মজুরি বৃদ্ধিঃ শ্রমিক অসন্তোষ

লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১১:০৬:০৮ রাত

নতুন করে মজুরি কাঠামোর ছয়টি গ্রেড সংশোধন করে মোট বেতন ১৫ টাকা থেকে ৭৮৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর গ্রেডে ২০১৮ এর ঘোষিত গেজেটের চেয়ে যথাক্রমে ২৫৫, ১০২, ২০ ও ১৫ টাকা বাড়িয়ে কয়েকটি গ্রেডে বর্তমানের তুলনায় বেসিক কমে যাওয়ার সমস্যাটির সমাধান হলেও বিদ্যমান মজুরির তুলনায় বেসিক ও গ্রস গ্রেড ৭ এর চেয়ে অন্যান্য গ্রেডের মজুরি তুলনামূলক কম বৃদ্ধি পাওয়ার সমস্যাটির সমাধান হয়নি।

২০১৮ সালে গ্রেড ৭ এ সদ্য নিয়োগ পাওয়া একজন শ্রমিকের মজুরি ২০১৩ সালের গেজেট অনুযায়ী ছিল ৫৩০০ টাকা কিন্তু ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণার পর সেই শ্রমিক জানুয়ারি মাস থেকে পাবেন ৮০০০ টাকা। তাহলে সদ্য নিয়োগ পাওয়া গ্রেড ৭ এর শ্রমিকের মজুরি আগের মাসের মজুরির তুলনায় বৃদ্ধি পেল ২৭০০ টাকা। অন্যদিকে অন্যান্য গ্রেডের পুরাতন অভিজ্ঞ শ্রমিকদের মজুরি ২০১৩ সালের গেজেটের তুলনায় ২৭০০ টাকার বেশি বৃদ্ধি পেলেও আগের মাসের মজুরির তুলনায় ২৭০০ টাকা বৃদ্ধি পায়নি। শ্রমিক অসন্তোষের এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সমস্যা শুধু কিছু কিছু গ্রেডে বেসিক কমে যাওয়া নিয়েই ছিল না, গ্রেড ৭ এর তুলনায় বেসিক ও গ্রসের তুলনামূলক কম বৃদ্ধি পাওয়া নিয়েও ছিল।

বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করা যাক। গ্রেড ৪ এর একজন অপারেটরের মজুরি ২০১৩ সালে ছিল ৬৪২০ টাকা। সর্বশেষ ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী তার মজুরি হবে ৯৩৪৭ টাকা যা ২০১৩ সালের মজুরির তুলনায় ২৯২৭ টাকা বেশি। কিন্তু গ্রেড ৪ এর একজন শ্রমিকের মজুরি তো ২০১৩ সালে ঘোষিত মজুরিতে স্থির থাকেনি, বেসিক ও সেই অনুযায়ী ৪০% বাড়ি ভাড়া প্রতি বছর ৫% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা না করলে এমনিতেই ২০১৯ সালে তার মজুরি হতো ৭৮৯০ টাকা(৩৮০০ টাকা বেসিক ৫ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮৫০+ বাড়ি ভাড়া বেসিকের ৪০% অর্থাৎ ১৯৪০+ চিকিৎসা ২৫০ + যাতায়াত ২০০+ খাদ্য ৬৫০ =৭৮৯০)। তাহলে শ্রমিক দেখছে তার প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে ৯৩৪৭-৭৮৯০= ১৪৫৭ টাকা।

প্রশ্ন আসতে পারে, মজুরির বৃদ্ধির বছরে তাহলে আগে এরকম বৈষম্যের অভিযোগ উঠেনি কেন? এর আগে ২০১৩ সালে মজুরি বৃদ্ধির আগে আগে, গ্রেড ৭ এর মজুরি ছিল ৩০০০ টাকা, মজুরি বৃদ্ধির পর হয় ৫৩০০ টাকা। ফলে সদ্য যোগ দেয়া গ্রেড ৭ এর শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পায় ২৩০০ টাকা। কিন্তু তখন সেটা নিয়ে অন্য গ্রেডের শ্রমিকরা বৈষম্যের অভিযোগ তোলেনি কেন? এর কারণ হলো, তখন বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্টের বিধান ছিল না বলে সকল গ্রেডের ক্ষেত্রেই মজুরি বৃদ্ধির আগের মাসের তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির পরের মাসের বৃদ্ধিটা একই রকমের ছিল, অর্থাৎ ২৩০০/২৪০০ টাকার যে বৃদ্ধি হয়েছে, সেটা সদ্য যোগ দেয়া আর পুরাতন সকল গ্রেডের শ্রমিকের ক্ষেত্রেই হয়েছে।

২৫ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে ঘোষিত গেজেটের ৪ নং শর্ত অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধি করা হলে কিন্তু এই সমস্যাটি হতো না। সেখানে বলা ছিল:

“কোন শ্রমিকের বর্তমানে প্রাপ্ত মজুরীর সহিত এই প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত মজুরী যোগ করিয়া নুতনভাবে মজুরী নির্ধারণ করিতে হইবে।”

কিন্তু রহস্যজনকভাবে ২৯ নভেম্বর ২০১৮ তে প্রকাশিত একটি সংশোধনী গেজেটে এই ৪নং শর্তাবলী বিলুপ্ত করা হয়। বুঝতে অসুবিধা হয় না কাদের স্বার্থ রক্ষায় এই ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

এখন সমাধান করার একটাই রাস্তা: গত পাঁচ বছরে শ্রমিকদের বেসিক ও গ্রস মজুরি যেটুকু বেড়েছে, সেটাকে আমলে নিয়ে নতুন মজুরি কাঠামোর বেসিক ও গ্রস মজুরি হিসেব করা।

বিষয়: বিবিধ

৭৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File