নির্বাচন পর্যবেক্ষণ
লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০২:৫৬:৪৬ দুপুর
বিএনপি ভুল যেটা করছে সেটা ২০০৯-২০১৩ পর্যন্ত করছে। ২০০৯-২০১২ পর্যন্ত ভুল ছিল, তারা জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন আন্দোলন করে নাই। আ’লীগ ক্ষমতায় বসার সাথে সাথে শেয়ার বাজার লুট করেছিল, এরশাদ পর্যন্ত মতিঝিল গিয়ে বিনিয়োগকারীদের সান্তনা দিয়েছিল কিন্তু বিএনপি’র কেউ যায়নি। ব্যাংক লুট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, তেলের দাম, গ্যাস বিদ্যুৎ বিল, পরিবহনের ভাড়া কোন কিছুই নিয়ে তারা জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। তাদের একমাত্র আন্দোলন হয়েছিল খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর ১/২ দিন হরতাল এবং তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করার পর দুই দিন হরতাল। তৎকালীন সময়ে বিএনপি’র মহাসচিব ছিলেন খন্দকার দেলোয়ার, অসুস্থ একজন মানুষ, যিনি ঠিকমত কথা বলতে পারতেন না।
যুদ্ধপরাধের বিচারের নামে একটা রাজনৈতিক পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যে মিশন আ’লীগ নিয়েছিল, দূরদর্শী দল হলে বিএনপি তখনই বুঝতে পারতো যে, এরা ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য একাজ করতেছেনা। জামায়াতকে কাবু করতে পারলেই তাদের ধরবে। তারা চুপ থেকে নিজেদের নেতা এবং শরীক দল তথা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং ন্যায় নীতির পক্ষাবলম্বন করা একটা শক্তিশালী গোষ্ঠীকে আ’লীগ নিশ্চিহ্ন করে দিতে সহায়তা করেছে।
২০১৩ এর শেষ দিকে যখন আন্দোলন তুঙ্গে আ’লীগের বিরুদ্ধে। আ’লীগ সকাল বিকাল দুপুর দলীয় কার্যালয়ে গরম রাজনীতি করে যাচ্ছে, তখন বেগম খালেদা জিয়া রাত ৮-৯ টায় অফিসে এসে দলীয় মিটিং এ বসতেন এবং মধ্যরাতে বিবৃতি দিতেন, পত্রিকাগুলি আগেই ছাপা হয়ে যেত, পরদিন মানুষের কাছে বিরোধী দলের ম্যাসেজ পৌছাতনা। নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবীতে অসহযোগ না দিয়ে দুই দিন হরতাল একদিন বিরতি দিতে দিতে যেনতেন ভাবে আ’লীগ একটা নির্বাচন করে ফেলল। নির্বাচনের দিন সারাদেশ সাধারণ মানুষ অচল করে দিয়েছিল। আওয়ামীলীগ বাধ্য হতো এক সপ্তাহের ভিতর পদত্যাগ করতে। কিন্তু কয়েকজন এম্বাসেডর দল বেঁধে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করলেন, অল্প সময়ের ভিতর পুনরায় নির্বাচন দিবে আশ্বাস দিল। তিনি জনগণের পালস, আওয়ামীলীগ চরিত্র না বুঝে কূটনৈতিকদের কথায় ফখরুল সাহেবকে দিয়ে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে নিজেদের কফিনে শেষ পেরেক মেরে দিলেন।
তারপর থেকে বিএনপি’র হাত পা শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে। দামি দামি ডিভাইস এনে কথপকোথন সব রেকর্ড করে, বিএনপি’র প্রতিটি পদক্ষেপ তারা আগ থেকেই জেনে সে হিসাবে শায়েস্তা করতো। মিডিয়া, বিচারাঙ্গন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাদের নখদর্পনে। এমতাবস্থায় বিএনপি এ নির্বাচনে না আসলেও কিছুই করতে পারতোনা, বরং দল হিসাবে বিলুপ্ত হয়ে যেত। বিএনপি জোট ছাড়াই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দিয়ে অনেক দলের অংশগ্রহনে একটি নির্বাচন আওয়ামীলীগ করে দেখাতে পারতো, তারা সেটাই চেয়েছিল। বিএনপি’র অনেকেই তখন অন্য দলের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতো। কারণ রাজনীতি অনেকের কাছে নেশার মত। বিএনপি’র বৈধতা দেওয়া না দেওয়ায় কিছু আসতো যেতনা।
বিএনপি তাদের ভুলের প্রায়শ্চিত করে যাচ্ছে অনেক বছর ধরেই, আরো করতে হবে। এদেশের মানুষের সামনে সুযোগ এসেছে আজ ভুল না করার। এই চলতি সপ্তাহ যদি এদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়, তারা সেটার প্রায়শ্চিত্ত করে যেতে হবে বাকি জীবন।
বিষয়: রাজনীতি
৮৫৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাহলে আজকে এই পরিনতি হতো না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন