ধর্ষকরা এভাবেই মামার বাড়ি থেকে আসে আর যায় কিন্তু ধর্ষিতারা আর ফিরে আসেনা।
লিখেছেন লিখেছেন সানজিদ হোসেন ইরাজ ২৪ মার্চ, ২০১৬, ০৭:১৭:০০ সন্ধ্যা
ঠিক এভাবেই বৃদ্ধ মা'টি ধর্ষকারদের পা'য়ে পড়ে কেদেঁ কেদেঁ বলেছিল,,
,
“বাবারা আমার মেয়েটার বয়স কম, তোমরা একজন একজন করে আসো, নাহলে মেয়েটা মারা যাবে।” এটা ছিলো ধর্ষকদের কাছে এক মায়ের আহাজারি। পরের দিন এই কথাটাকেই হেডলাইন করে, ফলাও করে ছেপেছিল দেশের সব কয়টি সংবাদ ভিখারি মিডিয়া। আমরা জনগনও বেশ কৌতুহল ভরে পড়েছি, ধিক্কার দিয়েছি ধর্ষকদের, রাজনীতিবিদগন এ থেকেও ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছি। এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছে, মানববন্ধন হয়েছে। তারপর ঘটনার যবনিকাপাত।
,
ডিসেম্বর মাসে ময়মনসিংহে কোন একটি গ্রামে,ঠিক লোকেশটা বলতে পারতেছিনা,কলেজ ছাত্রী কুয়াশার বুক বেয়ে বোনের বাড়ি থেকে কলেজে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় বকাটেরা নরপিচাশের মত ধর্ষন করার পর পুরা দেহ উলঙ্গ করে রাখে,স্তন কেটে পেলে এবং পরে হত্যা করে।বড় বোনের আর গ্রামবাসীর কান্নায় আল্লাহ্র আর্স কম্পন করেছিল,, প্রতিবাদ,প্রতিরোধ,সমাবেশ,বিক্ষোপ চলছে,দুইদিন পর সব মিটমাট হয়ে গেল।
,
৭,৮ মাস আগে পুরাতন ঢাকায় ছাত্রলীগের ২১ বছরের মামা সাজিদের পাশে ঘুমানোর সময় ধর্ষন হল আদরের ৫ বছরের ভাগনী,,, ছোট্ট মেয়েটার যৌনাঙ্গ দিয়ে অধর রক্তপ্রবাহিত শুরু হয়ে গেল,, গ্রেফতার হল,বিচার হল,৫ মাসের জেল হল,, এতে ৫ মাসে জেলে থেকে থেকে ১টা ১টা মেয়েকে ধর্ষন করতেছে সাজিদ।
,
গত ১৭ মার্চের আরেকটি ঘটনা,বাবা,মা,যৌনকর্ম করার সময় স্কুল থেকে এসে দেখল তরুন মেয়েটি,, মেয়েটি লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে চাইলে তাকে বের হতে দেওয়া হল না বা'বা, বা'বা নামক শব্দের কাছে ধর্ষন হল,,, কিন্তু এখানের বাবাটি সৎ বাবা ছিল। মেয়েটি থানায় অভিযোগ দাখিল করল,গ্রেফতার করা হবে বাবাকে,চার পাচঁ মাস পর ঘরের মামলা বলে মিটমাট করে দেওয়া হবে। বিশ্বাস কি হয়,বাবা মেয়েকে ধর্ষন করেছে?
,
এইতো ১৬ ডিসম্বরের প্রথম প্রহরের চাঁদপুরের কথা কি মনে আছে সবার? ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিলে প্রবাসীর স্ত্রী থেকে চাদাঁ চাই ১৫ লক্ষ টাকা,কিন্তু সেই কিভাবে ১৫ লক্ষ টাকা দিবে,তার স্বামী কি গভর্নর নাকি? তাই টাকা দিতে না পারার অপারগতা জানালে ২০ জন নেতাকর্মী মিলে মহিলাটিকে ধর্ষন করে,পরে হত্যা করে বস্ত্রহীন লাশ জঙ্গলে পেলে দেয়।সবাই মহিলাটির বিকৃত ছবি ফেবুতে শেয়ার করেছিল,আন্দোলন, বিক্ষোপ,সমাবেশ,প্রতিবাদ,প্রতিরোধে জাগ্রত হয়েছিল সোনার জনতারা,,,, কিন্তু কেউ কি শুনেছ ওই ছাত্রলীগের সভাপতি যার নেতৃত্বে তাকে ধর্ষন করা হয়েছিল তার শাস্তি হয়েছে নাকি,, শহীদের স্বরনে সব ভুলে গিয়েছি আমরা।
,
এইতো কয়েকদিন আগের আরেকটি ঘটনা, সবার-ই জানার কথা। যমুনা ফিউচারপার্ক এর সামনে থেকে এক উপজাতি মেয়েকে ধরে নিয়ে গিয়ে, ফ্লাই-ওভারের উপরে, প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে, মাইক্রোবাসে করে ঘুরে ঘুরে ধর্ষণ করে উত্তরা জসীম উদ্দিন এ ফেলে রেখে গেলো একদল দুর্বৃত্ত। সারাদেশ তোলপাড়, প্রত্যেক টি ট্রাইবাল গোষ্ঠী ও আপামর জনতা মানব বন্ধন , আন্দোলন করেছে। মিডিয়াও কাহিনী সবিস্তারে তুলে ধরে ফলাও করে প্রচার করেছে। ঘটনার কয়েকদিন পরধরা পরলো দুই আসামী।কাহিনী বলার কারণ হলো, হাজার হাজার চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ মামলার মধ্যে মাত্র এই ছয়টি ও স্থান পায়। কিন্তু সবশেষে ফলাফল শুন্য।
,
জনগনকে স্তিমিত করতে আসামী ধরা পড়েছে ঠিক-ই। কিন্তু আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিনে বেরিয়েও গেছে।ফলে কি হচ্ছে? ধর্ষক নামক মাংশাসী প্রানীগুলো ধর্ষণে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। কদাচিত বিচার হলেও, একজন ধর্ষিতা নারী যতটা মিডিয়া কাভারেজ পাচ্ছে এবং আমরা জনগন সেই ধর্ষনকে যতটা না মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। একটা ধর্ষণের রায় হোক সে যাবজ্জীবন বা ফাঁসি বা কয়েক বছরের জেল , মিডিয়া কিন্তু সেই রায় টাকে সেই কাভারেজ টা দিচ্ছে না অথবা দিলেও আমরা অতটা মনোযোগ সহকারে তা পড়ছিনা, অপরকে পড়েও শুনাচ্ছিনা।প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রসঙ্গটা নাইবা আনলাম। এত বড় জনগোষ্ঠি সবকিছু সামলাতে প্রশাসনকে একটু হিমশিম খাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেনানিবাস। যার প্রতিটা কদমে কদমে নিরাপত্তা বেষ্টনী। যার ভিতরে গেলে মনে হয় এটা কি বাংলাদেশ নাকি অন্য কোন দেশে এসে পড়লাম। দূষণ নেই , ময়লা আবর্জনা নেই , হৈ চৈ হাঙ্গামা নেই দেশের প্রতিটা সেনানিবাসকেই নিরাপদ জায়গা বলে ভাবি আমরা সাধারণ মানুষ। অথচ গত পরশু কুমিল্লা সেনা নিবাসের ভিতরেই সোহাগী জাহান তনু নামের একটি মেয়েকে ধর্ষণের পর নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে।রোববার সন্ধ্যায় অলিপুর এলাকায় প্রাইভেট পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। পরে বাড়িতে ফিরে না আসায় বাড়ির লোকজন তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে। রাত ১১টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন কালা পানির ট্যাংকির কালভার্টের পাশের একটি জঙ্গলে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। এদিকে একটি লাশ পাওয়া যাওয়ার খবরে স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই লাশটি সোহাগীর বলে শনাক্ত করে। এব্যাপারে নিহতের পিতা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন সোমবার বিকালে কোতয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।এদিকে সেনানিবাসের মতো অত্যন্ত নিরাপত্তাবহুল এলাকাট ভেতরেই সোহাগী জাহানের হত্যাকাণ্ড কিছুতেই মানতে পারছে না তার সহপাঠীরা। বন্ধুদের প্রশ্ন ‘ক্যান্টনমেন্টেও মানুষ খুন হয়।আমাদের ও প্রশ্ন তাহলে আমরা কোথায় নিরাপদ ?
,
“ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সোহাগী তার মাকে বলেছিল, মা টেইলারের কাছ থেকে আমার নতুন জামাটা আজ নিয়ে আইসো, আমি কাল নতুন জামা পরে কলেজ যাবো।’সোহাগীর আর নতুন জামা পড়া হয়নি। বরংচ তার পড়নের জামাটাকেও খুলে নিয়ে খাবলে খেয়েছে নরপিশাচগুলো।
এই সোহাগীর ব্যাপারটাও আগের দুই ঘটনার মতই হবে। আমরা কিছুদিন মাতামাতি করবো তারপর প্রতিকারহীন হয়ে মামলার ফাইল পড়ে রইবে কোন টেবিলে। আর ধর্ষকেরা খুঁজে ফিরবে অন্য কাউকে। উপরের প্রতিটা ঘটনাই একাত্তরের নির্যাতনের চাইতেও ভয়ংকর মনে হয় আমার কাছে।তাহলে কি এর কোন পরিত্রান-ই নেই? আমরা কি এভাবেই দিনকে দিন আমাদের বোনদের বলি হয়ে যেতে দেখবো?
,
বাবা মায়ের, আত্মীয়-স্বজন বন্ধুদের আহাজারি-ই শুনে যাবো?
,
টিভি চ্যানেলে টক শো তে টাই কোর্ট পরা মানুষগুলো যখন মুখে ফেনার উপর ফেনা এনে বলে ধর্ষন সামাজিক ব্যাধী, এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে,এইটা একটা সংক্রাম রোগ,এইটা ভাইরাস,অমুক,সমুক বলে লেকচার দেয়, কিন্তু এই ভাইরাস সংক্রামক রোগটা ত দিন দিন সংক্রামিত হচ্ছে,,আজ ধর্ষনের কাছে হার মেনেছে সরকার,হার মেনেছি আমরা,টিভি চ্যানেলে কোট টাই পরারা এভাবে টাকার মাফিক কথা বলে আর যায় কিন্তু বাস্তবায়ন হয়না ,,
,
আমাদের মেয়েরা প্রতিনিয়ত নিগৃহিত , নিপীড়িত হচ্ছে।কিছু প্রকাশ পায় আর কিছু সামাজিক রোষানলের কড়াল গ্রাসে অজানাই রয়ে যায় আমাদের কাছে।আমরা সমাধান দিতে পারিনা বলেই , অনেক মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আবার অনেকে গুমড়ে কাঁদে দিনের পর দিন, রাত এর পর রাত। এভাবেই চলবে,,,
বিষয়: বিবিধ
১১৮০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন