চিঠি- ৪৪ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০৬ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:০৫:২৪ সকাল
ডিসেম্বর, ২০০৫ সাল। মাদরাসা বন্ধ, মোবারক বেড়াতে এসেছে। ভাবী চলে গেছে শুনে ভাইকে দেখতে এসেছে। ভাইকে দেখেই বলল, ‘তুমি তো শুকিয়ে গেছ। হাসান লজ্বা ঢাকতে গিয়ে বলল, ‘শুকাব কেন আমি তো এমনই, শীতের দিন সবাইকেই একটু মলিন দেখা যায়। হাসানের গায়ে জ্যাকেট জড়ানো, মোবারক তার শরীর দেখতে পায় না, খালি গায়ে তার বুকের ভেসে উঠা হাড়গুলি দেখলে নিশ্চয়ই সে চমকে উঠত। মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমার গাল বসে গেছে, চোখ দুটিও যেন জ্বালা জ্বালা করছে। হাসান শুস্ক হাসি হেসে জবাব দেয়, ‘ঠিকমত রান্না-বান্না করতে পারি না, কখনো ছাত্ররা রেধে দিয়ে যায়, কখনো হোটেলে খাই, খাওয়ার অনিয়ম চলছে, গ্যাস্ট্রিকটাও বেড়ে গেছে, স্বাস্থ্য তো কিছু কম বেশ হতেই পারে, এটা কোন ব্যাপার না। মোবারক বুঝতে পারে ভাবীর জন্য ভাই মজনু হতে চলেছে। সে বলল, ‘ঠিক আছে কিছুদিন থাকব, আমিই রান্না করে দেব। সে কিছু টাকা নিয়ে গিয়ে বাজার করে নিয়ে এল।
রাত্রে রান্নার পর বলল, ‘এসো খেয়ে যাও। হাসান উঠে গিয়ে তরকারিগুলি দেখল, হ্যাঁ মাছ গোশত ভালই রান্না করেছে, সুঘ্রাণ বেরুচ্ছে, খুব মজা হবে। কিন্তু তার মনে পরল সেতো পানি ছাড়া গিলতে পারে না, আর ভাইয়ের সামনে এটা লজ্বাকর হবে ভেবে বলল ‘তুই খেয়ে শুয়ে পর গিয়ে, আমি পরে খাব। দুই ভাই দুই রুমে থাকে। তিন দিন পর মোবারক বলল, ‘তুমি কি রাত্রে ঘুমাও না নাকি? – কেন?- আমি যতবার উঠি দেখি কখনো নামায পড়, কখনো কোরআন শরীফ পড়, কখনো তাসবীহ পড়, কখনো পায়চারি কর কখনো বিছানায় গড়াগড়ি কর তাহলে ঘুমাও কখন? হাসান লজ্বা পেয়ে বলল, আসলে আমি সকালে ঘুমাই, আর খালি বিছানা থাকলে ঘুমের মধ্যে গড়াগড়ি করা আমার অভ্যাস। মিথ্যেটা শুনে ছেলেটা বিরক্ত হল সে আরো বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল, ‘তুমি তো ঠিকমত খাওও না, ভাত যা তাই থাকে, বেশির বেশি দু’তিন লোকমা খাও। আমার সাথে খেলে তো আমি জোর করে খাওয়াতে পারতাম, তা না একা একা খাও, এভাবে থাকলে তো তুমি মরে যাবে, আমি আম্মাকে গিয়ে সব বলব। হাসান চমকে উঠে, ‘না না, আম্মাকে বলিস না, তাহলে চিন্তা করতে করতে আম্মাই অসুস্থ হয়ে যাবে।
‘এমন একটা খারাপ মেয়েলোকের জন্য তুমি নিজেকে শেষ করে দিচ্ছ, সে তো রাত দিন খালি ঝগড়া করত। আমরা তোমাকে আবার বিয়ে করাব, এর চেয়ে ভাল বিয়ে করাব’ সে বলল। হাসান একটা তিক্ত হাসি দিয়ে বলে, ‘বিয়ে মানুষ কয়টা করে, আমার বউ তো আর মরে যায় নি, কিছুদিন ঘোরাফিরা করে যখন স্বামীর কদর বুঝবে তখন ঠিকই একদিন এসে হাজির হয়ে যাবে’।– ‘তুমি কি তাদের কারো সাথে যোগাযোগ কর না? হাসান বলল, ‘না, ওরা তো আমাকে দেখতেই পারে না, মাঝে মধ্যে কারো সাথে দেখা হলে কথা বলতে চাই কিন্তু তারা মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়, আমাকে পাত্তাই দেয় না। ভাবগতিক দেখে মনে হয় যেন আমাকে মারবে। অবশ্য একের পর এক লোক লাগিয়ে রাখছি আলাপ করার জন্য। মোবারক মাথা নিচু করে চিন্তা করল, তারপর বলল, ‘আচ্ছা আমি গেলে কেমন হয়, আমি একটু যোগাযোগ করি’।
মোবারক সকালে রান্না ও খাওয়া শেষ করে বের হয়, তারপর দুপুরে এসে আর চারটা খেয়ে আবার বের হয়, শহরময় ঘোরাফিরা করে একবারে এশার সময় বাসায় আসে। একদিন রাত্রে এসে বলল, ‘আজ পাটগুদাম গিয়েছিলাম। অনেক খোজা খুঁজি করে ইঞ্জিনিয়ারের দ্বিতীয় ছেলেটার সাথে দেখা হল। বললাম, ‘আমি একবার ভাইয়ের বাসায় দেড় মাস ছিলাম, তখন দেখেছি ভাইয়ের উপর ভাবী কতটা অত্যাচার করেছে। তখন সে রাগে হাত পা ছুড়তে ছুড়তে বলল, ‘হেই মিয়াঁ, আপনের ভাই মানুষ নাকি, আস্ত একটা জানোয়ার। আমার খালামনির উপর অত্যাচার করত, অহংকার করত। সে কোথাকার তিস্তার নাক হয়ে গেছে আমাদের উপর অহংকার করে। আমরাই জামালপুরের সম্মানী মানুষ। তখন আমি বললাম, ‘আমার ভাই কোন দিন মারেনি, আপনার খালাই অত্যাচার করত। সে বলল, ‘আমাদের উপর অহংকার করে কেন, আমাদেরকে পাত্তাই দেয় না। আমি বললাম, ‘সে অহংকারের লোক নয়, আর ধরে নিলাম করেই, এতে তার পাপের বোঝা সে বহন করবে আপনাদের ক্ষতিটা কী? সে মুখ ভেংচিয়ে বলল, ‘আহ ক্ষতিটা কী, কী আমার ভদ্দর লোকটা। তারপর সে তর্জনিটা মাটির দিকে নাচিয়ে নাচিয়ে বলল, ‘এই জামালপুরে আমরাই শ্রেষ্ঠ, আমরাই সম্মানী। আমাদেরকে পাত্তা দিবে না, আমাদের মেয়ের উপর অত্যাচার করবে, আমাদের মান ইজ্জত নষ্ট করবে আর আমরা বসে থাকব। ওকে যে এখনো আস্ত রেখেছি এটা আপনাদের ভাগ্য। আমরা মানি লোক, আমাদের সম্মান নিয়ে টানাটানি করবেন না। এরপর কথায় কথায় বলল, তারা জামালপুরের মানী লোক তারা শ্রেষ্ঠ লোক, তুমি সম্মান নষ্ট করেছ।
এরপর সে গম্ভীর হয়ে জিগায়, ‘আচ্ছা জীবনে কত জায়গায় গেলাম কিন্তু নিজেদেরকে নিজেরাই এভাবে মানী লোক দাবী করতে কাউকে শুনিনি। ওদের কি আছে, তারা নিজেদেরকে এত মানি ভাবে কেন? হাসান হাসে, ‘আমরা তো জানি পৃথিবীর নিয়মানুযায়ী সম্মানের বিষয় তিনটি- শিক্ষা, সম্পদ ও ধর্ম। শিক্ষিতদের সবাই সম্মান করে, ধনীরাও সম্মান পায়, ধার্মিকদের সবাই সম্মান করে। কিন্তু ওদের ভগ্নিপতিদের মধ্যে শুধু একজন উচ্চ শিক্ষিত, বাকী সবাই অর্ধ শিক্ষিত। ইঞ্জিনিয়ার ও তার বউ এস এস সি পাশ আর সে ডিপ্লোমাধারি। এই হল এদের শিক্ষা। আর সম্পদ বলতে এরা সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কারো বাড়িতে কিছু আছে আর কারো বাড়িতে পা রাখার জায়গাটুকুও নাই। ইঞ্জিনিয়ার ও এডি পৈত্রিক যৎসামান্য পেয়েছে বিক্রি করে শহরে বাসা করেছে। আর ধর্ম বলতে এরা ইসলামকে বিকৃত করে পারিবারিক ভাবে একটা ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে। ইসলাম বলতে তারা বুঝে নামায, রোযা ও তাবলীগ। কিন্তু মায়ের খেদমত, মানব সেবা, ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা এসব বিষয় তারা স্বীকারই করে না। কাজেই এ ধরণের লোক মুসলমান গণ্য হবে কিভাবে আমার বুঝে আসে না।
মোবারক বলল, ‘ঐ ছেলের কথায় যা বুঝলাম- তারা খুব গরম, নমনীয়তার কোন লক্ষণ নাই। - তুই যেতে চাইলে এডির কাছে যা, সে সহজ সরল মানুষ। - সহজ সরল কেমনে, তার কাছে তো আগে অনেক বিচার দিলাম কিন্তু সে তো কোন বিচার করল না। - আসলে এরা সবাই স্ত্রৈণ, কিন্তু লোক হিসাবে সে নিরহংকারী, সরল সোজা। পরদিন রাত্রে এসে মোবারক বলল, ‘গেছিলাম এডির কাছে, সেতো ভালই বলল, তোমাকে দোষ দিল, বউ বাচ্চার কোন খোজ নিচ্চ না। কাল তার কাছে যাও। হাসান জানে, ‘এডি রেলগেট বড় মসজিদে আসরের নাময পড়ে বাসায় যায়। সে নামাযের পর তাকিয়ে দেখে এডি মসজিদ থেকে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে। সে তাড়াতাড়ি গেল, তাকে দেখেই এডি বলল, ‘তোমার বউ বাচ্চাটাকে নিয়ে একা একা সমুদ্রে ভাসছে আর তুমি মাসে মাসে বেতন তুলছ আর মৌজ করছ। যারা বউ বাচ্চার খোজ খবর রাখে না এরা কোন ধরণের মানুষ?
হাসানের ধরে যেন প্রাণ ফিরে আসে। আনন্দে তার মুখটা চাঁদের মত চকমকিয়ে উঠে। অন্তহীন আশায় বুক বেধে সে বলল, ‘আপনে আলাপ করে একটা ব্যবস্থা করে দেন। এডি বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, দু’তিন দিন পর আমার সাথে সাক্ষাৎ করো। দু’দিন পর হাসান তার অফিসে গেল, তাকে দেখেই সে চিৎকার করে উঠল, ‘এই তুমি আমার এখানে আসছ কেন? তুমি যাদু টোনা করে বউ আনবা, ফকির- কবিরাজের কাছে দৌড়াদৌড়ি কর, যাদু করে বউ নিয়ে আসবা, তাহলে আমার এখানে ধর্ণা দেও কেন, তাদের কাছে যাও। কাঁহা তক ফাযিল! যাদু করে বউ নিয়ে আসবে। দু’দিন পর পর বউকে বিগড়াবে আবার যাদুও করবে, যাও আমার এখান থেকে, আর কোন দিন আসবে না যাদু করেই আন গিয়ে’। হাসান হতবম্ভ হয়ে গেল, ‘আমি যাদু করছি আপনাকে কে বলল? সে আরো রেগে গেল, চোখ লাল হয়ে গেছে মুখ ভেংচিয়ে বলল, ‘কে বলল, সবাই জানে তুমি যাদু করে বউ আনতে চাইছ। এখন যাও, আমার সামনে আর আসবে না। হাসান বেচারা বসতে পর্যন্ত পারল না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই গালি হজম করল। তারপর অপমানিত হয়ে মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেল।
মোবারক রাত্রে আসল। সে মনে করেছে এডি সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। জিজ্ঞেস করল, ‘এডি কী বলল, কী করল? হাসানের ভিতর থেকে কথা বেরুচ্ছে না, কণ্ঠ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে ভেতর থেকে ঠেলে কথা বের করল, ‘সে কিছু করতে পারবে না তার ক্ষমতা নাই। মোবারক কিছুক্ষণ বিষণ্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল, ‘ঠিক আছে এত তাড়াহুড়ার তো কিছু নেই, ধীরে ধীরেই হউক, আমি আরেকটু চেষ্টা করে দেখি কী করা যায়’। তারপর সে রান্না ঘরে চলে গেল। হাসান রাত্রে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করে আচ্ছা ওরা নিজেদেরকে এত মূল্যবান ভাবে কিসের বলে। রূপ গুন মেধা ধন জন কোনটাই তো ওদের নাই। আমার বউ নাক বুচা শুকনা একটা মেয়ে, তেমন সুন্দরীও নয়, সংসার করার মত কোন যোগ্যতাও নাই, আবার সে এমন কোন ব্যক্তি বা বংশের মেয়েও নয় যার পরিচয়ে আমি পরিচিত হব। তাদের জামালপুরেই তো আমি বাবার পরিচয়ে পরিচিত, শ্বশুরের পরিচয়ে নয়। ওরা কি এই সাধারণ হিসেবটা বুঝে না যে, এমন একটা মেয়েকে যাদু টোনা করে কেন আনতে হবে। আমি তো আনতে চাচ্ছি সে আমার স্ত্রী, আমার সন্তানের মা, ভাল মন্দ যা আছে আমার আছে। সে তো এখন আমার অর্ধাঙ্গিনি তাদের তো কেউ নয়। তাহলে কে আমার উপর যাদুর অপবাদ দিচ্ছে। ঠিক আছে আনব না, দেখি কার কি হয়। সে সারা রাত ছটফট করে, বিছানায় গড়াগড়ি করে রাত কাটায়। কিন্তু না আনার সিদ্ধান্ত তার উপরই বোমেরাং হয়ে যায়, নিজেকে অসহায় মনে হয়।
রাত্রে মোবারক এসে বলল, ‘আজ সরাসরি ইঞ্জিনিয়ারের বাসায় গেছিলাম। হাসান শুয়া থেকে ধরমর করে উঠে জিজ্ঞেস করল, ‘মুনিরার সাথে দেখা হইছে, তোর ভাবী এখানে? – না, সম্ভবত তারা এখানে নাই, থাকলে তো অন্তত মুনিরার আওয়াজ পাইতাম। হাসান নিরাশ হয়ে আবার শুয়ে পরল। মোবারক বলল, ‘পটেটোর সাথে দেখা হইছে, আমি কইলাম তিনটা মাস হয়ে গেল এভাবে কি সংসার চলে। সে বলল, ‘কার সংসার চলল কি না চলল সেটা তো আমাদের দেখার বিষয় নয়, এর মত বদ খাসিলতের ছেলের কাছে আমাদের মেয়ে আমরা দিব না। আমি বললাম, ‘আচ্ছা আপনাদের মেয়ে আপনাদের ব্যাপার, কিন্তু আমাদের মেয়ে তো আমাদেরকে দেখতে দিবেন, বাপ নিজের মেয়েকে দেখতে পারে না এটা কেমন কথা। সে বলল, ‘না, দেখতে পারবে না, আপনার ভাই আসলে তাকে দেখলে আমদের মেয়ের কষ্ট হবে। আমি কইলাম, ‘আপনাদের মেয়ের কষ্টটা দেখলেন আর এই বেচারা যে নিজের সন্তানের মুখটা পর্যন্ত দেখতে পারছে না সেটা একবার চিন্তা করলেন না। সে চেঁচিয়ে উঠল, ‘কেন, কার দোষে দেখতে পারছে না, আমরা সাল চিল্লার শর্ত দিলাম গেল না কেন। তারপর তোমার বদনাম শুরু করল, তুমি নাকি ভাবীকে মার, অহংকারি, তাদেরকে মান্য- গণ্য করনা, আখলাক ভাল না, বউয়ের সাথে কিভাবে থাকতে হয় জান না, এইসব আজেবাজে বিশ্রি কথা বলা শুরু করল। তারপর রাগে আমি উঠে আসলাম। হাসান শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, কোন কথা বলল না।
মোবারক বলল, কাল আরেক জায়গায় যাব দেখি কি হয়। ‘কোথায় যাবি’ হাসান জিজ্ঞেস করল। - বজলুর ওখানে। সে হাসল, ‘ওখানে গিয়েই তো আজ এই শনির দশা। - শনির দশা যা হওয়ার তো হয়েই গেছে নতুন করে আর কি হবে। গিয়ে দেখি কিছু করা যায় কিনা। - মনে হয় কাজ কিছুই হবে না, তবে একটা কাজ করবি। হাজার দুয়েক টাকা নিয়ে গিয়ে বলবি মুনিরার দুধ ডিম খাওয়ার জন্য। ওরা তো জংলি মানুষ, ওদের বাচ্চাদের কোন দিন ডিম- দুধ বা পুষ্টি জাতীয় কোন কিছু খাওয়ায় না, আগের দিনের বাচ্চাদের মত প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে উঠে। তাছাড়া ওদেরই টানাটানি আমার বাচ্চার জন্য কে খরচ করবে। পরের দিন রাত্রে মোবারক এসে বলল, ‘নতুন সংবাদ আনলাম। ‘কী সংবাদ’ হাসান জিজ্ঞেস করল। - আমি গিয়ে বজলুকে কইলাম, ‘এতটা দিন হয়ে গেল আজো বিষয়টা ফয়সালা করলেন না? সে বলল, ‘ফয়সালা তো হচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম কি ফয়সালা? – বিয়ের ফয়সালা।– মানে? – মানে আবার কি, আপনার ভাবীর বিয়ে হবে।– কোথায়? – ঢাকায়, ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষক। আমি বললাম, ‘আসলেই নাকি? সে উত্তর দিল, ‘আসলে না নকলে সময় হলেই বুঝতে পারবেন। তারপর সে গপ্প শুরু করল, ‘ছেলে ডক্টর, ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষক, বিরাট শিক্ষিত, বিরাট বড় লোক, তার প্যাচাল শুরু করল। আমার ভাল লাগল না, টাকা দিয়ে উঠে পরলাম। সে জিজ্ঞেস করল কিসের টাকা? আমি বললাম মুনিরার দুধ ডিম খাওয়ার জন্য। সে বলে কি, ‘আমরা ডিম খাওয়াই না মুরগি খাওয়াই, দুধ খাওয়াই না গরু খাওয়াই। তারপর বারবার দিলাম কিন্তু নিল না। ‘আহ, কিছু চাল- চুলা থাকুক আর না থাকুক অহংকারটা ঠিকমতই আছে’ হাসান বলল। তারপর ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষকের সাথে বিয়ে নিয়ে দুই ভাই মিলে খুব হাসা হাসি করল। কিন্তু জানে অন্তর্যামি, আজ যা হাস্যকর কাল তা বাস্তব।
সপ্তাহ দুয়েক থেকে মোবারক চলে যায়। সে আরো অসহায় হয়ে যায়। ভাই বড় ধন রক্তের বাধন। ছেলেটা ছিল তার মধ্যে একটা আত্মিক প্রশান্তি ছিল। সে রান্না বান্না করে জোর-জার করে খাওয়াত, আলাপ আলোচনা করত, সে শান্তি পেত। তাছাড়া সে ভাইয়ের কাপড় চোপর ধুয়ে, বাসন কোশন পরিস্কার করে বাসাটা সাফ ছুতরা করে রাখত। এটাই ছিল শেষ বাসন কোশন ও বাসা পরিস্কার করা। ২০০৫ সালে তখনো গ্রাম বাংলায় মোবাইল পৌঁছেনি। মোবারক বাড়িতে যাওয়ার পর দোকানের মোবাইল এনে মা কল করে হাসানকে বললেন, ‘তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়, এভাবে থাকলে তুই মরে যাবি। হাসান বলল, ‘কয়েক দিন পর বন্ধ আছে তখন আসব, মা মানতে চায় না, হাসান বলে কয়ে মানাল। মোবারক যাওয়ার নিঃসঙ্গতা তার কাছে পীড়াদায়ক হয়ে উঠে। সব সময় বিষণ্ণ হয়ে থাকে। খাওয়া দাওয়া আবার অনিয়মিত হয়ে পড়ে। মন চাইলে একটা ডিম ভাজি করে খায়, কখনো হোটেলে খায়, এভাবে কোন দিন একবেলা কোন দিন দু’বেলা কয়েক লোকমা করে পানি দিয়ে গিলে গিলে খেয়ে কোন রকম জীবন রক্ষা করে চলেছে। রাতের বেলায় বিছানায় গড়াগড়ি যায়, কখনো স্ত্রী সন্তানের বালিশ বুকে জড়িয়ে বা মাথায় দিয়ে শুয়ে থাকে। ঘুমুতে পারে না কখনো স্ত্রীর সাথে অতীত স্মৃতিগুলি রোমান্থন করে।
শ্বশুর বাড়িতে প্রথম বেড়ানোর সময় একদিন সে জামালপুর থেকে যাওয়ার সাথে সাথে সেই উচ্ছ্বাস ভরা হাসি নিয়ে এসে হাজির হল। নিজেই স্বামীর জামা কাপড় খোলে আলনায় রাখল। তারপর স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে একটা শ্লোক দিল ‘দুই অক্ষরে নাম যার দেহে বাস করে বড় লোকে নাড়ে চাড়ে ছোট লোকে খায়। না ভাঙ্গাতে পারলে কিন্তু আজ এই জিনিসটা পাবেন না’ বলেই হাসতে হাসতে বিছানায় গড়িয়ে পড়ল। হাসান ভাবে হাত নাক মুখ চোখ কান সবই তো দুই অক্ষরে কিন্তু কোনটাই তো কেউ নাড়ায়ও না খায়ও না, তাহলে কি হতে পারে। অনেক চেষ্টা করেও সে বের করতে পারল না। অবশেষে স্ত্রী হাসতে হাসতে উঠে এসে সটান স্বামীর সামনে দাঁড়াল। তারপর স্বামীর হাত টেনে নিয়ে বুকে লাগিয়ে বলল- এগুলি স্বামী নাড়ে চাড়ে আর বাচ্চায় খায়। আপনে পারেন নাই, আজ এগুলি পাবেন না বলে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় গড়িয়ে পরে। তারপর হাসান বলে এই উদ্ভট শ্লোক কোথায় পেলে। সে উত্তর দেয়, ‘সালেক চাচার মেয়ে বলেছে। ক্লাস সেভেনে পড়ে এই পুত্তুনি ছেমড়ি আমাকে বলে কিনা বিকিনি ব্যবহার করো, নইলে নাভিতে নেমে যাবে’।
হাসানের চোখে এভাবে স্মৃতিরা ঘোরে বেড়ায়, ঘুম আসে না। কখনো তার মনে পড়ে একদিন বিকাল বেলা সে সর্ব দক্ষিণের রুমটিতে বসে আছে। তখন স্ত্রী এসে বলল, ‘মানুষ এত নটি হয় কি করে, কী অসভ্যরে বাবাঃ। সে জিগায়, ‘কাকে বলছ? – আরে ঐ যে পুবের বাড়ির দুইটা মাগি, ভাবী আর ননদ। আমি বাইরে রাধতেছি তারা এসে আমাকে জিগায়, ‘জামাই কেমন খেলবার পারে রে? শরমে আমি মাথা নিচু কইর্যা রানতাছি। ওমা মাগিরা যায় না, বারবার খালি জিগায় জামাই কেমন খেলবার পারে, কথা কস না ক্যা? তারপর আমি উইঠ্যা আয়া পরছি। আসলে কি জানেন ঐ ননদীটা অনেক দিন ধইর্যা হাইন (স্বামী) ছাড়া, জামাই আরেকটা বিয়া করছে, হে বাপের বাড়িতে থাহে। অহন জামাইয়ের গুতা খাওনের ল্যাইগ্যা পাগল হইয়া গেছে, হেল্লাগ্যাই এমন আজে বাজে কথা কয়। হাসান হাসতে হাসতে বলে, ‘আরে বোকা তখন তুমি বলতে পারলে না আমি তো নতুন মানুষ, খেলাধুলা ততটা বুঝিনা। আপনারা তো পুরাতন, ঝানু প্লেয়ার। আজ রাতে আমি অন্য বিছানায় থাকব আপনারা আমার জামাইয়ের সাথে থাকবেন। তখন বুঝতে পারবেন খেলা কত প্রকার ও কি কি। আর প্রত্যেক খেলার দৈর্ঘ্য প্রস্ত ও পরিধি কত। দু’জনেই হাসতে হাসতে বিছানায় গড়িয়ে পড়ে।
কখনো তার মনে পড়ে ঢাকার উত্তরায় স্ত্রীর ভাইয়ের বাসায় সেই মধু যামিনির কথা। সেদিন স্ত্রীকে দেখেছিল অপ্সরির মত, আসলে একমাস পর সাক্ষাতের কারণে রঙ্গিন চোখে রঙ্গিন দেখেছিল। কখনো মনে পড়ে তার আশা আকাঙ্ক্ষার বিষয়গুলি, সুন্দর ছিমছাম একটা বাসা করবে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে কত আনন্দ করবে, স্ফুর্তি করবে। জোয়ান কালেই বউকে নিয়ে হজ্ব করে আসবে। স্ত্রীকে ঘিরে আরো কত স্বপ্ন কত আশা আকাংখা। দিনে অথবা রাতে যখনই সে ঘুমাতে চায়, স্মৃতির জোনাকিগুলি এইভাবে তার মনের কোনে প্রদিপ জ্বালিয়ে রাখে, ঘুম আর হয় না।
একদিন বিকালে হাসান চেয়ারে বসে তাসবীহ টিপছে আর দোয়া ইউনুস পড়ছে। খোলা দরজা দিয়ে বারান্দায় তার দৃষ্টি গেল, বারান্দার গ্রিলে গুজে রাখা একটা ছেড়া ময়লা কাপড় ঝুলছে। সীমাহীন আনন্দে তার মনটা নেচে উঠল। বারান্দায় গিয়ে কাপড়টা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল তারপর বুকে জড়িয়ে ধরল, প্রশান্তিতে তার বুকটা ভরে উঠল, পাগলের মত কাপড়টা মুখে চেপে ধরে কেঁদে ফেলল। তারপর ঘরে গিয়ে মেঝেতে বসে কাপড়টা বিছিয়ে দিল। এটা স্ত্রীর একটা মেক্সি। অন্তহীন মমতায় সে কাপড়টার উপর হাত বুলাতে লাগল। কত দিনের পর দিন স্ত্রীর গৌরাঙ্গে এই কাপড় শোভা পেয়েছে। সেই সোনার অঙ্গে এই কাপড় জড়িয়ে রয়েছে, এই কাপড় গায়ে কতদিন ওকে জড়িয়ে ধরেছে, কত রাত কাটিয়েছে, এই কাপড়ে কত মমতার পরশ, কত চুম্বনের অদৃশ্য দাগ লেগে আছে। কাপড়ের উপর অশ্রু গড়িয়ে গড়িয়ে পরে।
হঠাৎ মনে হল তার স্ত্রী ও সন্তানের আরো তো পুরাতন কাপড় আছে, সে ঘরময় তন্ন তন্ন করে খোজে মেঝেতে ছোট একটা স্তুপ বানিয়ে ফেলল। তারপর বসে বাচ্চার কাপড় ও মায়ের কাপড় আলাদা করতে লাগল। একেকটা করে কাপড় হাতে নেয় আর কল্পনা করে এটা পরা অবস্থায় তার স্ত্রীকে কেমন দেখাত। আবার বাচ্চার একটা করে কাপড় নেয় আর স্বরণ করে, এটা দিয়ে বাচ্চাকে কেমন দেখাত, কিভাবে হাটত, সে কিভাবে কোলে নিত, কিভাবে চুম্বন করত। এভাবে স্মৃতির সরোবরে অবগাহন করে মা ও বাচ্চার কাপড় আলাদা করল। মেয়ের কাপড়গুলি বুকে জড়িয়ে স্ত্রীর কাপড়ের উপর শুয়ে পড়ল। হতভাগা বেচারা বহুদিন পর আজ যেন তার স্ত্রী সন্তানের সাথে শয়ন করল, প্রশান্তিতে তার মনটা ভরে উঠেছে, ক্লান্ত মুসাফিরের মত ঘুমিয়ে পড়ল। স্ত্রী যাওয়ার পর থেকে একদিনও তার ঠিকমত ঘুম খাওয়া হয়নি। কিন্তু আজ সে ঘুমুচ্ছে, বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। আরামদায়ক বিছানা যে ঘুম এনে দিতে পারল না ময়লা ছেড়া ন্যাকড়া কাপড় সেই ঘুম এনে দিল। সে মেঝেতে পড়ে খালি মাথায় ময়লা কাপড় জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। ঘুমিয়েছিল বিকাল চারটায়, উঠল রাত দুইটায়। শরীরটা ঝরঝরে লাগছে, মন মগজ সতেজ প্রফুল্ল। সে উঠে পায়চারি করতে লাগল। টানা দশ ঘণ্টা ঘুমাল। আর ঘুমের দরকার নেই। বাকী রাতটা সে ছেড়া ময়লা গন্ধময় কাপড় নিয়েই কাটিয়ে দিল। একেকটা কাপড় হাতে নেয় আর স্বরণ করে, এটা সে কোন দোকান থেকে কত দিয়ে কিনেছিল, তার স্ত্রী বা সন্তান এটা কখন পড়ত। কেমন দেখাত ইত্যাদি। এভাবে কাপড়ের কোস্টি উদ্দার করতে করতে তার বাকী রাত কেটে গেল।
ফজরের পর কিছুটা ক্ষুধা অনুভব করল। সে তরকারি রাধতে পারে না। সহজ ব্যবস্থায় কোনদিন আলু ভর্তা করে কোনদিন ডিল ভাজি করে। গ্যাসের দুই চুলার একটায় ভাত বসাল তাতে কয়েকটা কাচা মরিচ ও দুইটা আলু ভালো করে ধুয়ে দিয়েদিল। এটা সে বউকে দেখে শিখেছে। অন্য চুলায় ডিম ভাজি করল। আজ সে দুই তরকারি নিয়ে খেতে বসেছে, মোগলাই খানা। ভয়ে ভয়ে লোকমা মুখে দিল, কিন্তু না উগলে এল না, পেটে পাচার হয়ে গেল।, গোগ্রাসে কয়েক লোকমা খেল কিন্তু আজ আর বমি হল না, পানি দিয়েও খেতে হলনা। সে স্বাভাবিক হয়ে গেছে, তার শোক কেটে গেছে। বিগত দিনের নাজুক অবস্থায় সে নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল, জীবন সম্পর্কে হতাশ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হতাশার মেঘ কাটিয়ে আজ সে আনন্দিত আশান্বিত, সে বাঁচবে, বাঁচতে পারবে, স্ত্রী সন্তানের জন্য সে বেঁচে থাকতে পারবে। দুপুরে মাদরাসা থেকে আসার সময় একটা ডিটারজেন্ট পাউডার কিনে নিয়ে এল। পুরাতন কাপড়গুলি বালতিতে ভিজাল, কাচতে গিয়ে দেখল ছেড়া কাপড় গুলি আরো ছিড়ে যাচ্ছে।
আস্তে আস্তে কেচে ভাল করে ধুয়ে শুকাতে দিল। কাপড় নাড়তে গিয়ে বারান্দার কোণায় তার দৃষ্টি গেল। বহু আগের কিছু ময়লা জমে আছে। সম্ভবত তার স্ত্রী ঝাড়ু দিয়ে রেখেছিল। সেখানে তার মেয়ের ছোট্ট দুটি জুতা পড়ে আছে। বাৎসল্যে তার মনটা উথলে উঠল। জুতা জোড়া নিয়ে ভাল করে ধুয়ে আনল। দুপুরে খাওয়ার জন্য হোটেল থেকে গোশত এনে খেতে বসল। ভালই খেতে পারছে, তবে কয়েক লোকমা খাওয়ার পর উগলে আসতে চাইল তখন পানি দিয়ে আরো কয়েক লোকমা খেয়ে নিল। আগে যেখানে পানি ছাড়া কিছুই খেতে পারত না, এখন ভালই খেতে পারছে, নিজের উপর আস্থাশীল হয়ে উঠেছে। তারপর প্রশান্তির সাথে মেয়ের জুতা জোড়া হাতে নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। জুতার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে, ছোট্ট দু’টি পা, নাদুস নুদুস দু’টি পা, কিভাবে জুতার মধ্যে ঢুকত, কোট কোট করে ঘরময় ঘুরে বেড়াত, তার চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই মধুময় স্মৃতি ।
আচ্ছা মানুষ কি জানে এ ছোট্ট দু’টি পায়ে কি যাদু আছে। না, যাদের সন্তান নেই তারা জানে না। আবার যাদের বুকে পাষাণ খন্ড বসানো তারাও জানে না। যেমন একবার রাসূল (সাঃ) হযরত হাসানকে চুমু দেন। তখন আকরা ইবনে হাবেস (রাঃ) বললেন, ‘আমার দশটি সন্তান আছে কাউকে চুমু দিই না। তখন রাসূল (সাঃ) রাগে অথবা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যার হৃদয়ে দয়া- মায়া নাই আল্লাহও তাকে দয়া করেন না। কাজেই এ দু’টি পায়ের মূল্য সেই বাবা বুঝতে পারে যার বুকে মাংস খন্ড বসানো। এ দু’টি পায়ের চলার পথ মসৃন করার জন্য একজন বাবা স্বানন্দচিত্তে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়। এভাবে চিন্তা করতে করতে জুতা জোড়া বুকে জড়িয়ে ধরে বিকাল তিনটায় সে ঘুমিয়ে পড়ল। রাত বারটায় জাগ্রত হয়ে আর চারটা খেল। তাহাজ্জুদ পড়ে কিছুক্ষণ তাসবীহ টিপল। তারপর গিয়ে দেখল কাপড়গুলি শুকিয়ে গেছে। সেগুলি এনে মায়ের কাপড় দিয়ে একটা পুটলি বাধল, আর মেয়ের কাপড় দিয়ে আরেকটা পুটলি বাধল। তারপর বিছানায় শুয়ে পুটলিদ্বয়ে অন্তহীন মমতায় হাত বুলাল, চুমু খেল। এক সময় কাত হয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকল। শান্তিতে তার তনু মন ভরে উঠেছে। সে যেন তার স্ত্রী সন্তানকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
এরপর থেকে তার ঘুমের তেমন আর সমস্যা হত না। সে মহা খুশি তার ঘুমের ঔষধ পেয়ে গেছে, খাওয়া দাওয়াও অনেকটা ঠিক হয়ে গেছে। তখন সে নিজেকে একটা শৃঙ্খলায় আনতে চাইল। মাদরাসা থেকে এসে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ তাসবীহ পড়ত। তারপর বেরিয়ে গিয়ে বন্ধু বান্ধবদের সাথে সময় কাটিয়ে বা স্ত্রী সন্তানের অনুসন্ধান চালিয়ে এশার পর বাসায় ফিরে কোরআন শরীফ নিয়ে বসত। বারটায় উঠে কোনদিন খেত কোন দিন না খেয়ে তাহাজ্জুদে বসত। তারপর আরো কিছুক্ষণ দোয়া উইনুস পড়ে স্ত্রী সন্তানের জন্য আল্লাহ্র মঙ্গল জনক ফয়সালার জন্য দোয়া করে শুয়ে পড়ত। কিন্তু যেদিন স্ত্রী সন্তানের কথা চিন্তা করত সেদিন কাপড়ের পুটলি আর মেয়ের জুতা নিয়ে শুইলেও ঘুম আসত না। এ জন্যই সে ঘুমানোর জন্য কৌশল অবলম্বন করল, জুতা ও পুটলি দুটি জড়িয়ে ধরে মনে করত এরাই তার স্ত্রী সন্তান। এগুলোতে হাত বুলাত, আদর করত, চুমু খেত, এভাবে সহজেই সে ঘুমিয়ে পরতে পারত।
বিষয়: সাহিত্য
১৬৬৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন