বাকশাল কি আবার আসছে?
লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ১৮ মে, ২০১৮, ১০:২১:২৭ সকাল
একটি অতীব কৌতুহলোদ্দীপক খবর অনেকেরই চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। আমি একটু আগেই এই বিষয়ে জানতে পারলাম।
ঘটনাটা হচ্ছে, গত ১৩ মে রোজ রোববার জাতীয় যাদুঘরে স্বীয় অনুজ এবং রাজনীতি ও অর্থমন্ত্রীত্বে নিজের ধার্যকৃত উত্তরসূরী আবুল কালাম আবদুল মোমেনের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০২৩ সালের মধ্যে জেলা কেন্দ্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা বলেছেন।
মুহিতের ভাষ্য অনুযায়ী একটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন জেলায় জেলায় নিজস্ব সরকার থাকবে। দুই সরকার সমন্বয় করে কাজ করবে। আর কিছু খোলাসা না করে প্রতিটি মানুষ যেন যার যার জেলায় বসে সব সুবিধা পায় সেজন্য ২০২৩ সন নাগাদ এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
এর মানে, সরকার আসলে ২০২৩ সাল নাগাদ এককেন্দ্রিক প্রজাতন্ত্রকে ভেঙ্গে দেশে প্রদেশ ও অঙ্গরাজ্যের মতো মর্যাদা এবং বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ৬৪ স্বায়ত্তশাসিত জেলা গঠন করে বাংলাদেশকে একটি ফেডারেশন বা সাধারণতন্ত্রে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে!
এটা নিঃসন্দেহে একটি বিরাট বড় মন্তব্য এই সূত্রে যে, এর দ্বারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্রের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণে একে দুইভাবে দেখা যায়। ছেঁদো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখতে গেলে একে ১৯৭৫ সালে প্রবর্তিত স্বল্পস্থায়ী বাকশাল শাসনবিধির সাথে সঙ্গতিপন্ন বলে ঠাহর করা যায়। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি দেশকে একদলীয় রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিয়ে পূর্বতন জেলাগুলোকে ভেঙ্গে ৬০ জেলা সৃষ্টি করা হয়েছিলো। এক পর্যায়ে জেলাগুলো শাসনে সরাসরি সরকার কতৃক গভর্নর নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। বাকশাল শাসন ঠিকমতো চালু হবার আগেই এর পতন ঘটায় জেলা গভর্নরদের ক্ষমতা ও দায়িত্বের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা না মিললেও এতোটুকু শোনা গেছিলো, ১৯৮০ সাল নাগাদ জেলা গভর্নরদের অধীন এক ব্যাটালিয়ন করে বহুল আলোচিত মিলিশিয়া বাহিনী জাতীয় রক্ষীবাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা ছিলো।
২০১৮ সনের ১৩ মে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বর্ণিত নতুন এই জেলা সরকারের প্রকৃতি সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া না গেলেও মোটামুটি এতোটুকু বলা যেতে পারে যে, এই জেলা সরকারগুলোর প্রধান অবশ্যই রাজনীতিবিদরাই হবেন। সেক্ষেত্রে বর্তমান সংস্থাপনে জেলা প্রশাসনে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী আমলাতন্ত্র একে ভালো চোখে দেখবে না। এটা আরেকটা অস্থিরতার জন্ম দেবে।
তবে যেহেতু হালে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে রাজনীতিবিদরা আগের চেয়ে কোনঠাঁসা হয়ে গেছেন, এবং ক্রমেই পেশাদার আমলারা বুনিয়াদী ও বড় বড় রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে নিয়ামক হয়ে গেছেন, সেহেতু অর্থমন্ত্রী মুহিত বর্ণিত জেলা সরকার কি আসলে তেমনই একটি বুনিয়াদী নীতি, যা আমলাদেরই মস্তিষ্কজাত?
অবশ্য এখনই তেমনটা মনে হচ্ছে না। হতে পারে, এটা একটি বিচ্ছিন্ন রূপকল্প। অর্থাৎ এই পরিকল্পনা আপাতত অঙ্কুরেই আছে। এর প্রস্ফুটন এখনো অনেক অগ্রবর্তী ব্যাপার...!
বিষয়: বিবিধ
৮৪২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন