আল-কোরানের কাঠগড়ায় বিভক্তিবাদ- ১৫

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:১৩:৩০ সকাল

ফিরকাবাজরা ধর্মগুরুদের রব হিসাবে গ্রহণ করেছে -

(اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَٰهًا وَاحِدًا لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ ﴿التوبة: ٣١﴾ তারা আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে তাদের পন্ডিতগণকে ও সন্ন্যাসীদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে, আর মরিয়ম-পুত্র মসীহ্‌কেও অথচ শুধু এক উপাস্যের উপাসনা করা ছাড়া অন্য নির্দেশ তাদের দেয়া হয় নি। তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই। তাঁরই সব মহিমা -- তারা যেসব অংশী দাঁড় করায় সে-সব থেকে? (৯: ৩১)

وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ فَإِن تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ ﴿آل‌عمران: ٦٤﴾ -- আর আমাদের কেউ আল্লাহ্ ছাড়া নিজেদের পরস্পরকে রব হিসাবে গ্রহণ করবো না।’’ কিন্তু তারা যদি ফিরে যায় তবে বলো -- ''সাক্ষী থাকো, আমরা কিন্তু মুসলিম।’’ (৩: ৬৪)

তাফসীর কারকদের মতামতঃ আহবার শব্দটি হিবর এর বহুবচন। হিবর অর্থ মিদাদ বা কালি। এ জন্যই লোকেরা মিদাদু হিবর দ্বারা মিদাদু আলেম অর্থাৎ বিদ্বানের কলমের কালি অর্থ গ্রহণ করে থাকেন। ইমাম কুরতুবী বলেন, হিবর বা হাবর হল সেই ব্যক্তি যে অলংকার পূর্ণ ও ছন্দবদ্ধ কথা বলে, নিখুত ভাষায় বক্তব্য দেয়। কিন্তু পরিভাষায় ইহুদী আলেমগণকে আহবার বলা হয়। আর রুহবান শব্দটি রাহেব এর বহুবচন, অর্থ যে আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে স্বীয় নিয়ত বিশুদ্ধ করে, ইবাদতে সময় ব্যয় করে এবং উপযুক্ত আমল করে। পরিভাষায় নাসারাদের আলেম ও মুজতাহিদগণকে রাহেব বলা হয়। এখানে ইহুদী নাসারারা তাদের পোরুহিত রাব্বাইদের রব হিসাবে গ্রহণ করার অর্থ এ নয় যে তারা ধর্মগুরুদের উদ্দেশ্যে সেজদা করত, উপাসনা করত, রোজা রাখত, পূজা করত বরং এর অর্থ হল আল্লাহ যা হালাল করেছেন পোরুহিতরা তা হারাম করত এবং তারাও তা মেনে নিত। আর আল্লাহ যা হারাম করেছেন ধর্মগুরুরা তা হালাল করত আর অনুসারীরাও তা মেনে নিত। এ সম্পর্কে একাধিক সনদে বর্ণিত হাদীস--

عن عدي بن حاتم قال: أتيت رسولَ الله صلى الله عليه وسلم وفي عُنُقي صليبٌ من ذهب، فقال: يا عديّ، اطرح هذا الوثنَ من عنقك! قال: فطرحته، وانتهيت إليه وهو يقرأ في "سورة براءة"، فقرأ هذه الآية: (اتخذوا أحبارهم ورُهبانهم أربابًا من دون الله) ، قال قلت: يا رسول الله، إنا لسنا نعبدُهم! فقال: أليس يحرِّمون ما أحلَّ الله فتحرِّمونه، ويحلُّون ما حرَّم الله فتحلُّونه؟ قال: قلت: بلى! قال: فتلك عبادتهم!

عن عدي بن حاتم قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقرأ "سورة براءة"، فلما قرأ: (اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابًا من دون الله) ، قلت: يا رسول الله، إما إنهم لم يكونوا يصلون لهم! قال: صدقت، ولكن كانوا يُحلُّون لهم ما حرَّم الله فيستحلُّونه، ويحرّمون ما أحلّ الله لهم فيحرِّمونه

অর্থাৎ আদী বিন হাতেম (রাঃ) থেকে বণির্ত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) এর নিকট আসলাম তখন আমার গলায় স্বর্ণ নির্মিত একটি ক্রুশ ঝুলানো ছিল। তিনি বললেন হে আদী তোমার গলা থেকে এ মূর্তি দূরে নিক্ষেপ কর, আমি তা নিক্ষেপ করলাম। আমি যখন পৌঁছলাম তখন তিনি উক্ত আয়াতটি পাঠ করতেছিলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আমরা তো আমাদের আলেমদের ইবাদত করি না, অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমরা তো তাদের উদ্দ্যেশ্যে নামাজ পড়ি না। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন ঠিকই বলেছ। কিন্তু আল্লাহ যা হালাল করেছেন তারা যখন তা হারাম করে তখন কি তোমরা তা হারাম হিসাবে মেনে নাও না, আবার আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারা যখন তা হালাল করে তখন কি তোমরা তা হালাল হিসাবে মেনে নাও না ? তখন আমি বললাম জী হাঁ। রাসূল(সাঃ) বললেন তাদের ইবাদত করার অর্থ এটাই।

عن حذيفة: أنه سئل عن قوله: (اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابًا من دون الله) ، أكانوا يعبدونهم؟ قال: لا كانوا إذا أحلُّوا لهم شيئًا استحلوه، وإذا حرَّموا عليهم شيئًا حرَّموه.

سأل رجل حذيفة فقال: يا أبا عبد الله، أرأيت قوله: (اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابًا من دون الله) ، أكانوا يعبدونهم؟ قال: لا كانوا إذا أحلُّوا لهم شيئًا استحلُّوه، وإذا حرَّموا عليهم شيئًا حرَّموه.

عن حذيفة: (اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابًا من دون الله) ، قال: لم يعبدوهم، ولكنهم أطاعوهم في المعاصي. (1)

অর্থাৎ হযরত হুযায়ফা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, ইহুদি খৃষ্টানরা কি তাদের আলেমদের ইবাদত করত ? উত্তরে তিনি বললেন, না বরং তাদের আলেমরা যা হারাম করত তারাও তা হারাম হিসাবে মেনে নিত আর যা হালাল করত তারাও হালাল হিসাবে মেনে নিত। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর অবাধ্যতায় তারা আলেমদের আনুগত্য করত।

قال عبد الله بن عباس: لم يأمروهم أن يسجُدوا لهم، ولكن أمروهم بمعصية الله، فأطاعوهم، فسمَّاهم الله بذلك أربابًا.

عن ابن عباس قوله: (اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابًا من دون الله) ، يقول: زيَّنُوا لهم طاعتهم.

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, তাদের আলেমরা নিজেদেরকে সিজদা করার হুকুম করত না বরং তারা আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দিত আর অনুসারীরাও তা মেনে নিত এবং আলেমদের আনুগত্যে চমৎকৃত হত।

এখানে তাফসীরে ফাতহুল কাদির এর ব্যাখ্যাটি যুগোপযোগি মনে হচ্ছে বিধায় তা হুবহু তুলে ধরা হল। তবে আমার ব্যাখ্যার সুবিধার্থে তা চারটি পয়েন্টে উল্লেখ করা হল। গ্রন্থকার বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ্‌র দ্বীনের ক্ষেত্রে তাকলীদ এবং কোরআন ও সুন্নাহর বিধানের উপর সলফে সালেহীনের বক্তব্যকে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে কঠিন হুমকী ও ধমকী এসেছে তাদের জন্য--- ِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَذِكْرَىٰ لِمَن كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ ﴿ق: ٣٧﴾ এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে। (৫০: ৩৭)

১। যেমন মাযহাব অনুসারী ব্যক্তি উম্মতের আলেমদের কথায় এক্তেদা করে, তাদের প্রবর্তিত সুন্নাত বা রীতি নীতি পদ্ধতি অনুযায়ী চলে যদিও সেগুলি স্পষ্ট নস, আলাহ প্রদত্ত দলীল প্রমাণ ও কোরআন হাদীস বিরোধি হয়। এটাই হচ্ছে ইহুদী খৃষ্টানের ন্যায় আল্লাহকে বাদ দিয়ে ধর্মগুরুদের রব হিসাবে গ্রহণ করার নমুনা। কারণ ইহুদী নাসারারা তাদের পোরুহিতদের ইবাদত বন্দেগী করত না বরং তাদের নিঃশর্ত আনুগত্য করত, তারা যা হারাম করত অনুসারীরা তা হারাম হিসাবে মেনে নিত, যা হালাল করত তারাও হালাল হিসাবে মেনে নিত। এ উম্মতের তাকলীদ কারীদের এ কর্মটি ইহুদী নাসারাদের কর্মের সাথে এর চেয়েও নিকটতর সাদৃশ্য হয়ে গেল- যেমন ডিম ডিমের মত হয়, খেজুর খেজুরের মত, পানি পানির মত। (অর্থাৎ ধর্মগুরুদের নিঃশর্ত আনুগত্যের ক্ষেত্রে ইহুদী নাসারাদের কর্মের সাথে মুসলমানদের কর্ম খাপের খাপ মিলে গেছে।)

২। হায়! হে মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ (সাঃ) এর অনুসারীরা তোমাদের কি হল যে, তোমরা কোরআন ও সুন্নাহকে পার্শ্বে নিক্ষেপ করেছ, আর আনুগত্য করছ এমন লোকদের যারা কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক আল্লাহ্‌র ইবাদতের ক্ষেত্রে তোমাদের মতই আদিষ্ট, তাদের আমল সহীহ হওয়ার জন্যও কোরআন সুন্নাহ মোতাবেক হওয়া শর্ত। তোমাদের উলামাদের যেসব রায় ও বক্তব্য সত্যের ভিত্তি নয়, কোরআন সুন্নাহ ও দ্বীনী ব্যাপারে যেগুলি ধর্তব্য নয়- তোমরা সেগুলিই কার্যে পরিণত করছ। অথচ কেউ সেগুলির বিরোধিতা করলে তোমরা উচ্চ কণ্ঠে ডাক চিৎকার ও বাদ বিসম্বাদ শুরু করে দাও। কাজেই তোমরা কোরআন সুন্নাহ বর্জন করেছ এ অবস্থায় যে, তোমরা বধির, অন্তর তালাবদ্ধ, বোধ বুদ্ধি রুগ্ন, আকল বিভ্রান্ত, বন্ধা ধীশক্তি, ব্যাধিগ্রস্থ হৃদয়।

৩। আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে এবং আমাকে পথ প্রদর্শন করুন। তোমরা সেসব কিতাবাদি বর্জন কর যেগুলি তোমাদের মৃত সলফে সালেহীন তথা পূর্ববর্তীরা তোমাদের জন্য লিখে গেছেন। সেসব কিতাব দ্বারা তারা আল্লাহ্‌র কিতাবকে বিকৃত/পরিবর্তন করেছে। অথচ আল্লাহই তোমাদের ও তাদের সৃষ্টি কর্তা, তোমাদের ও তাদের উপাস্য, তোমাদের ও তাদের প্রভু। আর তোমরা যাদেরকে ইমাম বলে ডাক তাদের বর্ণনা ও বক্তব্য দ্বারা তোমরা পরিবর্তন করে দিয়েছ তার বর্ণনা যিনি তোমাদের ও তাদের ইমাম, তোমাদের ও তাদের নেতা, তিনি হলেন শ্রেষ্ঠ নেতা মুহাম্মদ (সাঃ)।

৪। হে আল্লাহ্‌ পথ ভ্রষ্টকে হেদায়েত কর, গুমরাহকে পথ দেখাও সুস্পষ্ট পথ। হে আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সত্য ও সঠিক পথ দেখাও হেদায়েতের রাস্তা উন্মুক্ত কর।

( তাবারী, কুরতুবী, ইবনে কাছীর, ফাতহুল কাদির, বগবী)

তাফসীরের আলোকে বাস্তব ভিত্তিক ব্যাখ্যাঃ বস্তুত কোরআন সুন্নাহ ও তাফসীরের আলোকে এখানে হাল যামানার ফিরকাগুলির কাছে কিছু প্রশ্ন রাখছি। যেমন, বেরেলভীরা কি রেজা খান বেরেলভীর (রঃ) কোরআন সুন্নাহ বিরোধি বক্তব্য রাসূলের গায়েব জ্ঞান তত্ত্ব এর নিঃশর্ত অনুসরণ করছে না? জামাতীরা কি মাওঃ মওদুদী (রঃ) এর কোরআন সুন্নাহ বিরোধি বক্তব্য সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ বা মি’ইয়ারে হক, নবী গণের মাসুমিয়্যত, ব্যাংকিং ইত্যাদি বিষয়ের নিঃশর্ত অনুসরণ করছে না ? দেওবন্দীরা কি উক্ত ধারার কোরআন সুন্নাহ বিরোধি কার্যক্রম বিজ্ঞান ও ধর্ম শিক্ষা আলাদা করণ এবং ইসলামকে ভিক্ষা বৃত্তির উপর নির্ভরশীল করে দেয়া ইত্যাদির নিঃশর্ত অনুসরণ করছে না ? তাবলীগীরা কি মাওঃ ইলিয়াস (রঃ) এর রাজনীতি, জিহাদ, খিলাফত বর্জন সম্বলিত সুন্নাত (পদ্ধতি) এবং ফাযায়েলে আমলের নিঃশর্ত অনুসরণ করছে না ? এভাবে প্রত্যেক ফিরকা স্ব স্ব ফিরকার প্রবর্তক শায়খ ও মুরুব্বীদের কোরআন সুন্নাহ বিরোধি বক্তব্য ও কার্যক্রমের নিঃশর্ত আনুগত্য করছে না ? তাহলে বল, তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে স্ব স্ব মুরুব্বীদের রব হিসাবে গ্রহণ করে ইহুদী খৃস্টানে পরিনত হয়ে যাও নি? বস্তুত বর্তমানে মুসলমানরা ইহুদী হয়ে গেছে, এ জন্যই তাদের পতন ঘটছে। আর ইহুদীরা মুসলমান হয়ে গেছে (কর্মের দিক থেকে) এ জন্যই তারা বিশ্ব নেতৃত্বে বরিত হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন আগ্নেয় গিরির উদগিরন। ইবনুল মুবারক বলেন—وَهَلْ أَفْسَدَ الدِّينَ إِلَّا الْمُلُوكُ ... وَأَحْبَارُ سُوءٍ وَرُهْبَانُهَا অর্থাৎ ধর্ম নষ্ট করে রাজা-বাদশা ও আলেম উলামারা। এর বাস্তবতা হল, ইহুদী খৃষ্ট আলেমরা যেমন বিকৃত করতে করতে তাদের ধর্মগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে, ঠিক একইভাবে একই পদ্ধতিতে একই নিয়মে ইসলামের আলেমরাও ইসলামকে বিকৃত করতে করতে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাসূল (সাঃ) এর প্রকৃত ইসলামটা এখন প্রায় নাই বললেই চলে- এর প্রমাণ হচ্ছে মুসলিম জাতির বর্তমান দুরাবস্থা।

২। হায় ! আল্লাহ্‌র বান্দা ও মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতরা। তোমরা কোরআন সুন্নাহ পশ্চাতে নিক্ষেপ করেছ আর অনুসরণ করছ রেজা খান (রঃ), মওদুদী (রঃ), ইলিয়াস (রঃ), হাসান বান্না (রঃ), নানুতবী (রঃ), ইবনে ওয়াহাব (রঃ) ইত্যাদি তোমাদের মতই রাসূলের গোলামদের। তোমরা যেমন কোরআন সুন্নাহর অনুসরণে আদিষ্ট তারাও তদ্রুপ আদিষ্ট। তোমাদের ন্যায় তারাও ইবাদাত বন্দেগীতে আদিষ্ট। তদুপরি তাদের বক্তব্য ও প্রবর্তিত পদ্ধতি শরীয়তের দলীল নয়। অথচ তোমরা তাদেরই নিঃশর্ত আনুগত্য করছ। আল্লাহ্‌ ও রাসূল (সাঃ) কে বাদ দিয়ে আল্লাহ্‌র বান্দা ও রাসূল (সাঃ) এর গোলামদের তোমরা রব হিসাবে গ্রহণ করেছ। আল্লাহ্‌ ও রাসূল (সাঃ) ঐক্য ফরয ও বিভক্তি হারাম করেছেন। অথচ তোমরা স্ব স্ব সৃষ্ট রবদের সুন্নাত- পদ্ধতি অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ ও রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে হাজার হাজার ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছ। রাসূল (সাঃ) কে বাদ দিয়ে স্ব স্ব মুরুব্বীদের রাসূল হিসাবে গ্রহণ করেছ। ধিক তোমাদের। অথচ কেউ তোমাদের ভুলগুলি শুধরে দিলে, ঐক্যের পথে ডাকলে বিভক্তির বিরোধিতা করলে তার বিরুদ্ধে তোমরা ডাক চিৎকার বাদ বিসম্বাদ শুরু করে দাও। অনলাইন ও প্রিন্ট জগতে ঝড় তোল। কোপাকোপি শুরু কর। নিজেদের ভুলগুলিকে সঠিক আর অন্যদের সঠিক কাজগুলিকেও ভুল প্রমাণের জন্য কুরুক্ষেত্র কান্ড ঘটাও। এ ভাবেই তোমরা আল্লাহ্‌ রাসূল ও কোরআন সুন্নাহ বর্জন করে স্ব স্ব শায়খ ও মুরুব্বীদের রব হিসাবে গ্রহণ করেছ। কারণ তোমরা বধির, অন্তর তালাবদ্ধ, বোধ বুদ্ধি রুগ্ন, আকল বিভ্রান্ত, বন্ধা ধীশক্তি, ব্যাধিগ্রস্থ হৃদয়।

৩। আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে এবং আমাকে পথ প্রদর্শন করুন। তোমরা তোমাদের মৃত মুরুব্বীগণ তথা ইবনে ওয়াহাব নজদী, হাসান বান্না, মওদুদী, ইলিয়াস, আশরাফ আলী থানভী, হুসাইন আহমদ মাদানী (রাহিমাহুমুল্লাহু আজমায়ীন) ইত্যাদিগণের লিখিত কিতাবাদি গুলি বর্জন কর। কারণ তাদের প্রত্যেকের লিখায় কিছু কিছু বিদআত রয়েছে। আর সেসব বিদআত সংশোধন না করে বরং কোরআন সুন্নাহর ন্যায় অন্ধ অনুসরণ করতে গিয়ে তোমরা হাজার হাজার ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছ। ফলে ইসলাম উম্মাহ ও নিজেদেরকে তোমরা স্ব হস্তে ধ্বংস করে দিচ্ছ। কাজেই হে আত্মহত্যা প্রবণ মূর্খ জাতি। কোরআন সুন্নাহই কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? তাহলে তোমাদের মৃত মুরুব্বীদের কিতাবাদি অনুসরণ করতে হবে কেন? এগুলি বর্জন কর। একনিস্ট ভাবে কোরআন সুন্নাহর অনুসরণ কর। কারণ তোমরা মৃত্যুর পর মুরুব্বীদের কাছে যাবে না, যাবে আল্লাহ্‌র কাছে। আর তখন সেসব কিতাবাদি ও মুরুব্বীরা তোমাদের বাঁচাতে পারবে না, একমাত্র আল্লাহ্‌ ছাড়া। কাজেই তোমরা মুরুব্বীদের রব হিসাবে গ্রহণ না করে আল্লাহকে গ্রহণ কর। তিনিই তোমাদের ও মুরুব্বীদের সৃষ্টি কর্তা, উপাস্য ও প্রভু। সর্বোপরি তোমরা মুরুব্বীদের নিঃশর্ত আনুগত্য না করে আনুগত্য কর তার যিনি নিখিল মানবতার ত্রানকর্তা, তোমার নেতা আমার নেতা, মুরুব্বীদের নেতা, মানবতার নেতা, ইহকাল-পরকাল তথা দু-জাহানের নেতা, বিশ্ব নেতা, একমাত্র নেতা ও ত্রাতা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ (সাঃ)। আল্লাহ্‌ সবাইকে তাওফীক দান করুন।

৪। মোনাজাতঃ হে আল্লাহ্‌, আমাদের মুরুব্বীরা ইসলামের খিদমত করতে গিয়ে মানবিক ভুলক্রমে কিছু কিছু বিদআত সৃষ্টি করে গেছেন। এখন সেই বিদআতগুলিকে সঠিক প্রমাণ করতে গিয়ে স্ব স্ব মুরুব্বীদের নিঃশর্ত আনুগত্য করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে অন্তহীন মতান্তরের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমরা হাজার হাজার ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছি এবং স্ব স্ব মুরুব্বীদেরকে অজ্ঞাতসারেই রব হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছি। এখন আমরা তওবা করছি, পলাতক গোলাম আপনার দরবারে ফিরে এসেছি, আর প্রতিজ্ঞা করছি আমরা একমাত্র কোরআন সুন্নাহর অনুসরণ করব কোন মুরুব্বী ও মুরুব্বীর রচনাবলীর অনুসরণ করব না। তদুপরি আমাদের মধ্যে যেসব বিদআত রয়েছে- সেগুলি সমূলে উৎপাটন করে আপনার ও আপনার রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ মোতাবেক সকল বিভক্তি মাড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ হব তারপর খিলাফত প্রতিষ্ঠা করব। প্রভু আমাদের দোয়া কবুল কর, হে আল্লাহ্‌ পথ ভ্রষ্টকে হেদায়েত দান কর, গুমরাহকে পথ দেখাও-সুস্পষ্ট পথ। হে আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে সত্য ও সঠিক পথ দেখাও, হেদায়েতের রাস্তা উন্মুক্ত কর।

সুতরাং উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা এবং বাস্তবতার আলোকে বুঝা যাচ্ছে যে, মুসলমানদের কোন ফেরকাই প্রকৃত পক্ষে রাসূল (সাঃ) এর অনুসরণ করে না বরং অনুসরণ করে নিজ নিজ ফেরকার প্রবর্তক ও মুরুব্বীদের। তারা কোরান মানে না, মানে নিজস্ব ফেরকার গ্রন্থাবলী। এর প্রমাণ হচ্ছে তারা যদি কোরান মানতই তাহলে বিভিন্ন ফেরকায় বিভক্ত হতো না, ভ্রাতৃঘাতি হানাহানিতে লিপ্ত হতো না। সুতরাং প্রমাণিত হলো বর্তমানের মুসলিম ফিরকাগুলি ধর্মগুরু ওরফে মুরুব্বীদের রব হিসাবে গ্রহণ করে ইহুদী খৃষ্টানদের ন্যায় শিরকে লিপ্ত রয়েছে। আর মুশরিকের পক্ষে আল্লাহ্‌র হুকুম أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ -- তথা ঐক্যবদ্ধ ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। যেমন, বেরেলভী, দেওবন্দী, জামাতী, তাবলীগী সবাই একই ফ্লাট ফর্মে দাড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করা কঠিন, যা কল্পনাও করা যায় না। কারণ তারা তো বিভিন্ন নবীর উম্মতের ন্যায় বিভিন্ন সম্প্রদায়। এজন্যই আল্লাহ্‌ তা’লা বলেছেন-- اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ

এখন শিয়া, সুন্নী, বেরেলভী, দেওবন্দী, তাবলীগী, জামাতী, হিজবুত তাহরীর, হিজবুত তাওহীদ, ব্রাদার হুড ইত্যাদি প্রত্যেকটি ফিরকা আপত্তি তুলবে যে, না না আমরা স্ব স্ব মুরুব্বীদের নিঃশর্ত আনুগত্য করিনা, শুধুমাত্র শরীয়তের ব্যাপারে তাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণটুকু গ্রহণ করেছি। মৌলিকভাবে তো আমরা কোরআন সুন্নাহরই অনুসারী। তাদের এ দাবী সম্পূর্ণ ভ্রান্ত । এর প্রমাণ হচ্ছে,

১।কোরআন-সুন্নাহঃ- রাসূল (সাঃ) বলেছেন, .. ‏تركت فيكم أمرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنة نبيه (রাসূল (সাঃ) বলেন, আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না যতক্ষণ সে দুটি আঁকড়ে ধরে থাকবে, তা হল কোরান ও সুন্নাহ)।অর্থাৎ শুধুমাত্র কোরআন সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। রাসূল (সাঃ) কখনো কোথাও বলেননি যে, আলেমদের অনুসরণ করতে হবে। আর ..العلماء ورثة انبياء..(আলেমরা নবীদের ওয়ারিশ) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল আলেমরা কোরআন ও সুন্নাহর বার্তা মানব জাতির কাছে পৌঁছে দিবে। এর অর্থ এমন নয় যে, আলেমের অনুসরণ করতে হবে। তারা শুধুমাত্র পিয়নের দায়িত্ব পালন করবেন- কোনরূপ ইফরাত তাফরিত ব্যতিত। অথচ আলেমগণ ইফরাত তাফরিত করেছেন। আর .اولو الامر.(কর্তৃপক্ষ) এর অর্থ, খেলাফত ব্যবস্থার অধিনে প্রসাশনিক কর্তা ব্যক্তিদের নির্দেশ মেনে চলার কথা বলা হয়েছে, এখানে আলেমগণ উদ্দেশ্য নয়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে আমরা কোরআন সুন্নাহ বাদ দিয়ে স্ব স্ব ফেরকার আলেম ও মুরুব্বীদের অনুসরণ করছি। কোরআন সুন্নাহ অনুসরণ করলে তো আমাদের মধ্যে কোন ফিরকা বিভক্তি দুরের কথা এমন প্রশ্নের উদয়ই হতে পারত না।

বহু নবীর উম্মতঃ- পূর্ববর্তী নবীদের উম্মত হিন্দু-বৌদ্ধ, ইহুদী, খৃষ্টান, মুসলিম ইত্যাদি সম্প্রদায়ের পরস্পরের মধ্যে বিয়ে হয় না, এটা তারা জায়েয মনে করেন না। ঠিক অনুরুপভাবে, উম্মাহর বিভিন্ন ফিরকা বিভিন্ন নবীর উম্মতের ন্যায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ে পরিণত হয়ে গেছে। এজন্যই তাদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ে হয় না, এটা তারা জায়েয মনে করেন না। যেমন জামাতীদের দেওবন্দী, তাবলীগী, সুফীবাদিদের সাথে বিয়ের নযির নেই। দেওবন্দীদের জামাতী ও সুফীবাদীদের সাথে বিয়ের নযির নেই। সুফীরাও জামাতী দেওবন্দীদের সাথে বিয়ে দেয় না। তবে হঠাৎ দুয়েকটা ব্যতিক্রম ছাড়া- যা অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও হয়ে থাকে। আবার তারা একে অন্যের ধর্মানুষ্ঠান বা দলীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করেন না। কাজেই প্রমাণিত হলো মুসলমানদের প্রতিটি ফিরকা এক সম্প্রদায় নয় বরং পৃথক পৃথক সম্প্রদায়, ভিন্ন ভিন্ন নবীর উম্মতের ন্যায়। যেমন জামাতীরা মাওঃ মওদুদীর উম্মত, বেরেলভীরা রেজা খানের, তাবলীগীরা মাওঃ ইলিয়াসের, দেওবন্দীরা উসুলে দেওবন্দের উম্মত ইত্যাদি। এমনকি ফিরকাগুলি পরস্পরকে তাওহীদবাদী মনে করলেও তাদের মধ্যে বিয়ে হত। কারণ তাওহীদবাদী বিধর্মীদের সাথে মুসলমানদের বিয়ে জায়েয। কিন্তু তারা সম্ভবত এমনটাও মনে করে না-বিধায় তারা –( (اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ এর বাস্তবায়ন করছে।

নিঃশর্ত আনুগত্যঃ পূর্বে আলোচনা হয়েছে প্রতিটি ফিরকা স্ব স্ব মুরুব্বীদের নিঃশর্ত আনুগত্য করছে। অর্থাৎ নবী রাসূলের মত মান্য করছে, নিজেকে সঠিক ও অন্যদের ভ্রান্ত মনে করছে। কাজেই বুঝা যায়, তারা মুখে যাই বলুক না কেন মূলতঃ প্রতিটি ফেরকা ইহুদী খৃস্টানের ন্যায় ভ্রান্ত সম্প্রদায়ে পরিণত হয়ে গেছে। আর তারা স্ব স্ব মুরুব্বীদের নিঃশর্ত আনুগত্য করে এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে- (اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ

এখন প্রশ্ন হলো অনুসৃতদের কি অবস্থা হবে ? অর্থাৎ যেসব বুজুর্গানে দ্বীন, মহান সংস্কারকগণ ইসলামের খেদমত করে গেছেন। এরপর তাদের অনুসরণে একেকটা ফেরকার জন্ম হয়ে গেছে। যদিও এসব মনিষীগণ কখনো বলেননি যে, আমি যা বলেছি-করেছি বা আমার প্রবর্তিত পদ্ধতি নির্ভুল, তোমরা আমার আনুগত্য করবে, আমার মতামত নির্ভুল জানবে আর অন্যেরটা ভ্রান্ত বলবে। এতদসত্তেও পরবর্তী গুমরাহ লোকেরা যখন তাদের নামে ফিরকা বিভক্তি করেই ফেলল এবং ( (اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِএর বাস্তবায়ন করে ফেলল তখন আল্লাহ তা’লাও সেই বুজুর্গদের কঠোর অভিসংশনের মুখোমুখি করবেন। যেমন তিনি ঈসা (আঃ) কে কঠোর অভিসংশনের মুখোমুখি করবেন-- وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيْنِ مِن دُونِ اللَّهِ -- যখন আল্লাহ বললেনঃ হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি লোকদেরকে বলে দিয়েছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত কর?

তদ্রুপ তিনি কাহহার রূপ ধারণ করে তাদেরকে সম্মিলিত ভাবে বা একক ভাবে প্রশ্ন করবেন - তোমাকে রব হিসাবে গ্রহণ করে নিঃশর্ত আনুগত্য করার কথা বলেছিলে ? তখন তাদের উত্তর কি হবে শুনে যাও হে জগতবাসী, শুনে যাও তাদের উত্তর। ফেরকাবাজ শিয়া, সুন্নী, বেরেলভী, দেওবন্দী, জামাতী, তাবলীগী ইত্যাদিরা শুনে যাও তাদের উত্তর--

قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ۚ إِن كُنتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ ۚ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ [٥:١١٦]مَا قُلْتُ لَهُمْ إِلَّا مَا أَمَرْتَنِي بِهِ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ ۚ وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَّا دُمْتُ فِيهِمْ ۖ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنتَ أَنتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِ شَيْءٍ شَهِيدٌ [٥:١١٧]إِن تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ ۖ وَإِن تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

(১১৬) তিনি বলবেন -- ''তোমারই সব মহিমা! এটি আমার পক্ষে সম্ভবপর নয় যে আমি তা বলবো যাতে আমার কোনো অধিকার নেই। যদি আমি তা বলতাম তবে তুমি তা নিশ্চয়ই জানতে। আমার অন্তরে যা আছে তা তুমি জানো, আর আমি জানি না কি আছে তোমার অন্তরে। নিঃসন্দেহ কেবল তুমিই অদৃশ্য সন্বন্ধে পরিজ্ঞাত। (১১৭)''আমি তাদের বলি নি তুমি যা আমাকে আদেশ করেছ তা ছাড়া অন্য কিছু, যথা -- 'তোমরা আল্লাহ্‌র উপাসনা করো যিনি আমার প্রভু ও তোমাদের প্রভু’, আর আমি তাদের সাক্ষী ছিলাম যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, কিন্তু যখন তুমি আমার মৃত্যু ঘটালে তখন তুমিই ছিলে তাদের উপরে প্রহরী। আর তুমিই হচ্ছো সব-কিছুরই সাক্ষী। (১১৮) ''তুমি যদি তাদের শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই দাস, আর যদি তাদের তুমি পরিত্রাণ করো তবে তুমিই তো মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।’’

আকাবীর সমস্যাঃ দেওবন্দীরা আকাবিরে দেওবন্দের অনুসরণ করে, তাবলীগীরা আকাবীর বা মুরুব্বীদের অনুসরণ করে, এভাবে প্রত্যেকটি ফেরকা স্ব স্ব ফেরকার আকাবীর বা মুরুব্বীদের অনুসরণ করে। এখানে দুটি বিষয় আকাবির শব্দ ও তাকলীদ। আকাবীর শব্দের মূলধাতু কিবর থেকে গঠিত শব্দ যখন আল্লাহ্‌র দিকে নিসবত হয় তখন ইতিবাচক অর্থ প্রদান করে। যেমন আল্লাহু আকবর বা কাবির, অর্থাৎ আল্লাহ্‌ মহান, এটা আল্লাহ্‌র গুনবাচক নামও বটে। এজন্যই হাদিসে কুদসীতে বলা হয়েছে –الكبرياء رداءي لا تنازعوا برداءي – ( অহংকার আমার চাদর- তা নিয়ে টানাটানি করো না)। কিন্তু কিবর ধাতুর কোন শব্দ যখন মানুষের প্রতি নিসবত হয় তখন তা বয়স ও আকৃতিতে বড়-এ দুটি ব্যতিত অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতিবাচক অর্থ প্রদান করে। যেমন, মুতাকাব্বির, মুস্তাকবির অর্থাৎ অহংকারী, দাম্ভিক বড়লোক ইত্যাদি। কাজেই প্রত্যেক ফেরকার অনুসারীরা স্ব স্ব বুজুর্গদের আকাবীর নামকরণ করে তাদের অপমান করছে এবং মন্দ ভাবার্থের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ কোরান হাদীসে কিবর ধাতু থেকে উৎপন্ন কোন শব্দ সাধারণত মানুষের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভাল অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। অথবা অন্য দৃষ্টিতে ঠিকই আছে, কারণ তারাই বিভিন্ন ফিরকা বিভক্তি সৃষ্টি করে উম্মত ধ্বংসের পথ উন্মুক্ত করে দিয়ে গেছেন। আবার আকাবীর নামের কোন শ্রেণী-গোষ্টির তাকলীদ বা অনুসরণ জায়েয কিনা উলামায়ে কেরামকে আগে তা শনাক্ত করতে হবে। কারণ কোরান হাদীসের কোথাও কোন আলেম, ফকিহ, মুহাদ্দিস বা পীর মুর্শিদের অনুসরণের কথা বলা হয়নি। বরং কোরানে দৃঢ়ভাবে বলা হয়েছে -وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ --مَّن يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ -- রাসূল (সঃ) দৃঢ়ভাবে বলে গেছেন --‏تركت فيكم أمرين لن تضلوا ما تمسكتم بهما كتاب الله وسنة نبيه -- সুতরাং কোরান হাদীসের নির্দেশ উপেক্ষা করে এখন আমরা বুজুর্গানে দ্বীন যারা দ্বীনের খেদমত করে গেছেন, তাদেরকে রাসূলের স্থলাভিষিক্ত করে নবী রাসূলের মতই অনুসরণ শুরু করে দিয়েছি।

আয়াতের বাস্তবতাঃ উক্ত আয়াতের বাস্তবতা হল, আল্লাহ রাসূল ঐক্য ফরয ও বিভক্তি হারাম করেছেন, কিন্তু প্রত্যেক ফেরকার মুরুব্বীরা ঐক্য হারাম আর বিভক্তি হালাল করেছেন। আর আমরাও কোনরুপ বাদ-প্রতিবাদ বিহীন তা মেনে নিয়ে হাজার হাজার ফিরকায় বিভক্ত হয়েছি এবং মুরুব্বীদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছি।

আমাদের আহ্বানঃ কিহে বাপু দেওবন্দী, বেরেলভী, জামায়াতী, তাবলীগী, সালাফী, সুফীবাদী, শিয়া, সুন্নী, হিজবূত তাহরীর, হিজবুত তাওহীদ, ব্রাদার হুড ইত্যাদিরা, এবার কি হুস হল ? এখনো যদি না হয় তাহলে হেফাজত ও জামায়াত বনাম আওয়ামী লীগ, ব্রাদার হুড বনাম সিসি, আইসিস বনাম শিয়া ইত্যাদি নাম ও রূপ ধারণ করে কুকুরের মত কামড়া কামড়ি করে মরতে থাক, দাজ্জালের হাতে বন্য প্রানী ও পশু পাখির মত মরতে থাক। তারপর ? তারপর ইসলাম, উম্মাহ ও নিজেদের ধ্বংসের দায়ে জাহান্নামের আগুনে কতটা ধৈর্য্য ধারণ করতে পার তার প্রশিক্ষণ নিতে থাক। কাজেই নিজেকে যদি মুসলমান দাবী কর-তাহলে ফিরকাবাজীর ধান্দা, মুরুব্বীদের অনুসরণ, তাদের লিখিত কিতাবাদির সিলেবাস ইত্যাদি বর্জন করে সোজা ঐক্যের পথে দৌড়াও, দৌড়াও উল্কার গতিতে। বাচাও নিজেকে, ইহকালের লাঞ্চনা ও পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকে। আল্লাহ্‌ সবাইকে সঠিক সমঝ ও তাওফীক দান করুন। আমীন।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

২২১৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360109
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : জামায়াতে ইসলাম মাওলানা মওদূদী রহ এর অন্ধ অনুসরন করেনা। তাই আপনার দাবীগুলো অন্যান্ন দলের জন্য শতভাগ প্রযজ্য হলেও জামাতের ক্ষেত্রে শুন্য ভাগও প্রযজ্য নয়। জামাত কুরআন সুন্নাহ মোতাবেকই পরিচালিত হয়। বিস্তারিত দেখুন এ পোষ্ট এ। http://www.firstbd.net/blog/blogdetail/detail/4803/TrueIslam/71914

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File