চিঠি- ৩৩ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:৪৮:৩১ সকাল
ন্যুনতম যেটুকু হুস চেতনা ও অনুভূতি থাকলে কাউকে মানুষ বলা যায় ফেরদৌসীর তাও লোপ পেয়েছিল। মেয়ে তার ইচ্ছা-স্বাধীন মত বিছানায় বা ফ্লোরে পায়খানা পেশাব করত, প্রায় প্রতিদিন হাসান দেখিয়েছে ও শিখেয়েছে যে, বাচ্চা ঘুম থেকে উঠার পর পটে বসিয়ে দিবে কিন্তু সে তা পারত না, সবকিছু স্বামীকেই করতে হত। ভাত তরকারি পুড়ে ফেলা অভ্যাসে পরিণত হল। খাওয়া দাওয়ার পর থাল বাসন এভাবেই পড়ে থাকত, প্লেটের পানিটা পর্যন্ত ফেলত না, পরিস্কার করত না, হাসান করলে হত না করলে সেভাবেই পরে থাকত। ভাত তরকারি ও অন্যান্য হান্ডি পাতিল উদোম থাকত, রাত্রে ইঁদুর চোহা ঢুকত, স্বামী টের না পেলে সেগুলি আবার খাওয়াত। চাউল পরিস্কার করত না, কোন রকম একটা ধোয়া দিত, ভাতে কঙ্কর ও মরা ভাত থাকত, বাসি ভাতের সাথে চাউল দিয়ে রান্না করত। বাড়ি বা অন্য কোথাও থেকে এসে ব্যাগ খোলা অবস্থায় মাটিতে ফেলে রাখত, গোসল করে কেস ছাড়া সাবান বাথরুমে মাটিতে ফেলে রাখত। তার গোসলের কাপড় স্বামীই ধুইত কিন্তু মেয়ের হাগা মুতার কাপড় সে ধুইত না বলে কয়েক দিন পর্যন্ত বাথরুমে পচিয়ে রাখত। মেয়ের ও তার কাপড় চোপড় মাটিতে এখানে সেখানে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকত। এভাবে ফেরদৌসী নোংরামি ও বিশৃঙ্খলার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল।
তখন হাসান অধৈর্য্য হয়ে বলত- বিয়ের সময় সবাই বলেছে খুব কর্মঠ, যহির বলেছে- দুইশ মানুষকে রেধে-বেড়ে খাওয়াবে কারো সাহায্য লাগবে না। এডি বলেছে- তুখোর মেধাবী, সকল কাজে দক্ষ, হস্ত শিল্পজাত কাজে ওস্তাদ। আর এখন তুমি দু’জন মানুষের একটা সংসার চালাতে পার না। সে ফুসে উঠত- না আমি কর্মঠ না। এই কিপটা ছোদা আমাকে খাটাতে এত মজা লাগে কেন, কামলা রাখতে পারস না।– কামলা কেমন পাওয়া যায় জানস না? – না পাওয়া গেলে নিজে করেন।- আমি চাকরিও করব কাজও করব তাহলে তুই কি করবি। - আমি তোর দাসী বাদী না, এত কাজ করতে পারব না। - তাহলে তোর বোনেরা কেমনে করে, কার বাসায় কাজের মেয়ে আছে, সবাই তো নিজের কাজ নিজেই করে। - তুই তাদের নিয়া আয়, তাদের নিয়ে ঘর কর, আমি থাকব না। কখনো হাসান বলত- হাফুরি আপা কত কষ্ট করে সংসারের সব কাজ একা করে। সে বলত- তাকে নিয়ে আসেন গিয়ে। কখনো বলত- ইসুবিসু আপার জামাই অত্যাচার করে অথচ সে কত শান্ত শিষ্ট ভদ্র, সব কাজ একা করে, জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করে না। সেই একই কথা তাকে নিয়ে আসেন গিয়ে। তার বোনদের হাসান সহোদর বড় বোনের মত শ্রদ্ধা করত। তখন সে আস্তাগফিরুল্লাহ বলে ধমক দিলে শুরু হত চূড়ান্ত ঝগড়া। পূর্বে কখনো তার বোনদের সম্পর্কে এমন কুৎসিত কথা বলত না, এ তারিখে বাসায় আসার পর থেকে তার মাথা বিগড়ে যায়।
ফেরদৌসী কোন কাজে তার বড়াপার বাসায় গেছে। হাসান আসরের নামাযে গেল, মসজিদে নূরানির জামাই পটেটোর সাথে দেখা, নামাযের পর তাকে বাসায় নিয়ে আসল। সে ঘরের চারদিকে তাকিয়ে নাক সিটকালো- কী ব্যাপার কাপড় চোপড় হান্ডি পাতিল এভাবে এলোমেলো অগোছালো পরে থাকে কেন, আর বাসাটা এত নোংরা কেন, ফেরদৌসি কি কাজ করে না নাকি? অথচ নূরানিটা কত ভাল, বাসার সব কিছু ছিম ছাম গুছিয়ে রাখে, আমি যে কয়টা টাকা পাই তা দিয়ে দুইজন ফকিরের সংসারও চলবে না অথচ সে হিসাব করে এমন সুন্দরভাবে সংসার চালায় যে আমি দেখে অবাক হয়ে যাই। একবার বাবা আমার বাসায় আসার সময় এ্যাকসিডেন্ট করে পা ভেঙ্গে যায়। তখন ছয় মাস আমার বাসায় ছিলেন, নড়াচড়া করতে পারতেন না, বিছানায় পেশাব পায়খানা করতেন, এই সব নূরানি একা পরিস্কার করত, আমাকে ধরতেও দিত না। আরো কিছুক্ষণ আলাপ করে পটেটো চলে গেল।
হাসান কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, তারপর শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিল, পক্ষাঘাতগ্রস্থ রোগীর মত নিথর হয়ে শুয়ে রইল। যে আগুন সে অনেক চেষ্টায় বহু সাধনা করে, বুকে হিমালয় চেপে দমিয়ে রেখেছিল তা দাউ দাউ করে আবার জ্বলে উঠল। কখনো কখনো মানুষের মন এমন নিষিদ্ধ ও পাপ চিন্তা করে যা নিজের বিবেককেও বলা যায় না। বিবেক লজ্বা পায়, তিরস্কার করে, ঘৃণা করে। হাসানের বিয়ের পর নূরানি ঢাকা থেকে মাঝে মধ্যে বেড়াতে আসত। আবার ঢাকায় ফেরার সময় তাকে ট্রেনে তুলে দিতে হত। কারণ তখন হয়ত কেউ থাকত না, থাকলেও যেত না, অগত্যা হাসান গিয়ে তাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসত। নূরানি ছিল অপরুপা সুন্দরী, সে নিজেকে আড়াল করে রাখত, কঠিন পর্দা করত যেন তাকে কেউ না দেখতে পারে। কারণ সে ছিল এমনই হুর পরী- যে কেউ তাকে দেখলে আকৃষ্ট হয়ে পরত। হাসানও তাকে দেখেনি। তবে তার কণ্ঠ ছিল মধুমাখা, তীব্র সুরাময়, আকর্ষনীয় যা কানে মধুবর্ষণ করত, যে কোন পুরুষকে তীব্র ভাবে আকর্ষণ করত। কিন্তু হাসান নিজের বোন মনে করে এসব গায়ে মাখত না।
বিয়ের মাস ছয়েক পর। ফেরদৌসি তখন এডির বাসায়, বিকালে হাসান দেখা করতে গেল। পূর্ব পাশে পাশাপাশি দু’টি রুম, মাঝখানে দরজা। হাসান উত্তরের রুমে ঢুকতেই সোজা দরজায় দৃষ্টি গেল। দরজার নিকটেই সেলাই মেশিনের সামনে এক হুর বসে আছে, তার চোখ জুড়িয়ে গেল। মেয়ে লোকটি হাসানকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল। বিদ্যুৎ ঝলকের মত এই হাসিটা তার বুকে আমুল বিদ্ধ হয়ে গেল, সে স্তম্ভিত, বিদ্যুৎ পিষ্টের ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল। কিছুক্ষণ পর ফেরদৌসি আসল। হাসানের মনে হল যেন শিশিরস্নাত স্নিগ্ধ চন্দ্রিমাভায় উদ্ভাসিত মাধবি রাতের চোখ ধাধানো আলোকচ্ছটা থেকে সে সহসা আমাবশ্যার ঘোর কৃষ্ণান্ধকারে তাকিয়ে আছে। সে জিজ্ঞেস করল ঐ রুমে কে? ফেরদৌসী মুচকি হেসে বলল, কেন নূরানি আপা। তার মন ধ্বসে পরল স্ত্রীর সাথে আলাপ জমল না।
দু’দিন পর্যন্ত স্ত্রীকে তার ভাল লাগত না। মনে একটা নিষিদ্ধ বুদবুদ উঠতে থাকে, যা সে ভয় পায়, লজ্বা পায়, ঘৃণা করে। মনের পাপ চিন্তাটা শক্ত হাতে দমিয়ে রাখল। কিন্তু তৃতীয় দিন মন বিবেকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসল- পৃথিবীর সকল রাডার উপাত্তে পর্যবেক্ষণ করলে এটাই প্রমাণিত হবে যে, আমিই সর্ব এঙ্গেলে এ পরিবারের শ্রেষ্ঠ জামাই আর পটেটো নিকৃষ্ট জামাই। আবার নূরানি শ্রেষ্ঠ সুন্দরী ও গুণবতী রমণী আর ফেরদৌসি হল যেমনি নাক বুচা, অসুন্দরি, তেমনি বোকা, মুখরা ও বদমেজাজি। অথচ আমার কপালে জুটল এই নিকৃষ্ট বউ আর নূরানির ভাগ্যে জুটল পৃথিবীর এক নিকৃষ্ট স্বামী। পটেটোর চেহারা সুরত ছিল কুৎসিত কদাকার, শিক্ষা বলতে স্থানীয় কলেজ থেকে অনার্স, হত দরিদ্র অশিক্ষিত পরিবারের সন্তান, বংশে শিক্ষার কোন বালাই নাই। আবার মেধাগত দিক থেকেও সে ছিল স্ত্রীর চেয়ে অনেক দুর্বল। অতি বড় রাধুনে ঘর পায় না, অতি বড় সুন্দরী বর পায় না। নূরানীর অবস্থাটাও ছিল তাই।
ফেরদৌসির চেয়ে হাসানের বয়সের ব্যবধান ছিল দশ বছর। এ জন্য সে নাখুশ ছিল , ঘ্যান ঘ্যান করত, ঝগড়া করত। অথচ স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রে এটা দোষনীয় ব্যবধান নয়। ফেরদৌসির অন্যান্য বোন ও স্বামীদের মধ্যে বয়সের ব্যবধান ছিল আকাশ পাতাল। এডির বিয়ের সময় তার চুল দাড়ি সব পেকে গেছে। একদিন হাসানের সামনে সে বউকে বলল- তুমি আমার বয়স নিয়ে ঝগড়া কর অথচ নূরানির জামাই যে বুড়া সেতো ঝগড়া করে না। এস এস সি পাশ করার পরই নূরানির বিয়ে হয় তখন তার বয়স বড় জোর ষোল কি সতের। আর পটেটোর বয়স চল্লিশ পেড়িয়ে গেছে। অনেকেই বলে ইঞ্জিনিয়ার রাগে নূরানিকে অপাত্রে পাত্রস্ত করেছে। এতদসত্ত্বেও নূরানি শুধু রূপ গুনেই শ্রেষ্ঠ ছিল না, সে ছিল এক মহিয়সি নারী। বাপের বয়সি এমন কদাকার স্বামীকে মেনে নিয়ে সে গর্ব করত, স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির প্রশংসা করত। নিজের স্বামীকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য অন্যদের সাথে তর্ক করত। স্বামীর পরিবারকে নিজের পরিবার মনে করত।
নূরানি ফেরদৌসির চেয়ে পাঁচ বছরের বড় অর্থাৎ হাসানের পাঁচ বছরের ছোট। কাজেই বাস্তবতা তো এটাই বলে যে, নূরানি হাসানের বউ হলে এটা হত ইনসাফপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত। বয়স, শিক্ষা, সম্পদ ও সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে এরা হত একটা নয়ন জুড়ানো আদর্শ জুটি যা মানুষের ইর্ষার বিষয় হত, পৃথিবীর বুকে হত একটা আদর্শ দম্পতি। মাত্র কয়েক বছর আগে বিয়ে করলেই নূরানি হত তার শয্যাসঙ্গি, ঘরের বউ, জীবন সাথী কিন্তু আজ নূরানি পেল একটা কুৎসিত স্বামী আর হাসান পেল একটা কুৎসিত বউ। সে গভির দীর্ঘশ্বাস ফেলে- হায় আল্লাহ, এই কি তোমার ইনসাফ। তারপর সে এই কুচিন্তাটা মন থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে চায় আর এগুতে দেয় না। বিষণ্ণ হয়ে বিছানায় পরে থাকে।
মাগরিবের পর স্ত্রী এলে হাসান বলল বরিশালের দুলাভাই এসেছিল। সে হেসে জিজ্ঞেস করল কি আলাপ হল? হাসান বলল- সে এসেই চারদিকে তাকিয়ে বলল বাসাটা এমন নোংরা অগোছালো কেন, ফেরদৌসি কোন কাজ করে না নাকি? অথচ নূরানিটা কত ভাল, সব কিছু গুছিয়ে রাখে, কয়েকটা টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে নেয়। তার শ্বশুর নাকি ঠ্যাং ভেঙ্গে ছয়মাস তার বাসায় ছিল। তখন সে একাই হাগা মোতা সব কিছু পরিস্কার করেছে, স্বামীকে কিছুই করতে দেয়নি। এবার সে ঝাঁঝিয়ে উঠল- এত প্রশংসা কেন শুনি, তার দিকে আপনের লোভ তাই না? এতই যখন লোভ তাকে নিয়ে আসেন গিয়ে তাকে নিয়ে ঘর করেন আমার দরকার নাই। অন্যান্য বোনদের বেলায় এ কথা বললে হাসান নাউযুবিল্লাহ বলে কিন্তু নূরানির ক্ষেত্রে তা বলে না, উচ্চবাচ্য না করে নীরব থাকে। হঠাৎ ফেরদৌসি কথা বন্ধ করে বিস্ফারিত জিজ্ঞাসু চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে- আপনে কোন সময় তাকে দেখেছেন? হাসান পরল ফ্যাসাদে, এখন যদি বলে এডির বাসায় একবার দেখেছিলাম তাহলে মাথাটা চিবিয়ে খাবে। কাজেই সে কৌশল করল- আরে নূরানি আপা যে বাইজেন্টিয়াম মার্কা পর্দা করে তাকে কি কোন পুরুষের পক্ষে দেখা সম্ভব, মানুষ তো দুরের কথা কোন ফেরেশতা বা কোন শয়তানও তাকে দেখতে পারবে না। এবার স্ত্রী আশ্বস্ত হল। কারণ সে জানে নূরানিকে দেখবে আর পাগল হবে না এমন কোন পুরুষ নাই। তবুও স্বামীকে ঘায়েল করার একটা সুযোগ পেল ছাড়বে কেন, শুরু করল- আপনের মত লোচ্চা ছোদা মানুষ আমি আর দেখিনা। বউয়ের বড় বোনের দিকে যারা লোভ করে এরা মানুষ না, লোচ্চা, খাইস্ট্যা ছোদা পুরুষ। এদেরকে ধরে ধরে ......টা কাইট্যা দিলেই উচিত বিচার হবে। শুরু হল তার মন্ত্র পাঠ।
হাসান অধৈর্য হয়ে কখনো বলত- সারাদিন বসে থেকেও সংসারের এই টুকটাক কাজও করতে পার না তাহলে চাকরিজীবী মহিলারা সংসার সামলায় কেমনে। সে ফুসে উঠত- চাকরিজীবী দেখে করলেন না কেন, দেখে করেন নাই, চোখ পাছায় আছিল, যৌতুক লোভি যৌতুকের কথা শুনান। সে বলে- আহ আবার যৌতুক, কি চাল চুলাটা আছে? নিজের হাত থেকে তো দিতে হয়, আবার যৌতুকের কথা কেন। এসব কথা তার শ্লাঘায় লাগত, আগুনের মত জ্বলে উঠত। কখনো সে একটা আরবি প্রবাদ বলত- মান তামায়া কুল্লাহু ফাতা কুল্লাহু (যে সবটাই চায় সে সবটাই হারায়), চেয়েছিলাম সুন্দরী মেধাবী ও কর্মঠ বউ। কিন্তু কি পেয়াম, পেলাম কি জীবনে। - হা আপনি তো যৌতুক লোভি, যৌতুকের জন্য এমন করেন। দেখে করেন নাই, চোখ পাছায় আছিল ইত্যাদি ইত্যাদি চলতে থাকত।
এভাবে হাসানের ঘর সংসার একটা অগ্নিকুন্ডে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু এসব থেকে বাঁচার জন্য সে বাইরে যাবে সে উপায়ও ছিল না, বাইরে যেতে দিত না। বিবেক এবং ইসলামের দৃষ্টিকোন থেকে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ এভাবে কোন মানব জীবন চলতে পারে না আর এ জাতীয় সংসারের সন্তান মানুষ হয় না। গভীর ভাবে হাসান চিন্তা করত ছেড়ে দিবে কিনা, মেয়ের কথা চিন্তা করে লাভ নেই। কারণ অষ্ট প্রহর মা বাবার এমন ঝগড়া দেখলে মেয়ে মানুষ হতে পারবে না।
তাছাড়া ডেলিবারির সময় যেসব শিশুদের মা মারা যায় তারা কি প্রতিপালিত হয় না। তার মা আছে, বোন আছে, ছোট ভাই বৌ আছে তারাই লালন পালন করতে পারবে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? হা সমস্যা হল তার স্ত্রীর বেলায়। তার বাবা নাই যে তার উপর গিয়ে পড়বে। বাবার এমন কোন সম্পদ নাই যে বসে বসে খাবে। আর ভাই একটা যাওবা আছে বোনদের প্রতি ফিরেও তাকায় না। আবার সে যা উপার্জন করে কোন রকম হ্যান্ড টু মাউথ জীবন চলে। আর তার বড় বোন জামাইয়ের শুধু বাসাটাই সম্বল, কোন সম্পদ নাই। এ ছাড়া তার নিজেরই অনেক গুলি সন্তান যাদের ব্যবস্থা করার সামর্থই তার নাই। অন্যান্য ভগ্নিপতিদেরও একই অবস্থা, শুধু চাকরিই সম্বল। কাজেই বোনদের কাছেও আশ্রয়ের আশা নাই। আবার তাকে হয়ত বিয়ে দেয়া যাবে এমন সংসারে যার বউ মারা গেছে বাচ্চা কাচ্চা আছে, আর এমন সংসার করে খাওয়া তার পক্ষে সুদূর পরাহত। কাজেই ছাড়ার কোন উপায়ও নেই, তার হাত থেকে মুক্তির কোন পথও নেই, সে শৃঙ্গখালাবদ্ধ অক্টোপাসের জটা জালে আবদ্ধ।
এ অবস্থায় কখনো স্ত্রীকে বলত- আচ্ছা তুমি কি শেখ সাদির ঘটনা জান। সেখ সাদি তার জীবনের ঘটনাগুলি বুস্তাঁ ও গুলিস্তাঁ নামক কিতাবে লিপিবদ্ধ করে গেছেন। একটা ঘটনা সম্ভবত মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ অনুবাদ করেছেন- যা “শেখ সাদি” নামে খুব সম্ভব এস এস সি তে আগে পাঠ্য ছিল। ঘটনাটা হল, একবার শেখ সাদি ডাকাতদের কবলে পরেছিল। ডাকাতরা তাকে নিয়ে গোলামদের বাজারে তুলে। এক সুহৃদ ব্যক্তি তাকে দেখে চিনতে পেরে কিনে বাড়িতে নিয়ে গেল এবং নিজের কন্যার সাথে বিয়ে দিল। কিন্তু কন্যা রত্নটি ছিল অত্যন্ত মুখরা। তার মুখের জ্বালায় অতিষ্ট হয়ে এক সময় শেখ সাদি তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। দেখ, শেখ সাদি গোলাম হয়েও স্বাধীন মানুষের মত কাজ করে চলে গেল। অথচ আমি গোলাম না হয়েও স্বাধীন মানুষের মত কাজ করতে পারছি না। সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে – মানে? সে বলত মানেটা হল আমি তো আমার শ্বশুরকে দেখিনি এর পরেও কবে, কখন, কিভাবে যে তার গোলাম হয়ে গেলাম। আর সেই সুবাদে এই যে তোমার গোলামি করে চলেছি, করেই চলেছি, এ থেকে বাঁচার পথও নাই, মুক্তির উপায়ও নাই।
এবার সে ঝাঁঝিয়ে উঠে- কি আপনে আমার গোলামী করেন? আর গোলামী করতে হবে না। আমি যেমন এসে ছিলাম তেমন করে দেন। আমার বিয়ের আগের শরীরটা ফিরায়ে দেন, আমি থাকব না চলে যাব। এরপর হাসানের সামনে লাফিয়ে এসে হাত ধরে তার বুকে ধরিয়ে বলে- আমার বুক এমন আছিল, এমন ভাঙ্গা আছিল নাকি, আগের মত খাঁড়া কইর্যা দেন, আমারও থাকার দরকার নাই, আপনেরও গোলামি করার দরকার নাই। যহির যখন এমন করে তখন ইসুবিসু আপাও এ কথাই বলে- আমার শরীর ঠিক কইর্যা দেইন আমি চলে যামু। আসলে ফুলপুরের মানুষই ভালা না, ময়মনসিংহের মানুষই খারাপ। তারপর শুরু হত গালাগালি, এভাবে চলতেই থাকত ঘন্টার পর ঘণ্টা। বেচারা ময়মনসিংহের মানুষেরা হাসানের জন্য ফাও গালি খেত। সে বসে বসে হাসত- যাঃ বাবা বাচা গেল, আমার ধুলাইটা ময়মনসিংহের পাবিলকদের উপর দিয়ে যাচ্ছে। তার মান রক্ষা হল ভেবে নিজেকে সেই বুদ্ধিমান ছেলেটির সাথে তুলনা করত যে বলেছিল- আরে মানির মান আল্লাহই রাখে, দেখলাম বাজানরে ধইর্যা বাজারে জুতা মারতাছে আমি কাছে দিয়াই আসলাম আমারে কেউ কিচ্ছু বলেনি।
বিষয়: সাহিত্য
১৩২২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন