আগ্নেয়গিরির উদগিরণ- ৩

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ১৪ জুন, ২০১৬, ০১:২৮:১৬ দুপুর

আলেম সমাজের কর্মকান্ডের পর্যালোচনাঃ

আজ ইসলাম ও উম্মাহর এই পীড়াদায়ক পতনের মুল দায়ী হচ্ছে আলেম সমাজ। কারণ আলেমরাই ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে। কাজেই তারা যদি ফিরকাবাজি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকত, ইসলাম প্রদত্ত মানবাধিকারের বিধানগুলি প্রচার করত এবং ক্ষমতায় থাকত বা থাকার চেষ্টা করত তাহলে আজ ইসলাম ও উম্মাহর এমন লাঞ্চনাদায়ক পতন ঘটত না, আলেমদেরও জঙ্গি মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি অবিধা নিয়ে অভিশপ্ত জীবন যাপন করতে হত না। আলেম সমাজের উপর ওয়াজিব বা অত্যাবশ্যকিয় কর্তব্য- যেগুলি তারা আদায় করছেন না এমন সব বিষয় নিয়ে সামনে ধারাবাহিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করছি।

কিতমানে ইলম-সত্য গোপন করাঃ-ফিরকাবাজ আলেমরা যুগপৎ আল্লাহ্‌, রাসূল ও উম্মাহর সাথে গাদ্দারী করছে। এর প্রমাণ হচ্ছে, তারা উম্মাহ ও মানবাধিকার সংক্রান্ত কোরান হাদিসের মৌলিক বিধান গুলি গোপন রাখে, মসজিদ, মাদরাসায়, ওয়াজ মাহফিল, সভা সেমিনার, টকশো, গ্রহ্ন রচনা ইত্যাদি কোন মাধ্যমে প্রকাশ করে না। অথচ ফেরকাগুলি পরস্পরের কুৎসা রটনা ও গালাগালির ক্ষেত্রে সকল মিডিয়া মাধ্যম ব্যবহার করে। তারা যা প্রচার করে না সেগুলো হচ্ছে-

১। ফিরকাবাজীর বিধানঃ- ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়ের মধ্যে অন্যতম বিষয় হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য। ঐক্যবদ্ধ ভাবে তারা আল্লাহ্‌র দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবে। কোরানের অসংখ্য আয়াত দ্বারা ঐক্য ফরয এবং বিভক্তি হারাম প্রমাণিত। কিন্তু আলেম সমাজ এসব আয়াত গোপন রেখেছেন। তারা মসজিদ, মাদরাসা, ওয়াজ মাহফিল,সভা-সেমিনারে কোথায়ও এসব আয়াতের কথা বলেন না, ঐক্য সম্পর্কে আলোচনা করেন না, বিভক্তির কুফল বর্ননা করেন না। ফলে উম্মত বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়ে পরস্পর কামড়া-কামড়ি করে ধ্বংসের শেষ স্তরে উপনিত হয়েছে।

বিভক্তি সম্পর্কে “আল-কোরানের কাঠগড়ায় বিভক্তিবাদ” সিরিজটিতে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। সিরিজটি চলমান, আরো বহু লিখা বাকি আছে- যা ক্রমান্বয়ে সামনে আসবে। আবার আল-হাদিসের কাঠগড়ায় বিভক্তিবাদ শিরোনামে আরেকটি সিরিজ খুব শিঘ্রই শুরু হবে। কাজেই এখানে বিস্তারিত আলোচনা নিষ্প্রয়োজন, শুধু এক্সাম্পল হিসাবে কয়েকটি আয়াত পেশ করা হল।

وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى لَّقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الَّذِينَ أُورِثُوا الْكِتَابَ مِن بَعْدِهِمْ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ مُرِيبٍ ﴿الشورى: ١٤﴾

১। তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরই তারা পারস্পরিক বিভেদের কারণে মতভেদ করেছে। যদি আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশের পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকত, তবে তাদের ফয়সালা হয়ে যেত। তাদের পর যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছে, তারা অস্বস্তিকর সন্দেহে পতিত রয়েছে। (৪২: ১৪)

(11) شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ ﴿الشورى: ١٣﴾

২। তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মূশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন। (৪২: ১৩)

15) وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَةُ ﴿البينة: ٤﴾

৩। অপর কিতাব প্রাপ্তরা যে বিভ্রান্ত হয়েছে, তা হয়েছে তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরেই। (৯৮: ৪)

مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ﴿الروم: ٣٢﴾

৪। যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত। (৩০: ৩২)

(22) وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿آل‌عمران: ١٠٥﴾

৫। আর তাদের মত হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শন সমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে-তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব। (৩: ১০৫)

(32) وَأَنَّ هَٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿الأنعام: ١٥٣﴾

৬। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও। (৬: ১৫৩)

(40) إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ ﴿الأنعام: ١٥٩﴾

৭। নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা'আয়ালার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে। (৬: ১৫৯)

(9) وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى لَّقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الَّذِينَ أُورِثُوا الْكِتَابَ مِن بَعْدِهِمْ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ مُرِيبٍ ﴿الشورى: ١٤﴾

৮। তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরই তারা পারস্পরিক বিভেদের কারণে মতভেদ করেছে। যদি আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশের পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকত, তবে তাদের ফয়সালা হয়ে যেত। তাদের পর যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছে, তারা অস্বস্তিকর সন্দেহে পতিত রয়েছে। (৪২: ১৪)

(11) شَرَعَ لَكُم مِّنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ ﴿الشورى: ١٣﴾

৯। তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মূশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন করেন। (৪২: ১৩)

(20) وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ﴿آل‌عمران: ١٠٣﴾

১০। আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার। (৩: ১০৩)

﴿وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَةُ﴾

১১। প্রথমে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে তো বিভেদ সৃষ্টি হলো তাদের কাছে ( সত্য পথের ) সুস্পষ্ট প্রমাণ এসে যাওয়ার পর। (বায়্যিনা/ ৪)

(اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَٰهًا وَاحِدًا لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ ﴿التوبة: ٣١﴾ তারা আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে তাদের পন্ডিতগণকে ও সন্ন্যাসীদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে, আর মরিয়ম-পুত্র মসীহ্‌কেও অথচ শুধু এক উপাস্যের উপাসনা করা ছাড়া অন্য নির্দেশ তাদের দেয়া হয় নি। তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই। তাঁরই সব মহিমা -- তারা যেসব অংশী দাঁড় করায় সে-সব থেকে? (৯: ৩১)

وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ فَإِن تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ ﴿آل‌عمران: ٦٤﴾ -- আর ১২। আমাদের কেউ আল্লাহ্ ছাড়া নিজেদের পরস্পরকে রব হিসাবে গ্রহণ করবো না।’’ কিন্তু তারা যদি ফিরে যায় তবে বলো -- ''সাক্ষী থাকো, আমরা কিন্তু মুসলিম।’’ (৩: ৬৪)

قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ ۚ فَإِن تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ [٣:٦٤]

১৩। বলুনঃ ‘হে আহলে-কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস-যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান-যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, ‘সাক্ষী থাক আমরা তো অনুগত।(৩/ ৬৪)

বিষয়: রাজনীতি

৮৭১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371924
১৪ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:২৪
হতভাগা লিখেছেন :

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File