চিঠি- ৩১ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ০৮:৫৭:১৩ সকাল

বাহ্যত যা শক্ত কার্যত তা নরম, বাহ্যত যা নরম কার্যত তা শক্ত । লৌহ একটি কঠিন পদার্থ। অথচ আগুনের মত একটা বায়বীয় জিনিস উহাকে গলিয়ে পানি করে দেয়। কিন্তু পানি সেই সর্বগ্রাসি আগুনের অস্তিত্ব মুছে ফেলে। আবার পানির আকার, আয়তন ও ওজন আছে কিন্তু বাতাসের কোন আকার, আয়তন ও ওজন নাই। এই দুর্বল অদৃশ্য বাতাস যখন মহাসমুদ্রের বুকে উপুর্যপরি আঘাত হানতে থাকে তখন পানির তারস্বরে আর্তনাদ দূর দুরান্ত থেকে শুনা যায়। নারী পুরুষের অবস্থাও ঠিক তাই। বাহ্যত পুরুষকে শক্তিশালী আর নারিকে দুর্বল মনে হয় কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। একজন নারী রাজা-বাদশাহ, সামরনায়ক, গওস- কুতুব, অলি- আউলিয়া যে কারো নাকের ডগায় রশি লাগিয়ে ভাগাড়ে নিক্ষেপ করতে পারে, নিয়ে যেতে পারে জান্নাতে বা জাহান্নামে। কিন্তু একজন পুরুষ নারী যদি সুযোগ করে না দেয়- তাহলে কখনোই তার উপর তসরুপ করতে পারবে না, ধর্ষণ তো দুরের কথা। আবার পরিবারে স্ত্রীর ইচ্ছাগুলিই বাস্তবায়িত হয় স্বামীর সম্মতি না থাকলেও। যেমন সন্তানদের লেখা-পড়া, সংসার চালানো, আত্নীয়তার সম্পর্ক কাদের সাথে রাখা হবে আর কাদের সাথে সাথে রাখা হবে না- ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্ত্রীর মতামত প্রাধান্য পায়, অর্থাৎ সমাজ সংসারে পুরুষের চেয়ে নারীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত। জনৈক জ্ঞানি লোক বলেছিল বিয়ের আগে নারীরা নারী আর পুরুষরা পুরুষ। কিন্তু বিয়ের পর নারী পুরুষ হয়ে যায় আর পুরুষ নারী হয়ে যায়। হাসানের ক্ষেত্রে ঠিক তাই হয়েছিল।

মানব সন্তানের জন্য আল্লাহ্‌র শ্রেষ্ঠ নিয়ামত মাতৃজাতী। এর মধ্যে নগন্য সংখ্যক নারী আছে যারা আল্লাহর গজব। এদের সম্পর্কে যুগে যুগে দেশে দেশে রচিত হয়েছে শিল্প সাহিত্য নাটক সিনেমা। প্রত্যেক ভাষায় এদের সম্পর্কে রচিত হয়েছে বাগধারা উপমা। এদের সাধারণ বৈশিষ্ট থাকে বদমেজাজ ও মুখরাপনা। হাদীসে বলা হয়েছে- এরা বক্র হাড় থেকে সৃষ্টি, এদেরকে সোজা করা যাবে না, তাহলে ভেঙ্গে যাবে। এজন্যই কোন বীরপুরুষ বা মহাপুরুষ বা কাপুরুষ- কারো পক্ষে এদেরকে সোজা করা বা শায়েস্তা করা সম্ভব হয় না। এদেরকে সাইজ করবে খোদার সৃষ্টির মধ্যে এমন না আছে কোন ফেরেশতা আর না আছে কোন শয়তান। আর আল্লাহ্‌ তা’লা এমনি এক নারী হাসানের ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

শিক্ষা ও সমাজ-সংসারের বাস্তব অভিজ্ঞতায় স্ত্রী ছিল তার সামনে একটা কচি খুকি। অথচ এমন একটা অশিক্ষিত, মুর্খ ও আনাড়ি মেয়ে তাকে সর্বদা ঘায়েল করে রাখত, পদানত করে রাখত। তার বদমেজাজ ও মুখরাপনার সামনে যে কোন শক্তিমান পুরুষ বানের মুখে ভেসে যাবে। হাসান তাকে পথে আনার জন্য অনেক উপদেশ, পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করেছে, কিন্তু হিতে আরো বিপরীত হয়েছে। অগত্যা সে “মুখরা রমনি বশিকরন” বইটিও অনেক খোজাখুঁজি করেছে কিন্তু কোথাও পায়নি।

আসলে এদের ধর্মটা ছিল নিজেদের খেয়াল-খুশিমত বানানো একটা মনগড়া পদ্ধতি, যাকে ইসলাম না বলাই ভাল। ইসলামের শুধু পর্দাটুকু ছিল। এ পর্দার কারনেই হউক আর স্বভাবগত হীনমন্যতার কারণেই হউক- ফেরদৌসি বাইরে বের হত না। কোন মহিলার সাথে তার সখ্যতা বা বন্ধুত্ব ছিল না, পাশের বাসার কোন মহিলার সাথে কথা বলত না, বলার চেষ্টাও করত না, সে যোগ্যতাও ছিল না। সবসময় একাকী থাকত, ফলে এমনিতেই মেজাজ খিচড়ে থাকত, যতক্ষণ স্বামী বাসায় না থাকত তার অপেক্ষায় বসে থাকত। হাসান যাওয়ার সাথে সাথে শুরু হত ঝগড়া। যতক্ষণ থাকত ঝগড়ার উপর চলত। ঝগড়া থেকে বাঁচার জন্য যদি সে বাইরে বেরুত বা বাইরে সময় কাটাত- তা নিয়ে আরো ভয়ঙ্কর ঝগড়া হত। মাদরাসা ছাড়া এক মুহুর্তের জন্যও স্বামীকে বাইরে যেতে দিত না। সার্বক্ষনিক বাসায় থাকতে হবে আর ঝগড়া চালিয়ে যেতে হবে। এ বাসায় আসার পর অতিরিক্ত ঝগড়ার কারণে তার বাহ্যিক হুস চেতনা ও অনুভূতি শক্তি লোপ পেয়ে গিয়েছিল। আর তখন সে না ছিল পাগল না ছিল সুস্থ, আর না ছিল মানুষ না ছিল পশু।

ফেরদৌসী যদি বক ধার্মিক না হয়ে উচ্চ শিক্ষিত হত বা বখে যাওয়া মেয়েদের মত মার্কেটে মার্কেটে, নাটক সিনেমায়, ক্লাবে ক্লাবে দৌড়াদৌড়ি করত, তবুও তাকে নিয়ে হয়ত ঘর করা সম্ভব ছিল। কারণ তারা স্বামীর উপর এতটা অত্যাচার করত না, করতে বিবেক সায় দিত না। কিন্তু সে স্বামীর উপর কতটা অত্যাচার করত এর কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যাবে তার কিছু কমন ডায়লগ থেকে- যা সে কোরাস হিসাবে ব্যবহার করত। সে কথায় কথায় বলত- জামাইদের কোনদিন লেম দিতে নাই, লেম দিলেই মাথায় উঠে, এদেরকে যত পায়ের তলায় রাখা যায়। সে নিজেদের ও দুলা ভাইদের প্রশংসা করত আর স্বামীকে হেয় করত। এই আত্মম্ভরিতা ও আত্মশ্লাঘা নিয়েই অধিকাংশ ঝগড়া হত। অথচ এটা ছিল স্বামীর জন্য সহ্যাতিত, তার স্ত্রী তার খেয়ে-পরে দুলা ভাইদের স্বামী (প্রভু) মানবে আর তাকে দুনিয়া শুদ্ধু মানুষের পদানত করে রাখবে। এতদসত্ত্বেও ঝগড়ার ভয়ে স্ত্রীকে কিছু বলত না, চলে যাওয়ার ভয়ে মারত না।

আরেক কোরাস হল- দুনিয়ার জামাইরা বউদের কত কিছু খাওয়ায় আপনে আমারে কি খাওয়ান। অথচ এক কেজি দুধ ও ডিম শুধু তার জন্যই বরাদ্দ ছিল। গৃহস্থালি সামগ্রি সে বাড়ি থেকে নিয়ে আসত, কনফেকশনারি জাতীয় জিনিস ঘরে থাকত। কিন্তু স্ত্রীর অভ্যাস ছিল দোকানের এটা ওটা কিনে আনতে হবে, সে যা বলত তাই কিনে এনে দিত, তবুও তার খাই খাই যেত না।

তার আরেক কোরাস ছিল- সব জামাইরা বউয়ের সব কাজ করে দেয়, আপনে আমারে কি করে দেন? অথচ রান্নার কাজটুকু ব্যাতিত বাকী সকল কাজ সে করত। মেয়ে রাখা, মেয়েকে খাওয়ানো, কয়েল জ্বালানো, মশারী টানানো, হান্ডি-পাতিল ঢেকে রাখা, ট্য়লেট পরিস্কার করা, এমনকি স্ত্রীর গোসলের কাপড় ধুয়ে দেয়াসহ যাবতীয় কাজ হাসান করত। আর জীবনেও স্ত্রী কোন দিন টিউবওয়েল চেপে খাবার পানি আনত না, কারেন্ট চলে গেলে বা বাড়িতে গেলে কোনদিন সে হাত পাখার বাতাস করত না, হাসানকে করতে হত। কখনো সে রাগে স্ত্রীকে কোন কিছু বললে সে চোখ উল্টিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বলত- কি মারবে নাকি? আয় আয়, মার মার। সে তখন থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকত। স্ত্রী নিজেই এগিয়ে এসে স্বামীর হাত ধরে গালে চড় লাগাতে লাগাতে বলত- মার মার।

আরেক কোরাস হল- এই কিপটে ছোদা কামলা রাখতে পারস না। কখনো তাকে কাজের কথা বললে বা ভাত তরকারী বা অন্য কোন খাদ্য দ্রব্যের পাত্র উদোম কেন- বললেই সে সাথে সাথে জ্বলে উঠত- আমারে খাটাতে খুব মজা লাগে, নিজে করতে পারেন না। ফেরদৌসীর চেহারা দুই অবস্থায় দুটি রূপ ধারণ করত। যখন সে আনন্দিত হত- তার চেহারায় খুশির আভা ছড়িয়ে পড়ত। আনন্দের সময় এমন উচ্ছ্বাস অন্য কোন নারীর মধ্যে দেখা যায় না। পক্ষান্তরে সে যখন ঝগড়া করত, দাঁত খিচিয়ে, চোখ পাকিয়ে ও মাথা ঝাকিয়ে তাকে গালি দিত- তখন তার চেহারা এমন কুৎসিত রূপ ধারণ করত যা অন্য কোন নারীর মধ্যে দেখা যায় না।

তার কমন কোরাস হল- আপনের সাথে বিয়ে না হয়ে সোলেমানের সাথে হলেই ভাল হত। সে কথায় কথায় বরিশালি পটেটোর ভাইয়ের কথা বলত- সোলেমান আমাকে পসন্দ করত, তার মা আমাকে ছোট বউ ডাকত। নুরানি আপা কইত- সোলেমান অনেক ভাল চাকরি করবে। তোর বিয়ে হলে তোরা আর আমরা একসাথে বাসা করে একসাথে থাকব। এখন সোলেমান ঘুমাতে পারে না, নুরানি আপারে কল করে বলে একটা ব্যবস্থা করে দিতে। আমার জন্যই এইসব হয়েছে- বলে কখনো কাঁদত আর কখনো ঝগড়া করত।

আরেক কোরাস হল- নাতু ধনি। সে আগে থেকেই স্বামীকে নাতু ধনী বলে হেয় প্রতিপন্ন করত। হাসান নাতু ধনী মানে বুঝত না, পরে জানতে পারল যে, নাতু হল তাদের এলাকার এক লোকের নাম, মধ্যম পর্যায়ের একজন কৃষক। এই বেচারা কায়িক পরিশ্রম করে জমি কিনতে কিনতে অনেক সম্পদের মালিক হয়ে যায়। তার তিনটা ছেলে- একজন প্রফেসর, একজন হাফেজ মাওলানা, আরেকজন বড় চাকরি করে, তার ছেলেরা মানুষ হয়ে গেছে। আর ফেরদৌসীরা হলো ফকির বংশের লোক অথচ তার ভাই মুরগির ব্যবসা করে। তাদের কোন জমি বা ধন- সম্পদ নাই অথচ নাতুর এত সম্পদ, আবার তাদের জমি এই নাতুই কিনে। নাতু হাজী- হজ্ব করে এসেছে অথচ ফেরদৌসীর বাপ- দাদা এবং গোটা পারিবারিক বলয়ে কেউ হাজী নাই। এসব সম্ভবত তারা সহ্য করতে পারত না বিধায় সর্বদা নাতুকে হেয় প্রতিপন্ন করত, ঘৃণা করত।

আর হাসানও যেহেতু জমি কিনে তাই তাকে নাতুর সাথে তুলনা করে বুঝাত জমি কিনা একটা ঘৃণার কাজ। সে সারা জীবন দেখে এসেছে তার বাপের কিঞ্চিৎ সম্পত্তি তার ভাই বোনেরা বেঁচে শেষ করে দিয়েছে। তার কোন ভগ্নি পতির শুধু চাকরিটা ছাড়া আর কোন সম্পদ নেই, এক তোলা ভূসম্পত্তি নেই। এজন্য তার মতে জমি থাকা বা জমি কিনা ভাল নয়, এটা ছোট লোকির প্রমাণ। এ জন্য যারা জমি কিনে সে তাদের সমালোচনা করত। তার ভগ্নিপতি এডির এক ভাই জমি কিনত বলে সে তাকে ঘৃণা করত, তার মতে জমি বিক্রি করে দেয়াই ভাল।

আর সহজ- সরল স্বামীরা সাধারণত মুখরা স্ত্রীদের বশিভুত হয়ে যায় । তখন হাসানও ভাবতে থাকে সম্ভবত জমি কিনা ছোটলোকি ও ঘৃনিত কাজ। তাই কৈফিয়ত হিসাবে স্ত্রীকে বলত- আমার জমি কিনার শানে নুযুল শুন। আব্বার ইন্তিকালের পর আত্মীয় নামের বিচ্ছুরা যখন কামনা করত আমরা ধ্বংস হয়ে যাই তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম প্রতি বছর জমি কিনব। আমাদের যথেষ্ট জমি-যিরাত ছিল, আর এই মাটি সোনা ফলায়। বছর শেষে ধান বেচার অনেক টাকা উদ্বৃত্ত থাকত। আর গ্রামের মানুষেরা কখনো হানিমুনে যায় না, হাওয়াই কলে চড়ে ব্যাংকক সিঙ্গাপুর, লন্ডন যায় না, উদ্বৃত্ত টাকা থাকলে তারা জমিই কিনে। এ জন্যই আমি জমি রাখতাম। আসলে মেয়েটা ছিল মাত্রারিতিক্ত অপব্যয়ী। সে চাইত বাড়ির জমি বিক্রি করে করে এনে ধুম ধাম করে চলতে।

সে বাড়ির জমি বণ্টনের জন্য প্রতিদিন ঝগড়া করত আর স্বামীকে ওয়াদা করানোর চেষ্টা করত। একদিন রাতে খাবার বসে সে স্বামীকে এমন ভাবে চেপে ধরল যে, হাসান ওয়াদা করতে বাধ্য হল- বাড়ির জমি বণ্টন করবে বাড়িতে আলাদা ঘর করবে ও টাউনে বাসা করবে। হাসানও তাই সিদ্ধান্ত নিল, যদিও সংসারের কর্তা ও বড় ভাই হিসাবে এটা করা তার জন্য উচিত নয়। কারণ তখনো তার দ্বিতীয় ভাইটা ব্যতিত বাকী সবাই লেখা পড়ায়। এ অবস্থায় জমি বণ্টন করলে পরিবারে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। তবুও স্ত্রীর অত্যাচারে হাসান এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল। অবশ্য শুধু তার জমিটুকুর জন্য সংসারে আর্থিক কোন সমস্যা দেখা দিবে না। কাজেই সে মানসিক প্রস্তুতি নিল জমিটা বণ্টন করে বাড়িতে একটা ঘর ও টাউনে বাসা করবে।

স্ত্রীর অত্যাচারে অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হাসানও কিছু মন্ত্র আবৃত্তি করত। স্ত্রীর কথার জ্বালায় ধৈর্য্যহারা হয়ে সে যেসব কথা বলত তাতে আন্দাজ পাওয়া যায় সে কতটা নির্যাতিত ছিল। অনেক সময় সে বলত- তুই আমাকে এভাবে জ্বালিয়ে-পোড়িয়ে তিলে তিলে মারছিস, তোর কপালেও নির্মম পরিণতি আসবে। একদিন তোর কান্নায় গাছের পাতা পর্যন্ত ঝরে পরবে, তোর কান্নায় শুধু মানুষ নয়, গাছ-গাছালি, পশুপাখি, পাথর পর্যন্ত কাঁদবে। এ উক্তির শানে নুযূলটাও স্ত্রীকে বুঝিয়ে বলত- যেসব নারীরা স্বামীকে কষ্ট দেয়, বাস্তবে দেখা যায় এদের স্বামী মারা যায়। এরপরেই তাদের কপালে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। আমার চোখে এমন বদমেজাজি ও মুখরা অন্তত দুজন নারীর পরিণতি দেখেছি। আর দুটাই ধার্মিক পরিবার ও প্রেমের বিয়ে ছিল। ময়মনসিংহের এক লোক প্রেম করে এক সুন্দরিকে বিয়ে করল। বিদেশ করল, অনেক অর্থ-বিত্ত কামিয়ে বাসা বাড়ি করে দেশেই থাকত, তাবলীগি পরিবার। তার স্ত্রী সর্বদা শুয়ে শুয়ে তাসবীহ টিপত আর নামায পড়ত। কিন্তু স্বামীকে দিয়ে সংসারের যাবতীয় কাজ করাত। মুত্যুর দিন বেচারা বসে বসে মাছ কাটতেছে, হঠাৎ বুকে শুরু হল ব্যাথা, হাসপাতালে নেয়া হল আর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করল। ছয়টি বাচ্চা নিয়ে এ মহিলা আজো সাগরে ভাসছে।

জামালপুরে একজন ব্যাংক চাকুরে প্রেম করে বিয়ে করল, মিয়া- বিবি দুজনেই জামাত করত, ধার্মিক পরিবার। কিন্তু বউরত্ন সারা দিন শুয়ে থাকত আর স্বামীর সাথে ঝগড়া করত, স্বামীকে দিয়ে সব কাজ করাত। হতভাগ্য বেচারা ব্যাংকে যাওয়ার আগে রান্না বান্না করে নিজে খেয়ে বউকে ডেকে বলত- আমি ব্যাংকে গেলাম তুমি উঠে খেয়ে নাও। এ বেচারার ক্যান্সার হল, মাদ্রাজ নেয়া হল, তারপর দুটি বাচ্চা রেখে মারা গেল। এ মহিলা অবশ্য বহুবার বিয়ে বসার জন্য চেষ্টা করেছে কিন্তু বাচ্চা দুটির কান্না কাটির কারণে আর সম্ভব হয়নি। এই মুখরা নারী আজো সমুদ্রে একাকি ভেসে চলেছে। তোরও তো একই আলামত দেখা যায়, মনে হচ্ছে আমি মারা যাব। তারপর তোর কান্নায় আকাশ যমিন কাঁদবে তবুও তোর কান্না শেষ হবে না। কিন্তু এসব শুনেও এ মেয়েটির মধ্যে বিন্দুমাত্র ভাবান্তর দেখা যেত না। মনে হত যেন স্বামীর মৃত্যুতে তার কিছুই আসে যায় না বরং সে খুশি।

কখনো তার মুখের জ্বালায় অতিষ্ঠ ও অধৈর্য্য হয়ে সেই আয়াতটি বারংবার আবৃত্তি করত যা হযরত ইয়াকুব (আঃ) হারানো পুত্র ইউসুফের কথা স্বরন হলে বলতেন- ইন্নামা আশকু বাচ্ছি ওহুযনি ইলাল্লাহ, ফাসাবরুন জামিল- (আমার দুঃখ যন্ত্রনার অভিযোগ একমাত্র আল্লাহ্‌র কাছে, ধৈর্য্যই উত্তম)। কখনো স্ত্রীর যন্ত্রনায় ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটত, নিজের জীবনের প্রতি ঘৃণা ধরে যেত। তখন অসহায় হয়ে বলত- আরে আমি মানুষ না, জীবনেও কোনদিন মানুষ ছিলাম না। আমি কুকুর, রাস্তার কুকুরও বরং আমার চেয়ে ভাল আছে, ওদেরকে অষ্ট প্রহর আমার মত অশান্তিতে কাটাতে হয় না। আমি গোলাম, সারা জীবন ভাইদের গোলামি করে এসেছি, এখন তোর গোলামি করছি, আমার আমি বলতে কিছু নেই।

কখনো বলত- আমি একটা ফুটবল, একদিকে আমার ভাইয়েরা আরেক দিকে তুই আমাকে নিয়ে খেলছিস। খেলা, ভাল করে খেলা, মেরে ফেল আমায়, আমি মরলেই সকল যন্ত্রনার অবসান হবে আর তোরাও শান্তি পাবে। তখন সে নিজের কথা কিছু না বলে হাসানের ভাইদের নিয়ে পরত। তার ভায়েরা এই খারাব সেই খারাব, সে বউয়ের সাথে বেডাগিরি করে, ভাইদের সাথে পারে না। এই ভাইয়েরাই একদিন সাইজ করবে, উচিত শিক্ষা দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নিজের অন্যায়ের দিকে সে কোন দিন তাকাত না।

কখনো খোশ মেজাজে বলত দেখ, যে সবটাই চায় সে সবটাই হারায়। কোন দিন শ্বশুর বাড়ি থেকে কোন কিছু আশা করিনি। কিন্তু চেয়েছিলাম একটা বউ, শুধু বউ, মনের মত বউ, সে হবে যেমনি সুন্দরি তেমনি মেধাবী, সকল কাজে পারদর্শি, সর্বগুনে গুনান্বিতা। কিন্তু যা পেলাম- মানুষ তো শুধু শীত কালে আগুন তাপায় কিন্তু আমাকে শীত গ্রীষ্ম সারা বছরই আগুন তাপাতে হচ্ছে। আর অমনি সে জ্বলে উঠত- হ্যা, না শুকরে বান্দা খোদারে করে রান্দা। আমার মত বউ কয়জনের ভাগ্যে জুটে। আমারে পাইছেন এইডা খালি আপনের না, আপনের চৌদ্দ গোস্টির ভাগ্যি। আর তখন সে বুঝিয়ে দিত হাসানের মত অযোগ্যের ঘর করে সে তার উপর অনুগ্রহ করছে। আসলে সে ছিল ভয়ঙ্কর ধরণের পুরুষ বিদ্বেষী। তসলিমাকে যা মনে করা হয় আসলে তা নয়, তাসলিমা হল ধর্মদ্রোহি এবং কিছুটা পুরুষ বিদ্বেষী। ফেরদৌসী যদি ধার্মিক পরিবারের মেয়ে না হত তাহলে মেরিলিন মুনরো ও সানি লিউনদের ও অতিক্রম করে যেত।

সে কথায় কথায় বলত- পুরুষ জাতটাই খারাপ, এ জন্যই পুরুষদের আমি দেখতে পারি না। তখন হাসান বুজুর্গদের নামোল্লেখ করে বলত- তারাও তো পুরুষ ছিলেন। তবে মাওঃ মওদুদীর (রঃ) নাম বলত না। কারণ তাবলিগীরা তার প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করে। এমনকি জামাত ও তাবলীগ যে সাপ নেউল সম্পর্ক- এটা সে আগে জানত না। তখন প্রথম জানল যখন ফেরদৌসীর এক চাচাত ভাইয়ের সাথে এক জায়গায় বিয়ে ঠিক হল, তারপর জানা গেল মেয়ের বাবা জামাতের আমীর, সাথে সাথে বিয়ে ভেঙ্গে গেল। এ জন্যই সে তাবলীগের প্রবর্তক ও দেওবন্দি বুজুর্গদের নাম বলত। মাওঃ ইলিয়াস (রঃ), মাওঃ মাদানী (রঃ) আনোয়ার শাহ কাশ্মিরি (রঃ) ও অন্যান্য বুজুর্গদের নাম বলত, তাদের অবদান আলোচনা করত, বুঝিয়ে বলত তারাও তো পুরুষ ছিলেন। তখন এই মুর্খ ও দুর্মুখ নারী তাদের সম্পর্কেও এমন বেয়াদবিপুর্ন কথা বার্তা বলত যে, হাসান অবাক হয়ে যেত। এজন্য দুয়েকবার তাদের আলোচনা করে যখন বুঝল- এ মহান ব্যক্তিদের প্রতিও তার কোন ভক্তি শ্রদ্ধা নাই তখন আর তাদের আলোচনা করত না।

একদিন হাসান বলল- আচ্ছা আমার শ্বশুর তো বোধ হয় খুব খারাপ মানুষ ছিলেন, তাই না? সে চোখ পাকিয়ে- মানে? - না, মানে পুরুষরা যেহেতু সবাই খারাপ তাই শ্বশুর মশাইও তো বোধ করি খারাপ ছিলেন, নাকি তিনি নারী ছিলেন? ব্যস, শুরু হয়ে গেল- আপনের মত অসভ্য জামাই আমি আর দেখি না, এমন জামাই পাইলে মাইনষে আর মেয়ে পালব না, গলা টিইপ্যা মাইর‍্যা নদীতে ভাসাইয়া দিব। রাহেন, বড়াপাকে গিয়া আমি সব কমু, কেমন লায়েকের জামাইডা অইছেন তহন বুঝতে পারবেন ইত্যাদি, চলতে থাকত।

বিষয়: বিবিধ

১২০৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376977
৩১ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:২৭
আবু নাইম লিখেছেন : (সত্য ঘটনা অবলম্বনে) আসেলেই কি সত্যিই..
কোন মন্তব্য করতে আর ভাল লাগে না।
376978
৩১ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১০:৩১
নকীব আরসালান২ লিখেছেন : আগেও বলেছি, এটা সম্পুর্ন সত্য ঘটনা। ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File