কবর-৭২ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ০১:২৭:০৬ দুপুর
নূরানির জন্য তার এক চাচাত ভাই বি এস সি ইঞ্জিনিয়ারের বিয়ের আলাপ হয়েছিল। এই ইঞ্জনিয়ারের সাথে পটেটোর শিক্ষা, সম্পদ পারিবারিক অবস্থান ও শারীরবৃত্তীয় কোন দিক থেকেই তুলনা ছিল না। কারণ পটেটো ছিল কাল, খাট, বেখাপ্পা মোটা, শুধু অনার্স পড়ুয়া, চল্লিশোর্ধ পড়ন্ত যৌবনা এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। উচ্চতায় সে ছিল ঐ ইঞ্জিনিয়ারের বুক সমান। কিন্তু ফেরদৌসির বড় দুলাভাই ইঞ্জনিয়ার আঃ রউফ ঐ চাচাত ভাইয়ের সাথে শত্রুতাবশত এবং নূরানির প্রতি একটা জেদের কারণে এমন একটা সর্বগুণে গুনান্বিতা অপরুপ সুন্দরী মেয়েকে বাপের বয়সি একটা লোকের সাথে বিয়ে দিয়ে সাগরে ভাসিয়ে দেয়। কিন্তু নূরানি ছিল এক মহিয়সি নারী। বিয়ে হয়ে গেছে, এখন স্বামী অযোগ্য, আত্রা, নোলা- পঙ্গু যাই হউক তাকে সে মাথার মুকূট, গলার মালা হিসাবে বরণ করে নিয়েছে।
আবার পটেটো যখন দেখল সে তাবলীগ করার সুবাদেই হউক বা আল্লাহ্র বরদান হিসাবেই হউক নূরানির মত অনন্য সাধারণ এক জান্নাতী হুরকে স্ত্রী হিসাবে পেয়েছে। তার মত এমন অযোগ্য অজাত কুজাত আশাতিত ও কল্পনাতিত এমন অতুলনীয় স্ত্রী পেয়ে আত্মহারা হয়ে গেল, নিজেকে ভাবতে লাগল পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ। সেই সাথে সে জাতে উঠে নূরানির যোগ্য হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল। কাজেই সে অনার্স করার এক থেকে দেড় যুগ পর গিয়ে মাস্টার্স করল। কিন্তু সে বুঝল তবুও ঐ বি এস সি ইঞ্জনিয়ারের সমকক্ষ হওয়া গেল না আরো কিছু করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল। তারপর গেল পি এইচ ডি করতে। পটেটো একটা ফার্মে চাকরি করত, আর ফার্মের কোন সাধারণ চাকরিজীবি পি এইচ ডি করেছে এমনটা সাধারণত দেখা যায় না। কিন্তু পটেটো নূরানির যোগ্য জামাই হওয়ার জন্য এবং শ্বশুর পরিবারের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য পি এইচ ডি করতে গাজিপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেল। পি এইচ ডির পর সে তেল মবিল মেরে, অনেক কাঠ- খড় পুড়িয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হয়ে গেল।
আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই হঠাৎ ফেরদৌসির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, পটেটো এই বিয়ের সংবাদ পায় পরদিন। সাথে সাথে সে ছোট ভাইকে কল করে বিষয়টা জানায়। তখন তার ভাই খুব কান্নাকাটি করেছিল। পটেটো ছিল শৃগালের চেয়েও ধুর্ত, হায়েনার চেয়েও হিংস্র আর কুকুরের চেয়েও জেদি। ছোট ভাইয়ের কান্না শুনে তার মাথায় বজ্রপাত হল। সে বাসা থেকে বেরিয়ে বাইরে গিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদে। তারপর তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে, চওড়া বুকটা স্ফীত হয়ে উঠে, ফেরদৌসির প্রতি ক্রোধে তার চোখ থেকে আগুন ঠিকরে বেরুতে থাকে। সে মনে মনে গর্জে উঠল, ‘হারামজাদী কুত্তি, আমার ভাইয়ের সাথে গাদ্দারি করলি, তোকে আমি সংসার করে খেতে দিব না। তুই স্বামীর কোলে বসে মউজ করবি আমার ভাই চোখের জলে বুক ভাসাবে, তোর প্রতিটা নিঃশ্বাস আমি হারাম করে তুলব। আমার ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক করে এখন অন্য ভাতার জুটিয়েছিস, বেশ্যা মাগী, তোকে আমি বাজারি বেশ্যা বানিয়ে ছাড়ব’। সেদিনই সে ফেরদৌসির উপর প্রতিশোধ নেয়ার সংকল্প দৃঢ় করে। তার ক্রোধের কারণ হল, ফেরদৌসি এই বিয়েতে রাজি হল কেন, আর হাসান দুনিয়া শুদ্ধু মেয়ে পেল না, তার ভাইয়ের বাগদত্তাকে বিয়ে করল কেন? এজন্য তাদের উভয়ের উপর সে প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্মায় যাদের ভাগ্য সবসময় অনুকূলে কাজ করে। পটেটো তাদের একজন। সে একটি প্রান্তিক অশিক্ষিত পরিবারের ছেলে হয়ে অনার্স করতে সক্ষম হয়। ছাত্রাবস্থায় একটা চাকরিও বাগিয়ে নেয়। তারপর একটা বি এস সি ইঞ্জিনিয়ারের সাথে টক্বর দিয়ে নূরানির মত বিশ্ব সুন্দরী বউয়ের মালিক হয়ে যায়। নূরানিকে বিয়ের পর থেকে আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তারপর সে মাস্টার্স করল, পি এইস ডি করল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হল, চণ্ডাল গুরুর কাতারে উঠে এল। কাজেই ফেরদৌসির ক্ষেত্রেও ভাগ্য তার অনুকূলে কাজ করতে লাগল। তদুপরি এই মেয়েটির বোকামি পটেটোর চিন্তার বিষবৃক্ষকে ফুলে ফলে সফল করে তুলল।
ফেরদৌসির বিয়ের পর পটেটোর ভাই কল করে তার জন্য পাত্রী দেখার কথা বলত। তখন সে বলত, ‘খালি আমাকে বলিস কেন তোর ভাবীকে বলতে পারিস না? সোলেমান ভাবীর সাথে রসিয়ে মজিয়ে আলাপ করত, ‘ভাবী চুল তো পেকে যাচ্ছে, ঘুম আসেনা, আপনার বোনটাও দিলেন না, এভাবে উপোস মরব নাকি’। এই ক্ষুদ্র বিষয়টাকেই ধুর্ত পটেটো ইস্যু বানাল। জামালপুর আসার সময় সে বউকে বলত, আচ্ছা তুমি ফেরদৌসির সাথে আলাপ করে দেখ তো, ওর হাতেও হয়ত পাত্রী টাত্রী থাকতে পারে। সে বউকে বুঝিয়ে দিত ফেরদৌসির সাথে কিভাবে কথা বলবে। অথচ ধুর্ত পটেটো জানত ফেরদৌসি বাইরে যায় না, কারো সাথে সম্পর্কও নাই বিধায় তার হাতে পাত্রী থাকার প্রশ্নই উঠে না। তখন সরলমনা পতিব্রতা নূরানি বোনের সাথে আলাপ করত আর দ্বীচারিনি ফেরদৌসি মনে করত, সোলেমান তার জন্য অপেক্ষা করছে আর বোন তাকে যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। ফলে সে পাগল হয়ে উঠত, স্বামীকে অত্যাচার করত। এইভাবে পটেটো টুপ ফেলে ধীরে ধীরে তার গন্তব্যে এগুতে থাকে।
অবশেষে ফেরদৌসি সোলেমানকে পাওয়ার জন্য স্বামীর পায়ে পারা দিয়ে গণ্ডগোল বাধিয়ে তার বড়াপার বাসায় গেল, দরবার বসল, আর তখন পটেটো চিন্তা করল যা করার এখানেই করতে হবে। দরবারে প্রথম প্রস্তাব হল, হাসানকে ডাকা হউক তার বক্তব্য শুনা দরকার। তখন পটেটো খেকিয়ে উঠল ‘না না, তার এখানে কোন প্রয়োজন নাই, সে একটা খারাপ ছেলে, আমরা যা সিদ্ধান্ত দিব তাকে তাই মানতে হবে’। সর্বশেষে সাল চিল্লার প্রস্তাব হল। ইঞ্জনিয়ার দম্পতি ছাড়া কেউ এই প্রস্তাবের পক্ষে ছিলনা। সবাই বলল, বউ বাচ্চা চাকরি সব ছেড়ে এক বছরের জন্য যাওয়ার দরকার নাই, এক দুই চিল্লার শর্ত দেয়া হউক। তখন পটেটোই প্রতিবাদ করে বলল, ‘না এক বছর না লাগালে ওর চরিত্র ঠিক হবেনা, বউ নিতে হলে সাল চিল্লাই দিতে হবে’। তারপর হাসানের বাসায় এসে তার ভগ্নীপতির সাথে ঝগড়া করল, হাসানকে অপমান করল ও তার মন ভেঙ্গে দিল। তারপর যা ঘটার তাই ঘটল। পরবর্তীতে অন্যান্য বোনেরা যখন ফেরদৌসিকে হাসানের ঘরে দিয়ে দেয়ার জন্য জোরাজোরি শুরু করল তখন পটেটো মরিয়া হয়ে উঠল, প্রতিবাদ করে বলল, ‘ওর ঘরে আর দেয়া যাবেনা, আমি ওকে আরো ভাল বিয়ে দিব’। আর শালীকে ইঙ্গিতে তার ভাইয়ের লোভ দেখাতে লাগল। এভাবে ভাগ্য পটেটোকে তার লক্ষের দিকে ধীরে ধীরে পৌঁছাতে লাগল।
ডঃ মনোজ মোহন দাস, একজন প্রৌঢ় ব্যক্তি, তার স্ত্রী শিক্ষিতা চাকরিজীবি, তাদের চারটি সন্তান বড় হয়ে গেছে। ডঃ মনোজ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আব্দুলাহ নাম ধারণ করে। কিন্তু তার পরিবারের কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি বিধায় সে পরিবার ত্যাগ করে চলে আসে এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হয়। তাবলীগি ডঃ পটেটোর সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। সে পাত্রী চায় আর পটেটো মনে মনে হাসে, এইবার তার প্রতিশোধ ষোল কলায় পূর্ণ হতে যাচ্ছে। কারণ ফেরদৌসিকে তার সাথে বিয়ে দিতে পারলেই হল, আর ভার্সিটি শিক্ষক হিসাবে বিয়ে তো দেয়া যাবেই। তারপর দু’দিন আগে আর পিছে আব্দুলাহ তার পরিবারে ফিরে যাবে, স্ত্রীর টানে না গেলেও অন্তত সন্তানের টানে তো অবশ্যি যাবে। ব্যস তখনই তো শুরু হবে খেলাটা। ফেরদৌসি সতীনের ঘর করবে না, বাধ্য হয়ে আব্দুল্লাহ তাকে তালাক দিবে। আর তখনই বিশ্বাসঘাতিনী ফেরদৌসির মজাটা শুরু হবে। তার পৈত্রিক কোন সম্পদ নাই, আবার এমন কোন অবলম্বন নাই যে, বসে বসে খাবে। তখন বেশ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া ছাড়া আর কোন গত্যন্তর থাকবে না। সে স্বগতোক্তি করে, বেশ্যা মাগী, আমার ভাইয়ের সাথে গাদ্দারির মজাটা তোকে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াব, তোকে আমি বেশ্যা বানিয়ে ছাড়ব’। এইভাবে সে প্রতিশোধের ছক এঁকে নিয়ে বসে থাকে। তারপর ভাগ্যই শিকার তার দোরগোড়ায় এনে দেয়, ফেরদৌসি তার বাসায় গিয়ে হাজির হয়।
ফেরদৌসি পটেটোর বাসায় গিয়েই নূরানির উপর হামলে পড়ল, ‘একমাত্র তোমার কারণে আজ আমার এই পরিণতি। আগে আদর মাড়িয়ে বলেছ, ‘তোরা আর আমরা একসাথে বাসা করে একসাথে থাকব’। আমাকে বরিশাল নিয়ে গিয়েছ, সোলেমানের সাথে সম্পর্ক পাতিয়েছ। তার মা বাপ আমাকে ছোট বউমা বলে ডেকেছে। তারপর হঠাৎ আমার বিয়ে হয়ে গেল অথচ তোমরা কোন প্রতিবাদ করলে না, বিয়ের পরেও একটা মাস আমি অপেক্ষা করেছি তবুও কিছু করলে না। যখন আমার বাচ্চা হয়ে গেল আর স্বামীর সাথে সংসার পেতে বসেছি তখন এলে আমার সংসারে আগুন জ্বালাতে। কথায় কথায় বললে, ‘সোলেমানের ঘুম আসে না, কোন ব্যবস্থা করে দিতে। আমি মনে করলাম ব্যবস্থা বলতে তুমি আমাকে ইঙ্গিত করছ, সোলেমানের ঘরে যাওয়ার ব্যবস্থার কথা বলছ। আর তখন আমি পাগল হয়ে উঠলাম। ঐ নিরীহ বেচারার উপর কি অত্যাচারগুলিই না আমি করেছি। আমি জানি সে আমাকে ভালবাসত, ভাল না বাসলে সে আমার এত অত্যাচার কখনো সহ্য করত না, করতে পারত না। ওকে কত অত্যাচার করেছি, অতিষ্ঠ করে তুলেছি অথচ কোন দিন আমাকে মারেনি, গালি দেয়নি, এরপরেও তাকে ফেলে চলে এলাম।
এত সব আমি কেন করেছি, কার জন্য করেছি, তোমরা কি কিছুই বুঝ না? এত কিছু করলাম, এতটা দিন ধরে গন্ডগোল চলছে অথচ তোমরা আমাকে শুধু স্বপ্ন দেখিয়েই গেলে, কাজের কাজ কিছুই করলে না। কেন তোমরা আমার জীবনটা নষ্ট করলে, কেন আমাকে গাছে তোলে মই কেড়ে নিলে। এরপর ফেরদৌসি কান্নাকাটি শুরু করল। নূরানি চোখ বিস্ফারিত করে মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘কি সর্বনাশা কথা, আমি কি তোকে কখনো বলেছি তোর জামাইয়ের উপর অত্যাচার কর, জামাইর ঘর ছেড়ে চলে আয়? সে খেকিয়ে উঠল, ‘বলেছ না তো কি করেছ? তুমি বল নাই যে, সোলেমানের ঘুম হয় না, তার ব্যবস্থা করতে’। নূরানি চোখ কপালে তুলল, ‘কি জাত যাওয়া কথা, ব্যবস্থা বলতে কি তুই নিজেকে বুঝেছিস নাকি’? – আমাকেই যখন বলেছ তো আর কী ঘোড়ার আন্ডাটা বুঝব?- হায় হায়, আরে বোকা ব্যবস্থা বলতে আমি বুঝিয়েছি অন্য কোন মেয়ে দেখা, তার জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করা। ফেরদৌসি চটে গেল, এখন তুমি মুনাফেকি আলাপ করছ। তুমি অন্য মেয়ে দেখাবে তাহলে এসব কথা আমাকে বললে কেন অথচ তুমি জান যে তার সাথে আমার সম্পর্ক রয়েছে, তাছাড়া আমি মেয়ে নিয়ে ঠিকাদারি করি না। এখন যেভাবেই হউক সোলেমানের সাথে আমার ব্যবস্থা করে দাও।
নূরানি কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসে থাকল, তারপর বলল, ‘তুই তোর জামাইয়ের ঘরে চলে যা। এমন একটা ভাল মানুষ আর পাবি না, এত অত্যাচার করলি অথচ সে এখনো তোকে নেয়ার জন্য কত চেষ্টা তদবির করতেছে, কত লোক ধরতেছে। তুই চলে যা, এটা তোর জন্য খুব ভাল হবে। ফেরদৌসি গম্ভীর হয়ে বলল, ‘এটা এখন আর সম্ভব না, ভাঙ্গা হাড়ি জোড়া লাগে না। আমি তার বিরুদ্ধে সত্য মিথ্যা যে সব বদনাম করেছি এরপর আর তাকে গিয়ে মুখ দেখাতে পারব না, এর চেয়ে মরে যাওয়াই ভাল। আর তুমি এখন এসব কি বলছ, তোমার কথায়ই আমি এসব করেছি। আমাকে আকাশে তুলে এখন মাটিতে ফেলে দিতে চাও, ঠিক আছে আমি মাটিতেই পড়ব। কসম করে বলছি, যদি সোলেমানের সাথে আমার ব্যবস্থা না করে দাও তাহলে আমি পাঁচতলা থেকে লাফিয়ে মাটিতেই পড়ব। ফেরদৌসির চোখ জ্বলে উঠে, সে নূরানির দিকে অগ্নিদৃষ্টি হেনে বলল, ‘তুমি এক্ষুণি সোলেমানকে কল করে বল এখানে আসতে, না হয় আমাকেই কল করতে দাও’ বলে উঠে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে নূরানির মোবাইল নিল।
নূরানি ঘাবড়ে গেল, কারণ সে বোনের বদমেজাজ সম্পর্কে জানে, রাগের সময় সে দিক্বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে যায় আর যা ইচ্ছা তাই করে। মোবাইল অন করে ফেরদৌসি সোলেমানের নাম খুঁজছে। নূরানির গলা শুকিয়ে গেছে। সে ভড়কে গিয়ে বোনের মাথায় ও শরীরে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, ‘বোন না আমার, পাগলামি করিস না, আপা না আমার একটু বুঝতে চেষ্টা কর, তুই নিজে কল করলে সোলেমান তোকে নিচু ভাববে, আমাদের পরিবারের মান সম্মান জলাঞ্জলি যাবে। পরিবারের মুখে চুনকালি পড়বে। নিজের পরিবারের এত বড় সর্বনাশ করিস না, দে দে, মোবাইলটা আমার হাতে দে, আমি নিজেই সোমেলামানকে কল করছি। তোকে কত্থা দিলাম দু’দিনের মধ্যে ওর সাথে তোর ব্যবস্থা করে দেব, এই বাসায় ডেকে আনব’ বলতে বলতে মোবাইল আনার জন্য বোনের সাথে জোড়াজোড়ি শুরু করল। হাতাহাতির মধ্যে ফেরদৌসি সোলেমানের নাম খুঁজে পেল না। অগত্যা সে মোবাইল রেখেই বোনের দিকে চোখ পাকিয়ে বলল, ‘সত্য বলছ তো, দু’দিনের মধ্যে ব্যবস্থা করে দেবে?
নূরানি ঢোক গিলে বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ সত্য বলছি’। ফেরদৌসি মোবাইল ছেড়ে দিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে মনে থাকে যেন। দু’দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না করলে কিন্তু তৃতীয় দিন আমি পাঁচ তলা থেকে ঝাপ দিব’। নূরানির চেহারা পাণ্ডুর হয়ে গেল, সে ভয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কারণ নিজের বোনকে সে চিনে। ফেরদৌসির বদমেজাজকে শুধু সে নয় সবাই ভয় পায়। যদি সে সোলেমানের সাথে ব্যবস্থা না করতে পারে, আর তখন যদি সে সত্যি সত্যিই ঝাপ দেয়, আর ফেরদৌসির মত জেদি মেয়ের জন্য এটা কোন ব্যাপারই না- তখন কি হবে। নূরানির দম বন্ধ হয়ে আসে, সে ঘাবড়ে গেল, সারা দিন গম্ভীর হয়ে থাকল।
রাত্রে নূরানী স্বামীকে বিস্তারিত ঘটনা জানাল। পটেটোর ইচ্ছা পূরণ হতে যাচ্ছে দেখে সে ‘আল- হামদুলিল্লাহ’ বলে আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করল, খুশিতে তার মুখ চকচক করছে, ঠোঁটের কোণায় কুটিল হাসি। সে মনে মনে ফেরদৌসিকে গালি দিল, ‘বেশ্যা মাগী, আমার ভাইকে ঠকিয়ে ভাতার জুটিয়েছিস, এখন এক ভাতার বাসি করে আরেক ভাতার চাস। তোর সাহস তো কম নয়, বিয়ে হয়েছে বাচ্চা হয়েছে এখন আমার ভাইয়ের মত একটা অবিবাহিত ছেলের বউ হওয়ার শখ জেগেছে। রাখ তোর শখ আমি চিরতরে মিটিয়ে দিব’। কিন্তু বউয়ের সাথে তো আর এসব বলা যাবে না। কারণ সুন্দরী বউ হিসাবে নূরানিকে সে খুব তোয়াজ নোয়াজ করত। তাই বলল, ‘এটা কি করে সম্ভব। অবিবাহিত ছেলের জন্য বাচ্চাওয়ালী বউ। নূরানি ফেরদৌসির মেজাজ সম্পর্কে স্বামীকে জ্ঞান দেয়ার পর বলল, ‘সে খুব ভয়ঙ্কর জেদি, তার ইচ্ছা পূরণ না হলে যে কোন ধরণের এ্যাকসিডেন্ট ঘটিয়ে বসতে পারে। আর তখন শুধু আমরাই না, আমাদের গোটা পরিবারটাই ধ্বংস হয়ে যাবে’।
পটেটো বউকে লাইনে তোলার জন্য জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে এখন কি করা যায়? নূরানি বলল, ‘সোলেমানের চিন্তা বাদ দিয়ে ভাল দেখে অন্য কোন পাত্র দেখেন’। তারা খাটে শুয়ে ছিল, পটেটো শুয়ে শুয়ে অনেকক্ষণ মিটিমিটি হাসল, পরিকল্পনা স্থির করল। তারপর হঠাৎ নূরানিকে জড়িয়ে ধরে আদর করল এবং চুম্বন করে বলল, ‘হ্যাঁ পেয়েছি, একটা পথ আছে। আচ্ছা ডঃ আব্দুল্লাহ কেমন হয়? নূরানি বলল, ‘তাকে তো আর আমি চিনি না, আপনিই ভাল জানেন’। পটেটো বলল, ‘সে খুব ভাল লোক, এটা হলে ভালই হবে, তোমার বোনকে বুঝাও’। তারপর ডঃ আব্দুল্লাহর গুণ-কীর্তন যা করার করল।
পরদিন নূরানি ফেরদৌসিকে বিষয়টা বলল কিন্তু সে খেকিয়ে উঠল, ‘কেন, সোলেমানের কথা বলছ না কেন, তার কি হইছে? নূরানি বলল, ‘সে রাজি নয়? – ‘মিথ্যে কথা আমি বিশ্বাস করি না। আমি নিজে মোবাইল করব’ বলে নূরানির মোবাইল নিল। নূরানি প্রমাদ গুনল। সে বলল, ‘তুই নাম খুঁজে পাবি না, দে আমার কাছে। তারপর দু’বোনে মোবাইল নিয়ে কিছুক্ষণ কাড়াকাড়ি করল। অবশেষে ফেরদৌসি চোখ গরম করে বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে নাও, নম্বর বের করে আমাকে দাও, নইলে কিন্তু আমার কাজ আমি করব’। নূরানির হাত-পা কাঁপছে, পাণ্ডুর মুখে বলল, ‘শুন তুই কল করলে আর মান ইজ্জত থাকবে না, আমিই করছি। তারপর সে নিজেই কল করল কিন্তু ফেরদৌসি স্পিকার বাড়িয়ে দিল। নূরানি কি করবে না করবে বুঝতে না পেরে পারিবারিক আলাপ জুড়ে দিল। ফেরদৌসি বারবার চোখ টিপছে কিন্তু নূরানি তার কথা বলছে না। অবশেষে সে হাত বাড়িয়ে বলল, ‘দাও, আমার কাছে দাও, আমার বিষয় আমি নিজেই ফয়সালা করব। তখন নূরানি বলল, ‘আচ্ছা অন্য একটা আলাপ করি। আমার বোনের গন্ডগোলটা তো আপনি জানেনই, সে আপনার জন্যই এসব করেছে। এখন সে আপনার ঘরে আসতে চায়, আপনি কি বলেন?
ওপার থেকে লাউড স্পিকারে কণ্ঠ ভেসে এল ‘ভাবী আপনার বোন বলেই অন্যের ব্যবহৃত একটা সেকেন্ড হ্যান্ড মাল আমার জন্য---- আপনি এই কথাটা কি করে বলতে পারলেন’ বলে হাসতে লাগল। এটুকু শুনেই ফেরদৌসির চোখে পানি এসে গেল। সে মাতালের মত টলতে টলতে গিয়ে বিছানায় ধপাস করে পড়ে গেল। তারপর সুর তুলে কাঁদতে লাগল, ‘আমি এতকিছু কার জন্য করলাম, কেন নিজের জীবন নষ্ট করলাম, তোমরা কেন আমাকে জামাইয়ের ঘর থেকে আনলে, তোমরাই তো জামালপুর থেকে আমাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলে’ ইত্যাদি বলতে বলতে কাঁদতে লাগল। ফেরদৌসি সকাল থেকে নিয়ে বিকাল পর্যন্ত একটানা শুয়ে শুয়ে কাঁদল, উঠলও না, গোসলও করল না, খাওয়া দাওয়াও করল না। নূরানি সারাক্ষণ তার পাশে বসে বসে শান্তনা দিল এই ভয়ে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে।
বিকালে ডঃ পটেটো এলে নূরানি সব ঘটনা তাকে বলল। তখন পটেটো এসে ফেরদৌসিকে বুঝানো শুরু করল, ‘আচ্ছা তোমার মত বোকা মেয়ে পৃথিবীতে আরো আছে বলে তো আমার মনে হয় না। কারণ আমার ভাই আধা শিক্ষিত, চাকরি নাই, দরিদ্র পরিবার। আর আব্দুল্লাহ একজন ডঃ, বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক, নও মুসলিম মানুষ, মা বাপ ভাই বোন কিচ্ছু নাই, কোন ঝামেলা নাই। শুধু স্বামী স্ত্রী দুই জন থাকবে, খাবে দাবে আনন্দ স্ফুর্তি করবে, জীবনটাকে উপভোগ করবে। এমন ভাগ্য কয়জন মেয়ের কপালে জোটে। অথচ তুমি কিনা কাঁদছ, আর কাঁদছ এমন একটা ছেলের জন্য যার চাল চামড়া কিছুই নেই। এভাবে সে অনেকক্ষণ শান্তনা দিল, একটা বোকা মেয়েকে প্রতারণা দিল আর মনে মনে হাসল। তারপর গভীর রাত পর্যন্ত নূরানি তার সাথে লেগে থাকল, আর বুঝাল। অবশেষে মেঘের আবরন সরে গিয়ে চাঁদের মুখে হাসি ফুটল আর নূরানি ঘুমুতে গেল এবং স্বামীকে বলল, ‘বরফ গলেছে’।
সকালে পটেটো খাওয়ার সময় স্ত্রীকে বলল, ‘ডঃ আব্দুল্লাহকে লাঞ্চে নিয়ে আসব, ভাল করে রান্না বান্না করে রেখ আর ফেরদৌসিকে সাজিয়ে গুজিয়ে রেখ। দুপুর একটায় রান্নার কাজ শেষ করে নূরানি স্বামীকে কল করে জিজ্ঞেস করলে সে জানাল দুইটার দিকে তারা আসবে। তারপর সে বোনকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। ঘষে মেজে ভাল করে গোসল করাল। তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসল, ফেরদৌসি এমনিতে সুন্দরী এবং লম্বা মেয়ে, শাড়ি পড়লে ও সাজলে তাকে পরীর মত লাগে। তার উপর মেকাপ মেরে তাকে বানিয়ে তুলল একেবারে লাল পরীর মত সুন্দরী। এরপর মশারির মত পাতলা ফিনফিনে একটা কাপড় পরাল। রুপবতি গুনবতি নূরানির নিপুন হাত আট সাট করে এমন কৌশলে কাপড়টা পরাল যে, নারী দেহের যতটা ভাজ ও খাজ আছে কাপড়ের উপর দিয়ে দেদীপ্যমান হয়ে উঠল। দেহের উচু, নিচু, টিলা ও গর্তগুলি পরিমাপের চেয়েও আরো অধিক স্পষ্ট হয়ে উঠল। ফেরদৌসির শরীরটাই হয়ে উঠল এক শৈল্পিক নিদর্শন।
দুইটার সময় তারা এল, নূরানি পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য বোনকে নিয়ে চলল আর ফেরদৌসি ঘাড় কাত করে গৌরবময় ভঙ্গিতে হেলে দুলে হাঁটল। নূরানি বলল, ‘আমার বোন, স্বামীর সাথে গন্ডগোল, ক’দিন ধরে আমার এখানে আছে’। তারপর তারা স্বামী স্ত্রী চলে গেল আর তারা দু’জন আলাপ শুরু করল, ফেরদৌসি তার ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে আলাপ করছে আর তার তুষার শুভ্র দাঁতে মুক্তা ঝরে পড়ছে। ডঃ আব্দুল্লাহ শিহরিত হয়, ব্যাকুল হয়ে উঠে। তারপর ফেরদৌসি নিজ হাতে তাকে খাওয়া দাওয়া করাল। কিন্তু সে ডঃ আব্দুল্লাহর বয়স দেখে ভিরমি খেল, কারণ বর যদি বাপের বয়সী হয় তাহলে যে কোন মেয়েই ভিরমি খাবে।
আবার পরে সে জানতে পারল তার হবু স্বামীর স্ত্রী আছে, এক হালি সন্তান আছে, ইত্যাদি পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে সে বিগড়ে গেল। নূরানিও পিছপা হয়ে গেছে। কারণ একটা সোনার সংসার ভেঙ্গে এমন অনিশ্চিত পাত্রের সাথে বিয়ে দিয়ে বোনের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে তার মন কোনভাবেই সায় দিল না। তখন ধুর্ত পটেটো বউকে আর শালীকে বুঝাতে লাগল, ‘ডঃ আব্দুল্লাহর স্ত্রী একজন উচ্চ শিক্ষিতা চাকরিজীবি মহিলা, তার সন্তানরা সবাই বড় হয়ে গেছে। সে তাদেরকে মুসলমান বানাবোর চেষ্টা করেছে কিন্তু তারা কোনভাবেই ইসলাম গ্রহণ করবে না। অবশেষে বেচারা নিরুপায় হয়ে পরিবারের সাথে চিরতরে সম্পর্ক ত্যাগ করে এসে গেছে। কাজেই এই আশঙ্কা অমূলক যে, সে মুসলমান হয়ে আবার একটা হিন্দু পরিবারে ফিরে যাবে। তাছাড়া সে একজন বিত্তবান মানুষ। অনেকদিন ধরে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনার জন্য ঘোরাফিরা করছে কিন্তু আমি থামিয়ে রেখেছি। আমার ইচ্ছা, কিছু টাকা জমিয়ে দু’জন একসাথে বাসা কিনব একসাথে থাকব। কাজেই এত সুন্দর একটা পাত্র হাতছাড়া করা উচিত হবে না।
এই ধুর্ত শৃগাল বউকে প্রতারণার ফাদে আটকাল, তাকে মিথ্যা প্রবোধ দিতে লাগল, ‘দেখ তোমার বোনকে বুঝাও, ডঃ আব্দুল্লাহ অনেক বড়লোক মানুষ, তার অনেক টাকা পয়সা, সে আর আমরা একসাথে বাসা করে একসাথে থাকব। আর যেহেতু তার পরিবার হিন্দু কাজেই তারা তো আর তার ওয়ারিশ হতে পারেব না, (অমুসলিম মুসলমানের ওয়ারিশ হয় না)। কাজেই ফেরদৌসিই এসব বিত্ত বৈভবের মালিক হবে, এতে তোমাদের পরিবারেরও উপকার হবে। ওকে বুঝাও এমন একটা সুযোগ যেন হাতছাড়া না করে। পতিভক্ত সরলপ্রাণ নূরানিও স্বামীর পাতা ফাদে পা দেয়। সে বোনকে বুঝায়, ‘শুন, ডঃ আবদুল্লাহর সাথে তোর বিয়ে হলে আমরা একসাথে বাসা করে একসাথে থাকব। সে অনেক টাকা পয়সার মালিক, এসব তো একদিন তোরই হবে। সে বোনকে অনবরত বুঝাতে থাকে। ফেরদৌসি আবার প্রতারিত হয়। সে তার সবচেয়ে প্রিয় বোন নূরানির সাথে থাকবে। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হিসাবে স্বপ্ন দেখে, একদিন সে স্বামীর বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক হবে, তার মা ও ভাইদের অভাব ঘুচবে, তার ভেজা চোখ স্বপ্নময় হয়ে উঠে। অথচ ডঃ আব্দুল্লাহর চাকরি ছাড়া আর কোন সম্পদ ছিল না। এইভাবে পৃথিবীর এক নিকৃষ্ট ইতর, ঘৃণিত পটেটো একটা নির্বোধ, বোকা ও ইয়াতিম মেয়েকে প্রতারণার ফাদে ফেলে যোপকাষ্টে তুলে দেয়। পিতৃহারা মেয়েদের ক্ষেত্রে ভাই, মামা চাচা বাদ দিয়ে ভগ্নীপতিরা কর্তা হলে যা হয় ফেরদৌসির ভাগ্যে সেই পরিণতিই নেমে এল।
আবার ডঃ আব্দুল্লাহর সাথে আলাপ করে সে বুঝতে পারল যে, হ্যাঁ ফেরদৌসিটা আসলেই কাজের, আব্দুল্লাহর শুধু লালা ঝড়াতেই সক্ষম হয়নি বরং শ্যালিকার প্রতি তার রসনা বাসুকির রসনার মত লকলকিয়ে উঠেছে। তখন সে ফেরদৌসি ও তার পরিবার সম্পর্কে কবিদের মত কাল্পনিক ও কাব্যিক বয়ান শুরু করল। এরপর তার স্বামী সম্পর্কে বলল, ‘ছেলেটা উচ্চ শিক্ষিত এবং অনেক বড় শিক্ষিত ছিল। সে দেশের তিনটি ধারায় লেখা পড়া করেছে। অনেক নামি দামি খান্দানি পরিবারের সন্তান, বিখ্যাত বাবার ছেলে’। এই প্রশংসার উদ্দেশ্য হল ফেরদৌসির ওয়াইট বাড়ানো যে, আগে অনেক উচু জায়গায় তার বিয়ে হয়েছিল। তারপর মেয়েকে নিয়ে আসার কারণ বর্ণনা করল, ‘কিন্তু ছেলেটার স্বভাব চরিত্র, আদব আখলাক ভাল ছিল না, আবার হাফ মেন্টাল ছিল, মেয়ের উপর অত্যাচারও করত। এজন্যই আমরা মেয়েকে নিয়ে এসেছি। আরেকটা কথা আপনাকে বলি, আপনি তো বয়স্ক মানুষ, আগের সংসার আছে সন্তানাদি আছে। কিন্তু আমার শালীর তো বয়স কম, কিছুটা আপত্তি করলেও করতে পারে। আপনি ওর সাথে একটু ঘনিষ্ঠ হন, দূরত্বটা কমিয়ে আনেন। মেয়ে মানুষের মন, কয়েক দিন একান্তে কথা বার্তা বললে আর কিছু পয়সা- পাতি খরচ করলে দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। সে ডঃ আব্দুল্লাহকে উসকে দিল।
এরপর থেকে ডঃ পটেটোর একটু সমস্যা হয়ে গেল। কারণ ডঃ আব্দুল্লাহ প্রতিদিন হয় লাঞ্চে নয় ডিনারে বা বিকালের চা নাস্তায় এসে উপস্থিত থাকে। অবশ্য তার সময়টা কাটে ফেরদৌসিকে নিয়ে। আর ফেরদৌসি যখনি তার হবু স্বামীর আগমনের আহট পায় তখনই দৌড়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে। সে নূরানি থেকে শৈল্পিক কৌশলে কাপড় পড়া শিখে নিয়েছে। তারপর সেই ঠোঁট বাকানো হাসি আর বরফ শুভ্র দাঁতের মুক্তা ঝরাতে ঝরাতে হবু কর্নধারের সামনে আসে। ঘন্টার পর ঘণ্টা আলাপ করে, হাসি মশকরা করে, নিভৃতে সময় কাটায়। কিন্তু এক সময় আর ঘরে আলাপ জমে উঠে না, বাইরে গিয়ে আলাপ জমায়, ঘোরাফিরা করে। এর মধ্যে আবার ডঃ আব্দুল্লাহর আরেক ব্যধি দেখা দিল, এখন আর তার একাকিত্ব ঘুম আসতে চায়না, সাথী চায়। তাই সে ফেরদৌসিকে একটা মোবাইল কিনে দেয় এবং হবু বধুর সাথে ডেটিং করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।
ফেরদৌসি আনন্দিত উল্লসিত, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বউ হতে চলেছে, শীঘ্রই বিশাল বিত্ত- বৈভবের মালিক হয়ে যাবে, তার মাকে ও পরিবারকে সাহায্য করতে পারবে। তার দু’টি চোখে স্বপ্নের বলাকারা উড়ে বেড়ায়। কিন্তু স্বপ্ন ভাঙ্গতে খুব বেশি সময় লাগে না। আর এভাবেই ডঃ পটেটো একটা বোকা, অপরিনামদর্শি নারীকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। ফেরদৌসি মেয়ের প্রতি ফিরেও তাকায় না, জামালপুর থাকলে তার মা দেখা শুনা করে, বাইরে থাকলে বোনেরা লক্ষ্য রাখে। মেয়ের বাবার প্রতি যেমন তার মনের টান নাই তদ্রুপ মেয়ে থেকেও তার মন উঠে গেছে, এখন সে অন্য চিন্তায় হারিয়ে গেছে।
ফেরদৌসি এখন নতুন সংসারের রঙ্গিন স্বপ্নে বিভোর। সে নিজেকে ও নিজের দেহটাকে হবু স্বামীর যোগ্য ও ভোগ্য রুপে গড়ে তুলতে চায়। কাজেই স্বাস্থ্য ও রুপচর্চার জন্য সে ঢাকা ছেড়ে জামালপুর চলে যায়। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সারা জীবন নতুন স্বামীর জন্য রুপচর্চা করে যাবে। তার ইচ্ছা, বাসর রাতে তার নওশাকে নতুন আনকোরা দেহ উপহার না দিতে পারলেও একটা উজ্বল, জ্যোতির্ময়, কোমল, মোলায়েম, রমণীয়, লাবন্যময় দেহ উপহার দিবে। আর তজ্জন্য সে চেষ্টার কোনই কসুর করছে না। কারণ এই মেয়েটা ছিল যেমনি বোকা তেমনি নির্বোধ। সে বাহ্যিক বিষয়ের উপর চিন্তা করত, বস্তু নিচয়ের গোড়া পর্যন্ত মৌলিক চিন্তার শক্তি ও সামর্থ তার ছিল না। তার বিকৃত চিন্তা ও অভিজ্ঞতায় সে এ সিদ্ধান্তে পৌছেছে যে, পুরুষ জাতটা শুধুই একটা কামুক জীব। সে নারীর মন, গুণ, বৈশিষ্ট কিছুই চায়না, চায় শুধু দেহটা । আর নারীর সাথে পুরুষের সম্পর্ক শুধু এ একটাই- দৈহিক সম্পর্ক। সেখানে আধ্যাত্মিকতা ও পার্থিবতার কোন সম্পর্ক বা লক্ষ্য উদ্দেশ্য নাই। পুরুষ সাত সাহারার তৃষা নিয়ে নারী দেহের সাথে মিলিত হয়। আর তখন যদি নারী দেহটি রমণীয় কমনীয় ও উপভোগ্য হয়, তাকে সন্তুষ্ট করতে পারে তাহলেই পুরুষ খুশি, আত্মতৃপ্ত হয়ে উঠে, তার জীবন ধন্য মনে করে। যদিও সেই নারীর মধ্যে কোন গুণ বৈশিষ্ট, শিক্ষা দীক্ষা থাকুক বা নাই থাকুক।
পক্ষান্তর কোন নারী যতই বিদুষী আর গুণবতী হউক না কেন সে যদি আকর্ষণীয় উপভোগ্য না হয় তাহলে পুরুষ তার সাথে মিলিত হয় স্রেফ পশুর ক্ষুধা নিয়ে। সেখানে কোন ভালবাসা বা প্রীতির বন্ধন থাকেনা, থাকে শুধু পাশবিকতা। কিন্তু এ বিষয়টা নিয়ে ভাবতে গেলে তার চোখে জল এসে যায়, আল্লাহ্র উপর আপত্তি উত্থাপিত হয়। আল্লাহ্ কেন নারীকে পুরুষের লালসার দাসী বানিয়ে দিলেন, পুরুষকে নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার ক্রিড়নক বানাতে পারলেন না। কিন্তু সে অসহায়, কারণ এটাই আল্লাহ্র বিধান, প্রকৃতির নিয়ম, এর অতিক্রম করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই ফেরদৌসি তার এ দর্শন নিজের উপর প্রয়োগ করতে চায়। তার দেহটিকে হবু স্বামীর জন্য যথার্থরুপে গড়ে তুলতে চায়।
ফেরদৌসি ঢাকায় ত্বক ও প্রসাধন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে ছিল। জামালপুর এসে বিভিন্ন বিউটি পার্লারে ঘোরাফিরা করেছে। তাদের কাছে থেকে ত্বক উজ্বল ও দীপ্তিমান করার বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী জেনে নিয়েছে। এছাড়া যার কাছে যা শুনেছে নিজের রূপ লাবন্যের জন্য তাই ব্যবহার শুরু করেছে। স্বাস্থ্যের জন্য সে খায় দৈনিক আধা কেজি দুধ কিন্তু রুপের জন্য গায়ে মাখে এক কেজি। তাছাড়া বলকারক বিভিন্ন ঔষধ ও পথ্য ব্যবহার করতে লাগল। এভাবে পনের দিনেই তার রূপ ও স্বাস্থ্য বদলে গেল। এরপর খুটিয়ে খুটিয়ে নিজের শরীরটা দেখে, হ্যাঁ, কয়েক সপ্তাহের সাধনায় তার শরীরটা অনেক উন্নত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানের জারকাটাগুলি উঠে গিয়ে মসৃন হয়ে গেছে। চামড়া উজ্বল ও নরম- তুলতুলে হয়ে উঠেছে, ত্বক থেকে কেমন যেন একটা মিহি আভা ছড়াচ্ছে, গ্লাস দিচ্ছে, আয়নার মত তার শরীরে যে কোন জিনিসের ছবি প্রতিবিম্বিত হচ্ছে, প্রতিটা লোম কুপের গোড়ায় দুয়েকটা করে লবণ বা চিনির দানা ফুটে আছে, তার সম্পূর্ণ দেহটা হয়ে উঠেছে লাবন্যময়।
সে বরফ শুভ্র দাঁতে চাঁদের হাসি হাসে, সে তৃপ্ত, আত্মতুষ্ট। তার নওশাকে নতুন আনকোরা না হলেও একটা অপরুপ লাবন্যময় দেহ উপহার দিতে সক্ষম হবে, ময়ুরের মত পেখম মেলে তার নাচতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ময়ূর যেভাবে নাচতে নাচতে হঠাৎ তার কুৎসিত পায়ের দিকে তাকিয়ে পেখম গুটিয়ে নেয় ফেরদৌসির মন ময়ূরীও কেঁদে উঠে। কারণ তার দুলা ভাইদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও হাসান তালাক দিচ্ছে না, সে শুধু স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য তদবীর চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ সে ডঃ আব্দুল্লাহর সাথে বিয়ের জন্য মুখিয়ে উঠেছে। হাসানের প্রতি ক্রোধ ও ঘৃণায় তার মন রি রি করে উঠে। সে স্বগতোক্তি করে, ‘কোত্তা চোদা, আমি মরে গেলেও তোর ঘরে আর যাব না, আজ হউক কাল হউক তোকে তালাক দিতেই হবে’। অবশেষে কয়েক মাস পর তার সাধ পূর্ণ হয়।
বিষয়: সাহিত্য
২৭৭৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার পরবর্তী অবস্থা কি হল। তা জানান। বর্তমানে ঐ মহিলার অবস্থা কি. মেয়েটার অবস্থাটাই বা কি?
মন্তব্য করতে লগইন করুন