কবর-৭৪ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৩৪:০৮ সকাল
২৮ জুলাই, ২০০৬ সাল। এদিনই ঘটল ঘটনাটা- যা ভুকম্পন সৃষ্টি করেছিল। ফেরদৌসি সকালে ঘুম থেকে উঠতেই স্বামী বলল, শুভ সকাল, শুভ হানিমুন। সে হাসল, তারপর তার প্রসাধন সামগ্রি নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। কিন্তু সে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল, আনন্দে তার মনটা নেচে উঠল। আগে তার বুকের মাংসপিণ্ড চুপসে যাওয়া বেলুনের মত চামড়ার থলের ন্যায় ঝুলে ছিল। কিন্তু এখন ফুলানো বেলুনের মত ঠনঠন করছে, রসাল রসে ঠসঠসে হয়ে উঠেছে, কুমারির বুকের মত খাড়া হয়ে গেছে। সে আনন্দে আত্মহারা, অপুর্ব সুন্দর লাগছে, তার নিজেরই লোভ জেগে উঠেছে, সে দু’হাতে দু’টি চেপে ধরে আনন্দাতিসয্যে উর্ধ্বে মুখ তুলে চোখ বন্ধ করল। তার মন মুয়ূরী আনন্দ সরোবরে উড়ে বেড়াচ্ছে, সে ফুলকিত উচ্ছসিত। এই একটি জিনিস তার ত্রুটি ছিল, সেজন্য তার মনক্ষুন্ন থাকত। এখন তা ভরাট হয়ে গেছে, সাথে সাথে তার মনও ভরাট হয়ে গেছে। সে বোন- ভাবীদের কাছে শুনেছে, পুরুষের হাত পরলে মেয়েদের বুকে দুধ আসে। আর তখন পয়োধর ভরাট হয়ে যায়, ফিকে উঠে। সে বুঝতে পারল এটা তার স্বামীর তিনদিনের কৃতিত্ব।
স্ত্রীর সার্বক্ষনিক খাই খাই দেখে ডঃ আব্দুল্লাহর মনে হতে লাগল সম্ভবত ফেরদৌসির আগের স্বামীটা নপুংশক ছিল। তার অতৃপ্ত কামনাগুলি খাই খাইয়ে রূপান্তরিত হয়ে গেছে, এখন নতুন স্বামী থেকে তা পুষিয়ে নিতে চাচ্ছে। অন্যথায় কোন নারী বিশেষত কোন নববধূ দৈহিক যুদ্ধের জন্য সব সময় এভাবে মুখিয়ে থাকে না। স্ত্রীর কাছ থেকে বিষয়টা জানার জন্য সে কৌতূহলী হয়ে উঠল। তাই সকালে খাওয়া দাওয়ার পর ডঃ আব্দুল্লাহ স্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করল, সোহাগ দিল। তারপর জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা আগের লোকটার কি সমস্যা ছিল, তুমি চলে আসলে কেন? ফেরদৌসি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল, সে কি উত্তর দিবে বুঝতে পারল না। তবে তার এটুকু হুস আছে যে আগেরটার বদনাম করতে হবে আর বর্তমান স্বামীর প্রশংসা করতে হবে। কিন্তু কী বদনাম করবে কিছু খুঁজে না পেয়ে বলল, ‘আরে ঐটা ছিল মুন্সি, তার বাপ নাকি অনেক বর মুন্সি ছিল। বর দুলাভাই আর এডি দুলাভাই তার বাপের নাম শুনে বিয়ে দিয়ে ছিল। কিন্তু আমি মুন্সিদের পসন্দ করি না।
স্বামী বলল, ‘কেন মুন্সি কেন, তোমার দুলা ভাই এত প্রশংসা করল- সে নাকি ভার্সিটিতে পড়েছে, উচ্চ শিক্ষিত ছিল, ত্রিমুখী ধারায় লেখা পড়া করেছে। স্ত্রী বলল, ‘কিন্তু তাদের প্রধান পরিচয় হল মুন্সি। তার বাপ দাদা তারা সবাই মুন্সি ছিল। সে আগে মাদরাসায় পড়ত, কিন্তু এই শালা ছিল মেধাবী। ছোট থেকে বাপ নাই, বাড়িতে বসে বসে সংসার চালাত আর পড়ে পড়ে গিয়ে বিভিন্ন লাইনে পরীক্ষা দিত। এই হল তার উচ্চ শিক্ষা।
স্বামী বলল, ‘তাহলে তোমরাও তো মুন্সি, তোমার বাপ, ভাই, দুলা ভাই সবাই তো দাড়ি টুপি পাঞ্জাবি পরে। তোমার ভাগ্নেরাও তো মাদরাসায় পড়ে। সে বলল, ‘তা হউক, কিন্তু আমরা সবাই জ্যান্টলম্যান। কেউ মাদরাসায় পড়েনি। তাবলীগ করে এজন্য মুন্সি সেজেছে। আমাদের আসল পরিচয় জ্যান্টলম্যান, নকল পরিচয় মুন্সি। আর ঐ হারামজাদার আসল পরিচয় মুন্সি, নকল পরিচয় জ্যান্টলম্যান। আমি মুন্সি পসন্দ করি না, জ্যান্টলম্যান পসন্দ করি। এ জন্যই তো তোমাকে পসন্দ করেছি, ভালবসেছি, বিয়ে করেছি। তোমার বুকে মাথা রেখে শান্তি খুজি, তুমিই আমার সব, আমার স্বপ্ন সাধ। সে স্বামীর বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরল। স্বামী বুঝল এরা আসলে মেকি ধার্মিক, প্রকৃত ধার্মিক হলে এ ধরনের কথা বলত না।
কিন্তু ঐ লোকটার নপুংশকতা সম্পর্কে জানার জন্য আবার জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা এটা তো কোন দোষ হল না, তার আসল দোষটা কী ছিল? সে সরাসরি কোন দোষ না পেয়ে বলল, ‘ঐ শালা খুব খারাপ ছিল, এজন্যই তাকে আমি কিপটে ছোদা---’ বলে সে খিলখিল করে বেশ্যার মত হাসল। স্বামী বলল, ‘তোমাকে মারত, না? – মারবে, তাহলে ওর উপায় থাকত। ডঃ আব্দুল্লাহ হাসানের কোন দোষ জানতে পারল না, স্ত্রীর চলে আসার কারণও বুঝতে পারল না। সে ভাবল, হাসান নপুংশক ছিল কিনা এটা অন্য সময় কৌশলে স্ত্রীর মুখ থেকে টেনে বের করতে হবে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর হালকা বিশ্রাম নিয়ে তারা ল্যাগেজ নিয়ে কমলাপুর রেল ষ্টেশনের দিকে যাত্রা করল। এখান থেকে চট্টগ্রাম যাবে, সেখান থেকে কক্সবাজার মধুচন্দ্রিমা উদযাপন করবে। তারপর চাঁদের মধু ও নিজেদের মধু একাকার করে দিবে আর গাইবে, জীবনে বসন্ত এসেছে, ফুলে ফুলে ভরে গেছে মন---। কিন্তু তখনই ঘটনাটা ঘটল। তারা প্লাটফর্মে গিয়ে থাম সংলগ্ন আসনে বসে স্বামী স্ত্রীর চুটকি আলাপ ও খুনসুটি শুরু করল। কিন্তু অল্পক্ষণেই সে স্বামীর প্রতি আগ্রহ হারাল। কারণ তার সামনের প্লাটফর্মের পরের প্লাটফর্মের কিছুটা দূরে বারবার তাকাচ্ছে, তাকাচ্ছে আর চমকে উঠছে, আত্মা চ্যাত করে উঠছে, সে বিষণ্ণ ও অস্থির হয়ে উঠেছে। মাঝে মধ্যে স্বামী এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে, কিন্তু তার কানে ঢুকছে না। সে চ্যাত করে উঠে জিজ্ঞেস করছে কি জানি বললে? স্বামী এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলার পর স্ত্রীর অমনোযোগ দেখে সে নিজেও অমনযোগি হয়ে উঠল। এদিক সেদিক তাকিয়ে তামাশা দেখতে লাগল। ফেরদৌসি কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে দ্বিতীয় প্লাটফর্মের দিকে, শনাক্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু সম্বিত ফিরে পেয়ে স্বামীর দিকে তাকায়। কারণ স্বামীকে তার পেরেশানি বুঝতে দিতে চায় না। স্বামী অন্য মনস্ক দেখে আবার সেদিকে তাকায়। সেখানে একটা বাচ্চা বসে আছে, আর বাচ্চাটাকে তার বাচ্চার মত দেখা যাচ্ছে। একটা লোক মাটিতে পড়ে আছে কিন্তু সে বুঝতে পারছে না, তার বাচ্চা এখানে আসবে কেন এবং কিভাবে। মনকে শান্তনা দিচ্ছে এটা তার বাচ্চা না, কিন্তু কৌতূহল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
ইতিমধ্যে একটা গাড়ি এল। যাত্রীদের উঠা নামা, কুলি হাকাহাকি, মানুষের হৈচৈ, ব্যস্ততা দেখার মত দৃশ্য। তার স্বামী সেদিকে তাকিয়ে মনযোগ দিয়ে তামাশা দেখছে। এই সুযোগে সে আস্তে করে উঠে গিয়ে বাচ্চাটাকে দেখতে চাইল। একটা লোক প্লাটফর্মের লম্বালম্বি শুয়ে আছে, তার পিছনে বাচ্চাটা বসা, তার পেছনেই গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ফেরদৌসি বহু মূল্যবান অত্যাধুনিক বোরকা পড়া ছিল, নেকাবটা টেনে সরাসরি বাচ্চাটার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। মেয়েটার সামনে কিছু বিস্কুট কলা ইত্যাদি পড়ে আছে, সে একটু একটু মুখে দিচ্ছে আর এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। ফেরদৌসি বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকাল আর সাথে সাথে অবিশ্বাস্যভাবে তার শরীরটা ঘামে ভিজে উঠল। হাত পা কাঁপতে লাগল, শরীর অবশ হয়ে আসল। কিন্তু সে নিশ্চিত নয়। কারণ তার মেয়ে তো এতটা কাল নয় আর এমন রোগা ও শুকনা নয়। তাছাড়া মেয়ে এখানে আসবেই বা কেমনে।
নিশ্চিত হওয়ার জন্য সে সামনে পরে থাকা লোকটাকে দেখতে চাইল। লোকটা মেয়ে থেকে বিপরীতমুখি কাত হয়ে পড়েছিল। সে একটু ঘুরে তার সামনের দিকে গেল। লোকটাকে পাগল মনে হচ্ছে, শরীর কাঁথা দিয়ে ঢাকা, মাথায় জটার মত চুলের বোঝা, শ্মশ্রুতে মুখ ঢাকা। ফেরদৌসি সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু তার গা ঘৃণায় ঘিন ঘিন করে উঠল। কারণ লোকটার সামনে রক্ত বর্ণের কফ থুথুতে ভরা, আর বিক্ষিপ্ত দলা দলা রক্ত, মনে হয় রক্ত বমি করেছে, মাছি ভেন ভেন করছে। সে লোকটার মুখের দিকে তাকাল, মুখে দাড়ি কিন্তু রক্তে লেপ্টে আছে। সে গভীরভাবে তাকাল আর সাথে সাথে তার মাথা ঘুরিয়ে উঠল, পৃথিবিটা তার চোখের সামনে লাঠিমের মত ঘুরছে। তার পা অবশ হয়ে আসছে যেন হাটু ভেঙ্গে পড়ে যাবে। সমস্ত শরীর গুলিয়ে যাচ্ছে, বমি বমি ভাব হচ্ছে। কিন্তু তার সংশয় কাটছে না। কারণ তার সাবেক স্বামী তো এখানে এভাবে থাকার প্রশ্নই উঠে না। তাছাড়া সে ছিল হাতির বাচ্চার মত স্বাস্থ্যবান আর এ পাগলটা তো অস্থি চর্মসার। লোকটা কাত হয়ে পড়ে আছে, মুখের একাংশ দেখা যাচ্ছে। মুখে কোন মাংসের বালাই নাই, শুকিয়ে দাঁত ও নাক উঁচু হয়ে আছে, গাল বসে গেছে, চোখ এতটাই গর্তের মধ্যে ঢুকে গেছে যেন তা দেখাই যায় না। সে সংশয় মুক্ত হতে পারে না।
নিশ্চিত হওয়া দরকার, মুখটা দেখতে হবে কিন্তু কিভাবে? সে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল। না, তার স্বামী অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আবার আশ পাশে কেউ নেই, তার দিকে কারো মনযোগও নাই। সে পতিত ব্যক্তির মুখটা সোজা করে দেখতে চাইছে কিন্তু কি ভাবে দেখবে? উবু হয়ে হাত দিয়ে সোজা করা সম্ভব নয়, কারণ একে তো ঘৃণা লাগছে আবার তার স্বামী বা অন্য কেউ দেখে ফেললে অত্যন্ত লজ্বার বিষয় হবে। তাই সে পা লাগাল, কপালের উপরে জুতার অগ্রভাগ লাগিয়ে ধাক্বা দিল, সোজা হল না। আবার দিল সোজা হল না। তারপর কপালের পার্শ্বে জুতা ঠেকিয়ে জোরে ধাক্বা দিল, তাড়াহুড়ার মধ্যে কপালে ও মাথায় জুতা ঠেকিয়ে জোরে জোরে ধাক্বাতে লাগল, তবুও সোজা করতে পারল না।
ফেরদৌসি দাঁড়াল, তার শরীর থেকে বৃষ্টির মত ঘাম ঝড়ে পড়ছে, আঙ্গুল টেনে কপালের ঘাম ঝাড়ল। স্বামী বা অন্য কেউ দেখে ফেলার ভয়, পাপের অনুশোচনা, সাবেক স্বামী ও সন্তানের গ্লানি, পরিনামের আশঙ্খা, চরম উৎকণ্ঠায় তার শরীর কাল- বৈশাখীর মুখে বৃক্ষপত্রের ন্যায় থরথর করে কাঁপছে। মাথাটা সোজা করার জন্য আবার সে কপালে ও মুখে পা ঠেকিয়া ধাক্বা দিল কিন্তু হল না। তারপর অধৈর্য হয়ে চরম উত্তেজনায় হাঁটু তুলে তুলে মুখে ও কপালে চার পাঁচটা লাথি মারল তবুও সোজা করতে পারল না। মনে হল যেন মরে শক্ত হয়ে গেছে। তার শরীর অবশ হয়ে আসছে। ধর ধর করে ঘাম ঝরছে। অবশেষে কপাল ও মাথার অগ্রভাগে জুতার মাথা ও কানপট্টির উপরে জুতার হিল বা খুড়া ঠেকিয়ে মরিয়া হয়ে ধাক্বা মারল আর মাথাটা সোজা হয়ে গেল।
সে অন্তহীন পেরেশানী নিয়ে চোখ বিস্ফারিত করে দেখল, হ্যাঁ সেই তো। ছোট বেলায় পড়ে গিয়ে চোখের পার্শ্বে ফেটে গিয়েছিল, সেলাই দিয়েছিল। মুখ শুকিয়ে গিয়ে তা আরো চকচক করে ভাসছে, স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার মাথাটা প্রচণ্ড একটা ঘুরান মারল, সমস্ত শরীর গুলিয়ে এল, নারী ভুড়ি উলটে আসল, মুখ ভরে বমি এল, বমি করার জন্য দ্রুত সে প্লাটফর্মের পাশে যেতে চাইল, পতিত স্বামীকে ডিঙ্গাল কিন্তু জুতার হিল বা খোরা তার কাঁথায় বেজে গেল, প্রচণ্ড চাপে জুতা খসে গিয়ে সামনে বসে থাকা মেয়ের হাতের উপর পড়ল, মেয়ে বিকট শব্দে কেঁদে উঠল, মেয়ের পাশ দিয়ে দ্রুত যাওয়ার সময় পায়ের নলির ধাক্বায় বাচ্চাটা উপুড় হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল, প্রচণ্ড ব্যথা পেয়ে কান্নার একটা টান দিয়ে দম বন্ধ করল। ফেরদৌসি চোখের পলকে সাবেক স্বামীকে ডিঙ্গিয়ে গিয়ে নেকাব টেনে প্লাটফর্মের পাশে বমি করল।
তার শরীর কাঁপছে, দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। লেপটা মেরে বসে বমি করতে লাগল। স্বামী দেখে দৌড়ে আসল, স্ত্রীর শরীর কাঁপছে দেখে উবু হয়ে তার দু’কাধে ধরে রাখল। ফেরদৌসি অনেকটা বমি করার পর শান্ত হল, স্থির হয়ে বসল, তার শরীর ভীষণভাবে কাঁপছে। স্বামী ডান পাশে তাকিয়ে দেখল একটা পাগল পড়ে আছে আর তার পাশে কফ কাশ রক্ত ছড়িয়ে আছে। সে স্ত্রীকে তিরস্কার করল, এতকিছু থাকতে এই পাগল ছাগল দেখতে আসতে হয় কেন, উহঃ, কি নোংরা রে বাবা, মশা মাছি ভেন ভেন করছে। আচ্ছা তুমি একটু বসে শান্ত হও আমি পানির বোতলটা নিয়ে আসি’ বলে সে চলে গেল। ফেরদৌসি একটু স্থির হল, তারপর ডানদিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করে উঠল, ‘ঐ লোকটা তো মরে গেছে, এখন আমার বাচ্চা, আমার বাচ্চার কী হবে’? আবার তার মাথা ঘুরাতে লাগল, পেট গুলিয়ে বমি এল। আবার বমি করতে লাগল, ততক্ষণে স্বামী এসে দেখল স্ত্রীর শরীর থরথর করে কাঁপছে, দু’দিকে টলছে যেন পড়ে যাবে। স্বামী তাড়াতাড়ি পিছনে বসে স্ত্রীর দুই কাঁধে ধরে রাখল।
অনেকক্ষণ পর শরীর শান্ত হল, কাঁপুনি বন্ধ হল, স্বামী বোতল এগিয়ে দিল, সে কুল্লি করে দুই ঢোক পানি খেল। ফেরদৌসি চকিতে ডান দিকে দেখল মেয়েটা তখনো আকুল হয়ে কেঁদে চলেছে। তারপর একটু চিন্তা করল, সহসা উঠতে চাইল, স্বামী ধরে তুলল। তারপর সে কাঁদতে চাইল, আর্তনাদ করতে চাইল কিন্তু তার পাষাণ বক্ষ ও চক্ষু এক ফোটা পানি ছুয়াতে পারল না। শুধু মুখটা বিকৃত করে স্বামীর বুকে মাথা রেখে বলল, ‘আমি এখানে থাকব না, আমার শরীর ভীষণ খারাপ লাগছে, এখানে থাকলে আমি মরে যাব, চল বাসায় চল’ বলে স্বামীকে টেনে নিয়ে লাগ্যাজের কাছে চলল। স্বামী বলল, ‘এ কেমন কথা, হানিমুনে যাচ্ছি এর মধ্যে আবার তোমার কী হয়ে গেল। স্ত্রী বলল, ‘বেঁচে থাকলে জীবনে বহু হানিমুন করা যাবে। কোথাও যাওয়ার শক্তি আমার নেই, শরীর ভীষণ খারাপ লাগছে, কোথাও গেলে আমি আর বাঁচব না, মরে যাব’ বলে তার ভ্যানিটি ব্যাগটা নিয়ে স্বামীর হাত ধরে টানতে লাগল, ‘চল বাসায় চল, আমাকে বাঁচাতে চাইলে বাসায় চল’। অগত্যা ডঃ আব্দুল্লাহ কিছু না বুঝেই হানিমুনের আশা বাদ দিয়ে স্ত্রীর পিছু পিছু বাসার দিকে রওয়ানা হল। কেঁপে উঠল পৃথিবী। সেই সাথে চির গর্বিত মাতৃত্বের উন্নত শির ধুলির ধরায় লোটিয়ে পড়ল আর বসুধার বুকে একমাত্র সত্য ‘মা’ শব্দটির সমাধি রচিত হল, সেই সাথে স্বামীকে লাথি মারার কথাটা বাস্তবায়িত হল, সেই সাথে এক অভিশপ্ত নারী সত্যিকার অর্থেই স্বামীর শবদেহ মাড়িয়ে নিজের সন্তানের দেহ পাড়িয়ে নাগরের হাত ধরে চলে গেল তার সুখের ঠিকানায়।
দ্রষ্টব্যঃ
১। এই বইটা হাসানের পরিণতির মাধ্যমেই শেষ হয়ে যাবে। বইটায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও অন্যন্য ত্রুটি গুলি সংশোধন করে প্রকাশের চেষ্টা করব। যদি প্রকাশ করা যায় তাহলে পরবর্তি ঘটনা (২০০৬- ১৬) বা ফেরদৌসির পরিণতি সম্পর্কে লিখা হবে ‘প্রতিক্ষা’। তবে ব্লগ পাঠকদেরকে তার পরিণতি জানিয়ে দিচ্ছি--
২। বছর খানেক পরেই ডঃ আবদুল্লাহর সাবেক স্ত্রী স্বামীকে নিতে আসে, তখন দুই সতিনে ঝগড়া হয়। স্বেচ্ছায় স্বামী ত্যাগকারিনি ফেরদৌসি দাবী করে আব্দুল্লাহ আমার স্বামী, ঐ মহিলা বলে আমার স্বামী। আব্দুল্লাহও সুন্দরী ও যুবতি স্ত্রী রেখে হিন্দু পরিবারে ফেরত যেতে অস্বিকার করে। তখন ২০০৮ সালে তার উচ্চ শিক্ষিতা ও চাকরিজীবী স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। বিষয়টা ‘আমার দেশ’ সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে আসে। ফলে আব্দুল্লাহ তালাক দিয়ে যশোরে তার সাবেক পরিবারে ফিরে যায়। আর ফেরদৌসি দ্বিতীয় স্বামীর ঔরসজাত একটা কন্যা সন্তান নিয়ে তার প্রিয় বোন নূরানির বাসা- গাজীপুরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পটেটো সরিষা তেলের ব্যবসা করে আর ফেরদৌসি সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করে। এভাবেই দুই পাপিষ্ঠ কর্মফলের হাঁতে গ্রেফতার হয়ে যায়। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। পাপের শাস্তির জন্য পরকালের অপেক্ষা করতে হয় না, দুনিয়াতেই এর প্রমাণ দেখা যায়।
৩। সঙ্গত কারণে আসল নামগুলি ঈষৎ পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। যেমন, ফেরদৌসির বাবা ও স্বামীর নাম আব্দুল্লাহ নয়, উবায়দুল্লাহ, বয়সও সমসাময়িক, আর সে এমনটাই স্বপ্নে দেখেছিল। অন্যান্য নাম, হাসান- মাহমুদুল হাসান। ফেরদৌসি- আতিয়া ফেরদৌস। মুনিরা- মুনিরা হাসানাত। পটেটো- হুমায়ুন কবির। নূরানি- নুরী হাফজা। ইঞ্জিনিয়ার- আঃ রাজ্জাক। মাজেদা- সাজেদা। নাজমা- নাসিমা। বজলু- ফজলু। ( সামনে আরো ৬ কিস্তি বাকী আছে)।
বিষয়: সাহিত্য
১৬৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন