আমরা ভুল পথে এক
লিখেছেন লিখেছেন রুদ্র আকাশ ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১১:৫৬:৫৩ সকাল
ঘুম ভাংলো খুব সকালে,
এতো ভোরে ঘুম ভাংার কথা না, কিন্তু বাইরে প্রচুর চেঁচামেচি হচ্ছে খুব বড় কোনো ঘটনা সম্ভবত ঘটেছে। ঘুম ঘুম চোখে বেরোলাম বাসার সামনেই বিরাট জটলা, কিছু একটা ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। ভীড়ের ভেতর হতে আওয়াজ আসছে
" মার শালারে মার, আরো দুইটা দে, হারামজাদা"
" শালার পাছার মধ্যে লাথথি দে, লাথথি দিয়া মাজা ভাইংা দে"
একজনকে জিজ্ঞেস করার পর ব্যাপারটি পরিষ্কার হলো,
ভাইজান আর বইলেন না বিরাট চোর ধরা খাইছে, খুবই বড় মাপের চোর ইন্টারন্যাশনাল গ্যাংের সাথেও হাত আছে বলে মনে হয়, হারামজাদা সকাল সকাল চুরি করতে আসছে কত্ত সাহস দেখছেন, তয় এমন মাইর খাইছে জীবনে আর মাজা সোজা করে খাড়াইতে পারবো বলে মনে হয়না।
এটুক বলেই লোকটি বিজয়ের হাসি হাসলো, যেন চোরের মাজা ভেংে দেওয়া খুবই আনন্দের বিষয়, এরুপ আনন্দ খুব একটা পাওয়া যায়না। আমি ভীড় ঠেলে ইন্টারন্যাশনাল গ্যাংগের সাথে যুক্ত চোর দেখতে গেলাম।
১৬-১৭ বছর বয়সের একটি ছেলে, মার খেয়ে ফুলে ঢোল হয়ে আছে, সম্ভবত জ্ঞান নেই, মুখ দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে, এতো মার খাওয়ার পর জ্ঞান থার কথাও না।
একজনকে দেখা যাচ্ছে লাঠি দিয়ে গুতিয়ে কিছু একটা পরিক্ষা করছে, খানিক বাদেই লোকটি বিজ্ঞের মতো বলে উঠলো,
আরে, কিচ্ছু হয়নাই, ভং ধরছে। নিশ্বাস বন্ধ কইরা পইড়া আছে, নাভির দুই ইঞ্চি উপরে দুইটা গুতা দিলেই শালারপুতের জ্ঞান আইবো।
তার কথা শেষ হওয়া মাত্রই একজনকে এগিয়ে আসতে দেখা গেলো,
ইনি সম্ভবত নাভির দুই ইঞ্চি উপরে গুতা দেওয়ায় অভিজ্ঞ।
আমি কিছু বলতে গেলাম, ঠিক তখনি মধ্য
বয়স্ক এক ভদ্রলোক বলে উঠলো,
ভাই, পোলাডারে ছাইড়া দেন, বহুত তো মারছেন। আর কিছুক্ষন মারলে তো মইরা যাইবো, দেহেন না মুখ দিয়া ফেনা বাহির হইতাছে, আর না হইলে পুলিশে দিয়া দেন তারা যা করার করুক।
ভদ্রলোকের কথা শেষ হওয়ামাত্রই ভীড়ের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন উঠলো। গুঞ্জন শুনে বোঝা যাচ্ছে জনতা দুই ভাগে ভাগ হচ্ছে। এক ভাগ ছেলেটিকে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে অন্যভাগ বিপক্ষে। একটা অংশকে দেখা যাচ্ছে মুখ পাংশুবর্ণ করে দাঁড়িয়ে আছে, একটি মজাদার খেলা খানিক বাদেই শেষ হয়ে যাবে এটা ভেবে তারা ভীষন চিন্তিত।
আমি বের হয়ে আসলাম।
হুজুগে জাতি হিসেবে আমাদের বেশ সুনাম আছে। ধরাকে সরা জ্ঞান করতে আমাদের মতো ভালো অন্য কোন জাতি পারে বলে আমার মনে হয়না। এসবের প্রমান আমরা কয়েকবার দিয়েছি, আমরাই একমাত্র জাতি যারা আগপিছ না ভেবে মধ্যরাতে বাশবাগানে গিয়ে হা করে বসে ছিলাম, এক টাকার সিকিকে সুলায়মানের আমলের মুদ্রা ভেবে আগলে রেখেছিলাম। আবার খানিক বাদেই গলা উচিয়ে বলেছি,
আরে ধুর, এসব আমি আগেই জানতাম।
আমরা হার মানতে মোটেও রাজি না, জিবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের জীতই চাই। আমরা ভুলে যাই জেতার জন্য হারাটা জরুরি, আমরা শুধই জিততে চাই, তাই কখনো হার এড়াতে পারিনা। আমরা উপদেশ দিতে গিয়েও হোছট খাচ্ছি, সমালোচনার ভয়ে। কতিপয় লোক আঙুল উচিয়ে বলবে,
আরে ভাই আগে নিজে বদলান, উহ, আইছে জ্ঞান দিতে।
তখন আমাদের জীদ হবে। জিদ নামক বস্তুটির কমতি নেই আমাদের।
বাসের ভেতর কিছু টাকা চুরির দায়ে কেউ ধরা পড়লে আমাদের জিদ প্রকাশ পায়,
বউয়ের সাথে ঝগড়া করার ক্ষোভ, বসের ওপর জমে থাকা ক্ষোভ, মাস শেষে বেতন না পাওয়ার ক্ষোভ, সমস্ত রাগ অই লোকটির পিঠের ওপর দিয়ে বইয়ে দেবো
মার খাওয়া লোকটি অবশ্য কিছু মনে করবে না, এমনটা সে ভেবেই এসেছে, কলা চুরির অপরাধে ফাসি হওয়া এই দেশে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। শরীর ভালো হলেই সে আবার মহা আয়োজনে কাজে বেরোবে।
আমি, আপনি, তারা সবাই এক
এটা খুবই আশার কথা।
নিরাশার কথা হচ্ছে আমরা সবাই ভুল পথে এক,,,
বিষয়: বিবিধ
৯৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন