স্যাটেলাইটঃ কোথায় লাফ দিচ্ছেন

লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ১১ মে, ২০১৮, ১০:০৩:৩৯ সকাল

অধীর আগ্রহ নিয়ে বসেছিলাম আওয়ামীলীগ কথিত সেই নতুন যুগের সুচনা দেখব বলে কিন্তু না সবকিছু মাটি করে দিয়ে শেষ মূহুর্তে বলা হলো আজ আর হচ্ছে না।

এই বিষয় নিয়ে উপদেষ্টা মহোদয় জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়ের জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় বুজলাম সুবিধাজনক না হলে কোন কিছু সময়মতো হয় না। আমার তাতক্ষনিক নির্বাচনের কথাই মনে হলো। সবকিছুই সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে হবে।

যাইহোক স্যাটেলাইট প্রসংগে আসি!!!

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন নিয়ে বেশ উত্তেজনা ছড়াচ্ছে সরকার।কিন্তু লাভক্ষতি হিসাবটা কি? কেউ কি খোলামেলা আলোচনা করেছে? লাফ দৌড় দেয়ার আগে জেনে নিই কিছু ফ্যাক্টস-

১) বাংলাদেশের এই 'বঙ্গবন্ধু-১' স্যাটেলাইট প্রকল্পে মোট ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট এক হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি।

২) বাংলাদেশের স্যাটেলাইটটি নির্মান করেছে ফ্রান্সের কোম্পানী থালেস এলিনিয়া। থালেসের সাথে চুক্তি হচ্ছে ২৪৯ মিলিয়ন ডলার। ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ারফোর্স স্টেশন Falcon 9 FT (Block 5) থেকে উক্ষেপন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের যে ধরনের স্যাটেলাইট, তার ডিজাইন খরচ ২৫ মিলিয়ন ডলার, নির্মান খরচ ১০ মিলিয়ন ডলার, আর উৎক্ষেপন খরচ ৩৯ মিলিয়ন ডলার (ছোট স্যাটেলাইটের ক্ষেত্রে)। সব মিলিয়ে ৮০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে সব কাজ শেষ। অথচ এই স্যাটেলাইটের জন্য বাংলাদেশ খরচ করছে ২৪৯ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশ টাকায় ২ হাজার কোটি টাকার মত। এর বাইরে আরও ৯’শ কোটি টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে- তা কেউ জানে না। জানতে পারে শেখ হাসিনা ও তার উপদেষ্টা পুত্র!

৩) বাংলাদেশের এই স্যাটেলাইটের জন্য কোনো নিজস্ব অরবিট বরাদ্দ নাই। এর আগে আইটিইউ বাংলাদেশকে নিরক্ষ রেখার ১০২ ডিগ্রি স্লট বরাদ্দ দেয়। কিন্তু প্রভাবশালী দেশের বাধার মুখে তা বাতিল হয়। বিকল্প হিসেবে ৬৯ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু তাতেও আপত্তি তোলে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন। পরে রাশিয়ান কোম্পানী ইন্টারস্পুটনিকের নিজস্ব ১১৯.১ ডিগ্রির স্লট প্রায় ২৮ মিলিয়ন ডলারে ১৫ বছরের জন্য ভাড়া নেয় বাংলাদেশ।

৪) ১১৯.১ ডিগ্রির অরবিটাল স্লটটি বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে (প্রায় ৩০ ডিগ্রি পূর্বে)। এটা ফিলিপাইনেরও অারও গভীরে। অরবিটাল স্লট বা নিরক্ষ রেখাটি অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু হয়ে ইন্দোনেশিয়া দিয়ে ফিলিপাইনের পশ্চিমাংশ এবং ভিয়েতনামের পূর্ব দিয়ে চীন হয়ে মঙ্গোলিয়া হয়ে রাশিয়ার ওপর দিয়ে চলে গেছে। ফলে অতোদূর থেকে স্বাভাবিকভাবেই স্যাটেলাইট বাংলাদেশের ফুটপ্রিন্ট (ছবি) গ্রহণে সমস্যা হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাই‌‌টির সাধারণ সম্পাদক এফ অার সরকার। তিনি বলেন, প্রায় ৩০ ডিগ্রি দূরে স্যাটেলাইট বসালে বাংলাদেশ থেকে তা অ্যাঙ্গুলার হয়ে যাবে। 'অ্যাঙ্গুলার' অবস্থান থেকে ছবি নিলে তা ভালো না হওয়ারই আশঙ্কা বেশি। বাংলাদেশের নিজস্ব অরবিটাল স্লটে (৮৮-৯১ ডিগ্রি) এরই মধ্যে রাশিয়ার দুটি, জাপান ও মালয়েশিয়ার একটি করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেণ করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট থেকে ভালো সার্ভিস পাওয়া না গেলে বিদেশী স্যাটেলাইট থেকে এই সার্ভিস নিবে এটাই স্বাভাবিক।

৫) এই স্যাটেলাইট নির্মাণ প্রকল্পটি একটি রাষ্ট্রীয় প্রকল্প। রাষ্ট্রীয় অর্থব্যয়ে এটা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে এটি বিটিআরসির অধীনেই এর নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা। কিন্তু, সরকার কৌশলে এই স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিচ্ছে দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকোকে।

৬) একটি স্যাটেলাইটের সাধারন আয়ু ১৫ বছর। কাজেই লাভ লোকসান এই সময়ের মধ্যেই বের করতে হবে। বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অপারেটর ভাড়া বাবদ প্রতিবছর বিদেশি কোম্পানিকে ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে, যুক্তি সরকারের। এই টাকা বাঁচানোর কথা বলে বর্তমান সরকার দেশে নিজস্ব স্যাটেলাইট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। স্যাটেলাইট না থাকলে ১৫ বছরে যেখানে খরচ হবে ২১০ মিলিয়ন ডলার, সেখানে এই স্যাটেলাইটের পিছনে খরচ হবে ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার+ প্রতিবছর রক্ষণাবেক্ষণ ও স্যাটেলাইট এবং অরবিট ইনশিওরেন্স খরচ। তাহলে এই প্রকল্প করার অর্থ কি?

৭) সরকারের দাবি, এ কৃত্রিম উপগ্রহে রয়েছে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি ২০টি বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হবে। মাত্র সাত বছরেই বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের খরচ ৩ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই উঠে আসবে বলে হিসেব করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, স্যাটেলাইট থেকে আয়ের ৭০ শতাংশ আসবে বিদেশ থেকে। বাকি মাত্র ৩০ শতাংশ আয় আসবে স্থানীয় পর্যায় থেকে। ১১৯.১ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট বসলে তার ফুটপ্রিন্ট ভালোভাবে পাওয়া যাবে বার্মা, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান, জাপান, কোরিয়া, চীন ও মঙ্গোলিয়া থেকে। অথচ এসব দেশগুলোর বেশির ভাগেরই নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুরের মত দেশের রয়েছে স্যাটেলাইটের কারখানা। এই দেশগুলো নিজেরাই বাণিজ্যিকভাবে স্যাটেলাইট ভাড়া দেয় দীর্ঘদিন ধরে। তাহলে এইসব দেশগুলো থেকে যে ব্যবসার গল্প করা হচ্ছে, তা কোনো দিনই আসবে না। মোটকথা, এই স্যাটেলাইট প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য তো লাভজনক হবেই না, উল্টো গলার কাটাও হতে পারে।



বিষয়: বিবিধ

৮৯২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385333
১১ মে ২০১৮ রাত ০৮:১৭
চেতনাবিলাস লিখেছেন : চমৎকার তথ্যবহুল লেখা। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
385338
১২ মে ২০১৮ সন্ধ্যা ০৭:১৭
শেখের পোলা লিখেছেন : ওসব হিসাব বাদ। জাতীর আব্বাকে আকাশে ওড়ানোই আসল উদ্দেশ্য। ব্যস, তা হয়েছে।৫০০ গরু জবাই দিয়েও লোকে জিয়াফত দেয়, তেমন আর কি!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File