বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্রশিবির : একটি একক ও অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নেতৃত্ব তৈরীর কারখানা।
লিখেছেন লিখেছেন সানজিদ হোসেন ইরাজ ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ০১:২৯:৩৬ দুপুর
শিবিরের আত্মপ্রকাশ সময়ের অনিবার্য্য বাস্তবতা!!
কোন প্রেক্ষাপট ছাড়া কোন ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম নেয় না তেমনি কোন প্রয়োজন ছাড়া কোন সংগঠনের জন্মও হয় না।বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠা ছিল তৎকালীন সময়ের এক অনিবার্য্য দাবি।বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কতিক সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এ ধরনের একটি সংগঠনের আত্ম প্রকাশ অনিবার্য্য করে তোলে।
দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি, টেন্ডারবাজি, ব্যাংকডাকাতি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মেধা ও সম্পদ পাঁচার নিত্যাদিনের ঘটনায় পরিণত হয়।জনগণের জান-মাল, ইজ্জত-আবরুর কোন নিরাপত্তা ছিল না।গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন কায়েমের জন্য চাপিয়ে দেয়া হয় বাকশালতন্ত্র।জুলুম নির্যাতনের স্টীম রোলারে পিষ্ট সর্বস্তরের ছাত্রজনতা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।স্বাধীনতা পরাধীনতায় পর্যবসিত হয়।তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পটপরির্তনের মাধ্যমে জালিমশাহীর পতন ঘটে।কিন্তু শেষ হয়নি ষড়যন্ত্র। গণতন্ত্র মুক্তি পেলেও যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তোলার জন্য সৎ ও যোগ্য লোক তৈরির কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না।ছিল না দেশ পরিচালনার কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য।ছাত্ররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ হলেও তাদেরকে দেশ গঠনের উপযোগী করে তোলার কোন পথ তখন ছিল না। এমতাবস্থায় দেশগঠনের জন্য সৎ, যোগ্য, মেধাবী ও দক্ষ নেতৃত্বের বিকাশে এবং ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের মহান ও পবিত্র লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
নব যাত্রার শুভলগ্ন থেকেই ছাত্রশিবিরকে থামিয়ে দেবার জন্য চক্রান্ত শুরু হয়।ইসলাম বিরোধী শক্তি ছাত্রশিবিরের এ আত্মপ্রকাশকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি।ছাত্রশিবিরের উপর চলে অত্যাচার, অবিচার, জেল, জুলুম, নির্যাতন, নিষ্পেষণ, অপপ্রচার ও হত্যাযজ্ঞ।কোনভাবেই তারা ছাত্রশিবিরকে এগুতে দিতে চায়নি। তাদের সন্ত্রাসের কারণে দু'শতাধিক শিবির নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে; আহত ও পঙ্গু হয়েছে শত শত ছাত্র। সকল ভ্রুকুটিকে উপক্ষো করে গাঢ় তমাশার পথ চিরে চিরে ছাত্রশিবির আজ এক বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়েছে। ছাত্রশিবির আজ একটি আন্দোলনের নাম। ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্র সমাজের বিপ্লবের স্পন্দন। আগুনঝরা বারুদের পল্লবিত বৃক্ষের নাম ছাত্রশিবির। অসংখ্য মানুষের আশা-আকাঙ্খা, ভালবাসা, প্রত্যাশা, স্বপ্ন আজ শুধুই ছাত্রশিবিরকে কেন্দ্র করে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার প্রতিটি জনপদ, নদী-খাল-বিল, উপত্যাকায় আজ ছাত্রশিবিরের জয়গান-‘পদ্মা, মেঘনা, যমুনার তীরে আমরা শিবির গড়েছি।’
ছাত্রশিবির বাতিলের আতঙ্ক ধরানো একমাত্র উচ্চারণ। উত্তাল আগ্নেয়গিরির উদগীরীত লাভা আজ সমস্ত অন্যায়কে মুছে দিতে চায়। ছাত্রশিবির তার গতি দিয়ে প্রতিরোধ করে বাতাসে গতি, স্রোত দিয়ে থামিয়ে দেয় সমুদ্রের উত্তাল গর্জন আর আকাশের অসীমকে খোদার রাজ্যের সীমানায় টেনে নামিয়ে নিতে চায়। অপ্রতিরোধ্য এই সংগঠনটি হচ্ছে ছাত্রশিবির। অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি প্রচণ্ড দ্রোহের নাম। ছাত্রশিবির বাংলাদেশের একমাত্র শহীদী কাফেলা। বিপ্লবী ফেনিল তরঙ্গের এক উচ্ছসিত স্রোতই হচ্ছে ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবির আজ যৌবনের প্রতীক, উচ্চকিত শ্লোগান আর মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের অবলম্বন আজ ছাত্রশিবির। হতাশ, বৈরী ও ঘুনে ধরা ছাত্র সমাজের সর্বশেষ আশাস্থল হচ্ছে শিবির। আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার এক অপ্রতিরোধ্য কাফেলার নাম ছাত্রশিবির। সৎ, যোগ্য ও খোদাভীরু নেতৃত্বের উৎসস্থল হচ্ছে ছাত্রশিবির। বাতিলের ভীতের উপর প্রতিষ্ঠিত প্রাসাদের জন্য ছাত্রশিবির হচ্ছে ভূমিকম্প। অন্যায়, অসত্য ও জীর্ণতার বিরুদ্ধে শিবির হচ্ছে একটি চলমান সাইক্লোন। নতুনের কেতন উড়ায় ছাত্রশিবির। বিজয়ের জয়গান গায় ছাত্রশিবির। মেধাবী ছাত্রদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান ছাত্রশিবির। নতুন আবিষ্কারে উদ্বেল তারুণ্যের উৎসাহ ছাত্রশিবির। যেখানে মেধা, মননশীলতা আর মূল্যেবোধের জয়গান সেখানেই ছাত্রশিবির। শিবির মেধাহীন, সন্ত্রাস নির্ভর ছাত্ররাজনীতির বিপরীতে সৎ, যোগ্য, খোদাভীরু ও জবাবদিহীতামূলক নেতৃত্ব বিকাশের কারখানা। ছাত্ররাজনীতিতে শিবির ইতিবাচক, গঠনমূলক ও সুষ্ঠু ধারার ছাত্র রাজনীতির প্রবর্তক। সর্বোপরি ইসলামী ছাত্রশিবির একটি একক ও অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ইসলামী ছাত্রশিবিরঃ ইসলাম-শান্তি Peace, ছাত্র-Student, শিবির-Tent তাঁবু বা ঘাঁটি। ইসলামকে জীবন ব্যবস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় এমন ছাত্রদের তাঁবু বা ঘাঁটি হচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। shibir কে বিশ্লেষণ করলে ..s-student, h-honest, i-intellectual, b-brightness, i –inspiration, r-respectful.
ইসলামী ছাত্রশিবিরের লক্ষ্যঃ আল্লাহ প্রদত্ত রাসূল (সা) এর নির্দেশিত বিধান অনুযায়ী মানবজীবনের সার্বিক পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।” এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য দাওয়াত, সংগঠন, প্রশিক্ষণ, শিক্ষাব্যবস্থা ও ছাত্র সমস্যার সমাধান এবং ইসলামী সমাজ বিনির্মান-এ ৫ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে শিবির তার কর্মতৎপরতা পরিচালনা করে।
শিবির কেন প্রতিষ্ঠিত? আল্লাহর এ জমীনে সকল প্রকার জুলুম ও নির্যাতনের মূলোচ্ছেদ করে আল কোরআন ও আল হাদীসের আলোকে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের উপর এক আদর্শ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার মহান ও পবিত্র লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠিত হয়। চমক লাগানো কোন সাময়িক উদ্দেশ্য হাসিল তার লক্ষ্য নয়।
ছাত্রশিবির একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঃ ছাত্রশিবির এমন এক বিশ্ববিদ্যালয় যে বিশ্ববিদ্যালয় একজন শিক্ষার্থী কে বিশ্বমানের ডিগ্রী প্রদান করে থাকে যেমন কমী,সাথী,সদস্য। A university is an institution of higher education and research, which grants academic degrees at all levels (bachelor, master, and doctorate) in a variety of subjects. বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এমন এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থী তার মেধা মনন ও প্রতিভা বিকাশের যাবতীয় উপকরণ পেয়ে থাকে। যেসব উপায় উপাদান ও বৈশিষ্ট্য থাকলে কোন প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলা যায়, Hermonious Development of Body, Mind and Soul-এর সবগুলো শর্তই শিবিরের কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও কার্যক্রমে বিদ্যমানইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫টি দফার মধ্যে ৪র্থ দফাটি হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা ও ছাত্র সমস্যা সংক্রান্ত দফাটি হচ্ছে : আদর্শ নাগরিক তৈরির উদ্দেশ্যে এবং ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবিতে সংগ্রাম ও ছাত্র সমাজের প্রকৃত সমস্যার সমাধানের সংগ্রামের নেতৃত্ব প্রদান করা।
এছাড়াও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কর্মসূচি ও কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সিলেবাস, নিয়মিত পাঠ্যচক্র, সামষ্টিক পাঠ, স্টাডি সর্কেল, স্টাডি ক্লাস, নিয়মিত অধ্যয়ন, শিক্ষা কারিকুলাম, শিক্ষা মূল্যায়ন ও পরীক্ষা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ব্যবস্থা, শিক্ষাঙ্গণে পরিবেশ, ছাত্র-শিক্ষক ও লাইব্রেরী ব্যবস্থা।
ছাত্রশিবির স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন? উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যাবলী ছাড়াও ইসলামী ছাত্রশিবিরের এমন অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শিবিরকে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্র সংগঠন থেকে স্বাতন্ত্রম-িত করেছে। বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ -
সৃষ্টি-স্রষ্টা সম্পর্ক-অধিকার ও দায়িত্ব সচেতনঃ স্রষ্টার সম্পর্ক, স্রষ্টার অধিকার ও সৃষ্টি কর্তব্যজ্ঞানের মাধ্যমে শিক্ষার পূর্ণতা লাভ হয়। কিন্তু প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক স্থাপন এবং একে অপরের উপর দায়িত্ব ও অধিকারের বিষয়টি সম্পর্কে জানার সুযোগ নেই। অন্যদিকে ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীকে স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও দায়িত্ববোধ শিক্ষা দিয়ে থাকে।
সমন্বিত সিলেবাসঃ এ সিলেবাসটি সমন্বিত সিলেবাস। সিলেবাসটিকে প্রচলিত শিক্ষা গ্রহণের সাথে সাথে নৈতিক মানোন্নয়ন ও মূল্যবোধ বিকাশের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর মানবিক ও নৈতিক বিকাশের সুযোগ নেই। অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সিলেবাস অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী প্রচলিত শিক্ষা লাভের পাশাপাশি তার নৈতিক ও মানসিক প্রতিভা বিকাশ করতে সক্ষম হয়।
স্তরভিত্তিক সিলেবাসঃ প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিটি শ্রেণীর জন্য সিলেবাসের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর তাদের নিজস্ব জনশক্তির মান উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য সিলেবাস ভিত্তিক কার্যকর অধ্যয়নের কোন ব্যবস্থা নেই। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো অধ্যয়নের ব্যবস্থা থাকলেও তা সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় না। পক্ষান্তরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্কুল ছাত্রদের জন্য Book list ছাড়াও কর্মী, স্কুল কর্মী, সাথী ও সদস্যদের জন্য পৃথক স্তরভিত্তিক সিলেবাস রয়েছে।
উচ্চতর অধ্যয়নঃ প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় যেমন উচ্চতর অধ্যয়নের ব্যবস্থা আছে তেমনি ইসলাম ও জীবন জগতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের গভীর অধ্যয়নের জন্য শিবিরেও একটি পৃথক উচ্চতর সিলেবাস আছে। শিবিরের সদস্য ভায়েরা সদস্য হবার পর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর গভীর জ্ঞান অর্জন ও পারদর্শিতার জন্য উচ্চতর সিলেবাস নির্ধারণ করে থাকে। এ ধরনের উচ্চতর অধ্যয়ন’ এর কোন পদ্ধতি অন্য কোন ছাত্র সংগঠনে নেই।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কঃ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কাক্সিক্ষত মানের হওয়া উচিত। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেই প্রত্যাশিত কোন সম্পর্ক নেই। ব্যক্তি স্বার্থ, উচ্চাকাক্সক্ষা ও নীতিবোধহীন অস্বস্থিকর এক সম্পর্কের ভিতরে ছাত্ররা আজ শিক্ষা গ্রহণ করছে। ফলে তারা মৌলিক কিছুই শিখতে পারছে না। এ জন্যই সায়েন্স ল্যাবরেটরি স্কুলের এক শিক্ষককে তারই দু’ছাত্র গুলি করে হত্যা করেছে। ইসলামী ছাত্রশিবির এধরনের অপরাধ প্রবনতা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত।
রিপোর্টিংঃ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী, সাথী ও সদস্যদের প্রতিদিন ব্যক্তিগত রিপোর্ট লিখতে হয়। ব্যক্তিগত Report এর মাধ্যমে প্রতিটি কর্মীকে জ্ঞান ও আমলের দিক থেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা, তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে উপযোগী করা, নৈতিক ও আত্মিক দিকসহ সকল দিক থেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য যে Report এর ব্যবস্থা আছে তা আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ছাত্র সংগঠনে নেই। ইদানিং কোন কোন কিন্ডারগার্টেনে ব্যক্তিগত ডায়েরি লিখার ব্যবস্থা থাকলেও তা ছাত্রশিবিরের কর্মসূচি থেকে অনুসৃত। এছাড়াও শিবিরের প্রতিটি ইউনিট প্রতিমাসে তাদের মাসিক কাজের Report তৈরী করে থাকে। ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক কাজের Report পর্যালোচনা ও পরামর্শ দানের জন্য ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। রাসুল (সা) বলেছেন যার আজকের দিন গতকালকের চেয়ে উন্নত হল না সে অভিশপ্ত।
ছাত্রবাছাই ও অন্তর্ভূক্তির অনন্য পদ্ধতি : আমাদের কর্মপদ্ধতির দাওয়াত সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কৌশলগত পদ্ধতি চরিত্রবান, নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন, সমাজে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালী ছাত্রদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এই শ্রেণী যদি সংগঠনের দাওয়াত গ্রহণ করে তবে অন্যান্য ছাত্ররা কম সময়ের মধ্যেই দাওয়াত গ্রহণ করবে। কেননা এ শ্রেণীর ছাত্ররা বাকি সকল ছাত্রের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। টার্গেট নির্ধারণের পর পরিল্পনা গ্রহণ, সম্প্রীতি স্থাপন এবং ক্রমধারা অবলম্বন করতে হয়।
সন্ত্রাস মুক্ত শিক্ষাঙ্গনঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসমাজের অধিকার ও দাবি-দাওয়া আদায়ের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। কাগজ কলম খাতাসহ শিক্ষা উপকরণের দাবিতে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে বহুকর্মসূচি পালন করে শিবির। শিবির প্রতিনিয়ত ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবির ছাত্রসংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে সেখানেই শিবির আরো বেশি ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় ঠিকানায় পরিণত হয়েছে।
শিক্ষানীতির জন্য আন্দোলনঃ শিক্ষা ব্যবস্থা একটি জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ৪৪ বছর পরও বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল্যবোধ ও চেতনার আলোকে দেশে কোন শিক্ষা-নীতি প্রণীত হয়নি। বরং ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। শিবির বরাবরই এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে প্রথমত শিবিরের জনশক্তি ও সাধারণ জনগণকে সচেতন করে জনমত সংগ্রহের জন্য জাতীয় শিক্ষা সেমিনারের আয়োজন, স্থানীয় সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, গোলটেবিল বৈঠক, বুকলেট প্রকাশ, পুস্তিকা প্রকাশ, শিক্ষা স্মরণিকা প্রকাশ ও Workshop, গ্রুপ মিটিং ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া প্রতিবছর ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার দাবিতে ১৫ আগস্টকে “ইসলামী শিক্ষা দিবস” হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। ২০০২ সালে দেশব্যাপী শিক্ষা সপ্তাহ পালন করা হয়। এ উপলক্ষে ঢাকায় জাতীয় বিজ্ঞান মেলা, জাতীয় সেমিনার, বিজ্ঞান মেলা, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা, মেধাবী ছাত্রদের সমাবেশে শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি প্রশ্নোত্তর, শিক্ষা সামগ্রী প্রদর্শন, Understanding Science Series প্রদর্শনী এবং “আমাদের শিক্ষা সংকট : উত্তরণের উপায়” শীর্ষক বুকলেট প্রকাশসহ বহুবিধ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদঃ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে। শিক্ষাখাতে যে ব্যয় বরাদ্দ দেয়া উচিত অনেক সময়েই তা দেয়া হয়নি। পাঠ্যপুস্তকে ব্রাহ্মণ্যবাদের আসর, দেরীতে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ দলীয়করণ, ইতিহাস বিকৃতি ও জাতিকে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি, বিপক্ষ শক্তি হিসাবে বিভক্ত করার গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শিবির সব সময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। মিছিল, মিটিং, ছাত্রধর্মঘট, সমাবেশ বিক্ষোভ, ঘেরাও, লিফলেট, প্রচারপত্র বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ভূমিকা পালন করেছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বৈষম্যের প্রতিবাদঃ বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা বরাবরই অবহেলিত। এবতেদায়ীর জন্য আওয়ামী সরকারের কোন বাজেট ছিল না। তাদের ফ্রি-বই বিতরণ ও বৃত্তির ব্যবস্থাও ছিল না। একটি মাত্র মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড। একটি মাত্র প্রশিক্ষণ Institute পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য ভাল ব্যবস্থা নেই। মাদ্রাসা ছাত্ররা B.C.S পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। বিপুলসংখ্যক ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসাকে সমন্বয় করার জন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সাধারণ প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসার মধ্যে বিরাট ব্যবধান করে রাখা হয়েছে। শিবির তার জন্মলগ্ন থেকেই মাদ্রাসার এ বৈষম্য দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসলামী শিক্ষা দিবস উদযাপনঃ শিবির এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গলদ তুলে ধরে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন থেকে ১৫ই আগস্টকে ইসলামী শিক্ষা দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। ১৯৬৯ সালের এ দিনে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে শহীদ আব্দুল মালেককে। প্রতি বছর এ দিনকে সামনে রেখে সারা দেশে শিক্ষা সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা ইসলামী শিক্ষার পক্ষে স্বাক্ষর অভিযানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। একটি ছাত্র সংগঠনের এটি একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ।
সৃজনশীল প্রকাশনায় শিবিরঃ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি সমৃদ্ধ প্রকাশনা বিভাগ রয়েছে। আধুনিক রুচিসম্মত এবং সামাজিক চাহিদা নির্ভর বিভিন্ন প্রকাশনা সামগ্রী এই বিভাগ থেকে প্রকাশ করা হয়। তথ্যবহুল দাওয়াতী কার্যক্রম, উপহার আদান প্রদান এবং সুস্থ বিনোদন চর্চায় শিবিরের প্রকাশনা সামগ্রী অনন্য। এই প্রকাশনা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে নববর্ষের ৬ প্রকার ক্যালেন্ডার, ৪ প্রকার ডায়েরী, অসংখ্য ক্যাসেট এবং বহু রকমের কার্ড, ভিউকার্ড, স্টিকার, মানোগ্রাম, কোটপিন, চাবির রিং, চিঠির প্যাড ইত্যাদি প্রকাশনীর মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনের মাঝে একটি বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। শিবিরের প্রকাশনা সামগ্রী সর্বস্তরের মানুষের কাছে একটি অপরিহার্য সৌন্দর্য্যরে প্রতিক। তথ্যবহুল, গবেষণালব্ধ, বহু রং ও ডিজাইনের ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি দেশ ও বিদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। মনোরম সমসাময়িক প্রচ্ছদ নিয়ে মাসিক ছাত্রসংবাদ, কিশোরকণ্ঠ, Perspective, ত্রৈমাসিক-At a Glancce বের হয়, যা ইতিমেধ্যই পাঠকদের মনযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। কিশোকণ্ঠ ও Youth Wave ম্যাগাজিন হিসাবে বের হয়ে থাকে।
বিজ্ঞান সামগ্রী প্রকাশনাঃ দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার পশ্চাদপদতা দূর করার জন্য ইসলামী ছাত্রশিবির প্রকাশ করেছে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিদ্যার উপর রেফারেন্স বই ও চার্ট পেপার। এ বইগুলো এস.এস.সি/দাখিল, এইচ.এস.সি/আলিম ও ডিগ্রীর প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনন্য ও অপরিহার্য শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বহুরঙ্গা ও দ্বিমাত্রিক চিত্রসহ সম্পূর্ণ ডি.টি.পি তে ও ইলাস্ট্রেটেড ডিজাইনে ছাপানো এ উচ্চমানের বইগুলো বাংলা ভাষায় ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়নি। ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ প্রয়োজন এবং একাডেমিক শিক্ষার যথার্থ তথ্য উপকরণ দিয়েই এই Understanding Science Series প্রকাশিত হয়েছে।
সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শিবিরঃ একটি দেশের রাজনৈতিক বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন সাংস্কৃতিক বিপ্লব। এ দেশের ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে শিবিরের রয়েছে নিজস্ব সাহিত্য সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ভা-ার। জ্ঞান অর্জন ও মেধা বিকাশের পাশাপাশি একজন ছাত্রকে মানসিক বিকাশের জন্য এবং তার মধ্যে সহজভাবে ইসলামের জীবন পদ্ধতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরার জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অপসংস্কৃতির সয়লাব থেকে ছাত্র ও যুবসমাজকে রক্ষা করে তাদেরকে ইসলামী মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে হলেও প্রয়োজন পরিশীলিত সংস্কৃতির আয়োজন। সাহিত্য সংস্কৃতি মানেই অশ্লীলতা-বেহায়াপনা, পাশ্চত্য ও ব্রাহ্মণ্যবাদের অন্ধ অনুকরণ এই ধারণার পরিবর্তন করতে শিবির বদ্ধপরিকর। ইসলামী ছাত্রশিবির সে জন্যই ইসলামী সাংস্কৃতির এক বিরাট জগতকে গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশে ইসলামী সংস্কৃতির প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সাইমুম, প্রত্যয়, বিকল্প, উচ্চারণ, পাঞ্জেরী ও টাইফুন ইত্যাদি শিল্পীগোষ্ঠীর সমগ্র দেশেই সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে।
ছাত্রকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডঃ ছাত্রদের কল্যাণমূখী কর্মকা- পরিচালনায় শিবির তৎপর। বাড়ি থেকে দূরে অবস্থানকারী ছাত্রদেরকে লজিং-এর ব্যবস্থা করে দেয়া, বেতন দানে অক্ষম ছাত্রদেরকে বেতন প্রদান, বই ক্রয়ে সহযোগিতাসহ, মেধাবী ও দরিদ্র ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, ফ্রী কোচিং, বিনামূল্যে প্রশ্নপত্র বিলি এবং কর্জে হাসানা প্রদান করে থাকে।
লেন্ডিং লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠাঃ শিবির তার কর্মীদেরকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পরই তার বই শিবির পরিরচালিত লেন্ডিং লাইব্রেরিতে বিনামূল্যে বই প্রদান করতে উৎসাহিত করে। এছাড়াও শিবির বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্লাসের বই লেন্ডিং লাইব্রেরির জন্য সংগ্রহ করে থাকে। ফেরত দেয়ার শর্তে বই গরীব ও উপযুক্ত ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনঃ একটি ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বমূলক কোন প্রতিযোগিতা থেকে শিবির পিছিয়ে থাকতে পারে না। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজদের মূল কাজের পরিমাণ যাচাই করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণই আমাদের কাজ নয়, নির্বাচনের আগেও আমাদেরকে মৌলিক বা বুনিয়াদি কাজ করতে হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে কেন্দ্রীয় সভাপতি অনুমতি নিতে হয় এবং প্যানেলে কে কোন পদে নির্বাচন করবে সেটাও কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্ধারণ করে থাকেন। আমরা নিজেদের মূল কাজ বাদ রেখে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি না।
কোচিং ও গাইডঃ বাজারে প্রথম শ্রেণীর গাইড ও কোচিং বলতে যা বুঝায় সেগুলো ইসলামী ছাত্রশিবিরের। বুয়েট, কৃষি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ইসলামী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিকসহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিবিরের গাইড এবং কোচিং রয়েছে। এছাড়াও ক্লাস কোচিং, বৃত্তি কোচিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কোচিং রয়েছে। বাজারের অন্য্যন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালিত কোচিং এর মতো নয়। ছাত্রদেরকে ভর্তি উপযোগী করার জন্য ছাত্র-কল্যাণমূলক মনোভাব নিয়ে এ কোচিং পরিচালিত হয়।
নকল প্রবণতা থেকে মুক্তঃ ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্রদেরকে নকল প্রবণতা থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করে। শিবিরের সাথী ও সদস্য শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছাত্ররা নকল করতে পারে না। কেউ নকল করলে তার সাথী বা সদস্য পদ বাতিল করা হয়। কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নিলেও শিবির তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অন্য কোন ছাত্রসংগঠনে তা কল্পনা করা যায় না।
স্পীকার্স ফোরামঃ ছাত্রশিবির মেধাবী ছাত্রদের যোগ্যতার বিকাশে এবং সুপ্ত প্রতিভার পরিস্ফুটনের জন্য স্পিকার্স ফোরামের মাধ্যমে ভাল বক্তা ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যোগ্যতা দক্ষতা বৃদ্ধি প্রচেষ্টা নিয়ে থাকে।
সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডঃ ইসলামী ছাত্রশিবির সমাজকল্যাণমূলক কর্মকা- পরিচালনা করে থাকে। সংকট ও দুর্যোগ মুহুর্তে ত্রাণ বিতরণ, উদ্ধারকাজ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, শীতবস্ত্র বিতরণ বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বাঁধ নির্মাণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ডেঙ্গু প্রতিরোধ, রক্ত দান ও ব্লাড গ্রুপিং সহ নানাবিধ সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে শিবির সাধারণ ছাত্রজনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে সমাজ সচেতন করে গড়ে তোলা, সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শিবির সে কাজটি প্রতিনিয়তই করে থাকে। অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্র সংগঠনের এ ধরনের উদ্যোগ খুবই গৌণ।
বিজ্ঞানবিভত্তিক ৫ দফা কর্মসূচিঃ আমাদের কর্মপদ্ধতি রচিত হয়েছে কুরআন সুন্নাহ, ও যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলন ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার এ যুগের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটকে সামনে রাখা হয়েছে। এ কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে প্রয়োজন ও সম্ভাবনাকে সামনে রেখে। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পানে ধাবিত হওয়ার একটি নিরেট পথ তৈরি করার জন্য। বাংলাদেশে যদি কোন ছাত্র সংগঠনের জন্ম দিতে হয় তাহলে অবশ্যই এ ক্ষেত্রে শিবিরের কর্মসূচি, কর্মপদ্ধতি ও কর্মকৌশলকে অনুসরণ করতে হবে।
আভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক পরিবেশঃ শিবিরের আভ্যন্তরীণ পরিবেশ জান্নাতি পরিবেশ। এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্ত্রের ঝনঝনানী, সন্ত্রাস, ছিনতাই, সংঘাত, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি নিত্যনৈমিত্তিক ঘঢনায় পরিণত হয়েছে। অশ্লীলতা, বেহায়াপনার সয়লাবে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছাত্রসমাজ। ফেনসিডিল, হিরোইন, ইত্যাদি নেশাজাত দ্রব্য নতুন প্রজন্মকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একজন ছাত্র আর একজন ছাত্রকে নির্দ্বিধায় আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করে না। আল্লাহর মেহেরবানীতে নৈতিক অবক্ষয়ের এ প্রচ- ধাক্কা শিবিরকে স্পর্শ করতে পারেনি। শিবিরের একজন কর্মী নিজেদের হাতে নিহত হয়েছে এমন কোন ঘটনা কল্পনাও করা যায় না; কোন কর্মী অন্য কর্মীর গায়ে হাত দিয়েছে এমন কোন ঘটনাও নেই। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের মাঝে রয়েছে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস, প্রেরণা ও উৎসাহ, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা, শুভাকাক্সক্ষা ও ভালবাসা। তদুপরি নিঃস্বার্থভাবে অপরের জন্য ত্যাগী মনোভাব ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক পরিবেশকে উচ্চ শিখরে উন্নীত করেছে।
ভারসাম্যপূর্ণ সংবিধানঃ আমাদের সংবিধানে ৫০ টি ধারা, তিনটি অধ্যায় ও পরিশিষ্ট আছে। এটি উপধারা বিবর্জিত, সংক্ষিপ্ত, নাতিদীর্ঘ, সহজ-সরল, সুপরিবর্তীনয় ও দুষ্পপরিবর্তনীয়ের সমন্বয়। এ সংবিধানে ক্ষমতার একটি সুন্দর ভারসাম্য রয়েছে। কেন্দ্রীয় সভ্যপতি কার্যকরী পরিষদের সাথে পরামর্শ করে কাজ করবেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি তার সকল কাজের জন্য কার্যকরী পরিষদের কাছে দায়ী থাকবেন। কার্যকরী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় সভাপতির মধ্যে যদি কোন বিষয়ে মতাবিরোধ দেখা দেয় এবং কে অপরের রায় মেনে নিতে না পারেন তাহলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে সংগঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
জবাবদিহীতাঃ আমাদের সংগঠনে প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহির চেতনা থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও দায়িত্ব পালনে উর্দ্ধতন দায়িত্বশীলদের কাছে জবাবদিহি করার ব্যবস্থা আছে। সংগঠনের জনশক্তি, সম্পদ, সংগঠনের মর্যাদা ইত্যাদি আমানত। সে আমানতের খেয়ানত যেন না হয় সে জন্য দায়িত্বশীলগণও জবাবদিহির চেতনা নিয়েই দায়িত্ব পালন করে থাকেন। উমর ফারুক রা. এর লম্বা জামা দেখে খুৎবারত অবস্থায় সাহাবীরা তাকে কিভাবে লম্বা জামা পেলেন তার উত্তর দেয়ার পর বাকি খুৎবা দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন।
বায়তুলমালঃ সংগঠন পরিচালনার জন্য প্রত্যেকটি সংগঠনের আর্থিক ব্যবস্থাপনা থাকে। ইসলামী ছাত্রশিবির পরিচালনার জন্যও অর্থের প্রয়োজন হয়। তাকে আমরা বায়তুলমাল বলে থাকি। অন্যান্য সংগঠনে অর্থ উঁচু স্তর থেকে নিচের দিকে নাজিল হয় আর আমাদের সংগঠনে নিচ থেকে উপরদিকে মিরাজ হয়। শিবিরের সর্বস্তরের জনশক্তি সংগঠনের বায়তুলমালে ইয়ানত দিয়ে সংগঠনকে গতিশীল রাখতে সহায়তা করে। প্রত্যেকটি কর্মী প্রতিমাসে সামর্থ্য অনুযায়ী এয়ানত দেন, শিবিরের প্রতিটি ইউনিটে যে শুভাকাক্সক্ষী রয়েছে তারাও প্রতিমাসে একটা নির্ধারিত পরিমাণ এয়ানত দিয়ে থাকেন।
আত্মসমালোচনাঃ আমাদের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি ছাত্র প্রতিদিনই নিজেই নিজের সমালোচনা করে থাকে। মানুষ ভূল-ত্রুটির উর্ধ্বে নয়। প্রতিদিনের ত্রুটির জন্য সে আল্লাহর কাছে তওবা করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে। পরবর্তী দিনগুলো যেন আরো সুন্দর হয় জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। এভাবে সে নিজেকে ব্যক্তিগতভাবে পরিশুদ্ধ করে।
ত্যাগ ও কুরবানীর এক অনুপম নজরানা : শিবির ত্যাগ ও কুরবানীর এক অনুপম নজরানা পেশ করছে। ত্যাগ ও কুরবানীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব নয়। মহান রাব্বুল আলামীন বলেছেন- তোমরা কি এমনিতেই জান্নাতে চলে যাবে? অথচ তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না! যে কারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছে, আর কারা ধৈর্য ধারণ করেন।’ শিবির নেতা-কর্মীদের উপর যখন জুলুম-নির্যাতন চালানো হয় তখন তারা বলতে শিখেছে- “নির্যাতন সহ্য করা আমার নবীর সুন্নাত”। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ইসলামী ছাত্র শিবিরের উপর যে জুলুম নির্যাতন চালানো হয়েছে তা যদি অন্য কোন সংগঠনের উপর চালানো হতো তবে সেই সংগঠনকে খুঁজে পাওয়া যেত না। জুলুম-নির্যাতন নিষ্পেষণ, হত্যা শিবিরকে আরো অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে।
শাহাদাতের প্রেরণায় উজ্জীবিত জনশক্তিঃ শাহাদাত মুমিন জীবনের সবচেয়ে বড় কামনা। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ছাত্র আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। তারা শাহাদাতের তামান্নায়, উজ্জীবিত উচ্ছসিত প্রাণ। আশফাকুর রহমান বিপুকে সাংবাদিকরা তার হাত হারানোর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমি তো আমার জীবনই আল্লাহর রাস্তায় দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আমার জীবন গ্রহণ করেন নাই এ জন্য আমি পরিতৃপ্ত নই। তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ২৬ হাজার ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে আমার হাতটিকে কবুল করেছেন এজন্য আমি আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জানাই!!
বিষয়: বিবিধ
১৯১৬ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
http://www.somewhereinblog.net/blog/lalArafathctg/30153111
গালি শুরু হয়ে গেছে
ধন্যবাদ ভাই।
জানেন না ওটা যে জামায়াত শিবিরের জন্য কসাইখানা ?
কারন লেখাটিতে একটি অযুক্তিক ভাষা ও ছিলনা,পলিটিক্সের কথা ছিলনা,শুধু ছিল শিবির প্রসঙ্গে।
সামুতে টিকে থাকতে হলে তথা ব্লগার হিসেবে একটা জাতীয় পরিচয় পেতে হলে জামায়াত শিবিরের ফেভারে না লিখলেই ভাল।
ভাইরে , টুডে ব্লগ তো আছেই জামায়াত শিবিরের জয়গান গাইবার জন্য ।
আমরা চাই আমাদের টুডে ব্লগের উদীয়মান ব্লগাররা টুডের সীমানা পেরিয়ে বাইরের দুনিয়াতে (ব্লগে) নাম করুক ।
কে না জানে যে সামুই হল বাংলা ভাষাভাষী ব্লগারদের জন্য সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম এবং বিখ্যাতও।
সব ক্রিকেট প্লেয়ারের যেমন স্বপ্ন থাকে টেস্ট ক্রিকেট খেলবে , একজন দৌড়বিদ বা সাঁতারুর যেমন স্বপ্ন থাকে যে সেও একজন উসাইন বোল্ট বা ফেলপস্ হবে ; সেরকম একজন ব্লগারও চায় যে সে এমন এক প্ল্যাটফর্মে ব্লগিং করবে যা সেরা ।
টুডে ব্লগের বেশ কিছু ব্লগার দেখছি সামুতে ভালই টিকে আছে । এদের মধ্যে বাকপ্রকাশ ভাইয়ের নাম উল্লেখ না করলেই নয় । ভাই ভালই ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছেন যা দেখে সত্যিই ঈর্ষা জাগে । তার পোস্টে টুডে ব্লগের বেশ কিছু সহ ব্লগার কমেন্ট করে উনাকে দারুন সাপোর্ট করে যাচ্ছেন ।
যদি কিছু মনে না করেন,ফেবু আইডিটা দিয়েন।
আমার যে নাই ফেবু আইডি
সেখানে ব্লগিং সম্পর্কে আমার কোন ডিটাইলস আছে নাকি দেখিয়েন,এইটা আমার একটা নরমাল আইডি,আমি কোনদিন ফেবুতে আমার ব্লগের লিংক বা,ব্লগার দাবি করিনি,আমি একজন সাধারণ ফেবু ইউজার,আমি রিয়েল যেই আইডিতে লিখি,সেই আইডিতেও কোন ব্লগিং ডিটাইলস নেই ব্র।
ভাইয়া আমি আপনার কথা সবসময় বলি সিনিওর ভাইদের কাছে। আপনার জন্য দোয়া রইল।
জাযাকাল্লাহ খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন