সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- 21

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১১ জুলাই, ২০১৭, ০২:১৪:১৩ দুপুর

(লেখাটা যথেষ্ট লম্বা, সেভ করে সময় ও সুযোগ মত পড়ে নিন)

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ

হাসান মুসান্নার আসর থেকে আসর পর জামাল কেমন যেন উদভ্রান্তের মত হয়ে গেল। কোন কিছুতেই আকর্ষন নাই, লেখা পড়ায় মনোযোগ নাই। সব সময় অন্য মনস্ক হয়ে থাকে, ভিতরে প্রচণ্ড ভাঙ্গাগড়া শুরু হয়ে গেছে। তার সারা জীবনের বোধ বিশ্বাস হারিয়ে গেছে। এতদিন ষে জানত একমাত্র দেওবন্দিরাই সঠিক ইসলামের উপর আছে, অন্যরা সবাই ভ্রান্ত। কিন্তু হাসান মুসান্নার মজলিসে তো ফিরকাবাজির কারনে কোরান হাদীস দ্বারা সবাই কাফের প্রমানিত হল, জামালের শরীরটা কেঁপে উঠে, সে সবাইকে কাফের মানতে রাজি, এমনকি সেও এটাই চায় কিন্তু দেওবন্দিরা কাফের হবে- এটা সে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারল না। সে সিদ্ধান্ত নেয় ঐ বিতর্কের মজলিসে আর যাবে না।

মাদরাসার ছাত্ররা হাসান মুসান্না ও মাওঃ মোজাহিদের আলোচনা করে, প্রশংসা করে কিন্তু জামাল তাদের সাথে যোগ দেয় না, দূরে দূরে থাকে আর ভাবে এরা মাদরাসায় লেখাপরা করে নিজেদের কাফের তকমা কি করে মেনে নেয়। কিন্তু যখনি সে আলোচ্য আয়াত ও হাদীসের প্রতি লক্ষ করে তখনি তার শরীরটা অবশ হয়ে আসে, তার বিশ্বাসের প্রাচীর ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। বিষয়টা এমন হয়ে দাড়ায়, যে ব্যক্তিকে সে সারা জীবন বাবা হিসাবে জেনে এসেছে হঠাৎ কেউ দলীল দিয়ে প্রমাণ করল যে, ঐ ব্যক্তি তার বাবা নয়। অথবা সর্যোদয় কালিন সময়কে সে দিন জেনে এসেছে কিন্তু কেউ প্রমাণ করল যে এটা রাত। এসব বিষয় তার কাছে যেমন অবিশ্বাস্য ঠেকে তদ্রুপ দেওবন্দিরা কাফের এটাও তার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকে। সে সিদ্ধান্ত নেয় ঐ মজলিসে আর যাবে না, এমনকি এ মাদরাসায় ও আর থাকবে না।

প্রতিদিন বিকালে তারা ব্রক্ষপুত্রের তীরে ঘোরা ফিরা করে, হাওয়া খায়। নিয়মানুযায়ি তারা হাঁটতে গেল, সাথে আছে তাদের ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবি ও প্রভাব শালী ছাত্র মোজাম্মেল। হাসান মুসান্নার আলাপ উঠল। জামাল জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা লোকটা কি ভণ্ড নাকি, সবাইকে কাফের ঘোষণা দেয়। মোজাম্মেল বলল, ‘তিনি নিজে তো কোন মত প্রকাশ করেন না, কোরান হাদীস দ্বার যা প্রমানিত হয় সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি তিনি শুধু রায় প্রকাশ করেন। কাজেই তিনি ভণ্ড হতে যাবেন কোন দুঃখে।

জামাল আবার জিজ্ঞে করল, আচ্ছা লোকটা কে, কোত্থেকে এল? মোজাম্মেল বলল, আরে তুমি এখনো তাকে চিন না। তিনি একজন বিখ্যাত আলেমের সন্তান, বিভিন্ন লাইনে লেখাপড়া করেছেন। প্রথমে কওমি মাদরাসায় কিছুদিন বোখারির খেদমত করেছেন, তারপর একটা আলিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস পদে যোগ দেন। কিন্তু আলিয়া মাদরাসায় ইলম কালাম নাই আমল নাই, আছে শুধু নকল, আরো অনান্য কুৎসিত কর্মকান্ড দেখে তার মন উঠে যায়। এরপর তার উপর একটার পর একটা বিপর্যয় নেমে আসতে থাকে। তার একটা মেয়ে বাচ্চা ছিল, এরপরেও তার সংসার ভেঙ্গে যায়। এক ভার্সিটির শিক্ষকের সাথে তার স্ত্রির বিয়ে হয়ে যায়। বাচ্চাটিকে ঐ মহিলা সাথে নিয়ে যায়। এরপর থেকে আর উনাকে তার বাচ্চার সাথে সাক্ষাত করতে দেয়া হয়নি।

এদিকে হেফাযত ও জামাতের আন্দোলনের সময় তার কয়েকজন ছাত্র ও একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মারা যায়, তিনি একেবারে ভেঙ্গে পরেন। তখন চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দেয়ার কারনে তার ভাইয়েরা সব সময় গালাগালি করে। মনের দুঃখে তিনি বাড়ি ছেড়ে ময়মনসিংহে এসে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেন এবং পেট চালানোর জন্য ছাত্র পড়ানো শুরু করেন। প্রতিদিন এশার পর তিনি মসজিদে আলোচনা করতেন। তার আলোচনা শুনে আমাদের মোজাহিদ সাব, ডাঃ ফখরুজ্জামান, শাখাওয়াত সাব আরো অনেক বড় বড় লোক তার ভক্ত হয়ে যায়। এরপর ফখরুজ্জামান সাব বিনা ভাড়ায় ঐ হল ঘরটা দিয়ে দেন। তারপর সবাই একটা দুইটা করে চেয়ার কিনে দিল, এখন সেখানে জমজমাট হয়ে মজলিস চলছে, তুমি তো দেখেই এসেছ। আসলে হাসান মুসান্নার উদ্দেশ্য হচ্ছে সকল ইসলামী দল ও ফেরকাগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রত্যেক দেশে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তারপর কেন্দ্রিয় খেলাফত বা মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করা, নইলে তো এ জাতীর মুক্তির দ্বিতীয় কোন পথ নেই।

জামাল দুটানায় দুদোল্যমান, যখন সে চিন্তা করে হাসান মুসান্না ইসলাম ও উম্মাহর বন্ধু, সে জাতীর মুক্তির চেষ্টা করছে, তখন তার প্রতি মনের টান অনুভব করে। কিন্তু যখনি তার মনে হয়, লোকটা দেওবন্দিদের কাফের বলে, তখনি তার মন বিষিয়ে উঠে। এভাবে তার মনে আলো আধারির খেলা চলতে থাকে। বৃহস্পতিবারে সে বাড়িতে গেল, মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় বাজার সওদা করল। ক্ষেতের ও ফিসারির জমে থাকে কাজগুলি শেষ করল। জুম্মার পর সে আবার ক্ষেতে যেতে চাইল কিন্তু অনুভব করল তার মন উল্টে গেছে, উদ্দাম গতিতে নন্দিত- নিন্দিত হাসান মুসান্নার মজলিসের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। তাই চারটে খাওয়া দাওয়া করে সে রওয়ানা করল।

দ্বিতীয় আসরঃ

মাওঃ মোজাহিদ দাঁড়িয়ে হামদ ও দুরুদ পাঠের পর শুরু করল, সুধিমন্ডলি গত শুক্রবারে আমরা কোরান হাদীসের আলোকে ফিরকাবাজি সম্পর্কে কিছু আলোচনা করে ছিলাম, আজ বাকি আলোচনা শেষ করব ইংশাআল্লাহ। কোরানের আয়াত ও হাদীসকে নস বলা হয়, নস অর্থ মুল পাঠ, টেক্সট । আর উসুলে ফিকহের পরিভাষায় নস চার প্রকারে অর্থ প্রদান করে। তন্মধ্যে প্রধান দুটি হল, ইবারাতুন নস (প্রত্যক্ষ অর্থ) ও ইশারাতুন নস (পরোক্ষ অর্থ)। সুতরাং যেসব আয়াতের ইবারাতুন নস (প্রত্যক্ষ অর্থ) দ্বারা ফিরকাবাজি হারাম করা হয়েছে- গত সপ্তাহে আমরা এমন কিছু আয়াতের আলোচনা করেছি। এখন যেসব আয়াতের ইশারাতুন নস (পরোক্ষ অর্থ) দ্বারা ফিরকাবাজি হারাম প্রমানিত- আজ সে জাতীয় কিছু আয়াতের সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করছি। কাজেই কেউ যেন এ বিতর্ক না তোলেন যে, আয়াতের প্রত্যক্ষ অর্থ ছেড়ে পরোক্ষ অর্থ গ্রহন করা হচ্ছে কেন? পুর্বেও বলেছি, ফিরকাবাজ আলেমরা ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থ ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা ও ফিরকা সংক্রান্ত আয়াত গুলি বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এগুলি তারা ইহুদি খৃষ্টান ও কাফের মুশরেকদের সম্পত্তি গণ্য করে বর্জন করে চলেছেন। এখন আমরা এ জাতীয় কিছু আয়াতের আলোচনা পেশ করছি। যেমন-

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ [٢:١١] اللَّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ [٢:١٥]

আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি।

বরং আল্লাহই তাদের সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান ও পেরেশান থাকে।

বাস্তব প্রয়োগঃ যখন ফিরকাবাজদেরকে বলা হয়, উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করো না, অশান্তি সৃষ্টি করো না, ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর। তখন তারা বলে, আমরা তো বিভক্তি করি না, বিদাতিদের সংশোধন করছি মাত্র। আর ঐক্য হব কেমনে, বেরেলভীরা বিদাতি, জামাতিদের আক্বিদায় সমস্যা, দেওবন্দিদের তো তাকলিদ সমস্যা, তাবলীগীরা জিহাদ খিলাফত বর্জন করেছে, সালাফিরা অতিকট্টর। কাজেই এদের ফিরকাবাজিতে আল্লাহ কিছুটা ঢিল দিয়েছেন। তবে মাঝে মধ্যে আত্মসংশোধনের জন্য কিছুটা উপহাস করেন। যেমন হেফাযতকে শাপলা চত্বরে, জামাতকে আদালতে, ব্রাদারহুডকে মিসরে, তালেবানদের পাকাফগানে, শিয়া- সুন্নিদের মধ্য প্রাচ্যে উপহাস করছেন- যেন তারা ঐক্যে ফিরে এসে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে।

الَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ [٢:٢٧]

(বিপথগামী ওরাই) যারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ পাক যা অবিচ্ছিন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, তা ছিন্ন করে, আর পৃথিবীর বুকে অশান্তি সৃষ্টি করে। ওরা যথার্থই ক্ষতিগ্রস্ত।

বাস্তব প্রয়োগঃ কোরান হাদীসের যত জায়গায় মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও লেনদেনের উল্লেখ করা হয়েছে- সর্বত্র ইখওয়াত বা ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর কোরান হাদীসের প্রধানতম নির্দেশ হচ্ছে, সকল মুসলমান ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ থাকবে কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না। কিন্তু ফিরকাবাজরা বিভিন্ন বিদাত সৃষ্টি করে উম্মাহকে হাজারটা ভাগে বিভক্ত করে পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে ভূপৃষ্ঠে বিপর্যয় ডেকে আনছে। ফলে তারা নিজেরা তো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেই সেই সাথে ইসলাম ও উম্মাহকেও ধ্বংস করছে।

أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ [٢:٤٤]

তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভূলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা জনগনকে সৎকাজের উপদেশ দেয় অথচ নিজেরা ফিরকাবাজির মত হারাম কাজে লিপ্ত রয়েছে। এরা কোরান অধ্যয়ন করে কিন্তু ফিরকা সংক্রান্ত আয়াত গুলির ব্যাপারে তাদের কোন হুস জ্ঞান নেই।

وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ إِلَّا أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ [٢:٧٨]

তোমাদের কিছু লোক নিরক্ষর। তারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া আল্লাহর গ্রন্থের কিছুই জানে না। তাদের কাছে কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই।

বাস্তব প্রয়োগঃ আলেমদের ফিরকাবাজির পরিণতিতে বিশ্বময় ইসলামের পতন দেখে আরবি ভাষাজ্ঞান নাই, কোরান হাদীস বুঝে না- এমন লোকেরাও ইসলামের সেবায় এগিয়ে আসছে। কিন্তু তারা উম্মাহর উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে। যেমন হিজবুত তাওহীদ, ইসলামী সমাজ ইত্যাদি।

وَقَالُوا لَن تَمَسَّنَا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا مَّعْدُودَةً ۚ قُلْ أَتَّخَذْتُمْ عِندَ اللَّهِ عَهْدًا فَلَن يُخْلِفَ اللَّهُ عَهْدَهُ ۖ أَمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ [٢:٨٠]

তারা বলেঃ আগুন আমাদিগকে কখনও স্পর্শ করবে না; কিন্তু গণাগনতি কয়েকদিন। বলে দিনঃ তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার পেয়েছ যে, আল্লাহ কখনও তার খেলাফ করবেন না-না তোমরা যা জান না, তা আল্লাহর সাথে জুড়ে দিচ্ছ।

বাস্তব প্রয়োগঃ প্রত্যেক ফেরকার লোকেরা মনে করে তারা জান্নাতি, জাহান্নাম তাদের স্পর্শও করবে না। ভাব গতিকে মনে হয় যেন তারা আল্লাহ থেকে অঙ্গিকারাবদ্ধ। অথচ তারা ফিরকাবাজির মত কুফুরি কাজে লিপ্ত রয়েছে, একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে, পরস্পর মারামারি খুনাখুনি করে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে।

وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ لَا تَسْفِكُونَ دِمَاءَكُمْ وَلَا تُخْرِجُونَ أَنفُسَكُم مِّن دِيَارِكُمْ ثُمَّ أَقْرَرْتُمْ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ [٢:٨٤]

ثُمَّ أَنتُمْ هَٰؤُلَاءِ تَقْتُلُونَ أَنفُسَكُمْ وَتُخْرِجُونَ فَرِيقًا مِّنكُم مِّن دِيَارِهِمْ تَظَاهَرُونَ عَلَيْهِم بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَإِن يَأْتُوكُمْ أُسَارَىٰ تُفَادُوهُمْ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْكُمْ إِخْرَاجُهُمْ ۚ أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ [٢:٨٥]

১। যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা পরস্পর খুনাখুনি করবে না এবং নিজেদেরকে দেশ থেকে বহিস্কার করবে না, তখন তোমরা তা স্বীকার করেছিলে এবং তোমরা তার সাক্ষ্য দিচ্ছিলে।

২। অতঃপর তোমরাই পরস্পর খুনাখুনি করছ এবং তোমাদেরই একদলকে তাদের দেশ থেকে বহিস্কার করছ। তাদের বিরুদ্ধে পাপ ও অন্যায়ের মাধ্যমে আক্রমণ করছ। আর যদি তারাই কারও বন্দী হয়ে তোমাদের কাছে আসে, তবে বিনিময় নিয়ে তাদের মুক্ত করছ। অথচ তাদের বহিস্কার করাও তোমাদের জন্য অবৈধ। তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।

বাস্তব প্রয়োগঃ পৃথিবীতে অনেক যুদ্ধ ও গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু দু’টি গণহত্যার সামনে অন্যগুলি নিষ্প্রভ ও নাস্তি প্রমাণিত হয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে নেবুচাদ নেজার (আরবি বুখতে নসর) কর্তৃক তৎকালীন ইহুদী রাষ্ট্র জেরুজালেম ও যিহুদা ধ্বংস সাধন। সম্রাট রাজ্য দু’টি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে সকল নাগরিক হত্যা করেন। বন্দি কিছু লোককে গোলাম হিসাবে ব্যাবিলনে নিয়ে আসেন- যাদের থেকে পরবর্তী ইহুদী বংশ ধারা রক্ষা পায়।

এ সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে -- فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ أُولَاهُمَا بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًا لَّنَا أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ فَجَاسُوا خِلَالَ الدِّيَارِ ۚ وَكَانَ وَعْدًا مَّفْعُولًا [١٧:٥] -- অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত সেই প্রথম সময়টি এল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা (নেবুচাদ নেজার) বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।) কারণ তখন ইহুদীদের জেরুজালেম ও যিহুদা নামের দুটি রাষ্ট্র ছিল- যারা সব সময় ঝগড়া ফাসাদ ও যুদ্ধ বিগ্রহ করে কাটাত। এজন্যই আল্লাহ তাদের ধংস করে দেন।

দ্বিতীয় ধ্বংসলীলা হচ্ছে- হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদের ধ্বংস এবং চল্লিশ লক্ষ মানুষের গণহত্যা। তদুপরি এসব মানুষের পচা গলার দুর্গন্ধ এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে সুদূর সিরিয়া পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল। এ ধ্বংসলীলার কারণ ছিল শিয়া সুন্নিরা বহির্শত্রু মোকাবিলা না করে নিজেরা নিজেরা খুনাখুনি করত।

وَقَالَتِ الْيَهُودُ لَيْسَتِ النَّصَارَىٰ عَلَىٰ شَيْءٍ وَقَالَتِ النَّصَارَىٰ لَيْسَتِ الْيَهُودُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَهُمْ يَتْلُونَ الْكِتَابَ ۗ كَذَٰلِكَ قَالَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ ۚ فَاللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ [٢:١١٣]

ইহুদীরা বলে, খ্রীস্টানরা কোন ভিত্তির উপরেই নয় এবং খ্রীস্টানরা বলে, ইহুদীরা কোন ভিত্তির উপরেই নয়। অথচ ওরা সবাই কিতাব পাঠ করে! এমনিভাবে যারা মূর্খ, তারাও ওদের মতই উক্তি করে। অতএব, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা দেবেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছিল।

বাস্তব প্রয়োগঃ বর্তমানের মুসলিম ফিরকাগুলিও ঠিক অনুরুপ কথা বলে। দেওবন্দিরা বলে জামাতি বেরেলভীদের কোন ভিত্তি নাই, ওরা গুমরাহ। জামাত বলে বেরেলভী তাবলীগীরা গুমরাহ। বেরেলভীরা বলে ওয়াহাবি, দেওবন্দি জামাতিরা কোন ভিত্তির উপর নাই, সবাই গুমরাহ। আসলে এরা সবাই কোরান হাদীসের উপর ভিত্তিশীল ছিল কিন্তু যেসব বিদাতের উপর ভিত্তি করে তারা ফিরকায় বিভক্ত হয়েছে ঐসব বিদাতগুলির কোন ভিত্তি নাই। ফলে শুধুমাত্র ফিরকাবাজির কারনে ওদের ভিত্তি ধ্বসে গেল আর তারা জান্নাতের পথ ছেড়ে জাহান্নামের পথে দৌড়াতে লাগল।

وَقَالُوا كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ تَهْتَدُوا ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ [٢:١٣٥]

তারা বলে, তোমরা ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান হয়ে যাও, তবেই সুপথ পাবে। আপনি বলুন, কখনই নয়; বরং আমরা ইব্রাহীমের ধর্মে আছি যাতে বক্রতা নেই। সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

বাস্তব প্রয়োগঃ এখন আর কেউ মতলক মুসলমান নাই, সবাই মুসলিমে মুক্বাইয়্যাদ- শর্তযুক্ত মুসলিম হয়ে গেছে। যেমন, সালাফি মুসলমান, জামাতী মুসলমান, তাবলীগী মুসলমান ইত্যাদি। প্রত্যেক শিশু মুসলমান হয়ে জন্ম নেয় কিন্তু ফিরকাবাজরা তখন ডাকতে থাকে ‘এসো দেওবন্দি হয়ে যাও, জামাতী হয়ে যাও, আহলে হাদীস হয়ে যাও। এভাবে মতলক মুসলমানকে ওরা শর্তযুক্ত মুসলিম মানে কাফের মুনাফিক বানিয়ে দিচ্ছে। কাজেই এদের খপ্পর থেকে বাচার একমাত্র উপায় হল এ মর্মে ঘোষণা দিতে হবে যে, রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম শিয়া সুন্নি, হানাফি, শাফেয়ি, জামাতী, দেওবন্দি, বেরেলভী ছিলেন না, তারা ছিলেন মতলক মুসলমান। কাজেই আমরাও মতলক মুসলমান। তোমরা ফিরকা বিদ্বেষের আগুনে জ্বলে পোড়ে মর, তারপর জাহান্নামে যাও, আমরা তোমাদের সাথে নাই।

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ [٢:١٥٩]

নিশ্চয় যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত তথ্য এবং হেদায়েতের কথা নাযিল করেছি মানুষের জন্য কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণের ও।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা কোরান হাদীসে স্পষ্টভাবে বিবৃত ফিরকা সংক্রান্ত নসগুলি গোপন রাখছে। নিজ নিজ ফিরকার ভিত্তি- বিদাত গুলি সর্বশক্তি দিয়ে প্রচার করছে কিন্তু ঐক্য ফরয বিভক্তি হারাম সংক্রান্ত নসগুলি ইচ্ছাপুর্বক গোপন রাখছে। আবার ইসলামী অর্থব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থার সুন্দর বিধানগুলি প্রচার করছে না বিধায় এরা অভিশপ্ত।

إِذْ تَبَرَّأَ الَّذِينَ اتُّبِعُوا مِنَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا وَرَأَوُا الْعَذَابَ وَتَقَطَّعَتْ بِهِمُ الْأَسْبَابُ [٢:١٦٦]

وَقَالَ الَّذِينَ اتَّبَعُوا لَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَتَبَرَّأَ مِنْهُمْ كَمَا تَبَرَّءُوا مِنَّا ۗ كَذَٰلِكَ يُرِيهِمُ اللَّهُ أَعْمَالَهُمْ حَسَرَاتٍ عَلَيْهِمْ ۖ وَمَا هُم بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ [٢:١٦٧]

১। অনুসৃতরা যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে যাবে এবং যখন আযাব প্রত্যক্ষ করবে আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক।

২। এবং অনুসারীরা বলবে, কতইনা ভাল হত, যদি আমাদিগকে পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ দেয়া হত। তাহলে আমরাও তাদের প্রতি তেমনি অসন্তুষ্ট হয়ে যেতাম, যেমন তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে আমাদের প্রতি। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে দেখাবেন তাদের কৃতকর্ম তাদেরকে অনুতপ্ত করার জন্যে। অথচ, তারা কস্মিনকালেও আগুন থেকে বের হতে পারবে না।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজির কারনে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হচ্ছে। আর এই সর্বনাশের কারনে অনুসারী অনসৃত সবাইকে জাহান্নামে যেতে হবে। তখন কেউ কারো দায় বহন করবে না। কাজেই সময় থাকতেই সাধু সাবধান, আমি আমার দেওবন্দি ফিরকাবাজদের থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করলাম। বাকি প্রত্যেক ফেরকার অনুসারিদের আহ্বান জানাচ্ছি, খোদার গজব থেকে নিজেকে বাচাতে চাইলে স্ব স্ব ফিরকার মুরুব্বি নামক শয়তানদের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করুন।

وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا ۗ أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ [٢:١٧٠]

আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজদেরকে যখন দাওয়াত দেয়া হয় ফিরকাবাজি ত্যাগ করে কোরান হাদীসের অনুসরণ কর। তখন তারা বলে, আমরা আমাদের মুরুব্বি ও ইমামের অনুসরণ করি। যদিও তাদের ইমাম ও মুরুব্বিরা বিদাত সৃষ্টি করে গেছেন।

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۙ أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ [٢:١٧٤] أُولَٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ ۚ فَمَا أَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ [٢:١٧٥]

নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।

এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর কেমন ধৈর্য্য ধারণকারী।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা ফিরকা সংক্রান্ত আয়াত গুলি গোপন রাখে, নিজ নিজ ফিরকার স্বপক্ষে বিদাত মিশ্রিত বই লিখে, ওয়াজ নসিহত করে, ইমামতি করে, বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে পয়সা উপার্জন করে। এ পয়সাই তাদের জন্য আগুনের বার্তা নিয়ে আসবে।

لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ [٢:١٧٧]

সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।

বাস্তব প্রয়োগঃ এই হল মুসলমানের পরিচয় এবং দায়িত্ব। কিন্তু রাসূল (সাঃ) নুরের সৃষ্টি নাকি মাটীর সৃষ্টি, সাহাবায়ে কেরাম সমালোচনার মধ্যে নাকি উর্ধ্বে, পাশ্চাত্যের পুজিবাদি ধারায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা, নামাযে হাত উঠানো না উঠানো ইত্যাদি ইসলাম বহির্ভুত আলতু ফালতু বিষয়ের বিতর্ক সৃষ্টি করে, বিদাত সৃষ্টি করে যারা ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে, এরাই হল আল্লাহ রাসূল (সাঃ), ইসলাম ও উম্মাহর প্রধান শত্রু।

وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ [٢:١٩٠]

وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوهُمْ وَأَخْرِجُوهُم مِّنْ حَيْثُ أَخْرَجُوكُمْ ۚ وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ ۚ وَلَا تُقَاتِلُوهُمْ عِندَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتَّىٰ يُقَاتِلُوكُمْ فِيهِ ۖ فَإِن قَاتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ ۗ كَذَٰلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِينَ [٢:١٩١]

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ ۖ فَإِنِ انتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ [٢:١٩٣]

১। আর লড়াই কর আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

২। আর তাদেরকে হত্যাকর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর তাদের সাথে লড়াই করো না মসজিদুল হারামের নিকটে যতক্ষণ না তারা তোমাদের সাথে সেখানে লড়াই করে। অবশ্য যদি তারা নিজেরাই তোমাদের সাথে লড়াই করে। তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হল কাফেরদের শাস্তি।

৩। আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)।

বাস্তব প্রয়োগঃ বর্তমানে হিন্দু বৌদ্ধ ইহুদি খৃষ্টান সবাই সম্মিলিতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, উম্মাহ ধ্বংসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আল্লাহ্‌র নির্দেশ এবং মুসলমানদের উপর ফরয হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধভাবে কুফর শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। উম্মাহর মুক্তি ও ইসলামের বিজয় হওয়া পর্যন্ত জীবনপন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু মুসলমানরা ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভাবে হাজারটা ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেরা নিজেরাই কুকুরের মত কামড়া কামড়ি করে মরছে। আর সুযোগ পেয়ে কাফেররা তাদের উপর চালিয়ে যাচ্ছে মহাকালের জঘন্যতম শোষণ পীড়ন হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ।

وَمِنَ النَّاسِ مَن يُعْجِبُكَ قَوْلُهُ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللَّهَ عَلَىٰ مَا فِي قَلْبِهِ وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ [٢:٢٠٤]

আর এমন কিছু লোক রযেছে যাদের পার্থিব জীবনের কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করবে। আর তারা সাক্ষ্য স্থাপন করে আল্লাহকে নিজের মনের কথার ব্যাপারে। প্রকৃতপক্ষে তারা কঠিন ঝগড়াটে।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজদের আত্মশুদ্ধিমূলক কথা শুনলে সবাই চমকৃত হয়। অথচ এরা ফিরকার পক্ষে ও কোরান সুন্নাহর বিপক্ষে কঠিন বিতর্ককারী।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ [٢:٢٠٨] فَإِن زَلَلْتُم مِّن بَعْدِ مَا جَاءَتْكُمُ الْبَيِّنَاتُ فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ [٢:٢٠٩]

هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن يَأْتِيَهُمُ اللَّهُ فِي ظُلَلٍ مِّنَ الْغَمَامِ وَالْمَلَائِكَةُ وَقُضِيَ الْأَمْرُ ۚ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ [٢:٢١٠]

১। হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

২। অতঃপর তোমাদের মাঝে পরিস্কার নির্দেশ এসে গেছে বলে জানার পরেও যদি তোমরা পদস্খলিত হও, তাহলে নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহ, পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।

৩। তারা কি সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে যে, মেঘের আড়ালে তাদের সামনে আসবেন আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ ? আর তাতেই সব মীমাংসা হয়ে যাবে। বস্তুতঃ সবকার্যকলাপই আল্লাহর নিকট গিয়ে পৌঁছবে।

বাস্তব প্রয়োগঃ প্রথম আয়াতের ভাষ্য হচ্ছে ফিরকাবাজরা মুমিন বুটে কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় তারা ফিরকাবাজি করে ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে। তাই শয়তানের আনুগত্য ত্যাগ করে ফিরকাবাজি বর্জন করে পুর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। অর্ধেক আল্লাহর বান্দা আর অর্ধেক শয়তানের বান্দা- দু’দলের মাদুল হওয়া যাবে না।

দ্বিতীয় আয়াতের ভাষ্য হল, ফিরকাবাজি হারাম সম্পর্কিত কোরান হাদীসে সুস্পষ্ট বর্ণনা আসার পরও যাদের পদস্খলন ঘটে- মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাদের বিচার করবেন।

তৃতীয় আয়াতের ভাষ্য হল, ফিরকা বাজরা কি প্রতিক্ষায় আছে যে, মেঘের আড়ালে আল্লাহ বা ফেরেস্তা আসবেন, তারপর তাদের বিতর্কিত বিষয় গুলি মিমাংসা করে ফিরকাগুলি মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ করে দিবেন? না, কখনোই না। আল্লাহ বা ফেরেস্তা কেউ আসবেন না। নিজেরাই বসে কমিটি গঠন করে কোরান হাদীসের ভিত্তিতে সব কিছু মিমাংসা করে ফিরকা মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটাই বাচার একমাত্র পথ।

كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ ۚ وَمَا اخْتَلَفَ فِيهِ إِلَّا الَّذِينَ أُوتُوهُ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۖ فَهَدَى اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِهِ ۗ وَاللَّهُ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ [٢:٢١٣]

সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা পয়গম্বর পাঠালেন সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকরী হিসাবে। আর তাঁদের সাথে অবর্তীণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুতঃ কিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি; কিন্তু পরিষ্কার নির্দেশ এসে যাবার পর নিজেদের পারস্পরিক জেদবশতঃ তারাই করেছে, যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ ঈমানদারদেরকে হেদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদ লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, সরল পথ বাতলে দেন।

বাস্তব প্রয়োগঃ কোরান অবতীর্ণ হয়েছে মানুষের বিভিন্ন মত পথ ও বিবাদ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। কোরানকে অবলম্বন করে বিতর্ক সৃষ্টি করে বিভিন্ন ফিরকায় বিভক্ত হয়ে অশান্তি সৃষ্টির জন্য নয়। কিন্তু ফিরকাবাজ আলেমরা তো তাই করল।

Sura: Aali Imraan

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُدْعَوْنَ إِلَىٰ كِتَابِ اللَّهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ وَهُم مُّعْرِضُونَ [٣:٢٣] ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لَن تَمَسَّنَا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۖ وَغَرَّهُمْ فِي دِينِهِم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ [٣:٢٤] قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ [٣:٣٢]

আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে-আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহবান করা হয়েছিল যাতে তাদের মধ্যে মীমাংসা করা যায়। অতঃপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

তা এজন্য যে, তারা বলে থাকে যে, দোযখের আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না; তবে সামান্য হাতে গোনা কয়েকদিনের জন্য স্পর্শ করতে পারে। নিজেদের উদ্ভাবিত ভিত্তিহীন কথায় তারা ধোকা খেয়েছে।

বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।

বাস্তব প্রয়োগঃ এরা হল ফেরকাবাজ আলেম। আধুনিক কালে জামালুদ্দিন আফগানী থেকে নিয়ে বর্তমান পর্যন্ত অসংখ্য ইসলাম দরদি দায়ীগণ ফেরকাবাজ আলেমদের ডাকছেন, আসুন, আপনাদের বিতর্কিত বিষয়গুলি কোরানের উপর ন্যস্ত করুন। কোরান হাদীস মোতাবেক ফয়সালা করে ঐক্যবদ্ধ হউন, তারা শুধু পৃষ্ট প্রদর্শন করেছে। কিন্তু আমরা হলাম, নাযিরে উরয়ান, চূড়ান্ত সতর্ককারী। কাজেই এইবার ফিরকাবাজরা হয় নিজেদেরকে কোরান হাদীসের উপর ন্যস্ত করবে অথবা তাদের ধ্বংস করে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে। আর এই পৃষ্ট প্রদর্শনের কারণ হল, তারা নিজেদেরকে আল্লাহর পুত্র মনে করে, জান্নাতের ওয়ারিশ মনে করে। এভাবেই প্রত্যেক ফেরকাবাজ ইসলামের মধ্যে নিজেদের সৃষ্ট বিদাত নিয়ে আত্ম প্রবঞ্চনায় লিপ্ত রয়েছে। কাজেই ফিরকাবাজদের প্রতি আমাদের আহ্বান হল, আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর আনুগত্যে ফিরে আসতে হবে, কোরান হাদিসের ভিত্তিতে নিজেদের মধ্যে ফয়সালা করতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ অনিবার্য।

فَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ [٣:٦١]

অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বল-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের এবং আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী।

বাস্তব প্রয়োগঃ প্রত্যেক ফিরকা মনে করে তাদের মধ্যে কোন বিদাত নাই, ফিরকাবাজি করে তারা সঠিক কাজটিই করেছে। কাজেই তাদের প্রতি আমার দুটি আহ্বান, হয় তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে অথবা এমর্মে মুবাহালা করতে হবে যে, তারা হেদায়েতের উপর আছে।

مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلَا نَصْرَانِيًّا وَلَٰكِن كَانَ حَنِيفًا مُّسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ [٣:٦٧]

ইব্রাহীম ইহুদী ছিলেন না এবং নাসারাও ছিলেন না, কিক্তু তিনি ছিলেন ‘হানীফ’ অর্থাৎ, সব মিথ্যা ধর্মের প্রতি বিমুখ এবং আত্নসমর্পণকারী, এবং তিনি মুশরিক ছিলেন না।

বাস্তব প্রয়োগঃ রাসূল (সাঃ) হানাফি, শাফেয়ি, সালাফি, দেওবন্দি, জামাতী, বেরেলভী ইত্যাদি ছিলেন না, তিনি ছিলেন মতলক মুসলমান। কাজেই আমাদেরকেও বিভিন্ন টাইটেল বাদ দিয়ে শুধু মুসলমান হতে হবে।

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُونَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ [٣:٧١] إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوا كُفْرًا لَّن تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الضَّالُّونَ [٣:٩٠] إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَن يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِم مِّلْءُ الْأَرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ افْتَدَىٰ بِهِ ۗ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ [٣:٩١]

১। হে আহলে কিতাবগণ, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশ্রণ করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ তোমরা তা জান।

২। যারা ঈমান আনার পর অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকৃতিতে বৃদ্ধি ঘটেছে, কস্মিণকালেও তাদের তওবা কবুল করা হবে না। আর তারা হলো গোমরাহ।

৩। যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও তার পরিবর্তে দেয়া হয়, তবুও যারা কাফের হয়েছে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের তওবা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব! পক্ষান্তরে তাদের কোনই সাহায্যকারী নেই।

বাস্তব প্রয়োগঃ শুধু ইহুদি খৃস্টানেরাই আহলে কিতাব নয়, মুসলমানরাও আহলে কিতাব। কাজেই এ সম্ভোধন সকল সম্প্রদায়ের জন্য সমান ভাবে প্রযোজ্য। বাস্তবতা হলো মুসলিম ফিরকাবাজরা ইসলাম বহির্ভুত বিভিন্ন বিদাত জন্ম দিয়ে ইসলামের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে সত্য মিথ্যার মিশ্রন করে ফেলেছে। যেমন রাসূল (সাঃ) নুরের সৃষ্টি নাকি মাটির সৃষ্টি, মিলাদ ক্বিয়াম, সাহাবায়ে কেরাম সমালোচনার মধ্যে নাকি বাইরে ইত্যাদি মতবাদ আজ থেকে দুই শত পুর্বেও মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ছিল না। কিন্তু ফিরকাবাজ শয়তানরা শরীয়ত বহির্ভুত এসব বিদাত জন্ম দিয়ে এমন ভাবে প্রচার করছে যেন এগুলি ইমানের অঙ্গ, ইসলামের খুটি, এগুলির উপর জান্নাত নির্ভরশীল। অর্থাৎ এ বিদাত গুলিকে ইসলামের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে ইসলামের মুল বিধান উম্মাহর ঐক্য, খিলাফত প্রতিষ্ঠা, জিহাদ লি- ইলায়ে কালিমাতিল্লাহ ইত্যাদির সাথে গুলিয়ে ফেলে সত্য মিথ্যায় মিশ্রন করে দিয়েছে। আবার এই গাদ্দাররা জেনে বুঝেও সত্য গোপন রাখছে এভাবে যে, ঐসব মতবাদ বিদাত, উম্মাহর মধ্যে ঐক্য ফরয এসব কথা জনগনের মাঝে প্রচার তো করছেই না এমনকি বুঝতেই দিচ্ছে না। বিদাত সৃষ্টি ও ফিরবাজির কারনে এরা ইমান আনার পর কুফুরি করেছে। তারপর ফিরকাগুলি পরস্পরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ ছড়িয়ে ফিরকাবাজিতে দৃঢ়পদ হওয়ার আরনে এদের কুফুরি বেড়ে গেছে। কাজেই এদের তওবা কবুল হবে না, এরা চূড়ান্ত ভাবে পথভ্রষ্ট। তওবা কবুল না হওয়ার কারন ২০ নং পোষ্টে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অর্থাৎ ফিরকাবাজির কারনে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই বিপুল ক্ষতির ক্ষতিপূরণ যেহেতু সম্ভব নয় বিধায় এদের তওবাও আল্লাহর দরবারে গৃহিত হয়া সম্ভব নয়। কাজেই ফিরকাবাজরা কুফুরির উপর মৃত্যুবরণ করে। আর মৃত্যুর পর তাদের নেক আমল ও ধন সম্পদ কোন কাজে আসবে না, মমর্ন্তুদ শাস্তিই তাদের ভাগ্যলিপি। তাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) বা অন্য কেউ তাদের জন্য সুপারিশ করবে না।

وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ وَأَنتُمْ تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ آيَاتُ اللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُ ۗ وَمَن يَعْتَصِم بِاللَّهِ فَقَدْ هُدِيَ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ [٣:١٠١]

আর তোমরা কেমন করে কাফের হতে পার, অথচ তোমাদের সামনে পাঠ করা হয় আল্লাহর আয়াত সমূহ এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছেন আল্লাহর রসূল। আর যারা আল্লাহর কথা দৃঢ়ভাবে ধরবে, তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হবে সরল পথের।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজদের আল্লাহ প্রশ্ন করছেন, তোমরা কোরান তিলাওয়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে আছেন রাসূল (সাঃ) মানে তার সুন্নাত বা হাদীস। আর কোরান হাদীসের অসংখ্য নস দ্বারা ঐক্য ফরয করা হয়েছে, ফিরকাবাজি হারাম করা হয়েছে। অথচ এগুলি প্রত্যাখ্যান করে তোমরা কি করে কুফুরি করতে পার? ফিরকাবাজি ত্যাগ করে কোরান সুন্নাহকে সম্মিলিত ভাবে আকড়ে ধর তাহলে হেদায়েত প্রাপ্ত হবে।

ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ أَيْنَ مَا ثُقِفُوا إِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ اللَّهِ وَحَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ الْأَنبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقٍّ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ [٣:١١٢]

আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কিংবা মানুষের প্রতিশ্রুতি ব্যতিত ওরা যেখানেই অবস্থান করেছে সেখানেই তাদের ওপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ওরা উপার্জন করেছে আল্লাহর গযব। ওদের উপর চাপানো হয়েছে গলগ্রহতা। তা এজন্যে যে, ওরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অনবরত অস্বীকার করেছে এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। তার কারণ, ওরা নাফরমানী করেছে এবং সীমা লংঘন করেছে।

বাস্তব প্রয়োগঃ এ আয়াত ইহুদিদের জন্য নাযিল হলেও এখন তা মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। কারণ বর্তমানে ইহুদীরা ইসলামের বৈশিষ্ট গ্রহন করেছে বলেই আজ তারা বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত। কিন্তু মুসলমানরা ইহুদিদের চরিত্র গ্রহন করেছে বলেই আজ এই পতন। বর্তমানে মুসলমানরা স্বদেশে বিদেশে সমগ্র বিশ্বে লাঞ্চিত, পতিত পরাজিত। তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে, দরিদ্রতা তাদের ভাগ্য লিপির শামিল করে দেয়া হয়েছে। তাদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে ইহুদি খৃস্টানরা বিশ্ব মোড়ল হয়েছে। তাদের উপর কর্তৃত্ব করছে, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে তাদেরকে বন্য প্রানীর মত হত্যা করছে, অথচ আফ্রিকায় ও বিভিন্ন দেশে আজ মুসলমানরা দুর্ভিক্ষে না খেয়ে মরছে। এসবের কারণ হল, মুসলমানরা আল্লাহর আয়াত সমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা ফিরকাবাজির নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত আয়াত, অর্থনিতি ও বিচার সংক্রান্ত আয়াত গুলি বর্জন করেছে।

তদুপরি ইহুদীরা যেমন নবীদের হত্যা করত বর্তমানের মুসলমানরাও নির্দোষ আলেমদের হত্যা করছে, বাংলাদেশের শাপলা চত্বরে, আদালতে, মিশরে, মধ্যপ্রাচ্যে, পাকিস্তানে আফগানিস্তানে এত পরিমান নিরাপরাধ আলেম হত্যা করা হয়েছে যা কোন কাফের রাষ্ট্রেও হয়নি। কাজেই মুসলমানরা চরম অবাধ্যতা করেছে, চূড়ান্ত ভাবে সীমালঙ্ঘন করেছে। এ জন্যই তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হয়েছে। আজ যদি তারা ফিরকাবাজি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকত, তাহলে কেন্দ্রিয় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত থাকত, তখন আর কেউ তাদেরকে মারতেও পারত না, সম্পদও শোষণ করতে পারত না বরং মুসলমানরাই বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত থাকত এবং আল্লাহরও অনুগ্রহের হকদার হত।

إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهُ ۚ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاءَ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ [٣:١٤٠]

তোমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।

বাস্তব প্রয়োগঃ অত্র আয়াতে আল্লাহ তা’লা বদর যুদ্ধের কথা স্বরণ করিয়ে উহুদ যুদ্ধের পরাজয়ের জন্য শান্তনা দিচ্ছেন। তদ্রুপ বর্তমান মুসলমানদের জন্য শান্তনা হল- আগে মুসলমানরা ছিল বিজয়ি আর কাফেররা ছিল পরাজিত। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম জাতি পরাজিত অবস্থায় আছে কিন্তু আল্লাহর وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿آل‌عمران: ١٣٩﴾ প্রতিশ্রুতি হল-

আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।

তবে শর্ত হল মুমিন হওয়া, অর্থাৎ ফিরকাবাজি মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। আর খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেই আবার মুসলমানরা দিগ্বিজয়ি জাতি হিসাবে পরিগনিত হবে। আল্লাহ জাতি সমুহের মধ্যে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের এভাবেই আবর্তন করেন, প্রকৃত ইমানদার যাচাই করার জন্য এবং কিছু লোককে শহীদ হিসাবে বরন করে নেয়ার জন্য, কিন্তু এই বিপর্যস্ত অবস্থায়ও যারা আল্লাহর দিকে রুজু হয় না, কোরান হাদীসের নির্দেশ মানে না বরং ফিরকা বিভক্তি জিইয়ে রেখে উম্মাহকে দুর্বল করে দিয়ে কাফেরদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় ওরা যালিম এবং আল্লাহর ক্রোধের পাত্র।

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ [٣:١٤٢]

তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।

বাস্তব প্রয়োগঃ কিহে বাপু ফেরকাবাজরা, কোরান সুন্নাহর অবাধ্য হয়ে ফিরকাবাজি করবে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করবে। আরাকান, ফিলিস্তিন, কাশ্মির, জিংজিয়াং ইত্যাদির মজলুম মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধ করবে না, এরপরেও ভাবছ এক দৌড়ে জান্নাতে চলে যাবে?

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ [٣:١٨٧]

আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তা মানুষের নিকট বর্ণনা করবে এবং গোপন করবে না, তখন তারা সে প্রতিজ্ঞাকে নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল আর তার কেনা-বেচা করল সামান্য মূল্যের বিনিময়ে। সুতরাং কতই না মন্দ তাদের এ বেচা-কেনা।

ব্যাখ্যাঃ সকল আহলে কিতাবের প্রতি এই নির্দেশ, তারা কিতাব ও সুন্নাহর যে সব বিধান আছে সেগুলি মানুষের সামনে স্পষ্ট রুপে বর্ণনা করবে, কোন কিছু গোপন করবে না। কিন্তু তারা ফিরকার আয়াতগুলি খুব সুন্দর ভাবে গোপন করে রাখল। এইভাবে তারা কোরান সুন্নাহকে পিঠের পিছনে নিক্ষেপ করল। আর ইসলামের নামে প্রত্যেক ফেরকার মুরুব্বিরা স্ব স্ব মুরিদ, ছাত্র ও অনুসারিদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিল। কতই না নিকৃষ্ট তাদের এইসব আচরন ও উপার্জন।

لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَفْرَحُونَ بِمَا أَتَوا وَّيُحِبُّونَ أَن يُحْمَدُوا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوا فَلَا تَحْسَبَنَّهُم بِمَفَازَةٍ مِّنَ الْعَذَابِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ [٣:١٨٨]

তুমি মনে করো না, যারা নিজেদের কৃতকর্মের উপর আনন্দিত হয় এবং না করা বিষয়ের জন্য প্রশংসা কামনা করে, তারা আমার নিকট থেকে অব্যাহতি লাভ করেছে। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।

ব্যাখ্যাঃ ফিরকাবাজি করে যারা আত্মপ্রসাদে লিপ্ত, ফিরকাবাজি করে বা নিস্কর্মা প্রশংসা পেতে লালায়িত থাকে তারা আল্লাহর আযাব থেকে নিস্কৃতি পাবে না।

Sura: An-Nisaa

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧]

অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।

ব্যাখ্যাঃ আর তওবা তো হল যে অজ্ঞতাবশত গুনাহ করে ফেলে তার জন্য কিন্তু যেসব ফিরকাবাজরা কোরান হাদীস অধ্যয়ন করে, ঐক্য ফরয বিভক্তি হারাম জেনেও ফিরকাবাজি করছে তারা তওবারও যোগ্য নয়। এরা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يَشْتَرُونَ الضَّلَالَةَ وَيُرِيدُونَ أَن تَضِلُّوا السَّبِيلَ [٤:٤٤]

তুমি কি ওদের দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, (অথচ) তারা পথভ্রষ্টতা খরিদ করে এবং কামনা করে, যাতে তোমরাও আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে যাও।

ব্যাখ্যাঃ কোরান হল আসমানি কিতাবের একটা অংশ বা খণ্ড। এখন এই কোরান পেয়ে ও ফিরকাবাজরা গুমরাহী খরিদ করে নিয়েছে। সর্বোপরি সারাক্ষণ তারা অন্যদেরকে স্ব স্ব ফিরকায় যুক্ত করে গুমরাহ করার ধান্ধায় থাকে।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيهِمْ نَارًا كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُم بَدَّلْنَاهُمْ جُلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا الْعَذَابَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا [٤:٥٦]

এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী।

ব্যাখ্যাঃ ফিরকাবাজরা ফিরকা সংক্রান্ত কোরান হাদীসের বিধান গুলি প্রত্যাখ্যান করেছে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا [٤:٥٩]

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।

ব্যাখ্যাঃ ইমানদার হওয়ার শর্ত হল, আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করা এবং কোন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে তা মীমাংসার জন্য আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) তথা কোরান হাদীসের উপর ন্যস্ত করা। এখন সকল ফেরকার প্রতি আমার আহ্বান হল, যেসব বিষয়ের উপর বিতর্ক করে তারা ফেরকায় পরিনত হয়েছে সেইসব বিতর্কিত বিষয় গুলি কোরান হাদীসের উপর ন্যস্ত করা হউক। অর্থাৎ সবাই একত্রে বসে কোরান হাদীসের ভিত্তিতে ফয়সালা করে নিতে হবে। তারা যদি এই আহ্বানে সাড়া দেয় তাহলে মুমিন থাকল অন্যথায় কাফের বলে গন্য হবে। কারণ এটাই ইমানের শর্ত।

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا [٤:٦٠]

আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে শয়তানের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।

ব্যাখ্যাঃ ইমানের শর্ত হল নিজেদের বিতর্কিত বিষয়গুলি কোরান হাদীসের ভিত্তিতে ফয়সালা করা, মিমাংসার জন্য কোন তাগুতের শরনাপন্ন না হওয়া। কিন্তু বাস্তবতা হল উল্টো। যেমন হেফাজতের আন্দোলনের সময় তারা বারবার সরকারকে অনুরোধ করছে জামাত নিষিদ্ধ করার জন্য। তরিকতিরা আদালতে মামলা করেছে জামাত নিষিদ্ধ করার জন্য। দেওবন্দি ধারার কওমি মাদরাসার দাওরাকে মাস্টার্স সমমান দেয়ার পর বেরেলভী ওরফে বাংলাদেশে সুন্নি দাবিদাররা মিটিং মিছিল ধর্মঘট সহ অনেক আন্দোলন করেছে মান না দেয়ার জন্য, সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়েছে। ব্রাদার হুডকে ধ্বংস করার জন্য সি সি আমেরিকা ও ইসরাইলের সাহায্য নিয়েছে। এমনকি প্রয়াত সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহও অনেক সহযোগিতা করেছে। কাজেই এরা কোন যুক্তিতে মুসলমান গন্য হবে, আর কোন দুঃখে আল্লাহ এদের ক্ষমা করবেন?

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا [٤:٦١]

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا [٤:٦٥]

আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো-যা তিনি রসূলের প্রতি নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদিগকে দেখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরে যাচ্ছে।

অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।

ব্যাখ্যাঃ এ আয়াত একটা টার্নিং পয়েন্ট। আমাদের আহ্বানে ফিরকাবাজরা যদি ঐক্যের মানসিকতা নিয়ে কোরান হাদীসের ফয়সালার উপর রাজি হয় তাহলে তারা মুমিন, আর যদি সরে যায় তাহলে স্পষ্ট মুনাফিক। কারণ মুমিন হওয়ার শর্তই বিতর্কিত বিষয় গুলি কোরান হাদীসের উপর ন্যস্ত করা। আর ফয়সালা নিজেদের পক্ষে বিপক্ষে যাই হউক সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া। যারা এই শর্ত মানবে না তারা মুখে ইমান দাবী করলেও বস্তুত তারা মুনাফিক।

وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا [٤:٧٥]

আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।

ব্যাখ্যাঃ ফিলিস্তিন, কাশ্মির, চায়না তুর্কিস্তান ও আরাকানে মানবতার শ্বশান জ্বলছে। ভয়াবহ মানব বিপর্যয় চলছে, মানবতার রক্তাশ্রু ঝড়ে পড়ছে কিন্তু পৌনে দুইশ কোটি মুসলমান নির্বাক দর্শকের মত তাকিয়ে দেখছে, কেউ এগিয়ে আসছে না, তাদের মুক্তির জন্য হিজাদ বা আন্দোলন করছে না। এই না করার কারণ হল তাদের অক্ষমতা ও দুর্বলতা। অর্থাৎ তারা শত শত ফিরকায় বিভক্ত হয়ে একেকটা ফিরকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিনত হয়েছে। সঙ্গত কারনেই তারা দুর্বল ও অক্ষম। যেহেতু তারা ঐক্য হবে না বিধায় এই দুর্বল ও অক্ষমদের পক্ষে মজলুম মুসলমানদের সাহায্য করা অসম্ভব। পক্ষান্তরে তারা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকত বা এখনো ঐক্য হয়ে যায় তাহলে কেন্দ্রিয় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। আর তখন চোখের পলকে ঐসব মজলুম মুসলমানদের ভাগ্যের ফয়সালা হয়ে যাবে।

যেমন বাংলাদেশের নাকের ডগায় আরাকানের মুসলমানদের উপর চলছে শতাব্দির ভয়াবহ জুলুম ও গণহত্যা। কিন্তু হেফাজত জামাত ও সুন্নিরা মুখে একটু আধটু ঠুং ঠাং করলেও বাস্তবে কিছুই করতে পারছে না। কিন্তু আজ যদি তারা ঐক্যবদ্ধ থাকত আর সম্মিলিত ভাবে মায়ানমারের দিকে মার্চ করত তাহলে তাদের পদভারেই ঐ মগের মুল্লুকখানি বঙ্গসাগরের তলায় তলিয়ে যেত। কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলাম ও উম্মাহকে সাহায্য করার চেয়ে একে অন্যকে শায়েস্তা করাটা প্রধান ইমানি দায়িত্ব মনে করে এবং প্রভুত পুলক অনুভব করে। এভাবেই ফিরকাবাজরা ইসলাম, উম্মাহ ও নিজেদেরকে ধ্বংস করছে। কাজেই ঐসব মজলুম মুসলমানদের শান্তি ও মুক্তির লক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্মিলিত সংগ্রাম করা ফরযে আইন হয়ে গেছে। এর পরেও যদি ফেরকাবাজরা ঐক্য না হয় তাহলে আল্লাহর আদালতে যখন এ আয়াতটি তাদের সামনে পেশ করা হবে তখন তারা কী জবাব দেবে?

مَّن يَشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَكُن لَّهُ نَصِيبٌ مِّنْهَا ۖ وَمَن يَشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُن لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيتًا [٤:٨٥]

যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে মন্দ কাজের জন্যে সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।

বাস্তব প্রয়োগঃ উম্মাহর এ দুর্দিনে যারা ঐক্যের জন্য সুপারিশ করবে তারা মহাপুরুস্কার পাবে। যারা বিভক্তি চালিয়ে যাবে ধ্বংস তাদের জন্য।

إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ ۚ وَلَا تَكُن لِّلْخَائِنِينَ خَصِيمًا [٤:١٠٥ (هَا أَنتُمْ هَٰؤُلَاءِ جَادَلْتُمْ عَنْهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَمَن يُجَادِلُ اللَّهَ عَنْهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَم مَّن يَكُونُ عَلَيْهِمْ وَكِيلًا [٤:١٠٩]

নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না।

শুনছ? তোমরা তাদের পক্ষ থেকে পার্থিব জীবনে বিবাদ করছ, অতঃপর কেয়ামতের দিনে তাদের পক্ষ হয়ে আল্লাহর সাথে কে বিবাদ করবে অথবা কে তাদের কার্যনির্বাহী হবে।

ব্যাখ্যাঃ কোরান অবতীর্ণ হয়েছে মানুষের বিতর্কিত বিষয় ফয়সালা করার জন্য কিন্তু ফিরকাবাজরা বিভিন্ন বিদাত সৃষ্টি করে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেহাদ চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ ফয়সালার জন্য কোরান সুন্নাহর উপর ন্যস্ত করছে না, এরাই হল বিশ্বাস ঘাতক। এই ফেরকাবাজ হুজুর কেবলা ও আল্লামাদের সংশোধনের জন্য কেউ কিছু বললে তাদের সমর্থকরা ঘেউ ঘেউ করে উঠে, তর্ক বতর্ক শুরু করে দেয়। কিন্তু ফিরকাবাজি ও ধর্ম ব্যবসার কারনে যখন এই আলখাল্লা দারিদেরকে জাহানামে উপোর করে ফেলা হবে তখন কে তাদের উকিল বা জামিনদার হবে?

لَّا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِّن نَّجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا [٤:١١٤]

তাদের অধিকাংশ সলা-পরামর্শ ভাল নয়; কিন্তু যে সলা-পরামর্শ দান খয়রাত করতে কিংবা সৎকাজ করতে কিংবা মানুষের মধ্যে সন্ধিস্থাপন কল্পে করতো তা স্বতন্ত্র। যে একাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমি তাকে বিরাট ছওয়াব দান করব।

ব্যাখ্যাঃ বহুমুখি সভা, সেমিনার মন্ত্রনা ইত্যাদিতে কোন লাভ নেই। ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তির পথ একটাই, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে হবে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তির লক্ষে এ প্রচেষ্টা চালাবে আল্লাহ তাকে উত্তম পুরুস্কার দানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا [٤:١١٥]

যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।

ব্যাখ্যাঃ ৭৩ ফিরকার হাদীসসহ অন্যান্য হাদীসে রাসূল (সাঃ) ফিরকাবাজি সম্পর্কে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারন করেছেন। এরপরেও যারা রাসূল (সাঃ) এর অবাধ্যতা করে, ফিরকা সংক্রান্ত কোরানের স্পষ্ট নসগুলি বর্জন করে এবং মুমিনদের পথ- ঐক্যবদ্ধ থাকার পথ ত্যাগ করে ফিরকার জন্ম দিয়ে বিভিন্ন পথে চলবে আল্লাহও তাদেরকে সেই ফিরকার পথেই চালাবেন। তারপর জাহান্নামের জ্বালানি বানাবেন। এজন্যই বাস্তবতায় দেখা যায়, প্রত্যেক ফিরকাবাজ স্ব স্ব ফিরকায় মোহরাঙ্কিত হয়ে গেছে, যার ফলে নিজেদের গুমরাহি তাদের চোখের সামনে ধরা পড়ে না। এদের ঠিকানা জাহান্নাম।

Sura: Al-Maaida

فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ لَعَنَّاهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً ۖ يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِ ۙ وَنَسُوا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوا بِهِ ۚ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَىٰ خَائِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ [٥:١٣]

অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি। তারা কালামকে তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে দেয় এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তা থেকে উপকার লাভ করার বিষয়টি বিস্মৃত হয়েছে। আপনি সর্বদা তাদের কোন না কোন প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হতে থাকেন, তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া। অতএব, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মার্জনা করুন। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।

ব্যাখ্যাঃ অত্র আয়াতে মুসলমানরা অভিশপ্ত হওয়ার কারণটা বুঝা যাচ্ছে। মুমিন মাত্রই অঙ্গিকার হল, সবাই ভাই ভাই হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবে কখনো বিভক্ত হবে না। কিন্তু তারা অঙ্গিকার ভঙ্গ করে বিভক্ত হল, তারপর আল্লাহ তালা বিভক্তির মধ্যে তাদের অন্তর পাথরের মত শক্ত করে দিলেন, ফলে তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে হায়েনার চেয়েও হিংস্র হয়ে উঠল। তারা নিজ নিজ বিদাত ও মতবাদ প্রতিষ্ঠা এবং সত্য প্রমান করার জন্য অপব্যাখ্যা করল। এভাবে তাদের প্রতি আরো অন্যান্য নির্দেশগুলি ভুলে গেল। এখন আমরা অহর্নিশ তাদের বিভিন্ন খেয়ানতের সংবাদ পাই। যেমন শাপলা চত্বরে হেফাজত হত্যা, আদালত থেকে মাঠে প্রান্তরে জামাত হত্যা, তালেবান কর্তৃক ১৫০ নিস্পাপ শিশু হত্যা, আইসিস কর্তৃক শিয়া মুসলিম হত্যা, সিসি ও সৌদি জোট কর্তৃক ব্রাডার হুড হত্যা। এভাবেই এই ফিরকাবাজরা শিয়াল কুকুরের মত ধ্বংস হতে থাকবে যতক্ষন না তারা ঐক্যের পথে ফিরে আসে।

وَقَالَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَىٰ نَحْنُ أَبْنَاءُ اللَّهِ وَأَحِبَّاؤُهُ ۚ قُلْ فَلِمَ يُعَذِّبُكُم بِذُنُوبِكُم ۖ بَلْ أَنتُم بَشَرٌ مِّمَّنْ خَلَقَ ۚ يَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۚ وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا ۖ وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ [٥:١٨]

ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা বলে, আমরা আল্লাহর সন্তান ও তাঁর প্রিয়জন। আপনি বলুন, তবে তিনি তোমাদেরকে পাপের বিনিময়ে কেন শাস্তি দান করবেন? বরং তোমারও অন্যান্য সৃষ্ট মানবের অন্তর্ভুক্ত সাধারণ মানুষ। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি প্রদান করেন। নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তাতে আল্লাহরই আধিপত্য রয়েছে এবং তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

ব্যাখ্যাঃ ফিরকাবাজরাও ঠিক একই কথা বলে, হেফাজত, জামাত, তালেবান, হিযবুত তাহরির, ব্রাদার হুড সবাই বলে আমরা আল্লাহর পুত্র এবং প্রিয় পাত্র। এরা সবাই মনে করে তারা উত্তরাধিকার সুত্রে জান্নাতের মালিক। এখন প্রশ্নটা হল, সবাই আল্লাহর প্রিয়জন হলে হেফাযত, জামাত, তালেবান, ব্রাদার হুড, আইসিস, হিজবুত তাহরির ইত্যাদির উপর খোদার গজব নেমে আসে কেন। আসলে এরা কেউই আল্লাহর প্রিয়পাত্র নয় বরং ফিরকাবাজির কারনে তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র।

مِنْ أَجْلِ ذَٰلِكَ كَتَبْنَا عَلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَن قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا ۚ وَلَقَدْ جَاءَتْهُمْ رُسُلُنَا بِالْبَيِّنَاتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم بَعْدَ ذَٰلِكَ فِي الْأَرْضِ لَمُسْرِفُونَ [٥:٣٢]

এ কারণেই আমি বনী-ইসলাঈলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবাপৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। তাদের কাছে আমার পয়গম্বরগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছেন। বস্তুতঃ এরপরও তাদের অনেক লোক পৃথিবীতে সীমাতিক্রম করে।

ব্যাখ্যাঃ মুসলিম বিশ্বে যত যুদ্ধ বিগ্রহ, হত্যাকাণ্ড, অঘটন ঘটছে এসবের সম্পুর্ণ দায় ফিরকাবাজ আলেমদের। কারণ এই আলেম নাম ধারি শয়তান গুলি ফিরকাবাজি না করলে উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ থাকত, ফলে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত থাকত। আর তখন ,মুসলিম বিশ্বে শান্তি বিরাজ করত, কাজেই সকল অশান্তির মুলে হল ফিরকাবাজ আলেম।

Sura: Al-An'aam

وَهُمْ يَنْهَوْنَ عَنْهُ وَيَنْأَوْنَ عَنْهُ ۖ وَإِن يُهْلِكُونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ [٦:٢٦]

তারা এ থেকে বাধা প্রদান করে এবং এ থেকে পলায়ন করে।তারা নিজেদেরকে ধ্বংস করেছে, কিন্তু বুঝছে না।

ব্যাখ্যাঃ ফিরকাবাজ আলেমরা নিজেরাও ঐক্য থেকে পালিয়ে বেড়ায় এবং অন্যদেরকেও ঐক্য হতে বাধা প্রদান করে। এসব করে যে তারা নিজেদেরকেই ধ্বংস করছে এ ব্যাপারে তাদের কোন অনুভুতি নাই।

الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ أُولَٰئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ [٦:٨٢]

যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।

ব্যাখ্যাঃ এখানে জুলুম এর অর্থ অনেক, তন্মধ্যে ফিরকাবাজি একটি। অর্থাৎ যারা ইমান এনেছে এবং স্বিয় ইমানকে ফিরকাবাজির মত জুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত।

قَدْ جَاءَكُم بَصَائِرُ مِن رَّبِّكُمْ ۖ فَمَنْ أَبْصَرَ فَلِنَفْسِهِ ۖ وَمَنْ عَمِيَ فَعَلَيْهَا ۚ وَمَا أَنَا عَلَيْكُم بِحَفِيظٍ [٦:١٠٤]

তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নই।

ব্যাখ্যাঃ এই কোরান হল আল্লাহর নিদর্শন। আর এই কোরানে উম্মাহ ধ্বংসের উপাদান ফিরকাবাজি ও অন্যান্য বিষয়ের আয়াত গুলি স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে, যারা এসব দেখে আমল করল ষে নিজেকে রক্ষা করল। আর যে অন্ধ কিছুই দেখল না- সে নিজেকে ধ্বংস করল। আল্লাহ উপযাচক হয়ে কাউকে বাচাতে আসবেন না।

وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ كَذَٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرْجِعُهُمْ فَيُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ [٦:١٠٨]

তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত।

ব্যাখ্যাঃ এখানে ফিরকাবাজদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তারা অন্য ফিরকার ইমাম বা মুরুব্বিদের গালি দেয়, এভাবে তাদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছড়িয়ে পড়ে। তাবলীগীরা মাওঃ মওদুদী (রঃ) কে গালি দেয়। তখন জামাতিরা মাওঃ ইলিয়াস (রঃ) কে দেয়। এভাবে তারা আল্লাহ্‌র নেক বান্দাদেরকে গালাগালি করে, আর ফিরকাবাজির কারনে তাদের এই বদ আমলকে আল্লাহ তাদের দৃষ্টিতে দৃষ্টিনন্দন করে দিলেন। কিন্তু পরকালে তারা তাদের এই কর্মের প্রতিদান পাবে।

وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا ۚ وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ ۖ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ [٦:١١٢]

এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা ধোঁকা দেয়ার জন্যে একে অপরকে কারুকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। যদি আপনার পালনকর্তা চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করত না।

ব্যাখ্যাঃ নবী ও নবীর উম্মতের শত্রু হল শয়তান জ্বিন ও শয়তান মানুষ। শয়তান জ্বীন তো জানাই কিন্তু প্রশ্ন হল শয়তান মানুষগুলি কারা? এরা হল ফেরকাবাজ আলেম। এটা নিশ্চিত, অবধারিত, তর্কাতিত সত্য যে, ফেরকাবাজ আলেমরাই রাসূল (সাঃ) ও ইসলামের প্রধানতম দুষমন। এদের কারনেই ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হচ্ছে। এরা বিদাত সৃষ্টি করে, বেলুনের মত ফাপা ফোলা অন্তঃসার শূন্য কারুকার্যময় কথা দ্বারা পরস্পরকে ধোকা দিয়ে উম্মাহ ধ্বংস করছে। কাজেই ফিরকাবাজ আলেমরাই হল মুলতঃ আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর প্রধান শত্রু।

أَفَغَيْرَ اللَّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا وَهُوَ الَّذِي أَنزَلَ إِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًا ۚ وَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُونَ أَنَّهُ مُنَزَّلٌ مِّن رَّبِّكَ بِالْحَقِّ ۖ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ [٦:١١٤]

তবে কি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদের প্রতি বিস্তারিত গ্রন্থ অবতীর্ন করেছেন? আমি যাদেরকে গ্রন্থ প্রদান করেছি, তারা নিশ্চিত জানে যে, এটি আপনার প্রতি পালকের পক্ষ থেকে সত্যসহ অবর্তীর্ন হয়েছে। অতএব, আপনি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফেরকাবাজরা নিজেদের মীমাংসার জন্য তাগুতের দারস্ত হয় কোরানের দারস্ত হয় না অথচ তারা জানে যে কোরান আল্লাহ্‌র কিতাব। যেমন হেফাযত জামাত নিজেদের দাবী জানায় আওয়ামী লীগ, বি এন পির কাছে। ইসলামী দুনিয়া নিজেদের দাবী জানায় আমেরিকা বৃটেন ফ্রান্স রাশিয়া চীন ভারতের কাছে কিন্তু কোরানের উপর ন্যস্ত হয় না। এই জন্যই আজ উম্মাহর এই পতন।

وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا فِي كُلِّ قَرْيَةٍ أَكَابِرَ مُجْرِمِيهَا لِيَمْكُرُوا فِيهَا ۖ وَمَا يَمْكُرُونَ إِلَّا بِأَنفُسِهِمْ وَمَا يَشْعُرُونَ [٦:١٢٣]

আর এমনিভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের জন্য কিছু সর্দার নিয়োগ করেছি-যেন তারা সেখানে চক্রান্ত করে। তাদের সে চক্রান্ত তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই; কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারে না।

বাস্তব প্রয়োগঃ প্রত্যেক জনপদে অপরাধিদের মুরুব্বি হল প্রত্যেক ফেরকার মুরুব্বিরা। এরাই হল আসল আকাবিরে মুজরিমিন। এভাবেই আল্লাহ প্রত্যেক ফেরকায় মুরুব্বি নামের কিছু মুজরিম নিয়োগ দিয়েছেন যাদের তৎপরতা নিজেদের আগুনে ইদ্ধন যোগিয়ে যাচ্ছে।

فَمَن يُرِدِ اللَّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ ۖ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاءِ ۚ كَذَٰلِكَ يَجْعَلُ اللَّهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ [٦:١٢٥]

অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন-যেন সে সবেগে আকাশে আরোহণ করছে। এমনি ভাবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না। আল্লাহ তাদের উপর আযাব বর্ষন করেন।

ব্যাখ্যাঃ প্রধ্ম প্রকারের মানুষ হল তারা যারা কোরান তিলায়াত করে, ফিরকা সংক্রান্ত আয়াতগুলি পাঠ করে সতর্ক হয়, ঐক্যের চেষ্টা করে। দ্বিতীয় প্রকারের লোক হল যারা কোরান পাঠ করে কিন্তু ফিরকা সংক্রান্ত আয়াতগুলির অর্থ বুঝে না, বুঝলেও আমল করে না। আকাশে আরোহন করা যেমন কষ্ট সাধ্য, এই দ্বিতীয় প্রকারের মানুষের পক্ষেও দ্বীনের পথে চলা কষ্ট সাধ্য।

Sura: Al-A'raaf

فَرِيقًا هَدَىٰ وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ الضَّلَالَةُ ۗ إِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ اللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ [٧:٣٠]

একদলকে পথ প্রদর্শন করেছেন এবং একদলের জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং ধারণা করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।

ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ ঐক্য প্রত্যাশিদের হেদায়েত করেছেন আর ফিরকাবাজদের গুমরাহ করেছেন। কারণ তারা আল্লাহ্‌র কোরান বর্জন করে শয়তানকে অলি হিসাবে গ্রহন করেছে। আর তারা বিশ্বাস করে যে ফিরকাবাজি করেও তারা হেদায়েতের উপর আছে। এসব তাদের আত্ম প্রবঞ্চনা। এইভাবে ফিরকাবাজ আলেমরা ফিরকা সংক্রান্ত কোরানের আয়াতগুলি শুধু বর্জনই করেনি বরং দাম্ভিকতা প্রদর্শন করছে, ফেরকাবাজির বিষ ছড়িয়ে যাচ্ছে। কাজেই এদের ঠিকানা হল জাহান্নাম।

وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٧:٣٦]

যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলবে এবং তা থেকে অহংকার করবে, তারাই দোযখী এবং তথায় চিরকাল থাকবে।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা ফিরকা সংক্রান্ত আয়াত গুলি বর্জন করেছে। অহংকার ও দাম্ভিকতা বশে তারা একে অন্যের নেতৃত্ব মেনে নেয় না, ঐক্যবদ্ধ হয় না বিধায় তারা জাহান্নামী।

قَالَ ادْخُلُوا فِي أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُم مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ فِي النَّارِ ۖ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَّعَنَتْ أُخْتَهَا ۖ حَتَّىٰ إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لِأُولَاهُمْ رَبَّنَا هَٰؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَآتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ ۖ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَٰكِن لَّا تَعْلَمُونَ [٧:٣٨] وَقَالَتْ أُولَاهُمْ لِأُخْرَاهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ [٧:٣٩]

আল্লাহ বলবেনঃ তোমাদের পূর্বে জিন ও মানবের যেসব সম্প্রদায় চলে গেছে, তাদের সাথে তোমরাও দোযখে যাও। যখন এক সম্প্রদায় প্রবেশ করবে; তখন অন্য সম্প্রদায়কে অভিসম্পাত করবে। এমনকি, যখন তাতে সবাই পতিত হবে, তখন পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক এরাই আমাদেরকে বিপথগামী করেছিল। অতএব, আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন। আল্লাহ বলবেন প্রত্যেকেরই দ্বিগুণ; তোমরা জান না।

পূর্ববর্তীরা পরবর্তীদেরকে বলবেঃ তাহলে আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই অতএব, শাস্তি আস্বাদন কর স্বীয় কর্মের কারণে।

ব্যাখ্যাঃ প্রত্যেক ফেরকার মুরুব্বী ও অনুসারিরা পরস্পর এসব কথা বলবে।

إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُجْرِمِينَ [٧:٤٠] لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَمِن فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ [٧:٤١]

নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং এগুলো থেকে অহংকার করেছে, তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উম্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আমি এমনিভাবে পাপীদেরকে শাস্তি প্রদান করি।

তাদের জন্যে নরকাগ্নির শয্যা রয়েছে এবং উপর থেকে চাদর। আমি এমনিভাবে জালেমদেরকে শাস্তি প্রদান করি।

ব্যাখ্যাঃ ফেরকাবাজ আলেম যারা কোরান হাদীসের অসংখ্য নস মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, উপেক্ষা প্রদর্শন করেছে, তাদের জন্য আকাশের দরজা খোলা হবে না, জান্নাতে প্রবেশ করবে না বরং সিজ্জিনে নিক্ষিপ্ত হবে। এভাবে মুজরিমরা তাদের কর্মের প্রতিফল পাবে।

الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُم بِالْآخِرَةِ كَافِرُونَ [٧:٤٥]

যারা আল্লাহর পথে বাধা দিত এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করত। তারা পরকালের বিষয়েও অবিশ্বাসী ছিল।

ব্যাখ্যাঃ ফিরকা বাজরা দ্বীনের মধ্যে বিদাত সৃষ্টি করে বক্রতা আনয়ন করেছে। এখন লোকজনকে বিভ্রান্ত করে এই বক্র পথে চালাচ্ছে, আল্লাহ্‌র সরল পথে চলতে বাধা ও অন্তরায় সৃষ্টি করছে।

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَن يَسُومُهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ ۗ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ الْعِقَابِ ۖ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ [٧:١٦٧]

আর সে সময়ের কথা স্মরণ কর, যখন তোমার পালনকর্তা সংবাদ দিয়েছেন যে, অবশ্যই কেয়ামত দিবস পর্যন্ত ইহুদীদের উপর এমন লোক পাঠাতে থাকবেন যারা তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দান করতে থাকবে। নিঃসন্দেহে তোমার পালনকর্তা শীঘ্র শাস্তি দানকারী এবং তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।

ব্যাখ্যাঃ না, ইহুদীরা এখন মুসলমান হয়ে গেছে অর্থাৎ ইসলামের গুনাবলি ভ্রাতৃত্ব ঐক্য ধারন করেছে বিধায় এখন তারা বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত এবং অত্র আয়াতের উপলক্ষ নয়। এ আয়াত এখন মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। কারণ তারা ফিরকাবাজিতে লিপ্ত হয়ে নিজেরা যেমন কুকুরের মত কামড়াকামড়ি করে মরছে তেমনি পৃথিবীর অন্যান্য জাতিরাও তাদেরকে বন্য প্রাণীর মত মারছে।

وَقَطَّعْنَاهُمْ فِي الْأَرْضِ أُمَمًا ۖ مِّنْهُمُ الصَّالِحُونَ وَمِنْهُمْ دُونَ ذَٰلِكَ ۖ وَبَلَوْنَاهُم بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ [٧:١٦٨]

আর আমি তাদেরকে বিভক্ত করে দিয়েছি দেশময় বিভিন্ন শ্রেনীতে, তাদের মধ্যে কিছু রয়েছে ভাল আর কিছু রয়েছে অন্য রকম! তাছাড়া আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি ভাল ও মন্দের মাধ্যমে যাতে তারা ফিরে আসে।

ব্যাখ্যাঃ আসলে সমগ্র মানব জাতীর দ্বীন একটাই, স্রস্টা একজনই, সবাই একক স্রষ্টার বান্দা। কিন্তু পরস্পর হিংসা বিদ্বেষের কারনে তারা ইহুদি খৃস্টান হিন্দু মুসলমান ইত্যাদি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে গেছে। অনুরুপভাবে মুসলমানরাও হিংসা বিদ্বেষ করে শত শত ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে,। ফলে আল্লাহ তাদেরকে ভাল মন্দ দিয়ে পরীক্ষা করেন যেন তারা ফিরে আসে, যেমন হেফাজতকে শাপলা চত্বরে, জামাতকে আদালতে ও সারা দেশে, মিসরে ব্রাদারহুডকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করছেন এজন্য যে, যেন তারা ফিরে আসে, ঐক্যবদ্ধ হয়, সম্মিলিতভাবে খোদার দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে। কিন্তু না, এত কিছুর পরও তারা ফিরে আসে না, ঐক্য হচ্ছে না বিধায় আল্লাহ্‌ও তাদের উপর একের পর এক গযব ঢেলে যাচ্ছেন। এভাবেই তারা গজবের মুখোমুখি হতে থাকবে যদি না তারা ঐক্যে ফিরে আসে।

فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَرِثُوا الْكِتَابَ يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَٰذَا الْأَدْنَىٰ وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا وَإِن يَأْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُهُ يَأْخُذُوهُ ۚ أَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِم مِّيثَاقُ الْكِتَابِ أَن لَّا يَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ وَدَرَسُوا مَا فِيهِ ۗ وَالدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ [٧:١٦٩]

তারপর তাদের পেছনে এসেছে কিছু অপদার্থ, যারা উত্তরাধিকারী হয়েছে কিতাবের; তারা নিকৃষ্ট পার্থিব উপকরণ আহরণ করছে এবং বলছে, আমাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে। বস্তুতঃ এমনি ধরনের উপকরণ যদি আবারো তাদের সামনে উপস্থিত হয়, তবে তাও তুলে নেবে। তাদের কাছ থেকে কিতাবে কি অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, আল্লাহর প্রতি সত্য ছাড়া কিছু বলবে না? অথচ তারা সে সবই পাঠ করেছে, যা তাতে লেখা রয়েছে। বস্তুতঃ আখেরাতের আলয় ভীতদের জন্য উত্তম-তোমরা কি তা বোঝ না ?

বাস্তব প্রয়োগঃ পরবর্তি কালের ইহুদীরা তওরাতের উত্তরাধিকার পেয়ে যেমন উহাকে জীবিকার মাধ্যম বানিয়েছিল, তদ্রূপ মুতাআখ্যিরিন ফেরকাবাজ আলেমরা কোরানের উত্তরাধিকার পেয়ে উহাকে জীবিকার উপলক্ষ বানিয়েছে। যেমন তারা কোরান খতম করে, তারাবীহ পড়িয়ে, তাফসীর করে, কোরান শিক্ষা দিয়ে, ইমামতি করে ইত্যাদিতে টাকা নেয়। তখন যদি তাদেরকে বলা হয় আপনি কোরান বিক্রি করে টাকা নিচ্ছেন? উত্তরে তারা মুনাফেকি হাসি দিয়ে বলে ‘আরে আমরা দ্বীনের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করছি, এখন এটুকু পাপ আল্লাহ মাফ করে দিবেন। কোরানের বিনিময়ে এদেরকে যতই দেয়া হবে, ততই নিবে মানা করবে না। এভাবেই এরা আল্লাহ্‌র উপর মিথ্যা আরোপ করে।

وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَٰكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ ۚ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ۚ ذَّٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ [٧:١٧٦]

অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা করে।

বাস্তব প্রয়োগঃ এটা হল ফিরকাবাজদের অবস্থা।

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ [٧:١٧٩]

আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।

বাস্তব প্রয়োগঃ এরা হল ফিরাবাজ আলেম শ্রেনী। তাদের ফিরকাবাজির কারনে আজ ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বিশ্বময় মুসলমানরা মার খাচ্ছে- এসব তারা দেখে না, বুঝে না্‌ ঐক্য সংক্রান্ত কোরানের আয়াতগুলি তারা অনুধাবন করে না। কাজেই এরা পশুর অধম।

Sura: Al-Anfaal

إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِندَ اللَّهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ [٨:٢٢]

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলার নিকট সমস্ত প্রাণীর তুলনায় তারাই মূক ও বধির, যারা উপলদ্ধি করে না।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা মুক, বধির, তাদের ফিরকাবাজির কারনে সমগ্র উম্মাহ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তারা এটা উপলব্ধি করে না।

وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَّا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنكُمْ خَاصَّةً ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٨:٢٥]

আর তোমরা এমন ফাসাদ থেকে বেঁচে থাক যা বিশেষতঃ শুধু তাদের উপর পতিত হবে না যারা তোমাদের মধ্যে জালেম এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠোর।

বাস্তব প্রয়োগঃ বিপদ যখন আসে তখন শুধু যালিম ফিরকাবাজদের উপর আসে না, অনুসারিদের আরো বেশি আক্রান্ত করে। যেমন জামাত ও হেফাযত ট্র্যাজেডি।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ [٨:٢٧]

হে ঈমানদারগণ, খেয়ানত করোনা আল্লাহর সাথে ও রসূলের সাথে এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতে জেনে-শুনে।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা কোরান হাদীসের নির্দেশ উপেক্ষা করে ফিরকাবাজিতে লিপ্ত হয়ে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর খিয়ানত করছে, ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে।

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ ۚ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ [٨:٣٩]

আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে অন্যথায় ফিতনাও মিটবে না দ্বীনও বিজয়ি হবে না।

ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِّعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَىٰ قَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۙ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ [٨:٥٣]

তার কারণ এই যে, আল্লাহ কখনও পরিবর্তন করেন না, সে সব নেয়ামত, যা তিনি কোন জাতিকে দান করেছিলেন, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেই পরিবর্তিত করে দেয় নিজের জন্য নির্ধারিত বিষয়। বস্তুতঃ আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।

ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ ধন সম্পদ ও বিশ্ব নেতৃত্বের যে নিয়ামত দান করেছিলেন মুসলমানদের অপকর্মের কারনেই তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন ফিরকাবাজির কারনে তা একেবারে ধ্বংসের তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এখন আল্লাহ স্বয়ং এসে আমাদেরকে সেই নিয়ামত দিয়ে যাবেন না যতক্ষন না আমরা নিজেরাই নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করি। কাজেই ফিরকাবাজি মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করলেই আবার মুসলমানরা পুর্বের নিয়ামত ফিরে পাবে।

وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ [٨:٦٠]

আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

বাস্তব প্রয়োগঃ আল্লাহ্‌র নির্দেশ হল নিজেদের সামর্থ অনুযায়ি প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে ইসলামের শত্রুদের পদানত করার জন্য। কিন্তু বর্তমানে ফিরকাবাজ মুসলমানদের বাস্তবতা হল তারা ইসলামের শত্রু তথা ইহুদি খৃস্টান মুশরিক ও চায়না নাস্তিকদের ক্রীতদাসের মত দাসত্ব করছে কিন্তু নিজেদের মুসলিম ভাই- প্রতিপক্ষ ফিরকাগুলিকে ধ্বংসের ষোল আনা কসরত করছে। যেমন বেরেলভীরা দেওবন্দিদের ধ্বংসের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। দেওবন্দিরা জামাত ধ্বংসে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে, আহলে হাদীস সালাফিরা দেওবন্দি ধ্বংসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ফেরকাবাজ আলেম নামের মুরুব্বি শয়তানগুলি উম্মাহর বিপুল যুবশক্তি- জনশক্তিকে বহির্মুখি শত্রুর মোকাবেলা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিজেদের পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে সংঘাতে লিপ্ত করে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংসের রাজপথ তৈরি করে দিয়েছে। এখন এ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হল ফিরকাবাজ আলেম ধ্বংস করে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করা।

وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ۚ لَوْ أَنفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَّا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ [٨:٦٣]

আর প্রীতি সঞ্চার করেছেন তাদের অন্তরে। যদি তুমি সেসব কিছু ব্যয় করে ফেলতে, যা কিছু যমীনের বুকে রয়েছে, তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি পরাক্রমশালী, সুকৌশলী।

বাস্তব প্রয়োগঃ আল্লাহ রাসূল ইসলাম নামক সেতু বন্ধনের মাধ্যমে মুসলিম জাতীর মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন গড়ে দিয়েছেন তা পৃথিবী ও পৃথিবীর সকল সম্পদের বিনিময়েও ঐ ভ্রাতৃ বন্ধন স্থাপন করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু ফেরকাবাজ আলেমরা সেই বন্ধন কেটে দিয়ে ভাইকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে রক্ত পিপাসু শত্রুতে পরিনত করেছে।

Sura: At-Tawba

اشْتَرَوْا بِآيَاتِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَصَدُّوا عَن سَبِيلِهِ ۚ إِنَّهُمْ سَاءَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ [٩:٩]

তারা আল্লাহর আয়াত সমূহ নগন্য মুল্যে বিক্রয় করে, অতঃপর লোকদের নিবৃত রাখে তাঁর পথ থেকে, তারা যা করে চলছে, তা অতি নিকৃষ্ট।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা কোরান বিক্রি করে পার্ত্থিব তুচ্ছ মুল্যের বিনিময়ে। যেমন কোরান খতম করে, সবিনা পড়ে, তারাবীহ পড়িয়ে, ইমামতি করে, খতমে বুখারি করে টাকা নেয়। আবার মানুষকে নিজেদের ফিরকায় টেনে নিয়ে আল্লাহ্‌র সঠিক পথে চলতে অন্তরায় সৃষ্টি করে। আর সঠিক পথটি হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা, খোদার দ্বীনকে বুলন্দ করা। কত নিকৃষ্ট তাদের কার্যকলাপ।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الْأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۗ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ [٩:٣٤]

হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।

ব্যাখ্যাঃ এ আয়াতের দুটি অংশ। প্রথমাংশের ভাষ্য অনুযায়ি বুঝা যাচ্ছে আলেমরা জনগনের সম্পদ অবৈধ ভাবে ভক্ষন করে। যেমন কোরান শিক্ষা দিয়ে খতম পড়ে ইত্যাদির মাধ্যমে। আবার তারা ফিরকাবাজি করে জনগনকে সঠিক ইসলামের পথে চলতে অন্তরায় সৃষ্টি করে। আয়াতের দ্বিতিয়াংশে ইসলামী সমাজতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে।

يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ ۖ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ [٩:٣٥]

সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।

ব্যাখ্যাঃ বর্তমানের মুসলমানরাও ইহুদি নাসারাদের থেকে পিছিয়ে নেই। যেমন কেউ কেউ বলে রাসূল (শাWinking গায়েব জানেন। আবার প্রত্যেক ফেরকার অনুসারিরা স্ব স্ব মযহাব বা ফেরকার ইমাম ও মুরুব্বিদের নবী রাসূলের ন্যায় নিঃশর্ত আনুগত্য করছে। এদের প্রতি খোদার অভিশাপ।

إِلَّا تَنفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [٩:٣٩]

যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।

বাস্তব প্রয়োগঃ বর্তমানে মুসলমানরা যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে মুজলুম মুসলমানদের পক্ষে বিধর্মিদের সাথে যুদ্ধ না করে তাহলে আল্লাহ তাদেরকে আরো কঠোর শাস্তি দিবেন এবং জাতি পরিবর্তন করে দিবেন।

لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ ۚ إِن نَّعْفُ عَن طَائِفَةٍ مِّنكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ [٩:٦٦]

ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার।

বাস্তব প্রয়োগঃ ইমান আনার পর কুফুরি করেছে ফিরকাবাজরা। যেসব ফিরকা হকপন্থি এবং মুসলমানের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ায় না আল্লাহ হয়ত তাদের ক্ষমা করবেন। আর বাতিল পন্থি পরস্পর বিদ্বেষ পরায়ন ফিরকাগুলিকে আল্লাহ শাস্তি দিবেন।

الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُم مِّن بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمُنكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ وَيَقْبِضُونَ أَيْدِيَهُمْ ۚ نَسُوا اللَّهَ فَنَسِيَهُمْ ۗ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ هُمُ الْفَاسِقُونَ [٩:٦٧]

মুনাফেক নর-নারী সবারই গতিবিধি একরকম; শিখায় মন্দ কথা, ভাল কথা থেকে বারণ করে এবং নিজ মুঠো বন্ধ রাখে। আল্লাহকে ভুলে গেছে তার, কাজেই তিনিও তাদের ভূ লে গেছেন নিঃসন্দেহে মুনাফেকরাই নাফরমান।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা মুনাফিক। কারণ তারা মন্দ কাজ তথা পরস্পরের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ ও শত্রুতার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সৎকাজ তথা ঐক্য ও খেলাফতের পথে বাধা দেয়। এরা আল্লাহর বিধান তথা মুসলিম ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের কথা ভুলে গেছে। এ জন্যই আল্লাহ ও তাদেরকে ভুলে গিয়ে শাস্তি দিচ্ছেন। কাজেই এরাই প্রকৃত অশান্তি সৃষ্টিকারী।

وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَكُفْرًا وَتَفْرِيقًا بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ وَإِرْصَادًا لِّمَنْ حَارَبَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ مِن قَبْلُ ۚ وَلَيَحْلِفُنَّ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا الْحُسْنَىٰ ۖ وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ [٩:١٠٧]

لَا تَقُمْ فِيهِ أَبَدًا ۚ لَّمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَىٰ مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِ ۚ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُوا ۚ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ [٩:١٠٨]

আর যারা নির্মাণ করেছে মসজিদ জিদের বশে এবং কুফরীর তাড়নায় মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃস্টির উদ্দেশ্যে এবং ঐ লোকের জন্য ঘাটি স্বরূপ যে পূর্ব থেকে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করে আসছে, আর তারা অবশ্যই শপথ করবে যে, আমরা কেবল কল্যাণই চেয়েছি। পক্ষান্তরে আল্লাহ সাক্ষী যে, তারা সবাই মিথ্যুক।

২। তুমি কখনো সেখানে দাড়াবে না, তবে যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে, সেটিই তোমার দাঁড়াবার যোগ্য স্থান। সেখানে রয়েছে এমন লোক, যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন।

বাস্তব প্রয়োগঃ বর্তমানের মসজিদগুলি মসজিদে দিয়ার। যেমন, মারকাজ মসজিদ, আহলে হাদীস মসজিদ, হানাফি মসজিদ, জামাতি মসজিদ, সুন্নি মসজিদ, শিয়া মসজিদ ইত্যাদি। অর্থাৎ সব সাম্প্রদায়িক মসজিদ, মুসুলমানের মসজিদ নাই। এসব মসজিদ কোরান সুন্নাহর নির্দেশ অমান্য করে এক ফেরকা অন্য ফেরকার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়।

এভাবে তারা আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। অথচ তারা মুখে বলে যে ইসলামের কল্যানের জন্যই তারা এসব কথা বলে। দ্বিতীয় আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে এসব ফিরকাবাজ মসজিদে নামায পড়া যাবে না। কাজেই বিষয়টা সকলেরই চিন্তা করতে হবে।

বর্তমানের মসজিদ্গুলির অধিকাংশই মসজিদে দেয়ার, এগুলি আল্লাহ রাসূলের মসজিদ নয় বরং বিভিন্ন ফেরকা বা সম্প্রদায়ের ক্সজিদ। যেমন মারকাস মসজিদ এখানে আহলে হাদীস, জামাত ও বেরেলভীরা নামায পড়ে না। আদলে হাদীস মসজিদ এখানে দেওবন্দ ও বেরেলভীরা নামায পড়ে না। তদ্রুপ মাযারপন্থি মসজিদেও অন্যরা নামায পড়ে না। আবার প্রত্যেক ফেরকার মসজিদে প্রতিপক্ষ ফেরকার বিরুদ্ধে হিংসা বিদ্বেষ ও কুৎসা রটনা করা হয়। কাজেই এসবই মসজিদে দেরার। কারণ এসব মসজিদ মুসলমানেদের মধ্যে বিভক্তির প্রতিক এবং প্রতিপক্ষ ফেরকার শত্রু ঘাটি।

أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ فِي كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لَا يَتُوبُونَ وَلَا هُمْ يَذَّكَّرُونَ [٩:١٢٦]

তারা কি লক্ষ্য করে না, প্রতি বছর তারা দু’একবার বিপর্যস্ত হচ্ছে, অথচ, তারা এরপরও তওবা করে না কিংবা উপদেশ গ্রহণ করে না।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা কি দেখে না প্রতি বছরই তাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসে তবুও তারা ফিরকাবাজি থেকে তওবা করে না। যেমন হেফাযত জামাত তালেবান ব্রাডার হুড আইসিস ইত্যাদিরা।

Sura: Hud

الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ [١١:١٩]

যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয়, আর তাতে বক্রতা খুজে বেড়ায়, এরাই আখরাতকে অস্বীকার করে।

বাস্তব প্রয়োগঃ যারা আল্লাহ্‌র সঠিক পথ- মুসলিম ঐক্যের ক্ষেত্রে বাধা দেয়, দ্বীনের মধ্যে বিদাত ও বক্রতা সৃষ্টি করে ফিরকার জন্ম দেয় এরা কাফের।

Sura: Ar-Ra'd

لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ [١٣:١١]

তাঁর পক্ষ থেকে অনুসরণকারী রয়েছে তাদের অগ্রে এবং পশ্চাতে, আল্লাহর নির্দেশে তারা ওদের হেফাযত করে। আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।

বাস্তব প্রয়োগঃ বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর যে লাঞ্চনা দায়ক পতন ঘটেছে আল্লাহ স্বয়ং এর পরিবর্তন করে দিবেন না বরং নিজেরাই নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সকল ফিরকা ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করলেই এ জাতীর ভাগ্য পরিবর্তন হবে।

Sura: Ibrahim

وَبَرَزُوا لِلَّهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنتُم مُّغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِن شَيْءٍ ۚ قَالُوا لَوْ هَدَانَا اللَّهُ لَهَدَيْنَاكُمْ ۖ سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٍ [١٤:٢١]

সবাই আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবে এবং দুর্বলেরা বড়দেরকে বলবেঃ আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম-অতএব, তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করবে কি? তারা বলবেঃ যদি আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথ দেখাতেন, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের কে সৎপথ দেখাতাম। এখন তো আমাদের ধৈর্য্যচ্যুত হই কিংবা সবর করি-সবই আমাদের জন্যে সমান আমাদের রেহাই নেই।

বাস্তব প্রয়োগঃ যারা ফিরকাবাজি করে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে তাদের অনুসারিরা স্বিয় মুরুব্বীদের কাছে পরকালে সাহায্যের আবেদন জানাবে কিন্তু নিস্ফল হবে। কাজেই সময় থাকতে সাধু সাবধান।

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللَّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّوا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ [١٤:٢٨]

তুমি কি তাদের কে দেখনি, যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে পরিণত করেছে এবং স্ব-জাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসের আলয়ে।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা আল্লাহ্‌র নিয়ামত মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যকে শত শত ফিরকায় বিভক্ত করে কুফুরিতে পরিনত করেছে। আর উম্মাহকে ধ্বংস গহ্বরে নিক্ষেপ করেছে।

Sura: Al-Hijr

وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ [١٥:٤٧]

তাদের অন্তরে যে ক্রোধ ছিল, আমি তা দূর করে দেব। তারা ভাই ভাইয়ের মত সামনা-সামনি আসনে বসবে।

বাস্তব প্রয়োগঃ আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হল ফিরকাবাজদের অন্তর থেকে হিংসা বিদ্বেষ বিদুরিত করে সবাইকে ভাই ভাই হিসাবে একই আসনে মুখোমুখি করে বসানো। যারা আসবে না হত্যাই তাদের একমাত্র প্রতিষেধক।

كَمَا أَنزَلْنَا عَلَى الْمُقْتَسِمِينَ [١٥:٩٠]

যেমন আমি নাযিল করেছি যারা বিভিন্ন মতে বিভক্ত তাদের উপর।

الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآنَ عِضِينَ [١٥:٩١]

যারা কোরআনকে খন্ড খন্ড করেছে।

فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ [١٥:٩٢]

অতএব আপনার পালনকর্তার কসম, আমি অবশ্যই ওদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।

বাস্তব প্রয়োগঃ কোরান নাযিলের আগে মানব জাতি অসংখ্য দেব দেবির পুজায় বিভক্ত ছিল। কোরান নাযিলের পরও বিভিন্ন মুরুব্বির অনুসারিরা কোরানকে খণ্ড খণ্ড করে একেক দল একেকটা অংশের অনুসরণ করছে, যেমন দেওবন্দ মুরুব্বির অনুসারিরা কোরানের তালিম তায়াল্লুম অংশটার অনুসরণ করছে বাকিটা বাদ দিয়ে দিয়েছে। ইলিয়াস মুরুব্বির অনুসারিরা তাবলীগ অংশ রেখে জিহাদ খিলাফত ইত্যাদি বাদ দিয়ে দিয়েছে। মওদুদি মুরুব্বির অনুসারিরা রাষ্ট্রীয় ইসলাম রেখে বাকি সব বাদ দিয়ে দিয়েছে। ইবনে ওয়াহহাব মুরুব্বির অনুসারিরা কোরানের শিরক বিদাত উৎখাতের অংশটুকু রেখে বাকিতুকু বাদ দিয়ে দিয়েছে। এরা সবাই কোরানকে খণ্ড খণ্ড করে একেক দল একেকটা অংশের অনুসরণ করছে। কাজেই প্রত্যেক ফেরকাকে আমি চিৎকার করে বলতে চাই, হে ফেরকাবাজরা শুনছ, শুনছ আল্লাহ কী বলেছেন? আল্লাহ নিজের জাতের শপথ করে বলছেন যারা কোরান খণ্ড খণ্ড করে বিভিন্ন ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে তিনি অবশ্যি অবশ্যি তাদেরকে কঠোর অভিশংসনের মুখোমুখি করবেন।

Sura: An-Nahl

لِيَحْمِلُوا أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۙ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُم بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ أَلَا سَاءَ مَا يَزِرُونَ [١٦:٢٥]

ফলে কেয়ামতের দিন ওরা পূর্ণমাত্রায় বহন করবে ওদের পাপভার এবং পাপভার তাদেরও যাদেরকে তারা তাদের অজ্ঞতাহেতু বিপথগামী করে শুনে নাও, খুবই নিকৃষ্ট বোঝা যা তারা বহন করে।

বাস্তব প্রয়োগঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ফেরকার মুরুব্বিরা স্ব স্ব ফেরকাবাজির পাপ এবং যাদেরকে তারা ফিরকাবাজিতে লিপ্ত করেছিল তাদের পাপের বোঝা বহ করবে। আহঃ কত নিকৃষ্ট তারা ও তাদের বোঝা।

Sura: Al-Israa

وَإِذَا أَرَدْنَا أَن نُّهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا [١٧:١٦]

যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।

বাস্তব প্রয়োগঃ কোন জনপদের নেতৃবৃন্দ সীমা লঙ্ঘন করলেই সেখানে খোদার গজব নেমে আসে। যেমন জামাত ও হেফাযতের নেতৃবৃন্দরা ফিরকাবাজি করে সীমালঙ্ঘন করেছে বিধায় তাদের উপর গজব নেমে এসেছে। তেমনি রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ ক্ষমতার মোহে সীমা লঙ্ঘন করে, জনগনকে পোড়িয়ে মারে আর তখনই খোদার গজব নেমে আসে।

وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَٰذَا الْقُرْآنِ لِيَذَّكَّرُوا وَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا نُفُورًا [١٧:٤١]

আমি এই কোরআনে নানাভাবে বুঝিয়েছি, যাতে তারা চিন্তা করে। অথচ এতে তাদের কেবল বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজি, বিভক্তি, পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ ইত্যাদির নিষেধাজ্ঞা এবং ঐক্য, পরস্পর সহযোগিতা ভ্রাতৃত্ব ও মুহাব্বত ইত্যাদির নির্দেশ- এ জাতীয় আয়াত কোরানে বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এসেছে কিন্তু ফেরকাবাজরা এসব দেখে সংশোধন তো দুরের কথা বরং তাদের দুরত্ব ও অবাধ্যতাই শুধু বেড়েছে।

Sura: Al-Kahf

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ ۚ إِنَّا جَعَلْنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَن يَفْقَهُوهُ وَفِي آذَانِهِمْ وَقْرًا ۖ وَإِن تَدْعُهُمْ إِلَى الْهُدَىٰ فَلَن يَهْتَدُوا إِذًا أَبَدًا [١٨:٥٧]

তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজদের চেয়ে নিকৃষ্টতম যালিম আর কে আছে, যখন কোরান হাদীসের স্পষ্ট নস দ্বারা বুঝানো হয় যে, ঐক্য ফরয বিভক্তি হারাম তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। উপেক্ষা করে চলে যায়। তারা নিজেদের অতীত অপকর্ম গুলি ভুলে যায়। জামাতের ফিরকাবাজির কারনে অসংখ্য নিস্পাপ শিবির কর্মির জীবন দিতে হয়েছে। হেফাজতের ফিরকাবাজির কারনে শাপলা চত্বর কারবালা চত্বর হয়েছে। তালেবান ১৫০ মাসুম শিশু হত্যা করেছে। আইসিস নির্বিচারে মুসলিম হত্যা করে চলেছে। নিজেদের এসব অপকর্ম তাদের উপলব্ধিতে আসে না। কারণ আসলে তো ওদের হৃদয় পর্দায় ঢাকা, কর্ন কুহরে ছিপি আটা। এরা চূড়ান্ত ভাবে গুমরাহ। এদেরকে কোরান সুন্নাহর দিকে শত ডাকলেও তারা ফিরে আসবে না, সংশোধন হবে না, ঐক্যবদ্ধ হবে না। কাজেই প্রত্যেক ফেরকার অনুসারী যুব সমাজ ও ছাত্র সমাজের সামনে আজ চিন্তার কঠিন সময় সমাসন্ন। তারা কি এসব ফিরকাবাজদের ধ্বংস করবে নাকি অনুসরণ করবে। যদি অনুসরণ করে তাহলে এই ফিরকাবাজ মুরুব্বিরা নিজেদের সাথে করে অনুসারীদেরও জাহান্নামে নিয়ে যাবে। আর যদি ঐ শয়তানদের ধ্বংস করে তাহলে তারা নিজেরা যেমন মুক্তি পাবে তেমনি ইসলাম ও উম্মাহও মুক্তি পাবে।

أَفَحَسِبَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَن يَتَّخِذُوا عِبَادِي مِن دُونِي أَوْلِيَاءَ ۚ إِنَّا أَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ نُزُلًا [١٨:١٠٢]

কাফেররা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করবে? আমি কাফেরদের অভ্যর্থনার জন্যে জাহান্নামকে প্রস্তুত করে রেখেছি।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) কে ছেড়ে স্ব স্ব ফিরকার মুরুবিদের অনুসরনীয় অভিভাবক হিসাবে গ্রহন করেছে। এই অপকর্মের সাজা তারা পাবে।

Sura: Maryam

فَاخْتَلَفَ الْأَحْزَابُ مِن بَيْنِهِمْ ۖ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا مِن مَّشْهَدِ يَوْمٍ عَظِيمٍ [١٩:٣٧] أَسْمِعْ بِهِمْ وَأَبْصِرْ يَوْمَ يَأْتُونَنَا ۖ لَٰكِنِ الظَّالِمُونَ الْيَوْمَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ [١٩:٣٨]

অতঃপর তাদের মধ্যে দলগুলো পৃথক পৃথক পথ অবলম্বন করল। সুতরাং মহাদিবস আগমনকালে কাফেরদের জন্যে ধবংস।

সেদিন তারা কি চমৎকার শুনবে এবং দেখবে, যেদিন তারা আমার কাছে আগমন করবে। কিন্তু আজ জালেমরা প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে রয়েছে।

বাস্তব প্রয়োগঃ কোরান হাদীস সামনে থাকা সত্ত্বেও মুসলমানরা বিভিন্ন ফিরকায় বিভক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করল। কোরআনের নির্দেশ তারা দেখলও না শুনলও না। কিন্তু ঠিকই দেখবে ও শুনবে উপারে গিয়ে- যখন এই দর্শন শ্রবন কোনই কাজে আসবে না। কাজেই ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস কারী হে ফেরকাবাজরা, এখনো সময় আছে তওবা করে আত্ম সংশোধন করে নাও।

ثُمَّ لَنَنزِعَنَّ مِن كُلِّ شِيعَةٍ أَيُّهُمْ أَشَدُّ عَلَى الرَّحْمَٰنِ عِتِيًّا [١٩:٦٩]

অতঃপর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে যে দয়াময় আল্লাহর সর্বাধিক অবাধ্য আমি অবশ্যই তাকে পৃথক করে নেব।

বাস্তব প্রয়োগঃ কিয়ামতের ময়দানে প্রত্যেক ফেরকা থেকে যেসব আলেম সর্বাপেক্ষা বেশি ফেরকা বিদ্বেষী ছিল এবং সর্বাধিক হিংসা বিদ্বেষ ছড়িয়ে ছিল আল্লাহ তাদেরকে টেনে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দিবেন।

Sura: Al-Anbiyaa

إِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ [٢١:٩٢] وَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ ۖ كُلٌّ إِلَيْنَا رَاجِعُونَ [٢١:٩٣]

তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; একই ধর্মে তো বিশ্বাসী সবাই এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা, অতএব আমার বন্দেগী কর।

এবং মানুষ তাদের কার্যকলাপ দ্বারা পারস্পরিক বিষয়ে ভেদ সৃষ্টি করেছে। প্রত্যেকেই আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।

বাস্তব প্রয়োগঃ ইহুদি, খৃষ্টান, মুসলমান সবাই এক উম্মত, এক আল্লাহ্‌র বান্দাহ। কাজেই প্রত্যেকের কর্তব্য হল বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এক আল্লাহ্‌র ইবাদাত করা এবং তার দ্বীনকে বিজয়ি করার জন্য সংগ্রাম করা। এতদসত্ত্বেও বিভিন্ন উম্মত বিভক্ত তো হলই এমনকি উম্মতে মুহাম্মদির আলেমরা বিভিন্ন মতবাদ সৃষ্টি করে শত শত ফেরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে। কাজেই এদের বিচার আবিশ্যম্ভাবি।

وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ [٢١:١٠٥]

আমি উপদেশের পর যবুরে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে।

বাস্তব প্রয়োগঃ এ আয়াতের মধ্যে রয়েছে ইতিহাস, মহা ইতিহাস, মহা সত্য। প্রাচিন ইহুদীরা যতদিন খোদার দ্বীনের উপর ছিল ততদিন তারা সুখে শান্তিতে ছিল। কিন্তু যখনই তারা নিজেদের দেশকে জেরুজালেম ও যিহুদা নামক দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রে রুপদান করে পরস্পর ভ্রাতৃঘাতি যুদ্ধে লিপ্ত হল তখন আল্লাহ ক্রোধান্বিত হলেন এবং নেবুচাদ নেজারকে দিয়ে দেশ দুটি ধ্বংস করে দিলেন। ঠিক একইভাবে মুসলিম জাতি যতদিন ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ ছিল, খিলাফত ব্যবস্থার অধিনে ছিল, তততদিন তারাই ছিল পৃথিবীর অধিকারী শাসক। কিন্তু যখনই তারা ভ্রাতৃঘাতি হানাহানিতে লিপ্ত হল, তাদের আলেমরা বিভিন্ন বিদাত সৃষ্টি করে উম্মাহকে হাজারটা ফিরকায় বিভক্ত করে পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছড়িয়ে দিল, তখন আল্লাহ তাদের উপর গজয ঢেলে দিলেন। শাসক থেকে গোলামে পরিনত করলেন। খিলাফত ধ্বংস করে দিলেন, ভ্রাতৃঘাতি হানাহানিতে লিপ্ত করে দিলেন। এভাবে ইহুদি খৃষ্টান ও মুশরিকদের একেবারে দাসে পরিনত করে দিলেন।

Sura: Al-Hajj

كُتِبَ عَلَيْهِ أَنَّهُ مَن تَوَلَّاهُ فَأَنَّهُ يُضِلُّهُ وَيَهْدِيهِ إِلَىٰ عَذَابِ السَّعِيرِ [٢٢:٤]

শয়তান সম্পর্কে লিখে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথী হবে, সে তাকে বিভ্রান্ত করবে এবং দোযখের আযাবের দিকে পরিচালিত করবে।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজ আলেম সম্পর্কে কোরানে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথে উঠা বসা করবে সে তাকে বিভ্রান্ত করবে এবং জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। কাজেই ফিরকাবাজ আলেমদেরকে জলে স্থলে অন্তরিক্ষে নিরিক্ষে সর্বত্র বয়কট করতে হবে এবং ধ্বংস করতে হবে।

أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَا أَوْ آذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا ۖ فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَٰكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ [٢٢:٤٦]

তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি, যাতে তারা সমঝদার হৃদয় ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা কি ভূপৃষ্ঠে ভ্রমন করে না, তারা কি দেখে না ভ্রাতৃঘাতি হানাহানির কারনে প্রাচীন জেরুজালেম ও যিহুদা ধ্বংস হয়েছিল। বাগদাদ কয়েক বার ধ্বংস হয়েছিল, তাতারিরা মুসলমানদের ভ্রাতৃঘাতি হানাহানির সুযোগে মুসলিম বিশ্বে নারকিয় হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ মার্চ করে দিয়েছিল। এসব কিছু থেকেই ফিরকাবাজরা উপদেশ গ্রহন করে না। কারণ তাদের চর্মচক্ষু অন্ধ না হলেও অন্তরচক্ষু অন্ধ, এরাই গাফেল।

Sura: Al-Muminoon

فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ زُبُرًا ۖ كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ [٢٣:٥٣] فَذَرْهُمْ فِي غَمْرَتِهِمْ حَتَّىٰ حِينٍ [٢٣:٥٤]

অতঃপর মানুষ তাদের বিষয়কে বহুধা বিভক্ত করে দিয়েছে। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত হচ্ছে।

অতএব তাদের কিছু কালের জন্যে তাদের অজ্ঞানতায় নিমজ্জত থাকতে দিন।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা বিভিন্ন বিদাত সৃষ্টি করে নিজেদের মধ্যে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের লৌহ বন্ধনটি কেটে দিয়ে বহুধা বিভক্ত হয়ে গেছে। আর প্রত্যেক ফিরকা নিজেদের বিদাত নিয়ে আত্ম তুষ্টিতে লিপ্ত আছে। তারা এভাবেই দুনিয়াতে অজ্ঞতার তিমিরে ঘোরপাক খেতে থাকবে আর পরকালে জাহান্নামে যাবে।

ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ ۚ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ [٢٣:٩٦]

মন্দের জওয়াবে তাই বলুন, যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত।

Sura: An-Noor

إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَن يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ [٢٤:٥١]

মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা মুমিন নাকি কাফের এ আয়াতটা হল তার মান দণ্ড। আমরা প্রত্যেক ফিরকাকে আহ্বান করছি এসো তোমাদের মধ্যে বিতর্কিত বিষয়গুলি আমরা কোরান হাদীসের মাধ্যমে মিমাংসা করে দিব। তারপর তোমরা ফিরকা মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হও। বাস, তারা যদি কোরান হাদীসের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে- আমাদের ডাকে সারা দেয় তাহলে মুমিন অন্যথায় কাফের।

وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ [٢٤:٥٥]

তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসন কর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য।

বাস্তব প্রয়োগঃ মুসলমানরা যদি প্রকৃত মুমিন হয় তবে তাদের সাথে আল্লাহ্‌র অঙ্গিকার হল ‘পৃথিবিতে তাদের খিলাফত বা শাসন কর্তৃত্ব দান করবেন, তাদেরকে ও তাদের দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন এবং তাদের ভয়কে শান্তিতে রুপান্তরিত করে দিবেন। আর প্রকৃত মুমিন হওয়ার শর্ত হল, এক আল্লাহ্‌র বান্দা, এক নবীর উম্মত, এক কোরানের অনুসারী সকল মুসলমান ঐক্যবদ্ধ থাকা, ফিরকাবাজি না করা। কাজেই উম্মাহর উপর ফরজে আইন হয়ে গেছে, ফিরকাবাজ আলেমদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বা ধ্বংস করে হলেও সমগ্র উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশ্ব নেতৃত্বের আসন গ্রহন করা এবং আল্লাহ্‌র নিয়ামতের হকদার হওয়া।

Sura: Al-Furqaan

وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَٰذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا [٢٥:٣٠]

রসূল বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায় এই কোরআনকে প্রলাপ সাব্যস্ত করেছে।

বাস্তব প্রয়োগঃ রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্‌র দরবারে এই অভিযোগ করার কারণ হল, প্রকৃতই মুসলমানরা কোরানকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছে। যেমন ফিরকাবাজি, জিহাদ, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, মানবাধিকার, নারী অধিকার ইত্যাদির বিধান সম্বলিত কোরানের আয়াত গুলি পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে আছে। বস্তুত সম্পুর্ণ কোরানের অনুসরণ করলে তো আজ মুসলমানদের এ পতন হতো না, তারাই পৃথিবীর শাসক থাকত।

أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا [٢٥:٤٣]

আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন?

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা বুনিয়াদি কোন বিষয়ের উপর এখেলাফ করে বিভক্ত হয়নি বরং তারা তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ে প্রবৃত্তির খেয়াল খুশিমত মতান্তর করে বিরোধে লিপ্ত হয়েছে। আর এভাবে তারা ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে। কাজেই রাসূল (সা) এদের জিম্মাদার হবেন না, সুহকান সুহকান বলে হাউজে কাওসার থেকে এদেরকে বিতারিত করবেন।

Sura: An-Naml

إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَىٰ وَلَا تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاءَ إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ [٢٧:٨٠]

আপনি আহবান শোনাতে পারবেন না মৃতদেরকে এবং বধিরকেও নয়, যখন তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যায়।

বাস্তব প্রয়োগঃ যারা ফিরকাবাজিতে আত্মাহুতি দিয়ে বসেছে এদের অন্তর মৃত, ফিরকা সম্পর্কে কোরান হাদীসের কঠোর হুমকি ও ধমকি এদেরকে সজাগ করতে পারবে না। এরা বধির, ঐক্যের আহ্বান শুনবে না। কাজেই ধ্বংস ব্যতীত এদের জন্য আর কোন চিকিৎসা নাই।

وَمَا أَنتَ بِهَادِي الْعُمْيِ عَن ضَلَالَتِهِمْ ۖ إِن تُسْمِعُ إِلَّا مَن يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا فَهُم مُّسْلِمُونَ [٢٧:٨١]

আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে সৎপথে আনতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। অতএব, তারাই আজ্ঞাবহ।

বাস্তব প্রয়োগঃ যারা অন্ধ তারা ফিরকাবাজির গুমরাহি থেকে হেদায়েতের পথ ঐক্যের দিকে ফিরে আসবে না। যারা কোরানের আয়াত সমূহ বিশ্বাস করে তারা ফিরে আসবে, আর তারাই হল প্রকৃত মুসলমান।

Sura: Al-Qasas

وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ [٢٨:٥] وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُم مَّا كَانُوا يَحْذَرُونَ [٢٨:٦]

দেশে যাদেরকে দূর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করার।

এবং তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় আসীন করার এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য-বাহিনীকে তা দেখিয়ে দেয়ার, যা তারা সেই দূর্বল দলের তরফ থেকে আশংকা করত।

বাস্তব প্রয়োগঃ এটা আল্লাহ্‌র অঙ্গিকার। যাদেরকে ভূপৃষ্ঠে দুর্বল করে রাখা হয়েছে ( ইসলামী দল ও উম্মাহ) তাদেরকে অনুগ্রহ করবেন, নেতৃত্ব দান করবেন, ক্ষমতার উত্তরাধিকারী করবেন। সর্বোপরি তাদেরকে পৃথিবীর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবেন, তারপর যুগের ফিরাউন হামান ও তাদের অনুগত বাহিনিকে দেখিয়ে দিবেন সেই দুর্বলদের ক্ষমতা যা তারা আশংখা করত। তবে শর্ত হল মুমিন হতে হবে অর্থাৎ ফিরকাবাজি ছেড়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

قَالَ الَّذِينَ حَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ رَبَّنَا هَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَغْوَيْنَا أَغْوَيْنَاهُمْ كَمَا غَوَيْنَا ۖ تَبَرَّأْنَا إِلَيْكَ ۖ مَا كَانُوا إِيَّانَا يَعْبُدُونَ [٢٨:٦٣]

যাদের জন্যে শাস্তির আদেশ অবধারিত হয়েছে, তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা। এদেরকেই আমরা পথভ্রষ্ট করেছিলাম। আমরা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম, যেমন আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছিলাম। আমরা আপনার সামনে দায়মুক্ত হচ্ছি। তারা কেবল আমাদেরই এবাদত করত না।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজরা কিয়ামতের দিন শাস্তির মুখোমুখি হয়ে এই স্বীকৃতি দিবে। তারা স্ব স্ব ফিরকার প্রতারিত অনুসারিদের থেকে এ ভাবেই দায় মুক্তি ঘোষণা করবে।

تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا ۚ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ [٢٨:٨٣]

এই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। খোদাভীরুদের জন্যে শুভ পরিণাম।

বাস্তব প্রয়োগঃ পরকালের নিয়ামত তাদের জন্য যারা এক মুসলমান অন্য মুসলমানের সামনে, এক ফেরকা অন্য ফেরকার সামনে উদ্ধত্য প্রদর্শন করে না, ফিরকা সৃষ্টি করে দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করে না, তাদের জন্যই পরকালিন শান্তি ও পুরুস্কার।

Sura: Al-Ankaboot

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ [٢٩:٦٩]

যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।

বাস্তব প্রয়োগঃ যারা আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি এবং ইসলাম ও উম্মাহ রক্ষার জন্য ঐক্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আল্লাহ তাদের জন্য কোন না কোন পথ বের করে দিবেন, আল্লাহ তাদের সাহায্যার্থে আছেন।

Sura: Ar-Room

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ [٣٠:٤١]

স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।

বাস্তব প্রয়োগঃ মুসলমানদের কৃতকর্মের কারনে ইসলাম ও উম্মাহর এই বিপর্যয় ঘটেছে এবং সমগ্র ভূপৃষ্ঠে এই অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ মুসলমানরা ফিরকাবাজী করে দুর্বল হয়ে পড়েছে ক্ষমতা থেকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ফলে দাজ্জাল (ইহুদি খৃষ্টান) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে পৃথিবীতে হিংসা হানাহানি ও রক্তপাত ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত থাকত। আর তখন ইসলাম ও উম্মাহও বিজয়ি থাকত, সেই সাথে পৃথিতেও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত থাকত। কাজেই ফিরকাবাজীর বিষাক্ত পরিনতি শুধু ইসলাম ও উম্মাহই ভোগ করছে না বরং সমগ্র পৃথিবী এই বিষের জ্বালায় জ্বলছে। আল্লাহ মুসলমানদেরকে এই শাস্তি দিচ্ছেন যেন তারা হেদায়েতের পথে ঐক্যের পথে ফিরে আসে। কাজেই বুঝা যাচ্ছে ফিরকাবাজীর পরিনতি সুদুর প্রসারি এবং সর্ব বিধ্বংসি। এ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ফিরকাবাজদের ঐক্যবদ্ধ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা অথবা তাদেরকে ধ্বংস করা।

وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِي هَٰذَا الْقُرْآنِ مِن كُلِّ مَثَلٍ ۚ وَلَئِن جِئْتَهُم بِآيَةٍ لَّيَقُولَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ أَنتُمْ إِلَّا مُبْطِلُونَ [٣٠:٥٨] كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ [٣٠:٥٩]

আমি এই কোরআনে মানুষের জন্য সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি। আপনি যদি তাদের কাছে কোন নিদর্শন উপস্থিত করেন, তবে কাফেররা অবশ্যই বলবে, তোমরা সবাই মিথ্যাপন্থী।

এমনিভাবে আল্লাহ জ্ঞানহীনদের হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন।

বাস্তব প্রয়োগঃ মুসলিম উম্মাহর কিসে কল্যাণ কিসে অকল্যাণ ফিরকাবাজীর কী পরিনতি সব কিছুই আল্লাহ কোরানে সুস্পষ্ট ও সুবিস্তৃত বর্ণনা করেছেন। কাজেই ফিরকা সংক্রান্ত আয়াত গুলি যারা উপেক্ষা করবে তারা কাফের। তাদের মুর্খতার কারণে আল্লাহ তাদের অন্তর মোহরাংকিত করে দিয়েছেন। কাজেই এরা হেদায়েতের পথে- ঐক্যের পথে ফিরে আসবে না।

Sura: Luqman

وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِ آيَاتُنَا وَلَّىٰ مُسْتَكْبِرًا كَأَن لَّمْ يَسْمَعْهَا كَأَنَّ فِي أُذُنَيْهِ وَقْرًا ۖ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ [٣١:٧]

যখন ওদের সামনে আমার আয়তসমূহ পাঠ করা হয়, তখন ওরা দম্ভের সাথে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন ওরা তা শুনতেই পায়নি অথবা যেন ওদের দু’কান বধির। সুতরাং ওদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ দাও।

বাস্তব প্রয়োগঃ ফিরকাবাজদের সামনে যখন ফিরকা সংক্রান্ত আয়াতগুলি পেশ করা হয় তখন তারা দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কারণ ফিরকাবাজির কারণে এরা বধির হয়ে গেছে, তাদের কর্ণ কুহরে ছিপি আটা। তারা মনে করে ফিরকাবাজী করে তারা সঠিক কর্মটিই করেছে। এজন্যই কোরআনের আয়াত গুলি তাদের কোন উপকারে আসে না। পরকালে এদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে, কারণ এদের কারণে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হচ্ছে।

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا [٣٣:٣٦]

আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়।

سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلُ ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا [٣٣:٦٢]

যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।

وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا [٣٣:٦٧] رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا [٣٣:٦٨]

তারা আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।

হে আমাদের পালনকর্তা! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদেরকে মহা অভিসম্পাত করুন।

أَفَمَن زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ فَرَآهُ حَسَنًا ۖ فَإِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۖ فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرَاتٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٣٥:٨]

যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে, সে কি সমান যে মন্দকে মন্দ মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। সুতরাং আপনি তাদের জন্যে অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন তারা যা করে।

وَيَا قَوْمِ مَا لِي أَدْعُوكُمْ إِلَى النَّجَاةِ وَتَدْعُونَنِي إِلَى النَّارِ [٤٠:٤١]

হে আমার কওম, ব্যাপার কি, আমি তোমাদেরকে দাওয়াত দেই মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে দাওয়াত দাও জাহান্নামের দিকে।

ব্যাখ্যাঃ আমরা ফিরকাবাজদেরকে নাজাত তথা ঐক্যের দিকে ডাকি আর তারা আমাদেরকে জাহান্নাম তথা ফিরকাবাজির দিকে ডাকে।

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا رَبَّنَا أَرِنَا اللَّذَيْنِ أَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ أَقْدَامِنَا لِيَكُونَا مِنَ الْأَسْفَلِينَ [٤١:٢٩]

কাফেররা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়।

وَآتَيْنَاهُم بَيِّنَاتٍ مِّنَ الْأَمْرِ ۖ فَمَا اخْتَلَفُوا إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِي بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ [٤٥:١٧]

আরও দিয়েছিলাম তাদেরকে ধর্মের সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। অতঃপর তারা জ্ঞান লাভ করার পর শুধু পারস্পরিক জেদের বশবর্তী হয়ে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত, আপনার পালনকর্তা কেয়ামতের দিন তার ফয়সালা করে দেবেন।

وَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا أَفَلَمْ تَكُنْ آيَاتِي تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فَاسْتَكْبَرْتُمْ وَكُنتُمْ قَوْمًا مُّجْرِمِينَ [٤٥:٣١]

আর যারা কুফর করেছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের কাছে কি আয়াতসমূহ পঠিত হত না? কিন্তু তোমরা অহংকার করছিলে এবং তোমরা ছিলে এক অপরাধী সম্প্রদায়।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَتِ الرَّسُولِ وَتَنَاجَوْا بِالْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ [٥٨:٩]

মুমিনগণ, তোমরা যখন কানাকানি কর, তখন পাপাচার, সীমালংঘন ও রসূলের অবাধ্যতার বিষয়ে কানাকানি করো না বরং অনুগ্রহ ও খোদাভীতির ব্যাপারে কানাকানি করো। আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর কাছে তোমরা একত্রিত হবে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُم مِّنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ ۙ أَن تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِن كُنتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي ۚ تُسِرُّونَ إِلَيْهِم بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنتُمْ ۚ وَمَن يَفْعَلْهُ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ [٦٠:١]

মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও, অথচ তারা যে সত্য তোমাদের কাছে আগমন করেছে, তা অস্বীকার করছে। তারা রসূলকে ও তোমাদেরকে বহিস্কার করে এই অপরাধে যে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখ। যদি তোমরা আমার সন্তুষ্টিলাভের জন্যে এবং আমার পথে জেহাদ করার জন্যে বের হয়ে থাক, তবে কেন তাদের প্রতি গোপনে বন্ধুত্বের পয়গাম প্রেরণ করছ? তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ কর, ত আমি খুব জানি। তোমাদের মধ্যে যে এটা করে, সে সরলপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।

مَثَلُ الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا ۚ بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ [٦٢:٥]

যাদেরকে তওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা, যে পুস্তক বহন করে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।

বিষয়: রাজনীতি

১৩১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File