নয়া যমানার ডাক-৩ (অস্বিত্ব সংকটে ঐক্য)।
লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:৩৭:২১ রাত
মুসলিম জাতি পৃথিবীর মূল ভূখণ্ড আর মূল সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে পতনের যে স্তরে পতিত হয়েছে-সম্ভবতঃ রোজে পয়দায়েশ থেকে নিয়ে নক্ষত্র মন্ডল পৃথিবীর বুকে অন্য কোন জাতির বেলায় এমন পীড়াদায়ক পতন আর কখনো দেখেনি। আজ মুসলিম দেশগুলি বাহ্যতঃ স্বাধীন মনে হলেও কার্যত পরাধিন। যেমন আমাদের জন্মভূমির কথাই বলি, ভারতের প্রতিটি প্রয়োজন ও খায়েশ আমাদেরকে অনুগত স্ত্রীর মত আদায় করতে হয়। তদুপরি দাদাদের মনতুস্টি ও মনোরঞ্জনে আমরা অষ্ট প্রহর এক পায়ে দাড়িয়ে থাকি। পক্ষান্তরে তারা তিস্তাসহ সকল নদীতে বাঁধ দিয়ে আমাদেরকে জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে, দেশ মরুময়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে সকল বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদেরকে বঙ্গ সাগরের সাথে একাকার করে দিচ্ছে। আবার প্রতিদিন অসংখ্য ফেলানি ও বঙ্গ-সন্তানকে হত্যা করে সীমান্তের কাটাতারে বাদর ঝুলানো ঝুলিয়ে রাখছে। দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে মানুষ হত্যা করছে, অপারেশন চালাচ্ছে, গোয়েন্দাবৃত্তি করছে। কিন্তু প্রতিবাদ করার শক্তি ও সাহস কোনটাই আমাদের নাই। আবার বার্মার মত বাদরও আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খায়, দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে মানুষ হত্যা করে, ধরে নিয়ে যায়, আর্মি বিডিআর-এর সেনা হত্যা করে। আর তখন শিশুর ফিডার চোষার ন্যায় বসে বসে আংগুল চোষা ব্যতীত আমাদের কোন গত্যন্তর থাকে না। কাজেই এ কোন স্বাধীনতা? আমরা কেমন স্বাধীন, এ স্বাধীনতার সংজ্ঞা কি?
আবার আফগান থেকে মিশর পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলো বাহ্যত স্বাধীন কিন্তু কার্যত তারা এতটাই পরাধিন, এমনই নিকৃষ্টতম দাসে পরিণত হয়েছে যে, উপনিবেশিক আমলেও এমন নযির ছিল না। কারণ উপনিবেশিক আমলে খৃষ্টানরা নিজেদের আইনে নিজেরাই শাসন করত, সম্পদ শোষণ করত কিন্তু বিনা প্রয়োজনে কাউকে হত্যা করত না। কিন্তু বর্তমান মেকি স্বাধীনতার যুগে পশ্চিমের দাজ্জাল নিজেদের চর ও বংশবদ অনুসারীদের দিয়ে তাদের আইনেই মুসলিম দেশগুলি শাসন করছে, পূর্বের ন্যায় সম্পদ চোষে নিচ্ছে, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কখনো তারা সরাসরি সৈন্য প্রেরণ করে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, কখনো বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম দিয়ে পস্পরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে। কারণ সৃষ্টির সূচনা থেকে পশ্চিমারা কখনোই স্বনির্ভর ছিল না, তারা প্রাচ্য থেকে পশ্চিমে ছড়িয়েছে, প্রাচ্যের সম্পদের উপর নির্ভরশীল থেকেছে এবং এর উপরই জীবন ধারন করেছে। মধ্যযুগীয় বর্বরতার যুগে তারা মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মুক্ত চিন্তার আলোকে আলোকিত হয়ে গীর্জার অন্ধ শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে, পৃথিবীকে তাদের বিস্তীর্ন শিকার ক্ষেত্রে পরিণত করে, পূর্বের সম্পদে পশ্চিমে পাহাড় গড়ে তোলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লেজে গোবরে অবস্থায় তারা লেজ গুটিয়ে নিলেও এ চেতনা তাদের ছিল যে, প্রাচ্যের সম্পদ ব্যতীত তাদের জীবন সংকটাপন্ন। বিশেষতঃ মুসলিম বিশ্বের তেল রাবার ব্যতীত তাদের সভ্যতার চাকা অচল। এ জন্যই মধ্য প্রাচ্যকে নিয়ে তারা ইঁদুর বিড়াল খেলছে। মুসলিম দুনিয়াকে আগ্নেয়গিরিতে রূপান্তরিত করেছে। অভিশপ্ত আমিরিকা দুনিয়া শুদ্ধু গণতন্ত্রের টিকাদারী করে বেড়ালেও সৌদি, কুয়েত, আমিরাত, বাহরাইন ইত্যাদির রাজতন্ত্র তাদের কাছে খুবই মজাদার। কারণ এসব রাজারা আমিরিকার খাটি আদি আসল খান্দানি ক্রিতদাস। এরাই মুসলিম দুনিয়ায় দাজ্জালের স্বার্থ সংরক্ষণ করছে, এবং দাজ্জালকে টিকিয়ে রাখছে। অথচ এসব পা চাটা রাজারা যদি দাজ্জালের দাসত্ব ত্যাগ করে উম্মাহর স্বার্থ সংরক্ষণ করত, ঐক্যের ডাক দিত, মুসলিম জাতিসংঘ/খিলাফত প্রতিষ্ঠা করত, তাহলে তারাই বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত থাকত।
পক্ষান্তরে পশ্চিমা দাজ্জালের দাসত্ব না করার কারণে সাদ্দাম ও মোল্লা ওমরকে ধুলিস্মাত করে দিয়েছে। শুধু ইসলামিস্ট হওয়ার কারণে মিশরের ভূমিতে সর্ব প্রথম নির্বাচিত ব্রাদার হুড সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। তাদের উপর চলছে বিভৎসতম নির্যাতন ও গণহত্যা। কাজেই মুসলিম দেশগুলোর এ কেমন স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতার চেয়ে তো পরাধিনতা অনেক ভালো ছিল। উপনিবেশিক আমলেও তো এত রক্তপাত ঘটেনি, এত সম্পদ পাচার হয়নি, ধ্বংস হয়নি। আজ ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, মিসর, ইয়েমেনে যে গণহত্যা চলছে, সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, ইউরোপের দিকে উদ্ভাস্তুর যে সারী দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে অতীতের যে কোন বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে এর ধ্বংসলীলা আরো ভয়াবহ। এক আয়লানের ঘটনা সারা বিশ্বে আলোচিত হলেও হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ আয়লান যবনিকার আড়ালে চলে যাচ্ছে, অথচ কেউ তাদের খবর রাখেনা, আকাশ পৃথিবী তাদের জন্য কাঁদে না। এ থেকে মুক্তির উপায় কি ?
আবার অস্ত্র ব্যবসা, তেল ও অন্যান্য সম্পদ শোষণের লক্ষে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রাখতে তারা বিভিন্ন গ্রুপ জন্ম দিয়েছে। এ সব গ্রুপকে তারা অস্ত্র দিচ্ছে, অর্থ সাহায্য দিচ্ছে, পরামর্শ দিচ্ছে। এভাবে আজ গণতন্ত্রী, রাজতন্ত্রী, ইসলামিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, শিয়া-সুন্নির মধ্যে তারা হিংসার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ফলে ভাই ভাইকে মারছে, মুসলমান মুসলমানকে হত্যা করছে। মুসলিম বিশ্ব আজ মধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এভাবে আর কত কাল চলবে, এ থেকে মুক্তির উপায় কি ? ঐক্য ব্যতীত এ থেকে মুক্তির কি দ্বিতীয় কোন পথ খোলা আছে ?
এতো গেল মুসলিম বিশ্বের অবস্থা। অমুসলিম দেশগুলোতে মুসলমানদের অবস্থা তো ইতর প্রাণীর চেয়েও শোচনীয়। ফিলিস্তিন, আরাকান, কাশ্মীর, জিংজিয়াং ইত্যাদি মানবতার বধ্যভুমি গুলিতে যা হচ্ছে তা বর্ণনাতিত, যা সকলেরই জানা। সেখানে মানবতার শেষ ফোটা বিন্দু রক্তাশ্রু ঝড়ে পড়ছে। ঐসব দেশগুলোতে মানবতা নেই, আছে শুধু মনুষ্যত্বের শবদেহ। মুসলিম জাতির পচা, গলা, গান্ধা, দুর্গন্ধ ছড়ানো লাশ। এসব দেশে মুসলমানরা কুকুর, বিড়াল ও কীট-পতঙ্গের অধিকারটুকুও পাচ্ছে না। মুসলমান আজ অভিশপ্ত, পৃথিবীবাসী ও আকাশবাসীর ক্রোধের পাত্র। এসব দেশের মজলুম মুসলমানদের অবস্থা সকলেরই জানা। কাজেই আলোচনা দির্ঘায়িত না করে একটি ঘটনা উল্লেখ করে ইতি টানছি।
বহুল প্রচলিত মিথ। নিযাম ডাকাত হৈ হৈ রে রে বলে পথিক দরবেশের মাথার উপর মুগুর উত্তোলন করল। দরবেশ বললেন, কেন নিজেকে জাহান্নামের জন্য তৈরি করছ? তোমার এ পাপের দায়ভার তো তোমার পোষ্য স্ত্রী –সন্তান, পিতা-মাতা বহন করবে না। তখন পথিক যাতে পালাতে না পারে তাকে ভাল করে বেঁধে রেখে ডাকাত তা জানার জন্য বাড়িতে গেল। বিষন্ন মুখে ফিরে এসে বলল, না, তারা আমার পাপের ভাগিদার হবে না। তখন ডাকাত কেঁদে উঠে বলল, আমি জীবনে একশতটা খুন করেছি। এখন এ পাপ থেকে মুক্তির উপায় কি ? দরবেশ বললেন, ঐ যে মরা গাছটি দেখছ এর নীচে বসে আল্লাহ্ আল্লাহ্ জপ করতে থাকবে, যখন এ বৃক্ষ নতুন পত্র- পল্লবে সবুজ হয়ে উঠবে সেদিন বুঝবে তোমার পাপ ক্ষমা হয়েছে। নিজাম ডাকাত মরা গাছের নীচে বসে বার বছর সাধনা করল কিন্তু নতুন পত্র- পল্লব গজাল না। এক দিন নিশীথে অদুরেই সে দেখতে পেল এক পাপিস্ট কোদাল নিয়ে এসে একটি নতুন কবর থেকে লাশ তুলে ধর্ষণ করছে। এটা তার সহ্য হল না। ছুটে গিয়ে পাপিস্টের কোদাল দিয়েই তার মস্তক ছেদন করে দিল। তারপর সস্থানে ফিরে এসে তার চোখ আনন্দে নেচে উঠল। মৃত বৃক্ষে নতুন পত্র পল্লব ও শাখা গজিয়ে সবুজ হয়ে উঠেছে। নিজাম ডাকাত হয়ে গেল নিজামুদ্দিন আউলিয়া। আল্লাহ্র দরবারে নারীর সম্ভ্রমের এই মুল্য।
বর্তমান এক বিংশ শতাব্দির সভ্যতার যুগ। অযুত কোটি ঘটনার একটি হল, ভারতীয় বিজেপির জনৈক নেতা ঘোষণা করল, মুসলিম মেয়েদেরকে কবর থেকে তুলে ধর্ষণ কর। এর মাত্র কয়েক দিন পর তিনটা দু পেয়ে আযাযিল এক মুসলিম মহিলার লাশ কবর থেকে তুলে ধর্ষণ করল। ঘটনা বহুল আলোচিত ও সকলের জানা। পৃথিবীর জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত এমন কুৎসিত ঘটনা কোথাও ঘটেছে বলে কেউ বলতে পারে না। জানি না সেদিন খোদার আসন- আরশ কুরসি কেঁপে উঠেছিল কিনা, কিন্তু এটা জানি যে, কোন মুসলমানের হৃদয় প্রকম্পিত হয়নি। কারণ এমন বীভৎস কাজের জন্য কোন মুসলিম সরকার, আলেম উলামা বা সশস্ত্র তালেবান আইসিস কেউ বিচার চেয়েছে বা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে আমরা জানি না। কাজেই ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, মুসলিম জাতির অবস্থান কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আজ যদি মুসলিম জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকত, খিলাফত/ মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত থাকত তাহলে কাফেররা এমন বীভৎস ঘটনার কল্পনাও করতে পারত না। কাজেই সহ্যের একটা মাত্রা আছে, ধৈর্যের একটা সীমা আছে। ধৈর্যের বাঁধ আমাদের ভেঙ্গে গেছে। সুতরাং আঙ্গুলটা সোজা করে বলছি- ঐক্যবদ্ধ হও, খিলাফত প্রতিষ্ঠা কর। আর ঐক্যের নিউক্লিয়াস হচ্ছে আলেম সমাজ। কাজেই দেওবন্দী, তাবলিগী, জামাতী, তরিকতী, ওহাবী, বেরেলভী প্রত্যেক ফেরকার আলেমগণ ঐক্যবদ্ধ হও, তারপর খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের ইহকাল-পরকাল বাচাও এবং ইসলাম ও উম্মাহকে রক্ষা কর। অন্যথায় ভয়ঙ্কর একটা কিছু ঘটে যাবে। আল্লাহ্র কসম, আমরা আর বসে থাকব না, ঐক্যবদ্ধ না হলে প্রত্যেকটা মুসলিম হত্যা ও নারী-সম্ভ্রমের জন্য বিভক্তিবাদী আলেমদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহন করা হবে। তারপর কী হবে একমাত্র আল্লাহই মা’লুম। কারণ এ ছাড়া উম্মাহর মুক্তির দ্বিতীয় কোন ছিদ্র নেই।
মুসলিম জাতি পৃথিবীর মূল ভূখণ্ড আর মূল সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে পতনের যে স্তরে পতিত হয়েছে-সম্ভবতঃ রোজে পয়দায়েশ থেকে নিয়ে নক্ষত্র মন্ডল পৃথিবীর বুকে অন্য কোন জাতির বেলায় এমন পীড়াদায়ক পতন আর কখনো দেখেনি। আজ মুসলিম দেশগুলি বাহ্যতঃ স্বাধীন মনে হলেও কার্যত পরাধিন। যেমন আমাদের জন্মভূমির কথাই বলি, ভারতের প্রতিটি প্রয়োজন ও খায়েশ আমাদেরকে অনুগত স্ত্রীর মত আদায় করতে হয়। তদুপরি দাদাদের মনতুস্টি ও মনোরঞ্জনে আমরা অষ্ট প্রহর এক পায়ে দাড়িয়ে থাকি। পক্ষান্তরে তারা তিস্তাসহ সকল নদীতে বাঁধ দিয়ে আমাদেরকে জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে, দেশ মরুময়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে সকল বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদেরকে বঙ্গ সাগরের সাথে একাকার করে দিচ্ছে। আবার প্রতিদিন অসংখ্য ফেলানি ও বঙ্গ-সন্তানকে হত্যা করে সীমান্তের কাটাতারে বাদর ঝুলানো ঝুলিয়ে রাখছে। দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে মানুষ হত্যা করছে, অপারেশন চালাচ্ছে, গোয়েন্দাবৃত্তি করছে। কিন্তু প্রতিবাদ করার শক্তি ও সাহস কোনটাই আমাদের নাই। আবার বার্মার মত বাদরও আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খায়, দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে মানুষ হত্যা করে, ধরে নিয়ে যায়, আর্মি বিডিআর-এর সেনা হত্যা করে। আর তখন শিশুর ফিডার চোষার ন্যায় বসে বসে আংগুল চোষা ব্যতীত আমাদের কোন গত্যন্তর থাকে না। কাজেই এ কোন স্বাধীনতা? আমরা কেমন স্বাধীন, এ স্বাধীনতার সংজ্ঞা কি?
আবার আফগান থেকে মিশর পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলো বাহ্যত স্বাধীন কিন্তু কার্যত তারা এতটাই পরাধিন, এমনই নিকৃষ্টতম দাসে পরিণত হয়েছে যে, উপনিবেশিক আমলেও এমন নযির ছিল না। কারণ উপনিবেশিক আমলে খৃষ্টানরা নিজেদের আইনে নিজেরাই শাসন করত, সম্পদ শোষণ করত কিন্তু বিনা প্রয়োজনে কাউকে হত্যা করত না। কিন্তু বর্তমান মেকি স্বাধীনতার যুগে পশ্চিমের দাজ্জাল নিজেদের চর ও বংশবদ অনুসারীদের দিয়ে তাদের আইনেই মুসলিম দেশগুলি শাসন করছে, পূর্বের ন্যায় সম্পদ চোষে নিচ্ছে, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। কখনো তারা সরাসরি সৈন্য প্রেরণ করে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, কখনো বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম দিয়ে পস্পরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে। কারণ সৃষ্টির সূচনা থেকে পশ্চিমারা কখনোই স্বনির্ভর ছিল না, তারা প্রাচ্য থেকে পশ্চিমে ছড়িয়েছে, প্রাচ্যের সম্পদের উপর নির্ভরশীল থেকেছে এবং এর উপরই জীবন ধারন করেছে। মধ্যযুগীয় বর্বরতার যুগে তারা মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মুক্ত চিন্তার আলোকে আলোকিত হয়ে গীর্জার অন্ধ শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে, পৃথিবীকে তাদের বিস্তীর্ন শিকার ক্ষেত্রে পরিণত করে, পূর্বের সম্পদে পশ্চিমে পাহাড় গড়ে তোলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লেজে গোবরে অবস্থায় তারা লেজ গুটিয়ে নিলেও এ চেতনা তাদের ছিল যে, প্রাচ্যের সম্পদ ব্যতীত তাদের জীবন সংকটাপন্ন। বিশেষতঃ মুসলিম বিশ্বের তেল রাবার ব্যতীত তাদের সভ্যতার চাকা অচল। এ জন্যই মধ্য প্রাচ্যকে নিয়ে তারা ইঁদুর বিড়াল খেলছে। মুসলিম দুনিয়াকে আগ্নেয়গিরিতে রূপান্তরিত করেছে। অভিশপ্ত আমিরিকা দুনিয়া শুদ্ধু গণতন্ত্রের টিকাদারী করে বেড়ালেও সৌদি, কুয়েত, আমিরাত, বাহরাইন ইত্যাদির রাজতন্ত্র তাদের কাছে খুবই মজাদার। কারণ এসব রাজারা আমিরিকার খাটি আদি আসল খান্দানি ক্রিতদাস। এরাই মুসলিম দুনিয়ায় দাজ্জালের স্বার্থ সংরক্ষণ করছে, এবং দাজ্জালকে টিকিয়ে রাখছে। অথচ এসব পা চাটা রাজারা যদি দাজ্জালের দাসত্ব ত্যাগ করে উম্মাহর স্বার্থ সংরক্ষণ করত, ঐক্যের ডাক দিত, মুসলিম জাতিসংঘ/খিলাফত প্রতিষ্ঠা করত, তাহলে তারাই বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত থাকত।
পক্ষান্তরে পশ্চিমা দাজ্জালের দাসত্ব না করার কারণে সাদ্দাম ও মোল্লা ওমরকে ধুলিস্মাত করে দিয়েছে। শুধু ইসলামিস্ট হওয়ার কারণে মিশরের ভূমিতে সর্ব প্রথম নির্বাচিত ব্রাদার হুড সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। তাদের উপর চলছে বিভৎসতম নির্যাতন ও গণহত্যা। কাজেই মুসলিম দেশগুলোর এ কেমন স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতার চেয়ে তো পরাধিনতা অনেক ভালো ছিল। উপনিবেশিক আমলেও তো এত রক্তপাত ঘটেনি, এত সম্পদ পাচার হয়নি, ধ্বংস হয়নি। আজ ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, মিসর, ইয়েমেনে যে গণহত্যা চলছে, সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, ইউরোপের দিকে উদ্ভাস্তুর যে সারী দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে অতীতের যে কোন বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে এর ধ্বংসলীলা আরো ভয়াবহ। এক আয়লানের ঘটনা সারা বিশ্বে আলোচিত হলেও হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ আয়লান যবনিকার আড়ালে চলে যাচ্ছে, অথচ কেউ তাদের খবর রাখেনা, আকাশ পৃথিবী তাদের জন্য কাঁদে না। এ থেকে মুক্তির উপায় কি ?
আবার অস্ত্র ব্যবসা, তেল ও অন্যান্য সম্পদ শোষণের লক্ষে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রাখতে তারা বিভিন্ন গ্রুপ জন্ম দিয়েছে। এ সব গ্রুপকে তারা অস্ত্র দিচ্ছে, অর্থ সাহায্য দিচ্ছে, পরামর্শ দিচ্ছে। এভাবে আজ গণতন্ত্রী, রাজতন্ত্রী, ইসলামিস্ট, সেক্যুলারিস্ট, শিয়া-সুন্নির মধ্যে তারা হিংসার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ফলে ভাই ভাইকে মারছে, মুসলমান মুসলমানকে হত্যা করছে। মুসলিম বিশ্ব আজ মধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এভাবে আর কত কাল চলবে, এ থেকে মুক্তির উপায় কি ? ঐক্য ব্যতীত এ থেকে মুক্তির কি দ্বিতীয় কোন পথ খোলা আছে ?
এতো গেল মুসলিম বিশ্বের অবস্থা। অমুসলিম দেশগুলোতে মুসলমানদের অবস্থা তো ইতর প্রাণীর চেয়েও শোচনীয়। ফিলিস্তিন, আরাকান, কাশ্মীর, জিংজিয়াং ইত্যাদি মানবতার বধ্যভুমি গুলিতে যা হচ্ছে তা বর্ণনাতিত, যা সকলেরই জানা। সেখানে মানবতার শেষ ফোটা বিন্দু রক্তাশ্রু ঝড়ে পড়ছে। ঐসব দেশগুলোতে মানবতা নেই, আছে শুধু মনুষ্যত্বের শবদেহ। মুসলিম জাতির পচা, গলা, গান্ধা, দুর্গন্ধ ছড়ানো লাশ। এসব দেশে মুসলমানরা কুকুর, বিড়াল ও কীট-পতঙ্গের অধিকারটুকুও পাচ্ছে না। মুসলমান আজ অভিশপ্ত, পৃথিবীবাসী ও আকাশবাসীর ক্রোধের পাত্র। এসব দেশের মজলুম মুসলমানদের অবস্থা সকলেরই জানা। কাজেই আলোচনা দির্ঘায়িত না করে একটি ঘটনা উল্লেখ করে ইতি টানছি।
বহুল প্রচলিত মিথ। নিযাম ডাকাত হৈ হৈ রে রে বলে পথিক দরবেশের মাথার উপর মুগুর উত্তোলন করল। দরবেশ বললেন, কেন নিজেকে জাহান্নামের জন্য তৈরি করছ? তোমার এ পাপের দায়ভার তো তোমার পোষ্য স্ত্রী –সন্তান, পিতা-মাতা বহন করবে না। তখন পথিক যাতে পালাতে না পারে তাকে ভাল করে বেঁধে রেখে ডাকাত তা জানার জন্য বাড়িতে গেল। বিষন্ন মুখে ফিরে এসে বলল, না, তারা আমার পাপের ভাগিদার হবে না। তখন ডাকাত কেঁদে উঠে বলল, আমি জীবনে একশতটা খুন করেছি। এখন এ পাপ থেকে মুক্তির উপায় কি ? দরবেশ বললেন, ঐ যে মরা গাছটি দেখছ এর নীচে বসে আল্লাহ্ আল্লাহ্ জপ করতে থাকবে, যখন এ বৃক্ষ নতুন পত্র- পল্লবে সবুজ হয়ে উঠবে সেদিন বুঝবে তোমার পাপ ক্ষমা হয়েছে। নিজাম ডাকাত মরা গাছের নীচে বসে বার বছর সাধনা করল কিন্তু নতুন পত্র- পল্লব গজাল না। এক দিন নিশীথে অদুরেই সে দেখতে পেল এক পাপিস্ট কোদাল নিয়ে এসে একটি নতুন কবর থেকে লাশ তুলে ধর্ষণ করছে। এটা তার সহ্য হল না। ছুটে গিয়ে পাপিস্টের কোদাল দিয়েই তার মস্তক ছেদন করে দিল। তারপর সস্থানে ফিরে এসে তার চোখ আনন্দে নেচে উঠল। মৃত বৃক্ষে নতুন পত্র পল্লব ও শাখা গজিয়ে সবুজ হয়ে উঠেছে। নিজাম ডাকাত হয়ে গেল নিজামুদ্দিন আউলিয়া। আল্লাহ্র দরবারে নারীর সম্ভ্রমের এই মুল্য।
বর্তমান এক বিংশ শতাব্দির সভ্যতার যুগ। অযুত কোটি ঘটনার একটি হল, ভারতীয় বিজেপির জনৈক নেতা ঘোষণা করল, মুসলিম মেয়েদেরকে কবর থেকে তুলে ধর্ষণ কর। এর মাত্র কয়েক দিন পর তিনটা দু পেয়ে আযাযিল এক মুসলিম মহিলার লাশ কবর থেকে তুলে ধর্ষণ করল। ঘটনা বহুল আলোচিত ও সকলের জানা। পৃথিবীর জন্ম থেকে বর্তমান পর্যন্ত এমন কুৎসিত ঘটনা কোথাও ঘটেছে বলে কেউ বলতে পারে না। জানি না সেদিন খোদার আসন- আরশ কুরসি কেঁপে উঠেছিল কিনা, কিন্তু এটা জানি যে, কোন মুসলমানের হৃদয় প্রকম্পিত হয়নি। কারণ এমন বীভৎস কাজের জন্য কোন মুসলিম সরকার, আলেম উলামা বা সশস্ত্র তালেবান আইসিস কেউ বিচার চেয়েছে বা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলে আমরা জানি না। কাজেই ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, মুসলিম জাতির অবস্থান কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আজ যদি মুসলিম জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকত, খিলাফত/ মুসলিম জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত থাকত তাহলে কাফেররা এমন বীভৎস ঘটনার কল্পনাও করতে পারত না। কাজেই সহ্যের একটা মাত্রা আছে, ধৈর্যের একটা সীমা আছে। ধৈর্যের বাঁধ আমাদের ভেঙ্গে গেছে। সুতরাং আঙ্গুলটা সোজা করে বলছি- ঐক্যবদ্ধ হও, খিলাফত প্রতিষ্ঠা কর। আর ঐক্যের নিউক্লিয়াস হচ্ছে আলেম সমাজ। কাজেই দেওবন্দী, তাবলিগী, জামাতী, তরিকতী, ওহাবী, বেরেলভী প্রত্যেক ফেরকার আলেমগণ ঐক্যবদ্ধ হও, তারপর খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের ইহকাল-পরকাল বাচাও এবং ইসলাম ও উম্মাহকে রক্ষা কর। অন্যথায় ভয়ঙ্কর একটা কিছু ঘটে যাবে। আল্লাহ্র কসম, আমরা আর বসে থাকব না, ঐক্যবদ্ধ না হলে প্রত্যেকটা মুসলিম হত্যা ও নারী-সম্ভ্রমের জন্য বিভক্তিবাদী আলেমদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহন করা হবে। তারপর কী হবে একমাত্র আল্লাহই মা’লুম। কারণ এ ছাড়া উম্মাহর মুক্তির দ্বিতীয় কোন ছিদ্র নেই।
বিষয়: বিবিধ
১০৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন