কার দায় কাকে দিবেন?

লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১০:১৮:১৯ সকাল

চাইবেন কোটার যৌক্তিক সংস্কার, দেবে কোটাই বাদ দিয়ে, এবং আগের নাতিপুতি কোটাই অব্যহত রাখার ধান্ধা চালাবে। চাইবেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংস্কার, কেন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে, কেন শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠে-- তাদের সমস্যা, তাদের আতঙ্ক, তাদের সঙ্কট এবং তাদের চাওয়া নিয়ে একটা যথাযথ অনুসন্ধান, সমাধান প্রস্তাব এবং সেগুলো বাস্তবায়ন।

বীরপুঙ্গবরা তখন শিক্ষককে গ্রেফতার করে ফাটকে পাঠাবেন।

এই ব্যবস্থায় শিক্ষকের যদি কোন দায় থেকেই থাকে, তা অত্যন্ত গৌণ ও ক্ষুদ্র কর্মচারীর, এবং শিক্ষাবাণিজ্যের তারা একটা কলকবজা মাত্র। প্রয়োজন পরিচালনা পরিষদ নামে যে লোভী ও দুর্বত্ত রাজনৈতিক মাফিয়ারা বিদ্যালয়গুলোকে গ্রাস করছে, সেগুলোর স্বরূপ উদঘাটন, সেখানে বলির পাঠা একজন কাউকে বের করাটাই কর্তাদের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের শিক্ষা একটা আমূল পরিবর্তন দাবি করছে। না হলে এমন প্রকাশ্য কিছু আত্মহত্যা আর অপ্রকাশ্য অজস্র গুটিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েদের আমরা পেতে থাকবো।

আমার কিছু বন্ধু দাবি করছেন, সে নকল করে থাকলে আর টিসি দেয়ার নিয়ম থাকলে বিদ্যালয়ের কোন দায় থাকে না।

তারা গুরুতর, অত্যন্ত ভুল করছেন। টিসি দেয়ার নিয়মটি ঔপনিবেশিক ধারা, অনুগত শিক্ষার্থী তৈরির জন্য এটা করা হতো। বহু বিখ্যাত মানুষ, যাদের মাঝে হয়তো সত্যেন বোসের মত ব্যক্তিত্বও আছেন, এর শিকার হয়েছেন।

কিন্তু বাংলাদেশের আইনের কথা যদি বলেন, সেখানে শিশুদের শাস্তি দেয়া যাবে না। এই আইন যে কোন বিদ্যালয়ের নিয়ম, সেটা যাই থাকুক, তার উপরে কর্তৃত্ব করবে। শিশু ভুল করবে, শিশু অন্যায় করবে, শিশু গাফিলতি করবে। শিশু অপরাগও হবে। তাকে শেখানো, এবং আরও বড় কথা, শেখাবার চেষ্টা করাটাই বিদ্যালয়ের কাজ। শিক্ষকদের কাজ। বাংলাদেশের বাস্তবতা আদর্শ কোন বাস্তবতা না, আমরা জানি। সেই কারণে শিক্ষকদের বহু অ-আদর্শিক আচরণও আমরা বাস্তবতার খাতিরে মেনে নেই। এখানে মাথাপিছু শিক্ষার্থী বেশি, এখানে শিক্ষকদের বেতন-সুবিধা আমলা বা আরও বহু পেশাজীবীর চেয়ে কম। ফলে একটা পেশার প্রতিযোগিতার মাঝে তারা থাকেন, কখনো অসহিষ্ণুও হন। এগুলোর বদল ব্যবস্থার বদল ছাড়া ঘটবে না, সত্যি।

কিন্তু টিসি দেয়ার হুমকি দেয়া আইনবিরুদ্ধ, এবং সকল বিচারে নৈতিকতাও বিরুদ্ধ। বলা উচিত যে, শিক্ষকের ন্যূনতম মানদণ্ডে এটা যায় না।

কিন্তু তার শাস্তি গ্রেফতার বা হয়রানিও হতে পারে না। এটা করাই হয়েছে মূল সমস্যাগুলোকে আড়াল করার জন্য। বাংলাদেশের আইনেই এই শিক্ষককে শাস্তি দেয়া কিংবা আত্মহত্যায় উস্কানি দেয়ার অপরাধ প্রমাণ সম্ভবত অসম্ভব হবে।

বরং, যে ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা নকলের আশ্রয় নিচ্ছে, তা থেকে শুরু করে এখানে ভত্যি বাণিজ্য, শিক্ষাবাণিজ্য সহ সকল বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করা হোক। কারা কিভাবে কোন ক্ষেত্রে জড়িত, সেটা জানা হোক। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতটা কতো, সেটা আমরা জানতে চাই। আমরা জানতে চাই এইখানে আয়ের কী কী অবৈধ উৎস আছে। আমরা চাই ভালো বিদ্যালয়ে গাদা গাদা শিক্ষার্থী ভর্তিি বন্ধ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভালো বিদ্যালয়, সংবেদনশীল একটা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হোক। অজস্র নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠুক।

শিক্ষকের মর্যাদা, বেতন, সুবিধা বৃদ্ধি করা হোক। পাশাপাশি তাকে জবাবদিহিতার মাঝেও আনা হোক। অধিকার আর জবাবদিহিতা উভয়বিধ শর্তের বাস্তবায়ন ছাড়া সমস্যার সমাধান আশা করা যাবে না।

আত্মহনণ করা মেয়েটা আমাদের ঝাঁকুনি দিক। জাগিয়ে দিক।

বিষয়: বিবিধ

৭৯৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386226
০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ সকাল ১১:২৯
হতভাগা লিখেছেন : দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেশটাকে আজীবন পরনির্ভরশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। ণিজেদের কোন ছেলে মেয়েকে কিন্তু তারা দেশে পড়াশুনা করায় না এবং দেশেও রাখে না। সুযোগ বুঝে বিশাল অংকের টাকা পাচার করে দিবে আগেই নির্ধারিত করে রাখা সেকেন্ড হোমে।

দেশটা রসাতলে যায় যাক, তারা তো আরাম আয়েশেই থাকছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File