সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- ২০
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১০ জুলাই, ২০১৭, ০৩:৪৭:০৯ দুপুর
বিভক্তি বাদীদের সাথে রাসূলের দায় মুক্তি-
(إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ ﴿الأنعام: ١٥٩﴾
নিঃসন্দেহ যারা তাদের ধর্মকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দল হয়ে গেছে, তাদের জন্য তোমার কোনো দায়দায়িত্ব নেই। নিঃসন্দেহ তাদের ব্যাপার আল্লাহ্র কাছে, তিনিই পরকালে তাদের জানাবেন যে তারা কী করেছিল। (৬: ১৫৯)
ব্যখ্যাঃ- إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ - যারা বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি করে দ্বীন তথা ইসলামকে বিভক্ত করল, তারপর দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেল। لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ - এর সরল অনুবাদ হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে তুমি (রাসূল) কোন কিছুর মধ্যে নেই অর্থাৎ বিভক্তি বাদীদের সাথে রাসূলের কোন সম্পর্ক বা দায় দায়িত্ব নেই। তাদের অপকর্মের বিষয়টা আল্লাহ্র উপর ন্যস্ত, কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ্ তা’লা তাদের অপকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন অর্থাৎ বিচার করবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিয়ামতে আল্লাহ্ তা’লা কি অবহিত করবেন? এ সম্পর্কে হাউজে কাউসার সংক্রান্ত হাদীসে এসেছে -. يَقُولُ لاَ تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ - আল্লাহ রাসূল (সাঃ) কে বলবেন, আপনি তো জানেন না আপনার পরে তারা কী বিদাত সৃষ্টি করেছে অর্থাৎ নতুন মতবাদ সৃষ্টি করে বিভক্ত হয়ে গেছে।
মুফাসসীরীনে কেরামের মতামতঃ- إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ - মুজাহিদ, কাতাদা, সুদ্দি, দাহহাক- তারা বলেন, অত্র আয়াত দ্বারা ইহুদি-নাসারা উদ্দেশ্য, তারা আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য করে থাকে। কেউ বলেন এখানে মুশরিকরা উদ্দেশ্য। কেউ কেউ বলেন আয়াতটি ব্যাপকার্থক- যাতে সকল প্রকার কাফের ও বিদাতিরা অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম তাবারি বলেন, কারো কারো মতে এ আয়াত দ্বারা ইহুদি নাসার উদ্দেশ্য। তবে সঠিক কথা হচ্ছে, অত্র আয়াত দ্বারা এ উম্মতের আহলে বিদাত উদ্দেশ্য। কারণ হাদিস পাওয়া গেলে অন্য কারো কথা গ্রহণ যোগ্য নয়। যেমন –
عن أبي هريرة قال: (إن الذين فرقوا دينهم) ، قال: نزلت هذه الآية في هذه الأمة.)
عن طاوس، عن أبي هريرة: (إن الذين فرقوا دينهم وكانوا شيعًا) ، قال: هم أهل الصلاة.
অর্থাৎ আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, উক্ত আয়াত এ উম্মতের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে।
عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم، في هذه الآية:" (إن الذين فرقوا دينهم وكانوا شيعًا لست منهم في شيء) ، وليسوا منك، هم أهل البدع، وأهل الشبهات، وأهل الضلالة من هذه الأمة.
আবু হুরায়রার অন্য বর্ননায় এসেছে, রাসুল (সা) ইরশাদ করেন, এ আয়াত দ্বারা তোমরা (সাহাবাগন) উদ্দেশ্য না, বরং এ উম্মতের বিদাতী, প্রবৃত্তির অনুসারী গুমরাহ লোকেরা উদ্দেশ্য।
আবু জাফর বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে আল্লাহ তার নবীকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, যে বা যারা দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি আনবে, বিভিন্ন ফিরকায় বিভক্ত হবে রাসূল তাদের থেকে দায়মুক্ত আর তারাও রাসূল থেকে দায়মুক্ত। তারপর ইমাম তাবারি বলেন, উক্ত আয়াত ব্যাপকার্থক যা দ্বারা মুশরিক, মুর্তিপুজক, ইহুদি নাসার বিদাতি সবাই উদ্দেশ্য।
ইমাম বগবী বলেন-
عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ: "صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصُّبْحَ فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ، وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ، ------------------ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٍ"
হজরত ইরবাজ বিন সারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে উপদেশ দিলেন, তাতে চক্ষু প্রবাহিত হল অন্তর বিগলিত হল। আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মনে হচ্ছে ইহা বিদায়ী উপদেশ ! আমাদেরকে কী নির্দেশ দেন? তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে শুভ্র আলোকবর্তিকার (কোরআন) উপর রেখে গেলাম- যার রাত্রও দিনের ন্যায় আলোকময়। একমাত্র ধ্বংস প্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ উহার বক্র পথে চলবে না। যারা বেঁচে থাকবে অনেক এখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে, আমার পরে যা আমার এবং হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত বলে বুঝতে পারবে-তা আঁকড়ে ধরবে, এমনকি দাঁত দিয়ে কামড়ে পড়ে থাকবে। সাবধান, নতুন সৃষ্ট-বিদাত থেকে বেচে থাকবে, কারণ প্রত্যেক বিদাত গুমরাহী।
وَرُوِيَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "إِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى اثْنَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَتَفَرَّقَتْ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلَّا وَاحِدَةً"، قَالُوا: مَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: "مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্নিত- তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় বনী ইসরাঈল ধর্মের ব্যাপারে মতভেদ সৃষ্টি করে ৭২ ফিরকায় বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হবে। অর্থাৎ সবাই প্রবৃত্তির বশীভুত হয়ে পড়বে। তাদের একটি দল ব্যতীত সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবাগন জিজ্ঞেস করলেন, মুক্তি প্রাপ্ত দলটি কারা হে আল্লাহ্র রাসুল? তিনি উত্তর দিলেন, আমি এবং সাহাবিগন যার উপর আছি- যারা এর (ঐক্যের) উপর থাকবে। অন্য হাদিসে এসেছে সেই দলটি হল জামাত।
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ: "فَإِنَّ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ، وَأَحْسَنَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَُ وَشَرَّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا"
অর্থাৎ ইবনে মাসউদ বলেন, শ্রেষ্ঠ সত্য বানী হল আল্লাহ্র কিতাব, সর্বোত্তম হেদায়াত হল মুহাম্মদ (সাঃ) এর হেদায়েত। সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুন সৃষ্ট বিষয়, অর্থাৎ বিদাত।
তারপর ইমাম বগবি বলেন, যাদের মতে উক্ত আয়াত দ্বারা প্রবৃত্তির অনুসারী বিদাতি উদ্দেশ্য তারা বলেন, সেসব বিদাতিদের থেকে রাসূল (সাঃ) দায়মুক্ত, তারাও রাসূল (সাঃ) থেকে বিচ্ছিন্ন। বিষয়টা আল্লাহ্র উপর ন্যস্ত, কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিচার করবেন।
তাফসীরুল হাদীস গ্রন্থকার বলেন,
وحديث رواه الشيخان والنسائي عن جابر عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «إن أصدق الحديث كتاب الله، وأحسن الهدى هدى محمّد. وشرّ الأمور محدثاتها، وكلّ محدثة بدعة، وكلّ بدعة ضلالة، وكلّ ضلالة في النار»
ومعلوم أن أئمة المذاهب المشهورة الذين تواترت الروايات عن حرصهم على اتباع كتاب الله وسنة رسوله ولم يكونوا من أهل البدع والأهواء
অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, শ্রেষ্ঠ সত্য বানী হল আল্লাহ্র কিতাব, সর্বোত্তম হেদায়াত হল মুহাম্মদ (সাঃ) এর হেদায়েত। সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুন সৃষ্ট বিষয়, প্রত্যেক নবসৃষ্ট বিদাত, আর প্রত্যেক বিদাত গুমরাহী, আর প্রত্যেক গুমরাহীর ঠিকানা জাহান্নাম।
দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি বলেন যে, প্রসিদ্ধ মযহাবের ইমামগন- যাদের রয়েছে বর্ননার আধিক্য, কোরান সুন্নাহর আনুগত্যে তাদের সর্বাত্মক আগ্রহি থাকার কারনে তারা আহলে বিদাত বলে গণ্য হবেন না।
ইমাম কুরতুবি বলেন- কারো কারো মতে উক্ত আয়াত দ্বারা মুশরিকরা উদ্দেশ্য, কেউ বলেন সকল কাফের উদ্দেশ্য। তবে সঠিক কথা হচ্ছে এখানে বিদাতিরা উদ্দেশ্য- যারা ইসলামের মধ্যে নতুন নতুন মতবাদ উদ্ভাবন করে ফিরকা- বিভাজন সৃষ্টি করে। কারণ হাদিস পাওয়া গেলে সেখানে অন্য কারো ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَرَأَ" إِنَّ الَّذِينَ فَارَقُوا دِينَهُمْ". وَمَعْنَى (شِيَعاً) فِرَقًا وَأَحْزَابًا. وَكُلُّ قَوْمٍ أَمْرُهُمْ وَاحِدٌ يَتَّبِعُ بَعْضُهُمْ رَأْيَ بَعْضٍ فَهُمْ شِيَعٌ.
অর্থাৎ আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসুল (সা) উক্ত আয়াত পাঠ করে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, প্রত্যেক দলের অবস্থা একই- তারা একে অন্যের রায় মেনে চলে। কাজেই এরা সবাই শিয়া বা বিভিন্ন দল। ব্যাখ্যাঃ ফিরকাগুলি নিজেদের মুরুব্বিদের রায় মেনে চলে।
وَرَوَى أَبُو هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي هَذِهِ الْآيَةِ" إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ" هُمْ أَهْلُ الْبِدَعِ وَالشُّبُهَاتِ، وَأَهْلُ الضَّلَالَةِ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ. وَرَوَى بقية بن الوليد عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِعَائِشَةَ: (إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكانُوا شِيَعاً إِنَّمَا هُمْ أَصْحَابُ الْبِدَعِ وَأَصْحَابُ الْأَهْوَاءِ وَأَصْحَابُ الضَّلَالَةِ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ، يَا عَائِشَةُ إِنَّ لِكُلِّ صَاحِبِ ذَنْبٍ تَوْبَةً غَيْرَ أَصْحَابِ الْبِدَعِ وَأَصْحَابِ الْأَهْوَاءِ لَيْسَ لهم توبة وأنا برئ مِنْهُمْ وَهُمْ مِنَّا بُرَآءُ).
অর্থাৎ হযরত আবু হুরায়রা এবং হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ)কে বলেন- إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ - উক্ত আয়াত দ্বারা এ উম্মতের বিদাতী, প্রবৃত্তির অনুসারী ও গুমরাহ লোকেরা উদ্দেশ্য। হে আয়েশা, প্রত্যেক গুনাহগারের তাওবা আছে কিন্তু বিদাতী ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের কোন তাওবা নাই অর্থাৎ তাদের তাওবা কবুল করা হয় না। আমি তাদের থেকে দায়মুক্ত তারাও আমার থেকে মুক্ত, বিচ্ছিন্ন।
وأنا برئ مِنْهُمْ وَهُمْ مِنَّا بُرَآءُ).) আমি তাদের থেকে দায়মুক্ত তারাও আমার থেকে মুক্ত - এর ব্যাখ্যাঃ
অত্র হাদীস ফিরকাবাজদের জন্য ভয়াবহ বিপদ সংকেত। এতে বুঝা যায়, শিয়া, সুন্নী, বেরেলভী, দেওবন্দী, জামাতী, তাবলিগী, সুফিবাদী, ব্রাদারহুড, তালেবান, আইসিস ইত্যাদির সাথে রাসূল (সাঃ) এর কোন সম্পর্ক নাই। রাসূল (সাঃ) তাদের থেকে দায়মুক্ত তারাও রাসূল (সাঃ) থেকে বিচ্ছিন্ন-সম্পর্কহীন। কারণ তারা বিদাত তথা নতুন নতুন মতবাদ সৃষ্টি করে একেকটা ফিরকা গঠন করে জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হায় আফসোস, হায় সর্বনাশ। এখনো কী তাদের হুস হবে না।
غَيْرَ أَصْحَابِ الْبِدَعِ وَأَصْحَابِ الْأَهْوَاءِ لَيْسَ لهم توبة).) কিন্তু বিদাতী ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের কোন তাওবা নাই- এর বাখ্যাঃ
অনন্তর উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীর কারকগন বিদাতের উপর গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন। তৎসংক্রান্ত হাদীস ও মনিষীদের অনেক উক্তি নকল করেছেন। বিদআত এমনই ভয়ঙ্কর পাপ যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন অন্য সকল গুনাহের তওবা আছে কিন্তু বিদাতের কোন তওবা নাই। কারণ, অন্যান্য কবিরা গুনাহ যেমন চুরি, ডাকাতি, খুন, যিনা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা, চাদাবাজি ইত্যাদির সমাধান আছে অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দিয়ত বা ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলেই পার্থিব ক্ষতি পুষিয়ে যায়। কিন্তু বিদআত এমনই সর্বগ্রাসী ও সর্বনাশা বিষয় যে, এটা উম্মাহ ও মানব সভ্যতা ধ্বংস করে দেয়। যেমন উম্মাহর মধ্যে ফিরকা বিভক্তির কারণ হচ্ছে বিদআত। প্রত্যেকটা দল ইসলামের নামে ইসলামের মধ্যে একেকটা বিদআত সৃষ্টি করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তারপর বিভক্ত হয়ে গেছে। এভাবে অসংখ্য ফিরকায় বিভক্ত হয়ে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। একে অন্যের বিরুদ্ধাচরন করে পরস্পরকে হত্যা করছে, দুবর্লতর জাতিতে পরিণত হয়েছে। আর এ সুযোগে কাফেররা মহাউল্লাসে তাদের নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কাজেই বিদাতের পরিণতি বিভক্তির ফলে উম্মাহর যে ক্ষতি হচ্ছে তার কোন ক্ষতিপূরণ নাই বিধায় তওবা নাই।
যেমন উম্মাহর দুবর্লতার সুযোগে ফিলিস্তিন, আরাকান, কাশ্মির, চিনা তুর্কিস্তানসহ আরো অন্যান্য ভূমি কাফেররা দখল করে আছে। লক্ষ লক্ষ মুসলিম হত্যা করছে। বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করছে, সম্পদ শোষণ করছে, আবার মুসলিম দেশগুলিতে ফিরকাবাজরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছে, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ধ্বংস করছে। এই যে বিপুল ক্ষতি এসবের কি কোন ক্ষতিপূরণ হতে পারে, ক্ষতিপূরণ সম্ভব? ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয় বিধায় তওবাও সম্ভব নয়। এজন্যই বিদআত সৃষ্টিকারী ফিরকাবাজদের কোন তওবা নাই অর্থাৎ তাদের তওবা কবুল করা হয় না। তওবা কবুল হয় না বলেই নামায, রোযা, দোয়া কবুল হয় না। দোয়া কবুল হয় না বলেই উম্মাহর জন্য আমাদের দোয়া ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে আজ উম্মাহ অজাত, কুজাত, বেজাতের হাতে মার খেয়ে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে উপনিত হয়েছে।
একজন আলেম দাঁড়িয়ে বলল, না না আমরা তো বিদআত সৃষ্টি করিনি, আমরা হক পন্থি, হকের উপর আছি। মোজাহিদ বলল, এ দাবী সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। কারণ বিদাতের সংজ্ঞা হচ্ছে ধর্মের নামে এমন কোন নতুন বিষয় সৃষ্টি করা এবং সওয়াবের নিয়তে অনুশীলন করা যা রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না। কাজেই এখন আমরা প্রতিটি ফিরকার মতবাদে বিদআত অনুসন্ধান করব। তবে তাদের সম্পূর্ণ মতবাদ তুলে ধরা সম্ভব নয়। সংক্ষেপের খাতিরে দুয়েকটি করে পয়েন্ট উল্লেখ করব। যেমন শিয়া মতবাদে হযরত আলী (রাঃ) এর খেলাফত তত্ত্ব, সুন্নীদের মধ্যে বেরেলভীদের রাসূল (সাঃ) নূরের সৃষ্টি ও গায়েবজ্ঞান তত্ত্ব, জামাতের সাহাবাগণের মি’ইয়ারে হক তত্ত্ব, তাবলীগের জিহাদ ও খেলাফত ব্যবস্থার বিকল্প দাওয়াত তত্ত্ব, ব্রাদারহুড ও জামাতের পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক- গণতন্ত্রের চাঁচে ঢেলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা তত্ত্ব, ওহাবি-সালাফীদের তাকলিদ ও শিরক বিদআত নির্মূল তত্ত্ব, দেওবন্দীদের ধর্মীয় ও বস্তুবাদী শিক্ষা তত্ত্ব। এভাবে প্রত্যেকটি ফিরকা নতুন নতুন তত্ত্ব জন্ম দিয়ে মুসলিম জামাত থেকে খারেজ হয়ে গেছে।
এখন আপনাদের কাছে প্রশ্ন হলো, এসব মতবাদ রাসূল (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল কিনা ? এমনকি খায়রুল কুরুনে ছিল কিনা ? তদুপরি কোরআন হাদীসে এসব মতবাদ আছে কিনা ? যদি থাকে তাহলে বিদআত নয়, আর যদি না থাকে তাহলে বিদআত। তদুপরি এসব বিষয় পার্থিব যেমন বিয়ে, চাকরি, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এবং পারলৌকিক যেমন নামায, রোযা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন উপকারে আসে কিনা? যেমন পাত্র পাত্রিকে বা ইন্টারভিউয়ে এমন প্রশ্ন করা হয় কিনা যে, রাসূল কিসের সৃষ্টি , সাহাবাগণ অনুসরণ যোগ্য কিনা ইত্যাদি। সবাই সমস্বরে জবাব দিল, না না, এসব বিদাত রাসুল ও পরবর্তি যুগে ছিল না আর এগুলি ইহকাল ও পরকালের জন্যও কোন প্রয়োজনীয় বিষয় নয়।
মোজাহিদ বলল, তাহলে বুঝা যাচ্ছে এসব মতবাদ শুধুমাত্র উম্মাহর ইহকাল- পরকাল ধ্বংসের হাতিয়ার বা উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, কোন কল্যাণের অবলম্বন নয়। আবার এ বিদআত সৃষ্টির মাধ্যমে দুটি ভয়ঙ্কর অপরাধ সংগঠিত হলো। ১। বিদাতীর দোয়া কবুল হয় না, সে জাহান্নামী। ২। এ বিদাতের ভিত্তিতে যখনই পৃথক ফিরকা হয়ে গেল সাথে সাথেই তারা কাফের হয়ে গেল।.. يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ ۚ.. আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কাজেই এখন বিদআত পরিত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ব্যতীত উম্মাহর ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তির দ্বিতীয় কোন পথ নেই। আর ঐক্যের দায়িত্ব আলেম সমাজের উপর।
বিধানঃ উপরোক্ত আলোচনায় বুঝা গেল, দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হারাম, যারা এমন অপকর্ম করবে তাদের সাথে রাসূল (সাঃ) এর কোন সম্পর্ক থাকবে না, কিয়ামত দিবসে রাসূল তাদের কোন দায় দায়িত্ব বহন করবেন না। ইহুদী খৃষ্টানরা যেভাবে নিজেদের ধর্মে এখতেলাফ করে, বিভক্তি এনে ধ্বংস হয়ে গেছে তদ্রুপ মুসলমানরাও ইসলামের মধ্যে বিভক্তি আনলে ধ্বংস হয়ে যাবে। কাজেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে খোদার দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
অনুসিদ্ধান্তঃ উক্ত আয়াতের আলোচনায় বুঝা গেল যে, যারা নিজেদের দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দল বা ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে তাদের সাথে রাসূল (সাঃ) এর কোন সম্পর্ক নাই, পরকালে রাসূল তাদের দায় দায়িত্ব বহন করবেন না, আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। এখন বাস্তবতা হল, আমরা দ্বীনকে বিভক্ত করে বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত হয়ে আছি। কাজেই সবাই এমর্মে আত্ম স্বীকৃতি দান করুন যে, ইহকালে পরকালে রাসূল (সাঃ) এর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নাই, আল্লাহ আমাদের বিচার করবেন। চুপ থাকবেন না, সবাই কথা বলুন। কিন্তু কেউ কথা বলল না, মাথা নিচু করে বসে রইল। হাসান মুসান্না দাঁড়িয়ে হেসে বললেন, ‘নীরবতা সম্মতির লক্ষণ, তাহলে কি বুঝে নেব যে, ‘রাসূল (সা) এর সাথে কোন সম্পর্ক নাই’ আপনারা এ কথার স্বীকৃতি দিলেন।
তখনি সকলেই দাঁড়িয়ে উঠল আর চিৎকার চেচামেচি শুরু করল। হলের মধ্যে হৈ হুল্লা ও হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। কেউ বলল, আমরা ইসলাম পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দলে যোগ দিয়েছি কাউকে নেতা বানানোর জন্য, পয়সা কামানোর জন্য যোগ দেইনি। কেউ বলল, আমাদের ইসলাম প্রিতির সুযোগ নিয়ে আমাদেরকে বিভক্ত করা হল কেন? কেউ ফিরকাবাজদের অভিসম্পাত রতে লাগল। কেউ বলল, আমাদের মুরুব্বিরা কোরান হাদীসের বিধান লঙ্ঘন করে আমাদেরকে বিভক্ত করে ইহকালে মৃত্যুর দিকে আর পরকালে জাহান্নামের পথে ঠেলে দিয়েছে। এরা আমাদের সাথে বেইমানি করেছে আর আল্লাহ রাসূল (সাঃ) এর সাথে গাদ্দারি করেছে। কাজেই এদের বিচার হতে হবে, অবশ্যি বিচার হতে হবে। তারপর সবাই সমস্বরে চিৎকার শুরু করল ‘আমরা ফিরকাবাজ আলেমদের বিচার চাই, বিচার চাই। ওদের মৃত্যুদণ্ড চাই।
হাসান মুসান্না দু’হাত তুলে সবাইকে শান্ত করে বললেন, এতক্ষণে আমাদের হুশ হল যে, ফিরকাবন্ধি থেকে আমরা কুফুরির উপর ছিলাম। আর ফিরকাবাজ আলেমদের হত্যা বা ধ্বংস করতে হবে, নচেৎ এরা যতদিন বেচে থাকবে ফিরকাবাজি করেই যাবে, উম্মাহর ঐক্য সম্ভব হবে না। কাজেই আমরা জনগন ও সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি ইনকুইজিশন কোর্ট বা শরীয়া আদালত গঠন করে ফিরকাবাজদের বিচার করতে হবে। নচেৎ আমরাই শরীয়া আদালত গঠন করে তাদের বিচার করব, তখন সরকাব আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এখন সবাই ফিরকাবাজী থেকে তওবা করুন, ফিরকাবাজ আলেমদের বিচারের অঙ্গিকার করুন আর এই তওবা ও অঙ্গিকার সমগ্র উম্মাহর তওবা ও অঙ্গিকার বলে গণ্য হবে। তারপর নারা বুলন্দ করুন, ‘ফিরকাবাজ থাকলে ইসলাম থাকবে না, ইসলাম না থাকলে আমরা থাকব না, আমরা থাকলে ফিরকাবাজ থাকবে না। সবাই তওবা করল আর ফিরকাবাজ ধ্বংসের শপথ গ্রহণ করল।
এরপর তিনি বললেন, রাত অনেক হয়েছে আজকের মত আমাদের মজলিস এখানেই সমাপ্ত হল। আস- সালামু আলাইকুম, খোদা হাফেজ।
বিষয়: রাজনীতি
৬৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন