স্বাগতম মাহে রমযানঃ

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০৭ জুন, ২০১৬, ০১:০৮:৩৭ দুপুর

ছোট বেলায় মাইকিংয়ে শুনতাম, পৌস্টারে দেখতাম- মাহে রমযানের ডাক। ভাবতাম মানুষ সব বেক্কল হয়ে গেল নাকি, রমযান মাসকে মা ডাকে কেন ? কোনভাবেই ব্যাখ্যাটা মিলাতে পারতাম না। অবশেষে স্থির করলাম মায়েরা সেহেরির সময় রান্না-বান্না করে খাওয়ায় তাই তাদেরকে ডাকে। কাজেই মাহে অর্থ হে মায়েরা উঠ, রমযান অর্থ রোযার জন্য রান্না বান্না করে নিজে খাও অন্যদের খাওয়াও। কিন্তু পরবর্তিতে বুঝতে পারলাম মাহ অর্থ মাস, এর থেকে মাহিনা (মাসিক)। যেমন শব অর্থ রাত্রি, এখান থেকে শবিনা(রাত্রিয়, রাত্রে কোরআন খতম), শাবানা(রাত্রিয়, নৈশিক), শাবনুর(রাতের আলো), শাবনাজ(রাতে নায বা স্ফুর্তি করার মাল)। তবে শব্দগুলিতে ভুল আছে, প্রথমাক্ষরে আকার হবে না।

এভাবেই রোজ অর্থ দিন, রোজিনা বা রোজানা অর্থ দৈনিক। রোযা (মূলত রোজাহ) অর্থ দৈনন্দিন করা হয়েছে এমন। বস্তুত ইংরেজ আমলের আগে ফার্সি রাষ্ট্র ভাষা থাকার কারণে মানুষের কথ্য ভাষায় ব্যাপক ফার্সি শব্দ ঢুকে গেছে। সর্বোপরি পারস্যরাও ইসলামের প্রতি গাদ্দারি করেছে। তারা আরবী পরিভাষাগুলি নিজেদের ভাষায় পরিবর্তন করে নিয়েছে। যেমনঃ সওমকে রোযা, সালাতকে নামায, মুসলিমকে মুসলমান (আন বা আলিফ নুন দ্বারা বহুবচন বানানো ফারসি কায়দা), নবীকে পয়গাম্বর (বার্তা বাহক), মালায়েকাকে ফেরেশতা(প্রেরিত), আল্লাহকে খোদা (স্বয়ম্ভু) বানিয়ে ছেড়েছে। খোদা মানে খোদ-আ, অর্থ যে অন্যের মাধ্যম ছাড়া নিজে নিজে জন্ম নেয়, অস্তিত্বে আসে, স্বয়ম্ভু। কেউ কেউ বলেন খোদা বলা শিরক, কারণ গাছ-গাছালি, পশু-পাখি ইত্যাদি অনেক কিছুই স্বয়ম্ভু। আবার কেউ কেউ বলেন, সব কিছুর স্রষ্টা বা অস্তিত্ব দাতা আল্লাহ্‌। কাজেই খোদা বলতে শিরকের কিছু নাই।

আসলে পারস্যরা ছিল তৎকালীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সভ্য জাতি। আর কোন সভ্যতাকে ধ্বংস করা যায় না। যেমন বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতা হচ্ছে গ্রীক সভ্যতার উত্তর ধারক। তেমনি পারসিকরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল বটে তবে তারা ইসলামের চাঁচে না সেজে ইসলামকেই তাদের সভ্যতার চাঁচে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছে। এজন্যই তারা শিয়াবাদ সহ অন্য অনেক বিকৃতি ইসলামে ঢুকিয়ে দিয়েছে। রমযান অর্থ কোন কিছু আগুনে পুড়িয়ে ফেলা। এ মাসে আরবে প্রচন্ড গরম থাকত এবং এ মাসের রোযা গুনাহ পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়। এ জন্য এই নামকরণ করা হয়েছে। সুতরাং মাহে রমযান অর্থ রমযানের মাস, আরবিতে শাহরু রমযান। ফারসিতে ইযাফত বা সম্বন্ধ পদে যের বা এ-কার হয়। যেমন শেরে বাংলা।

যাই হউক, আল্লাহ্‌র রহমতের মাস শুরু হয়ে গেছে। এ মাসের প্রধান কাজ হল নিজে প্রস্তুতি গ্রহণ করা ও অন্যদের উৎসাহিত করা। আর এ মহান দায়িত্বটি পালন করে যাচ্ছেন কিছু সংখক ব্লগার। আল্লাহ্‌র রাহে নিবেদিত আল্লাহ্‌র এসব বান্দা বান্দিদের প্রচেষ্টা দেখলে আনন্দে আত্মাটা ভরে উঠে। মন থেকে বেরিয়ে আসে- হে আল্লাহ্‌! ধর্মদ্রোহি-দাজ্জাল-নাস্তিক্যতাবাদের এ ঘোর যুলুমাত-সয়লাবের প্রতিকূলে দাঁড়িয়ে তোমার যেসব বান্দা বান্দি জীবন বাজি রেখে তোমার পতাকা বুলন্দ রাখছে তাদেরকে ইহকাল পরকালে সন্তুষ্ট কর। উত্তম জাযা দান কর, আমীন।

আমার ভাই বোনেরা লিখছেন, রমযানের হক্ব পালন করছেন, আমিও কিছু লেখতে চেষ্টা করব। তবে আমার চিন্তা-চেতনা, আশা-আকাংখা, লক্ষ-উদ্দেশ্য একটাই উম্মাহর ঐক্য ও খিলাফত/মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। সে লক্ষে শুরু করেছিলাম আল কোরানের কাঠগড়ায় বিভক্তিবাদ। কিন্তু একটি ঘটনা, ঘটে যাওয়া এক ইতিহাসের ফলশ্রুতিতে শুরু করতে হল চিঠি সিরিজটি যা রমযান উপলক্ষে বন্ধ আছে, রোযার পর আবার শুরু হবে। সেখানে তিনটি মাস সময় নষ্ট হয়ে গেল, তবে এখন আর কালক্ষেপণ না করে আরো দু’টি সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছি আগ্নেয়গিরির উদগিরণ ও খিলাফত ইশতিহার বা সাত দফার আন্দোলন। এ সম্পর্কে সকলের একটু চেতনার আহ্বান জানাচ্ছি।

ইসলামের প্রতিটি বিষয়ের দু’টি উদ্দেশ্য রয়েছে, মুখ্য ও গৌণ বা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদির আসল উদ্দেশ্য আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি। কিন্তু পার্থিব উদ্দেশ্যও আছে যা অন্যত্র আলোচনা করব। যেমন রোযার মূল উদ্দেশ্য আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি। কিন্তু পার্থিব উদ্দেশ্য সারাদিন উপোস থেকে নিরন্ন বিপন্ন মানুষের দুঃখ কষ্ট অনুভব করা। তাদেরকে দান করা, সদকা-ফিতরা দেয়া, যাকাত দেয়া। তাতেও প্রয়োজন না মিটলে ইসলাম আরো দু’টি অর্থ ব্যবস্থা দিয়েছে ইনফাক ও ইসলামী সমাজতন্ত্র।

কাজেই আল্লাহ্‌ যাদেরকে সামর্থ দিয়েছেন তারা লোক দেখানো ইফতার পার্টি না দিয়ে, রকমারি বাহারি ইফতারের পসরা সাজিয়ে উদর ফুর্তি করার সময় লক্ষ করুন আপনার বাসার পাশেই যে বিধবা এক মুঠো মুড়ি দিয়ে ইফতার করছে, অভাবগ্রস্থ যে পরিবারটি এক মুঠো ভাত আর একটু শাক পাতা দিয়ে সেহেরি খাচ্ছে, ইয়াতিম যে পরিবারটি আপনার প্রতি তাকিয়ে তাকিয়ে সামাজিক বিভাজন আমরা ও তারা-প্রভু ভৃত্যের মনোভাব পয়দা হয়ে গেছে তাদের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিন। এখানেই ইসলাম, এটাই ইসলাম। রাসূল (সাঃ) মসজিদের মধ্যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন নি। মসজিদ কেন্দ্রিক ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। কাজেই বন্ধু, ইসলামকে মসজিদে নয় মানুষের মধ্যে মানবতার মধ্যে খুঁজ। এটাই ইসলামের শিক্ষা ও রোযার তাৎপর্য। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১২৫০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

371252
০৭ জুন ২০১৬ দুপুর ০১:২৬
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

প্রথম কয়েক লাইন পড়ে তো
হাসতে হাসতে মরি Rolling on the Floor Rolling on the Floor
কিন্তু তারপর জানলাম অনেক অজানা তথ্য, Good Luck Good Luck
আর শেষ দিকে এসে একেবারে বাকরুদ্ধ Worried Worried
371253
০৭ জুন ২০১৬ দুপুর ০১:৪০
নকীব আরসালান২ লিখেছেন : ধন্যবাদ, ভালো লাগলো।
371283
০৭ জুন ২০১৬ রাত ০৮:০৬
আফরা লিখেছেন : খুব ভাল লাগল ধন্যবাদ ।
371756
১২ জুন ২০১৬ সকাল ০৭:৫৭
দ্য স্লেভ লিখেছেন : দারুন লিখেছেন। সুন্দর ব্যাখ্যা

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File