চিঠি- ৩৪ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৮:৪২:৫৯ সকাল
ফেরদৌসীর কয়েক বোন মিলে ঢাকায় বড় ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে যাবে, সেও যাবার আগ্রহ প্রকাশ করল। হাসান উৎসাহের সাথে সম্মতি দিয়ে বলল- যাও মাঝে মধ্যে বেড়াতে হয়, বাসায় একলা একলা থেকে তোমার মেজাজটা খিটখেটে হয়ে গেছে, বেড়ালে মাথা ঠিক থাকে। সব কিছু প্রস্তুত করে দিল। যাবার দিন রিকশায় তুলে এডির বাসায় পাঠিয়ে দিল। সেখানে তার বোনেরা একত্র হয়ে ট্রেনে উঠবে। ওমা, কয়েক ঘণ্টা পর বাসায় এসে হাযির। হাসান বলল- আশ্চর্য, কি ব্যাপার গেলে না কেন? সে কোন কথা বলল না, মুখটা আকাশের মত গম্ভীর, একটু নারা পেলেই ঝড় ঝড় করে বৃষ্টি শুরু হবে। যে কারণেই হউক তার বোনেরা তাকে নিয়ে যায়নি। আর এটা সে হাসানকে বলবে না এবং কোন দিনই বলবে না। মেয়েটাকে সে যত বোকা ভাবত আসলে তা নয়, সে তাদের পারিবারিক অনেক দুর্বল বিষয় স্বামীর আড়ালে আবডালে তার মায়ের সাথে আলোচনা করত কিন্তু তাকে বুঝতে দিত না।
সে এসেই ব্যাগটা মাটিতে ছুঁড়ে মারল। তারপর মেয়েকে থ্যাকনা মেরে খাটে বসিয়ে নিজে শুয়ে পড়ল। হাসান বুঝল এবার বোনদের প্রতি রাগটা তার উপর ঢালবে। শুরু হল সাপের মন্ত্র - আপনে আমারে কই নিয়া যান, কয়দিন বেড়াতে নিয়া গেছেন। মানুষ কত জাগায় বেড়ায়, ও আমি গেলেগা আরেকটা বিয়া করবেন তখন কত বেড়ানো হবে। হানিমুনে যাবেন, পিকনিকে যাবেন, কক্সবাজার যাবেন, চিড়িয়া খানায় যাবেন। কত আদর হবে, আমার তো আদর নাই। তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে- আপনে আমারে কি খাওয়ান, স্বাস্থ্য হয় না কেন? হাসান বলল, এক কেজি দুধ খাও, ডিম খাও, অন্যান্য সব কিছু খাও। ভাল যে কোন জিনিস নিজে না খেয়ে তোমারে খাওয়াই, আর কি ঘোড়ার আণ্ডাডা খেতে চাও। ঔষধ আনলে তো ঠিক মত খাও না, জোর করে খাওয়াতে হয় আবার অর্ধেক ফেলে দাও। আমার আর কি করার আছে। এখন আমার শরীর থেকে গোশত কেটে রান্না করে তোমাকে খাওয়ালেই বোধ করি তুমি খুশি। ঝগড়া ছাড়, এই ঝগড়ার কারণেই তোমার স্বাস্থ্য হয় না। সে ভেংচি কেটে- ঝগড়া ছাড়, কথার সাথে কি শরীর থেকে ভিটামিন যায় গা নাকি যে স্বাস্থ্য হবে না। খাওয়ানোর মুরোদ নাই আবার বিয়ে করেছে, দেখেন গিয়া হুমামারে তার জামাই কিভাবে খাওয়ায়।
এ পর্যন্ত তার একটি ভাগ্নির বিয়ে হয়েছিল, এ মেয়েটি ছিল তার প্রায় সমবয়সী এবং বান্ধবি। তার সম্পর্কেই বলতে লাগল – জামাই কত আদর করে, মোবাইলে খবর নেয়। - তুমি তো আমার সাথেই থাক, মোবাইলে আবার কি খবর নিব। ওর জামাই থাকে কর্মস্থলে আর মেয়ে থাকে বাপের বাসায়, খবর তো নিবেই। - জামাই কাজ করতে দেয় না কাজ করলে রাগ করে, কাছে বসাইয়্যা রাখে। - মেয়ে থাকে বাপের বাড়ি, কাজ করবে কেন? নিজের সংসারে গেলে ঠিকই করবে। আর তুমিইবা কোন কাজটা করে ফেল। সব কিছু তো আমিই করি।– জামাই কাছে বসাইয়্যা বসাইয়্যা হরলিক্স খাওয়ায়, আরো কত কিছু খাওয়ায়। - আরে হরলিক্স তো আমি জানতাম পোলা পানের খাদ্য। তোমার মত বুড়া মাইনসে যে হরলিক্স খায় এইডা জানতাম না। আচ্ছা ঠিক আছে হরলিক্স এনে দেব, তখন পেট ভরে খাবে।
- জামাইয়ের মা বউয়েরে কাপড় দিছে, বোনে আংটি দিছে, আরো কত কিছু দেয়। আপনের মা বোন আমারে কয়ডা জিনিস দিছে, ওঁ সে ইঞ্জিনিয়ারের মেয়ে তাই না? তার বাপের চেয়ে আমার বাপ কম নাকি। সে তো ম্যাট্রিক আর ডিপ্লোমা পাস। আর আমার বাপ কারমাইকেল কলেজে লেখাপড়া করছে, অধ্যাপক গোলাম আযমের ছাত্র। তাদের বাসাটা ছাড়া আর কি আছে। আমার বাপের অনেক কিছু আছে। সে কাল মেয়ে, শুকনা, খাট, নাক বুছা, তার এত আদর আমার নাই কেন? আমি কি তার চেয়ে কম সুন্দরী নাকি?- আরে রাখ তোমার বকবকানি। ঐ মেয়ে তোমার চেয়ে হাজার গুনে ভাল, তোমার মত সে জামাইকে কড়াইয়ে তোলে রাত দিন ভাজাভাজি করে না। মনে আছে ঘুম থেকে ডাক দেয়ার কারণে কি বলেছিলে? মরে গেলেও ঐ মেয়ের মুখ থেকে এমন কথা বেরুবে না। আর ওরা জামাইকে ট্রেনের টিকেটটা পর্যন্ত করে দেয়, আর আমার তো রিকশা ভাড়াটা পর্যন্ত দিয়ে দিতে হয়।
- ও আপনে লোভি, তার দিকে আপনের লোভ, তাকে বিয়ে করলেন না কেন? - ঐ হারাম জাদি মুখটা বন্ধ কর। জানস না ওরা আমার মেয়ে। ওদের ছোটডারে তোর দুধ পান করাস নাই? মেয়ে সম্পর্কে বাপেরে এমন অশ্লীল কথা কস কেমনে? জীবনে কোন দিন শুনছস ওদের সম্পর্কে আমি কোন বাজে মন্তব্য করেছি। আমি পরপুরুষ হয়েও খারাপ মন্তব্য করি না আর তুই নিজের ভাগ্নি সম্পর্কে এমন অশ্লীল কথা কছ কেমনে? মুখের উপরে কয়েকটা লাগাইয়্যা দিলে আর কুকথা বেরুবে না।
হাসান চেয়ারে বসা, সে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠল- আয় আয় লাগা লাগা, স্বামীর হাত ধরে টেনে গালে লাগিয়ে লাগিয়ে বলে মার মার। রাগে হাসান ওর বুকে জোরে ধাক্কা মারল- যাঃ আমার সামনে থেকে খবিস কোথাকার। সাথে সাথে তাল পাতার সেপাই উল্টে গিয়ে খাটে পড়ে গেল। সর্বনাশ করল। সে চোখ উল্টিয়ে- খোদার কসম, আমি তোর ঘরে থাকব না, তালাক দে এক্ষুনি তালাক দে। এসে তার কাঁধে ধরে ধাক্কাতে শুরু করল। হাসান বলল- ঐ হারামি প্রত্যেক দিনই খালি তালাক তালাক করস আমি তালাক দিতে পারব না, ফাসি দিলেও আমার মুখ থেকে ঐ জঘন্য তিন কথা বের হবে না, তোর যা মন চায় কর গিয়ে। আমিই দিচ্ছি- বলে সে ঝটপট খাতা কলম বের করে আগের মতই আবার লিখে ফেলল- আমি তালাক দিয়ে গেলাম। এদিন নিয়ে সে মোট তিনবার তালাক লিখল। এবার বোরকা আনতে গেল। হাসানের তো মাথা ঘুরে গেল, এখন উপায় কি। হঠাৎ একটা বুদ্ধি মনে হতেই বেশ হাসি পেল।
সে মেয়েকে নেয়ার জন্য খাটের কাছে আসল তখন হাসান বলল- আরে খাড়াও খাড়াও, তুমি একা যাবে কেন, আমিও সাথে যাচ্ছি। গেলেই তো ইঞ্জিনিয়ার জিজ্ঞেস করবে কেন এসেছ? তখন তুমি তো কিছু বলতে পারবে না আমি বলব যে, আপনার মেয়ে সম্পর্কে সে এমন এমন কথা বলেছে। আর এ নিয়ে ঝগড়া করে এসে পড়েছে। সে অসহায় হয়ে স্বামীর মুখের দিকে তাকাল। হাসান অভিনয় পূর্ণ করার জন্য জামা নিয়ে এসে ঠেলতে লাগল- চল, চল না। কিন্তু সে গম্ভীর হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল, তারপর বিছানায় শুয়ে কান্না শুরু করল। তার এই কান্না পরাজয়ের কান্না, হাসানের উপর প্রতিশোধ না নিতে পারার কান্না। সে হাসি দমিয়ে রাখতে পারছে না, কত ভয়ঙ্কর আর বজ্জাৎ স্ত্রী, অন্য দিন যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে অথচ আজ নিজেই ধরা খাবে বলে গেল না, পিছুটান দিল। সে ভাবে- এমন এক আজব চিজ আল্লাহ আমার কপালে লিপিবদ্ধ করেছেন।
হাসানের সাধারণ অভ্যাস ছিল মাদরাসা থেকে এসে খাওয়া- দাওয়ার পর শুয়ে বিশ্রাম করত। আসরের পরে বেরিয়ে ঘোরাফিরা করত ও প্রয়োজন থাকলে কিনা কাটা করত। তারপর রাত এগারটা ও সকাল নয়টা পর্যন্ত লেখা ও পড়ার কাজে ব্যস্ত থাকত। সে ছিল আল বারাকা নামক প্রকাশনীর নিয়মিত লেখক। কাজেই তিন বেলা খাওয়ার সময় ও দুপুরে খাওয়ার পর বিশ্রামের সময়টুকুতে ফেরদৌসি স্বামীর সাথে ঝগড়ার সময় পেত। হাসানও ঝগড়ার ভয়ে স্ত্রীকে যথা সম্ভব কম সময় দেয়ার চেষ্টা করত।
আগে ঝগড়া হত মোটামোটি হাসানের কোন কথার রেশ ধরে। সে হয়ত বলত মেয়ে বিছানায় পেশাব পায়খানা করল কেন, হান্ডি পাতিল উদোম কেন, এটা এখানে পড়ে আছে কেন, ওটা হল না কেন, এই বলাটাই তার অপরাধ হত, সে কাজটা না করে ঝগড়া শুরু করে দিত। কিন্তু এখন অবস্থার উন্নতি হয়েছে, হাসান ঝগড়ার ভয়ে কিছু বলত না কিন্তু ফেরদৌসী খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ইস্যু তৈরি করত আর ঝগড়া করত। সে প্রায় প্রায়ই বলত- নূরানি আম্মারে কাপড় দেয়, দাদুরে মোবাইল দেয় আপনে কি দেন। হাসান বলত- দেয়ার সময় কি গেছে গা, মাত্র তো সংসার শুরু করলাম, সামনে দেখ কি দেই না দেই। যেহেতু তাদের পরিবার দরিদ্র ছিল এজন্য তারা বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের সাহায্য সহযোগিতা পেয়ে অভ্যস্ত ছিল, দিয়ে নয়। এ কারণেই ফেরদৌসী অন্যেরটা পাওয়ার জন্য লোভাতুর হয়ে থাকত। বাড়িতে গেলেই হাসানের মা, বোন ভাই তাকে শাড়ি দেয় না কেন, এটা দেয় না কেন, ওটা দেয় না কেন- এ নিয়ে প্রায় প্রায়ই খোটা দিত। আবার তার মা ভাইকে হাসান দেয় না কেন, এ নিয়ে অধিকাংশ সময় ঝগড়া করত। কিন্তু ততদিনে হাসান সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার শাশুড়িকে নিয়ে আসবে। কারণ তার নীতি হল মাকে দেখা শুনা করা যেমন কর্তব্য, শাশুড়িকে দেখাও কর্তব্য। কিঞ্চিৎ জমি যা ছিল তিনি ছেলে মেয়েদের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে দিয়েছেন, এখন কপর্দক শুন্য হয়ে মেয়েদের বাসায় বাসায় ঘোরেন আর থাকেন।
এজন্যই সে নিয়ত করেছে শাশুড়িকে নিয়ে আসবে, তিনি ছোট মেয়ের সাথে থাকবেন এটাই উত্তম হবে, আর সেও নিস্কৃতি পাবে। কারণ যেভাবে ঝগড়া চলছে খুব শীঘ্রই পাগল হয়ে দেশে দেশে ঘুরতে হবে। তাই সে স্থির করেছে তিন রুমের একটা বাসা নিবে। একটা রুম হবে শুধু তার, সেখানে দরজা এটে তার পড়া ও লিখার কাজ করবে। শুধু খাওয়ার সময় চোখ বন্ধ করে চারটে খেয়েই আবার রুমে এসে তালা দিবে। স্ত্রীর দিকে ফিরেও তাকাবে না একটা কথাও বলবে না। এই হল ঝগড়া থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। স্ত্রীকে বলল আর ঝগড়া করতে হবে না, আম্মাকে নিয়ে আসতাছি। আমি আলাদা রুমে থাকব, তারপর তোমরা মা মেয়ে যত পার ঝগড়া করো। তবে আমার শর্ত হল- অসুস্থ বুড়া মানুষ, তাকে দিয়ে কোন কাজ করাতে পারবে না। তিনি শুধু আমার মেয়েকে নিয়ে খেলা ধূলা করবেন, কাজ তুমি করবে। এ প্রস্তাব শুনে বেশ খুশি খুশি মনে হল।
কখনো সে স্বামীর পাশে শুয়ে শুয়ে বলত- আপনাকে বিয়ে করাব, আপনার জন্য মেয়ে দেখতাছি, সত্যি কথা বলছি। সে বলত- আসলে করা তো দরকারই, তোমার মত মুখরা বদমেজাজি বউদের শায়েস্তা করার জন্যই আল্লাহ্ চারটা বিয়ে করার কথা বলেছেন। সাথে সাথে জ্বলে উঠত, শুরু হত ঝগড়া। একদিন স্বামীর পাশে বসে হাসি খুশি ভাবে বলছে- আল্লাহ্র কসম আমি কবেই যাইতাম গা কিন্তু চিন্তা করে দেখছি আপনের মত ধৈর্য্যশীল পামু না, তবে দুইদিন আগে পিছে আমার আর থাকা হবে না। হাসান অসহায় হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে- কই যাইবা, মেয়ে কি করবা? সে একটু হাসল, তারপর বলল- রিযিকের ব্যবস্থা আল্লাহই করবে, মেয়ে আম্মাকে দিয়ে দিব অর্থাৎ মেয়ে তার মাকে দিয়ে সে সোলেমানের ঘরে যাবে বা অন্যত্র বিয়ে বসবে। হাসানের পা থেকে মাথা পর্যন্ত আগুনের একটা প্রবাহ খেলে গেল। সে অন্য সব কিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু তার স্ত্রী তারই সামনে অন্যের বিছানায় যাওয়ার আকাংখা করবে এটা তার সহ্যের অতীত। এমন বেশ্যা মাগির বেঁচে থাকার কোন অধিকার নাই। মন চায় হাতের আঙ্গুল গুলি গলায় বসিয়ে দিতে, একটা বেশ্যার সাথে চুকিয়ে ফেলতে জীবনের সব লেন দেন।
কিন্তু সেই দরবেশের কথা মনে হল- যাকে দেখার জন্য এক লোক তার বাড়িতে গেল। লোকটাকে দেখেই দরবেশের বউ অশ্রাব্য গালিগালাজ শুরু করল। লোকেরা বলল অমুক জঙ্গলে যান সেখানে দরবেশকে পাবেন। সেখানে গিয়ে দেখতে পেল দরবেশ বাঘের পিঠে চড়ে লাকড়ি নিয়ে আসতেছে। লোকটি জিজ্ঞেস করল আপনি এ বুজুর্গি কেমনে হাসিল করলেন। দরবেশ বলল, আমার স্ত্রীর বদৌলতে। কাজেই আল্লাহ্র কাছে উত্তম বিনিময়ের আশায় সেও ধৈর্য্যধারন করে।
পটেটোর ভাই সোলেমানের জন্য ফেরদৌসীর বিয়ের আলাপ হয়েছিল কিন্তু দরিদ্র পরিবারের অর্ধ শিক্ষিত ছেলে দেখে বিয়ে দেয়নি। তখন পটেটো স্ত্রীকে লাগাল ফেরদৌসীকে ফুসলানোর জন্য। সে বুঝাল- দেখ, সুদূর বরিশালে গিয়ে তুমি একা থাকতে পারবে না, তোমার একটা বোন সাথে নিয়ে নাও এতে তোমারই উপকার হবে। তখন সে বোনকে বুঝাত- সোলেমান অনেক ভাল ছেলে, তুই দেখিস সে খুব ভাল চাকরি করবে। তোর বিয়ে হলে তোরা আর আমরা এক সাথে বাসা করে এক সাথে থাকব। বোনকে পূর্ণ করায়ত্ত করার জন্য নূরানি বরিশাল যাওয়ার সময় তাকে সাথে নিয়ে যেত। তখন পটেটোর মা ফেরদৌসীকে খুব আদর করত, মুখে মাথায় ও গায়ে হাত বুলাত আর ছোট বউ বলে ডাকত। এ সময়েই সোলেমানের সাথে ফেরদৌসীর সম্পর্ক গড়ে উঠে।
বিয়ের পর ফেরদৌসি সাধারণত ইঞ্জিনিয়ার ও পটেটোর পরিবার সম্পর্কে অধিক আলাপ করত, উচ্ছসিত প্রশংসা করত। মাঝে মধ্যে শুধু এতটুকু বলত যে সোলেমানের সাথে তার বিয়ের আলাপ হয়েছিল। কিন্তু বাসায় উঠার পর সে একক ভাবে পটেটো ও তার পরিবারের প্রশংসা করত সোলেমানের প্রশংসা করত। ঝগড়ার সময়- আপনার সাথে বিয়ে না হয়ে সোলেমানের সাথে হলেই ভাল হত- বলে মাঝে মধ্যে কাঁদত। হাসান ভাবত তার স্ত্রী কট্টর তাবলীগী, কঠোর ধার্মিক, পুত পবিত্র। সে বুঝেই না যে, স্বামীর সামনে অন্য কোন পুরুষের জন্য কাঁদতে নেই, বোকামির কারণেই সে এমন করে। কিন্তু তৃতীয় বাসায় আসার পর থেকে সে শুধু পটেটো, তার পরিবার ও সোলেমানের আলোচনা করে, প্রশংসা করে, সোলেমানের কথা উঠলেই কেঁদে ফেলে। কথায় কথায় সোলেমানের সাথে বিয়ে হলেই ভাল হত- বলে আর কাঁদে।
রাতে খেতে বসেছে। ফেরদৌসি আলাপ শুরু করল, তার বোনদের কার কেমন ভাল বিয়ে হয়েছে আর কার জামাই কত ভাল। নিজের বেলায় এসে বলল আপনার সাথে বিয়ে না হয়ে সোলেমানের সাথে হলে আমার কত ভাল হত। তার মা আমাকে কত আদর করত ছোট বউ বলে ডাকত, সোলেমান আমাকে অনেক ভালবাসত। এখন সে ঘুমাতে পারে না, নূরানি আপারে কল করে আর কয়- ভাবী একটা কিছু ব্যবস্থা করে দেন- বলে গুমরে কেঁদে উঠল। তারপর- এসব আমার জন্যই হয়েছে, আমার উপরে তাদের অভিশাপ লাগছে, আমি অভিশপ্ত- বলতে বলতে অর্ধেক খাওয়া দুধ ভাতে হাত ধুয়ে উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে বিলাপ করে কাঁদতে লাগল। লজ্বা, ঘৃণা, ক্রোধ আর বিতৃষ্ণায় হাসান বিমর্ষ হয়ে গেল। খাওয়া প্রায় শেষ, দুয়েক লোকমা ভাত- তরকারীর পাতে হাত ধুয়ে সে উঠে বারান্দায় চলে গেল।
রক্ত সঞ্চালনে তার দেহের প্রতিটি শিরা উপশিরা যেন ফেটে যাচ্ছে। ভেতর থেকে আগুনের হলকা যেন নাক, মুখ, কান দিয়ে ঠিকরে বেরুচ্ছে, মস্তিস্ক দিয়ে ধোয়া উঠছে। এবার সে বুঝতে পারল ফেরদৌসী দুনিয়া শুদ্ধু মানুষের কারো প্রশংসা না করে শুধু পটেটো, তার পরিবার ও সোলেমানের প্রশংসা করার মুল কারণ। তার আর বুঝতে বাকী রইল না- নিশ্চয়ই এই মাগির পটেটোর ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল। নচেৎ যে তার ছাত্র হওয়ার যোগ্য নয়, যে তাদের বাড়ির বর্গা চাষি বা কামলার সমতুল্য তার জন্য কাঁদবে কেন? নিশ্চয়ই তার দুলা ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময় ঐ লোকের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, আর দৈহিক সম্পর্কও অসম্ভব নয়। ঐ নাগর তার জন্য ঘুমাতে পারে না, তার জন্য অপেক্ষা করছে, ভাবীকে অনুরোধ করছে তাকে নেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য। উঃ যন্ত্রণা, মাথাটা ফেটে যাচ্ছে, এই মাগি এখন তার সাথে থেকে, তার খেয়ে, তার পরে, তারই সামনে ঐ নাগরটার ঘরে যাওয়ার জন্য কাঁদে। স্ত্রী তাকে কিলালে লাথালেও সহ্য করতে পারে কিন্তু এটা সহ্য করা কিভাবে সম্ভব, কোন পুরুষই সহ্য করতে পারবে না। উহ আর না, এক্ষুনি এ মুহুর্তে ওকে তালাক দিয়ে বিদায় করতে হবে, বেশ্যা নিয়ে ঘর করার চেয়ে বিপত্মিক থাকা অনেক ভাল। কিন্তু ভাবল- না, তালাক দিবে না, তালাক দিলে তো কালই গিয়ে সেই নাগরটার সাথে মিলবে। এটা সে সহ্য করতে পারবে না। সে বেঁচে থাকবে আর তার স্ত্রী অন্যের শয্যাসঙ্গিনী হবে এটা তার জন্য মৃত্যুর শামিল। তার চেয়ে বরং ওকে মেরে ফেলাই ভাল। একটা বেশ্যার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। কোন বেশ্যা সম্মানিত স্ত্রীর মর্যাদা পেতে পারে না। পৃথিবীর কোন স্বামীই বেশ্যা স্ত্রীকে বাচিয়ে রাখে না। বেশ্যা স্ত্রী হত্যার ঘটনা অবলম্বনেই রচিত হয়েছে আলিফ লায়লা। তাহলে সে কেন এবং কোন যুক্তিতে ওকে বাঁচিয়ে রাখবে, না সে বাঁচবে না।
ঝড়ের গতিতে গিয়েই হাতটা গলায় বসিয়ে দিল, চিৎকার করল, ধাপাধাপি করল, হাত পা ছুড়ল, মেয়েটা কান্নাকাটি শুরু করেছে, এক মিনিট সব শেষ। মানুষ দৌড়াদৌড়ি করে ছুটে এল, বাসার সামনে হুলস্তুল পরে গেল। মেয়েটা মায়ের দেহের উপর পরে কাঁদছে। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এল, তাকে নিয়ে রওয়ানা করল। মেয়েটা তার নিঃস্বের মত মরিয়া হয়ে কাঁদছে। আর তখন সত্যি সত্যি মেয়ে কেন যেন কাঁদতেছে। তার চমক ভাঙ্গল, বারান্দার গ্রিলে হাত মেরে- ধুত্তুরি, কি আজে ভাজে চিন্তা করছি, আমার কাঁধে শয়তান বসেছে। মনকে বুঝাতে লাগল- আমার স্ত্রী পবিত্র, সে অন্যের বিছানায় যাবে কেন, সে তো আমাকেই ভালবাসে। সে কি আমার জন্য কাঁদত না, বাড়িতে দেরি করলে এখনো কি পাগল হয়ে যায় না। আসলে এখন ওর মাথাটা ঠিক নেই, পাগল হয়ে গেছে। বোকামির কারণে এমন করে। তিন রুম ওয়ালা একটা বাসা নিয়ে শাশুড়িকে নিয়ে আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মনে স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা ফিরিয়ে আনল।
তারপর ঘরে গেল বউকে একটু আদর করার জন্য। গায়ে হাত দিল কিন্তু হাতটা ধরে উড়িয়ে মারল। জড়িয়ে ধরল, ঝটকা মেরে উঠে গিয়ে খাটের কিনারে শুইল। তারপর মুখটা বিষ করে বলল- আমি আপনের ঘরে থাকব না, আপনের সাথে শুব না। এরপর থেকে শুরু হল নতুন অভিনয়, হাসানের সাথে শুয়ে আছে তো হঠাৎ উঠে বসে পরল- ছিঃ ছিঃ, আমি না আপনের ঘরে থাকব না, আপনে তো পরপুরুষ, তাহলে আপনের সাথে শুয়ে আছি কেন- বলেই গিয়ে খাটের কিনারে শুয়ে থাকত। এ অভিনয় চলতে থাকল।
বিষয়: সাহিত্য
১৪০৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন