রাজনীতিতে ক্রিকেটঃ সাকিব মাশরাফির রাজনীতি
লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ২৯ মে, ২০১৮, ০৭:১০:২৮ সন্ধ্যা
আজ মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে নামা ও 'আসন্ন নির্বাচনে' প্রার্থী হবার যে সম্ভাবনার কথা পরিকল্পনামন্ত্রী মোস্তফা কামাল বলেছেন, তা আমার জন্য অন্তত চমৎকৃত হবার মতো বিষয় নয়। মাশরাফিকে দেশপূজ্য বানানোর মরিয়া প্রয়াস, কিংবা তার কিছু কিছু মন্তব্য, বিশেষত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অনেকটা পলিটিকালি মটিভেটেট মন্তব্যের সূত্রে আমি আগেই অনুমান করতে পেরেছি যে, তিনি রাজনীতিতে নামবেন, কিংবা তাকে নামানো হবে। লোটাস কামালের সাম্প্রতিক মন্তব্য সেই ধারণাকে পোক্ত করলো বৈকি। সাকিব মীরপুরের মোল্লাদের ছেলের নিকট স্বীয় বোনের বিয়ে দিয়েছেন। এর দ্বারা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়না যে তিনি ভোট করবেন। তবে তিনি নিশ্চিতভাবেই ক্ষমতার অলিন্দের কাছাকাছি থাকতে ইচ্ছুক।
রাজনীতিতে ক্রিকেটারদের আগমন নতুন বিষয় নয়। এদের রাজনীতিতে আনা একটা প্রজানুরঞ্জক ব্যাপার, এবং এদের দিয়ে ভোটও কাটা যায়।
রাজনীতিতে ক্রিকেটাররা, বিশেষত মাশরাফি ভালো করবেন কিনা, সেই বিষয়ে এগুনোর আগে আমাদের দেশের বর্তমান রাজনীতির চালচিত্র সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে। অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে এক্ষেত্রে বিবেক ও বিবেচনার মাথা খেয়ে ফেলা যায়, তবে এই মুহূর্তে বাংলায় জাজ্বল্যমান বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের রাজনীতির বিদ্যমান সংস্থাপন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। নৈতিক ও ব্যবহারিক উভয় প্রেক্ষিতেই দেশের রাজনীতি ঘুনে ধরা এবং জরাগ্রস্ত। এই সময়ে রাজনীতিতে জড়ানো (তা সে যে দলের হয়েই হোক না কেন) নিজেদের মধ্যে জরাগ্রস্ততা ও ঘুনের আক্রমণ দাওয়াত করে আনারই নামান্তর। সেক্ষেত্রে উল্লেখিত ক্রিকেটাররা যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা বলাই বাহুল্য।
তবে ইমরান খানের মতো মাশরাফি মুর্তজা নিজের রাজনৈতিক দল করতে পারেন। বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে একটু খাটাখাটনি করলে তিনি তখন রাজনীতিতে নিজস্ব ছাপও সৃষ্টি করতে পারবেন। যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, এমন কোন মাথার দিব্যি নেই যে, যিনি খেলার মাঠে ভালো কাপ্তান, তিনি রাষ্ট্রের জন্যও ভালো কাপ্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন। দেশ চালাতে তাকে অবশ্যই দেশ-দুনিয়া সম্পর্কে জানতে হবে। তাকে অর্থনীতির অন্তত সহজপাঠ হলেও বুঝতে হবে, ভূরাজনীতির দাবার চাল বুঝতে হবে, অথবা বিদেশীদের সাথে কৌশলে কথা বলতে ও কাজ করতে জানতে হবে। জানতে হবে কোন অজনপ্রিয়, অথচ দেশের জন্য হিতকর ফয়সালাকে জনগণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা। আর এর জন্য পর্যাপ্ত প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অন্তস্থিত যোগ্যতাও থাকতে হয়।
আর এসব যদি নাও থাকে, তবে তার আশেপাশে এমন লোককে রাখতে হবে, যারা যথাযোগ্যভাবে উপরিউক্ত বিষয়গুলোর উপর আমল করতে পারে। তেমনটা না হলে, আর নিজের আশেপাশে যদি আগের মতো অদক্ষ ও দুর্বৃত্ত প্রকৃতির সাথীরাই থাকে, তাহলে বিশ্বের সর্বকালের সেরা কোন ক্রিকেট ক্যাপ্টেনের পক্ষেও বাংলাদেশে চলমান অবস্থার চেয়ে ভালো কিছু দেয়া তো সম্ভব হবেই না, উল্টা এই ফিল্ডে আনাড়িপনার বাড়তি খেসারতও জাতিকে সঙ্গে নিয়ে দিতে হবে তাকে।
যাহোক, এই কথাগুলো এখন অনেকেরই ভালো লাগবে না। তবে এগুলো সব বাদ দিলেও আমি এটা ভুলছি না যে, সিনিয়র ক্রিকেটাররাই বিসিবিকে বলেছিলেন যে, তাদের কোন কোচই লাগবে না! সিনিয়র ক্রিকেটাররাই নাকি যথেষ্ট! এই একটি বিষয়ই এক হাঁড়ি ভাত পরীক্ষা করতে একটি ভাত টিপে দেখার মতো ব্যাপার!
বলা বাহুল্য, এই কথাও কারো পছন্দ হবে না...!
বিষয়: রাজনীতি
৭১৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন