চিঠি-১৬ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০৫ আগস্ট, ২০১৬, ১০:২৭:৫৭ সকাল
মাগরিবের পর হাসান বাসায় পড়তে বসেছে, দরজায় টোকা পরল। দরজা খুলতেই দেখে ইঞ্জিনিয়ার দাঁড়িয়ে আছে। হাসান তাকে মাত্রাতিরিক্ত ভক্তি করত। বরফের ন্যায় গলে গিয়ে সালাম- মোসাফাহার পর ঘরে আসতে বলল। ইঞ্জিনিয়ার বলল, মেয়েটা তার খালা ও বাবু দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে, ওকে নিয়ে আসলাম। তারপর মেয়ের দিকে ফিরে বলল, যাও তোমার খালামনির কাছে যাও, আমি মসজিদে গেলাম। হাসান বলল, নামাযের দেরি আছে তো, ঘরে আসেন পরে নামাযে যান। কিন্তু সে তার স্বভাব সুলভ রুক্ষ ভাষায় জবাব দিল, না আমি মসজিদেই আছি। মেয়েটা ভিতরের রুমে চলে গেল, সে খালুর সামনে আসে না। তারা খালা-ভাগ্নি বান্ধবি, বয়সেও সমসাময়িক, দু’তিন বছরের ব্যবধান মাত্র। ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এ মেয়েটাই কথা-বার্তা, আদব-কায়দা ও আছার-আচরনে সবচেয়ে ভাল, যথার্থই ভাল একটি মেয়ে। সে সকলের বড়, সম্ভবত বড়গুলি একটু বেশিই ভাল হয়।
হাসান স্ত্রীকে নাম ধরে ডাকতে লজ্বা পায়- কখনো এই, তুমি, কখনো বা ইয়ার্কি মেরে ওগো আমার, সেও উত্তর দেয়-কি গো আমার, কখনো শাক চুন্নি, হামদু ভুত ইত্যাদি বলে ডাকে। সে বাহির রুম থেকে ডাকল- এই দেখে যাও। স্ত্রী এলে বলল, কি দিয়ে খাওয়াবে, কিছু আনতে হবে? স্ত্রী বলল, না, দুলা ভাই তো রাত্রে রুটি খায়। ঘরে আটা নাই, হোটেল থেকে রুটি নিয়ে আসেন। আর ওর জন্য ঘরে যা আছে তাই যথেষ্ট। হাসান হোটেলে গিয়ে কয়েকটা রুটি ভাল করে ভাজিয়ে এনে বাসায় রেখে মসজিদে গেল। নামাযের অনেকক্ষণ পর ইঞ্জিনিয়ার এসে বাহির থেকেই মেয়েকে ডাকল। হাসান বলল, ঘরে আসেন। ইঞ্জিনিয়ার বলল,না না, এখন আসব না। সে বলল, আপনার জন্য রুটি এনে রাখছি তো। ইঞ্জিনিয়ার বলল, ঠিক আছে, কাগজে পেছিয়ে নিয়ে আসেন, এখন খাব না, পরে খাব। হাসান সাধাসাধি করতে থাকে। ওদিকে মেয়ে বোরকা পড়ে রুটি কাগজে পেচিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পরেছে। তারা চলে গেল। হাসান কিছুটা এগিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু মেয়েটা সাথে বিধায় যাওয়া সমিচীন মনে করল না।
কিন্তু সে ভাবতে বসল, আচ্ছা লোকটা এল অথচ ঘরে পর্যন্ত ঢুকল না কেন? সে দাম্ভিক, অহংকারি কিন্তু এ মুহুর্তে সে অহংকার করেনি। আসলে এ লোকটার একটা দুর্বলতা আছে। সে শুধু মেট্রিক পাশ ডিপ্লোমা ধারি একজন ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু সে কখনো কোন বই পুস্তক পড়ে না, জ্ঞান চর্চা করে না, একজন মূর্খ- অশিক্ষিত মানুষের ন্যায়। দুনীয়ার জন্য চাকরি করে, পরকালের জন্য তাবলীগ করে, বাকি সময়টা একা একা ঘরে বসে থাকে। শিক্ষিত লোকেদের সাথে বসার জন্য যতটুকু জ্ঞান ও বিনয় দরকার তার মধ্যে এর অভাব। তাছাড়া সে কথা বলতে চাইলেই তার কথা হয়ে উঠে রুক্ষ ও কর্কশ। এ জন্যই সে সাধারণত অন্যদের সাথে আলাপচারিতায় লিপ্ত হয় না। কাজেই ঘরে ঢুকে তো আর মুখ বন্ধ করে রাখা যাবে না। ভায়রার সাথে কথা বলতে হবে, আলাপ করতে হবে। কিন্তু কী আলাপ করবে, এখানেই তো তার দুর্বলতা। আর এ জন্যই সে ঘরে ঢোকেনি।
জহুরের পর থেকে আসর পর্যন্ত কুত্তা বিলাই (cats and dogs) বৃষ্টি হল। হাসানের বাসা সংলগ্ন উত্তর পাশেই একটা ডোবা, তারপর মসজিদ। বৃষ্টিতে ডোবার পাড় ডুবে গেছে। আসরের আযান হয়ে গেছে, সে জুতা হাতে নিয়ে মসজিদে চলে গেল। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছে, নামাযের পর অনেক্ষণ মসজিদে বসে থাকল। তারপর বাসায় ঢুকতেই স্ত্রী বলল, আপনি এতক্ষনে এলেন, দাদু (বড় ভাই) এসেছিল, বাইরে গেছে, এক্ষুনি আবার আসবে, ভাবী ও আম্মাও আসতেছে, তারা এসে দেরি করবে না। মেয়েকে দেখেই চলে যাবে। মাছ আছে, তাড়াতাড়ি একটা মুরগি নিয়ে আসেন। কিন্তু তার ভাই যে ফার্মের মুরগি পসন্দ করে না, এটা সেও বলল না, আর হাসানেরও জানা ছিল না। সে কাছের একটা দোকান থেকে মুরগি নিয়ে এল। কিছুক্ষণ পর শ্বাশুড়ি ও ভাবী এল। শ্বাশুড়ি গিয়ে জামাইকে বলল রিকশা দাঁড়িয়ে আছে, টাকাটা দিয়ে আস। শ্বাশুড়ি পূর্বের ও পরের অভ্যাস মতই জামাইকে এ নির্দেশ দিলেন। এখানে অন্য কোন জামাই হলে হয়ত মনক্ষুন্ন হত, তাদের রিকশা ভাড়া আমি দেব কেন? বিশেষত ভাবী ভাড়া না দিয়ে আসল কেন? কিন্তু হাসানের বেলায় ছিল উল্টো, সে অতিশয় আনন্দিত হল।
কারণ হাসানের শ্বশুর মারা যাওয়ার পর এই মহিলা যতকিঞ্চিত জমি ছেলে- মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে নিজে হয়ে পরেছিলেন কপর্দক শুন্য। কিন্তু তার ভাই বোনেরা ছিল বড় লোক, তারা কিছু সাহায্য করত আর তিনি মেয়েদের বাসায় ঘোরাফিরা করে সময় কাটাতেন। হাসান শ্বাশুড়ির এই দুরাবস্থার কথা আগে জানত না, যখন জানল তখন থেকে আনা গোনার সময় শ্বাশুড়িকে কখনো ভাড়া দিতে দিত না। এ থেকেই অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল, যখনই শ্বাশুড়ি বাসায় আসতেন জামাইকে গিয়ে বলতেন আর জামাই গিয়ে আনন্দচিত্তে ভাড়া দিয়ে আসত। কারণ সে ভাবত, পিতা মাতার দেখবাল করা ফরয। তদ্রুপ শ্বশুর-শ্বাশুড়িও পিতা-মাতা, কাজেই তারা দুরাবস্থায় থাকলে তাদের দেখা শুনা করা জামাইদের উপর কর্তব্য। তাছাড়া এ সময় তিনি পুত্র বধুকে বুঝাতে চেয়েছেন, দেখ, তোমরা ছেলে- বউ হয়েও আমার দেখা-শুনা কর না অথচ সে জামাই হয়েও আমার দেখা শুনা করে। এটা আমার জামাই না, আমার ছেলে। এখানে তিনি ছেলে-বউকে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন।
মাগরিবের পর ফেরদৌসীর দাদু এসে তাড়া দিল, চলে যাবে। তাড়াতাড়ি খানা হাজির করা হল। খেতে বসেই সে- এই যে সারছে, মুরগি ওয়ালার তো মুরগি খেতে খেতে আর ভাল্লাগেনা। তার বোনকে বলল, এই তোরা এত কিপটা (কৃপন) কেন, গরু গোশত কিংবা দেশি মুরগি আনতে পারলি না? তারপর মাকে বলল, আম্মা কইছিলাম না তোমার এই জামাইটা কিপটা, আমার বাসায় দই ছাড়া খালি মিষ্টি নিয়া গেছিলগা। এখন দেখ, দুই আনা দামের ফার্মের মুরগি খাইয়ে মেহমান বিদায় করবে। ভালই হল জামাই উন্নতি করতে পারবে, তোমার মেয়ের সুখ হবে। মা ধমক দেয় এই চুপ করে খা, তোদের জন্য আর কি করবে, তোর মুরগি পসন্দ না ওরা জানে নাকি? দাদু বলে, হ, হাছা কথা কইলেই তো চুপ কর। সে হাসছে, আনন্দ করছে, খাচ্ছে আর বকবক করছে। ফেরদৌসী চুপ হয়ে বসে আছে। হাসান খাটের উপর বসে বসে হাসছে, কারণ সে জানে তার সম্বন্ধি বদনাম করছে না, কৌতুকের জন্য, আনন্দের জন্য বকবক করছে, এটা তার স্বভাব। সেই সাথে সে একটি বিষয় ভাবল, এদের ভাই বোন সকলেরই কথা বলার একটা অদ্ভুত প্রতিভা আছে, অন্যকে ঘায়েল করার কৌশল এদের জানা আছে। এরা এমন কৌশলে কথা বলে যে, প্রতিপক্ষ অপমান বোধ করবে কিন্তু উত্তর দিতে পারবে না। খাওয়া দাওয়ার পর তারা চলে গেল।
আগে ভাই বকবক করে গেল এখন বোনেরটা শুরু হল। এশার পর খেতে বসে ফেরদৌসি বলল, মুরগি বেঁচে খায়, বাপের পাইছে বিশ শতাংশ জমি, তাও বেচে শেষ করছে, একটা ফকির। আমি এতই পানিতে পরছি যে, আমার মেয়েকে একটা ফকিরের ছেলের কাছে বিয়ে দিতে হবে। হাসান অবাক হয়ে গেল, বউটা আবার পাগল হয়ে গেল নাতো- এই পাগলের মত কী আজে বাজে বকছ? বউ বলল- আরে পাগল না, পাগল না, দাদু দাদু। হাসান বলল, হাঁ দাদু কী হইছে? বউ বলল, সে এসেই উপুড় হয়ে আমার মেয়েকে দেখল, তারপর বলল, তোর মেয়ে তোর মত নাক বুছা হবে, তেমন সুন্দর হবে না, তোর মত শ্যামলা হবে। আমার ছেলেকে তোর মেয়ে বিয়ে করাব না। সে মুখটা বিকৃত করে বলে- কাঁহা তক হারামি, তার মত ফকিরের ছেলের কাছে আমার মেয়ে বিয়ে দিব নাকি? একটা পুইট্যা (বেটে, খাট, বামন) ছোদির ঘর থিক্যা অইছে দুইডা পুইট্যা ছোদা, ওদের কাছে আমার মেয়ে বিয়ে দিতে হবে, না? (ছোট ছেলে দুটি মায়ের মত খর্বাকৃতি ছিল)। আপনি তার বাসায় দই নিয়ে যান নাই বলে এত কথা শুনাল, সে এত মুরোদের ব্যাটা- কই আমার বাসায় এক কেজি মিষ্টি তো দুরের কথা একটা চানাচুরের প্যাকেটও তো নিয়ে আসল না। আমাদেরকে কয় কিপটা, আরে কিপটা ছোদা, তোর হাতে পাঁচটা টাকাও উঠল না, আমার মেয়েকে দেখে তার হাতে পাঁচটা টাকাও দিতে পারলে না? জানস না, নতুন বাচ্চা দেখলে টাকা দিতে হয়, নতুন জামাই- বউরে একটা কিছু দিতে হয়। এই সব করে ঐ পুইট্যা ছোদির কথায়।
আপনে যে কন তার টাকা নাই, এ জন্যই আমাকে শাড়ি দিতে পারে নাই । আপনে জানেন, সে কি পরিমান মুরগি বেচে, সে হুজুর, তার দাড়ি টুপি দেইখ্যা মাইনষে অন্য দোকান থেকে মুরগি না কিনে তার দোকানে কিনে, তাকে দিয়ে জবাই করিয়ে নেই। এভাবে সে অনেক টাকা কামায়। আর সব টাকা ঢালে জ্যাঠাইসের (স্ত্রীর বড় বোন) পোলাপানের পিছে। ঐ মহিলার স্বামী নাকি আপনাদের ফুলপুরে কোন মসজিদে ইমামতি করত, ট্রাক এ্যাকসিডেন্টে মারা গেছিল। এখন এই মহিলার পোলাপানের যাবতিয় খরচ সে চালায়। পেত্নির মত কতগুলি মেয়ে আছে, এগুলিকে দু’দিন পর পর দামি দামি থ্রি পিস দেয়, টাকা পয়সা দেয়। একটা ছেলে ঢাকায় পড়ে এটার খরচ চালায়। বড় মেয়ের বিয়ের খরচ সে দিছে, বিশ হাজার টাকা দামের শাড়ি দিছে অথচ আমাদের একটা সুতাও দিতে পারল না, আমার মেয়ের হাতে পাঁচটা টাকাও দিতে পারল না। ঐ মাগীটা (ভাবী) যা কয় তাই করে, মাগীর কথায় চলে। আচ্ছা, এই বাসাটা কি খারাপ নাকি? পুইট্যা ছোদি বাসারও বদনাম করে গেল, সে নাকি এমন বাসায় থাকত না। আহ-হা-রে আমার বড় লোক। ফকিরের মেয়ে ফকিরের বউ আবার দেমাগ। সে একটা দম নিল তারপর আবার শুরু করল।
ভাই বোনের বাদ বিসম্বাদ দেখে হাসান হাসে আর মনে মনে বলে, এটা তো তোমাদের পারিবারিক নিয়ম। তোমার দুলা ভাইরা তোমাদের নিয়ে পড়ে আছে অথচ নিজেদের হত দরিদ্র ভাই বোনদের দিকে ফিরেও তাকায় না। তোমার ভাইও তার শালি-জ্যাঠাস নিয়ে থাকবে, তাতে দোষের কি হল? সে জানে আসলে দাদু কৌতুক করে এসব কথা বলেছে কিন্তু বোনকে নাক বুচা ও সুন্দরি না বলার কারণে ক্ষেপে গেছে। তবে বউয়ের কথাগুলি তার খুব মজা লাগছে। কারণ সে তার ও তার মেয়ের পক্ষে কথা বলছে। কাজেই সে বউয়ের মোসাহেবি করতে গিয়ে কোনরুপ চিন্তা ভাবনা ব্যতীতই বলে ফেলল- চাল নাই, চুলা নাই, বাঘ রাইস্যা নাম। তার মত ফকিরের ছেলের কাছে আমার মেয়ে বিয়ে দিব, না? কয়দিন পর দেখবা তার ছেলেরা আমার কাছে যাকাতের টাকার জন্য দৌড়াদৌড়ি করবে। কথাটা শুনেই বউ কিছুটা বিরক্তির দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকাল কিন্তু স্বামীকে কিছু না বলে তার নিজের বকবকানি চালিয়ে গেল।
কিন্তু হাসান চমকে উঠল, এ আমি কি বললাম, এমন কথা তো আমি জীবনেও কাউকে বলিনি। আমারই বা কী চাল চামড়াটা আছে। বাপের কিছু জমি আর একটা চাকরি ছাড়া তো আমারও কোন চাল-চুলা নাই। সে অনুতপ্ত হয়ে বসে রইল আর একটা কথাও বলল না। তবে তখন যদি স্ত্রী তাকে কিছু বলত, তাহলে সে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইত ও দুঃখ প্রকাশ করত। কিন্তু স্ত্রী রুপি এই মুর্তিমান অভিশাপ তখন কিছু বলেনি বটে কিন্তু পরবর্তিতে তার সকল আত্মীয়- স্বজনকে জানিয়েছে যে, হাসান নাকি বলেছে তার সব ভাই বোনের ছেলে মেয়েরা তার কাছে যাকাতের টাকার জন্য আসবে।
দু’দিন পর ফেরদৌসীর তিন ভাগ্নে এল খালা- খালুকে দেখতে। আসলে খুলনা প্রবাসি তার দ্বিতীয় বোনের কিশোর বয়সি ছেলে হাসান এসেছে জামালপুরে বেড়াতে। স্বামীর নামানুসারে হওয়ার কারণে ফেরদৌসী ছেলেটির আরেক নাম ইয়াসিন বলে ডাকত। এখন এই ছেলেকে নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারের এক ছেলে ও এক ভাতিজা এসেছে। বয়সে এরা সমসাময়িক-তের থেকে সতেরর মধ্যে। আবার খালারও প্রায় সমসাময়িক। তাই এরা খালা-খালু ভাগ্নে এক সাথে বসে আড্ডা দেয়, হাসান দৌড়ে গিয়ে একটা মুরগি নিয়ে এসে আড্ডায় যোগ দিল। চুটিয়ে আড্ডা চলল, খালা রান্না ও আড্ডায় তাল মিলিয়ে চলল। বস্তত ফেরদৌসীদের পুরা পারিবারিক বলয়টাই ছিল কথায় ঝানু এবং কৌশলী, অন্যকে ঘায়েল করায় পারদর্শী। এদের ছেলে মেয়েরা হয়ে উঠেছিল আরো ঝানু, ইচড়ে পাকা। কিন্তু এখানে ইয়াসিন নতুন এসেছিল বিধায় বেশি কথা বলেনি। আর ইঞ্জিনিয়ারের ভাতিজাটা ছিল বাবার মত হাবাগুবা, গোবেচারা। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারের ছেলের মুখে খই ফুটল। সে কথায় কথায় খালুকে ঘায়েল করতে লাগল। হাসান ঠাট্টা মশকরা ও কৌতুক জানেও না, পারেও না, করেও না। কখনো করলে তার নিজের কানেই বেখাপ্পা ঠেকত, নিজেই লজ্বা পেয়ে যেত। কিন্তু ভাগ্নের সাথে সে ঠকতে চাইল না। তাই একেকটা কথা বলে আর ভাগ্নের বাক্যবানে কপোকাত হয়ে আবুলের মত দাঁত বের করে হাসে আবার বলে আবার অপমানিত হয়ে হাসে। অবশেষে ছেলেটা কথার মার প্যাচে খালুকে নাস্তানাবুদ করে, একেবারে আন্ডা বানিয়ে খেতে বসল। এবার ধরল খালাকে, ছিঃ এটা একটা তরকারি হল নাকি, তুমি তো কিছুই রাঁধতে পার না, গোশতটাকে ডাল বানিয়ে ফেলেছে। দাও দাও আরো দাও। জানো না একটা মুরগি আমার একাই লাগে। আর কি আছে আনো, এ দুয়েকটা তরকারি দিয়ে মেহমান বিদায় করতে চাও নাকি, তোমরা তো সাংঘাতিক কিপটা, কিপটের ধন পিঁপড়ায় খায়। ছেলেটা যে আসলেই এসব বলছে তা নয়, খালাকে ঘায়েল করার জন্য ও আনন্দ করার জন্য বকবক করছে। খাওয়ার পর আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে তারা চলে গেল।
হাসান মাথায় হাত দিয়ে বিস্ময়ের সুরে বলল, আরে বাপ-রে-বাপ, এত ইঁচড়ে পাকা কোন পোলাপান হতে পারে। যেমন মা- বাপ তেমনি পোলা, জ্যাঠামিতে পাকা ছেলে বেশি কথা কয় সে। সে স্ত্রীকে সম্ভোধন করে বলে, এই শুন আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হতে পারব, পৃথিবীতে কখনো যদি চাপাবাজির প্রতিযোগিতা হয় তাহলে এদেরকে নিয়ে হাজির হয়ে যাব। ব্যাস নিশ্চিত জেনো, ট্রফি নিয়ে আসব। স্বামী স্ত্রী হাসে, কিন্তু হাসান ভাবে ছোট- বড় যে কেউ এদের কথার সামনে অবনত হতে বাধ্য, এভাবেই ওরা অন্যদের পদানত করে রাখে।
বিষয়: সাহিত্য
২৩৮৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন