আটাশে অক্টোবর প্রেরণার পিরামিড -মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

লিখেছেন লিখেছেন আমাদের কথা ৩০ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:০৬:০৩ দুপুর

আটাশে অক্টোবর প্রেরণার পিরামিড -মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

পৃথিবীর আদি থেকে অন্ত সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব অনিবার্য। সত্যের আগমনে মিথ্যার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। হককে চিরতরে মিসমার করার প্রয়াস সেই হাবিলের বিরুদ্ধে কাবিলের দ্বন্দ্ব থেকে, যা চলছে, চলবে অনাদিকাল, কিয়ামত অবধি। সত্য কত দামি! তার নিজের তুলনা কেবল নিজেই। মিথ্যা কতটা কপট সত্যই কেবল তার মুখোশ উন্মোচন করে। পৃথিবীর শুরু থেকে কারবালার বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এক একটি কারবালা মিল্লাতে মুসলিমাহকে পুনরায় উজ্জীবিত করে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার তরে, শিক্ষা দেয় বাতিলের কাছে মাথা না নোয়াবার। প্রিয় মাতৃভূমিও বাতিলের নখর থেকে রেহাই পায়নি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অবয়বে। বাতিলের সাথে এখানে দ্বন্দ্ব সংঘটিত হয়েছে ২৮ অক্টোবর, ৫ মে। হয়তো অপেক্ষা করছে, আরো কোন ২৮ অক্টোবর, ৫ মে অথবা ভিন্ন কোনো ঘটনা। আরো কোন ২৮ অক্টোবর অথবা নতুন কোনো ৫ মে। যে আটাশ ঘৃণার, দ্রোহের। যে আটাশে অক্টোবর সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার। সংঘটিত ২৮ রক্ত মোড়ানো একটি নাম। যে দিনটি আমাদের প্রেরণা জোগায়, আল্লাহর রাহে নিজেদের দ্বিধাহীন চিত্তে বিলিয়ে দেওয়ার। আটাশ শেখায় উন্নত মম শির যে শির নয় নোয়াবার। সকল প্রতিকূলতা মাড়িয়েই দ্বীনের মুজাহিদরা আল্লাহর জমিনে তার দ্বীন কায়েমে বদ্ধপরিকর থাকবে এটাই চিরন্তন সত্য। যারা দুনিয়ার সকল ভয় লোভ লালসা কপটতাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে আল্লাহর গোলামিকেই জীবনের অমূল্য চাওয়া পাওয়া হিসেবে চূড়ান্ত করে নিয়েছে তাদের কিসের শঙ্কা! আল্লাহই তাদের জন্য যথেষ্ট।

প্রতিটি ঘটনার মূলেই ইসলামবিদ্বেষনীতি। ইসলামী অগ্রযাত্রাকে এ দেশে দমিয়ে দেয়া। ইসলামী নেতৃবৃন্দের দেহে কালিমা লেপন। কিন্তু ইসলামী আদর্শবাহীরা তাদের মিশনের ওপর কায়েম থাকতে পারে, তাদের রুখতে পারে সাধ্য কার? আদর্শবাদীদের হত্যা করে আদর্শের প্রচার প্রসার নিঃশেষ করা যায় না, যেমন অতীতে যায়নি। অচিরেই অমানিশার সকল কালো অধ্যায় মাড়িয়ে কালিমার পতাকা পত পত করে উড়বে এ দেশের আকাশে। নারায়ে তাকবিরের শ্লোগানে মুখরিত হবে তরুণ জিন্দাদিল মোজাহিদান। যাদের কাছে জীবনের চেয়ে ঈমান অনেক দামি। আটাশে অক্টোবর ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। আমাদের প্রেরণার পিরামিড, যা অনাদিকাল নতুনদের প্রেরণার খোরাক জোগাবে।

কেন কারবালা?

কারবালার আগেও পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক বিয়োগান্ত নির্দয় হৃদয়বিদারক ঘটনার সূচনা করেছিল আল্লাহদ্রোহীরা। হক ও বাতিলের, সত্য ও মিথ্যার যে দ্বন্দ্ব; কারবালা ছিল তার অন্যতম। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইয়াজিদ সীমালঙ্ঘন ও খোদাদ্রোহিতার পক্ষে নিমজ্জিত হয়েছিল। ইমাম হোসাইন (রা) দেখলেন, ইয়াজিদ আল্লাহর প্রভুত্বের পরিবর্তে নিজের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে। মুসলমানদেরকে তার বাইয়াত গ্রহণ করতে বলছে, ইসলামের বিধানের পরিবর্তে নিজের মনগড়া আইন প্রতিষ্ঠা করছে। তখন তিনি ইযাজিদের এহেন খোদাদ্রোহিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ও তাঁর পরিবার পরিজন নিশ্চিত শহীদি ঈদগাহের যাত্রী সুনিশ্চিত হয়েও শুধুমাত্র অনাগত মুসলিম উম্মাহকে- “আল্লাহর সৈনিকেরা কারো কাছে মাথা অবনত করে না” এই ঐতিহাসিক মেসেজ দিতে কারবালার ফোরাতে উপনীত হয়ে এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন। কারবালা ছিল হক ও বাতিলের চূড়ান্ত লড়াই।

কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা

৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালার মরু প্রান্তরে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা সংঘটিত হয়। সেদিন ইয়াজিদ বাহিনী মহানবী (সা)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা) এবং তার পরিবারের লোকজনসহ ৭২ জন মজলুম মুসলমানকে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই শোকাবহ ও মর্মান্তিক ঘটনা খুব বেশি পরিদৃষ্ট হয়নি!

মুসলিম বিশ্বে কারবালার ঘটনার প্রভাব

কারবালার ঘটনা ইসলামের অনুসারীদের নিকট অধিক গুরুত্ব পেয়েছে যে কারণে, তা হলো মুসলমান মাত্রই জালিমের বিরুদ্ধে, ইসলামী হুকুমাত কায়েমের পক্ষে। কারবালার এ ঘটনা মুসলমানদের জেগে ওঠার প্রেরণা জোগায় বলে এ যুগের নব্য জালিম শাসকেরা বড়ই বিচলিত। তাই কারবালার ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে বিকৃত করার নানা ষড়যন্ত্র হয়েছিল, এখনো থেমে নেই; কিন্তু কারবালার ইতিহাস মলিন হওয়ার নয়। ইসলামের ইতিহাসে অনেক দুঃখজনক হত্যাকান্ড ঘটেছে, কিন্তু কারবালার ঘটনা এতই বিয়োগান্ত যে মানুষের হৃদয়কে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়। ইমাম হোসাইন (রা) ও তার সঙ্গী-সাথীদের শাহাদাত হক ও বাতিলের বিরুদ্ধে প্রচন্ড দ্রোহ এবং এমন এক হৃদয়বিদারক ঘটনা, আগের এবং পরের যুগে যার কোনো নজির নেই। এত দীর্ঘস্থায়ী ও এত ব্যাপক শোক, কান্না ও আহাজারি মুসলিম জাতি আর কোনো শাহাদাতের জন্য করেনি। মুসলমানদের এই শোক, এই কান্না, এই প্রতিবাদ মুসলিম বিশ্বের ওপর চেপে বসা নব্য ইয়াজিদদের হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। কারবালার ঘটনা মুসলিম জাতিকে জালিমের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রেরণা দেয়। কারবালার ইতিহাস সমগ্র বিশ্বমানবতার জন্য শিক্ষণীয় ইতিহাস। অত্যাচারী শাসন শোষণের বিরুদ্ধে ঈমানী শক্তিতে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ে যাওয়ার ইতিহাস। সৎ কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান করা আর অসৎ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখার জ্বলন্ত উদাহরণ সৃষ্টির ইতিহাস।

কেন আটাশে অক্টোবর?

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সরকারে ক্ষুদ্রতম অংশ ছিল। নতুন মাত্রায় বাংলাদেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে চক্রান্তকারীদের টনক নড়ে ওঠে। তাই তাদের অগ্রযাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সামরাজ্যবাদীরা একজোট হয়ে কূটকৌশল পাকাতে শুরু করে। সুযোগের অপেক্ষায় তারা প্রহর গুনছিল। জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন আটাশে অক্টোবর ২০০৬ সালে নিরীহ নিরস্ত্র ইসলামপ্রিয় জনতার ওপর আওয়ামী ছত্রছায়ায় ইতিহাসের নৃশংস হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত হতে ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া শুরু করে। ষড়যন্ত্রকারীরা বিশ্বাস করত এ যাত্রায় যদি ক্ষমতায় আসা না যায় তাহলে ইসলাম ও জাতীয়তাবাদই হবে বাংলাদেশের একমাত্র চালিকাশক্তি। ষড়যন্ত্রকারীদের অপকৌশল বৃথা যাওয়ার ভয়ে তারা বেছে নিলো ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম কালো অধ্যায়। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন! এরপর যুদ্ধাপরাধের ধুয়া তুলে বাংলাদেশ থেকে ইসলামী নেতৃত্ব হত্যা ও জঙ্গিবাদের হাস্যকর ধুয়া তুলে ইসলামী সংগঠন নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র পরিচালনা করে। আটাশে অক্টোবরের ইতিবৃত্ত সবার কাছে আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

আটাশে অক্টোবর সংঘটিত হওয়ার পেছনের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমাদ বলেন, “পরিকল্পিতভাবেই ২৮ অক্টোবর নৃশংস ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে অগণতান্ত্রিক শাসনের পথ সৃষ্টি করা। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করে অগণতান্ত্রিক শক্তির সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসাই ছিল আওয়ামী লীগের লগি- বৈঠার তাণ্ডবের আসল লক্ষ্য। তাই এখন বিনা দ্বিধায়ই বলা যেতে পারে যে, ২৮ অক্টোবরের ঘটনার ফলশ্রুতিতেই ১/১১ সৃষ্টি হয়েছিল। এ ঘটনার ফলেই জে. মইন ও ফখরুদ্দীনের সরকার ক্ষমতায় এসেছিল এবং পরবর্তীতে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাও স্বীকার করেছেন যে, “আমাদেরই আন্দোলনের ফসল ছিল ১/১১-এর জরুরি সরকার।” (ছাত্র সংবাদ-অক্টোবর ২০১১ সংখ্যা সংক্ষেপিত)

আটাশের ঘটনা

২৮ অক্টোবর চারদলীয় ঐক্যজোটের সরকারের মেয়াদকালের পরদিন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ছিল প্রথম দিন। পল্টনে বিএনপি ও বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট ছিল জামায়াতের পূর্বনির্ধারিত এবং অনুমোদিত সভাস্থল। পাল্টা আওয়ামী লীগও পল্টন ময়দানে সভা করার ঘোষণা দেয়। এ যেন রাজনীতির চরম শিষ্টাচারিতার লঙ্ঘন। যার কারণে বিএনপি সংঘাত এড়িয়ে নির্ধারিত স্থানে তাদের সমাবেশ না করে নয়া পল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাদের কর্মসূচি পালন করছিল। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা মুখে বললেও করে অন্য রকম। তাদের নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে ভয়াল নগ্ন চেহারা তারা সেদিন প্রদর্শন করে। তাদের কার্যালয় বাদ দিয়ে জামায়াতের নির্ধারিত সভাস্থল বিনা উসকানিতে দখলের চেষ্টা করে সাহারা, তোফায়েল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মায়া, ডাক্তার ইকবাল ও হাজী সেলিমের লগি-বৈঠা বাহিনীর নেতৃত্বে। তাদের গতিবিধি আচার আচরণ দেশবাসীর কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়েছিল যে এ ধরনের আচরণ ছিল অত্যন্ত পূর্বপরিকল্পিত। চোরাপথে ক্ষমতায় আসার ডিজিটাল নাটকের মঞ্চায়ন। কথিত স্বাধীনতার চেতনার একক দাবিদার আওয়ামী হায়েনাদের তাণ্ডবে সেদিন জান্নাতের পাখি হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন টগবগে অকুতোভয় তরুণ শহীদ মুজাহিদ, শিপন, রফিক, ফয়সাল, মাসুম ও শাহাজাহান আলী। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো যারা সৌভাগ্যবানদের কাতারে নাম লিখালেন শহীদ জসিম-১, সাবের, শহীদ জসিম-২, আরাফাত, আব্বাস, রুহুল আমিন, হাবিব ও বয়োবৃদ্ধ জাবেদ আলী। জীবনের স্বপ্নসাধ তাদেরকে মুহূর্তের জন্যও স্থির লক্ষ্য হতে বিচ্চ্যুত করতে পারেনি। এ যেন শাহাদাতের পেয়ালা পানের এক অপ্রতিরোধ্য প্রতিযোগিতা। আন্দোলনের সাথীরা ইয়ারমুকের যুদ্ধের মতো পানি পান না করে পাশের ভাইকে পানি পান করানো, নিজের সুরক্ষা নয়, আন্দোলনের ভাইয়ের সুরক্ষার জন্য ইস্পাতদেয়াল হয়ে যায়। দুনিয়ার মায়ামমতা যেন তাদের কাছে তুচ্ছ। নিজেরা মজলুম হয়েছিল সেদিন, জালিমের কাতারে শামিল না হয়ে শহীদের কাতারে রিক্তহস্তে নিজেদের শামিল করে কালের অনাগত বিপ্লবীদের প্রেরণার উৎস মিনারস্বরূপ। সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন, সত্য-অসত্য কখনো এক হতে পারে না; যেভাবে আলো-আঁধার এক হতে পারে না। দেশে সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে, রায়ের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের নেতৃত্ব বাছাই করে নেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদীদের নখরে ফ্যাসিবাদীদের জয়ধ্বনিতে বাংলাদেশের রাজধানী থেকে শুরু করে অজপাড়াগাঁয়েও এর আঁচড় লেগেছিল। যে কারণে একটি অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশ তৈরি হলো। যার মাধ্যমে পরবর্তীতে সাজানো নির্বাচন প্রত্যক্ষ করল সমগ্র জাতি। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বললেন, ১/১১ আমাদের আন্দোলনের ফসল।

আওয়ামী লগি-বৈঠার নির্মম আঘাত

খুন করে ঘটনাস্থল থেকে লাশ চুরি করে অপরাজনীতি করার মতো নির্লজ্জ ইতিহাস উপহার দিতেও আওয়ামী লীগ কুণ্ঠিত হয়নি। ২৮ অক্টোবর কালো অধ্যায় রচনাকারীদের স্বপ্নসাধ সাময়িকভাবে বাস্তবায়ন হলেও শহীদের সাথীরা রক্তের বদলা নিতে কফিন ছুঁয়ে আন্দোলনের কাজ পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দীপ্তশপথ গ্রহণ করেন। পাতানো নির্বাচনের মাধমে কুৎসিত ফ্যাসিবাদীদের চেহারা পুনরায় প্রকাশ করল আওয়ামী লীগ। সারাদেশে ইসলামপন্থীদেরকে নানা অভিযোগে দমনের ভয়ঙ্কর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো চলতি অবৈধ সরকার। সত্যপন্থীদের জীবন দিয়ে হলেও আন্দোলনের সুরক্ষার তীব্রতায় দিশেহারা হয়ে আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে একটি স্পর্শকাতর কথিত ‘যুদ্ধাপরাধ’ ইস্যু এনে ঘায়েল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন নীলনকশার সরকার!

২৮ অক্টোবর দেশ ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ

জাতীয় নেতৃবৃন্দের মন্তব্যে বোঝা যায়, আটাশে অক্টোবর ছিল দেশ ও দেশে ইসলামী অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের অংশবিশেষ।

জনাব মরহুম মাওলানা মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, “কোন সভ্য দেশে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে না। এ ধরনের ঘটনার নজির বিশ্বের কোথাও নেই। এই ঘৃণ্য ঘটনা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্য করেছে। বিবেকবান কোন মানুষ তা মেনে নিতে পারে না। এই নৃশংস বর্বরতাকে সবসময় ঘৃণা করা ও প্রতিহত করার মানসিকতা নিয়ে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আর এর একমাত্র পথ হলো ইসলামী চিন্তাচেতনা মানুষের মধ্যে জাগ্রত করা।”

জনাব শফিউল আলম প্রধান বলেন, “আমি এটাকে শুধু কালো অধ্যায় বলব না, বরং আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা হরণের চক্রান্ত শুরু করে, লাখো শহীদের রক্তের কেনা বাংলাদেশের আজাদি হরণের চক্রান্ত। সুতরাং এটা শুধু কালো অধ্যায় নয়, এটা কালো অধ্যায়ের চেয়েও ভয়াবহ।”

জনাব মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ শে অক্টোবর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। শুধু এ দেশে নয়, বরং গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি জঘন্য ও বর্বর ঘটনা। ঐ দিন আওয়ামী লীগ দিনে-দুপুরে লগি-বৈঠা দিয়ে রাস্তায় প্রকাশ্য হত্যাকান্ড চালায়। কারো ইঙ্গিতে ক্ষমতার পালা বদল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি আখেরাতে তারা এর প্রতিদান পাবেন। কারণ আল্লাহই একমাত্র সাক্ষী, কুরআনের আয়াতগুলো বারবারই আমার হৃদয়ে দাগ কাটে, ‘‘ঐ ঈমানদারদের সাথে ওদের দুশমনি ছাড়া অন্য কোনো কারণ ছিল না যে, তারা এমন আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল, যিনি মহাশক্তিমান ও যিনি কারো প্রশংসার ধার ধারেন না।” (সূরা বুরুজ : ৮) সুতরাং তাদের সাথী ভাইদের হারানোর কিছুই নেই। তাদেরকে আরো সতর্ক থাকতে হবে। যেখানে আইন ও সুবিচার নেই সেখানে সতর্কতা ও বিচক্ষণতার বিকল্প নেই। কিন্তু কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহর রাস্তায় যারাই কাজ করে তারা পরিণামের পরোয়া করে না। কারণ, পরিণাম আল্লাহরই হাতে, সাহাবায়ে কেরাম (রা)-এর জীবনী থেকে আমরা এই শিক্ষাই পাই।”

জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “পল্টনে লগি-বৈঠা দিয়ে যে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, সেটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায়, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই এবং দুঃখজনকভাবে লগি-বৈঠা নিয়ে আসতে বলেছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং এই নির্দেশ দিয়ে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সন্ত্রাসের একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। তার মাশুল শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে দিতে হয়েছে এবং আমরা দেখেছি সেই কারণেই কিন্তু পরবর্তীতে দেশে একটি রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল যার ধারাবাহিকতায় একটি অসাংবিধানিক কেয়ারটেকার সরকার দেশের ওপর চেপে বসেছিল।”

জনাব শেখ শওকত হোসেন নিলু বলেন, “এটি নিঃসন্দেহে একটি কালো অধ্যায় এবং কালো দিবস। প্রতিহিংসার রাজনীতি যে কত ভয়ঙ্কর হতে পারে এ ঘটনা থেকে জাতি তা প্রত্যক্ষ করেছে। সেদিনকার ঘটনাটি ছিল মূলত দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নির্বাচনপ্রক্রিয়া বানচাল করার আওয়ামী ষড়যন্ত্র।”

(ছাত্র সংবাদ-অক্টোবর ২০১১ সংখ্যা সংক্ষেপিত)

বিষয়: বিবিধ

১০৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File