অনলাইনে আবারো রোহিঙ্গা ইস্যু

লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ২৬ মে, ২০১৮, ১২:১৫:৪৮ দুপুর

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একজন বার্মিজ মন্ত্রী সফরে এসেছিল। ব্যাপারটা ইজরাইলী কোনো মন্ত্রী গাজার ফিলিস্থিনি ক্যাম্প সফর করার মতই ব্যাপার।

নিজের ভূমি থেকে তাদেরকে তাড়িয়ে রিফিউজি বানিয়ে সেই ক্যাম্পে আবার তাদেরকে দেখতে যাওয়া। ব্যাপারটা যেকোনো রিফিউজির জন্যই অত্যন্ত পীড়াদায়ক এবং অপমানজনক।

বিশেষ যে তাদের ভিটেমাটি কেড়ে নিয়েছে, সেই যদি দেখতে আসে।

রোহিঙ্গারাও খুবই স্বাভাবিকভাবে ব্যাপারটাকে নিজেদের জন্য অপমান হিসেবে দেখেছে। তারা প্রটেস্ট করেছে। কীইবা আর করার আছে তাদের! আরো কিছু করার ক্ষমতা থাকলে ভিটেমাটি ছাড়তে হত না।

আমরা অনেকে মনে করি তাদের সবাই ফকির টাইপের ছিল, খেতে পারত না, বাংলাদেশে এসে খুব ভাল করে খাচ্ছে।

আরাকান খুবই উর্বর এলাকা। একটা সময় বাংলাদেশ থেকে মানুষ আরাকান যেত ব্যবসা করার জন্য। আমরা সার দিয়েও যে ফসল ফলাতে পারিনা, আরাকানের জমিতে কোনো কিছু ছাড়াই এরচেয়ে কয়েকগুণ বেশী ফসল ফলে। ওরা বড় জোর গোবর ব্যবহার করে সেখানে।

ওদের রাইস প্রোডাকশন এত বেশী ছিল যে, আকিয়াব হয়ে উঠে পৃথিবীর সেরা চাল রপ্তানিকারক পোর্টের একটি। আকিয়াব হচ্ছে আরাকানের সাবেক রাজধানী।

আমার মাঝেমধ্যে মনেহয় আরাকানটা বাংলাদেশের দখলে থাকলে আমাদের কখনোই আর চাউল আমদানি করতে হত না।

গ্যাসের সমস্যা হত না।

শুধুমাত্র কৃষিজ পণ্য দিয়ে চলে তারা। বিদ্যুৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট সহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখায় আরাকান মায়ানমারের অন্যতম দরিদ্র একটি প্রদেশ।

মায়ানমার নিজেও পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশের একটি।

অবশ্য আরাকান ভৌগোলিক দিক দিয়ে মূল মায়ানমার ভূখণ্ড থেকে আলাদা। মাঝখানে নদী ছাড়াও আরাকানের আছে বিশাল পাহাড়ী সীমান্ত, যারা উচ্চতা দশ হাজার ফুট। যা মূল মায়ানমার থেকে আলাদা করে রেখেছে আরাকানকে।

আরাকানের ভূমি খনিজসম্পদে ভরপুর।

তেল, গ্যাস, স্বর্ণ।

শুধু আরাকানের প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ ২৫ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট।

আর তেলের রিজার্ভ হচ্ছে ১ কোটি ৫০ লাখ টন।

এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত স্বর্ণের ছোট বড় খনি মিলিয়ে এই সংখ্যা ১০০।

রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর প্রধান কারণ এটি।

পৃথিবীর সব রাজনীতির সাথে জড়িয়ে আছে অর্থনীতি।

ইতিমধ্যে আরাকানকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করেছে মায়ানমার। এই প্রকল্পের নাম 'নাফ রিভার গ্যালাক্সি ডেভেলপমেন্ট'।

এই অঞ্চলকে 'নিরাপদ' করতে যেসব মানুষদের ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে, তারাই হচ্ছে রোহিঙ্গা।

আমাদের এখানে আশ্রয় নেয়া সব রোহিঙ্গা যে গরীব এমনটা নয়।

এমন অনেকে এখানে আছে, যাদের ছিল কোটি টাকার ব্যবসা। বাজারে দোকান। চালের বিশাল ফ্যাক্টরি। শত একর জমি। শত শত গরু ছাগল।

যাদের অধীনেই কাজ করতো কয়েকশো মানুষ।

এমন অনেকেই আছেন।

যারা চলে আসার সময় অল্প কাপড় আর কিছু স্বর্ণ ছাড়া কিছুই আনতে পারেনি।

এক রুমের তাবু দিয়ে খাটানো ঘরে তারা যে খুব ভাল আছে সেটা নয়।

গরমে আমি আপনি যখন ঘরের ভেতরেই ফ্যান এসি ছাড়া থাকতে পারিনা, তখন ওরা প্রচণ্ড রোদে পলিথিন দিয়ে বানানো ঘরে থাকে। আশেপাশে কোনো গাছ নেই, বাতাস নেই। কখনো সুযোগ হলে গিয়ে দেখবেন, ঘরের ভেতরেই গায়ের চামড়া স্রেফ পুড়ে যাবে। ঢোকার সাথে সাথেই ছ্যাঁত করে উঠবে।

তাদেরকে রিফিউজী বানিয়ে রাখার জন্য যারা দায়ী,সেই মায়ানমারের একজন মন্ত্রী রোহিঙ্গা ক্যাম্প যখন দেখতে আসে, তারা এর প্রতিবাদ করে।

প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের কিছু সংগঠনও।

ক্ষোভে ফেটে পড়াটা যেমন ওদের জন্য স্বাভাবিক, বার্মিজ মন্ত্রীকে নিরাপত্তা দেয়াটা ছিল বাংলাদেশের দায়িত্ব।

সেই দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত ছিল পুলিশ এবং বিজিবি।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের শান্ত থাকতে বলা হয়।

এবং শান্ত রাখার জন্য লাঠিচার্জ করে পুলিশ।

সেই ভিডিওটি কাটছাঁট করে বানিয়ে অনলাইনে ছাড়া হয়েছে, বার্মিজ সাবটাইটেল সহ।

সে ভিডিওটি অনেকে শেয়ার দিচ্ছেন 'পুলিশের উপর রোহিঙ্গাদের হামলা' বলে।

অথচ এটি রোহিঙ্গাদের সাথে পুলিশের কোনো ঝামেলা নয়। ঝামেলা হচ্ছে বার্মিজ মন্ত্রী তাদের ক্যাম্প সফর করা নিয়ে।

সেখানে অনেকে কমেন্ট করছেন- "এই রোহিঙ্গা গুলোকে হত্যা করার জন্য আমাদের উচিৎ বার্মিজ আর্মীকে সহায়তা করা।"

অবাক হচ্ছেন? জ্বী, এক বাংলাদেশীই এই কমেন্ট করেছে।

এমন কমেন্ট শত শত।

রোহিঙ্গারা যে খারাপ, বর্বর জাতি সেটা তো কথায় কথায় বলা হয়। অথচ সামান্য কয়েকজনের জন্য পুরো একটি জাতি খারাপ হয়ে যায় না।

বিভিন্ন দেশে নানা অপকর্মের কারণে বাঙালী মানেই সন্ত্রাসী, চোর, বাটপার মনে করা হয়।

সামান্য কয়েকজনের কারণে।

অথচ কিছুমাত্র বাঙালীই এরকম। সবাই চোর, বাটপার না।

রোহিঙ্গারা অশিক্ষিত, প্রতিকূল পরিবেশে বড় হয়েছে তারা। চোখের সামনে পরিবারের লাশ পড়তে দেখেছে তারা। আমরা যেখানে গরু ছাগলের জবাই-ই অনেকে দেখতে পারিনা, সেখানে নিজের বাবা, মা, ভাই, বোনের জবাই নিজ চোখে দেখতে হয়েছে তাদের।

সারাজীবন কাটিয়েছে এমন প্রতিকূল পরিবেশে।

কখনো ভালবাসা পায়নি, সভ্যতা দেখেনি।

মানুষ একদিনে সভ্য হয় না। পরিবেশ আস্তে আস্তে গড়ে তোলে।

আমরাও তাদের ঘৃণা দিচ্ছি।

অথচ আমাদের এমন হওয়ার কথা ছিল না।

আমাদের সাথে বার্মিজদের বিশাল ফারাক।

বিষয়: বিবিধ

৭৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File