চিঠি- ১০ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২৫ জুলাই, ২০১৬, ০১:০৭:০১ দুপুর
ইতিমধ্যে ফেরদৌসীর বিয়ের প্রায় মাস তিনেক হয়ে গেছে। এবার তার বড় ভাইয়ের বাসায় বেড়ানোর পালা। সে ঢাকার উত্তরায় থাকে, ছোট খাট ব্যবসা করে। হাসান বউ ও শ্বাশুরিকে ট্রেনে তুলে দিয়ে বলল, কয়েকদিন পর আমি আসছি। বউ চলে গেল, এদিকে প্রায় মাস খানেক হতে যাচ্ছে বিভিন্ন ঝামেলা ও ছুটি না পাওয়ার কারণে সে যেতে পারছে না। ইতিমধ্যে স্ত্রীর প্রতি অপ্রতিরোধ্য দুর্বার আকর্ষণ ক্রমে ক্রমে তার ধৈর্য্যচ্যুতির উপক্রম হল। তখনো হাতে হাতে মোবাইল পৌঁছেনি, তেমন একটা যোগাযোগও হচ্ছিল না। সে বুঝতে পারছিল স্ত্রী সম্পর্কে তার মনের অবস্থাটা পাল্টে গেছে। যে স্ত্রীকে তার পসন্দ হয়নি ভালবাসত না, এখন অষ্টপ্রহর তার মনে স্ত্রীর ছায়া পড়ে থাকে, চোখের সামনে শুধুই স্ত্রীর মুখটি ভেসে থাকে।
একমাস পর পাগলের মত ছুটে চলল। উত্তরার উত্তর খানে গিয়ে অনেক খুঁজাখুঁজির পর বাসার সন্ধান পেল। তার সম্বন্ধিটা ছিল খুবই সহজ- সরল, রসিক, মিশুক, হাসুক প্রকৃতির একটা চার্লি চ্যাপলিন প্রকৃতির মানুষ। কোশল বিনিময়ের পর সে বলল, আসছেন ভালই হল, চারটে খেয়ে দেয়ে শুয়ে থাকেন, সকালে আর চারটে খেয়ে বাড়িতে চলে যাবেন। কারণ আপনি আসছেন না দেখে আপনার বউ কয়েকদিন ধরে কান্নাকাটি করতে করতে আজ পাগলের মত বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। এতক্ষনে নিশ্চয়ই সে আপনাদের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। আরো কিছুক্ষণ ইয়ার্কি মেরে সে বেরিয়ে গেল, রুম খালি করে দিল।
পরক্ষনেই দেখে একটা আদর্শ নারী পত্রিকা হাতে নিয়ে ঢুকছে তার মন ময়ূরী। সে রাগে অপাক্তেয়ভাবে এক পলক স্বামীর দিকে তাকিয়ে পত্রিকাটি বিছানার উপর ছুড়ে মারল। তারপর খাটে উঠে ধপাস করে উপুড় হয়ে শুয়ে কান্না জুড়ে দিল- এতদিন খোজ খবর নিল না কেন, গেল না কেন, নতুন বউকে এতদিন কেউ এভাবে ফেলে রাখে নাকি, একটুও মনের টান নাই, ভালবাসা নাই। ভাগ্যিস আজ না গেলে কাল ভোরেই তার দাদু (বড় ভাই) হাসানদের বাড়িতে চলে যেত ইত্যাদি বকবক চলতে লাগল।
স্ত্রীর দেহ থেকে একটা বিদ্যুৎ ঝলক তার বুকে ধাক্কা দেয়, কলিজায় প্রচণ্ড একটা শক দিয়ে যায়। ওর মুখটা চাঁদের মত চমকাচ্ছে, শরীরটাতে একটা অপার্থিব মোহময় আভা ছড়িয়ে পরেছে, স্বামীর চোখে অপ্সরীর মত লাগে। ইতিমধ্যে এক অন্তহীন ভালবাসায় তার মনটা উথাল পাতাল করছিল। তার মধ্যে স্ত্রীর কান্না যমুনার বুকে টর্নেডোর আঘাত, বিক্ষুদ্ধ তরঙ্গাভিঘাত ভিতরটা ভীষণভাবে তোলপাড় করে যাচ্ছিল। আর বসে থাকা সম্ভব হল না, জামা কাপড় ছেড়ে, দরজা বন্ধ করে ওকে জড়িয়ে ধরল।
একি কান্ড, হাসানের জন্য অপেক্ষা করছিল এক অপার বিস্ময়। এ সম্পর্কে পূর্বে তার জানা ছিল না, কেউ কোনদিন বলেওনি, কারো কাছে শুনেওনি, কোথাও পড়েওনি, তসলিমা-নায়িম সম্পর্কে তসলিমার একটা লেখা পড়েছিল অনেক পরে। এমনটা তার জানা ছিল না, নিজের স্ত্রীর দেহ সে নিজেই চিনতে পারে না। আমুল পরিবর্তন। বুকের অবকাঠামো সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। ততদিনে তার সন্তান- মুনিরা অনস্তিত্বের পর্দা ভেদ করে অস্তিত্বের জগতে এসে গেছে। বাঁধ ভাঙ্গা ভালবাসায় স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে গালে ঠোট বসিয়ে শুধায়, একি কাণ্ড, এ কয়দিনে এত পরিবর্তন কিভাবে হল আর এসময় নারীদেহ এমন পরিবর্তন হয় কেন? কিন্তু নিজের দেহ ক্রম পরিবর্তনের কারণে ফেরদৌসী বুঝতে পারে না, সে নিশ্চিত নয়, বলল, জামালপুর গিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কিন্তু একমাস পর সাক্ষাতে পরিবর্তনটা হাসানের কাছে স্পষ্ট ধরা পরল। সে বলল পরীক্ষা করার দরকার নাই, পুরাতন পৃথিবীতে নতুনের আগমন- এটা নিশ্চিত। এক অপার্থিব পবিত্র মমতায় স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে সে ঘুমিয়ে পরল।
মধ্যরাত। সহসা তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এ এক ব্যতিক্রমি নিদ্রাভঙ্গ। চরম দুঃখ ব্যথা ও যন্ত্রনার সময় জীবনে কয়েকবার তার এভাবে ঘুম ভেঙ্গেছে । আজ থেকে বহু বছর আগে ১১ই রমযান, মধ্যরাতে তার নিদ্রা ভঙ্গ হয়েছিল। দিনটি ছিল তার বাবার মৃত্যুর দিন, দিনটি ছিল তার সর্বহারা ও সর্বরিক্তের দিন। আবার আজো ঘুম ভাঙ্গল। কিন্তু এ নিদ্রাভঙ্গ তার উৎফুল্লের, আনন্দের, তার অর্জনের, তার সর্বপ্রাপ্তির। সে আত্নহারা হয়ে ভাবে, আসছে, আসছে, কেউ আসছে, আমার উষর মরুময় জীবনের প্রতিটা ধুলি কনা ফুলে ফলে মরূদ্যানে রূপান্তরিত করতে কেউ আসছে। আমার প্রশান্ত সিন্ধু বক্ষে ঢেউ তুলতে কেউ আসছে, আমার বিরান শূণ্য বাগান কলকাকলিতে মুখর করে তুলতে কেউ আসছে। আসছে আমার সন্তান, বংশের প্রথম প্রদীপ। আমারই দেহ থেকে আরেকটি প্রাণের উদ্ভব, প্রাণ থেকে প্রাণের অস্তিত্ব- যে পৃথিবীতে শুধু আমারই প্রতিনিধিত্ব করবে।
হাসান এসব চিন্তা করতে করতে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করল কিন্তু রঙ্গিন কল্পনারত চোখে ঘুম আসল না। আনন্দাতিশয্যের উৎকণ্ঠায় তখন তার তনু- মন অনন্ত আকাশের নিলিমায় মুক্ত বিহঙ্গের মত ডানা ঝাপটে বেড়াচ্ছে। উঠে বসে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাল। রুমের হেড লাইট জ্বালানো, মৃদু হাসে, আসলে অনেকদিন পর দেখা তো, চুমাচুমিটা একটু বেশিই হয়ে গেছে, ফর্সা দুটি গাল লাল হয়ে উঠেছে, থোকা থোকা রক্ত জমে আছে, মনে হয় টোকা দিলে রক্ত ঝড়বে।
লাইটের আলো স্ত্রীর মুখের উপর প্রতিফলিত হচ্ছে। হাসান হয়রান হয়ে আপাদ মস্তক দৃষ্টি বুলায়। টগবগে যুবক, তার সামনে বিশ বছরের উর্বশি যৌবনা স্ত্রীর দেহ। উন্নত ললাট, রক্ত লাল ভরাট দুটি কপোল লাল গোলাপের পাপড়ির মত লালাভ আভা ছড়াচ্ছে, রক্তজবার মত পুরুস্ট ওষ্ঠাধর, পিনোন্নত পয়োধর যেন দুটি শৃঙ্গ, তারপর ঢালু বেয়ে সমতল, সমতলে হ্রদ, তারপরেই গিরিখাদ। চওড়া কাঁধ, প্রসস্থ বক্ষ ক্রমশ সরু হয়ে জগ-কলসির গলার মত কোমরে এসে আবার প্রসস্থ হয়ে গেছে। তারপর ভরাট উরুযুগল সরু হয়ে নেমে গেছে। রূপ আর সুধা, রুপের সুধা, রূপ আর সুধায় পার্থক্য কত ? নিশিক্ত যৌবনা যুবক, অবস্থাটা কল্পনা করা যায় ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অনুভব করতে হয় কিন্তু কহিতে মানা। হাসান নেশাগ্রস্থ, মদীরা গ্রস্থ, রুপের নেশায় টাল খাচ্ছে। মানুষ এত সুন্দর হতে পারে, স্বর্গের অপ্সরী, পরীস্থানের লাল পরী কি এর চেয়েও সুন্দর।
সে বসে বসে আকন্ঠ স্ত্রীর রূপ- রস পান করে। অনন্ত যৌবনা স্ত্রী- দেহ তাকে ব্যাকুল করে তোলে, অস্বস্তি লাগে, অবিশ্বাস্য লাগে, সন্দেহ জাগে, এ কে? আমার স্ত্রী তো এত সুন্দরী নয়। এত সুন্দরী হলে আমি কাঁদতাম কেন? ওর নাক? এত সুন্দর নাক তো মনে হচ্ছে আমি আগে কখনো দেখিনি, তাহলে ওর নাক দেখে আমি কাঁদতাম কেন? কে এই সুন্দরী, আমার স্ত্রী কোথায়? এ আমার স্ত্রী না হলে একটু আগে আমাকে দেখে কাঁদল কেন? আমাকে বুকের উপর প্রচন্ডভাবে জড়িয়ে ধরল কেন? তার বুকটা যেন খোলে যেতে চায়, ফাঁক হয়ে যেতে চায়। অতিরিক্ত আবেগে চোখে পানি এসে যায়। স্ত্রীর রুপের নেশা তার দেহ মনে সিঞ্জিত, সে তড়িৎ পিষ্টের ন্যায় বিকল হয়ে উঠে।
ঘোর কাটিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য সে বিছানা থেকে নেমে পায়চারি করতে লাগল। আমার কী হল এমন লাগছে কেন। ওকি আসলেই এত সুন্দর। নাকি এতদিন পর সাক্ষাতের জন্য আমি চোখে ভ্রম দেখছি, নাকি লাইটের আলো প্রতিফলিত হওয়ার কারণে এত সুন্দর দেখাচ্ছে, নাকি গর্ভবতি হওয়ার কারণে তার রূপ ঝলক দিয়েছে। নাকি সে প্রকৃতই সুন্দর কিন্তু সুন্দর চোখে আমি কখনো তাকে দেখিনি। আর এজন্য মনে করতাম ওকে আমার পসন্দ হয়নি, তখন কাঁদতাম। সে তমীয করতে পারে না। আবার স্ত্রীকে নিরীক্ষণ করে আর ভাবে, এর চেয়ে সুন্দর কোন মেয়ে লোক হতে পারে? কোথাও তো এর চেয়ে সুন্দরী দেখিনি। কোন নায়িকা কি এর চেয়ে সুন্দরী? হায় আমি কত বোকা, কত নির্বোধ, কত হাদারাম। ওকে বিয়ে করে কেঁদেছিলাম, মনে করে ছিলাম জীবনে কিছুই পেলাম না। কিন্তু আজ বুঝতে পারছি, ওকে বিয়ে করে আমি সবই পেলাম, জীবন আমার ধন্য। ওকে না পেলেই তো জীবন অপূর্ণ থাকত।
আবার সে স্ত্রীর কাছ ঘেঁষে বসে। সে ঘুমুচ্ছে, বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। এভাবে নিশ্চিন্ত হয়ে নিশ্চিন্ত মনে নিজেকে উজার করে কেউ তখনি ঘুমাতে পারে যখন সে নিশ্চিত থাকে যে, তার কোন পাহারাদার বা রক্ষক আছে। হাসান নির্ণিমেষ স্ত্রীর প্রতি তাকিয়ে থাকে, নেশাগ্রস্থ হয়ে উঠে, উত্তেজনায় শরীর মোচড় দিয়ে উঠে, একটা বল্লম যেন তার কলিজা এপোড় ওপোড় করে দেয়, উত্তেজনার সময় এমনটা হয়। স্ত্রীর স্ফিত বুকে নিজের বুক চেপে সে ঠোঁটের উপর ঠোঁট লাগায়। স্ত্রী চাপ খেয়ে কিছুটা জাগ্রত হয়ে স্বামীর পিঠের উপর দুহাত জড়িয়ে চেপে ধরে। স্বামী বেচারা মদীরার আবেশে ক্ষুধার্ত সিংহের জিবে নরমাংশের স্বাদে পাগল হয়ে উঠে। নিশ্বাস গরম হচ্ছে, প্রবল বাতাসে বৃক্ষ পত্রের ন্যায় তার ঠোঁট দুটি চঞ্চল হয়ে উঠে। ঠোঁটে, গালে, কপালে, চোখে, মুখে, গলায়, বুকে, পেটে, নাভিতে, পায়ে চুমিয়ে চুমিয়ে স্ত্রীর দেহটি লাল করে তোলে।
হাসান চার জানু হয়ে বসে আছে। স্ত্রী তার একটা পা স্বামীর উরুর উপর তুলে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। সে যেন স্ত্রীর দেহ সামনে নিয়ে তপস্যায় বসেছে। এখন তার জল্পনা কল্পনা ও চিন্তা চেতনা বউয়ের পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি দেহের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ক্ষুধার্ত সিংহ যেমন সবকিছু ভুলে একদৃষ্টে শিকারের দিকে তাকিয়ে থাকে অথবা কোন শিশু যেমন চির কাঙ্ক্ষিত খেলনাটি পেয়ে নাওয়া খাওয়া সব কিছু ভুলে খেলনাটি নিয়ে পড়ে থাকে হাসানের অবস্থাও ব্যতিক্রম ছিল না। স্ত্রীর দেহ নিয়ে মজে রইল। কখনো তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত হাত বুলিয়ে ফেরে, কখনো উপুর হয়ে ভ্রুর উপর, গালে ঠোঁটে আঙ্গুল টানে, কখনো বুকে বুক চেপে গালে ঠোঁটে চুমু খায়। কখনো পা দুটি কোলে নিয়ে অসীম মমতায় হাত বুলায়, চুমু খায়, কখনো পেটে বুকে মাথা রাখে। এভাবে সে সারাটা রাত ইঁদুর ছানা নিয়ে বিড়ালের ন্যায় স্ত্রীর দেহটি নিয়ে খেলায় মেতে রইল। আর তার স্ত্রী বেদম ঘুমে মজে রইল।
বিষয়: বিবিধ
১৫১০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন