নয়া যমানার ডাক- ৬ (ভাই আমার ভাই)।
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০১:৫৩:৪২ দুপুর
কোরআন মুসলিম ভ্রাতৃত্বকে ফরয করেছে। যেমন-
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾ -
তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করে বিভক্ত হয়ো না ৷ আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো ৷ তোমরা ছিলে পরস্পরের শক্র ৷ তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন৷ ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো৷ তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে৷ আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন।এভাবেই আল্লাহ তাঁর নির্দশনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন ৷ হয়তো এই নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে।(৩-১০৩) অত্র আয়াতে উম্মাহর ঐক্য ফরয করা হয়েছে, বিভক্তি হারাম করা হয়েছে এবং মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ফরয করা হয়েছে। এ ভ্রাতৃত্বকে আল্লাহ্ তা’লা নিয়ামত বলে উল্লেখ করেছেন। এখন এ নিয়ামতের নাশুকরি করলে আল্লাহ্ তা’লা কঠিন হুসিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। যেমন- وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ - অর্থাৎ তার নিয়ামতের নাশুকরি করলে তিনি কঠোর শাস্তি দেবেন। এখন সেই শাস্তিটি কি, কোরান কি বলে তা একটু অনুসন্ধান করব। আল্লাহ তা’লা বলেন - قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَىٰ أَن يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّن فَوْقِكُمْ أَوْ مِن تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَيُذِيقَ بَعْضَكُم بَأْسَ بَعْضٍ انظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْآيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَفْقَهُونَ ﴿الأنعام: ٦٥﴾ বলো - ''তিনি ক্ষমতাশীল তোমাদের উপরে শাস্তি আরোপ করতে, তোমাদের উপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচে থেকে, অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দলাদলিতে লিপ্ত রাখতে, আর তোমাদের একদলকে ভোগ করাতে পারেন অন্য দলের নিপীড়ন।’’ দেখো, কিরূপে আমরা নির্দেশসমূহ নানাভাবে বর্ণনা করি যেন তারা বুঝতে পারে! (৬: ৬৫) অর্থাৎ শাস্তি হিসাবে তিনি মুসলিম জাতিকে বিভক্ত করে দিবেন ফলে তারা একে অন্যকে বাঁশ (بَأْسَ) দিবে। এখন বাস্তবে দেখা যায় মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ভেঙ্গে ফিরকাবন্দি বিভিন্ন দল, যেমন দেওবন্দী, জামাতী, তাবলীগী, বেরেলভী, সুফিবাদী, সালাফী এরা একে অপরকে বাঁশ দিচ্ছে।
যাই হউক মূল কথায় আসি। কোরআন হাদীসের যত জায়গায় মুসলমানদের পরস্পর সম্পর্ক, লেনদেনের উল্লেখ আছে সেখানেই আখু বা পরস্পরকে ভাই ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’লা ও রাসূল (সাঃ) উম্মাহর পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃ সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল কোন ভ্রাতৃ সম্পর্ক বেশি মজবুত, সহোদর নাকি মুসলিম জাতীয় ? এ ক্ষেত্রে ফয়সালামূলক সিদ্ধান্ত হল, আমরা জানি আগে আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) এর স্থান, তারপর পিতা মাতার স্থান।যেমন, وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا -- তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর)। অত্র আয়াতে আল্লাহ্র পরে পিতা মাতার স্থান দেয়া হয়েছে। আবার রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন- لن يكون مؤمنا حتي اكون احب اليه من والده و ولده و الناس اجمعين ( কেউ মুমীন হবে না যতক্ষন পর্যন্ত না আমি তার নিকট পিতা, সন্তান ও সমগ্র মানুষের চেয়ে প্রিয় গণ্য হব)। অত্র হাদীসে পিতা মাতার চেয়ে রাসূল (সাঃ) এর অগ্রাধিকার প্রমাণিত হচ্ছে। আবার রাসূল (সাঃ) বলেছেন لا طاعة المخلوق في معصية الخالق - অর্থাৎ স্রষ্টার নাফরমানিতে সৃষ্টির আনুগত্য চলবে না। কাজেই পিতা মাতা যদি বলে এখন নামায পড়ার দরকার নাই বাজারে যাও বা পরীক্ষার সময় রোযা রাখার দরকার নাই। সেক্ষেত্রে পিতা মাতার আনুগত্য করা যাবে না বরং আল্লাহর বিধান মানতে হবে। তবে পিতা মাতা কাফের হলেও আল্লাহ্র বিধান ব্যতীত অন্য সকল পার্থিব বিষয়ে তাদের আনুগত্য করতে হবে। যাই হউক বুঝা গেল আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) এর পরে পিতা মাতার স্থান। কাজেই আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেছেন তা পিতা মাতার প্রতিষ্ঠিত ভ্রাতৃত্বের চেয়ে অগ্রগন্য প্রমাণিত হল। অর্থাৎ সহোদর ভাই বোনের চেয়ে জাতীয় ভ্রাতৃত্ব অগ্রগন্য এবং অধিক শক্তিশালী। এর জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে একটি প্রসিদ্ধ মাসয়ালা। যেমন সহোদর হত্যাকারীর ওয়ারিশ বাতিল হয়ে যায়। যেমন করিম তার ভাই রহিমকে হত্যা করল। আর রহিমের কোন সন্তান বা ছেলে সন্তান নাই।এ অবস্থায় করিম তার ওয়ারিশ হবে না, সে পরিত্যাক্ত সম্পত্তির কিছুই পাবে না কারণ হত্যার কারণে তার ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হয়ে গেছে।পক্ষান্তরে এক মুসলমান অপর মুসলমানকে হত্যা করলেও জাতীয় বা মিল্লি ভ্রাতৃত্ব অটুট থাকে, তা নষ্ট হয় না। যেমন কোরানে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ (অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি তাকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়)। এখানে হত্যাকারীকে নিহিত ব্যক্তির পরিবারের ভাই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হত্যা দ্বারা মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ছিন্ন হয় না। কাজেই প্রমাণিত হল আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) প্রতিষ্ঠিত ভ্রাতৃত্ব পিতা মাতার প্রতিষ্ঠিত ভ্রাতৃ ও ভগ্নি বন্ধনের চেয়েও অগ্রগন্য ও মজবুত। আবার বদরসহ অন্যান্য যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরাম পিতা, চাচা, মামা ও ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। এটা প্রমাণ করে যে, রেশতার দাবীর চেয়ে ইসলামের দাবী অগ্রগণ্য। তবে শুধু দুটি বিষয়ের পার্থক্য রয়েছে। সহোদরদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক জায়েয নাই এবং সহোদরের মৃত্যুর পর পরিস্থিতি অনুযায়ী ওয়ারিশ সাব্যস্ত হয় যা জাতীয় ভ্রাতৃত্বের বেলায় প্রযোজ্য নয়।
এখন প্রশ্ন হল এ উভয় ভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু দায়িত্ববান। পিতা মাতা আমাদেরকে শিখায় এরা তোমার ভাই বোন। তখন আমরা বড়দেরকে পিতা মাতার ন্যায় মান্য করি ছোটদেরকে পিতা মাতার মমতায় কোলে পিঠে মানুষ করি। আমি নিজেই তো এর বাস্তবতা। কৈশোরে পিতৃহারা হওয়ার পর জৈষ্ট হিসাবে ছোট ভাইদের মানুষ করার পিছনে কতটা শ্রম, সাধনা, ত্যাগ, তিতিক্ষা ব্যয় করেছি তা একমাত্র আল্লাহ্ ও আমার দেহের প্রতিটি কোষ অতি উত্তমরূপেই জানে। কিন্তু জাতীয় ভাই বোনদের জন্য কি করেছি ? জামাত হত্যার বেলায় আমরা খুশি হই, শাপলা চত্বরে হেফাজত হত্যায় আমরা খুশি হই, তালেবান, আইসিস কর্তৃক শিয়া হত্যায় খুশি হই । তা ছাড়া আরাকান, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, জিংজিয়াংয়ে মানবতার যে কুৎসিত বিপর্যয় চলছে, মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, ভারতে মুসলিম মহিলার লাশ কবর থেকে তুলে ধর্ষণ করা হচ্ছে- তখন আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ থাকলে চোখের পাতায় ঘুম নামে কি করে, কণ্ঠনালীর নীচে খাদ্য পাচার হয় কিভাবে? বস্তুত উম্মাহর ক্ষেত্রে আমাদের ন্যুনতম ভ্রাতৃত্ববোধ নেই।
এখন প্রশ্ন হল কোন সে আযাযিল শয়তান যে একক উম্মাহকে বিভক্ত করল, ভ্রাতৃত্ব ধ্বংস করল, পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষী ও শত্রু ভাবাপন্ন করে তুলল। এখন উম্মাহর মুক্তির একটাই পথ, এই শত্রুদের অনুসন্ধান করে খোঁজে বের করে বিচার করতে হবে। তারপর ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় এই উম্মাহ খোদার গজবে পতিত হয়ে নাসিয়াম-মানসিয়্যা হয়ে যাবে। বাস্তবতার দর্পনে আমরা দেখতে পাই, আমাদের প্রথম স্তরের কর্তা আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ফরয করেছেন। এতেই ক্ষান্ত হননি বরং ভ্রাতৃত্ব ছিন্নকারী-বিভক্তিবাদিদের কাফের আখ্যা দিয়ে জাহান্নামের সংবাদ দিয়েছেন। যেমন --
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ সেদিন কোন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন কোন মুখ হবে কালো। বস্তুতঃ যাদের মুখ কালো হবে, তাদের বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কাফের হয়ে গিয়েছিলে? এবার সে কুফরীর বিনিময়ে আযাবের আস্বাদ গ্রহণ কর٣:١٠٦] । অত্র আয়াতের পূর্বাপর কাফের মুশরিকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি, বিভক্তি বাদীদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে বিধায় ফেরকাবাজদের জন্য এ আয়াত প্রজোয্য। এসম্পর্কে আমি আল কোরআনের কাঠগড়ায় বিভক্তিবাদ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আমাদের দ্বিতীয় স্তরের কর্তা বা মুরুব্বি হলেন পিতা মাতা। তারা কখনোই বিভক্ত করেন নি। বরং প্রত্যেক পিতা মাতা তার শিশুকে শিখায়, সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সকলের সাথে আমি যেন ভাল হয়ে চলি। কারো অন্যায় না করতে, অন্যকে ক্ষমা করতে, ঝগড়া না করতে, সকলের সাথে মিলে মিশে চলতে ইত্যাদি উপদেশ তারা সর্বক্ষণ সন্তানকে দিয়ে থাকেন। তাহলে আমাদেরকে বিভক্ত করল কে? আমাদের তৃতীয় স্তরের মুরুব্বি হলেন আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ ইত্যাদিগণ। এ শ্রেণিটাই আমাদেরকে বিভক্ত করে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। পরস্পরের শত্রু রুপে গড়ে তুলেছেন। যদিও তাদের মুরুব্বীয়ানা কোরআন হাদীস সমর্থিত নয়। বিষয়টা ব্যাখ্যার দাবী রাখে। কোরআনে আল্লাহ্ রাসূল (সাঃ) ও পিতা মাতা ব্যতীত তৃতীয় স্তরের কোন আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, উস্তাদ-গণের আনুগত্য, অনুসরণ ও খেদমত করতে হবে- এ জাতীয় কোন কথা নাই। সিহাহ সিত্তাহ যতটুকু পড়েছি এ জাতীয় কোন নির্দেশ আমার স্বরণে আসছে না। এমনিতেও সমাজ প্রচলনে কোরআন হাদীসের এ জাতীয় কোন নসের উদ্ধৃতিও শুনা যায় না। এখন প্রশ্ন হলো তাহলে আলেম-উলামা,পীর-মাশায়েখ ও উস্তাদগণের এত মাহাত্বের বর্ণনা এল কোত্থেকে? এ ব্যাপারে ফ্য়সালামূলক কথা হল প্রত্যেক শ্রেণী নিজ নিজ স্বার্থে কিছু নীতিকথা প্রনয়ণ করে। এ ক্ষেত্রেও সম্ভবত তাই হয়েছে। যেমন সুফী দার্শনিক ফরিদ উদ্দিন আত্তারের পান্দে নামা গ্রন্থে যা কওমী মাদরাসায় পাঠ্য- উস্তাদের মাহাত্ন বর্ণনা করা হয়েছে। উস্তাদের সাথে বেয়াদবি করলে দুনিয়াতেই পাঁচটি করুণ পরিণতির কথা বলা হয়েছে। যাই হউক এ বিষয়ে আমি এর বেশি কিছু বলতে চাইনা।
তবে শিক্ষক শব্দের আরবি প্রতিশব্দ মুয়াল্লিম। মুয়াল্লিম অর্থ যিনি ইলম দান করেন। আর ইলম অর্থ হক্বুল্লাহ ও হক্বুল ইবাদ সংক্রান্ত জ্ঞান। কাজেই যে শিক্ষক মানব সন্তানকে হক্বুল্লাহর জ্ঞান দান করে, তার উপর আল্লাহ্র কি হক রয়েছে তা শিক্ষা দেয় এবং হক্বুল ইবাদ তথা পিতা মাতা আত্মীয় স্বজন ও অন্যান্য মানুষের তার উপর কি অধিকার রয়েছে তা শিক্ষা দেয়, তাকে সচেতন ও সুনাগরিক রুপে গড়ে তুলেন, তিনিই হলেন প্রকৃত শিক্ষক, তিনি শ্রদ্ধার্হ্য, সর্বজন মান্য, প্রাতঃস্বরনিয় এবং পিতা মাতার ন্যায় খিদমতের প্রাপক। পক্ষান্তরে পশ্চিমা ধারার শিক্ষকরা মুয়াল্লিম এর সংজ্ঞার আওতায় আসে না। কারণ তারা হক্বুল্লাহ ও হক্বুল ইবাদ কোনটাই শিক্ষা দেয় না, বরং খোদা বিমুখ একটা লোটেরা শ্রেণী সৃষ্টি করে চলেছে। এজন্যই ছাত্ররা তাদেরকে বেতনভুক্ত চাকর মনে করে, শ্রদ্ধা-ভক্তি তো করেই না বরং গায়ে হাত তোলে এমনকি হত্যা পর্যন্ত করে। কিন্তু ব্যতিক্রম তারা যারা এ ফিতনার মধ্যে থেকেও ছাত্রদেরকে খোদার পথে ডাকে, মানুষের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তোলে। যেমন জামাত, তাবলীগ ও অন্যান্য ইসলাম পন্থী ধারার শিক্ষকগণ।
এখন প্রশ্ন হল, আমাদের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখগণ প্রকৃত মুয়াল্লিম বা উস্তাদের দায়িত্ব পালন করছেন কিনা ? না, তারা তা করছেন না, বরং ফিরকাবাজির মাধ্যমে তারা আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধাচারন করছেন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন আলেমগণ নবীদের ওয়ারিশ। এর অর্থ হল যেহেতু আর কোন নবী রাসূল আসবেন না, কাজেই তাদের কাজটা আলেমগণ করবেন। অর্থাৎ কোনরূপ সংযোজন বিয়োজন ব্যতীত আলেমগণ মানুষের কাছে কোরআন সুন্নাহর বিধান পৌঁছে দিবেন। এখন অনুসন্ধানের বিষয় হল তারা সে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা। বাস্তবতায় দেখা যায়, পূর্ববর্তী বুজুর্গগণ, ইসলামের মহান খাদেমগণ ইসলামের খেদমত করে গেছেন, তারা যেহেতু নবী রাসূল ছিলেন না- সাধারণ মানুষ ছিলেন, সঙ্গত কারণেই তাদের ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল। তারাও কখনো এমন বলেন নি যে, আমি বা আমরা ভুলের উর্ধ্বে, আমাদের প্রবর্তিত ধারাই একমাত্র ইসলাম এর বাইরে ইসলাম নাই। কিন্তু পরবর্তী আলেম নামের শয়তানরা একেকজন বুজুর্গের অনুসরণে একেকটা ফেরকার জন্ম দিয়েছে, সংশ্লিষ্ট বুজুর্গের ভুলগুলিকেও সঠিক বলে আঁকড়ে ধরেছে এবং নিজেদেরকে একমাত্র ইসলামপন্থী আর বাকীদেরকে স্বীকৃতি তো দিচ্ছেই না এমনকি কাফির মুশরিক পর্যন্ত ঘোষণা করছে। আর এভাবেই পরবর্তী আলেমদের অপকীর্তির কারণে উম্মাহ বেরেলভী, দেওবন্দী, জামাতী, তাবলীগী, ওয়াহাবী, ব্রাদার হুড ইত্যাদি শত শত ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে। অথচ প্রত্যেক ফেরকার সংশ্লিষ্ট প্রধান মুরুব্বি কিন্তু এসব ফিরকাবাজির অনুমতি দিয়ে যাননি। কাজেই বুঝা যাচ্ছে পরবর্তী আলেমরাই এর জন্য দায়ী। আর এভাবেই তারা আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং বিভক্তির মাধ্যমে উম্মাহ ধ্বংসের দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নিয়েছে। কারণ আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) বলেছেন সকল মুসলমান ভাই ভাই, তাদের ঐক্য ফরয, বিভক্তি হারাম। কিন্তু বিভক্তিবাদি আলেমরা যেন অঘোষিত ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, আমরা ঐক্যবদ্ধ হব না আল্লাহ্ ও রাসূল যাই বলুক না কেন ( নাউযুবিল্লাহ)। অর্থাৎ তারা কোরআন সুন্নাহর নির্দেশ বর্জন করে, বিভক্তি জিইয়ে রেখে, ঐক্যে অনিহা প্রকাশ করে আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কাজেই এদের সম্পর্কে আমরা কিছু বলব্না স্বয়ং আল্লাহ্ই বিধান দিচ্ছেন--
إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلَافٍ أَوْ يُنفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَٰلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ -- যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং ভূ-পৃষ্ঠে (উম্মাহর মধ্যে) হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। (৫: ৩৩)
এটাই হলো আলেম নাম ধারি বিভক্তি বাদী শয়তানদের উপযুক্ত বিচার। তদুপরি তাদের বিভক্তির কারণে যেহেতু আজ ইসলাম ও উম্মাহ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে অস্তিত্ব সংকটের মোকাবেলা করছে এমতাবস্থায় ঐসব বিভক্তিবাদি শয়তানদের ধ্বংস করে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা আমাদের জন্য ফরয। অন্যথায় আল্লাহ্ তা’লা আমাদের ক্ষমা করবেন না আর ইসলাম ও উম্মাহ ও ধ্বংস হয়ে যাবে। কাজেই ভাইটি/বোনটি আমার, তুমি শিয়া সুন্নী, দেওবন্দী, বেরেলভী, জামাতী, তাবলীগী, সুফিবাদী, ওয়াহাবী, ব্রাদার হুড যেই হও না কেন তোমাকে আল্লাহ্র দোহাই দিচ্ছি, রাসূল (সাঃ) এর নামে ডাকছি, কোরআন সুন্নাহর দোহাই দিচ্ছি, ফিরে এসো, ভাই-বোন আমার, এতদিন কোথায় ছিলে, আমরা তো সহোদর ভাই বোনের চেয়েও আরো ঘনিস্ট , আরো নিকটতর, তবে কেন আমাদের এ বিচ্ছেদ, বিভক্তিবাদী শয়তানদের ধোকায় পড়ে কেন আমরা আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) এর অবাধ্য হলাম, কেন ভাইয়ে ভাইয়ে কুকুরের মত কামড়া কামড়ি করে মরলাম, কেন শত্রুতা পোষণ করলাম, কেন নিজেদের ইহকাল-পরকাল নষ্ট করলাম ? এখন এসো প্রায়শ্চিত্য করি, এসো গলাগলি ধরে কাঁদি। সর্বাগ্রে কথিত অতিশয় গোঁড়া, সংকির্নমনা পশ্চাৎপদ দেওবন্দীদের থেকে আমি বুক পেতে দিলাম, এসো ভাইটি আমার, দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর মিলিত হই।গলাগলি করে কাঁদি, কেঁদে যদি পাই সুখ। মনের কালিমা অশ্রুতে ঝড়িয়ে দেই। পাক সাফ হয়ে সবাই একাকার হয়ে যাই।
আসিয়াছে শুভ দিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হবে ঋণ। ভাই আমার, আমাদের দীর্ঘ বিচ্ছেদের কারণে অনেক ঋণ হয়ে গেছে, বহু কান্না জমে গেছে। আমাদের বিভক্তির কারণে ফিলিস্তিন, আরাকান, কাশ্মীর, জিংজিয়াংয়ে আমাদের ভাই বোনদের ইতর প্রাণীর মত মারা হচ্ছে, আমাদের কচি সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের পাপের কারণেই তাদেরকে মাশুল দিতে হচ্ছে। কাজেই আমার পাপের বোঝা আমিই বহিব সোজা, রোজ কিয়ামতে কে বহিবে বল আমাদের পাপের বোঝা, মম অপরাধে শিশুরা মরিছে, আজি তার প্রায়শ্চিত্ত করিব আপনি (উমর ফারুক, নজরুল)। সেই কাজা কান্না এসো এখন আদায় করি। এসো আমাদের মজলুম ভাই বোনদের জন্য প্রাণ খোলে কাঁদি। পাপের ভার কিছুটা লাঘব করি।
তারপর শপদ বাক্য পাঠ কর, এই কোরআনের উপর হাত রাখ এবং বল- আমরা শপৎ করছি যে, আমরা একমাত্র কোরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করব, এর বাইরে কোন আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ যদি কিছু বলেন- তাহলে আমরা তাকে প্রত্যাখ্যান করব এবং প্রতিরোধ করব। যেসব আলেম আমাদেরকে বিভিন্ন ফিরকায় বিভক্ত করে রেখেছে তারা নিজেরা কুফুরী করছে এবং আমাদেরকেও কুফুরী কাজে লিপ্ত রাখছে- এভাবেই তারা ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে। কাজেই এখন আমাদের এ অজ্ঞাত পাপের জন্য আমরা তওবা করছি, আর কখনো আমরা বিভক্ত হবনা, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে আমরা ঐক্যবদ্ধ হলাম। আর ঐসব শয়তানের প্রতিনিধি বিভক্তিবাদী আলেম যারা একক উম্মাহকে বিভক্ত করে ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস করছে তাদেরকে আমরা তিনবার ঐক্যের দাওয়াত দিব, তওবার সুযোগ দিব, যদি তারা তওবা করে ঐক্যের পথে ফিরে আসে তবে তারাই আমাদের নেতৃত্ব দিবে, খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবে। আর যদি তারা ফিরে না আসে তবে কোরআনের বিধান অনুসারে তাদের বিচার করা হবে, হত্যা করা হবে। তারপর বিচ্ছিন্নবাদিতার কারনে মিশরের গভর্নর মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের লাশ যেভাবে আমীর মোয়াবিয়া (রাঃ) ও আমর ইবনে আস (রাঃ) মৃত গাধার পেটে ঢুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং হযরত আলী (রাঃ) এর হত্যাকারী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিমের লাশ আগুনে পুড়ানো হয়ে ছিল, ঠিক একই ভাবে বিভক্তিবাদী আলেমদের লাশও আগুনে পুড়িয়ে ছাই সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হবে।পৃথিবীর সীমানা থেকে তাদের অস্বিত্ব মুছে ফেলব। তারপর আমরা সকল উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফত-মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করব, ইনসাফ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করব, অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করব। মুস্তাদআফ প্রলেতারিয়েত জনগোস্টিকে সরকারি ভাতায় প্রতিপালন করব। (বিস্তারিত খিলাফত ইশতিহার) আমরা খিলাফত আলা মিনজাহিন নবুয়্যত এর প্রবর্তন করব। পৃথিবী থেকে সকল পরমাণু ও মরনাস্ত্র ধ্বংস করে পৃথিবীকে সঙ্কট মুক্ত করব, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করব। এভাবে আমরা পৃথিবীতে গড়ে তুলব কসমোপলিটান ব্রাদার হুড।
সর্বশেষে মোনাজাত কর। মহা বিশ্বের মালিক ওগো, জানি আমরা পাপী, তোমার নির্দেশ উপেক্ষা করে আমরা শত শত ফিরকায় বিভক্তি হয়ে পরস্পর কামড়া কামড়ি করে মরছি। এখন আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি, পলাতক দাসের ন্যায় তোমার দরবারে ফিরে এসেছি। আমাদের অপরাধ মার্জনা কর প্রভু, আমাদের পাপের কারণে রাসূল (সাঃ) এর উম্মতকে শাস্তি দিওনা। আমাদের থেকে তোমার নিয়ামত ইসলামকে ছিনিয়ে নিওনা। আদল ও ইনসাফের মালিক, আমরা গুনাহ গার হলেও তোমারই অনুগত দাস, স্বজ্ঞানে তোমার সাথে শিরক করি না। আমাদেরকে এভাবে পশ্চিমের দাজ্জালের হাতে ধ্বংস করো না প্রভু, তাহলে লা তু’বাদুল আরদ-পৃথিবীতে তোমার ইবাদাত করার কেউ থাকবে না (বদর যুদ্ধে রাসূল (সাঃ) এর দোয়া, বুখারী)। বিচার দিনের স্বামী, তোমার প্রিয় হাবীবের মজলুম উম্মতকে সাহায্য করার শক্তি আমাদেরকে দাও, সমগ্র দুনিয়ার মজলুম মানবতার মুক্তি দানের তাওফিক আমাদেরকে দাও। সকল বিভক্তি মিটিয়ে উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান কর হে আরহামুর রাহিমীন। আল্লাহুম্মা আমীন, আমীন ছুম্মা আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন