আল-কোরানের কাঠগড়ায় বিভক্তিবাদ- ১৮
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:১১:২১ দুপুর
পরিত্যাক্ত কোরআনঃ
এ পর্যন্ত আমরা কোরানের যেসব আয়াতের ইবারাতুন নস দ্বারা অর্থাৎ আয়াতের প্রত্যক্ষ অর্থ দ্বারা ঐক্য ফরয এবং বিভক্তি হারাম করা হয়েছে-যেগুলোর আলোচনা করলাম। সামনে এ সম্পর্কে আরো ব্যাপক আলোচনা আসছে। কিন্তু তার আগে কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা জরুরী মনে করছি।
(১) কোরআন বর্জনঃ রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্র দরবারে অভিযোগ করবেন--
( وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَٰذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا ﴿الفرقان: আর রাসূল (সাঃ) বলছেন -- ''হে আমার প্রভু! নিঃসন্দেহে আমার স্বজাতি এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য বলে ধরে নিয়েছিল।(২৫: ৩০) এখন বাস্তবতায় দেখা যায়, শুধু পাশ্চাত্য ধারার আধুনিক শিক্ষিত ও গনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিবিদরাই নয় বরং ইসলামের ধারক বাহক আলেম সমাজই কোরআন বর্জন করে চলেছে। যেমন ফিরকাবাজী সংক্রান্ত যে সব আয়াতের আলোচনা হয়েছে এবং সামনে হবে সেগুলি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পরে আছে। এ জন্যই সেগুলি নিয়ে কোন আলেম, ইমাম, বক্তা, লেখক- মসজিদ, মাদরাসা, মাহফিল, টকশো ইত্যাদিতে আলোচনা করেছে বলে আমরা দেখিও না শুনিও না। তেমনিভাবে কোরআনের অর্থ, বিচার, দাওয়াত, রাষ্ট্র ও বৈশ্বিক খিলাফত, এক কথায় মোয়ামেলাত ও মুয়াশারাত সংক্রান্ত চির কল্যাণময় বিধানগুলি তারা আলোচনা করে না, মানুষকে জানায় না হয়ত তারা নিজেরাও জানে না। তারা শুধু আমল বা আমলিয়্যতের কিছু বিধান নিয়েই পরে আছেন। অর্থাৎ এখন আর মুসলমানরা কোরআন অনুসরণ করে না তবে আঙ্গুলে গুনা কয়েকটা আয়াত মেনে চলে, এটাই হল দাজ্জালিয়্যত। এখন প্রশ্ন হল এ বর্জনের কারণ কি?
বর্জনের কারণঃ কোরানের ধারক বাহক আলেম সমাজ, আর তারাই কোরআন বর্জন করেছে। কিন্তু এককভাবে তাদেরকে দোষারোপ করা যায় না, তারা মূলত অবস্থা বা সিস্টেমের শিকার। সিস্টেমটাই এমন যে, কোরআন শিক্ষার আসর অর্থাৎ মাদরাসাগুলিতে সঠিকার্থে কোরআন বুঝার সুযোগ নেই। যেমন বর্তমান সময়ের দুইজন বড় মুফাসসের মাওঃ সাইদী ও ওলিপুরী তারা ফিরকাবাজি, অর্থ, বিচার ইত্যাদি বিষয়ে কোথাও যথার্থ কোরানিক আলোচনা করেছে বলে অন্তত আমার জানা নেই। এর কারণ হল তারাও সিস্টেমের শিকার। সঠিকার্থে কোরআন বুঝার সুযোগ তাদেরও হয়নি। কারণ উপমহাদেশে কোরআন শিক্ষার দুটি কেন্দ্র, কওমী মাদরাসা ও আলিয়া মাদরাসা। এগুলি সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি।
আলিয়া মাদরাসাগুলি মূলত ইসলামের নামে বিষবৃক্ষ, ১৭৮০ সালে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিনস কর্তৃক কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত এ মাদরাসাগুলি শুধু বিষফলই উৎপাদন করছে। এর জন্য দায়ী আলীয়ার শিক্ষা সিস্টেম এবং ত্রুটিপূর্ণ সিলেবাস। এখানকার কোরানিক সিলেবাস হচ্ছে, দাখিল আলিমে কয়েকটি সুরার অনুবাদ ও ফাযিল ২য় বর্ষে তাফসীরে জালালাইনের কয়েকটি সুরা পাঠ্য রয়েছে। তবে তা পাঠ্য পর্যন্তই, চট্টগ্রাম নোয়াখালী ও বরিশালের কয়েকটি মাদরাসা ব্যতিত অন্যান্য মাদরাসাগুলিতে সাধারণত সিলেবাসটুকু পড়ানো হয়না, আসলে পড়ানোর মত যোগ্যতা সম্পন্ন লোকই নাই। কাজেই পরীক্ষার সময় ছাত্রদের নকলই ভরসা। তাছাড়া এখানে কোরআন চর্চা কতটুকু হয় তা আলিয়ার ছাত্রদের দেখেই বুঝা যায়।
আবার সেখানে পরীক্ষা দেয়ার সময় আমরা নোট-গাইড পড়েছি । আমার এখনো মনে আছে সুরা বাকারার যেসব আয়াতের আলোচনা সামনে আসছে সেগুলো সম্পর্কে শানে নুযুল, ব্যাখ্যা ইত্যাদিতে বলা হয়েছে, এগুলো ইহুদী খৃষ্টান সম্পর্কে নাযিল হয়েছে বা কাফের মুশরেকদের কথা বলা হয়েছে। এভাবেই কোরানের উপদেশমূলক নেতিবাচক আয়াতগুলিকে অমুসলিমদের সম্পদ গন্য করে সম্পূর্ণ রুপে বর্জন করা হয়েছে।
বস্তুত ইসলাম বিকৃতি ও কোরআন উঠে যাওয়ার এ দুর্দিনে ইলম ও আমলের যতটুকুই বা অবশিষ্ট আছে তা উপমহাদেশের কওমী মাদরাসাগুলিতেই আছে। অথচ সেখানকার সিলেবাসটা লক্ষ করুন। এখানে শিশু শ্রেণী থেকে স্নাতক-জালালাইন পর্যন্ত প্রত্যেক ক্লাসে ফিকহ বাধ্যতামূলক, আরবী গ্রামার, সাহিত্য, উসূল আছে, মানতিকের (ন্যায় শাস্ত্র) মত ফালতু সাবজেক্ট আছে। আবার মাস্টার্স প্রথম পর্বে মিশকাত নামক হাদীসের একখানা কিতাব এবং শেষ বর্ষ বা দাওরায় সিহাহ সিত্তাহ পড়ানো হয়। আর কোরআন চর্চা বলতে মাধ্যমিকে (হেদায়াতুন্নাহু, কাফিয়া) কোরানের অনুবাদ আর উচ্চস্তরে কোরানিক সাহিত্য জালালাইন ও বায়যাবি পড়ানো হয়। কাজেই শাস্ত্রভিত্তিক ইলম চর্চার অবস্থা হল--
ফিকহ চর্চাঃ বস্তুত ভারত বর্ষে ইসলাম শিক্ষার একমাত্র এ কেন্দ্রগুলি মূলত ফিকহ তথা হানাফী ফিকহ শিক্ষা কেন্দ্র। ব্যাপকার্থে কোরআন হাদীস চর্চা কেন্দ্র বলাটা ভুল হবে। কারণ শিশু শ্রেণী থেকে স্নাতক পর্যন্ত প্রত্যেক ক্লাসে গুরুত্ব সহকারে ফিকাহর বিভিন্ন কিতাব পড়ানো হয়। মিশকাত দাওরায় ফিকাহর আরো ব্যাপক চর্চা হয়। কারণ এখানে হাদীস গ্রন্থগুলি ফিকহের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়। কোন হাদীস দ্বারা কোন মাসয়ালা বের হল, ইমাম গণ কী কী মত দিয়েছেন, কি এখতেলাফ করেছেন, কি কি দলীল গ্রহণ করেছেন এ জাতীয় সম্পূর্ণ ফিকহ ভিত্তিক আলোচনা করা হয়। তবে ফিকহের মধ্যে ইসলামী অর্থ, বিচার, রাষ্ট্রব্যবস্থা বা খিলাফত ইত্যাদি সম্পর্কে কোন ধারনাই দেয়া হয় না।
হাদীস চর্চাঃ সিমীত আকারে হাদীস চর্চা হয়। যেমন মাস্টার্স প্রথম পর্বে মিশকাত পড়ানো হয় আর দ্বিতীয় পর্বে সিহাহ সিত্তাহ। সিহাহ সিত্তার মধ্যে শুধু বুখারী খতম করা হয়, আর বাকীগুলি অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশের মত পড়া হয়। কারণ এ বিশাল বিশাল কিতাবগুলি এক বছরে শেষ করা প্রায় অসম্ভব। দুই বছরে পাঠ্য থাকলে হয়ত কিছুটা সামঞ্জস্য হত। উল্লেখ্য যে, কোরানের ন্যায় বুখারী শরীফ ৩০ পারা। প্রথম এক দুই পারা বিশাল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ সহকারে পড়া হয়। এভাবে বছর শেষ হয়ে যায়। তারপর পরীক্ষার আগে শুধু দৌড়ের উপর রিডিং পড়ে কিতাব খতম করা হয়। ফলে ছাত্ররা কিতাবের প্রথমার্ধের পবিত্রতা নামাজ রোযা ইত্যাদি সম্পর্কে বুৎপত্তি অর্জন করতে পারলেও শেষার্ধে বর্ণিত ইসলামী অর্থ বিচার রাষ্ট্র ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে কোন ধারনাই হাসিল করতে পারে না।
আবার হাদীস চর্চার প্রধান বিষয় হল আসমায়ে রিজাল অর্থাৎ হাদীসের বর্ণনা কারীগণ সত্যবাদী ন্যায়বান কিনা, হাদীসটি সহীহ নাকি দুর্বল নাকি জাল তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করা, হাদীসটি কোন আয়াত বা অন্য কোন হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা, থাকলে এগুলির মধ্যে সামঞ্জস্যের বিধান কি? এই হলো হাদীসের মূল আলোচ্য বিষয়। কিন্তু দেওবন্দী ধারায় তথা আফগান থেকে আরাকান পর্যন্ত কোন মাদ্রাসায় রিজাল শাস্ত্রের নাম নিশানা পর্যন্ত নাই। মুরুব্বীরা কোরআন হাদীস চর্চা বাদ দিয়ে আমাদেরকে শুধু ফকীহ বানাবেন। কামিল শ্রেণীরও একই অবস্থা।
সাহিত্য ও গ্রামারঃ কওমী মাদরাসাগুলিতে আরবী গ্রামার ও সাহিত্য মোটামোটি ভালই পড়ানো হয়। এজন্য তারা প্রাচীন আরবীতে কিছুটা দক্ষতা অর্জন করলেও আধুনিক আরবী এবং চিঠি-পত্র ও প্রবন্ধ লিখায় একেবারে অক্ষম।
কোরান চর্চাঃ এ জিনিসটা দুষ্প্রাপ্য। কারণ এখানকার মাধ্যমিকে শুধু কোরানের অনুবাদ পড়ানো হয়। আর জালালাইন ও বায়যাবী নামে দুটি তাফসীর পাঠ্য থাকলেও এগুলিকে কখনই তাফসীর বলা যায় না বরং সাহিত্য বলতে হবে, বড় জোর কোরানিক সাহিত্য বলা যায়। এ গুলোতে শুধু শব্দার্থ, শব্দ বিশ্লেষণ, গ্রামাটিকেল জটিলতার সমাধান, দর্শন (মানতিক) শাস্ত্রের প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। তাও আবার বায়যাবিতে কোরানের প্রথম দুয়েক পৃষ্ঠা পড়ানো হয়। কাজেই এখানে যথার্থ অর্থে কোরআন চর্চা নেই বললেই চলে। কিন্তু যদি কওমী মাদরাসার উচ্চ ক্লাসগুলিতে (কাফিয়া থেকে মিশকাত) তাবারী, কুরতুবী, ইবনে কাছির বা এ জাতীয় উম্মাহর সর্ব স্বীকৃত কোন একটি তাফসীর ৫ পারা বা ১০ পারা করে পাঠ্য করে দেয়া হত তাহলে অন্তত কোরআন চর্চার কিছুটা সুযোগ হত এবং ইসলাম ও উম্মাহ উপকৃত হতে পারত।( শিক্ষা সমস্যার বিষয়ে সত্যের ক্ষেপনাস্ত্র গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে)।
আবার যাই বা কোরআন অনুবাদটুকু পড়ানো হয়, সেক্ষেত্রে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। উস্তাদগণ কোরানের নেতিবাচক আয়াতগুলিকে ইহুদী-নাসারা বা কাফের-মুশরেকদের শানে নাযিল হয়েছে, ওটাতে কাফের মুশরিকদের কথা বলা হয়েছে, এটা বনী ইসরাইল ও তাদের পুরুহিত সংক্রান্ত। এভাবে যেসব আয়াতে ইহুদী, খৃষ্টান ও অন্য মুজরিমদের দৃষ্টান্ত পেশ করে আল্লাহ্ তা’লা মুসলমানদের উপদেশ দিয়েছেন- সেসব আয়াতকে অমুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য গন্য করে বর্জনের স্তরে ফেলে রাখা হয়েছে।
আমার স্পষ্ট মনে আছে নিম্নোক্ত আয়াতটি সম্পর্কে আমাদেরকে বলা হয়েছে, এ আয়েতটি ইহুদী নাসারাদের শানে নাযিল হয়েছে, কারণ তারা বহু ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল।
(إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ ﴿الأنعام: ١٥٩﴾
নিঃসন্দেহ যারা তাদের ধর্মকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দল হয়ে গেছে, তাদের জন্য তোমার কোনো দায়দায়িত্ব নেই। নিঃসন্দেহ তাদের ব্যাপার আল্লাহ্র কাছে, তিনিই এরপরে তাদের জানাবেন যা তারা কী করেছিল। (৬: ১৫৯)
আবার নিম্নোক্ত আয়াতটি সম্পর্কে বলা হইয়েছে, এ আয়াতটি আওস খাজরাযের শানে নাযিল হয়েছে। কারণ চির শত্রু আউস খাজরায ইসলামের বদৌলতে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়, কিন্তু কুটিল ইহুদীদের প্ররোচনায় তাদের মধ্যে পুনঃ যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হলে রাসূল (সাঃ) দৌড়ে গিয়ে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন। তখন আয়াতটি নাযিল হয়, কাজেই এগুলি তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট, এগুলোতে আমাদের কোন খোরাক নাই।
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾
তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করে বিভক্ত হয়ো না ৷ আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো ৷ তোমরা ছিলে পরস্পরের শক্র ৷ তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন৷ ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো৷ তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে৷ আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন।এভাবেই আল্লাহ তাঁর নির্দশনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন ৷ হয়তো এই নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে। (আল-ইমরান/১০৩)
এমনি ভাবে কোরানের অর্থ, বিচার, রাষ্ট্রব্যবস্থা বিজ্ঞান ইত্যাদি সংক্রান্ত আয়াতগুলি সম্পূর্ণ বর্জন করে দেয়া হয়েছে। আর এ কারণেই আজ ইসলাম ও উম্মাহর এই পরিণতি। ( বিস্তারিত সত্যের ক্ষেপনাস্ত্র ও খিলাফত ইশতিহার) । পাঠকদের জ্ঞাতার্থে আমি দুয়েকটা উদাহারণ তুলে ধরছি—
অর্থব্যবস্থাঃ দরিদ্র শ্রেনীর প্রয়োজন অনুসারে ইসলাম যাকাত, ইনফাক ও ইসলামী সমাজতন্ত্র- এ তিনটি অর্থ ব্যবস্থা প্রদান করেছে। কিন্তু আলেমগণ শুধু যাকাতের বিধান রেখে বাকী দুটি বর্জন করেছেন।
১। ইনফাক সংক্রান্ত আয়াত হচ্ছে একশোর উপরে। যেমন - لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ ﴿آلعمران:
কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর আল্লাহ তা জানেন। (৩: ৯২
২। ইসলামী সমাজতন্ত্র সংক্রান্ত আয়াত সীমিত--
وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ [٩:٣٤]
আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।
وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ ﴿البقرة: ٢١٩﴾
আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার। (২: ২১৯)
৩। রাষ্ট্র ব্যবস্থা/ ইসলাম প্রতিষ্ঠা/ খিলাফত সংক্রান্ত আয়াত অসংখ্য--
ۚوَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ [٥:٤ ] وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ [٥:٤٧]
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٥:٤٥]
, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের ও ফাসেক। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।
أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ [٥:٥٠]
তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্ববাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে?
দ্রষ্টব্যঃ এসব আয়াত বর্জনের স্তরে না ধরলে তো তাবলীগ ও সুফীবাদীদের ন্যায় যারা খিলাফত প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে না তারা কাফের, ফাসেক ও যালিম প্রমাণিত হয়ে যায়।
কোরআন বর্জনের এ অবস্থা কোন যুগ থেকে শুরু হয়েছে তা গবেষণার বিরাট যজ্ঞক্ষেত্র। কিন্তু উম্মাহর সর্বসম্মত গ্রহিত পূর্বের সব তাফসীর গ্রন্থগুলিতে এমনটা দেখা যায়না। সেগুলোতে সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলির শানে নুযুল হিসাবে ইহুদি খৃষ্টানের উল্লেখ থাকলেও আয়াতগুলিকে তাদের জন্য খাস করে দেয়া হয়নি।এখন প্রশ্ন হল, এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কি?
মুক্তির উপায়ঃ বস্তুত সলফে সালেহীন কোরানের শানে নুযুল বর্ণনা করেছেন এ জন্য যে, সংশ্লিষ্ট আয়াতটি কোন প্রেক্ষাপট, অবস্থা ও কারণে নাযিল হয়েছে তা জেনে সেই অবস্থা ও কারণ যেখানে পাওয়া যাবে সেই আয়াতটি সেখানেই দক্ষতার সাথে বাস্তব প্রয়োগ করার জ্ঞানার্জনের লক্ষে। কিন্তু বর্তমানের আলেম সমাজ বাস্তব প্রয়োগের খবর নাই নুযুলের সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য আয়াতগুলি বরাদ্ধ দিয়ে বর্জন করে চলেছেন। কাজেই এ থেকে কিছুটা উত্তরনের পথ হচ্ছে, শানে নুযুলের সাথে সাথে বাস্তব প্রয়োগ উল্লেখ করতে হবে। যারা শানে নুযুল পাঠ করবেন তারা সাথে সাথে বাস্তব প্রয়োগ করবেন ও পড়বেন। কওমী ও আলীয়ার ছাত্রদের শানে নুযুলের সাথে বাস্তব প্রয়োগও শিক্ষা দিতে হবে এবং এভাবে প্রশ্ন করতে হবে, আয়াতটির শানে নুযুল বর্ণনা কর ও বাস্তব প্রয়োগ দেখাও। যাই হউক এখন প্রশ্ন হল, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য কোরান বুঝার সহজ উপায় কী হতে পারে ?
কোরআন বুঝার উপায়ঃ
যারা মাদরাসা শিক্ষিত নয় কিন্তু কোরআন নিয়ে গবেষণা করছে, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করছে তাদের সম্পর্কে আলেমরা আপত্তি তুলছে এবং বলছে কোরআন বুঝা এত সহজ নয়, মাদরাসায় না পড়ে কোরআন বুঝা যাবেনা। এ জন্যই তারা মাওঃ মওদুদী ও ডাঃ জাকির নায়েক ও অন্যদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করছে । অথচ তারা আনুষ্ঠানিকভাবে মাদরাসায় না পড়লেও সংশ্লিষ্ট কিতাবাদি এতো বেশী পড়েছে যে, সাধারণ মাদরাসা শিক্ষিতদের তারা পড়ানোর যোগ্যতা রাখে। যাই হউক, এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তর্ক-বিতর্ক চলছে। অথচ এক্ষেত্রে কারো বক্তব্যই অগ্রাহ্য নয়। কারণ কোরআন পাঠকের তিনটি স্তর--
প্রথম স্তর হচ্ছে যারা কোরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে চায়। তাদের জন্য মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজন নাই। সাধারণ কোন অনুবাদগ্রন্থ অনুসরণ করলেই চলে। আল্লাহ্ তা’লা ইরশাদ করেন وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِن مُّدَّكِرٍ ﴿القمر: ٤٠﴾ আমি কোরআনকে বোঝবার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? (৫৪: ৪০) কাজেই যে কেউ কোরানের মুহকাম আয়াতগুলির অর্থ বুঝতে পারে, উপদেশ গ্রহণ করতে পারে ও সে অনুযায়ী ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে পারে, তাতে আলেম হওয়ার দরকার নাই।
দ্বিতীয় স্তরের পাঠক হচ্ছে যারা কোরান থেকে বিধি-বিধান ও মাসয়ালা উদ্ভাবন করতে চায়। তাদের জন্য মাদরাসা শিক্ষার সুযোগ না হলে অন্তত উসুলে ফিকহের একটি কিতাব পাঠ করা আবশ্যক। উসুলুশ শাশী নামক কিতাবটি কওমী ও আলিয়া মাদরাসায় পাঠ্য। এর বঙ্গানুবাদ বাজারে পাওয়া যায় বা আমার বই নামক ওয়েব সাইড থেকে ডাউন লোডও করা যেতে পারে। এ বই থেকে কোরানিক বিধি বিধানের কিছু কিছু উসুল বা মূলনীতি জেনে নিলে তাও কোন আলেমের সহযোগিতা নিতে হবে- তাহলে কোরানের বিধি বিধান ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ জানার জন্য অনেকটা সহায়ক হবে। সাধারণ পাঠকদের কোরআন বুঝা কিঞ্চিৎ সুবিধার্থে উসুলের কয়েকটি মূলনীতি পেশ করছি।
১। আম (ব্যাপকার্থক) শব্দ। এগুলিকে ব্যাপকার্থেই প্রয়োগ করতে হবে।
২। খাস (নির্দিস্ট)। এগুলিকে নির্দিস্ট অর্থে প্রয়োগ করতে হবে।
৩। আমর বা অনুজ্ঞা। এর দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়। তবে ব্যতিক্রমও আছে।
৪। নাহী বা নিষেধাজ্ঞা। এর দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়। তবে ব্যতিক্রমও আছে। আরো অন্যান্য কিছু উসুল জানতে হবে।
তৃতীয় স্তরের পাঠক হচ্ছে যারা কোরানের তাফসীর করতে চায় বা লিখতে চায় তাদের জন্য কোরআন সংশ্লিষ্ট ২৫ প্রকারের ইলম অর্জন করতে হয়, ন্যুনতম ১০টি তো অত্যাবশ্যক। তবে বর্তমান যুগে তাফসীর লিখা আরো কঠিন। কারণ উক্ত ২৫ প্রকার ইলমসহ বিজ্ঞানের এ উন্নতির যুগে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের সকল শাখায় জ্ঞান না থাকলে তাফসীর করা সম্ভব নয়। আর এমনটা হচ্ছে না বলেই বিজ্ঞান সংক্রান্ত আয়াতগুলি আজো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এখন প্রশ্ন হল, সাধারণ মানুষের জন্য সহজে কোরানের অর্থ বোঝা ও উপকৃত হওয়ার পদ্ধতী কী হতে পারে?
কোরআন পাঠের পদ্ধতীঃ যারা গ্রাম্য অশিক্ষিত মানুষ তারা সওয়ারের নিয়তে কোরআন তিলাওয়াত করবেন। কিন্তু যারা শিক্ষিত তারা অর্থ না বুঝে কোরআন পড়বেন না। বর্তমানে বাংলা ও ইংরেজীতে শত শত অনুবাদ বাজারে ও নেটে পাওয়া যায়। তবে ইসলামী ফাউন্ডেশনের অনুবাদটাই সবচেয়ে উত্তম। পাঠকদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে- প্রতিটা আয়াত পাঠ করে অর্থটা ভাল করে বুঝবেন, তারপর কয়েক মিনিট চিন্তা করে তা বাস্তবতার সাথে মিলাবেন। এভাবে দৈনিক যতটা আয়াত পড়বেন- অর্থ বুঝে তা বাস্তবতার সাথে মিলাবেন। তবে বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোরানের বিধানগুলি ব্যক্তি জীবন থেকে নিয়ে বৈশ্বিক পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপকার্থে ও রুপকার্থে প্রয়োগ করতে হবে। এমনিভাবে এক সময় আপনি বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে যাবেন, আপনার মাথা ঘুরিয়ে যাবে, কোরআন যে একটা বাস্তব মো’জেযা তা বুঝতে পারবেন। আপনি অবাক হয়ে ভাববেন। এ কোরআন কি সেই কোরআন যা আমি এতদিন পড়েছিলাম। আপনার মনে হবে কোরআন নতুন নাযিল হচ্ছে। কারণ তখন আপনি দেখতে পাবেন, মানব জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট ইহলৌকিক, পারলৌকিক, আন্তিক যত বিষয় আছ কোরআনে উত্তম সল্যুশন দেয়া আছে। আপনি ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ যে কোন সমস্যা কোরআনে খুঁজতে থাকেন। দেখবেন কোথাও না কোথাও এর উত্তর পেয়ে গেছেন।
অনন্তর আমিও গতানুগতিক ধারায় শিক্ষা গ্রহণ করেছি। তবে বাল্য কালে বহুবার আমার পিতার মুখে ফিরকা ও এর পরিণতি সম্পর্কে শুনেছিলাম। সেই থেকে ফিরকাবাজদের প্রতি আমার মনে একটা উৎকট ঘৃণার জন্ম নিয়ে ছিল। তারপর ক্রমে ক্রমে মুসলিম বিশ্বের অবস্থা অবলোকন করে, বিশেষত ব্রাডারহুডের উপর হত্যা নির্যাতন দেখে, কাফেরদের ডিঙ্গিয়ে তালেবান আইসিসের মুসলিম গণহত্যা দেখে, পেশোয়ারে ১৫০ শিশু হত্যা দেখে এমনিতেই নিমমরা হয়েছিলাম। কিন্তু শাপলা ট্র্যাজেডি ও জামাত ট্র্যাজেডির পর নিজেকে আর জীবিত বলে মনে হল না। কাজেই নিজের উপর ফরয মনে করলাম দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে ঐসব ফিরকাবাজদের মৃত্যুর দোয়ারে পাঠানো যারা এসবের জন্য দায়ী, পরোক্ষ হত্যাকারী। কারণ দেওবন্দ ও জামাত ইসলামের এ মুল দুটি ধারা ঐক্যবদ্ধ থাকলে শুধু বাংলাদেশে নয় উপমহাদেশে তারাই ক্ষমতায় থাকত। তখন আর ইসলাম ও ইসলাম পন্থিদের উপর এরূপ আঘাত আসতে পারত না। এরা আল্লাহ রাসূলের আদেশ উপেক্ষা করে ফিরকার সৃষ্টি করে মানুষ মারার একেকটা কারখানা খুলে বসেছে। কাজেই হেফাজত-জামাত (এবং ফিলিস্তিন, আরাকান, গুজরাট) এর গনহত্যার ভিডিও চিত্রগুলি দেখে বিবেক আমাকে তার স্বিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল—
আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই/ স্বজন হারানো শ্মশানে ওদের চিতা আমি তুলবই।
আমার স্বিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হল, ঐসব খুনি ফিরকাবাজদের হয় ঐক্যের মঞ্চে তুলব নয় ফাসির মঞ্চে টেনে নিয়ে যাব। আর তা তিনটি কারণে। ১) ফিরকাবাজরা মুরতাদ, আর মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। দলীল অত্রগ্রন্থ অর্থাৎ কোরআন হাদীস। ২) এরা পরোক্ষ খুনি, আর পরোক্ষ খুনের জন্য দিয়ত/ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হয়। কিন্তু খুনের সংখ্যা বেশি বিধায় কিসাস হতে পারে। দলীল, ফিকহের গ্রন্থাবলী ও আগ্নেয় গিরির উদগিরন। ৩) আল্লাহ রাসূলের দুশমন এসব ফিরকাবাজদের ধ্বংস না করলে ইসলাম ও উম্মাহ মুক্তি পাবে না। দলীল, মানুষের বিবেক। আর তা বুঝার জন্য দার্শনিক হওয়ার দরকার নাই, মোটা মাথাই যথেষ্ট।
অনন্তর ঐসব ফিরকাবাজদের পাকড়াও করার জন্য কোরআন হাদীস চষে ফিরকার বিধান অন্বেষণ শুরু করলাম। তারপর কলম ধরলাম, তারপরই আমি হয়ে গেলাম এলিয়েন-ভিন গ্রহের প্রাণী, আমাকে কেউ চিনে না, আমার ভাষা (ঐক্যের ডাক) হয়ে গেল এলিয়েনের ভাষা-ভিন গ্রহের ভাষা, যা ফেরকাবাজরা বুঝেনা, বুঝতে চায় না, চেষ্টা ও করেনা। ফলে ঘরে বাইরে প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম। পরিচিত জনরা আমার উদ্দেশ্য জানতে চাইছে, অপরিচিতরা আমাকে কোন ফিরকার, কী উদ্দেশ্য জানতে চাইছে। তাছাড়া বর্তমানে যেভাবে ইসলামের নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ জন্ম নিচ্ছে তাতে কে আবার কী সন্দেহ করে বসে, কাজেই নিজের অবস্থান পরিস্কার করা জরুরী মনে করছি।
আত্ন পরিচয়ঃ দেওবন্দ, তাবলীগ, জামাত, এ তিনটি ধারার সাথে আমার সম্পর্ক। আর এ সম্পর্ক উড়ে এসে জুড়ে বসা নয় একেবারে নাড়ীর সম্পর্ক। আমার পিতা ছিলেন দেওবন্দ থেকে মুফতী হয়ে আসা ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রথম ব্যক্তি (আমার জানা মতে)। স্বাধীনতার পূর্বাপর এ দেশে যারা মুফতীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ফাতওয়া ও মাসায়েল গ্রন্থে যে কয়েক জনের জীবনী এসেছে তন্মধ্যে একজন হলেন আমার পিতা। তাছাড়া দেশের অধিকাংশ মাদরাসায় তার ছাত্ররা শিক্ষকতা করছেন। কাজেই বলা যায় কওমী ধারার শিক্ষার্থীদের বিশাল একটা অংশ আমার পিতার ইলমের সাথে সম্পৃক্ত। তদুপরি এ ধারার বর্তমান মুরুব্বী মুফতী ওয়াক্কাস সম্ভবত তার ক্লাসমেট, নুর হুসাইন কাসেমী, ফরীদ মাসউদ ও অন্যান্য দেওবন্দী আলেমরা জুনিয়র। আবার কওমী মাদরাসায় পড়ার সুবাদে তাবলীগের সাথে সম্পর্ক, এখনো আমি তাবলীগ করি। আবার আলিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুবাদে শিবির-জামাতের সাথে সম্পর্ক। এছাড়া আমার এক পিতৃব্য যিনি এ দেশের অন্যতম একজন ধর্মীয় মুরুব্বী ছিলেন, পীর ছিলেন-কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করেছেন আমি তার মুরীদ ছিলাম বিধায় আমি সুফীবাদীও বটে। আবার সালাফীদের শিরক বিদাত বিরোধি আন্দোলনের আমি একজন যৌক্তিক সমর্থক বিধায় আমি তাদেরও একজন। বস্তুত প্রত্যেক ফেরকার যতটুকু ইসলামের ততটুকু আমার, আর মন্দটুকু সংশ্লিষ্ট ফিরকাবাজদের। এই হল ফিরকা সংক্রান্ত আমার পরিচয়। এসব ফিরকার সাথে আমার সম্পর্ক বিধায় প্রত্যেকের দোষ ত্রুটি আমার জানা আছে। এখন সেগুলি সংশোধনের আশা রাখি।
বস্তুত এসব পরিচয় হল গৌণ, কথার কথা। তার মধ্যে আসল কথা হচ্ছে, আমি মুসলমান। আর মুসলমান হিসাবে আমার প্রধান কর্তব্য হচ্ছে এসব ফিরকার মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা, বাধা এলে প্রতিরোধ করা। কাজেই প্রত্যেক ফেরকার মুরুব্বী ও নেতৃবৃন্দের কাছে আমার প্রশ্ন আপনাদের আপত্তি আছে ? আল্লাহ্ রাসূল ঐক্য ফরয এবং বিভক্তি হারাম করেছেন, সেখানে আপনারা উম্মাহকে বিভক্ত করে আমাদের ইহকাল পরকাল ধ্বংস করবেন, কে দিল সেই অথরিটি, কবে ইসলাম আপনাদের হাতে ইজারা দেয়া হয়েছে ? কাজেই কোরান-সুন্নাহর পথে, ঐক্যের পথে না এলে তো একটা যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠবে। অনন্তর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, অন্যায় দেখলে হাতে, না পারলে মুখে, তাও না পারলে অন্তরে পরিকল্পনা করে প্রতিরোধ করবে। কিন্তু আমি উল্টোদিক থেকে, তৃতীয় স্তর থেকে অর্থাৎ অন্তরের পরিকল্পনা তথা কলমের দ্বারা শুরু করেছি। তারপর পায়ে হেটে গিয়ে বিভক্তিবাদীদের ঐক্যের দাওয়াত দিব। অস্বীকার করলে যুদ্ধ ব্যতীত উপায় থাকবে না, আর এটাই কোরআন সুন্নাহর নির্দেশ। কাজেই আমার খুল্লাম-খোলা-প্রকাশ্য ঘোষণা হচ্ছে, ফিরকাবাজদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধ চলবে ততক্ষণ, যতক্ষন পর্যন্ত না তারা ধ্বংস হচ্ছে অথবা আমি। হে ফিরকাবাজরা--
اتَّبِعُوا مَن لَّا يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُم مُّهْتَدُونَ [٣٦:٢١]
অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।
وَمَا لِيَ لَا أَعْبُدُ الَّذِي فَطَرَنِي وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ [٣٦:٢٢]
আমার কি হল যে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে, আমি তাঁর এবাদত করব না?
সুতরাং ইসলামের সন্তান, হে মাদরাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, শিবির, ছাত্র সেনা, ই, শা ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রলীগ ইত্যাদির ছেলেরা ও অন্যান্য তরুণ যুবকেরা ইসলাম ও উম্মাহ রক্ষার যুদ্ধে তোমরা কি থাকবে আমার সাথে ? যদি একান্তই আত্নহত্যার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেল তাহলে সাক্ষি থাক-- فَإِن تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ [٣:٦٤] তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, ‘সাক্ষী থাক আমরা তো আল্লাহর অনুগত।(৩/ ৬৪) কাজেই আল্লাহ-রাসূলের নির্দেশ পালনার্থে আমি একাই নিজেকে কোরবান করলাম। আর যদি থাক আমার সাথে তাহলে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি গ্রহণ কর—
وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ [٢٨:٥]
ভু-পৃষ্ঠে যাদেরকে দূর্বল করে রাখা হয়েছে, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে পৃথিবীর উত্তরাধিকারী করার।
وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُم مَّا كَانُوا يَحْذَرُونَ [٢٨:٦]
এবং তাদেরকে পৃথিবীর ক্ষমতায় আসীন করার এবং যুগের ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য-বাহিনীকে তা দেখিয়ে দেয়ার, যা তারা সেই দূর্বল দলের (মুসলমানদের) তরফ থেকে আশংকা করত।
বিষয়: রাজনীতি
১৫০৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ [٢٨:٥]
দেশে যাদেরকে দূর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করার।
وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُم مَّا كَانُوا يَحْذَرُونَ [٢٨:٦]
এবং তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় আসীন করার এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য-বাহিনীকে তা দেখিয়ে দেয়ার, যা তারা সেই দূর্বল দলের তরফ থেকে আশংকা করত।
উপরোক্ত আয়াত বলছে নেতা হবে মুস্তাদআফদের মধ্য থেকে, "আল আইম্মাতু মিনাল মুস্তাদআফীন" কিন্তু তা হয় নি, হয়েছে আল আইম্মাতু মিনাল মুস্তাকবিরীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন