শবেবরাত
লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ০২ মে, ২০১৮, ১২:৫৮:৩৭ দুপুর
শবে বরাত প্রসঙ্গে আমাদের সমাজ মোটাদাগে ৩ শ্রেণিতে বিভক্ত।
১. যারা শবে বরাতকেই বিদআত বলে অস্বীকার করছেন।
২. যারা শবে বরাতকে মেনে নিয়ে ফজিলতের কথা বলে এমন স্তরে তা উন্নীত করছে যা বিদআতে পরিণত করছে
৩. আরেকদল এমন এক অবস্থানে আছেন যে, তারা এর অস্তীত্ব মেনে নিচ্ছেন গভীরভাবে, পালন করছেন গাম্ভীর্যের সাথে সীমারেখা বজায় রেখে।আসলে শবে বরাত প্রসঙ্গে সহীহ, হাসান ও জয়িফ এই তিন প্রকারেরই হাদিস আছে। তন্মধ্যে হযরত মু’আয ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“অর্ধ (পনেরো) শা’বানের রাতে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসাত্মক মনোভাবাপন্ন ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন”।
এই হাদীসটি সহীহ, এছাড়াও হাসান স্তরের আরও একাধিক হাদীসের উপর ভিত্তি করে শবে বরাত তাই প্রমাণিত এবং উম্মতের তা অস্বীকার করার মধ্যে কল্যাণ নেই।
এর বাইরে এই রাত কিভাবে পালন করবে উম্মত? আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত হাদীস থেকে বুঝা যায় এ রাত উদযাপিত হবে দীর্ঘ সিজদাহ আর নফল নামাজের একান্ত পদ্ধতিতে। যেমন রাসুল করেছেন। দীর্ঘ সেজদাহর উদ্দেশ্য অধিক দোয়া করা। ইসলামে যা ইবাদাত তা ইবাদাত- আর এর পদ্ধতিতে সংযোজন কিম্বা বিয়োজন করা যায় না। সুতরাং শবে বরাতের যে ইবাদাত তার বাইরে এতে সংযোজনের কোনও সুযোগ নাই। এখন এই দিন হালুয়া রুটি বানানো বা বিলানোর যে ব্যাপার আছে সে সম্পর্কে চিন্তা করে দেখুন এটাকে এই দিনের সাথে নির্দ্দিষ্ট করে নেওয়া মানে কি এই দিনের ইবাদাতের সাথে এর সংযোগ ঘটিয়ে দেওয়া নয়?
ইসলাম দান করতে, উপহার দিতে উৎসাহিত করে। কিন্তু সেটা নিশ্চয় নির্দ্দিষ্ট খাবারের ব্যাপারে নির্দ্দিষ্ট দিন সংযোগ করে দেবার মাধ্যমে নয়। এমনিতে এ দিন সরকারি ছুটি, বা অন্য কারণে পরিবারের সবাই একসাথে হয়েছে তাই ভালো খাবার রান্না করা-
কিম্বা হালুয়া রুটি পছন্দ করলে তা খাওয়াও দোষের নয়। দোষের তখন যখন এটাকে প্রথা করে নেওয়া হবে, আর এই দিনের সাথে সম্পৃক্ত করা হবে। পটকা আর আতশবাজি তো বহু দূর!
ইসলাম যে বিষয়কে যতটা স্থান দিয়েছে, যতটা গুরুত্ব দিয়েছে, ঠিক ততটা গুরুত্বই যেন আমরা মুসলিম হিসেবে দিই। এটার মধ্যেই কল্যাণ। এতে রাসুলের সুন্নাত রক্ষিত হয়, আর বাড়াবাড়ির ফলে গুনাহ হবার সম্ভাবনা থেকে দূরে থাকা যায়। যা উৎসব নয় তাকে উৎসবে রূপ দেবার মাধ্যমে প্রধান যে ক্ষতি তা হল, এতে ইবাদাতের সামগ্রিক পরিবেশ ধ্বসে যায়। অধিক খাবার তৈরিতে ক্লান্ত নারীরা রাতের ইবাদাতের জন্য প্রস্তুত যেমন হতে পারেন না, তেমনি অধিক আহারের ফলে সকলেরই ক্লান্তি ভর করে। তাছাড়া, উৎসবের আমেজ নানা কারণেই একাগ্রচিত্তে আল্লাহ্র স্মরণ থেকে অনেকাংশে বিচ্যুতও করে। উৎসব হিসেবে ইসলাম যে দিন নির্ধারণ করে নি, ইসলামের নামে সেইদিন উৎসব হিসেবে উদযাপন নিঃসন্দেহে মন্দ কাজ। তবে যাই হোক, যারা শবে বরাত অস্বীকার করেন আর যারা একে পুরোপুরি বিদআত বলেন এই উভয় দল যে স্তরে বাড়াবাড়ি করে, কখনো কখনো নানাবিধ বিষয় নিয়ে অন্যেরাও একে অপরকে যেভাবে অশোভন আক্রমণ করছেন এটাও ক্ষতিকর। আমরা যখন কথা বলব, আমাদের উচিত তখন গোঁড়ামি রেখে যথার্থ বিষয় গ্রহণের চেষ্টা করা। এটাই একজন মুমিন অপর মুমিন থেকে আশা করবে। রাসুল এইজন্যেই একজন মুমিনকে অপর মুমিনের জন্য আয়নাস্বরূপ বলেছেন। কিন্তু আয়নাতে প্রত্যাশার বাইরে প্রতিবিম্ব দেখলে। আমরা সেই আয়নাকে যেভাবে ভাঙতে উদ্যত হই সেই পথ কিন্তু মুমিনের নয়। মুমিনের পদ্ধতি হচ্ছে, সংশোধন হবে এবং সংশোধন করবে উভয়ই বিনয়ী পদ্ধতিতে। আল্লাহ্ নিজে বলছেন, যাঁদের তিনি ভালোবাসবেন, আর যারা তাঁকে ভালোবাসবে তাদের স্বভাব হবে এমন যে, তারা হবে ‘মুমিনদের ব্যাপারে কোমল’।
বিষয়: বিবিধ
৫২৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন