চিঠি- ২৭ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১১:০৪:৪১ সকাল
এ বাসায় আসার পর ফেরদৌসীকে আর সুস্থ মানুষ বলে গণ্য করার মত সুযোগ ছিল না। দিন দিন একেবারে পাগল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এমন এক পাগল যাকে না পাগলা গারদে পাঠানো যায় আর না তাকে নিয়ে ঘর করা যায়। ঝগড়ার মাত্রা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিল। আর এসব ঝগড়ার উৎস ও ভিত্তি ছিল- নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব। সে সর্বদা তাদের পরিবার ও দুলা ভাইদের প্রশংসা করত আর স্বামীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত। উদ্দেশ্য, হাসান ও তার পরিবারকে তাদের পদানত করে রাখা, হেয় প্রতিপন্ন করা।
বস্তুত পৃথিবীতে মানুষ চারটি বিষয়ের উপর গর্ব করে বা করতে পারে- শিক্ষা, সম্পদ, ধর্ম ও বংশ বা পৈত্রিক পরিচিতি। আর এ সকল বিষয়ে হাসান ফেরদৌসির অন্যান্য দুলাভাইদের চেয়ে উর্ধ্বাবস্থানে ছিল। কিন্তু সে এসব মেনে নিতে পারত না। মেয়েদের প্রাকৃতিক স্বভাব হচ্ছে স্বামীর মন্দ দিকগুলি গোপন রেখে ভাল দিকগুলি ফুটিয়ে তোলে, গর্ব করে। কিন্তু ফেরদৌসির স্বভাব ছিল স্বামী ও তার পরিবারের ভাল দিকগুলি গোপন করে মন্দ দিকগুলি আলোচনা করত, সেই সাথে দুলা-ভাইদের দুয়েকটা বৈশিষ্ট উল্লেখ করে স্বামীকে তাদের তুলনায় হীন প্রমাণ করতে চাইত। সে সাধারণত ইঞ্জিনিয়ারের প্রশংসাই বেশি করত। কারণ এ লোকটা নিজের হত দরিদ্র ভাই বোনদের দিকে ফিরেও তাকাত না, শালিদের বিয়ে শাদি ও অন্যান্য সকল দায়-দায়িত্ব পালন করত। আর তারাও বাপের বাসার মত ইঞ্জিনিয়ারের বাসায় আনা-গুনা করত।
এজন্যই ফেরদৌসি স্বামীকে খোটা দিয়ে বলত- বড় দুলা ভাই তার ভাই বোন, ভাতিজা, ভাগিনা কারো সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না, প্রশ্রয়ও দেয় না। তাহলে আপনে দুই দিন পর পর লেজ খাড়া করে বাড়িতে দৌড়েন কেন? ভাইদের সাথে কিসের এত মাখামাখি। ভায়েরা একদিন সাইজ করবে। তখন হাসান বলত- ইঞ্জিনিয়ারের পরিবারের পিছনে তার এক পয়সারও অবদান নেই। কিন্তু আমার আব্বা মারা যাওয়ার পর এই আন্ডা-বাচ্চা ভাইগুলিকে আমার ছোট্ট দুটি বাহুতে জড়িয়ে মুরগী যেভাবে তার বাচ্চাকে ডানার নীচে জড়িয়ে রেখে পৃথিবীর ঝঞ্ঝা থেকে নিরাপদ রাখে, আমিও তাদেরকে পিতৃহীনতার কড়ালগ্রাস থেকে আল্লাহর রহমতে বাচিয়ে রেখেছি। পৃথিবীর বিষাক্ত বাতাস তাদের গায়ে লাগতে দেইনি। যত ঝড় ঝঞ্জা বয়ে গেছে আমার পিঠ ও মাথার উপর দিয়ে। এ জন্য আমার ভাইয়েরা খাওয়া, পড়া, শিক্ষা ও পৃথিবীতে চলার পথে কোন দিন ঠাহরও করতে পারেনি যে, তাদের বাবা নেই। আর আমি ঝঞ্জাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে তোমার বুকে আশ্রয় নিয়েছি একটু শান্তির আশায় কিন্তু তুমি শুধু দেখে দেখে আমাকে আইখ্যা ওয়ালা বাঁশ দেও। এই হল আমার ভাগ্য। - হে, আপনে ভাগ্যের কথা কন কেন? আপনের ভাগ্য কি খারাপ নাকি, আমার মত বউ পাইছেন, এইডা আপনের চৌদ্দ গোস্টির ভাগ্য। - হ, তোমার মত দাজ্জাল বউ পাওয়া একটা বড় সর ভাগ্যের ব্যাপার বৈকি। ব্যস শুরু হয়ে যেত ঝগড়া।
সে কখনো বলত, বড় দুলা ভাই বড়াপার প্রত্যেকটা কথা শুনে, একটা কথাও অমান্য করে না, আপনে আমার কোন কথাটা শুনেন। দুলা ভাই কোন কথা বললেও বড়াপা দুয়েকটা ধমক মারে তখন সে দাঁত বাইর কইর্যা হাসে, একটা কথাও বলে না। হাসান বলত, দেখ তোমার দুলা ভাই পূর্বে কারো গোলাম ছিল না, তোমাদের পরিবারে এসে হঠাৎ গোলামি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আমি তো পূর্ব থেকেই আমার মা- বাপের গোলামি করছি, তাদের সংসার ও সন্তান লালন পালনে আমার জীবন যৌবন ক্ষয় করে দিয়েছি। এখন একটা গোলামি ছেড়ে আরেকটা গোলামিতে আসতে তো একটু সময় লাগবেই। কিছুটা সময় দেও দেখবা, তোমার বড় দুলা ভাই আর কত বড় গোলাম, আমি হয়ে যাব এক্কেবারে সাফ কাওলার গোলাম। -হে, আপনে ভাইদের পিছে ব্যাবাক শক্তি ক্ষয় কইর্যা আইছেন আমার কাছে, হেল্লাইগ্যাই আমারে কোন কাজ কইর্যা দেন না, আমারে খাটান। - তোমারে কি খাটাইলাম। দুই জন মানুষের সংসারের কাজ করাটা খাটুনি হয়ে গেল। শুরু হত ঝগড়া।
কখনো বলত, বড় দুলা ভাইয়ের দাপটে সবাই কাপে। অফিসের সবাইকে আঙ্গুলের ডগায় খাড়া করে নাচায়। আপনে কি পারেন, ও ঘরের বউয়ের সাথে খুব পারেন। হাসান বলত- হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আমি দশ বছর রাসূল (সাঃ) এর খেদমত করেছি কিন্তু কোন দিন তিনি বলেন নি, এই কাজটা কেন করলে বা এই কাজটা কেন করলে না। আবার দেখ তোমার দুলা ভাই শিক্ষা ও সম্পদে এমন কেউ নয় যে, মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করবে, এ জন্য সে রুক্ষ ব্যবহার করে মানুষকে পদানত করে রাখে, শ্রদ্ধা পাওয়ার চেষ্টা করে। অথচ অভদ্র আচরণ করা একটা কুৎসিত স্বভাব। পক্ষান্তরে ছোট বেলা থেকেই আমি ছিলাম একটা ধনী সংসারে কর্তা, একজন বিখ্যাত বাবার ছেলে, একজন ভাল ছাত্র, বর্তমানে একজন ভাল শিক্ষক হিসাবে সবাই স্বীকৃতি দেয়- এটা তুমিও জান। লোকেরা বলে- যোগ্য বাবার যোগ্য ছেলে। কাজেই সবাই তো আমাকে এমনিতেই মানে, ঘাড়ে কিলিয়ে কারো সম্মান আদায় করতে হয় না। তাছাড়া কাউকে পদানত করার মত চরিত্র ও মানসিকতা আমার নাই। আবার তোমার গোলামি করছি অথচ বলছ তোমার সাথে খুব পারি। কী পারি একটু দেখাও দেখিনি। শুরু হত ঝগড়া।
একদিন মাদরাসার পিয়ন কোন দরকারে বাসায় এল। হাসান তাকে চারটে চানাচুর নিয়ে দিল। কিন্তু সে হাসানকে ছাড়া একা খাবে না, অগত্যা তার সাথে সেও খেল। কিন্তু সর্বনাশ করল। সে ছোট লোক, আত্মসম্মান বুঝে না, একটা পিয়নের সাথে বসে কি করে খেল। তার বড় দুলা ভাই কোন দিন এসব ছোট লোকদের সাথে বসে খায় না। সে বলল, রাসূল (সাঃ) কে কোন দিন কামলা- আমলা এবং ছোটলোক- বড়লোক তফাৎ করতে শুনেছ। কিন্তু হাদীস কোরানের কোন কথা বললে সে শুনত না বরং উপহাস করত। তখন বিষয়টা দিয়ে স্বামীকে ছোট প্রমাণ করার মওকা পাওয়া গেল, পদানত করার সুযোগ পাওয়া পেল, হাত ছাড়া করবে কেন? শুরু হয় ঝগড়া।
ফেরদৌসী সাধারনতঃ তার বোনদের শ্বশুর পরিবারের কারো প্রশংসা করত না। কিন্তু স্বামীকে হেয় করার জন্য দুয়েকটা উদাহরণ দিত। একদিন বলল, তার বড় দুলাভাইয়ের বাপ খুব দাপটি ছিল। ফজরের নামাযের সালাম ফিরিয়েই যদি চায়ের কাপ তৈরি না পেত এমনি উঠে বউ পিটানো শুরু করত। তারপর বিজয়ির মত মুচকি হেসে হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল- আপনের বাপ? উলেখ্য যে, তার এতটাই আত্মশ্লাঘা ছিল যে, স্বামীর বাবাকে সে কোন দিন আব্বা তো দুরের কথা শ্বশুর বা এ জাতীয় সম্মানসুচক কোন সম্ভোধন করত না বরং আপনের বাপ বলে সম্ভোধন করত। অথচ বহুদিন হাসান তাকে বলেছে দেখ, আমরা কেউ শ্বশুর পাইনি, কাজেই আব্বা বলার দরকার নাই। কিন্তু তোমার বাবাকে আমি যেভাবে শ্বশুর মশাই বলে ডাকি, তুমিও আমার আব্বাকে অন্তত শ্বশুর মশাই ডেক। এভাবে আপনের বাপ বললে আমি কষ্ট পাই। কিন্তু এতেও তার আত্মসম্মানে ঘা লাগত। বাবার সন্তানের স্ত্রী হবে, তার খাবে, পরবে অথচ বাবাকে স্বীকৃতি দিবে না। এসব বিষয় হাসানের সহ্যের অতীত হয়ে উঠত, খুব কষ্ট পেত।
তখন সে উত্তর দিল, আরে না না, আমার বাপের কোন দাপটই ছিল না। আমি আব্বাকে দেখেছি, আম্মাকে অনেক কাজ কর্ম করে দিয়েছেন। বিশেষত আমরা তো বাপের কোলে পিঠেই মানুষ হয়েছি। আর সারা জীবনে একদিন দেখেছি আম্মাকে একটা চড় দিতে। এর কারণ ছিল, আব্বা অবাধে ধান, চাউল, টাকা পয়সা দরিদ্র লোকদের দিতেন। এমনকি আম্মার ভয়ে বাজার থেকে চাউল কিনে গোপনে গ্রামের দরিদ্র লোকদের দিতেন। আম্মার গোয়েন্দা ছিলাম আমি। এসব দেখে দেখে আম্মাকে বলতাম। আর তখন ভীষণ ঝগড়া হত। আর এ ঝগড়ার জের ধরেই একদিন রাগে চড় মেরেছিলেন। তারপর হাসান বলল, বাপ গুনে বেটা, আচ্ছা ইঞ্জিনিয়ারও তো বোধ হয় দাপুটে, মানে বউ পিটায় তাই না? সে উপহাসের হাসি হেসে বলল, তাহলে ওর উপায় আছে? এবার হাসান বলল, আমার শ্বশুরও তো বেশ দাপুটে ছিলেন, তাই না? ফেরদৌসী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, মানে? হাসান বলল, না মানে, তোমার কথায় বুঝা গেল বউ পিটালে দাপুটি হওয়া যায়। তাই শ্বশুর মশাই তো আর আমার মত কাপুরুষ ছিলেন না, অবশ্যই দাপুটে ছিলেন। কাজেই আম্মাকে মাঝে মধ্যে ...। ব্যস, অগ্নি ঝড় শুরু হয়ে গেল। বেয়াদব জামাই, হারামজাদা জামাই, শ্বশুর শাশুড়ি সম্পর্কে কি ভাবে কথা বলতে হয় জানে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এদিন মাফ চেয়ে তাকে রক্ষে পেতে হয়েছিল।
সে কারো প্রশংসা না করত না বটে কিন্তু তার বোনদের শাশুড়িদের দোষ খুটে খুটে বের করত। একদিন বলল, বড়াপার শাশুড়ি তার সাথেই থাকত। তখন তার মেয়ের জামাই টাকা পয়সার জন্য ঘন ঘন আসত। আর এই মহিলা দুলা ভাইয়ের সংসার থেকে জামাইকে টাকা দিত। আর পাতিলে যা ভাত থাকত জামাইকে বেড়ে দিত এবং বড়াপাকে বলত বউ তুমি চারটে রেধে খেয়ে ফেল। আর তখন লাগত। - এই বাদ দাও তো, মুরুব্বী মানুষের সমালোচনা আমার ভাল লাগে না- বলে হাসান স্ত্রীর মুখ বন্ধ করে দিত এই ভয়ে, যদি বলে বসে যে বড়াপা তার শাশুড়িকে মারত। সে আরো বলত- এই মহিলা কোন পিঠা চিড়া বানাতে পারত না, শুধু গোটা পিঠা বানাত যা বড়াপার পোলাপান পসন্দ করত না, ধরে ধরে ঢেল মারত আর বলত কুত্তা ঢেলাইন্যা পিঠা অথচ আম্মার পিঠা সবাই পসন্দ করে ও মজা করে খায়। আরো অন্যান্য কারণে এই মহিলাকে কেউ দেখতে পারত না। হাসান আবার স্ত্রীর মুখ বন্ধ করে দিত কারণ এভাবে বলতে বলতে একদিন নিজের শাশুড়িকে নিয়ে সমালোচনা শুরু করবে।
একদিন বলল, বড়াপা শ্বশুর বাড়িতে থাকত। বহুদিন পর জমি বিক্রি করে বাসা করে তারপর বাসায় উঠেছে। হাসান বলল, নিশ্চয়ই তখন সে একটা দরিদ্র পরিবারে একটা পর্ণ কুটিরে কষ্ট করে থাকত। আর তুমি সংসারের কাজটা পর্যন্ত করতে চাও না। শুরু হত ঝগড়া। অধিকাংশ ঝগড়া হত, বড়াপা ও বড় দুলা ভাই কেন্দ্রিক। তাদের বিয়ের সময় দুলা ভাইয়ের বড় ভাই ও ভগ্নিপতি রাজি ছিল না, তারা বলেছিল আরেকটা বিয়ে করাবে, এজন্য পরবর্তিতে কিভাবে বদলা নিয়েছিল- নিত্যদিন এসব বিষয় আলোচনা হত আর ঝগড়া হত। কিন্তু এসব ঝগড়ার পরিণতি হত, হাসান ভয়ে সাধারণত কথা বলত না, কিন্তু সে ঝাঁঝালো কথা দ্বারা স্বামীকে হেনস্থা করত, আর তাকে পদানত করার খুশিতে চেহারায় একটা হিংস্র আনন্দ ফুটে উঠত। কিন্তু কোনদিন হাসান রাগে তাদের দারিদ্রতা ও দুলাভাইদের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে দুয়েকটা সত্য কথা বলে ফেললে তখন সে অপারগ হয়ে কাঁদত। মনে হত যেন কোন অধিনস্থ ব্যক্তি পদস্থকে অপমান করল। আর তখন সে সর্ব শান্তের মত কাঁদত আর বলত আমি পাগল হয়ে যাব। পাগল হয়ে ফুফুর মত দেশে দেশে ঘুরব। তখন হাসান অসহায় বোধ করত, ভাবত সত্যি পাগল হয়ে যায় কিনা। অগত্যা তার কাছে মাফ চেয়ে, আদর সোহাগ করে শান্ত করতে হত। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় যখন চিন্তা করত আমার স্ত্রী, আমার খায়, আমার পরে অথচ প্রশংসা করে অন্যের, আমাকে তার ও তার দুলা ভাইদের পদানত করে রাখতে চায়- তখন তা বেচারার জন্য সহ্যাতিত হয়ে উঠত।
ফেরদৌসির দ্বিতীয় দুলাভাইয়ের বাড়ি জামালপুর। মধ্যাকৃতি, সুন্দর, সুদর্শন, কাচা পাকা দাড়ি, পাঁচ কলি টুপি, গোল পাঞ্জাবি কট্টর তাবলিগী মানুষ। কথা বলে টেনে টেনে, অস্পষ্ট, ভাল করে খেয়াল না করলে বুঝা যায় না। সে বি, এ পাশ ছিল। বিয়ের পর শ্বশুর মশাই ছোট খাট একটা চাকরির ব্যবস্থা করে তাকে সেই সুদূর খুলনায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। ফেরদৌসী এ ব্যক্তির উচ্ছসিত প্রশংসা করত। কারণ এ লোক নাকি বউয়ের কষ্ট হবে ভেবে ছোট মাছ কিনত না, সাধারণত সে নাকি বউয়ের সব কাজ করে দিত। এমনকি মাছ কাটত, তরকারী কুটত, তারপর রান্না করে ভাত তরকারি বেড়ে টেবিলের উপর রেখে বউকে ডেকে বলত, উঠ ভাত খেয়ে নাও, আমি অফিসে গেলাম অর্থাৎ তার বউ সব সময় শুয়ে থাকত আর স্বামী ঘর কন্যার যাবতীয় কাজ করত। তারপর হাসানকে বলত- আপনে আমারে কি কাজ করে দেন, অন্যেরা বউয়ের সব কাজ করে দেয়। হাসান বলত, রান্নাটা ছাড়া বাকী কাজ তো আমিই করি। সে বলত কয়দিন আমারে মাছ কোটে, তরকারি কেটে রান্না করে দিছেন। আপনে খালি আমারে খাটাতে চান। আমি কাজ করে মরে গেলেই আপনে খুশি। শুরু হত ঝগড়া।
তার মেজ বোন সম্পর্কে বলত ঐ মহিলা নাকি দেখতে ঠিক তারই মত নাক বুছা, লম্বা, এমনকি স্বামীর চেয়েও লম্বা। তবে পার্থক্য হল- ঐ মহিলা নাকি কালো আর সে কিছুটা ফর্সা। বোনের কিছু গুনের কথা বলত- বিয়ের পরদিনই এ মহিলা কাজের মেয়ে চেয়েছিল, সে কোন কাজ করবে না। তখন তার ভাসুর বলেছিল- বউ থাকতে আবার কাজের মেয়ে লাগে কেন। এই মহিলা তখন ভাসুরের মুখে মুখে উত্তর দিয়ে দিয়েছিল- তাহলে কাজের মেয়ে থাকলে আবার বউ লাগে কেন? বাচ্চার জন্য তারা আধা কেজি করে দুধ আনত। একদিন শ্বাশুড়ি তার স্বামীর পাতে একটু দুধ দেয়ার কারণে শ্বাশুড়িকে ধরে বসল- এত দুধ খেতে মন চায় তো এক কেজি করে আনতে পারে না। এ মহিলাও ছিল রুক্ষভাষী ও বদমেজাজি, কাউকে কথা ছাড়ত না। আর ফেরদৌসী ছিল এ মহিলারই কার্বন-কপি। তবে তার বোকামি, বদমেজাজ ও মুখরাপনার তুলনা ছিল না।
বিষয়: সাহিত্য
১২২৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন