আগ্নেয়গিরির উদগিরণ- ৮
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২৩ জুন, ২০১৬, ০২:৫৫:৪২ রাত
ইতিহাসের শিক্ষা/ পুনরাবৃত্তি- ২
মাত্র ত্রিশ বছরের ব্যবধান। ১২৫২ সাল, বাগদাদের খলীফা মু’তাসিম বিল্লাহ, তার উজিরে আ’জম ইবনুল আলকেমি শিয়া। আবার খোরাসানের শাসক চেঙ্গিস খানের পৌত্র হালাকু খানের প্রধান উপদেষ্টা নাসির উদ্দিন তুসি ইসমাইলি শিয়াদের সাথে সংশ্লিষ্ট। আর তখন ফেরকাবাজির ভিত্তিতে মুসলমানদের মধ্যে শত্রুতা এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে ছিল যে, তারা শত্রুর সাহায্যে একে অন্যকে ধ্বংসের তৎপরতায় লিপ্ত থাকত। শিয়া ইবনুল আলকেমি সুন্নী খেলাফত ধ্বংসের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। সে খলীফাকে বুঝাল, দশ লক্ষ সৈন্য পোষার মত বেকার খরচের কোন প্রয়োজন নেই। সেনা বাহিনী ভেঙ্গে দেয়া হল। আভ্যন্তরিন কাজ শেষ করে সে নাসিরুদ্দিন তুসির মাধ্যমে হালাকু খানকে বাগদাদ আক্রমণের দাওয়াত দিল। স্বজাতি ধ্বংসের এই দুই কালপ্রিট ইবনুল আলকেমি ও তুসি উভয়েই বড় মাপের আলেম ছিলেন। তখনো বাগদাদের চকে চকে ফিরকাবাজ আলেমদের আসর বসত। কথিত আছে এক আসরে তখন মিসওয়াক নিয়ে বিতর্ক চলছিল। বিতর্কে সাব্যস্ত হলো মিসওয়াক আগে ডান পাশ থেকে শুরু করতে হবে। তারপর দাঁতের উপড়ের পাটিতে নাকি নিচের পাটিতে লাগাতে হবে – তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হল কিন্তু সিদ্ধান্ত হলো না। কারণ মানুষ দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে, হালাকু খান বাগদাদ পৌঁছে গেছে।
বাগদাদ পরিণত হল পুরা কাহিনীতে। চল্লিশ লক্ষ মানুষের গোরস্থানে পরিণত হলো প্রাচি-প্রাতিচী সভ্যতার প্রসূতি বাগদাদ। যে খলীফা ও আমীর উমরারা মুসলিম বিশ্বকে তাতারী দানবদের হাতে ছেড়ে দিয়ে নতর্কি আর মদের আসরে মগ্ন ছিল, খেলাফতের আসন দখল করে খোদার দ্বীনকে নিয়ে তামাসা করেছিল হালাকু খান তাদেরকে সহজভাবে হত্যা করলেন না। পাগলা হাতির পায়ের তলায়, ঘোড়ার পায়ে পিষে, বস্তায় পেছিয়ে শ্বাস রুদ্ধ করে, পিটিয়ে, কুপিয়ে তাদেরকে হত্যা করা হয়। তাদের সুন্দরী স্ত্রী-কন্যাদের দাসীবাঁদী হিসাবে রেখে বাকিদের হত্যা করা হয়। আর যে উলামায়ে দ্বীন ইসলামকে যশ খ্যাতি আর অর্থোপার্জনের অবলম্বন বানিয়েছিল, খোদার দ্বীনকে উপহাসের পাত্রে পরিণত করেছিল, নিজেদের মধ্যে ফেরকা বিভক্তি করে সার্বক্ষনিক দাঙ্গায় ইন্ধন যুগিয়েছিল, তাতারীরা তাদের সামনে তাদের স্ত্রী-কন্যাকে ধর্ষণ করল, হত্যা করল, সুন্দরীদের বেছে নিয়ে দাসি-বাদী বানাল। আর আলেমদের ধরে ধরে কেটে টুকরো টুকরো করে রাস্তায় ফেলে রাখল বা দজলার পানিতে ভাসিয়ে দিল। তারা স্থলজ ও জলজ প্রাণীর খাদ্য হল। যারা তাতারী তুফান ডেকে আনল আর যাদের জন্য ডেকে আনল তাদের কেউ রেহাই পেল না।
নগরি ধ্বংস করার পর হালাকু খান যখন জানল মাটির নীচে গুপ্ত কক্ষে এখনো কিছু লোক আত্মগোপন করে আছে তখন সে দজলার বাঁধ ভেঙ্গে দিতে হুকুম দিল, তাদেরও সলীল সমাধি হল। তাতারীরা তিলোত্তমা বাগদাদ এমন ভাবে ধ্বংস করল যে, রোজে পয়দায়েশ থেকে নিয়ে নক্ষত্রমণ্ডল পৃথিবীর বুকে এমন বীভৎস ধ্বংসলীলা আর কখনো দেখেনি। এ ছিল এক ভাগ্যাহত জাতির ইতিহাস। যে জাতির পথ প্রদর্শক মুরুব্বিরা বহিঃশত্রুর মোকাবেলার চেয়ে নিজেদের মধ্যে ফিরকা-বিভক্তি সৃষ্টি করে পরস্পরকে ধ্বংসের তৎপরতায় লিপ্ত ছিল-এ পরিণতি ছিল তাদের কৃতকর্মের ফল। কিন্তু বাগদাদের বাসিন্দারা যদি ঐসব ফিরকাবাজ, ফিতনাবাজ, দাঙ্গাবাজ আলেমদের থেকে সচেতন থাকত, তাদেরকে ফিরকা বাজি থেকে বিরত রাখত বা তাদের শাস্তি দিত বা হত্যা করত তাহলে অবশ্যি তারা আল্লাহ্র গযব থেকে বেঁচে যেতে পারত। কিন্তু এ ধ্বংসলীলা ছিল তাদের ভাগ্যলিপির শামিল।
বাগদাদের লাইব্রেরীতে সাত শত বছরের মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং পৃথিবীর সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের সংগ্রহশালা ছিল। এতবড় লাইব্রেরী পৃথিবীতে পূর্বে কখনো ছিল না, আর ভবিষ্যতে হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। হালাকু খান সে লাইব্রেরী দজলায় ডুবিয়ে দিল। তখন বৃদ্ধ লাইব্রেরিয়ান বুক চাপড়াতে চাপড়াতে মাতম করতে লাগল। হায় হায়, মুসলিম জাতির কি সর্বনাশই না হল, যে অমুল্য সম্পদ আজ দজলার স্রোতে ভেসে গেল মুসলমানরা আর কোন দিন এ সম্পদ ফিরে পাবে না। বৃদ্ধ লাইব্রেরিয়ান মাতম করতে করতে সেখানেই মারা গেল। বস্তুতঃ বাগদাদ ধ্বংসের চেয়ে লাইব্রেরী ধ্বংস মুসলিম জাতির জন্য যে অভিশাপ বয়ে আনল আজো মুসলমানদের পক্ষে সে অভিশাপ কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি, আর হবে কিনা সন্দেহ। কারণ শুধু বাগদাদের লাইব্রেরীটা থাকলেও জ্ঞান-বিজ্ঞানে চিরস্থায়ী মুসলিম নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকত, ইউরোপ কখনো মাথা তুলে দাড়াতে পারত না। কিন্তু এ লাঞ্চনা হচ্ছে এক অপরনামদর্শি জাতির ললাট লিখন।
পৃথিবীতে অনেক যুদ্ধ ও গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। কিন্তু দু’টি গণহত্যার সামনে অন্যগুলি নিষ্প্রভ ও নাস্তি প্রমাণিত হয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে নেবুচাদ নেজার (আরবি বুখতে নসর) কর্তৃক তৎকালীন ইহুদী রাষ্ট্র জেরুজালেম ও যিহুদা ধ্বংস সাধন। সম্রাট রাজ্য দু’টি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে সকল নাগরিক হত্যা করেন। বন্দি কিছু লোককে গোলাম হিসাবে ব্যাবিলনে নিয়ে আসেন- যাদের থেকে পরবর্তী ইহুদী বংশ ধারা রক্ষা পায়।
এ সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে -- فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ أُولَاهُمَا بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًا لَّنَا أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ فَجَاسُوا خِلَالَ الدِّيَارِ ۚ وَكَانَ وَعْدًا مَّفْعُولًا [١٧:٥] -- অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত সেই প্রথম সময়টি এল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা (নেবুচাদ নেজার) বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল ।
বাইবেল ওল্ড টেস্টামেন্ট, রাজাবলির ২য় খণ্ডে বলা হয়েছে,
17 Therefore he brought upon them the king of the Chaldees, who slew their young men with the sword in the house of their sanctuary, and had no compassion upon young man or maiden, old man, or him that stooped for age: he gave them all into his hand.
1 18. And all the vessels of the house of God, great and small, and the treasures of the house of the Lord, and the treasures of the king, and of his princes; all these he brought to Babylon.
2 19. And they burnt the house of God, and brake down the wall of Jerusalem, and burnt all the palaces thereof with fire, and destroyed all the goodly vessels thereof.
20.And them that had escaped from the sword carried he away to Babylon; where they were servants to him and his sons until the reign of the kingdom of Persia:
3
4 21. to fulfil the word of the Lord by the mouth of Jeremiah, until the land had enjoyed her sabbaths: for as long as she lay desolate she kept sabbath, to fulfil threescore and ten years.
5 ১৭। ঈশ্বর তখন বাবিলরাজকে দিয়ে যিহুদা ও জেরুজালেম আক্রমণ করালেন। বাবিলরাজ এসে সমস্ত তরুনদের এমনকি মন্দিরে উপাসনারত লোকদেরও হত্যা করলেন। নিষ্ঠুরভাবে, কোনো দয়ামায়া না দেখিয়ে তিনি স্ত্রী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, সুস্থ-অসুস্থ, যিহুদা ও জেরুজালেমের সমস্ত ব্যক্তিকে নির্বিচারে হত্যা করলেন। প্রভুই তাকে যিহুদা ও জেরুজালেমের লোকদের শাস্তি দেবার অধিকার দিয়েছিলেন।
6 ১৮। নেবুচাদ নেজার প্রভুর মন্দির থেকে যাবতিয় জিনিসপত্র বাবিলে নিয়ে গেলেন। রাজকর্মচারীদের মূল্যবান জিনিসপত্র তিনি নিয়ে যান।
7 ১৯। তিনি ও তার সেনাবাহিনী মিলে জেরুজালেমের প্রাকার গুঁড়িয়ে দিয়ে মন্দির, রাজপ্রাসাদ ও রাজকর্মচারীদের বাড়ি-ঘরদোর সবকিছু পুড়িয়ে দিলেন।
8 ২০। যে সমস্ত ব্যক্তিরা বেঁচে ছিল নেবুচাদ নেজার তাদের সবাইকে ক্রীতদাস হিসেবে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন। পারস্যরাজ বাবিল অধিকার করা পর্যন্ত এই সমস্ত ব্যক্তিরা বাবিলেই ছিল।
9 ২১। এইভাবে প্রভু নবী যিরমিয়র মুখ দিয়ে ইসরাইলের লোকেদের উদ্দেশ্যে যা যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন সে সবই মিলে গেল। প্রভু যিরমিয়র মারফত ভবিষ্যদ্বাণী করেন, বিশ্রামদিনে বিশ্রাম না নিয়ে লোকেরা যে পাপাচার করেছে তা শোধন করতে এই ভূখণ্ড এভাবে পতিত থাকবে। এইভাবে দেশটি ৭০ বছর ধরে বিশ্রাম পেয়েছিল।
প্রফেট জিরমিয়ার গ্রন্থে আরো বলা হয়েছে,
(7)The lion is come up from his thicket, and the destroyer of the Gentiles is on his way; he is gone forth from his place to make thy land desolate; and thy cities shall be laid waste, without an inhabitant
(8)For this gird you with sackcloth, lament and howl: for the fierce anger of the Lord is not turned back from us
(9)And it shall come to pass at that day, saith the Lord, that the heart of the king shall perish, and the heart of the princes; and the priests shall be astonished, and the prophets shall wonder
(The Book of the Prophet Jeremiah)
দ্বিতীয় ধ্বংসলীলা হচ্ছে- হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদের ধ্বংস এবং চল্লিশ লক্ষ মানুষের গণহত্যা। তদুপরি এসব মানুষের পচা গলার দুর্গন্ধ এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে সুদূর সিরিয়া পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন প্রশ্ন হল, এ দুটি ধ্বংসলীলার কারণ কি ? কোরআনই এ প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে-
ثُمَّ أَنتُمْ هَٰؤُلَاءِ تَقْتُلُونَ أَنفُسَكُمْ وَتُخْرِجُونَ فَرِيقًا مِّنكُم مِّن دِيَارِهِمْ تَظَاهَرُونَ عَلَيْهِم بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَإِن يَأْتُوكُمْ أُسَارَىٰ تُفَادُوهُمْ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْكُمْ إِخْرَاجُهُمْ ۚ أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ ۚ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَٰلِكَ مِنكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَىٰ أَشَدِّ الْعَذَابِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ [٢:٨٥]
অতঃপর তোমরাই পরস্পর খুনাখুনি করছ এবং তোমাদেরই একদলকে তাদের দেশ থেকে বহিস্কার করছ। তাদের বিরুদ্ধে পাপ ও অন্যায়ের মাধ্যমে আক্রমণ করছ। আর যদি তারাই কারও বন্দী হয়ে তোমাদের কাছে আসে, তবে বিনিময় নিয়ে তাদের মুক্ত করছ। অথচ তাদের বহিস্কার করাও তোমাদের জন্য অবৈধ। তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।
ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ্ তা’লা ইহুদীদেরকে নির্দেশ দিয়ে ছিলেন সর্বদা মিলে মিশে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে। কিন্তু তারা আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে, জেরুজালেম ও যিহুদা নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। আর এ দু’টি রাষ্ট্র সর্বদাই যুদ্ধ-বিগ্রহ ও মারামারিতে লিপ্ত থাকত, ঠিক যেমন বাংলাদেশ ও পাকিস্থান। তখন আল্লাহ্ ক্রুধান্বিত হয়ে নেবুচাদ নেযারকে দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। তেমনি ইন্ডিয়াও হয়ত একদিন বাংলাদেশ ও পাকিস্থান ধ্বংস করে দিবে যদি এতদাঞ্চলের মুসলমানরা সতর্ক না হয়, ঐক্যবদ্ধ না হয়।
বাগদাদ ধ্বংসের কারণঃ পূর্বে আলোচনা হয়েছে আল্লাহ্ তা’লা অসংখ্য আয়াতে মুসলিম জাতির ঐক্য ফরয করেছেন এবং বিভক্তি হারাম করেছেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, মুসলমানরা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে ফিরকাবাজির সৃষ্টি করে মারামারি কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। যেমন উল্লেখিত ঘটনায় মাকামে মাহমুদের অর্থ, কেউ এ শব্দের অর্থ না জানলে গুনাহ হবে না, কেউ নামাযে বিসমিল্লাহ না পড়লেও নামায হয়ে যাবে। আরো অন্যান্য তুচ্ছ বিষয়ের উপর যখন দাঙ্গা, হাঙ্গামা ও গণহত্যা সংগঠিত হল তখন আল্লাহ্ তা’লা ক্রুদ্ধ হলেন এবং দাঙ্গা হাঙ্গামার পরেও যখন তারা সংশোধন হল না তখন হালাকু খানকে দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করে দিলেন। এখন প্রশ্ন হলো এ ধ্বংসলীলার দায় কার উপর বর্তাবে? উত্তর একটাই আলেম সমাজের উপর বর্তাবে। কারণ আলেমরা যদি বাগদাদের মোড়ে মোড়ে বিতর্কানুষ্ঠান না করত, ফেরকাবাজি করে দাঙ্গা হাঙ্গামার সৃষ্টি না করত তাহলে এ পরিস্থিতির উদ্ভব হত না। তদুপরি সম্মিলিত আলেম সমাজ যদি তাতারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করত তাহলে পৃথিবীর বুক থেকে তাতারীরা নিঃশ্চিহ্ন হয়ে যেত। কাজেই এ ধ্বংসলীলার দায় আলেমদের। আবার প্রসাশন বা সাধারণ জনগণ যদি দাঙ্গা সৃষ্টিকারী ফেরকাবাজ আলেমদের বিচার করত, শাস্তি দিত বা হত্যা করে ফেলত-তবুও তারা আল্লাহ্র গযব-তাতারী ধ্বংসলীলা থেকে বেঁচে যেতে পারত।
ইতিহাসের শিক্ষাঃ চিন্তার বিষয়, কথিত আছে যে, সম্রাট নেবুচাদ নেযার যখন জেরুজালেম ধ্বংস করার জন্য নগরিতে উপনিত হয় তখনো ইহুদি আলেমরা শরীয়তের তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় এবং মর্যাদায় কে বড়, দাউদ (আঃ) নাকি সুলায়মান (আঃ)- এ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত ছিল। ঠিক একইভাবে হালাকু খান বাগদাদ ধ্বংসের সময় শিয়া- সুন্নী আলেমরা বিতর্কে লিপ্ত ছিল- খিলাফতের প্রথম হকদার কে, আবূ বকর (রাঃ) নাকি আলী (রাঃ)। আবার সুন্নী আলেমরা অতীব নগন্য ও জঘন্য বিষয়, স্ত্রী লোকের দুধ পাত্রে করে বাজারে বিক্রি করা, স্ত্রীর দুধ খেয়ে ফেলা, স্বামীর কোন কথায় কয় তালাক পতিত হয়, এসব বিষয়ের তর্ক করে দলাদলি সৃষ্টি করে দাঙ্গা বাধিয়ে রাখত।
একইভাবে সমস্ত মুসলিম বিশ্বের কথা না বলে শুধু স্বদেশের কথা বলি। এখানের মুসলমানরা বিভিন্ন বিদাত ও মতবাদ সৃষ্টি করে হেফাজত, জামাত, তরিকত, আওয়ামী লীগ ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। তারপর আওয়ামী লীগ তরিকতি সুন্নী ইত্যাদিদের সমর্থনে বঙ্গসাগরের উপকুলে এই ব-দ্বিপের জন্মাবধি যা ঘটেনি, শাপলা চত্বরে ঘটাল স্বজাতি ভাইদের উপর ইতিহাসের সেই নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ। তেমনি হেফাযত, তাবলীগ ও তরিকতিদের মৌন সমর্থনে জামাতকে আদালত থেকে নিয়ে পথে ঘাটে মাঠে প্রান্তরে নির্বিচারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এখন বন্ধু, আমার কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর চাই। পৃথিবীতে আল্লাহ তা’লা ধর্ম পাঠিয়েছেন কি ঐক্যবদ্ধ থেকে মানবতাকে রক্ষা করার জন্য নাকি কামড়া কামড়ি করে মরার জন্য? ইহুদী ধর্ম থেকে নিয়ে ইসলাম পর্যন্ত প্রত্যেক ধর্মের আলেমরা কেন একই নিয়মে একই কায়দায় ফিরকা বিভক্তি সৃষ্টি করে আল্লাহ রাসূলের সাথে গাদ্দারি করে, স্ব-ধর্ম ধ্বংস করে, অনুসারীদের সাথে নিকৃষ্টতম প্রতারণা করে? ফিরকাবাজি করে আলেমরা ইসলাম ধ্বংস করছে নাকি রক্ষা করছে? কোরআন কি ফিরকাবাজির জন্য নাযিল হয়েছিল? ইসলামে ফিরকাবাজির সুযোগ আছে কি না? না থাকলে তাদের বিচার হওয়া উচিত কি না? বিচার না করলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন কি না? ফিরকাবাজির অবসান ঘটিয়ে ঐক্য ব্যতীত ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তির দ্বিতীয় কোন উপায় আছে কি না?
বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।
রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা,
তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,
বড় কথা বড় ভাব আসে না ক’মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে!
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে! (নজরুল)
বিষয়: বিবিধ
১২৪৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন