সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- ১৬
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০৭ জুলাই, ২০১৭, ১১:৪৭:৪৭ সকাল
বিভক্তির কারণ পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ১৬
﴿وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى لَّقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۚ وَإِنَّ الَّذِينَ أُورِثُوا الْكِتَابَ مِن بَعْدِهِمْ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ مُرِيبٍ﴾
মানুষের কাছে যখন জ্ঞান এসে গিয়েছিল তারপরই তাদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে৷ আর তার কারণ পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ। একটি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মূলতবী রাখা হবে একথা যদি তোমর রব পূর্বেই ঘোষণা না করতেন তাহলে তাদের বিবাদের চুড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়া হতো৷ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, পূর্ববর্তীদের পরে যাদের কিতাবের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে তারা সে ব্যাপারে বড় অস্বস্তিকর সন্দেহের মধ্যে পড়ে আছে৷(শুরা/ ১৪)
যোগসুত্র ও ব্যাখ্যাঃ পূর্বের আয়াতে আল্লাহ্ তা’লা নির্দেশ দিয়েছেন . أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ. অর্থাৎ বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ্র নির্দেশ সত্ত্বেও ইহুদী, নাসারা, হিন্দু, বৌদ্ধরা এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের মধ্যে দেওবন্দী, বেরেলভী, সুফিবাদী, জামাতী, সালাফী, তাবলিগী, ব্রাদার হুড ইত্যাদিরা বিভক্ত হয়ে আছে কেন, তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহ্র নির্দেশ পালন করছে না কেন? এর উত্তরে আল্লাহ্ তা’লা বলেন তারা বিভক্ত হয়েছে এজন্য নয় যে, তাদের কাছে কোন দলীল প্রমাণ নেই বরং পূর্বের জাতি গুলোর কাছে দলীল- প্রমাণ তো আছেই আর মুসলিম ফেরকাগুলির কাছে তা উত্তম রূপেই আছে, কারণ কোরআন তাদের সামনে। কিন্তু তারা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, অহমিকা নেতৃত্ব ইত্যাদি কারণে বিভক্ত হয়েছে এবং ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে না।
এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে আল্লাহ্ তা’লা এসব বিভক্তিবাদিদেরকে শাস্তি দিচ্ছেন না কেন ? উত্তরে আল্লাহ্ তা’লা বলেন, এ বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, অবাধ্যদের দুনিয়াতে শাস্তি দিবেন না। পরকালে তাদের বিচার করবেন এবং শাস্তি দিবেন। যেমন إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ - নিঃসন্দেহ তাদের ব্যাপার আল্লাহ্র কাছে, তিনিই পরকালে তাদের জানাবেন যে তারা কী করেছিল। (৬: ১৫৯)
وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِن بَعْدِ - তারা অজ্ঞতা বশতঃ বিভক্ত হয়নি বরং- الفرقة الضلالة - বিভক্তি গুমরাহি এ কথা জানার পর বিভক্ত হয়েছে। আর এ বিভক্তির কারণ হচ্ছে পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, নেতৃত্ব, দুনিয়ার লোভ, অহমিকা ইত্যাদি।
وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ - এখানে বিভক্তিবাদিদের শাস্তি বিলম্বিত করে কিয়ামত দিবসে আযাবের কথা বলা হয়েছে . " بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ(কিয়ামতই তাদের শাস্তির প্রতিশ্রুত সময়কাল) কারণ দুনিয়াতেই ফ্য়সালা হয়ে গেলে মানব জাতির পরীক্ষা অর্থহীন হয়ে পড়ে। কেউ কেউ বলেন, আল্লাহ্ তা’লা দুনিয়াতেই তাদের জন্য শাস্তির সময় নির্ধারণ করেছেন অর্থাৎ যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের হত্যা, বন্দি, লাঞ্চনা, উচ্ছেদ ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের ফয়সালা করা হবে। যেমন হেফাজত ও জামাতকে ব্যাপকভাবে হত্যা করা হয়েছে। পাকাফগান ও মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানরাই ব্যাপকভাবে মুসলিম হত্যা করছে। তাছাড়া অমুসলিম দেশগুলিতে তো মুসলিম নিধনযজ্ঞ চলছেই।
وَإِنَّ الَّذِينَ أُورِثُوا الْكِتَابَ.- এখানে উদ্দেশ্য পূর্ববর্তী ইহুদী নাসারাদের বংশধররা যারা কোরআন বা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি সন্দেহে নিমজ্জিত থাকার কারণে ঈমান আনয়ন করে নি। কেউ কেউ বলেন, এখানে আরবের মুশরিকরা উদ্দেশ্য যারা আহলে কিতাবের পরে কোরআনের উত্তরাধিকারী হয়েছে।
(বগবি, ফতহুল কাদির, কুরতুবি , তাবারি)
বাস্তব প্রয়োগঃ বস্তুত আল্লাহ তা’লা ইহুদী, খৃষ্টান, মুশরিক ইত্যাদিদের বিভিন্ন অপকর্ম উপমা হিসাবে কোরানে উল্লেখ করেছেন মুসলমানদের উপদেশ প্রদানের উদ্দেশ্যে । যাতে মুসলমানরা সেসব অপকর্ম, তাদের গোমরাহির পথ-পদ্ধতি- প্রক্রিয়া ও বিষয়গুলি জেনে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে এবং সেগুলি থেকে বেঁচে থাকতে পারে। কাজেই নেতিবাচক সেসব আয়াত ইহুদী নাসারার সাথে সংশ্লিষ্ট না করে ব্যাপকার্থে প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু এখন বিষয়টি মহাবিপত্তি হয়ে উঠেছে এবং উম্মাহ ধ্বংসের প্রধান কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। মুসলমানরা কোরআনের বিধান গ্রহণ করতে পারছেনা, উপকৃত হতে পারছে না। কারণ আলেম সমাজ নেতিবাচক আয়াতগুলিকে ইহুদী নাসারাদের শানে নাযিল হয়েছে, এখানে ইহুদী নাসারা উদ্দেশ্য, এটা ইহুদী নাসারা বা মুশরিকদের জন্য খাস ইত্যাদি বলে কোরআনকে বর্জন করছেন যা- স্পস্টত কুফুরি।
এভাবে বিভক্তিবাদসহ অন্যান্য বিষয়ের অসংখ্য আয়াত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আলেমগণ এগুলি ইহুদী নাসারার সম্পত্তি গন্য করে বর্জন করে চলেছেন। এজন্যই আজ উম্মাহর এত দুর্গতি। আর এ কারণেই রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্র দরবারে নালিশ করবেন –
( وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَٰذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا ﴿الفرقان - আর রাসূল বলছেন ''হে আমার প্রভু ! নিঃসন্দেহ আমার স্বজাতি এই কুরআনকে পরিত্যাগ করেছিল।(২৫: ৩০) অথচ কোরআনের মূলনীতি হচ্ছে-যে কোন আয়াত ইহুদী নাসারাদের উদ্দেশ্যে হউক বা অন্য যে কোন ইল্লত বা প্রেক্ষাপটে নাযিল হউক না কেন কিয়ামত পর্যন্ত সেই অবস্থা যেখানে পাওয়া যাবে সেই আয়াত সেখানেই প্রযোজ্য হবে। কোরআন সার্বজনিন ও সর্বকালীন।
সুতরাং বক্ষমান আয়াতটি বর্তমান মুসলিম উম্মাহর ক্ষেত্রে অতি উত্তমরূপে প্রযোজ্য। এমনকি বাস্তবতায় মনে হয় উম্মাহর বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটেই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। কারণ বর্তমানে মুসলমানরা শত শত ফিরকায় বিভক্ত হয়ে আছে শুধুমাত্র হিংসা বিদ্বেষের বশবর্তি হয়ে, যৌক্তিক কোন কারণের উপর ভিত্তি করে নয়। ইসলামের মূলনীতি হলো বুনিয়াদি বিষয়ে এখতেলাফ করা যাবে না, ফুরুয়ি বা শাখাগত বিষয়ে এখতেলাফ জায়েয তবে এফতেরাক (বিভক্তি) হারাম। আর বুনিয়াদি বিষয়ে এখতেলাফ করেছে শিয়াদের মধ্যে বাহায়ি ও সুন্নিদের মধ্যে কাদিয়ানী- এ দুইদল উম্মাহ থেকে খারিজ হয়ে গেছে- তারা অমুসলিম। কিন্তু সাধারণ শিয়া ও সুন্নিরা বুনিয়াদি বিষয়ে এখতেলাফ করেনি বিধায় তাদের মধ্যে এফতেরাক হারাম। আর বুনিয়াদী বিষয় হচ্ছে ঈমানে মুফাসসাল। যেমন, امنت بالله و ملاءكته و كتبه و رسله------ অর্থাৎ আল্লাহ, ফিরিস্তা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, কিয়ামত দিবস, তাকদীরের ভাল- মন্দ এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থান- এই হচ্ছে ঈমানের শর্ত, এগুলোতে যে বিশ্বাস করবে সে পূর্নাঙ্গ মুমিন। তার সাথে ঐক্য ফরয বিভক্তি হারাম। আর শিয়া- সুন্নী নির্বিশেষে মুসলিম দাবীদার কেউ উক্ত বিষয় গুলিতে মতভেদ করে না বিধায় তাদের মধ্যে বিভক্তির সুযোগ নেই।
কিন্তু তারা ফুরুয়ি বিষয়ে এখতেলাফ করে এফতেরাক হয়ে গেছে। যেমন শিয়ারা বলে হযরত আলী খেলাফতের প্রথম হকদার, পূর্বের তিন খলিফা সেই হক ছিনতাই করেছেন। এ মতবাদ ফাসেকি হতে পারে কিন্তু কুফূরি নয় বিধায় এফতেরাকের সুযোগ নেই। আবার আমরা সুন্নীরা তো আরো জঘন্য। কারণ আমরা তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ে এখতেলাফ করে এফতেরাক হয়ে গেছি। যেমন কেউ বলতেই পারে সাহাবায়ে কারাম মি’য়ারে হক নয় অথবা মি’ইয়ারে হক। কেউ বলতেই পারে রাসূল (সাঃ) নূরের সৃষ্টি অথবা মাটির সৃষ্টি। কেউ বলতেই পারে মাযার যিয়ারত, মিলাদ-কিয়াম জায়েয অথবা জায়েয নয়। এগুলি সাধারণ গুনাহ-খাতার বিষয়, মৌলিক কোন বিষয় নয় বিধায় ফিরকা বিভক্তির কোন সুযোগ নাই। তবে এসব মতান্তর থেকে দূরে থাকা উত্তম। কারণ এসব বিষয় ইবাদত-বন্দেগী, শিক্ষা-দিক্ষা, চাকরি, বিয়ে-শাদি ইত্যাদি কোন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কোন বিষয় নয়, শুধুমাত্র উম্মাহ ধ্বংসের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কারণ এসব ফুরুয়ি বিষয়ে এখতেলাফের উপর ভিত্তি করে ইসলামের শস্য ভাণ্ডার ভারত বর্ষের মুসলমানরা বেরেলভী, দেওবন্দী, জামাতী, তাবলীগি, সালাফী ইত্যাদি পরস্পর বিদ্বেষী ফেরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে। ফলে ভারত বর্ষে এমনকি সমগ্র বিশ্বে মুসলিম উত্থানের সম্ভাবনাকে আতুর ঘরেই গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে। আর এসব ফিরকাবাজরা পরস্পরের প্রতি এতটাই হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করে যে, তারা ইহুদী-খৃষ্টান, হিন্দু-বৌদ্ধের সাথে ঐক্য করতে রাজি আছে, তাদেরকে ডেকে এনে প্রতিপক্ষ ফিরকাকে সাইজ করতে প্রস্তুত আছে কিন্তু নিজেদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে মোটেও প্রস্তুত নয়। যেমন, আরব বিশ্ব ইসরাইলের সহায়তায় ব্রাদারহুড, ইরান ও কাতারকে শায়েস্তা করার চেস্টায় আছে। সুতরাং এসব বিভক্তিবাদিরা বায়্যিনাহ আসার পর অর্থাৎ কোরআন হাদীসে বিভক্তি সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর ধ্মকি আসার পরেও বিভক্তির সৃষ্টি করেছে। কাজেই বলতে হচ্ছে এসব ফিরকাবাজদের উদ্দেশ্যে দেড় হাজার বছর পূর্বে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়েছে।
وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ - এর বাস্তব প্রয়োগঃ রাসূল (সাঃ) দোয়া করে গেছেন, তার উম্মতকে যেন পাপের কারণে আদ-সামুদ ইত্যাদি সম্প্রদায়ের ন্যায় সমূলে ধ্বংস না করা হয়। আল্লাহ্ তা’লাও পরকালের শাস্তি নির্ধারণ করে ইহকালে ধ্বংস না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে সংশোধন ও সতর্কতামূলক কিছু কিছু শাস্তি দিবেন। আর মুসলিম জাতির উপর এ শাস্তির নযির সমগ্র বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে। বিশেষতঃ বিভক্তির ফলস্বরূপ মধ্যপ্রাচ্য তো আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়েছে। আর বাংলা দেশের প্রেক্ষাপট হচ্ছে শাপলা চত্বরে তরিকতী ও অন্যান্যদের সমর্থনে মুসলমান মুসলমানদের হত্যা করেছে। দেওবন্দী, তরিকতী ও অন্যান্যদের সমর্থনে মুসলমানরাই জামাতকে আদালতে, পথে-ঘাটে, মাঠে-প্রান্তরে হত্যা করে চলেছে। এসব হলো আল্লাহ্র চূড়ান্ত সতর্কবার্তা। এখনো যদি বিভক্তিবাদিদের হুস না আসে, তারা যদি ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে আল্লাহ্ তা’লা চূড়ান্ত গযব ঢেলে দিবেন। আল্লাহ্র গযব হিসেবে বার্মা বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিবে, ভারত পাকিস্তান ধ্বংস করে দিবে, ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস করে কথিত প্রমিজল্যান্ড বৃহত্তর ইসরাইল গঠন করবে (প্রভু আমাদের ভুমিগুলি হেফাজত করুন)। কাজেই ঐক্য ব্যতিত এ জাতির মুক্তির দ্বিতীয় পথ নেই। যারা ঐক্যের অন্তরায় তারা শয়তান বিধায় তাদেরকে হত্যা করে হলেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যথায় এ জাতির ধ্বংস কেউ রুখতে পারবে না।
وَإِنَّ الَّذِينَ أُورِثُوا الْكِتَابَ.- যারা ইহুদী খৃষ্টান বা আরবের কাফেরদের পরে কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়েছে তারা কিতাব সম্পর্কে সন্দেহে নিপতিত। এখন বাস্তবতা হচ্ছে উল্লেখিত কাফেরদের পরে কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়েছি আমরা। আর আমরাই কোরআন সম্পর্কে চরম সন্দেহের দোলায় নিমজ্জমান। আমাদের প্রগতিশীলরা মনে করে কোরানি আইন দিয়ে রাষ্ট্র চালানো সম্ভব না, কোরআনে মজবুত কোন অর্থ ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা নাই। আর এজন্যই তারা পশ্চিমা দাজ্জালি মতবাদের অনুসরণ করছে। অথচ কোরআনের বিধান কত ইনসাফপূর্ন কত মানবিক তা তারা অনুধাবন করার চেষ্টাও করে না (বিস্তারিত খিলাফত ইশতিহার)। আবার বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত আলেম সমাজ মনে করে কোরআন মুসলিম জাতিকে রক্ষা করার সামর্থ রাখে না। এজন্যই মুসলিম জাতির এ পতন, বিশ্বময় তারা মার খাচ্ছে। কিন্তু এ পতনের মূলে যে আলেম সমাজ দায়ী, তাদের সৃষ্ট ফিরকা বিভক্তিই যে উম্মাহর ধ্বংস ডেকে আনছে এ কথা তারা বুঝে না। বিভক্তিবাদ সম্পর্কে কোরআনের আয়াতগুলি তারা চোখে দেখে না, অর্থ বুঝে না, বুঝতে চায় না। সুতরাং এভাবেই মুসলিম জাতি কোরানের ব্যাপারে সন্দেহে নিমজ্জিত হয়ে স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
অনুসিদ্ধান্তঃ আয়াতের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে পুর্বের প্রেক্ষাপটে ইহুদি খৃষ্টান ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেরেলভী, দেওবন্দী, জামাতী, তরিকতী, সালাফি ইত্যাদিরা কোন কারনের উপর ভিত্তি করে বিভক্ত হয়নি, বরং পরস্পর হিংসা- বিদ্বেষের কারনে বিভক্ত হয়েছে। যেমন ইহুদীরা প্রতিক্ষায় ছিল শেষ নবী তাদের মধ্যে আসবেন, নাসারারা প্রতিক্ষায় ছিল প্যারাক্লিট তাদের মধ্যে আসবেন, হিন্দুরা অপেক্ষায় ছিল কল্কি, নরাসংশ (মুহাম্মদ সাঃ) তাদের মধ্যে আসবেন, বৌদ্ধরা প্রতিক্ষায় ছিল অন্তিম বুদ্ধ- মৈত্রেয় বুদ্ধ (মুহাম্মদ সাঃ) তাদের মধ্যে আসবেন। কিন্তু যখন তিনি আরবদের মধ্যে আসলেন-তখন তারা সবাই মুখ ফিরিয়ে নিল এবং হিংসা-বিদ্বেষ ও নেতৃত্বের কারণে বিভক্ত হয়ে পড়ল।
আর মুসলিম ফিরকাগুলিও পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ও একে অন্যের নেতৃত্বের প্রতি কুপিত থাকার কারণে বিভক্ত হয়ে আছে। যেমন দেওবন্দীরা জামাতী, তরিকতী ও অন্যান্যদের নেতৃত্ব মেনে নিবে না। তদ্রুপ জামাতী তরীকতীরাও দেওবন্দী বা অন্যদের নেতৃত্ব মেনে নিবে না। আহলে হাদিস ও সালাফিরা কারো অধিনে যাবে না। কে কাকে মানবে, কে কার নেতৃত্বে যাবে- একমাত্র এ অহংকারে তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। অথচ অনৈক্যের কারনে শাপলা চত্বরে হেফাজতের এবং আদালত থেকে নিয়ে পথে, ঘাটে, মাঠে জামাতের কর্মি সমর্থকদের হত্যা করা হচ্ছে। ঐক্য থাকলে এ হত্যাকাণ্ডের সম্ভাবনা ছিল না বিধায় এর সম্পূর্ন দায় সংশ্লিষ্ট দলের নেতা ও মরুব্বিদের।
কাজেই হাদীসের নির্দেশ অনুযায়ী কতলে সবব হিসাবে হেফাজতি হত্যাকান্ডের জন্য তাদের নেতাদের উপর এবং জামাতি হত্যাকান্ডের জন্য তাদের নেতাদের উপর দিয়ত ওয়াজিব হয়েছে, তবে হত্যার আধিক্যের কারনে কিসাসও হতে পারে।কারণ তাদের অহংকার, অপকর্ম ও ঐক্যহীনতার কারণেই এসব হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে, কারণ ঐক্য থাকলে তারাই ক্ষমতায় থাকত, তখন আর এসব হত্যাকাণ্ডের কোন সম্ভাবনাই ছিল। কাজেই তারা এসব হত্যাকাণ্ডের সবব বা কারণ সৃষ্টি করেছে। এ সম্পর্কে পরে বিস্তারিত আলোচনা হবে, এখানে সংক্ষেপ করছি। দলীল- হেদায়া গ্রন্থকার বলেন, ‘আর কতলে সবব (কারণ জাতীয় হত্যা) এর উদাহারন হল যেমন- অন্যের মালিকানায় কুপ খনন কারী বা পাথর খণ্ড স্থাপনকারী। এর বিধান হচ্ছে- এতে কেউ মারা গেলে আকিলার উপর দিয়ত ওয়াজিব হবে। কেননা সে প্রাণ নাশের কারণ সৃষ্টি করেছে এবং সীমালঙ্ঘন করেছে। কাজেই সে নিহত ব্যাক্তির ধ্বংসকারী বলে গণ্য হবে বিধায় দিয়ত ওয়াজিব হবে। তবে কাফফারা ওয়াজিব হবে না এবং মীরাছ থেকে বঞ্চিত হবে না। কিন্ত ইমাম শাফেয়ী বলেন, এই হত্যা কতলে খাতার (ভুলক্রমে হত্যা) সাথে যুক্ত হবে। কারণ শরিয়ত তাকে হত্যাকারী হিসাবে সাব্যস্ত করেছে।
ঠিক একই ভাবে হেফাজত ও জামাত নেতৃবৃন্ধ নিরীহ মাদরাসা ছাত্র ও শিবিরের ছেলেদের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য ডেকে নিয়ে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছে, তথা হত্যার কারণ সৃষ্টি করছে। ইমাম আবু হানিফার প্রসিদ্ধ অভিমত হল, যালিম ও ফাসিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার শর্ত হল- বিজয়ের সম্ভাবনা থাকতে হবে, অন্যথায় বৃথা ক্ষতি ও প্রাণনাশের আশঙ্কা আছে বিধায় এটা হারাম। অথচ তারা ভাল করেই জানে যে ইসলাম বিদ্বেষী সেক্যুলার সরকারের বিশাল বাহিনীর সাথে এই বিদ্রোহে জয়ের কোনই সম্ভাবনা নাই। এভাবে তারা আল্লাহ্র বান্দা, রাসুলের উম্মত ও আমাদের ভাইদের ধ্বংস করেছে, আমাদের সন্তানদের ইয়াতিম করেছে, আমাদের বোনদের বিধ্ববা করেছে, আমাদের মায়েদের সন্তানহারা করেছে।
সুতরাং এসব মাসয়ালা জানা সত্বেও ঐসব ফিরকাবাজরা নিরীহ লোকদের হত্যাযজ্ঞের কারণ হয়েছে। কাজেই প্রত্যেক নিহত ব্যাক্তির পরিবারকে উভয় দলের নেতৃবৃন্ধের পক্ষ থেকে দিয়ত আদায় করতে হবে, অর্থাৎ ১০০ করে উট বা তৎসমপরিমান মূল্য পরিশোধ করতে হবে। আর এ মূল্য আদায় করে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় টেকনাফ- তেতুলিয়ার দৈর্ঘে- প্রস্থে দাঁড়িয়ে যাবে আগুনের প্রাচীর। এভাবে আমাদের এক ঢিলে দুই পাখি শিকার হয়ে যাবে, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলি ক্ষতিপূরণও পাবে আবার ফিরকাবাজও ধ্বংস হবে। তারপর সে উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করল, সবাই কি এ বিষয়ে একমত? সকলেই সমস্বরে বলল, হা হা এটা আমাদের সকলের দাবী। এবার মোজাহিদ বলল, শ্রদ্ধেয় ইমাম এ প্রস্তাব পাশ করুন। হাসান মুসান্না দাঁড়িয়ে বললেন, এ প্রস্তাব পাশ হল, ইনকুইজিশন কোর্টে ফিরকাবাজদের বিচার করতে হবে।
বিষয়: রাজনীতি
৬৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন