। লক্ষ করুন, শাহবাগিরা মানুষ মারার জন্য ঐক্য হয়েছিল, আমরা কি ইসলাম উম্মাহ ও মানবতা রক্ষার জন্য ঐক্য হতে পারি না। আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে সবাই এগিয়ে আসুন।

বিষয়: বিবিধ

১২২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File