সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত- ১৪
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:১৮:৫৬ দুপুর
বহুমত- বহুপথ গুমরাহির কারণ-
﴿وَأَنَّ هَٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴾
এ ছাড়াও তাঁর নির্দেশ হচ্ছে এইঃ এটিই আমার সোজা পথ৷ তোমরা এ পথেই চলো এবং অন্য পথে চলো না৷ কারণ তা তোমাদের তাঁর পথ থেকে সরিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেবে৷ এ হেদায়াত তোমাদের রব তোমাদেরকে দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা বাঁকা পথ অবলম্বন করা থেকে বাঁচতে পারবে৷ (আনআম/১৫৩)
ব্যাখ্যাঃ- আল্লাহ তা’লা দোয়ার পদ্ধতি শিখিয়েছেন. ﴿اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ﴾ প্রভু তুমি আমাদেরকে সরল-সোজা পথ দেখাও) এবং ( ﴿رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَاঈমান গ্রহনের পর তুমি আমাদের অন্তর বক্র করে দিও না) বক্র হৃদয় বা প্রবৃত্তির বশবর্তি হয়ে সিরাতে মুস্তাক্বীম-এ বিভিন্ন পথ ও মতের সৃষ্টি করা হারাম। সরল সোজা পথ হচ্ছে কোরআন ও সুন্নাহর পথ, এর বাইরে যা আছে সবই বক্র পথ, গুমরাহী। কাজেই মুসলিম সমাজে প্রচলিত যত পথ-মত ও বিদাত রয়েছে- সেগুলি বর্জন করতে হবে। কোরআনের উপর ভিত্তি করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিভিন্ন তাফসীরের উদ্ধৃতিঃ ইমাম ইবনে জরীর তাবারি বলেন, অত্র আয়াতে আল্লাহ তা’লা মানব জাতিকে নির্দেশ দিচ্ছেন- তারা যেন সেই সিরাত বা দ্বীনের উপর অটল থাকে যা আল্লাহ তাদের জন্য মনোনীত করেছেন। এই দ্বীন মুস্তাকিম-যার মধ্যে কোন বক্রতা নেই, হক থেকে বিচ্যুতির কোন আশংকা নাই। তিনি বলেন, এ দ্বীনকে তোমরা সংবিধান হিসাবে গ্রহণ করে সে অনুযায়ী জীবন যাপন কর। কিন্তু ইহুদী, নাসারা, মজুসি, মূর্তিপূজক ইত্যাদির ন্যায় বিদাত তথা নতুন সৃষ্ট পথ ও মতের অনুসরণ করলে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। কাজেই সিরাতে মুস্তাকিমের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক, বিভেদ সৃষ্টি করো না।
ইমাম ইবনে কাছির বলেন – ইরশাদ হচ্ছে তোমরা এদিক ওদিক অন্যান্য পথগুলোর উপর চলো না, নতুবা আল্লাহর পথ থেকে সরে পড়বে। তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত রাখ এবং তাতে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করো না। এই প্রকারের আয়াতসমূহে আল্লাহ তা’লা মুমিনদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন জামাত বা দল ছেড়ে না দেয় এবং উম্মাহর জামাতে বিভেদ সৃষ্টি করা থেকে যেন বেঁচে থাকে। পূর্ববর্তী লোকেরা দ্বীনের ব্যপারে ঝগড়া- ফাসাদ ও যুদ্ধ- বিগ্রহে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল এবং মতানৈক্য সৃষ্টি করেছিল। ফলে তারা ধবংস হয়ে গিয়েছিল।
এই সুবুল বা বহু পন্থা-পন্থির মধ্যে ইহুদী, নাসারা, অগ্নিপূজক, অন্যান্য সম্প্রদায়, বিদাতি, প্রবৃত্তির অনুসারী, শরয়ী বিষয়ে চুলছেরা বিশ্লেষণকারী, বিতর্ককারী ইত্যাদি সবাই অন্তর্ভুক্ত হবে এবং গুমরাহ বলে গণ্য হবে। মুজাহিদ বলেন, সুবুল অর্থ বিদাত।
এখানে তাফসীরে কুরতুবি থেকে তুলে ধরা হল,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ:خَطَّ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا خَطًّا، ثُمَّ قَالَ: (هَذَا سَبِيلُ اللَّهِ) ثُمَّ خَطَّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ وَخُطُوطًا عَنْ يَسَارِهِ ثُمَّ قَالَ (هذه سبل على كل سبيلمِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهَا) ثُمَّ قَرَأَ هَذِهِ الْآيَةَ. -হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ হতে বর্নিত আছে যে, একদা রাসূল সাঃ মাটিতে একটি রেখা টানেন। তারপর বলেন, এটা হচ্ছে সীরাতে মুস্তাকীম। অতঃপর তিনি ডানে ও বামে আরো কতগুলি রেখা টানেন এবং বলেন, এগুলো হচ্ছে ঐসব রাস্তা যেগুলির প্রত্যেকটার উপর একজন করে শয়তান বসে রয়েছে এবং ঐ দিকে (মানুষকে) আহ্বান করছে। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন।
ব্যাখ্যাঃ যারা ঐক্যের উপর থাকে ও ডাকে তারাই ঐ সরল রেখা সীরাতে মুস্তাকীমের উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ডানে বায়ের রাস্তা গুলি হচ্ছে বিভিন্ন ফিরকা। আর ঐ রাস্তা গুলির উপর বসে থাকা শয়তান দ্বারা বোঝানো হয়েছে বিভিন্ন ফিরকার মুরুব্বিরা। মুরুব্বি নামক আলেম নামধারী ঐসব আযাযিলের খলীফারা বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে মানুষকে ডাকতে থাকে, এসো আমাদের ভুবনে এসো, এখানে সুলভে বেহেস্তের টিকেট পাওয়া যায়। একদম খাটি আদি আসল টিকেট, ডাইরেক্ট মদিনা থেকে পার্সেল করা। এভাবে তারা ধোকাবাজি করে ইসলাম ও উম্মাহর সর্বনাশ করছে, ইহকাল-পরকাল ধংস করছে।
وَأَخْرَجَهُ ابْنُ مَاجَهْ فِي سُنَنِهِ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخَطَّ خَطًّا، وَخَطَّ خَطَّيْنِ عَنْ يَمِينِهِ، وَخَطَّ خَطَّيْنِ عَنْ يَسَارِهِ، ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ فِي الْخَطِّ الْأَوْسَطِ فَقَالَ: (هَذَا سَبِيلُ اللَّهِ- ثُمَّ تَلَا هَذِهِ الْآيَةَ-" وَأَنَّ هَذَا صِراطِي مُسْتَقِيماً فَاتَّبِعُوهُ وَلا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ". –
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা নবী (সাঃ) এর কাছে উপবিস্ট ছিলাম, এমন সময় তিনি এভাবে তাঁর সামনে একটা রেখা টানেন এবং বলেন, এটা হচ্ছে আল্লাহ্র পথ। অতপর ডানে ও বামে দুটি করে রেখা টানেন এবং বলেন, এগুলো হচ্ছে শয়তানের পথ। তারপর মধ্যভাগের রেখার উপর স্বীয় হাতটি রাখেন এবং উক্ত আয়াতটি পাঠ করেন। হযরত জাবির রাঃ হতে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি রেখা টানেন। তারপর ডান দিকে একটি রেখা টানেন এবং বাম দিকে একটি রেখা টানেন। অতঃপর স্বীয় হস্ত মুবারক মধ্যবর্তী রেখাটির উপর রেখে এই আয়াতটি পাঠ করেন।
ব্যাখ্যাঃ এর বাস্তব চিত্র হচ্ছে বামের দুটি রেখা হল বাহায়ি ও শিয়ারা। আর ডানের দুটি রেখা হলো কাদিয়ানী ও সুন্নীরা। এতে বুঝা যাচ্ছে উম্মাহর মধ্যে এখন আর কেউ সিরাতে মুস্তাকীমের উপর নাই, সবাই বিদআতী গুমরাহ হয়ে গেছে। আর এ জন্যই উম্মাহর চূড়ান্ত পতন ঘটেছে। কিছু লোক সিরাতে মুস্তাকীমের উপর থাকলেও উম্মাহর অবস্থা অন্তত কিছুটা ভাল থাকত। তবে হ্যাঁ দলমত নির্বিশেষে যুগে যুগে কিছু লোক জামাল উদ্দীন আফগানির মত ঐক্যের প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে- তাদেরকে সিরাতে মুস্তাকীমের উপর গন্য করা যায়।
عَنْ أَبَانٍ أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِابْنِ مَسْعُودٍ: مَا الصِّرَاطُ الْمُسْتَقِيمُ؟ قَالَ: تَرَكَنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أَدْنَاهُ وَطَرَفُهُ فِي الْجَنَّةِ، وَعَنْ يَمِينِهِ جَوَادٌ «1» وَعَنْ يَسَارِهِ جَوَادٌ، وَثَمَّ رِجَالٌ يَدْعُونَ مَنْ مَرَّ بِهِمْ فَمَنْ أَخَذَ فِي تِلْكَ الْجَوَادِ انْتَهَتْ بِهِ إِلَى النَّارِ، وَمَنْ أَخَذَ عَلَى الصِّرَاطِ انْتَهَى بِهِ إِلَى الْجَنَّةِ، ثُمَّ قَرَأَ ابْنُ مَسْعُودٍ:" وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا" الْآيَةَ. –
হযরত আবান ইবনে উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত ইবনে মাসঊদ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেন সিরাতে মুস্তাক্বীম কি? তিনি উত্তরে বলেনঃ” একদা রাসুলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে তাঁর নিকটে স্থান দিয়েছিলেন এবং তাঁর চক্ষু যেন জান্নাতের দিকে ছিল। তাঁর ডান দিকে একটা পথ ছিল এবং বাম দিকে একটা পথ ছিল। পথগুলোর উপর কতগুলো লোক অবস্থান করছিল এবং যারা তাদের পার্শ্ব দিয়ে গমন করছিল তাদেরকে তারা নিজেদের দিকে আহ্বান করছিল। সুতরাং যারা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের পথ ধরলো তারা জাহান্নামে প্রবেশ করলো। আর যারা সরল সোজা পথ ধরলো তারা জান্নাতে প্রবেশ করলো। অতঃপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেন।
ব্যাখ্যাঃ এখানে সরল-সোজা পথ হচ্ছে কোরআন-সুন্নাহর পথ, আর ডানে বামের বক্র পথগুলি হচ্ছে আলোচ্য বর্তমান যুগের ফিরকা গুলি- যারা বিভিন্ন মতবাদ সৃষ্টি করে বিভক্ত হয়েছে)।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا). وَرَوَى ابْنُ مَاجَهْ وَغَيْرُهُ
রাসূল (সাঃ) বলেন, আমি তোমাদেরকে যা আদেশ দিয়েছি-তা গ্রহণ কর আর যা নিষেধ করেছি তা বর্জন কর। ব্যাখ্যাঃ রাসুল বিভক্তি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকার আদেশ দিয়েছেন।
عَنِ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ: وَعَظَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ موعظة ذرفتمِنْهَا الْعُيُونُ، وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ هَذِهِ لَمَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ، فَمَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا؟ فَقَالَ: (قَدْ تَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا لَا يَزِيغُ عَنْهَا بَعْدِي إِلَّا هَالِكٌ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِمَا عَرَفْتُمْ مِنْ سُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ بَعْدِي عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَالْأُمُورَ الْمُحْدَثَاتِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَعَلَيْكُمْ بالطاعة وإن عبد احبشيا فَإِنَّمَا الْمُؤْمِنُ كَالْجَمَلِ الْأَنِفِ حَيْثُمَا قِيدَ انْقَادَ) أَخْرَجَهُ التِّرْمِذِيُّ بِمَعْنَاهُ وَصَحَّحَهُ.
হজরত ইরবাজ বিন সারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে উপদেশ দিলেন, তাতে চক্ষু প্রবাহিত হল অন্তর বিগলিত হল। আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মনে হচ্ছে ইহা বিদায়ী উপদেশ ! আমাদেরকে কী নির্দেশ দেন? তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, আমি তোমাদেরকে শুভ্র আলোকবর্তিকার (কোরআন) উপর রেখে গেলাম- যার রাত্রও দিনের ন্যায় আলোকময়। একমাত্র ধ্বংস প্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ উহার বক্র পথে চলবে না। যারা বেঁচে থাকবে অনেক এখতেলাফ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের কর্তব্য হবে, আমার পরে যা আমার এবং হেদায়েত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত বলে বুঝতে পারবে-তা আঁকড়ে ধরবে, এমনকি দাঁত দিয়ে কামড়ে পড়ে থাকবে। সাবধান, নতুন সৃষ্ট-বিদাত থেকে বেচে থাকবে, কারণ প্রত্যেক বিদাত গুমরাহী। আনুগত্য করবে, যদিও আমীর হাবশি গোলাম হউক না কেন। মু’মিন হল বরা লাগানো (নাক ছেঁদা) উটের ন্যায়- যে দিকেই চালানো যায় সে দিকেই চলে।
ব্যাখ্যাঃ সেই বিদাত হল ফিরকাগুলির সৃষ্ট বিদাত, তারা গুমরাহ। কাজেই ফিরকাবাজদের অনুসরণ না করে বরা লাগানো উটের ন্যায় কোরান সুন্নাহর অনুসরন করতে হবে।
رَافِعُ بْنُ خَدِيجٍ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: (يَكُونُ فِي أُمَّتِي قَوْمٌ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَبِالْقُرْآنِ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ كَمَا كَفَرَتِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى). قَالَ فَقُلْتُ: جُعِلْتُ فِدَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ! كَيْفَ ذَاكَ؟ قَالَ: (يُقِرُّونَ بِبَعْضٍ وَيَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ). قَالَ قُلْتُ: جُعِلْتُ فِدَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ! وَكَيْفَ يَقُولُونَ؟ قَالَ: (يَجْعَلُونَ إِبْلِيسَ عَدْلًا لِلَّهِ فِي خَلْقِهِ وَقُوَّتِهِ وَرِزْقِهِ وَيَقُولُونَ الْخَيْرُ مِنَ اللَّهِ وَالشَّرُّ مِنْ إِبْلِيسَ (. قَالَ: فَيَكْفُرُونَ بِاللَّهِ ثُمَّ يَقْرَءُونَ عَلَى ذَلِكَ كِتَابَ اللَّهِ، فَيَكْفُرُونَ بِالْقُرْآنِ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَالْمَعْرِفَةِ؟ قَالَ: (فَمَا تَلْقَى أُمَّتِي مِنْهُمْ مِنَ الْعَدَاوَةِ وَالْبَغْضَاءِ وَالْجِدَالِ أُولَئِكَ زَنَادِقَةُ هَذِهِ الْأُمَّةِ).
রাফে’ বিন খাদিজ রাসূলকে (সাঃ) বলতে শুনেছেন, ‘আমার উম্মতের একদল লোক ইহুদি-নাসারাদের ন্যায় আল্লাহ ও কোরানের সাথে কুফুরি করবে অথচ এটা তারা বুঝতেও পারবে না। রাবী বলেন, আমি বললাম, আমার জীবন আপনার উপর কোরবান হে আল্লাহর রাসূল, এটা কিভাবে হবে ? উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, তারা কিছু মানবে আর কিছু মানবে না। রাবী বলেন, আমি আবার বললাম, আমার জীবন আপনার উপর কোরবান হে আল্লাহর রাসূল, তারা কী বলবে ? রাসূল (সাঃ) উত্তর দেন, ইবলিস আল্লাহর সমকক্ষ দাড় করবে তার সৃষ্টি, শক্তি ও রিযিকের মধ্যে। তারা বলবে, ভাল আল্লাহর পক্ষ থেকে আর মন্দ শয়তানের পক্ষ থেকে, এভাবে আল্লাহর সাথে কুফুরি করবে। তারপর এর ভিত্তিতে কোরআন পড়বে এবং কোরানের সাথে কুফুরি করবে ঈমান ও মা’রেফাতের পর। আমার উম্মত তাদের থেকে পাবে শুধু ঝগড়া-ফাসাদ, হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা, এরাই হল এ উম্মতের যিন্দিক-নাস্তিক।
ব্যাখ্যাঃ ফিরকাবাজরা কোরান পড়ে কিন্তু কোরানের সাথে কুফুরি করে। যেমন তারা ফিরকাবাজি, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জিহাদ, খিলাফত, ঐক্য ইত্যাদির আয়াত গুলি বর্জন করেছে। আমরা তাদের মধ্যে পাচ্ছি শুধু ঝগড়া-ফাসাদ, হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা। যেমন দেওবন্দি ও তাবলীগীরা জামাত ও বেরেলভীদের গর্দান মারে। বেরেলভিরা বাকী সকলের গর্দান মারে, আহলে হাদিস ও সালাফীরা অন্যদের গর্দান মারে। এরাই কোরানের কিছু মানে আর কিছু মানে না। কাজেই এরা কোরানের সাথে কুফুরি করছে।
অন্যান্যদের মতামতঃ- আবু দাউদ বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি তাকদির সম্পর্কে জানতে উমর বিন আব্দুল আজিজের কাছে লিখে পাঠাল। তিনিও উত্তর লিখে পাঠালেন, ‘সুন্নাতে রাসূল (সাঃ) এর ইত্তেবা করবে, বিদাতীরা নতুন যা সৃষ্টি করে তা বর্জন করবে, মুসলিম জামাত আঁকড়ে ধরে থাকবে। এটাই তোমার জন্য আল্লাহ্ প্রদত্ত নিরাপত্তার অবলম্বন”।
২। সহল বলেন.. قَالَ سَهْلٌ: إِنَّمَا ظَهَرَتِ الْبِدْعَةُ عَلَى يَدَيْ أَهْلِ السُّنَّةِ لِأَنَّهُمْ ظَاهَرُوهُمْ وَقَاوَلُوهُمْ فَظَهَرَتْ أَقَاوِيلُهُمْ وَفَشَتْ فِي الْعَامَّةِ فَسَمِعَهُ مَنْ لَمْ يَكُنْ يسمعه، فلو تركوهم وَلَمْ يُكَلِّمُوهُمْ لَمَاتَ كُلٌّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ عَلَى ما في صدره ولم يظهر منه شي وَحَمَلَهُ مَعَهُ إِلَى قَبْرِهِ. - তিনি আরো বলেন, তোমাদের কেউ বিদআত সৃষ্টি করলে শয়তান তা ইবাদত হিসেবে পেশ করে। সে অনুযায়ী ইবাদাত করা হয়। তারপর তা বিদআত হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন বিদাতের ব্যাপারে এর চেয়ে কঠোর কোন হাদীস আমার জানা নেই (حَجَبَ اللَّهُ الْجَنَّةَ عَنْ صَاحِبِ الْبِدْعَةِ) আল্লাহ তা’লা বিদাতীদের থেকে জান্নাত আড়ালে রাখবেন। তিনি আরো বলেন আনুগত্য কর, বিদআত সৃষ্টি করো না।
৩। ইমাম আওযায়ি বলেন, ইবলিশ তার বাহিনীকে জিজ্ঞেস করে বনী আদমকে কিভাবে ধোকা দাও ? তারা বলে সর্ব দিক দিয়ে। সে আবার জিজ্ঞেস করে ইস্তিগফারের দিক দিয়েও ? উত্তরে তারা বলে, অসম্ভব এটা তো তাওহীদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়। তখন ইবলিশ বলে, আমি তাদের মধ্যে এমন বিষয় ছড়িয়ে দিব যা থেকে তারা তওবা করবে না, আর তা হল আহওয়া বা প্রবৃত্তির অনুসরণ (এজন্যই ফিরকাবাজরা ফিরকাবাজির কারণে তওবা করে না)।
৪। মোজাহিদ বলেন, আমি জানি না কোনটা আমার জন্য বড় নিয়ামাত, ইসলাম নাকি বিদআত থেকে বেঁচে থাকা।
৫। শা’বি বলেন, বিদাতিদের আসহাবে আহওয়া নাম করণের কারণ হল, তারা জাহান্নামের আগুনে ভাসবে।
৬। ফুজাইল বিন ইয়াজ বলেন, যে বিদাতীকে ভালবাসবে আল্লাহ্ তার আমল বরবাদ করে দিবেন এবং তার অন্তর থেকে ঈমানের নূর ছিনিয়ে নেবেন।
৭। সুফিয়ান সাওরী বলেন, অন্যান্য গুনাহের চেয়ে বিদআত শয়তানের কাছে অধিক প্রিয়, কারণ গুনাহর তওবা আছে, বিদাতের তওবা নেই অর্থাৎ কবুল করা হয় না।
৮। ইবনে আব্বাস বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নিদর্শন হলো সুন্নাতের প্রতি আহবান করা, বিদাতে বাধা প্রদান করা।
৯। মুহাক্কিক আলেমগণ বলেছেন-উম্মতে মুহাম্মদির মধ্যে যখন ফিরকা বাজি বেড়ে যাবে তখন ফিরকাবাজরা উলামা ফুকাহাদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ করবে উম্মতের মধ্যে পূর্বে কখনো এ অবস্থা ছিল না।(এর বাস্তবতা হচ্ছে, প্রত্যেক ফেরকা অন্য ফেরকার আলেমদের ঘৃণা করে ও শত্রু ভাবে। যেমন দেওবন্দীরা জামাতী তরিকতী আলেমদের ঘৃণা করে, তরিকতীরা দেওবন্দী জামাতী আলেমদের ঘৃণা করে।)
১০। উম্মতের একদল সুরা নিসার ১৪০ নং আয়াত এবং অত্র সুরার ভিত্তিতে সীদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, যারা বিদাতী ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের সাথে উঠা বসা করবে তারা বিদাতীদের অন্তর্ভুক্ত বলে গন্য হবে। যেমন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আওযায়ি ও ইবনে মুবারক বলেন, বিদাতীদের সাথে উঠা বসাকারীকে নিষেধ করা হবে। যদি সে না মানে তবে তার উপরেও বিদাতীদের বিধান প্রযোজ্য হবে।
১১। ইমাম ইবনে কাছির বলেন, নাওয়াস ইবনে সাময়ান (রাঃ) হতে বর্নিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’লা সিরাতে মুস্তাকীমের দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। এর দু’দিকে দুটি প্রাচীর রয়েছে এবং তাতে খোলা দরজা রয়েছে। দরজাগুলোর উপর পর্দা লটকান রয়েছে। সোজা রাস্তাটির দরজার উপর আল্লাহ্র দিকে আহ্বানকারী একটি লোক বসে আছে এবং বলছেঃ হে লোক সকল তোমরা সবাই এই সরল সোজা পথে চলে এসো। এদিক ওদিক যেয়ো না। আর একটি লোক রাস্তার উপর থেকে ডাক দিতে রয়েছে। যখনই কোন লোক ঐ দরজাগুলোর কোন একটি দরজা খোলার ইচ্ছা করছে তখনই সে তাকে বলছে- সর্বনাশ ওটা খোলো না। কারণ যদি তুমি দরজাটি খুলে দাও তবে তুমি ওর মধ্যে প্রবেশই করে যাবে। এখন এই সরল সোজা পথটি হচ্ছে ইসলাম। আর প্রাচীরগুলো হচ্ছে আল্লাহ্র হুদুদ। এই খোলা দরজাগুলো হচ্ছে আল্লাহ্র নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ। রাস্তার মাথায় যে বসে আছে ওটা হচ্ছে আল্লাহ্র কিতাব। আর রাস্তার উপর থেকে যে ডাক দিচ্ছে সে হচ্ছে আল্লাহ্র উপদেশ দাতা যা প্রত্যেক মুসলমানের অন্তরে রয়েছে। অন্তর যেন খারাপ কাজ থেকে বাধা দিচ্ছে।
ব্যাখ্যাঃ এই খোলা দরজা গুলিই হচ্ছে বিভিন্ন ফেরকা।
অনুসিদ্ধান্তঃ অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি বিদাত সম্পর্কে সুদীর্ঘ আলোচনা করেছেন। বিদাতের পরিনতি সম্পর্কে আমি পড়ে আলোচনা করব। এখন প্রশ্ন হল, এই যে বিভিন্ন বিদাত সৃষ্টি করে উম্মাহকে বিভক্ত করা হল, এসব বিদাত কেন, কার স্বার্থে জন্ম দেয়া হল, ইহকালে পরকালে এসবের কী প্রয়োজন আছে? ইহকালে বিয়ে শাদি, শিক্ষালয়ে, এডমিশন টেস্ট, চাকরির ইন্টারভিউ, পাবলিক পরীক্ষা বা অন্য কোন ক্ষেত্রে এসব বিদাতের কী প্রয়োজন আছে? যেমন বিয়ের সময় পাত্র পাত্রিকে এমন প্রশ্ন করা হয় না যে, আচ্ছা বাবাজি বা মায়াজি বলেন তো দেহি, রাসূল সাঃ কি গায়েব জানতেন, তিনি কি নুরের সৃষ্টি, নবীগন কি মাসুম, সাহাবাগন কি মিয়ারে হক, জিহাদের বিকল্প কি তাবলীগ, মযহাব তাকলিদ কি জায়েয- ইত্যাদি প্রশ্ন করা হয় না। তদ্রুপ কোন কালে, কোন ক্ষনে কোন দেশে চাকরি, ভর্তি, পাবলিক পরীক্ষা বা অন্য যে কোন ক্ষেত্রে এমন প্রশ্ন হয়েছে তার নজির নেই। কাজেই বুঝা গেল ইহকালিন কোণ প্রয়োজনে এসব বিদাতের জন্ম দেয়া হয়নি।
আবার পরকালেও আল্লাহ তালা ঐসব প্রশ্ন করবেন না, পরকালে বিচার হবে শুধু মানুষের কর্মের, হক্বুল্লাহ ও হক্বুল ইবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে। কাজেই বুঝা গেল, ঐসব বিদাতের না ইহকালে কোন প্রয়োজন আছে আর না পরকালে। এখন প্রশ্ন হল, তাহলে কেন এসব বিদাতের জন্ম দেয়া হল? উত্তর একটাই, উম্মাহর মধ্যে পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে বিভক্ত করে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করার জন্য। আর এটা হল শয়তানের কাজ। যেমন ইরশাদ হচ্ছে - إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ- শয়তান তো চায়, তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে)। এখন প্রশ্ন হল, বিদাত সৃষ্টি কারীরা ফিরকাবাজ হলেও তো মানুষ এবং আলেম, তাহলে তারা শয়তান হবে কিভাবে? এর উত্তর কোরানে খুজতে হবে। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا ﴿الأنعام: ١١٢﴾
এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি মানব ও জিন জাতীর শয়তানদেরকে- তারা কারুকার্যময় কথা দ্বারা একে অপরকে ধোঁকা দেয়। (৬: ১১২)
সুতরাং অত্র আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে শুধু আযাযিলের বাচ্চারাই শয়তান নয়, মানব জাতীর মধ্যেও শয়তান আছে। আর এ শয়তান হলো ফিরকাবাজ আলেমরা, তারা কারুকার্যময় কথা দ্বারা উম্মাহর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে রেখেছে।
এখন জ্ঞাতব্য বিষয় হলো, আযাযিল শয়তানকে চোখে দেখা যায় না, কিন্তু মানুষ যদি শুনে অমুক জায়গায় আযাযিল বেটা এসেছে তাহলে নিশ্চয়ই লোকেরা লাঠি সোটা নিয়ে দৌড়ে গিয়ে শয়তান বধ করবে। এখানেই আমার প্রশ্নটা, প্রমানিত হয়েছে ফিরকাবাজরা শয়তান, তারা ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে। এখন তাদের কি বিচার করবেন সবাই জবাব দিন। শ্রোতৃবর্গ চেচাল, আমরা তাদের মৃত্যুদণ্ড চাই, ওরা শয়তান। মোজাহিদ বলল, শ্রদ্ধেয় উস্তাদ আপনি প্রস্তাব পাশ করুন। হাসান মুসান্না দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, কারো কোন আপত্তি আছে? সবাই বলল না না, আপত্তি নাই, আপনি রায় দিন। তিনি বললেন, ফিরাকাবাজরা শয়তান, তাদের ধ্বংসের রায় ঘোষণা করা হল।
বিষয়: রাজনীতি
৯১৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন