চিঠি-৪২ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০২ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:২৭:৪০ দুপুর

বাড়িতে যাওয়ার সাথে সাথেই তার ভাইয়েরা কী হল, কেন হল, কেন বউকে নিরুদ্দেশে পাঠিয়ে দিল, কেন সাল চিল্লার শর্ত দিল ইত্যাদি প্রশ্ন করতে থাকে। হাসান প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে বলল, তেমন কিছু না। মোবারক বাড়িতে যে কথাগুলি বলেছিল, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেও ঐ কথাগুলি বলল। তারপর বলল, টুকটাক সংসারি কাজ নিয়ে ঝগড়া হত। একদিন খুব মেরেছিলাম তো ওর বোনের বাসায় গিয়ে বিচার দিল আর তাতেই এ ঘটনার উদ্ভব হল। মোবারকের কাছে শুনে ভাইয়েরা পূর্ব থেকেই ভাবীকে দেখতে পারত না কিন্তু তালাকের চিন্তা কারো ছিল না। কিন্তু এই গন্ডগোলের পর তারা একটা সুযোগ পেয়ে যা বলল এর সারমর্ম হল এই, ছোট বেলা থেকে অনেক কষ্ট করছ। এখন এই বউ নিয়ে বাকী জীবনটাও কষ্টে কাটাতে হবে। সারা জীবন আগুন তাফাতে হবে, তাহলে তোমার শান্তি কোথায়। এখন হয় ওকে তালাক দিয়ে দাও, আমরা ভাল দেখে একটা বিয়ে করাই অথবা এইটা থাকুক তার ইচ্ছামত যেখানে খুশি সেখানে, তুমি আরেকটা বিয়ে কর। আর সাল চিল্লা লাগানোর চিন্তা বাদ, অপকর্ম করবে বউ আর মাশুল দিবে তুমি এটা তো হতে পারে না। হাসান কোন উত্তর না দিয়ে নীরব থাকে।

হাসান বাড়িতে গেলে মায়ের রুমে একটা চাটাই বিছিয়ে মা ছেলে এক সাথে বসে খায়, এটা তাদের পুরাতন অভ্যাস। রাতে খাওয়ার সময় তার মা আসল ঘটনাটা জানতে চাইলেন। হাসান যা যা ঘটেছিল সব বলল, তাকে লাথি মারতে বলার ঘটনাটাও বলল। তিনি চমকে উঠলেন, মুখটা যেন বিকৃত হয়ে গেল। গাঁও গেরামে মানুষ, এ বৃদ্ধা মহিলাটি জীবনে এই প্রথম শুনলেন কোন বউ স্বামীকে লাথি মারার কথা বলেছে। পরক্ষণেই তিনি বিস্ময় কাটিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললেন- আচ্ছা বাদ দে, রাগের সময় তো মানুষ কত কথাই বলে। সেই পনের বছর বয়স থেকেই হাসান সংসার চালায়, প্রত্যেকটা বিষয় নিয়ে মায়ের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে, বোঝাপরা করে তারপর কাজ করত। সেই থেকে মায়ের সাথে কোন কিছু গোপন না করার অভ্যাস হয়ে গেছে, ইচ্ছে করলেও পারত না। কাজেই তার পেটের মধ্যে একটা কথা গুতাতে লাগল। বলল, আরেকটা কথা আছে কিন্তু শুনলে আপনে কষ্ট পাবেন। মা বললেন, ক কি কথা, কষ্ট পাব না।– নাঃ শুনার দরকার নাই।

কিন্তু মা বারবার এসরার করতে লাগলেন। অবশেষে হাসান ইতস্ততঃ করে কেউ শুনে ফেলে কি-না এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে ফিসফিসিয়ে বলল, ঐ যে আপনি তাকে বলেছিলেন না আমাকে আম কেটে দিতে-তাকে কাজের অর্ডার দিলেন কেন এই রাগে একদিন বলে কি- বেটির সাহস কত বড়, আমারে কাজের অর্ডার দেয়, তখন চুলের মুঠি ধরে কোমরে কয়েকটা লাগিয়ে দিলেই উচিত শিক্ষা হত। এই কথার জন্যই বিচার চাইতে গিয়েছিলাম, এই বিচার চাওয়ার অপরাধেই আমাকে সাল লাগানোর শর্ত দিল।

প্রাচীন আমলের এই বৃদ্ধা মানুষটি হতবাক, বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলেন। তাকে বিশ্রি কথা বলার জন্য দুঃখিত হননি, কিন্তু তিনি ভাবছেন- এটুকু কাজের কথা বলায় কেউ শাশুড়িকে এমন কথা বলতে পারে? আমরাও এক সময় বউ ছিলাম, শাশুড়িকে যমের মত ভয় করতাম, কত খেদমত করেছি। আগেকার দিনের মানুষ বউদের উপর কত অত্যাচার করেছে কিন্তু কোনদিন টু শব্দটা পর্যন্ত উচ্চারণ করিনি। আর আজ কাল একি শুনছি। কলি যুগে আরো কত কিছু শুনতে হবে।

হাসান মাথা তুলে পিটপিটিয়ে মায়ের দিকে তাকাল- তিনি অন্য মনস্ক হয়ে বিস্ফারিত চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। হাসান মাথা নিচু করে লজ্বা ও অনুশোচনায় ঠোঁট কামড়ে ধরল- একি করলাম, এমন বোকামি কেউ করে নাকি। আম্মাকে এমন বিশ্রি কথাটা কেন বলতে গেলাম, তার আফসোস হল এবং লজ্বায় লাল হয়ে উঠল। সহসা তিনি শুকনো হাসি হেসে বললেন, তুই বিচার দিলে তারা কি বলল? সে উত্তর দিল, তার বজলু দুলা ভাই বলল, ইঞ্জিনিয়ার চিল্লা থেকে আসুক বিচার করব। ইঞ্জিনিয়ার এসে বউকে আটকা দিল, আমার সামনে আসতে দিল না। আর গত শুক্রবার তো সাল চিল্লার শর্ত দিয়েই পাঠাল। মা আরো বিস্মিত হলেন, এরা কেমন ধার্মিক, এরা না তাবলীগ করে, ন্যায় অন্যায় বুঝেনা? শুন, বউয়ের কোন দোষ নাই, মুরুব্বীদের সাথে কেমন আচরণ করতে হয় কিভাবে কথা বলতে হয়- মা বাপ তাকে শিখায়নি, বোনদের কাছে থাকে বোন ভগ্নিপতিরাও শিখায়নি। কাজেই বউকে দোষ দিয়ে লাভ নাই। অল্পবয়সী মানুষ, শিক্ষা দীক্ষা নাই, রাগ উঠেছে একটা কথা বলে ফেলেছে। আমি কিছু মনে করিনি তুইও মনে ধরিস না, মাফ করে দে।

হাসান বলল, আপনি এত আদর করলেন, ডিম দুধ খাওয়ালেন, পাত থেকে তুলে মাছ মাংস খাওয়ালেন, এরপরেও আপনার সাথে এমন বেয়াদবি করল, এমন জঘন্য কথা বলল, এই গাদ্দারকে কি মাফ করা যায়। মা বললেন আমার কর্তব্য আমি করেছি। বউ তার কর্তব্য বুঝে না, একটা অন্যায় কথা বলে ফেলেছে। এটা বউয়ের দোষ নয়, দোষ তার অভিভাবকদের, তারা মেয়েকে আদব কায়দা শিখায়নি। হাসান বলল, তাহলে কি এখন আমি চাকরি বাকরি ছেড়ে এক বছরের জন্য বিদেশে গিয়ে বসে থাকব নাকি। ওকে আর না আনাটাই ভাল হবে। সে আমার জীবনটাকে বিষিয়ে তুলেছে।

মা যেন চমকে উঠলেন, সর্বনাশ এমন কথা বলবি না, তাহলে তোদের তিনটা জীবনই নষ্ট হয়ে যাবে। তুই না হয় আরেকটা বিয়ে করলি কিন্তু তোর মেয়েটার কি হবে। এছাড়া বউটার কি আর বিয়ে হয় না হয়, হলেও তো আর ভাল বিয়ে হবে না, অনেক গুলি জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া তুই হলে পরিবারের বড় ছেলে, তোরও কলঙ্ক হবে, আর এর প্রভাব পড়বে পরিবারের উপর। কাজেই এক সালের জন্য যাওয়ার দরকার নাই, তিন চিল্লার জন্য যা। এর পরেও তারা বউকে না দিতে চাইলে আমি যাব, আমি গিয়ে নিয়ে আসব। আর সাবধান, যে যাই বলুক, ওরা (হাসানের ভাইয়েরা) যাই বলুক, কারো কথা শুনবি না। চিল্লা দিয়ে বউকে নিয়ে আয়, অন্য কোন চিন্তা করবি না। এরপর হাসান আরো তিন দিন বাড়িতে থাকল। তখন মা বার বার শুধু একটা কথাই স্বরণ করিয়ে দিলেন- চিল্লা দিয়ে বউকে নিয়ে আয়। চিল্লায় গেলে তোরই ভাল হবে, আমলটা ঠিক হবে। হাসান বাড়িতে গেলেই অভ্যাসানুযায়ি বাবার কবরে যায়, যিয়ারত করে, জীবিত বাবার ন্যায় ভাল- মন্দ সংবাদ জানায়, দোয়া চায়। সে তিন দিন বাড়িতে থাকল, আর প্রতিদিন বাবার কবর যিয়ারত করে দোয়া চাইল, আব্বা আমি খুব বিপদে আছি, আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করেন, আমার জন্য যা ভাল হয় তিনি যেন সেই ফয়সালা করে দেন।

বাড়ি থেকে এসে হাসান সাল লাগানোর চিন্তাটা টোটালি বাদ দিয়ে দিল। এখন তার চিন্তা হল দুই বা তিন চিল্লা লাগাবে। সে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে। কিন্তু যখনি তার মনে হয় পুটলা পাটলি নিয়ে মসজিদ থেকে মসজিদে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে, ইচ্ছামত পসন্দমত খাবার পাবে না, মসজিদে জড়াজড়ি করে অগোছালো ভাবে থাকতে হবে। তখনই তার মনটা বসে পড়ে, সাহস হারিয়ে যায়। কারণ চিল্লায় গিয়ে তার জানার বুঝার বা শিখার কিছুই নাই, এখানে কোরআন ভিত্তিক আলোচনা হয় না, ইসলামের মৌলিক বিষয় নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হয় না। আত্মার খোরাক নাই বিধায় তার আগ্রহ জন্মে না। আবার শিখানোরও সুযোগ নাই। যদি সুরা কেরাত দোয়া দরুদ বা কোরআন হাদীস শিখানোর সুযোগ থাকত, তাহলে মনে একটা কর্তব্য বোধ জাগ্রত হত, আগ্রহ পয়দা হত, কিন্তু তাবলিগীরা তাদের নির্ধারিত সূচির বাইরে আর কিছু করতে রাজি নয়, পসন্দও করেনা। এ নিয়ে গত তারিখে আমীর সাবসহ সাথী ভাইদের সাথে অনেক মনোমালিন্য হয়েছে।

সে ভাবে, তাহলে ওখানে গিয়ে আমার কাজটা কি, শুধু দেশে দেশে ঘোরা, পিকনিক করা আর ভ্রমণ করা? সে চেয়ারে ঢেস দিয়ে ভাবে, হায় এই মূর্খরা আমাকে বুঝল না, এই পিকনিকে না পাঠিয়ে যদি ওরা আমাকে বলত আচ্ছা আমাদের ফাযায়েলে আমল সম্পর্কে অনেকে সমালোচনা করে, এখানে নাকি অনেক কিসসা কাহিনী এবং যয়িফ ও মওযু (জাল) হাদীস রয়েছে। কাজেই তুমি সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে আরেকটা ফাযায়েলে আমল রচনা কর, তারপর বউ নিয়ে যাও। তখন দেখত আমি পারি কি না পারি, কিন্তু আমাকে তারা দিল পিকনিকের শর্ত। যার যে কাজ নয় তাকে দিয়ে সে কাজ করাতে গেলেই তো বিপত্তি ঘটে। যেখানে আমার আকর্ষণ নাই, আত্মার খোরাক নাই সেখানে এতটা দিন আমি কিভাবে থাকব। কিন্তু সে হাসে আর মনে মনে বলে- ঘোড়া পাদলে কী হবে নারায়নখোলা যেতেই হবে। আমাকেও চিল্লায় যেতেই হবে, নচেৎ কপালে বউ জুটবে না।

পরের সপ্তাহে আরো পরামর্শের জন্য ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বোনের বাড়ি চলে গেল। রাত্রে বোন ও বোনের শাশুড়ি জানতে চাইল কি হল, কেন হল কিভাবে হল। বউয়ের চরিত্র লুকিয়ে হাসান উড়ো উড়ো উত্তর দিল- সংসারের কাজ কর্ম নিয়ে ঝগড়া হত, সে কাজ করতে পারবে না, মেয়ে রাখতে পারবে না, কাজের মেয়ে দিতে হবে ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই ঝগড়া হত। আমি বিচার দিতে গিয়েছিলাম তারপরই এ ঘটনা ঘটল। বোন হাসল- তুই মনে করেছিস বউ সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা। তোর বউটা যে কত লায়েক মোবারকের কাছে সব শুনেছি। এই বউ নিয়ে কিভাবে সংসার করবি। তাইতো কই, কত ভাল ভাল বিয়ের আলাপ হল, তুই দুধে কাটা বাচলি, তোর পসন্দ হল না। মুক্তাগাছার হুজুরের মেয়েটা, সরকার বাড়ির মেয়েটা, বিদ্যাগঞ্জের মেয়েটা, মহিলা মাদরাসায় কতগুলি আলেমা মেয়ে দেখলাম, কত সুন্দর কত ভাল মেয়ে ছিল, তুই একটাও করলি না। অথচ এই সবগুলি মেয়েরই তোর চেয়ে অনেক ভাল বিয়ে হয়েছে। কতবার বলেছি বেশি বাছাবাছি করলে পাগারে পড়তে হয়। এখন দেখলি- একা একা গিয়ে বিয়ে করলি একটা গরীব পরিবারে, না আছে রূপ, না আছে শিক্ষা, আবার স্বভাব চরিত্রও ভালা না, এমন বউ নিয়ে তুই জীবনটা কেমনে কাটাবে। কী যে ছিল তোর কপালে। সারাটা জীবন কষ্ট করলে, ভাইদের মানুষ করলি, বাপের দায়িত্ব পালন করলি, আল্লাহ্‌র কাছে আশা করছিলাম, আল্লায় তোরে একটা ভালা বউ দিব, চাকরি বাকরি করবি, সুখে জীবন কাটাবি। বাপের সংসারে কষ্টের বিনিময় পাবি কিন্তু আল্লায় তোরে এত শাস্তি কেন দিল বলে বোনটা কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বাইরে চলে গেল।

বোনের শাশুড়ি বলল- তাঐ আপনের জন্য কত কষ্ট করছি, কত দুরে দুরে গিয়ে মেয়ে দেখছি, মহিলা মাদরাসায় কতবার গেলাম। কত ভাল ভাল মেয়ে, দেখলে চোখটা জুড়িয়ে যায়। কিন্তু আপনি কথা শুনলেন না। আর এখন এই শাস্তি ভোগ করতেছেন। কী আর করা যাবে, সবই আল্লাহ্‌র ইচ্ছা। খুব ভেবে চিন্তে কাজ করেন যেন, একটা মেয়ে আছে, মেয়েটার দিকে তাকিয়ে যা করার করেন যে। খাওয়া দাওয়ার পর অনুশোচনার একটা চিনচিনে ব্যথা নিয়ে হাসান শুইতে গেল। সে ভাবনায় ডুবে গেল- মুক্তাগাছার হুযুর, আমার আব্বার ছাত্র এবং আমার উস্তাদ। একটি কামিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক। আমি ঐ মাদরাসায় আলিম ফাযিল করেছিলাম। ক্লাসেই তার সাথে আমার পরিচয়, আমি যে একটা ব্যতিক্রমি ছাত্র ছিলাম, ক্লাসেই সে বুঝতে পেরেছিল। পরবর্তিতে পূর্ব পরিচয় হিসাবে দুলাভাই তার কাছে আমার জন্য পাত্রী চাইল। পরিচয় পেয়ে তিনি স্বতঃস্পুর্তভাবে বললেন আমার মেয়ে আছে, আগ্রহ দেখালেন, আলাপ হল। তারপর একদিন বোনের বাড়িতে গেলাম, তখন বাজারে দুলাভাইয়ের কাছে সংবাদ পেয়ে বেচারা ফযরের পর হাটতে হাটতে এসে উপস্থিত। বাইরের রুমে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করলাম। আর তখনো আমি ছাত্র।

কুশল বিনিময়ের পরই তিনি আমাকে তারকীব (আরবী বাক্য গঠন প্রনালী) জিগানো শুরু করলেন। সম্ভবত তিনি সারা জীবন যেসব তারকীব কঠিন মনে করতেন সেগুলিই আমাকে প্রশ্ন করলেন। কিন্তু কওমী মাদরাসার একটা বাঘা ছাত্র হিসাবে এ গুলি ছিল আমার কাছে অ আ -এর মত। বাংলা ইংরেজি জিগালেন, ভার্সিটি পড়ুয়া হিসাবে এখানেও তথৈবচ। তিনি যৎপরনাস্তি আগ্রহি হয়ে উঠলেন। দুলাভাইকে জোর দিয়ে বলে গেলেন- আমাকে নিয়ে গিয়ে মেয়েটা দেখে আসার জন্য। কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে আমার কিছু শর্তাদি ছিল। আলেম পরিবার হিসাবে ধার্মিক মেয়ে তো হতেই হবে। আমি ত্রি- ধারায় শিক্ষা প্রাপ্ত বিধায় মাদরাসা বা স্কুল কলেজ পড়ুয়া যে কোন মেয়ে আমার কমনে আসবে, তবে শর্ত হল পাত্রী অবশ্যি সুন্দরী ও মেধাবী হতে হবে , কারণ মেধাবী মায়ের সন্তান মেধাবী হয়। তবে উচ্চ শিক্ষিত দরকার নাই যেহেতু চাকরি করাব না।

আবার আমার ইচ্ছা ছিল প্রথমে আমি মেয়ে দেখব না। আমার মা বোন বা অন্য কোন মহিলাকে দিয়ে আগে দেখিয়ে মনমত হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে আমি মেয়ে দেখব। কজেই বিকালে আমি না গিয়ে বোন, মাঐ ও দুলাভাইকে পাঠিয়ে দিলাম মেয়ে দেখার জন্য। তারা এসে জানাল, আমি না যাওয়াতে হুযুর খুব মনক্ষুন্ন হয়েছেন। তিনি খুবই আগ্রহী, তাদেরকে খুব সমাদর করেছেন আর বলেছেন, তার এক ছেলে এক মেয়ে। মুক্তাগাছা টাউনে তার তিনটা বাসা, দুইটা ছেলের একটা সরাসরি মেয়ের নামে করেছেন। এ ছাড়া শহরে আরো জমাজমি আছে, গ্রামে তো আছেই। মেয়ে এখনো ছোট, টেনে পড়ে, এখন কাবিন করে রাখবে, এস এস সি পরীক্ষার পর বিয়ে হবে। তার একটা মেয়েই উঠিয়ে দিবেনা, মেয়ের নিজস্ব বাসাতেই থাকবে। ছেলের যোগ্যতা আছে, শীঘ্রই চাকরি হয়ে যাবে। দুলা ভাইকে তাকীদ দিয়ে বলেছে, আমাকে নিয়ে গিয়ে মেয়ে দেখিয়ে আসতে। মেয়ের মামা মুক্তাগাছায় এক কলেজ শিক্ষক, খেলাফত আন্দোলন করে। তার বাপ ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের মৌলভী শিক্ষক ছিলেন। তিনি হাসতে হাসতে দুলা ভাইকে বলেছেন, দেখেন তো পাগলামিটা মেয়ে ছোট, মাত্র ক্লাস টেনে পড়ে। এখনি বিয়ে দিবে। ছেলের যোগ্যতা দেখে পাগল হয়ে গেছে। মেয়ের বিবরণ হল, সুন্দরী কিন্তু মাঝারি বা তার চেয়েও খাট, খাট শুনেই এক কথায় প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। মাঐ বলেছিলেন, মেয়ের তো বয়স কম, আরো লম্বা হবে। কিন্তু আমি গায়েই মাখিনি, তখন আমার নাক উচু, অনেক মেয়ের বিয়ের আলাপ হচ্ছে।

হুযুর বেচারা দুলাভাইয়ের পিছনে অনেক ঘুরে ছিলেন আর বলেছিলেন, অনেক আশা করেছিলাম। ছেলেটার যোগ্যতা ছিল, কওমী মাদরাসার ভাল ছাত্ররাই আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস হয়, প্রিন্সিপ্যাল হয়। কিন্তু বাঙালির স্বভাব হল, সাধা জিনিসের আধা মূল্য। এই বেচারার আগ্রহ অনুভূতির কোন মূল্যায়নই করলাম না। অথচ বিয়েটা হলে কতই না ভাল হত, উভয় পরিবার আলেম শ্রেণী হিসাবে এখানে কুফুর মিল ছিল, আব্বার ছাত্র হিসাবে তারা আমার ও আমার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকত, আমিও তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতাম। তাছাড়া চাকরি না করলেও শ্বশুরের সম্পদ দিয়েই জীবন চলে যেত। ফোটাঙ্গি মাড়িয়ে বুঝালাম, শ্বশুরের সম্পদের প্রতি আমার কোন লোভ নেই, আমি একটা কিছু করে ধরে খেতে পারব। আর আজ, সম্ভবত এই বেচারার অভিশাপে আমার জীবনটা দগ্ধ হচ্ছে। পরে জেনেছিলাম ধনী পরিবারের এক কলেজ শিক্ষক ছেলের সাথে মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল।

হায়, কতই না ভাল হত সে যদি আমার জীবন সাথী হত। সে আমাকে ভালবাসত, শ্রদ্ধা করত, মান্য করত আমিও ওকে পেয়ে ধন্য হতাম। না না, আমার মত একটা রাস্তার কুকুরের সাথে বিয়ে না হয়ে ওর অনেক ভাল হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর থেকে তো আমি কুকুর হয়ে গেছি। একটা লা ওয়ারিশ কুকুরের মত এই পৃথিবীর পথে পথে হাটছি তো হাটছিই, কেউ আমাকে ভালবাসার পেলব বন্ধনে জড়িয়ে ধরে বুকে একটু মাথা গুজার ঠাই দিল না। মেয়েটার প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও মমতায় তার মনটা ভরে উঠে। সে স্বগতোক্তি করে, বোন আমার সুখি হও, সুখি হও তুমি স্বামী সন্তান সংসার নিয়ে। ফুলে ফলে ভরে উঠুক তোমার জীবন। আল্লাহ্‌ তোমার মঙ্গল করুণ।

তাছাড়া সরকার বাড়ির মেয়েটা ছিল প্রচন্ড মেধাবী ও সুন্দরী। ক্লাস ফাইভে ও এইটে বৃত্তি ছিল, কলেজে পড়ত। শুনেছি এর গাল আর ঠোঁট নাকি রক্ত জবার মত লাল টকটক করত। কিন্তু মাঝারি বলে বাদ করেছিলাম। বিদ্যাগঞ্জের মেয়েটার রুপের খ্যাতি ছিল। অন্যেরা বলত, কোন নায়িকা এর সাথে তুলনা ছিল না। সুন্দরী, স্বাস্থ্য ও উচ্চতায় তার তুল্য মেয়ে পাওয়া ভার। তার বাবা ছিলেন আলেম, মেয়েটি কওমী মাদরাসায় পড়ত। এস এস সি পাশও নয় বলে বাদ করেছিলাম। ১৯৮৪ সালে দেওবন্দে সদ সালা (শতবর্ষ) সম্মেলনের সময় আমার আব্বা সনদ আনতে গিয়েছিলেন, তখন এই মেয়ের বাবাও সাথে গিয়েছিলেন। তিনি আব্বার প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। সেই সুবাদে আমার কাছে বিয়ে দেয়ার জন্য তিনি খুব আগ্রহি ছিলেন। তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য একবার আমার কাছে লোক পাঠালেন, বললাম, যাব। কিছুদিন পর আবার পাঠালেন, বললাম যাব কিন্তু আর যাওয়া হয়নি।

খাকডহরের অনার্স পড়ুয়া মেয়েটা ছিল শুকনা। কয়েকটা ছিল আলেমা মেয়ে, কারো মুখের হা বড়, কারো কপাল উচু, কেউ মাঝারি বা খাট, কেউ গরীব ইত্যাদি বিভিন্ন অজুহাতে বাদ করেছিলাম। এভাবে নিজের এলাকায় ও বাইরে অন্তত ডজন তিনেক মেয়ের জন্য আমার বিয়ের আলাপ হয়েছিল কিন্তু প্রত্যেকের বেলায় দুধে কাটা বেছে বেছে বাদ করে দিয়েছি। ইচ্ছা ছিল দেশের শ্রেষ্ঠ মেয়েটির পাণি গ্রহন করা। অথচ এরা সবাই ছিল সুন্দরী ও মেধাবী। কারণ আমার প্রথম শর্তই ছিল সুন্দরী ও মেধাবী ছাড়া আলাপ চলবে না। এদের যেকোন এক জনকে বেছে নিলেই আমার জীবনটা ধন্য হয়ে উঠত, এমন অভিশপ্ত হত না।

আবার আমি নিজেও কয়েক জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছি, তখন মনে আঘাত লেগেছে। তেমনিভাবে আমি যাদের প্রত্যাখ্যান করেছি তারাও তো আঘাত পেয়েছে। হয়ত তাদের কারো অভিশাপেই আজ আমার এই পরিণতি। কতজন হয়ত ঘোমটার নীচে কাজল চোখে স্বপ্ন দেখেছে, আমাকে নিয়ে ঘর বাধবে, ছোট্ট একটা ঘর, টোনাটোনির ঘর। সেখানে নতুন অতিথিরা আসবে, কিচিরমিচির করে মুখর করে তুলবে, রচনা করবে সুখের স্বর্গ। কত বাবা হয়ত আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন, আমার হাতে মেয়ে তুলে দিয়ে ধন্য হতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি তাদের আশা ভঙ্গ করেছি। তাই তাদের কারো অভিশাপে আজ আমি বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত। অথচ তাদের যে কাউকে পেলেই আমার জীবনটা ফুলে ফলে ভরে উঠত।

কিন্তু আজ কী পেলাম জীবনে? কোন রকম ফর্সা একটা বউ যাওবা পেলাম কিন্তু নাক নাই, সারা শরীর মিলিয়ে চার কেজি গোশত হবে না। তিনবারে এস এস সি পাশ। আর স্বভাবটা আহত সিংহীর চেয়েও হিংস্র। শ্বশুরবাড়ি? যাওবা একটা ঘর আছে সারা বছর তালাবদ্ধ থাকে। শাশুড়িটা মেয়েদের বাসায় ঘুরে ঘুরে জীবন কাটায়, মেয়েরাও তাকে দিয়ে ঝিয়ের কাজটা সারিয়ে নেয়। আর আত্মীয় স্বজন? ভিনগ্রহী নারীতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থায় ধর্মের মুখোশধারী, ইসলাম বিকৃতকারী কিছু হিংস্র শকুন, কুকুর আর হায়েনা। যারা মরার আগেই আমার দেহটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এই হল আমার প্রাপ্তি, আমার অর্জন, সারা জীবন দুঃখ কষ্টের বিনিময়। হাসান এক অব্যক্ত বেদনায় বিছানায় গড়াগড়ি দিতে থাকে, ছটফট করতে থাকে। এভাবেই তার রাত কেটে যায়, এক ফোটা ঘুম হয়নি। তার দুলাভাই একটা কওমী মাদরাসার শায়খুল হাদীস, বড় আলেম। বিকালে মাদরাসা থেকে আসলে পরামর্শের জন্য তাকে নিয়ে গিয়ে পুকুর পাড়ে বসল এবং তার সব কথা খুলে বলে পরামর্শ চাইল।

বেচারা কিছুক্ষণ স্তদ্ধ হয়ে বসে রইল। বুঝা যাচ্ছে সে রাগ হজম করছে। তারপর শ্যালকের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, এমন একটা পাগলা বউ নিয়ে তুমি এতদিন কেমনে ঘর করলা। তোমার ধৈর্য্য আছে বটে, আল্লাহ্‌র কাছে এর বিনিময় পাবে। কিন্তু জীবন তো একদিনের নয়, সবে তো সংসার শুরু, এমন বউ নিয়ে এ দীর্ঘ জীবন কেমনে পাড়ি দিবে। তুমি গিয়ে বিচার দিলে আর তারা উল্টো তোমার বিচার করল, বছর চিল্লার শর্ত দিল। আর তুমিও এমন একটা পাগল বউয়ের জন্য মরে যাচ্ছ, বিনা বাক্য ব্যয়ে তাদের শর্ত মেনে নিলে। তুমি কি মনে করছ সাল লাগিয়ে আসার পর এ বউ নিয়ে সংসার করতে পারবে? বিনা অন্যায়ে তোমার ঘাড়ে পাড়া দিয়ে তাদের শর্ত মানিয়ে বউ যখন ঘরে আসবে তখন সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। খারাপ স্বভাবের মেয়েরা কখনো ভাল হয়না, দিন দিন আরো খারাপ হয়। এখন তো মুখে বলেছে তোমাকে লাথি মারবে কিন্তু বুড়া বয়সে ঠিকই তোমাকে লাথিয়ে লাথিয়ে একবার ঘর থেকে বের করবে আরেকবার ঘরে তুলবে।

সবচেয়ে বড় কথা, যে বউ তোমার মাকে বিনা কারণে চুলে ধরার কথা বলে এমন বউ নিয়ে তোমার ঘর করা জায়েয হবে কিনা, এতো তোমার পরকাল নষ্ট করে দিবে। তোমার তো সাথে সাথে তালাক দেয়া উচিত ছিল। এ মেয়ে তো ঠিকই একদিন তোমার মায়ের চুলে ধরবে। আর এমন একটা বউয়ের জন্য তুমি একেবারে দেওয়ানা হয়ে গেছ। নিজের আত্মসম্ভ্রম সব বিসর্জন দিয়ে দিয়েছ। হাসান লজ্বায় মাথা অবনত করে মুখ কালি করে বসে থাকে। তারপর বলে- এখন তাহলে আমি কি করব?

দুলাভাই একটু শ্লেষের সুরে বলল, কি করবে তুমি বুঝ না, তুমি কি এখনো শিশু? আমি এ কথা বলছিনা যে, বউ তালাক দিয়ে দাও। কারণ বাচ্চা আছে, এ কাজ করা যাবে না। হাসান আশান্বিত হয়ে তার মুখের দিকে তাকায়। দুলাভাই বলেন, শুন চিল্লা ফাল্লা তো দুরের কথা তুমি একদিনের জন্যও জামাতে যাবে না। আর তুমি যে যাওনি এটা তাদেরকে জানাবে, তাদের সামনে আনাগোনা করবে, দেখা সাক্ষাৎ করবে, যাতে তারা বুঝতে পারে যে, তুমি তাদের শর্ত মাননি। হ্যাঁ তোমার যদি একান্তই যেতে ইচ্ছা হয় তাহলে সর্বোচ্চ তিন দিন, সাত দিনের জন্য যাবে, তবে তারা যেন জানতে না পারে। তখন দু’টি অবস্থা হতে পারে। হ্য়ত তোমার বউ আসবে না। যদি না আসে তাহলেও আল্লাহ্‌র কাছে, মানুষের কাছে, তোমার সন্তানের কাছে, বিবেকের কাছে তোমার কোন দায়বদ্ধতা থাকবে না, কেউ তোমাকে দোষি বলতে পারবে না। কারণ অন্যায় করেছে তোমার বউ তুমি নও, কাজেই শাস্তি হলে তার হবে তোমার কেন?

আর যদি আসে, তখন তোমার অনুগত হয়েই আসবে। তখন আর তোমাকে লাথি মারা, তোমার মায়ের চুলে ধরার মত জঘন্য কথা বলার সাহস দেখাবে না। সংসারের টুকিটাকি কাজ আর মেয়ে রাখার মত মেয়েলি কাজ নিয়ে ঝগড়া করবে না। কারণ তখন সে চ্যাকা খেয়ে বুঝে শুনেই আসবে যে, স্বামী ছাড়া মেয়েদের দ্বিতীয় কোন অবলম্বন নেই। কাজেই তখন এসে আর নাক উচিয়ে রাখার সাহস পাবে না, মাথা নুইয়ে রাখবে। আর তুমি নিশ্চিত জেনো যখন তারা জানবে তুমি চিল্লায় যাওনি তখন হয়ত রাগে গোস্বায় কিছু দিন ফুলে থাকবে। কিন্তু বোনের বাসায় অন্যের বাসায় ঘোরাফিরা করে আর কতদিন খাবে, এক সময় তোমার বউ বুঝতে পারবে স্বামী ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তখন জীবনটা অভিশপ্ত মনে হবে। আর তখন দেখবে চেচিয়ে তোমার বাসায় এসে উপস্থিত হয়ে গেছে। কারণ আজ কাল ভাল মেয়েদেরই বিয়ে দিতে সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে শুনেছি তোমার বউ তেমন সুন্দরী নয়, আবার শিক্ষা সম্পদ বলতে তেমন কিছুই নেই, তদুপরি মেয়েদের সাধারণত গুন থাকে কিন্তু এ মেয়েটার তাও নেই। কাজেই এমন একটা মেয়ের জন্য কেউ পথে হা করে বসে আছে না যে কালই বিয়ে দিয়ে দিবে।

সুতরাং এখন তোমার কাজ হল একদম নীরব হয়ে যাওয়া- যাতে তারা বুঝতে পারে বউয়ের দিকে তোমার কোন আগ্রহ নাই। সাধারণত মানব চরিত্র হল, তুমি অগ্রসর হলে তারা পিছিয়ে যাবে, আর তুমি পিছিয়ে থাকলে তারা অগ্রসর হবে। আর সম্ভব হলে তারা যদি তোমাকে কিছু দিয়ে থাকে তাহলে গিয়ে সেগুলি ফেরত পাঠিয়ে দাও। আমার যা বলার বললাম এখন তোমার ইচ্ছা। আমার পরামর্শ মত কাজ করলে আশা করা যায় কিছুটা হলেও জীবনটা বাঁচাতে পারবে। দুলা ভাইয়ের পরামর্শ তার খুব পসন্দ হল এবং যৌক্তিক মনে হল। কাজেই সে এই পদ্ধতি মেনে চলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।

শ্বশুর পক্ষ থেকে প্রদত্ত সম্পদ বলতে তার বউকে গলা ও কানের অলংকার দিয়েছিল। সেগুলি এবং তার প্রদত্ত হাতের বালা, শাড়ি ও অন্যান্য জিনিস পত্র সব ব্রিফকেসেই আছে। আর ব্রিফকেস আছে এডির বাসায় অর্থাৎ এগুলি স্ত্রীর দখলেই আছে। আর ঘরে শ্বশুর বাড়ির সম্পদ বলতে আছে ভাত তরকারী রান্নার কয়েকটা হাণ্ডি পাতিল। হাসান সিদ্ধান্ত নেয় এ জিনিসগুলি পাঠিয়ে দিবে, তাহলে তার বউ ভয় পেয়ে যাবে। কারণ সে তো আগে থেকেই ভয় পায় যে স্বামী তাকে ফেলে চলে যাবে। এখন এ জিনিসগুলি পাঠিয়ে দিলে ভাববে, সত্যি স্বামী তাকে চায় না, অন্য একটা বিয়ে করবে। আর তখন ভয় পেয়ে দৌড়ে এসে পায়ে উপুর হয়ে পরবে। হাসান বাসায় গিয়ে আনন্দ সহকারে জিনিসগুলি ইঞ্জিনিয়ারের বাসায় পৌঁছে দিল।

বিষয়: সাহিত্য

১৬১২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378192
০২ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০৩:১৩
সবুজ সাথী লিখেছেন : কঠীন কাহিনী। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। আপনার ভালই ধৈর্য আছে লেখার। Happy
378207
০২ অক্টোবর ২০১৬ বিকাল ০৫:২৮
আকবার১ লিখেছেন :
378214
০৩ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
নকীব আরসালান২ লিখেছেন : আর কয়েকটা পোস্টের পর তৃতিয় পর্ব শুরু হবে। ধন্যবাদ ধন্যবাদ
378223
০৩ অক্টোবর ২০১৬ দুপুর ০৩:১২
আবু নাইম লিখেছেন : ইচ্ছামত পসন্দমত খাবার পাবে না| ও এই কথা.

সাধারণত মানব চরিত্র হল, তুমি অগ্রসর হলে তারা পিছিয়ে যাবে, আর তুমি পিছিয়ে থাকলে তারা অগ্রসর হবে।

একদম খাটি কথা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File