ইতিহাসে টিপু সুলতানঃ এক অজেয় বীরত্বের গল্প

লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ০৫ মে, ২০১৮, ০৯:৫৪:০১ সকাল

আমি দোয়া করি, আল্লাহ যেন আমার মধ্যে টিপু সুলতানের কিছু চারিত্রিক যোগ্যতার অনুরূপ যোগ্যতা দেন। যদি আমাকে তা না দেন, তবে যেন আমার বংশধরদের এসব গুণ দেন। তাও না হলে, আল্লাহ যেন এদেশের কোন মহৎ পিতামাতার আওলাদে এই গুণ দেন।

টিপু সুলতান ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বীরত্বব্যঞ্জক প্রতিরোধ যুদ্ধে লড়ে বীরের মতো শহীদ হয়েছিলেন, এটাই তাঁর একমাত্র যোগ্যতা নয়। আমার মতে, তাঁর শাহাদাতের হৃদয়গ্রাহী ইতিহাসের তলায় চাপা পড়ে আছে, শাসক ও কৌশুলি হিসেবে তাঁর বিশেষ যোগ্যতা। তিনি এমন একজন কূটনীতিক ছিলেন, যিনি চিরশত্রু হায়দ্রাবাদের নিজাম মীর আকবর আলী খানের সাথে সমঝোতায় উপনীত হতেই কেবল চেষ্টা করেননি, তৎকালীন উপমহাদেশের আর কোন শাসক যা ভাবেনি, অর্থাৎ পরাক্রমশালী ব্রিটিশ রাজশক্তির সাথে এঁটে থাকতে প্রধান দুই ইউরেশীয় শক্তি, তথা ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন, এবং অটোমান সুলতান তৃতীয় সেলিমের সাথেও কৌশলগত মিত্রতা চুক্তিতে উপনীত হবার চেষ্টা করেছিলেন। দাক্ষিণাত্য থেকে নজর ঘুরিয়ে ব্রিটিশদের উত্তরপশ্চিম ভারতে ব্যস্ত রাখতে তিনি আফগান বাদশাহ জামান শাহ দুররানীর নিকট দূত পাঠিয়েছিলেন।

মহীশুরে শাসন করার বেশিরভাগ সময়ই টিপু সুলতান যুদ্ধবিগ্রহে ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হলেও তাঁর আমলে মহীশুরের অর্থনীতি ছিলো তেজি, এবং শ্রমিকের জন্য নির্দিষ্ট মজুরীও তিনি নির্ধারিত করেছিলেন। তিনি কৃষকের জন্য প্রবর্তন করেছিলেন নতুন পঞ্জিকা। তাঁর সময়ে মহীশুর বস্ত্র শিল্পে খ্যাতি লাভ করে। গড়ে ওঠে বিখ্যাত মহীশুর সিল্ক শিল্প।

কেবল তাই নয়, তিনি ছিলেন সামরিক প্রতিভার এক জ্বলন্ত নিদর্শন। তিনি 'ফতেহ উল মুলক' নামে একটি সমর দর্শন গ্রন্থের গ্রন্থনা করেন। এটা অনেকেই জানেনা যে, টিপু সুলতানই প্রথম রকেট আর্টিলারির উদ্ভাবন করেন। আজকের সেলফ প্রোপেল্ড আর্টিলারি সিস্টেম টিপুর উদ্ভাবনের বিবর্তিত ফসল। তাঁর কেল্লাসমূহের নির্মাণ, সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় আনা নতুনত্ব, এবং কৌশলগত অবস্থান চিন্হিত করতে পারার বিরল যোগ্যতা উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন ছিলো।

অর্থাৎ, আল্লাহ টিপু সুলতানকে অমিততেজ, সাহস, হয়বত, নির্ভীকতা আর পরম পরাক্রমশালী শত্রুদের বিরুদ্ধে টিকে থাকার মতো নৈতিক শক্তিই দেননি; তাঁকে একজন আদর্শ শাসকের প্রায় সব যোগ্যতাই দিয়েছিলেন। একজন শাসক হিসেবে তিনি স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, ভূগোল আর কূটনীতিকে কাজে লাগিয়ে শত্রু বধের তরকীব থেকে শুরু করে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরী ধার্য করার মতো যেসব বিষয় তিনি সামনে এনেছেন, বাকি বিশ্ব তার বেশিরভাগই ১৯৪৫ সালের আগে জানতো না।

আফসোসের বিষয়, সেই সময় হিন্দুস্তানে টিপু তাঁর সাথে যদি অনুরূপ যোগ্যতা ও বৈশিষ্টের আরেকজন শাসককেও পেতেন, তাহলে ইতিহাসের মোড় ভিন্ন হতে পারতো। তিনি যেসব বিদেশী শক্তির কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, তারা টিপু সুলতানের চেয়ে বুদ্ধিতে পশ্চাদপদ ছিলেন বলেই তাঁকে সাহায্য করার কোন উপায় পায়নি, অথবা গুরুত্বও দেয়নি।

১৭৯৯ সালের ৪ মে শ্রীরঙ্গপত্তমের কেল্লায় মহীশুরের সুলতান ফতেহ আলী ওরফে টিপু সুলতান চার্লস কর্নওয়ালিসের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে শহীদ হন। আল্লাহ যেন তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান দেন, এবং আমাদের মধ্যে আরো টিপু সুলতানের জন্ম দেন...

ইমরান চৌধুরী

বিষয়: বিবিধ

৬০০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385264
০৫ মে ২০১৮ দুপুর ১২:২৪
আমি আল বদর বলছি লিখেছেন : টিপু সুলতানের বিস্তারিত ঘটনা লিখলে ভাল হতো ভাই
385267
০৫ মে ২০১৮ রাত ১০:১৭
ওয়েলকামজুয়েল লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ কোন একদিন বিস্তারিত লিখবো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File