কলামিস্ট রামচন্দ্র গূহর শেখ হাসিনার ''দ্রুত পতনের'' পদ্ধতিদ্বয়ের বিশ্লেষণ

লিখেছেন লিখেছেন জাওয়াদ স্পিকিং ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:৩৯:৫৯ রাত



গত ৩ ডিসেম্বর কলকাতার দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকায় ভারতীয় ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে নিবন্ধে উল্লেখ করেন শেখ ‍হাসিনা সাম্রাজ্যের পতন দু ভাবে হতে পারে।

১।'' বিরুদ্ধ মতবাদের দরজা বন্ধ থেকে ইসলামী গ্রুপের উত্থান থেকে''

২। '''অথবা আর্মি নতুন করে ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে''



'' বিরুদ্ধ মতবাদের দরজা বন্ধ থেকে ইসলামী গ্রুপের উত্থান থেকে''- ইসলামি গ্রুপের উত্থানের ভিত্তি ধার্মিক জনগোষ্ঠি বাংলাদেশে নেই। বঙ্গালী ধর্মপ্রাণ হলেও ধার্মিক নয়।ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জরিপ মতে ৯০ ভাগের উপর বাংলাদেশী নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন না।কোন জনগোষ্ঠির রাতারাতি ধার্মিক হওয়া হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা দ্বারাও সম্ভব না।আর, তার উপর বাংলাদেশের প্রধান ইসলামি দল হল জামাতে ইসলামী।তাদের বর্তমান জনসমর্থন মাত্র ৫ ভাগ।আর বর্তমানে তারা বৃহত্তর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন।৭১ সাল নিয়ে তাদের বাচ্চাসুলভ লুকোচুরি অব্যাহত আছে।পাকিস্তান জামাতের আমির সিরাজুল হ্বক প্রকাশ্যে তৎকালীন জামাতের অবস্থান স্বিকার করলেও বাংলাদেশের জামাত ১৮০ ডিগ্রি উল্টিয়ে অস্বিকার করে।জামাতের ''ইসলামি আন্দোলনের উপর বাতিলের আঘাত'' তত্ত্ব দিয়ে শাক দিয়ে আর মাছ ঢাকা যাচ্ছেনা।বাংলাদেশের জনতা যতই আ লীগ বিরোধী বা রাতারাতি ধার্মিক হলেও ৭১ ইস্যুতে জামাতের সাথে সুরাহা না করে এককভাবে জামাতকে যেতে দিবেনা এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট।

এরপর আসে, দেওবন্দী ধারার কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক বহুধা বিভক্ত রাজনৈতিক প্লাটফর্মের আম্ব্রেলা অর্গানাইজেশন হেফাজতে ইসলাম। কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক রাজনীতির সূচনা মরহূম হাফেজ্জী হুজুরের মাধ্যমে নব্বইয়ের দশকে শুরু হয়।তাদের মধ্যে প্রযুক্তি,নব্য কলা-কৌশল বিরোধী লোকও রয়েছেন।তাদের সরকার দর্শন বাংলাদেশের জনতার কাছে পরিষ্কার নয়।তাদের মধ্যে এমনও ব্যাক্তি রয়েছেন যারা আফগাণে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদের পর বাংলাদেশে ফিরে এসে ''আমরা সবাই তালেবান,বাংলা হবে আফগাণ'' স্লোগান দিতেন।

সমতল ভূমির ঘনবসতিপুর্ণ বাংলাদেশে আল কায়েদা,তালেবান,আই এসের মত সশ্বস্ত্র বিদ্রোহ করার মত জিও-স্রাটেজিক অবস্থান নেই,যেমনটা পাক-আফগাণ সিমান্তের দুর্গম বৃস্তিত পাহাড় অঞ্চল বা লোকশূন্য মধ্যপ্রাচ্যের মরভুমিগুলো লড়াইরত পক্ষগুলোর বাফারজোন হিসেবে কাজ করে।পার্বত্য চট্টগ্রাম অমুসলিম অধ্যুষিত।বাংলাদেশের সিংহভাগ সীমানা ভারত বেশিষ্ট হওয়ায় ''র'' এর মদত ছাড়া বি এস এফের কড়া নজরদারী ফাঁকি দিয়ে বর্ডার ক্রস করে পিছু হটে ঘাঁটি গড়ার যায়গা নেই।রোহিঙ্গা মুসলিম নির্মূলে প্রতিশ্রূতিবদ্ধ নব্য-নাজি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চারণভূমি মিয়ানমারে প্রশ্নই উঠেনা।

''অথবা আর্মি নতুন করে ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে''- ৭৫রের আর্মি ছিল পাকিস্তান আর্মির উত্তারিধিকারি।ট্রেনিঙ্গ হয় দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তিতে। পাকিস্তান আর্মি নিজেদের রাষ্ট্র পরিচালনার অঙ্গ মনেকরে এবং প্রয়োজন মনে করলে ক্ষমতা গ্রহনে দ্বিধা করেনা।প্রতিরক্ষার পাশাপাশি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র এবং কাশ্মিরনিতী আজও পাকিস্তান আর্মির অধীন।

অপরদিকে,আজকের বাংলাদেশ আর্মি মিশরের আর্মির মত জায়ান্ট কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। আ লীগ সরকার বাংলাদেশ আর্মিকে ব্যপকভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের সুযোগ করে দিয়েছে।মিশরের আর্মি মিশরের ইতিহাসে নির্বাচিত প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচুত্য করে মিশরের অর্থনিতীতে অধিপত্য হারানোর আশংকায়।বাংলাদেশে ভিন্ন কোন সরকার আসলে আর্মির এই সুযোগ রদ করার সম্ভাবনা প্রবল। তাই শেখ হাসিনাকে উৎখাতের মাধ্যমে আম-ছালা দুটোই হারানোর ঝুঁকি কোন অর্থনৈতিক কর্পোরশন নিবেনা।

বিষয়: বিবিধ

৯৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File