ধর্মীয় নসিহত বনাম বাস্তবতা
লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ০৮ মে, ২০১৮, ০২:০১:৪১ দুপুর
আমাদের একটা ভয়ংকর রোগ আছে। আমরা কেবলমাত্র একাডেমিক ইসলাম নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করতে ভালবাসি। ইসলামের প্রাক্টিক্যাল সলিউশন নিয়ে মোটেও উদ্যোগী নই।
'Islam is the complete code of life'- বলে একাডেমিক বয়ান দেয়া যতটা সহজ, জীবন ঘনিষ্ট সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ নেয়া ততটাই কঠিন।
একজন রিক্সাওয়ালা ভাইয়ের কাছে জীবন মানেই দিনমান প্যাডেল চাপা। এই শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাছে কোনো বয়ান দেয়ার আগে তার রাতে খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
কেন সে আপনার আদর্শকে আলিঙ্গন করবে? আপনি যখন তার সামনে মেজাজের ভারসাম্যহীনতার ব্যাপারে নসিহত করছেন, তখন তার ছোট বাচ্চারা খাবারের অপেক্ষা করছে। চাল নিয়ে বাসায় ফিরলে ভাত রান্না হবে। এমতাবস্থায় জীবন সমস্যার সমাধান না দিয়ে আপনার নৈতিক নসিহতের কানাকড়ি মূল্য তার কাছে নাই। এন্ড দ্যাটস দ্যা ফাক্ট।
আপনি যখন সুদের কুফল নিয়ে আলোচনা করছেন, তখন তিনি ইতোমধ্যেই ৫ টি এনজিও থেকে লোন নিয়ে ফেলেছেন। সুদমুক্ত সমাজের কথা বলার আগে ভেবে দেখুন তো, এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো যেন সুদ ছাড়াই কর্জে হাসানা পায়, সে ব্যাপারে আপনি-আমি কী কী উদ্যোগ নিয়েছি?
ইসলামি ব্যবস্থায় ছেলেমেয়ের এক সাথে শিক্ষাগ্রহণের কোনো সুযোগ নাই। সহশিক্ষা নিঃসন্দেহে তারুণ্যকে বিপথগামী করে, করছে, করবে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় কি আমরা মহিলা কলেজ, বয়েজ কলেজ আলাদা করতে পেরেছি? প্রতিটি এলাকায় গার্লস স্কুল, বয়েজ স্কুল করতে পেরেছি? কতটি বিশেষায়িত মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছি।
জাহেলি সংস্কৃতি সন্দেহাতীতভাবে পরিত্যাজ্য। তো ইসলামি সংস্কৃতিতে আমরা কী কী করেছি?
কয়টি সিনেমা বানিয়েছি?
কয়টি নাটক বানিয়েছি?
কয়েক শত গান ছাড়া সাংস্কৃতিক জগতে আমরা আসলে কী করেছি?
২ কোটি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানে আমাদের ভূমিকা কী?
২ কোটি গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য আমাদের কন্ট্রিবিউশন আসলে কী?
লাখো পতিতাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে আমাদের ভূমিকা কী?
লাখো লাখো বস্তিবাসীর জন্য আমাদের ইনিশিয়েটিভ কী?
আমার উপর নিশ্চয় রেগে যাচ্ছেন। এত প্রশ্ন করে কী লাভ তাই না?
আপনি গণমানুষের সমর্থন চান।
তো মোটাদাগে আমি একটা প্রশ্ন করি।
ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন তো, এই ৪৬ বছরে গণমানুষের জন্য কী কী করেছেন?
কেন আপনাকে গণমানুষ সমর্থন দিবে?
উত্তর একটা রেডি আছে। আমরা সৎ, দূর্নীতিমুক্ত।
ধুয়ে গ্লাসে করে সরবত বানিয়ে খেয়ে নিন আপনার সততা আর দুর্নীতিহীনতা।
সার্ভিস দিতে না পারলে গণমানুষের কাছে এই সততা আর নৈতিকার এক পয়সাও মূল্য নাই।
হ্যাঁ, সততা আর নৈতিকতার মূল্য তখনই আছে, যখন আপনি মানুষকে সার্ভিস দিতে পারেন। সার্ভিস না দিয়ে ভাল ভাল নসিহত করেই কেবল আদর্শকে এক্সপান্ড করা যায় না।
ইস্যুটা যখন পেটের, তখন পেট ভরার ব্যাপারে আপনার সলিউশন নিয়ে হাজির হোন।
ইস্যু যখন বিনোদনের, তখন বিনোদনের বৈধ সলিউশন নিয়ে হাজির হোন।
ইস্যু যখন সুদ-ঘুসের, তখন সুদমুক্তির উপায় নিয়ে হাজির হোন।
এখন খুব বেশি প্রয়োজন, ইসলামের প্র্যাকটিক্যাল সলিউশন দিয়ে দাওয়াহর কাজকে এগিয়ে নেয়া।
‘খারাপ সময়’, ‘বৈরী পরিবেশ’ এই টার্মগুলো বলে কোনো লাভ নাই। কিংবা কেবলমাত্র সরকারে আসলেই (ক্ষমতাসীন হলেই) এসব করবেন, এটা বলেও ফায়দা নাই।
‘খারাপ সময়’, ‘বৈরী পরিবেশ’ কিংবা ও ক্ষমতাহীন হয়েই এসব বিষয়ে পারদর্শিতার সিনড্রোম জাতিকে দেখিয়েই সমর্থন আদায় করতে হবে।
পাশ্চাত্যের স্বাবলম্বী মানুষদের কাছে হয়তো একাডেমিক ইসলামই যথেষ্ট; কারণ, তাদের বেঁচে থাকার লড়াইটা আমাদের মতো এতটা কঠিন নয়। কিন্তু এই উপমহাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে দা‘ঈ ইলাল্লাহরা উপেক্ষা করলে আখেরে দীর্ঘ মেয়াদে চরম মূল্য দিতে হবে।
এই ভূখণ্ডের মানুষ সার্ভিস ওরিয়েন্টেড নেতৃত্বকে রেসপেক্ট করেছে। ব্যাংকিং সেক্টর এবং হেলথ সেক্টরে ইসলামিস্টদের দারুণ সার্ভিসকে কেউ অস্বীকার করতে পেরেছে?
বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে হালুয়া পার্টির হালুয়া উৎসব প্রমাণ করেছে ইসলামিস্টরা দক্ষ, ক্যাপাবল এবং বেটার ম্যানেজার।
চাই জাগরণ, চাই সার্ভিস! একটা শক্ত ঝাঁকুনি যে খুব বেশি দরকার।
বিষয়: বিবিধ
৮৭৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাস্তব মুখী লেখাটির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন