চিঠি- ৫৩ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৫৩:৩২ সকাল
৭ জুলাই, ২০০৬ সাল। হাসান একটা মসজিদে মাগরিবের নামায পড়ে বেরুচ্ছে। তখন পাট গুদাম মাদরাসার একজন শিক্ষক পেছন থেকে তার হাত টেনে ধরল। সালাম বিনিময়ের পর বলল, ‘আপনার সাথে আলাপ আছে। তারপর হাটতে হাটতে আলাপ শুরু করল, ‘ইঞ্জিনিয়ার তো প্রতিদিন মাদরাসায় এসে আমাদেরকে চাপ দিচ্ছে আপনার কাছ থেকে তার শ্যালিকার তালাক নিয়ে দেয়ার জন্য। আপনার বউয়ের নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, ছেলে ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষক’। হাসান হাসল, ‘আপনারা যে কি খুরাফার (আরব্য ভৌতিক কিসসা কথক) গল্প জুড়ে বসেন, শুনে আজগুবি ঠেকে। বউ আমার, তালাক হয়নি, বাচ্চা আছে, যদিও মান অভিমান চলছে কিন্তু আমার প্রতি সে অনুরক্ত। এরপরেও বলছেন তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তাও আবার এক্কেবারে ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষকের কাছে। কোথায় পান এসব গাজাখুরি গল্প, বাদ দেন এসব’। বেচারার মুখটা কালো হয়ে গেল। সে উপহাসের হাসি দিয়ে বলল, ‘বিশ্বাস করছেন না, ঠিক আছে সময় হলেই বিশ্বাস করবেন। সে আরো দু’চার কথা বলে বিরক্তি জানিয়ে বিদায় নিল, আর সে ক্ষুন্ন মনে বাসায় ফিরল।
হাসান অনুভব করল, এই প্রথম তার কানে কিছুটা পানি ঢুকেছে। একাধিক ব্যক্তি তাকে এই সংবাদটা দিয়েছে অথচ তারা মিথ্যে বলার লোক নয়, এতগুলি লোক মিথ্যে বলতে পারে না, আর মিথ্যে বলে তাদের লাভটাই বা কি। তার কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল। মনের গভিরে কুসুম যে স্থানটুকু দখল করে ছিল সেখানে জায়গা নিল ভয় আর আতঙ্ক। সংবাদটা যাচাই করার একান্ত প্রয়োজন বোধ করল। উসখুস করে রাতটা কাটাল। পরদিন বিকালে গিয়ে হাজির হল পাট গুদাম মাদরাসায়। এ মাদরাসার অধিকাংশ শিক্ষক হাসানের বাবার ছাত্র। তাকে দেখেই কেউ কেউ ইয়ার্কি শুরু করল। কেউ বলল, পিঞ্জিরার পাখি তো উড়াল দিল। কেউ বলল, ‘পাখি আর খাচায় থাকবে না, প্রাসাদে যাবে। কেউ বলল, ‘হুযুর ছেড়ে জেন্টলম্যান পেয়েছে থাকবে কেন। কেউ বলল, ‘ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষক, এটা কি চাট্টিখানি কথা, উড়াল তো দিবেই। এভাবে অনেকক্ষণ পর্যন্ত ইয়ার্কি ঠাট্টা চলতে থাকে। আর হাসানের গলা শুকিয়ে আসতে থাকে।
তারা বসল মুহতামিমের (অধ্যক্ষ) কামরায়। একে একে অনেক শিক্ষক জড়ো হয়ে গেল। মুহতামিম বলল, ‘ইঞ্জনিয়ার সাব প্রতিদিন এসে আমাদেরকে বলছে আপনার কাছ থেকে তালাকটা নিয়ে দিতে। মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, ছেলে ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষক। এখন আপনি তালাক দিলেই তারা বিয়েটা দিয়ে দিতে পারে। হাসান শুকনা ঠোঁটের উপর জিহবা ঘুরিয়ে বলল, ‘এটা কি করে সম্ভব, আমার বাচ্চা আছে না? মুহতামিম বলল, ‘আপনার বাচ্চা তো আপনার থাকবেই। এটা তো তাদের মাথা ব্যথার কারণ নয়। সে বলল, ‘আমার বাচ্চা মা হারা হবে ভেবেই কত অত্যাচার সহ্য করেছি, কত ত্যাগ তিতিক্ষা, কত সাধনা, তবুও তালাকের চিন্তা করিনি। আর এখন ওরা বললেই আমি তালাক দিয়ে দিব? মুহতামিম বলল, ‘আপনি চিন্তা না করলে কি হবে আপনার স্ত্রী স্বয়ং চিন্তা করছে, সে আপনার ঘরে আসবে না, আপনার ভাত খাবে না, কাজেই তালাক না দিয়ে কি করবেন? হাসানের তখন চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছিল, তার দুর্বল ক্ষীণ দেহটি কাঁপছে। পান্ডুর মুখে ধরা গলায়, ‘দেখি কি করা যায়’ বলে সে বেরিয়ে গেল।
হাসান এই প্রথম অনুভব করল তার পায়ের তলায় মাটি নাই। তার কঙ্কালসার দেহটা উড়ছে, চৈতালি শুকনা পাতার মত উড়ছে, বাতাস তাকে উড়িয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিপদসংকুল কোন অজানা আতঙ্কের রাজ্যে। বাসায় পৌঁছে সে কাপড় চোপড় না খুলেই বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ল, আকুল হয়ে কেঁদে উঠে বিছানায় গড়াগড়ি দিতে লাগল। হায়, যার জন্য এত কষ্ট করলাম, এত ধৈর্য্য ধরলাম, যে আমাকে এত কষ্ট দিল অথচ কোন দিন মারলাম না, গালি দিলাম না। আজ সে আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছে। চলে যাচ্ছে সে তার সুখের ঠিকানায়, নতুন বাসর রচনা করতে। এটা কি করে সম্ভব। কোন মডার্ন নারীকেও উচ্চবিত্ত ও সম্ভ্রান্ত কেউ হাতছানি দিলেও স্বামী সন্তান ফেলে চলে যায় না। তবে আন্না কারেনিনার মত দু’চারটা বেশ্যা ব্যতিক্রম। অথচ আমার স্ত্রী ধর্মীয় পরিবারের মেয়ে হয়ে নিজে ধার্মিক হয়ে ঢাকা ভার্সিটির জামাই পাবে বলে আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমার ও আমার সন্তানের সমাধির উপর রচনা করতে যাচ্ছে তার সুখের ফুলশয্যা। হায়, তুই স্ত্রী হয়ে ভার্সিটির শিক্ষক পেয়ে আমায় ফেলে চলে যাচ্ছিস অথচ আমি স্বামী হয়েও পরমা সুন্দরী কুসুমকে নিয়ে শুধু কল্পনা করেছি, কখনো স্ত্রী হিসেবে পেতে চাইনি। হায় এই নুঝি নারী চরিত্র, এই বুঝি আমার ধৈর্য্যের প্রতিদান, এই বুঝি ওদের ধার্মিকতার নমুনা। এটা তো ধার্মিক মেয়েদের ললাটে কলঙ্ক তিলক। এ জন্যই তো নজরুল বলেছিল ‘ওরা দেবি ওরা লোভী ওরা আরো চায়, একে তুষ্ট নয় ওরা যাচে বহুজন’। সে মরার মত বিছানায় শুয়ে স্ত্রীর পুরাতন কাপড়ের পুটলিটা বুকে জড়িয়ে ধরে পরে থাকে। তারপর পুটুলিটা খোলে, একটা একটা করে কাপড় বুকে মুখে চেপে ধরে আর ফুলে ফুলে কাঁদে। এক সময় কাপড়গুলি মেঝেতে ছোড়ে মেরে চিৎকার দিয়ে উঠে, ‘তুই নটি, তুই বেশ্যা, আমি তোকে চাই না, তুই চলে যা তোর ঢাকা ভার্সিটির ভাতারের কাছে, তোকে আমার দরকার নাই।
কিছুক্ষণ পর আবার কাপড়গুলি কুড়িয়ে এনে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। রাত বারটার পর জায়নামাজে হুমড়ি খেয়ে পরল, সিজদায় পরে অনেক কাঁদল, উত্তম ফয়সালার জন্য আল্লাহ্র কাছে কাকুতি মিনতি করল, তারপর কখনো নামায পড়ে, কখনো তাসবিহ পড়ে, কখনো দোয়া করে রাত কাটিয়ে দিল, সকালে ঘুমুতে গেল কিন্তু ঘুম হল না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করল আমাকে এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে না, স্ত্রীর জন্য আমাকে যুদ্ধ করতে হবে, যুদ্ধ করে আমার অধিকার আদায় করে নিতে হবে। আমার স্ত্রী- তার উপর এখনো আমার অধিকার প্রতিষ্ঠিত আছে। আর ভার্সিটির শিক্ষক এখনো বহু দুরে, আমার স্ত্রীর সাথে তার এখনো কোন আইনগত সম্পর্ক গড়ে উঠেনি, কাজেই যুদ্ধে আমিই জয়ি হব। কিন্তু যুদ্ধটা কি, মামলা করবে? না, মামলা করে লাভ হবে না, এতে স্ত্রী আরও ক্ষেপে যাবে। নিজে আদালতে গিয়ে স্বামীকে ডিনাই করে আসবে। তাহলে উপায় কি, ইঞ্জিনিয়ারের কাছে নিজে যাবে? না, তাতে লাভ হবে না বরং এই ক্ষ্যাপা কুকুরটার সাথে তখন চাপাচাপি এমনকি মারামারি বেধে যেতে পারে। তাহলে উপায়?
উপায় একমাত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। শক্তি দিয়ে নয় বিনয়ের মাধ্যমে, সুপারিশের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। আর এই সুপারিশের জন্য অনেক চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে স্থির করল ফোরকান সাবের কাছে আবার যাবে। তিনি ফকির বাড়ি বিয়ে করেছেন, ফেরদৌসিদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তাবলিগী পরিবার, ইঞ্জিনিয়ারের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ, তার বউ সব সময় যাতায়াত করে। বিকালে তার কাছে ছুটল। দরজায় টোকা দিয়ে সে বারান্দায় একটা চেয়ারে বসল। ক্ষণেক পর ফুরকান সাব বেরিয়ে সালাম দিল। তারপর দু’হাত বাড়িয়ে, ‘আরে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি, আপনাকে কতদিন ধরে আমি মনে মনে খুঁজছি’ বলে জড়িয়ে ধরে কোলাকোলি করল। ‘আসেন আসেন’ বলে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেস্ট রুমে বসল। হাসান ফোরকান সাবের সাথে আগেও আলাপ করেছিল। কিন্তু এবার ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করে তাকে কঠিন ভাবে রিকোয়েস্ট করল তিনি যেন ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আলাপ করে যেভাবেই হউক, যে কোন মূল্যেই হউক, একটা ফয়সালার ব্যবস্থা করেন।
১০ জুলাই, ২০০৬ সাল। হাসান বিকালে গিয়ে তার বাসায় উপস্থিত হল। গেস্ট রুমে দুপাশের দুই সোফায় তারা পরস্পর মুখোমুখি হয়ে বসে আছে। ফোরকান সাব গম্ভীর, তার মুখে বিষণ্ণতার ছাপ। চাকরি বা পরীক্ষার ফল প্রার্থী যেভাবে ঘোষকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে হাসানও তার মুখের দিকে সেভাবে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সে তার ভাগ্যের ফয়সালা শুনতে চায়। তিনি গলা খাকরি দিলেন, তারপর হাসানের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা আপনি নিজেকে এত ছোট করছেন কেন, যে স্ত্রী আপনাকে চায় না, তার জন্য আপনি নিজের মান মর্যাদা সব জলাঞ্জলি কেন দিচ্ছেন, আমার তো কিছুই বুঝে আসে না। সে এখন সুখ স্বপ্নে বিভোর, শীঘ্রই ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষকের বউ হতে চলেছে, সে আপনার চিন্তা কেন করবে? হাসানের কণ্ঠ পর্যন্ত ফেনায়িত হয়ে উঠে কান্না, সে একটা ঢুক গিলে করুন কণ্ঠে বলল, ‘তারা কি বলল? কথাটা কথা হয়ে নয় হাজারো কান্না হয়ে ফোরকানের কানে বাজতে লাগল। তিনি বললেন, ‘দেখুন আমি নিজের জন্যও কোনদিন ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যাই না, সে লোকটা অহংকারী, আমাদেরকে মূল্যায়ন করে না, ঠিকমত কথাটা পর্যন্ত বলে না। তবুও আপনার জন্য, শুধু আপনার খাতিরে আমি স্বয়ং গেলাম, তাকে বুঝালাম কিন্তু তার এক কথা মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। আমি তাকে অনুরোধ করলাম দেখুন, ‘একজন বুজুর্গ মানুষের ছেলে, তাকে কষ্ট দিলে অভিশাপ লাগতে পারে। ভার্সিটি শিক্ষকের কাছে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন সেখানেও তো এ্যাকসিডেন্ট হতে পারে। ইঞ্জনিয়ার ক্ষেপে গেল, ‘আরে যেখানে মেয়েই যাবে না সেখানে আমাকে জ্ঞান দিতে আসেন কেন? বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, তালাকটা হলেই বিয়ে হয়ে যাবে, এখন এসব প্যাচালের কোন দাম আছে? যদি পারেন তাহলে তাকে বলে কয়ে তালাকটা নিয়ে দেন’ বলে সে পাশের রুমে চলে গেল। আর আমিও অপমানিত হয়ে বেরিয়ে আসলাম।
এখন আমার পরামর্শ হল আপনি বউয়ের চিন্তা বাদ দেন, সে এখন আপনার বউ নয় অন্যের বউ। আপনি ভাল দেখে একটা বিয়ে করেন, নিজে না পারেন তো আমাদেরকে বলেন আমরা দেখে শুনে করিয়ে দেই। হাসান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, তারপর বলল, ‘তাহলে কি কোনই আশা নাই? ফোরকান সাব শুধু দু’দিকে মাথা নাড়াল। হাসান ভুতে পাওয়া রোগীর ন্যায় কিছু না বলে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল, তারপর হাটল, তার দেহটা টলছে, বাইরে গিয়ে একটা খোলা জায়গায় দাঁড়াল, মুক্ত আকাশ, তার নীচে সুবিস্তৃত পৃথিবী কিন্তু তার পায়ের তলায় মাটি আছে অতি সামান্যই। সে হাটছে, হাটছে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়- কোন বাধের মুখে যার আলীশান বাড়ি, সিন্দুক ভর্তি আছে স্বর্ণ-রৌপ্য, হীরা- জহরত, মনি-মানিক্য আর প্রবাল। হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া, চাকর-নকরে বাড়ি ভর্তি। তার অপ্সরী স্ত্রী আপাদ মস্তক সোনায় মুড়িয়ে দাসী বাদী পরিবেষ্টিত হয়ে সোনার পালঙ্কে শুয়ে থাকে। সে যখন শানে বাধা ঘাটে গোসলে যায় তখন দাসী বাদীরা তার দেহে মৃগনাভি কস্তূরী ও মিশক আম্বর মাখিয়ে দেয়, যার সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পরে গায়ের পর গা। তার ছেলে মেয়েরা প্রতিদিন বাগানে গিয়ে ফুলের সনে ভাব করে, শাখীর সনে গান করে। একদিন সে শিকারে গেল, শিকার থেকে ফিরে বাধের অদুরে দাঁড়িয়ে চোখ বিস্ফারিত করল, বাধটা ভেঙ্গে গেছে, জলপ্রপাতের ন্যায় বিশাল জলরাশি গড়িয়ে আসছে। তার বাড়ির জায়গাটাতে অথৈ জল থৈ থৈ করছে, পর্বতসম ঢেউ উঠছে। এই ব্যক্তি মাটির উপর দিয়ে যেভাবে হাটে হাসানও সেভাবে হাটছে। সে হাটছে, টলটলায়মান পায়ে হাটছে। কেন হাটছে কোথায় হাটছে জানে না, শুধু হাটছে।
অস্তগামী সূর্যের লালাভ আভা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই আভা মুখে প্রতিফলিত হয়ে তার মুখটি হয়ে উঠেছে করুন বেদনা বিধুর। মাগরিবের আযান হচ্ছে কিন্তু সেই ধ্বনি তার কানে ঢুকে না, সেই চেতনা তার মধ্যে নেই। নামায পড়তে হবে সেই অনুভূতি নেই। সে শুধু হাটছে আর হাটছে। জামালপুর শহরের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে উত্তর- দক্ষিনা একটা খাল প্রবাহমান। তার ধ্যান ভগ্ন হল তখন যখন একটি প্রবাহমান প্রশস্থ জলধারা তার পথ আগলে দাঁড়িয়েছে। এটি কি, সে কোথায় এই অনুভূতিও তার নেই। সে পৌঁছে গেছে খালের কিনারায়। সে হাটতে হাটতে চলে গেল একটা শুন্য প্রান্তরে, আশ- পাশে কোন ঘর বসতি নেই, জন মানবহিন শুন্য মাঠ। সামনেই একটি গাছের তলায় গিয়ে গাছের সাথে ঢেস দিয়ে জল কাঁদায় বসে পরল। সিন্দু বারোয়ায় লেগেছে তান, অনন্ত আকাশে বাজে বিরহ বেদনা, শব্দাতিত নক্ষত্র লোক পর্যন্ত বেজে উঠে ব্যথার রাগিনি। ব্যথাতুর হৃদয়ে ভেসে উঠে স্ত্রীর সাথে তার মধুময় ক্ষণগুলি। হৃদয় ক্যানভাসে তাসবীহ দানার ন্যায় একটা একটা করে দৃশ্য তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে, আপন মনে জীবন ডায়রির একটা একটা করে পাতা উল্টাতে থাকে।
বিয়ের পরদিন। সে বিকালে বাসায় গিয়ে নববধুকে জড়িয়ে ধরল আর তখন তার বালিকাবধূ কিভাবে কুকড়ে উঠেছিল। শ্বশুর বাড়িতে প্রথম গেল। পরদিন সকালে লোক দেখানোর জন্য নববধু তার হাত ধরে রাস্তায় হাটল। তখন সে জামালপুর থেকে যাওয়ার সাথে সাথে দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরত। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল, তাদের বাড়িতে গিয়ে নববধু তার সাথে আটার মত লেগে থাকত। পুকুরে গোসল করত আর সে পাড়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দিত।
এভাবে শিকলের আংটার ন্যায় স্মৃতির পাতাগুলি একের পর এক ধারাবাহিকভাবে আসতে থাকে, স্ত্রীর সাথে তার মধুময় দিন গুলিতে সে হারিয়ে যায়। খাল পাড়ের আশ পাশে কোন বাড়ি-ঘর নেই, জন-মানব নেই, চারদিকে ছুনছান নীরবতা, মাঝে মধ্যে দুয়েকটা ঝি ঝি ডাকছে। রাত গড়িয়ে যেতে থাকে, শুন্য মাঠে নেমে এল ঘন- ঘোর কৃঞ্চ অন্ধকার। বাতাস বন্ধ, ভ্যাপসা গরম। হাসান গাছের সাথে ঢেস দিয়ে কাদা পানিতে বসে আছে, নড়া চড়া নেই, যেন একটা মুর্তি বসানো। মনের চোখে সে দেখে আর ভাবে, উপহারের শাড়িটা সবচেয়ে সুন্দর হয়েছিল, বাসর রাতে আমি সেই রুমটিতে বসে আছি নানি তাকে নিয়ে এল সেই শাড়িটি পরনে, স্বর্ণের অলংকারগুলি চকচক করছে, তার লন্ডলি খালা চন্দন না কি জানি বলে সেসব দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। পরীর মত মনে হল, মুখটা চাঁদের মত চকচক করছে, তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছি। চমক ভাঙ্গল তখন যখন নানি বললেন অসুখ বিসুখ আছে সাবধানে থেক। কথাটা বুঝলাম না। আমার তর সইছিল না, পেশাব করে তাড়াতাড়ি আসলাম ওর সাথে ঘনিষ্ঠ হতে কিন্তু চমকে উঠলাম, শাড়ি চন্দন কিছুই নেই, কম দামা রং চটা থ্রি পিস পরে বসে আছে একটা কাজের মেয়ে। মুহুর্তেই সব চেঞ্জ করে ফেলেছে। মনটা ক্ষেপে গেল। জিজ্ঞেস করলাম মাসিক? সে বলল হ্যাঁ। মনটা ভেঙ্গে গেল। বললাম, তাহলে আমি মাদরাসায় চলে যাই। সে লাফিয়ে উঠে আমার হাত ধরে কেঁদে ফেলল, ‘আপনি বলেছেন আমাকে কোনদিন কষ্ট দিবেন না। অন্তহীন মমতায় বুকটা ভরে উঠল, সারাটা রাত ওকে বুকে জড়িয়ে রাখলাম।
এক সপ্তাহ পর্যন্ত বিষণ্ণ হয়ে থাকত, সাজগোজ করত না, হয়ত অন্য কারো চিন্তা করত। একদিন এশার নামায পড়ে ঘরে ঢুকছি মনটা নেচে উঠল। সেই শাড়ি ও গহনা পরে পরীর মত সেজে বসে আছে। আনন্দের এতটা অনুভূতি জীবনে আমার কমই ছিল। কামনার অনুভুতিরা চোখে এসে ভিড় করল। বললাম, ‘আমাদের তো বাসর হয়নি, আজ আমরা বাসর করব। তুমি আমাকে সেলাম করবে। তারপর দরজার বাইরে গিয়ে আবার ঢুকলাম, সে আমাকে সেলাম করল। এরপর থেকে প্রতিদিন চলতে থাকল বাসর শয্যার অভিনয়। এরপর কত হাসি কান্নার মধ্য দিয়ে আমার দিনগুলি কেটে গেছে। চলে গেছে কত আবেগ ঘন মুহুর্ত, কত ঝগড়া ঝাটি, কত মান অভিমানের ক্ষণ। আমি শুয়ার সাথে সাথে সে আমার পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে তৃপ্তির নিশ্বাস ছাড়ত। সারাটা রাত ওকে এমনভাবে জড়িয়ে থাকতাম যেন পার্থিব জগতে আমার জীবনের একমাত্র সম্বল। কখনো তাদের পরিবারের বাইরে অন্য মেয়েদের ও তাদের স্বামীদের নিন্দা করত আর বুঝাত- সে স্বামী গর্বে গর্বিতা।
তখন সে হাসত, উচ্ছসিত হয়ে হাসত, আমাকে মাতিয়ে তুলত, আমি চেয়ে চেয়ে ওর তুষার শুভ্র দাঁতের মুক্তা ঝড়ানো হাসি উপভোগ করতাম। কখনো গ্রীবা নেড়ে ঝগড়া করত, এই কিপটে ছোদা কামলা রাখতে পারস না। কখনো বলত দুনিয়ার জামাইরা বউয়ের কাম করে দেয় আপনে আমারে কি করে দেন। কখনো বলত আমার স্বাস্থ্য হয় না কেন, আপনে আমারে কি খাওয়ান। কখনো বলত কুত্তা ছোদা, কুত্তার মত পিছে পিছে ঘোরে। আমি বাড়িতে গেলে মাথা ঝাকিয়ে বলত বাড়িতে গেলে তো বউ বাচ্চার কথা মনে থাকেনা, তাড়াতাড়ি আসেন যেন। বাড়ি থেকে আসলেই তার চেহারায় খুশির আভা ছড়িয়ে পরত, সে হাসত, আমাকে আবেগ তাড়িত করত।
আমি বাইরে থেকে এসে দরজায় টোকা দিতেই খোলে দিত। তারপর হয়ত বরফ শুভ্র দাঁতে হাসি উপহার দিত অথবা ঝংকার দিয়ে ঝগড়া শুরু করত। নাঃ, আর কেউ হাসবে না, আর কেউ ঝগড়া করবে না, ছিড়ে গেছে, ছিড়ে গেছে, ছিড়ে গেছে বাধন। উড়ে গেছে, উড়ে গেছে, ঐ দেখ উড়ে যাচ্ছে পাখি। কেটে গেছে, কেটে গেছে শিকল, আমার খাচার পাখি পিঞ্জিরা ভেঙ্গেছে, মেলেছে ডানা, উড়েছে আকাশে, সে যাচ্ছে। দেখ দেখ পোরবাসি, দেখ জগদ্বাসী, দেখ মানবতা, দেখ নারী, দেখ মাতৃজাতি, ঐ যে সে যাচ্ছে, যাচ্ছে সে আমার শব দেহের উপর দিয়ে, যাচ্ছে সে তার সাধের বাসর রচনা করতে। অনেক সাধের ময়না আমার বাধন কেটে যায়, আর তো কেউ হাসবে না, কাঁদবে না, গাইবে না, বকবে না আমায় সকাল বিকাল সাজে। এখন সে অন্যের, অন্যের পিঞ্জিরায় ঢুকবে, অন্যের পোষ মানবে। আর আমাকে দেখবে না, হাসবে না, বকবে না। সে এখন অন্যের বুলি আওড়াবে। অন্যের সাথে হাসবে খেলবে, গাইবে, নাচবে, আমার কথা স্বরণও করবে না।
এখন সে অন্যের মনোরঞ্জন করবে, অন্যের জন্য নিজেকে মেলে ধরবে, বধু সাজবে, বধু সাজবে সে আমার দেয়া শাড়ি অলংকার দিয়ে। আমার দেয়া শাড়ি, আমার দেয়া অলংকার পরে, ফুল চন্দন মেখে, ঘোমটা দিয়ে বসে থাকবে। বসে থাকবে সে কারো প্রতিক্ষায়। তারপর আসবে তার প্রতিক্ষার ধন, তার বিত্তবান স্বামী, আসবে গাড়ি হাকিয়ে। বিয়ের পাটিতে গিয়ে নব বধুর মুখে মিঠাই তুলে দিবে। অন্যেরা স্বামী স্ত্রীর জামা শাড়িতে গিট্টু বেধে দিবে। তারপর মেহেদী রাঙা হাত ধরে গাড়িতে চড়ে বসেবে। গাড়ি ছুটবে, ছুটবে বাতাসের বেগে। নব বধু স্বামীর বুকে মাথা রাখবে, স্বামী তার চন্দন মাখা কপোল চুমিয়ে লাল করে তুলবে ঠিক আমি যেভাবে করতাম।
গাড়ি থামবে গিয়ে এক আলিশান বাড়ির প্রাঙ্গনে। সেই লোকটা আমার স্ত্রীর হাত ধরে নিজস্ব ফ্লাটে যাবে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে, ‘নববধুকে কোলে করে ঘরে নিতে হয়। তারপর সে আমার স্ত্রীকে কোলে করে নিয়ে যাবে তার ফুল শয্যায়। সে আমার স্ত্রীর মুখে মিষ্টি দিবে। তারপর আমার স্ত্রী ঐ লোকটাকে সেলাম করবে যেভাবে সে আমাকে সেলাম করত। তারপর তারা ফুলে ফুলে সজ্জিত বাসর শয্যায় গিয়ে শয়ন করবে। আর তারপরই ঘটবে পৃথিবীর কুৎসিততম ঘটনাটা, একজন পুরুষের সহ্যাতিত ঘটনাটা, একজন স্বামীর মৃত্যু পরোয়ানা, স্বামী বেঁচে থাকতে স্ত্রী অন্যের শয্যায় যাওয়ার মত জঘন্য ঘটনা। তখন আমার সমাধির উপর রচিত হবে তার ফুল শয্যা। আমার দেয়া অলংকার পরে, আমার দেয়া শাড়ি পরে সে অন্যের মনোরঞ্জন করবে, অন্যের চাহিদা পূরণ করবে। তীব্র যন্ত্রনায় সে দুপাশে মাথা ঘুরাল, না না, এটা সম্ভব নয়, এমনটা হতে পারে না। এটা মনুষ্যত্বের অবমাননা, এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
সে আবার গাছে হেলান দিল। এরপর আমার স্ত্রী ঐ লোকটার কাপড় ধোবে, রান্না করবে, জুতা মুছবে, জুতা পরিবে দিবে, ঘর কন্যার সকল কাজ করে দিবে যেভাবে আমার কাজ করত। না না, তাকে আর কাজ করতে হবে না। তার বড়লোক স্বামীর ঘরে অনেক কাজের লোক থাকবে। সে আর বলবে না, দুনিয়ার জামাইরা বউকে কাজ করে দেয় আপনে আমারে কি করে দেন। আর তার বলার প্রয়োজন পরবে না, কিপটে ছোদা কামলা রাখতে পারস না। আর কোনদিন তাকে বলতে হবে না, আপনে আমারে কি খাওয়ান, আমার স্বাস্থ্য হয় না কেন। তার বড় লোক স্বামীর ঘরে খাদ্যের স্তূপ থাকবে, চাকর নকরে ঘর ভর্তি থাকবে। চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য, ভোজ্য অঢেল থাকবে। সে সম্রাজ্ঞীর মত সর্বদা দাসি বাদী পরিবেষ্টিত হয়ে থাকবে। তখন সে শুধু সেজে গুজে ফুল কুমারি সেজে হেলে দুলে নেচে গেয়ে একজনের মনোরঞ্জন করবে, এক জনের চাহিদা পূরণ করবে।
আমি তাকে শিখিয়েছিলাম, সে প্রতি রাতে এশার পড় গহনা ও বিয়ের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকত, আমি দরজা খুলতেই সে আমাকে সেলাম করত, এভাবে আমরা প্রতিদিন বাসর উদযাপন করতাম। আমার শিখানো চর্চায় আমার স্ত্রী প্রতিদিন ঐ লোকটার সাথে বাসর উদযাপন করবে। আর তখন আমিও আমার সন্তান রাস্তায় পরে থাকব। আমি শুয়ার সাথে সাথে সে আমার পায়ের উপর পা তুলে দিত, একই ভাবে ঐ লোকটার পায়ের উপর পা তুলে রাখবে, আমরা যেভাবে দুটি দেহ জড়াজড়ি করে সারা রাত একাকার হয়ে থাকতাম এখন আমার স্ত্রী ঐ লোকটার সাথে সেভাবেই একাকার হয়ে থাকবে।
একদিন তার পেটটা উঁচু হয়ে উঠবে। তখন সে যেভাবে আমার হাতটা তার পেটে ধরিয়ে দিয়ে ঘুমাত, আমি ঘুমিয়ে পড়লেই খোঁচা দিয়ে ভেংচি কাটত, ‘আমার পেটের মধ্যে একটা ঢুকিয়ে দিয়ে তুমি আরামে ঘুমাইবা আর আমি কষ্ট করমু, না? তোমার জিনিস তুমি পাহারা দেও, আমি ঘুমাই’ বলে সে নাক ডাকিয়ে ঘুমাত আর আমি সারা রাত তার পেট ধরে শুয়ে শুয়ে আমার সন্তান পাহারা দিতাম। একই ভাবে এখন ঐ লোকটা আমার স্ত্রীর পেট ধরে তার সন্তান পাহারা দিবে। সে আমার স্ত্রীর গর্ভে তার সন্তান উৎপাদন করবে। যন্ত্রনায় সে ককিয়ে উঠল। তারপর একদিন ঐ লোকটার ঘরে আসবে নতুন অতিথি। তখন আমি আমার মুনিরাকে কোলে নিয়ে যেভাবে আবৃত্তি করতাম, ‘এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান----। একইভাবে ঐ লোকটাও আমার স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান কোলে নিয়ে সুকান্তের কবিতা আবৃত্তি করবে, আর আমার স্ত্রী তার গায়ে হেলান দিয়ে বসে হাসবে।
তারপর প্রতিদিন ঐ লোকটা সোফায় বসে থাকবে আর আমার স্ত্রী বাচ্চা কোলে নিয়ে গিয়ে তার কোলে বসবে। ঐ লোকটার পিঠের পিছনে তার কবরি ছড়িয়ে দিয়ে তার কাঁধে মাথা রেখে পরমানন্দে ঘুমিয়ে পরবে। তখন ঐ লোকটা আমার স্ত্রীর বুকে ধরে ধরে তার সন্তানকে দুধ খাওয়াবে। আর তখন আমিও আমার সন্তান পথের ধুলোয় লোটুপোটি খাব। এই দৃশ্য সহ্য করার ক্ষমতা তার ছিল না। হতভাগ্য যুবক দুহাতে মাথা চেপে ধরে দুপাশে ঝাকাল। তারপর ‘উঃ যন্ত্রনা, না না, বলে চিৎকার করে মাটিতে গড়িয়ে পরল। সেই চিৎকার খালের তীরে বন-বনানিতে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠে উর্ধ্বে, রাতের নিরব নিস্তব্ধ আকাশ খান খান হয়ে ভেঙ্গে পরে। সে চিত হয়ে মাটিতে পরে দুদিকে দু’হাত ছড়িয়ে দেয়। তার হাত আজ শুন্য, রিক্ত, আজ সে সর্বহারা। তার শুন্য দুটি হাত দুদিকে মারতে থাকে আর যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকে, না না, এটা হতে পারে না। এটা সম্ভব নয়।এটা নিখিল মানবতার লজ্বা। এটা মানবতার পরাজয়, এটা মনুষ্যত্বের অবমাননা। পৃথিবীর মানুষ যদি জানত, একজন চরিত্রবান স্বামী- যে কোন দিন কোন পরনারী স্পর্শ করেনি, তার স্ত্রী অন্যের শয্যাসঙ্গিনী হওয়া কতটা যন্ত্রনাদায়ক, কতটা বিভীষিকাময় তাহলে কোন স্ত্রী স্বামী ত্যাগ করার দুঃসাহস করত না, কোন স্বামী স্ত্রী তালাকের পরাকাস্টা দেখাত না, কোন স্ত্রী অন্যের শয্যায় যাওয়ার পাপচিন্তা করত না। এটা একজন স্বামীর জন্য মৃত্যু পরোয়ানা, তার মরণ ব্যাধ। কোন স্বামী নিজের স্ত্রীকে অন্যের বাহু বন্ধনে সহ্য করতে পারে না, এটা সম্ভব নয়। যদি কেউ পারে তাহলে নিশ্চয় সে নপুংশক, কাপুরুষ। আমি বেঁচে থাকতে আমার স্ত্রী অন্যের ঘরে যাবে, এটা আমার জন্য মৃত্যুর চেয়েও যন্ত্রনাদায়ক। এজন্যই হিন্দু, ইহুদি ও খৃষ্ট ধর্মে নারীর দ্বিতীয় বিয়ের অনুমোদন নেই।
একজন প্রেমিক, প্রেমিকার উপর যার অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়নি সে কেন প্রেমিকার বিরহে ক্রমে ক্রমে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়, আত্মহত্যা করে? একটি ছেলে একটি মেয়েকে ভালবাসে কিন্তু মেয়েটি মারা গেল। আর প্রেমিকা মারা গেলে কোন প্রেমিক আত্মহত্যা করেছে বা পাগল হয়ে গেছে মহাকালের কোন ক্ষনে এমন কোথাও শুনা যায়নি। কিন্তু প্রেমিকা যদি জীবিত থাকে আর সে প্রেম প্রত্যাখ্যান করে এক্ষেত্রে প্রেমিক উগ্র চন্ডাল হলে মেয়েটিকে আঘাত করে, এসিড মারে বা ধর্ষণ করে বা মেরে ফেলে। আর অভিভাবক অন্তরায় হলে তাদের উপর অত্যাচার করে, হুমকি ধামকি দেয়। আর ছেলেটি শান্ত সুবোধ হলে নেশা ধরে, নিজেকে আঘাত করে, তিলে তিলে পলে পলে নিঃশেষ হয়ে যায় বা আত্মহত্যা করে। একই প্রেম অথচ দুই অবস্থা হল কেন। এর কারণ, প্রেমিকা মারা গেলে সে অন্যের শয্যা সঙ্গীনি হচ্ছে না কিন্তু জীবিত থাকলে সে অন্যের শয্যা সঙ্গীনি হবে। আর এটা কোন পুরুষ সহ্য করতে পারে না। প্রেমিকা হউক স্ত্রী হউক অন্যের বাহুলগ্না কল্পনা করলে সে পাগল হয়ে যায়। একমাত্র নিজের সম্পত্তি গণ্য করে, অন্যকে সহ্য করতে পারে না। ফলে হয় অন্যের উপর আঘাত করে অথবা নিজের উপর।
অথচ আমার স্ত্রী সে আমার সাথে থেকেছে, খেয়েছে, শুয়েছে। সে চলে যাবে অন্যের ঘরে তখন আমি কিভাবে বেঁচে থাকব, কেন বেঁচে থাকব। আমার সন্তানের কী হবে? সে যন্ত্রনায় মোচড়ে উঠে।
বিষয়: সাহিত্য
১৬১৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন