আগ্নেয়গিরির উদগিরণ- ৬

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২১ জুন, ২০১৬, ০৩:০৩:৩৯ রাত

তাম্বীহুল গাফেলীন-

আজ যদি প্রশ্ন করা হয়-বস্তুবাদ, নাস্তিক্যবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ-এর প্রবর্তক কারা বা কাদের অপরাধের কারণে পৃথিবীতে এসব মতবাদ ছড়িয়ে পড়েছে ? এর জন্য কারা দায়ী ? অভিজ্ঞ ব্যক্তি মাত্রই এক কথায় জবাব দিবে-এর জন্য ইউরোপীয় খৃষ্টান পোরুহিতরা দায়ী। কারণ পোরুহিতরা তাদের ধর্মগ্রন্থ এতটাই বিকৃত করেছিল যে, এখনো খৃষ্টানরা গর্বের সাথে বলে বেড়ায়-বাইবেলের চব্বিশ হাজার সংস্করণ পাওয়া যায়-যার একটার সাথে অন্যটার কোন মিল নেই। এখানেই বিকৃতির পরিমাণটা বুঝা যায়।

খৃষ্ট ধর্মের মুরুব্বিরা বাইবেলে ইতিহাস, ভুগোল ও বিজ্ঞান সংক্রান্ত এমনসব তত্ত্ব ও তথ্য ঢুকিয়ে দিয়েছিল – যেগুলি তৎকালীন সময় পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়েছিল বা মানুষের বোধ-বিশ্বাস অনুযায়ী ছিল। তাছাড়া তৎকালীন সমাজ ও শিক্ষা অনুযায়ী জ্ঞান-বিজ্ঞান সংক্রান্ত যেসব কথা প্রচলিত ছিল –সেসব বাইবেলের টিকা-টিপ্পনি বা ব্যাখ্যায় পোরুহিতরা জুরে দিয়েছিল। আর এসব কল্প কাহিনীকে .christian topography নাম দিয়ে তাদের শিক্ষার মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছিল। অথচ এসব বিষয়ের ঐশী কোন দলীল ছিল না। আর খৃষ্ট জগতে এ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হল, যারা মানত না তাদেরকে ধর্মদ্রোহি কাফের সাব্যস্ত করে শাস্তি দেয়া হত। গির্জা নিয়ন্ত্রিত ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতিত বিজ্ঞান চর্চার কোন সুযোগ ছিল না। কিন্তু স্পেন ও ক্রুসেড যুদ্ধের মাধ্যমে ইউরোপ মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হল। ফলে তারাও মুক্ত চিন্তা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা শুরু করল। আর বাস্তবতায় দেখা গেল তাদের অভিজ্ঞতা ও আবিষ্কার উদ্ভাবনগুলি বিকৃত ধর্ম গ্রন্থের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। ফলে গির্জা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। শুরু হয়ে গেল গির্জা আর দার্শনিক, বিজ্ঞানিদের মধ্যে সংঘাত। তাদেরকে ধর্মদ্রোহি নাস্তিক আখ্যা দিয়ে শাস্তির জন্য গীর্জা court of inquisition গঠন করল। এই অভিশপ্ত কোর্ট ১৪৮১ থেকে ১৮০১ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত তিন লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ৩২ হাজার মানুষকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারে, যার মধ্যে বিজ্ঞানী ব্রুনো ও গ্যালিলিউও ছিলেন।

ব্রুনোর অপরাধ ছিল, এই পৃথিবী ছাড়াও আরো পৃথিবী আছে- যেখানে অন্যান্য প্রাণীর বসবাস রয়েছে, তিনি এই মত পোষণ করতেন। ইঙ্কুইজিশন বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে এই সুপারিশসহ বিচারকদের হাতে অর্পন করেছিল যে, একে যেন খুবই লঘু শাস্তি প্রদান করা হয় এবং তার শরীর থেকে যেন এক ফোটা রক্ত মাটিতে না পড়ে। অর্থাৎ তাকে যেন জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। একইভাবে বিখ্যাত জোতির্বিদ গ্যালিলিওকে এ অপরাধে পুড়িয়ে মারা হয় যে তিনি বলতেন, পৃথিবী সুর্যের চারিদিকে ঘোরে।

পরিণতি যা হবার তাই হল। সমগ্র ইউরোপ গির্জার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল, গোটা খৃষ্টান জগত নাস্তিকে পরিণত হলো। তারা ধর্মকে ভাগাড়ে ছুড়ে ফেলে নিজেদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি শিক্ষা ইত্যাদি সব কিছুই বস্তুবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতার চাঁচে ঢেলে সাজাল।আর এভাবেই খৃস্টীয় পোরুহিতদের অপকর্মের ফসল বস্তুবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ জন্ম নিল এবং বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ল। কাজেই বুঝা গেল, খৃস্টীয় পোরুহিতদের অপকর্মের কারণেই খৃষ্ট ধর্ম ধ্বংস হয়েছে।

তদ্রুপ মুসলিম আলেমদের অপকর্মের কারণে ইসলাম ধ্বংস হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে উভয় শ্রেণীর কর্ম পদ্ধতি বিপরীতমুখী। যেমন পাদ্রীরা মানুষের পাপ মোচনের ক্ষমতাধিকারী হয়ে মুলতঃ ইশ্বরের আসন দখল করে বসেছিল। গির্জার এতটাই ক্ষমতা ছিল যে, ১০৭৭ সালে পোপ হিল্ডার ভ্রান্ড সম্রাট চতুর্থ হেনরিকে নির্দেশ প্রদান করেন, তিনি যেন ক্যানোসা দুর্গে তার সামনে এসে হাযির হন। সম্রাট এসে নগ্ন পায়ে অবনত মস্তকে পোপের সামনে দাড়িয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অন্যদের সুপারিশে পোপ তাকে ক্ষমা করেন। ফলে তারা অতুল ক্ষমতার অপব্যবহার করে যুলুম, নির্যাতন ও নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে প্রকারান্তরে খৃষ্ট ধর্মকে কফিনে ঢুকিয়ে দিয়েছিল।

পক্ষান্তরে ইসলাম প্রদত্ত ক্ষমতা বর্জন করে আলেমরা ইসলাম ধ্বংস করেছে। অর্থাৎ ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে খিলাফত ব্যবস্থার মাধ্যমে আলেমরা সর্বদা ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করবে। উল্লেখ্য যে, খৃষ্ট বা অন্য কোন ধর্মে এ জাতীয় বিধান নাই। কিন্তু যেদিন উমাইয়্যারা খিলাফতকে রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত করল সেদিন থেকে আলেমরা খিলাফত ও ক্ষমতা নিজেদের উপর হারাম করে নিয়েছে এবং উম্মাহ ধ্বংসের দায়িত্ব ওয়াজিব করে নিয়েছে। তদুপরি আলেমগন যদি ইসলামি অর্থ ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা ও মানবাধিকার সংক্রান্ত ইসলামের চির শ্বাশ্বত সুন্দর বিধান গুলি মানুষের মধ্যে প্রচার-প্রসার ও প্রয়োগের ব্যাবস্থা করতেন তাহলে ইউরোপের বস্তুবাদ, ধর্মহিন ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ, নাস্তিক্যতাবাদ ইত্যাদিতে মুসলিম বিশ্ব আক্রান্ত হতে পারত না। কিন্তু আলেম নামের এই পোরুহিতরা নিজেদের প্রকৃত দায়িত্ব পালন না করে ফেরকাবাজি ও দলবাজি সৃষ্টি করে কিভাবে ইসলাম ধ্বংস করেছে এবং করছে তার কিছু সংক্ষিপ্ত নমুনা নিচে তুলে ধরা হল। (ধারাবাহিক)

বিষয়: বিবিধ

১১৭৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372678
২১ জুন ২০১৬ রাত ০৩:২১
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ব্যক্তি মাত্রই এক কথায় জবাব দিবে ইউরোপীয় খৃষ্টান পোরুহিতরা দায়ী। ভালো লাগলো অনেক অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File