চিঠি-২১ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৪৮:২৫ দুপুর

রান্না বান্না ও মেয়ের হাগা মুতার কাপড় ধোয়া এ দু’টি কাজ হাসান পারত না বিধায় তার স্ত্রী করত। এই না পারার কারণ হল সে ছিল একটা সংসারের কর্তা, এসব কাজ করার প্রশ্নই উঠে না। তার বোনেরা ছিল, কাজের মহিলারা ছিল তারাই করত। তদুপরি কেউ না থাকলেও গ্রামের পুরুষরা এসব কাজ করে না, চাচী ভাবীরা বা আশপাশের কেউ করে দেয়। কাজেই এ দু’টি কাজ ছাড়া বাসার বাকী সকল কাজ হাসান করত। একে তো দু’জন মানুষের সংসার, তার উপর শহুরে জীবন- সংসারে কাজ কর্ম খুব বেশি থাকে না। কয়েল জ্বালানো, মশারী টাঙ্গানো, কাপড় চোপড় ধোয়া, টিউবওয়েল চেপে খাবার পানি আনা, এমনকি স্ত্রীর গোসলের কাপড় ধোয়া ইত্যাদি যাবতীয় কাজ এককভাবে সে করত।

এরপরেও স্ত্রী অষ্ট প্রহর ঝগড়া করত- সব জামাইরা বউয়ের কাজ করে দেয় আপনে আমারে কি করে দেন। আর হাসান যদি বলত- মেয়েটাকে কোলে নাও বা হাগা মুতা সাফ কর, তখন খেকিয়ে উঠত- এই কিপটে চোদা কামলা রাখতে পারস না, আমারে খাটাতে চাস, আমার সুখ দেখতে পারস না, আমার কষ্ট দেখেলি তুই খুশি, ব্যস তাকে একেবারে তুলো ধুনো করে ছারত। কাজের মেয়ের জন্য তাকে অতিষ্ট করে তুলল বললে ভুল হবে, যথার্থ অর্থে তার মাথায় হাতুরি পেটাতে শুরু করল। কিন্তু কাজের লোকেরা সাধারণত চলে যায় ঢাকা চট্টগ্রাম। এসব মফস্বল শহরে ছোট লোক বড়লোক সবাই নিজেদের কাজ নিজেরাই করে, কাজের মেয়ের জন্য কেউ লালায়িত হয়ে বসে থাকে না। এমনকি চাকরিজীবী মহিলারাও রান্না-বান্না ও সংসারের টুকটাক কাজ নিজেরাই করে। তদুপরি পূর্ণ বেতন দিয়ে কোন মহিলা রাখার মত সামর্থও হাসানের ছিল না। এ মানের চাকরি জীবীরা সাধারণত কাজের মেয়ে রাখে না।

কিন্তু সে তো হল সম্রাট আকবরের জামাই, এমন জামাই- যে শ্বশুর পরিবারের পিছনে দু’পয়সা খরচ ব্যতীত দু’পয়সা পাওয়ার অবস্থাও ছিল না, আশাও ছিল না, চাহিদাও ছিল না। আর তার বউ হল আকবরের জ্যষ্ট কন্যা, দাসিবাদি ছাড়া তার কেমনে চলবে? কাজেই কাজের মেয়ের জন্য অনেক দিন ধরে অত্যাচার করছে। কিন্তু এবার সাফ সাফ জানিয়ে দিল- কাজের লোক ছাড়া সে রান্না- বান্নাও করবে না, মেয়েকেও রাখতে পারবে না। যদিও তার বোনদের বিশাল বিশাল পরিবার হওয়া সত্ত্বেও কারো বাসায় কাজের মেয়ে নেই।

হাসান অনেক দিন ধরেই কাজের মেয়ে খুঁজছে কিন্তু এবার জরুরি ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করল। তার বোন- ভগ্নিপতিদের কাছে জরুরি তলব জানিয়ে দিল। কোথাও কাউকে পাওয়া গেল না, অবশেষে ছুটল বাড়িতে। কিন্তু কাউকে পেল না, সবাই ঢাকা চিটাগাং, সেখানে ভাল বেতন পায়, মুক্ত-স্বাধীন চলতে পারে বিধায় বাসা বাড়ির কাজে কেউ রাজি না। অবশেষে তাদের পশ্চিম পাড়ায় জালালুদ্দিন নামে একজন প্রান্তিক কৃষক দু’টি মেয়ে রেখে মারা যায়। হাসান কয়েক জন লোক ধরে তার জ্যাঠার কাছে বলে পাঠাল- ছোট মেয়েটিকে সে দত্তক নিতে চায়, সেই লালন পালন করবে, লেখা পড়া শিখিয়ে নিজ দায়িত্বে বিয়ে শাদি দিবে। সেই সাথে মেয়ের মাকেও কিছু হেল্প করবে। কাজ বলতে শুধু তার বাচ্চা মুনিরাকে একটু দেখা শুনা করবে। কিন্তু মেয়েটির জ্যাঠা অস্বীকৃতি জানিয়ে বলল- যা করার সে নিজেই করবে, অন্যের বাসায় কাজে দিবে না। আসলে আগে তারা স্বচ্ছল ছিল বিধায় কাজে দিতে আত্মসম্ভ্রমে বাধল। অগত্যা খালি হাতে ফিরে আসতে হল। অবশেষে অনেক খোজা খোজি করে ফেরদৌসীদের এলাকায় একটা মেয়ের সন্ধান পাওয়া গেল, দু’জনেই গেল মেয়েটিকে আনতে।

হাসান মেয়ের মা- বাবাকে বলল- আপনাদের মেয়েকে আমরাই লেখা-পড়া শিখিয়ে বিয়ে- শাদী দিব। এখন তার কোন কাজ নাই, শুধু আমার মেয়েটার সাথে খেলা- ধুলা করবে। তারপর বড় হলে সে যতটুকু পারে করবে। আসলে এটা ছিল একটা বিলাই বাচ্চা, পাঁচ ছয় বছরের শিশু কি করে কাজের মেয়ে হতে পারে। মেয়েটা বাসায় এসেই কান্না জুড়ে দিল, হাসান দোকান থেকে লজেন্স, চানাচুর, বিস্কুট ইত্যাদি কিনে এনে এনে তার কান্না থামায়। মেয়েটাকে স্বামী- স্ত্রী দু’জনেই খুব আদর করত। ওদিকে তার বাবা মিস কল দেয়, হাসান কল ব্যাক করে জানায়- সব ঠিক আছে, কোন চিন্তা করবেন না, সমস্যা নাই। আসলে তার ধারনা, কয়েক দিন তাদের সাথে থেকে এডজাস্ট হয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, আর কাঁদবে না। স্ত্রীকে বলে দিল- এত ছোট মেয়ে, ওকে দিয়ে কোন কাজ করাবে না, বড় হলে এমনিতেই করবে।

মেয়েটা হাসানকে ফুফা বলে ডাকত। এতটুকুন মেয়ে, তার খুব মায়া হত, প্রাণ ভরে আদর করত, ফেরদৌসীও খুব আদর করত। একদিন সকালে সে নিম্নমানের হালকা একটা তরকারী দিয়ে খেল। রান্না ঘর ছিল বেড রুমের সাথে, বের হবার সময় সে দিকে দৃষ্টি গেলে মনে হল যেন তার স্ত্রী চমকে উঠেছে। দেখল সে সামনে বসে মেয়েটাকে খাওয়াচ্ছে, পাতে যথেষ্ট বড় একটা মাছের টুকরা। সে বুঝল গত রাতের তরকারী, তাকে না দিয়ে মেয়েটাকে দেয়ার কারণে চমকে উঠেছে। হায়! মূর্খ নিজের স্বামীকে চিনে না, সে ছিল দানশীল পরিবারের সন্তান, নিজেদের অভাব- অনটনেও অন্যদের দান করতে তারা অভ্যস্ত। এ দৃশ্যটায় হাসান এতই আনন্দিত হয়েছিল যে, তাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, জীবনে স্ত্রীর কোন কাজটি তোমার পসন্দনীয়। সে বিনা হিসাবে বলে দিবে, এই একটি মাত্র কাজ- যেখানে অন্যের মেয়েকে মায়ের মত সামনে বসে খাইয়েছে। সবাই যদি এমন হত তাহলে পৃথিবীতে নিঃস্ব দুর্বলের হাহাকার থাকত না। কিন্তু মেয়েটির কান্নার গতিবেগ বেড়েই যাচ্ছিল। হাসান তার বাবাকে কল করে বলল, ওকে নিয়ে যান। সে এসে নিয়ে গেল, কিন্তু ততদিনে মেয়েটা যথেষ্ট মায়ায় ফেলে দিয়েছিল। যাবার সময় তার খুব কষ্ট লাগছিল। মেয়েটির ফুফা ডাকটা বারবার তাকে চমকে দিচ্ছিল, মনে হচ্ছিল কেউ তার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে।

কওমী মাদরাসার মেধাবি ও সচেতন ছাত্ররা আলিয়া মাদরাসায় পরীক্ষা দেয়, এদের কেউ কেউ ভার্সিটি পর্যন্ত গড়ায়। এরা যেহেতু আরবীতে পাকা থাকে পরবর্তিতে আলিয়া মাদরাসায় ঢুকে তারাই ভাল শিক্ষক হিসাবে স্বীকৃতি পায়। তারাই সেখানে মুহাদ্দিস, অধ্যক্ষ ইত্যাদি ভাল ভাল পদগুলি দখল করে নেয়। এটাই সারা বাংলাদেশের কমন দৃশ্য। হাসানের পঞ্চম ভাই হাফেজ মোবারক কওমী মাদরাসায় পড়ে। হাসান তাকে দাখিলে ভর্তি করে দিল। কিন্তু কওমী মাদরাসার গোড়ামি হিসাবে সে বলল, আলিয়া মাদরাসায় পড়া হারাম, ওরা কোরআন হাদীস নকল করে পরীক্ষা দেয়, ওখানে পরীক্ষা দিয়ে কাফের হয়ে যাব নাকি। কিন্তু শীঘ্রই যখন বুঝল দান খ্য়রাত আর চাদা তুলে জীবনের দীর্ঘ বেলাভুমি পারি দেয়া কষ্টকর, তখন পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য বই পুস্তক নিয়ে সুর সুর করে ভাইয়ের বাসায় এসে উপস্থিত হল। সাধারণত চাল, আতপ চাল, মাছ, দুধ, ঘি ছানা ইত্যাদি গৃহস্থালি জিনিস হাসানের কিনতে হত না। বাড়ি থেকে নিয়ে আসত বা বাড়ি থেকে কেউ এলে মা এগুলি দিয়ে দিতেন, এবার মোবারকের কাছে দিয়ে দিলেন।

অক্টোবর মাসে মোবারক এল, কিছু দিন থাকবে। কিন্তু এবার বেচারা হাসান প্রমাদ গুনল। কারণ তার যে দাজ্জাল বউ এ সংবাদ যদি বাড়িতে পৌঁছে যায় তাহলে আর মুখ দেখানোর জো থাকবে না। নিজের বউয়ের বদনাম তো হবেই সেই সাথে সেও ছাড় পাবে না। কারণ এতদিনে সে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় স্ত্রৈণ হয়ে গেছে আর এটাকে গ্রাম বাংলায় বলে বউয়ের তউল্যা অর্থাৎ বউয়ের অধিনস্ত, পদানত। আর এ জাতীয় মানুষ গ্রামাঞ্চলে ঘৃণার পাত্র। তাছাড়া ভাইয়েরা সব তার ছোট, ভাসুররা ছোট ভ্রাতৃ বধুকে আদর করে, সম্মান করে কিন্তু দেবররা খোচা- খুচি করে, জ্বালাতন করে। কাজেই হাসানের বউয়ের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র- যদি বাড়িতে জানতে পারে তাহলে যেমনি বউয়ের কপালে লাঞ্চনা আছে, তেমনি হাসানের কপালেও দুঃখ আছে।

কাজেই বউ রত্নকে বলল, দেখ বাপু, ঝগড়া করার জন্য সারা জীবন যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে। এখন ছেলেটা যে কয়দিন থাকে এ কয়টা দিন আমরা ঝগড়া করব না। তুমিও ধৈর্য্য ধারণ করবে আমিও ধৈর্য্য ধারণ করব। তারপর সে চলে গেলে ঢাক ঢোল পিটিয়ে রাত দিন ঝগড়া করা যাবে। নচেৎ আমার চেয়ে তোমারই বদনাম বেশি হবে, বাড়িতে গিয়ে আর কোন দিন মুখ দেখাতে পারবে না। আর পড়ার বিষয়ে বলল, তোমার এস, এস, সি ও দাখিলের একই গণিত বই। তুমি অংকটা দেখিয়ে দিও, আমি বাংলা, ইংরেজি ও আরবীটা দেখাবনে খন। সে সাধারণত স্বামীর কোন কথা শুনেও না, মানেও না। কারণ সে মনে করে এটা করলে স্বামীর সামনে ছোট হয়ে যাবে। কিন্তু আলামতে বুঝা গেল এ উপদেশটা সে মেনে নিয়েছে, যদিও মুখে কিছু বলল না। দু’দিন ভালই কাটল।

তৃতীয় দিন সকালে হাসান শুয়ে আছে, তখন ঢেঁকিতে চিড়া কোটার মত ধুপ ধুপ কয়েকটা শব্দ পেল, সেই সাথে মেয়ের বিকট চিৎকার। সে বুঝল মেয়েটাকে গায়ের জোরে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছে। তারপর এক হাতে ধরে ব্যাগের মত ঝুলিয়ে এনে থ্যাকনা মেরে খাটের উপর রেখে চলে গেল অর্থাৎ মেয়ে রাখার দায়িত্ব স্বামীর উপর চাপিয়ে দিল। হাসান মেয়েকে কোলে নিয়ে বলল, এটুকু মেয়েকে কেউ এভাবে মারে? সে ঝংকার দিয়ে উঠল, মারব না তো আদর করব, পানি ফেলে ঘরটাকে কি করেছে। - মেয়ে পানি ফেলে তুমি কোথায় থাক? - আমি কোথায় থাকি চক্ষে দেখে না, আমি মেয়েও রাখব, রাধবও আর উনি শুয়ে শুয়ে খাবেন। সব ঝামেলা আমার, একটা কামলা রাখার মুরোদ পায় না। মোবারক শুনবে ভয়ে হাসান নিম্ন স্বরে বলল- আর কত কামলা কামলা কর, সারা দেশ খুজে একটাকে তো আনলা, দেখলা তো? রান্নাটা ছাড়া বাকী সব কাজ তো আমিই করি তোমার কাপড়টা পর্যন্ত ধুয়ে দেই, আর কি চাও। আমি চাকরিও করব, বাসার সব কাজও করব, তাহলে রান্নাটা আর বাকী থাকবে কেন, এটাও আমিই করব তুমিই বসে বসে খাও।

এ কথা বলতেই সে চট করে উঠে এসে চেয়ারে বসে পড়ল। তারপর মাথা ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে- যা, যা না, রাঁধ গিয়ে। তখন তার রাগ উঠে গেছে, এই এক রান্নার জন্য আর কত ঝগড়া, সিদ্ধান্ত নিল রান্না বান্না সেই করবে। মোবারক মাদরাসার বোর্ডিংয়ে থাকে, মাঝে- মধ্যে রান্না করে খায়। তার কাছে থেকে শিখে এখন থেকে সেই রাধবে, ঝগড়ার নিকুচি করবে। মোবারককে ডাক দিয়ে বলল- আমাকে একটু রান্নাটা দেখিয়ে দিয়ে যা। কিন্তু সর্বনাশ করে ফেলল। মোবারককে ডাকল কেন, চট করে উঠে রাগে কি করবে না করবে দিশা না পেয়ে জর্দার কৌটা খুলে ভরা কৌটা মুখে ঢেলে দিল। হাসান লাফিয়ে উঠে গিয়ে তার মুখে ধরে- ফেলে দাও, ফেলে দাও। ঔষধ তার জানাই ছিল- মাফ চাই, মাফ চাই বলতে বলতে আর্তনাদ করতে লাগল। কিন্তু সে মুখ খুলে না, ঝামটি কেটে আছে। হট্টগোল শুনে মোবারক দৌড়ে এল। যদিও সে ছোট কিন্তু ফেরদৌসী তার সামনে যায় না অর্থাৎ পর্দা করে, ধর্ম রক্ষা করে। কিন্তু এদিকে যে স্বামীর সব পর্দা ফাটিয়ে দিচ্ছে- তখন ধর্ম রক্ষার প্রয়োজন পরে না। হাসান বলল তুই এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়। হাসানের জানা ছিল সহজে সে হার মানবে না। তাই মোবারক পানি আনতে গেলে এই সুযোগে একান্ত অসহায় হয়ে এই প্রথম স্ত্রীর পায়ে হাত রেখে বলল- আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে মাফ করে দাও, মান ইজ্জতটা বাচাও। তার কণ্ঠে কান্না ঝড়ে পরল। সে স্বামীর মুখের দিকে তাকাল, হাসানের করুণ অবস্থা দেখে সম্ভবত তার মায়া হল, তার উপর পায়েও ধরা হল। কাজেই সে মুখ খুলল। মোবারক পানি নিয়ে এলে বলল ঠিক হয়ে গেছে, তুই যা। সে জর্দা ফেলে কুলি করে আবার রাধতে গেল।

ফেরদৌসীর অভ্যাস ছিল, পাতিলে আগের ভাত থাকলে তাতে নতুন চাল দিয়ে ধুয়ে রান্না বসিয়ে দিত কিন্তু হাসানের কাছে এটা বিতৃষ্ণা লাগে, ভাতও বিস্বাদ লাগে। পরদিন ছিল শুক্রবার। সকাল আটটায় সে পুরান ভাতে নতুন চাল দিয়ে রাঁধতে চাইল। হাসান রান্না ঘরে দৌড়ে গিয়ে আস্তে আস্তে বলল, বাসি ভাত আজড়িয়ে পাতিল ধুয়ে তারপর রাঁধ, নইলে কিন্তু আমি ভাত খাব না, মোবারকও খাবে না, এ ভাত বিস্বাদ লাগে। কিন্তু ফেরদৌসীর জিদ হল সে এভাবেই রাঁধবে আর হাসানের কথা হল- এভাবে রাধলে সে খাবে না। এখান থেকে কথা বাড়তে থাকে। কিন্তু হাসান ঝগড়ার ভয়ে দুয়েক কথা বলে মুখ বন্ধ করে দিল। সে বন্ধ করলে কি হবে শুরু হল তার উৎপাত । মোবারক শুনবে ভয়ে উচ্চ স্বরে কিছু বলে না কিন্তু পাতিল হাতে নিয়েই কখনো নাচে, কখনো চেয়ারে বসে, কখনো রান্না ঘরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। হাসান কিতাবে মনোনিবেশ করল, কিছুক্ষণ পরপর নিচু স্বরে শুধু বলে মান ইজ্জত নষ্ট করো না, ছেলেটার খেতে হবে। কিন্তু সে আগের মতই অভিনয় চালিয়ে গেল।

অনেক সময় গড়িয়ে গেল, হাসান ঘড়ি দেখল এগারটা বাজে। মোবারককে বলল, আজ রান্নার দেরি হবে, তুই হোটেল থেকে নাস্তা করে আয়। আসলে সে সবই বুঝে, ঝগড়ার আঁচ পেয়ে আগেই নাস্তা করে এসেছে। হাসানের রাগ উঠে গেল- সেই আটটার সময় পাতিল হাতে নিয়েছিল, এ তিন ঘণ্টা ধরে তা হাতেই আছে। ফেরদৌসী তখন রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে ছিল। আজ নিজেই রাঁধব- বলে হাসান রান্না ঘরে গিয়ে পাতিল ধরে টান মারল, সে পাতিল ছাড়ল না কিন্তু তার মুখটা ব্যথা পেয়ে বিকৃত হয়ে গেল। এবার বাম হাতে পাতিল নিয়ে ডান হাতটা স্বামীকে দেখাল, পাতিলের মুখায় লেগে মাঝ আঙ্গুলের পেট থেকে একটু চামড়া উঠে গেছে, রক্ত বের হয়নি তবে লাল হয়ে আছে। স্বামীর খুব মায়া হল, মন চাইল একটু আদর করে কিন্তু এ পাগল মেয়েটা যে কিছুই বুঝে না। দুঃখিত স্বরে বলল, যাও রান্না বসাও গিয়ে। হ্যাঁ না, সকালের খাওয়া তো মিসই হল, এখন দুপুরের জন্য গোশত- পোলাও রেঁধে ফেল। হাসান গিয়ে আবার শুয়ে পরল।

কিছুক্ষণ পর সে রান্না বসিয়ে এসে স্বামীর মাথায় হাত বুলাতে লাগল। হাসান অবাক হল, এর চেয়ে কত বড় বড় অন্যায় করে অনুতপ্ত হয় না, আজ আবার কি হল। আসলে মানুষের মনের অবস্থা সব সময় এক রকম থাকে না, আজ কোন সময় হিংস্রতা দেখায়নি। হাসান উঠে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরল, কয়েকটা চুমু দিল, আদর করল তারপর বলল এমন করলে কি জীবন সংসার চলে। একটু বুঝ, বুঝতে চেষ্টা কর। এভাবে অনেকক্ষণ বুঝাল কিন্তু চোরায় না শুনে ধর্মের কাহিনী। পরদিন আবার ঝগড়া। এর পর থেকে মোবারক থাকা না থাকার পরোয়া না করে দস্তুর মত আগের নিয়মেই ঝগড়া হতে লাগল।

বিষয়: বিবিধ

৩৮০৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376208
১৩ আগস্ট ২০১৬ বিকাল ০৫:২৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : সব জামাইরা বউয়ের কাজ করে দেয় আপনে আমারে কি করে দেন। চালিয়ে যান ভালো লাগলো অনেক অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File