ছাত্র আন্দোলনের কৌশলগত ভুলঃ আন্দোলন কেমন হওয়া চাই

লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ২১ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:০২:৩৩ রাত

শেখ মুজিব এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি হাতে নিয়ে, মুজিবের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই " এমন Political slogan -এ আন্দোলনের শুরুটা wrong ছিলো।আপনারা বলবেন "এই লোক বেশি বুঝে। "

যারা পছন্দ করেন তারা বলবেনন "ভাই আপনি ভেতরের খবর জানেন না। "আপনারা যুক্তি দেখালেন - তাদের ছবি সংবলিত পোস্টার এবং স্লোগানের ফলে মাঠে টিকে ছিলেন। নাহলে টিকতে পারতেন না! অর্থাৎ আপনারা মেনেই নিয়েছেন এই দেশে গণতন্ত্র চলে না। চলে স্বৈরশাসন। এজন্যই নায্য দাবী আদায়ে মাঠে টিকে থাকার প্রশ্ন উঠে। (পয়েন্ট টু বি নোটেড) এই স্বৈরাচারী আচরণ মেনে নেয়াটাই প্রাথমিক ব্যর্থতা। নায্যতার জন্য মাঠে নামলে কেন কৌশলী হতে হবে -যেখানে আপনি undoubtedly right? আমি কেন লিখেছি যে, political approach wrong ছিলো? কারণ আমার কতিপয় বন্ধু, যারা আপনাদের ভার্সিটির ছাত্র এবং ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের -তারা মাঠে নামেন নাই শুধুমাত্র শেখ হাসিনার ছবি দেখে। হয়তো তাদের মতো অনেকেই নামেন নাই। কারণ - ঘৃণা! বাঙ্গালী যাকে ঘৃণা করে, তার ভালো কাজকেও পছন্দ করে না। কৌশল হিসেবে সম্মান দেখানো তো দূর কি বাত। ইতিহাস যারা জানেন, তারা এই বাংলাকে মুজিবের বাংলা বলতে অপারগ। এই স্লোগানে বিরক্ত হয়েও কেউ কেউ নামেন নাই। শেখ মুজিবকে পীর আউলিয়া পর্যায়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা দেখেই এই বিরক্তি। ফলে আন্দোলন সার্বজনীন হয়ে উঠেনি। তাই আপনারা শক্তিতে কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন। গ্রিল খুলে খুলে আপনাদের সামনে আপনাদের বোনদের চুলের মুঠি ধরে চড় -লাত্থি খাওয়া সেই শক্তিহীনতার প্রমাণ বিপরীত মতাদর্শের সবাই নামে নাই এমন নয়। তবে অনেকেই নামেন নাই। এই সার্বজনীনহীনতার কারণে কৌশলটাকে ভুল বলেছিলাম।

এবার আসি টিকে থাকার প্রসঙ্গে -

আপনারা শেখ মুজিব বা হাসিনার ছবি নিয়ে মাঠে নামাতে টিকে ছিলেন, এই যুক্তি সত্য হলে- সংসদে আপনাদেরকে রাজাকার বলে গালি দিতো না। - পুলিশী নির্যাতন নামতো না। ছাত্রলীগ লেলিয়ে দিতো না।Cহলে গিয়ে হামলা করতো না।জিজ্ঞাসাবাদের নামে জোর করে তুলে নিতো না।

বাড়িতে গিয়ে আপনাদের পরিবারকে ধমাকতো না।

মাঝরাতে হল থেকে বের করে দিতো না। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে - তাহলে সরকার instantly action নেয় নাই কেন?

কারণ - প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে ছাত্র আন্দোলন একটা sensitive বিষয়। এদের সঙ্গে অন্যায় করে কেউই সামাল দিতে পারে নাই। এজন্যই স্টুডেন্টরা মাঠে নামলে সব সরকারই "handle with care "নীতি গ্রহণ করে। সেই policy 'র কারণেই delay হয়েছে এবং আপনারা মাঠে টিকে ছিলেন। শেখ মুজিব বা হাসিনার ছবির কারণে নয়। কারণ তারা আপনাদের কৌশল সম্পর্কে অবগত ছিলো। অথচ আপনারা ভাবছেন তাদেরকে চুনা লাগায়া টিকে ছিলেন !! আপনারা এখন আরেকটা ভুল করতেছেন।আন্দোলনকে অরাজনৈতিক হিশাবে দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন!!

কেন?

কারণ - ভয়। কীসের ভয়?

গ্রেফতার, নির্যাতন, গুম ও হত্যার ভয়। এখনো কি সেই ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে না?

So?

That means - আপনি কোনো দল করেন বা না করেন - It doesn't make difference.

ফ্যাসিবাদী সরকারের against যায় এমন কিছু করলেই নির্যাতিত হবেন for sure। এমনকি আপনি ফ্যাসিবাদীদের সঙ্গী হলেও।

কারণ -ফ্যাসিস্ট সবসময়ই ক্ষমতা আতংকে থাকে।

ফলে বাপকেও বিশ্বাস করে না। দলের লোক তো পরের ব্যাপার। আর আপনারা তো তাদের দলেরই না। সুতরাং নিজেদেরকে অরাজনৈতিক হিশাবে প্রমাণ করতে গিয়ে মূল আন্দোলন থেকেই ছিটকে পড়ছেন। যা দাবী আদায়কে অসম্ভব করে তুলবে।

আপনাদের দাবী হওয়া উচিৎ এমন যে - হয় কোটা ছাড়ো -না হয় ক্ষমতা ছাড়ো। তখন ক্ষমতার ভয়েই বাপ বাপ বলে কোটা ছেড়ে দিবে! কিন্তু আপনারা এমন দাবী উঠাবেন না। কেন?

কারণ -এইটা পুরোপুরি রাজনৈতিক আন্দোলন হয়ে যাবে -তাই! কেন আপনারা রাজনীতির বাইরে থাকতে চান?

অথচ -in a political country, all of us are political entity.

কেউই, কিছুই রাজনীতির বাইরে নেই। অধিকন্তু- কোটা সিস্টেমটা এসেছে রাজনীতি থেকে। এইটা অরাজনৈতিক কোনো বিষয় নয়! এইটার প্রণেতা, উদ্দেশ্য এবং প্রয়োগ পদ্ধতি সবটাই রাজনৈতিক।

যেহেতু রাষ্ট্র চলে রাজনীতিতে, সংবিধান চলে রাজনীতিতে এবং কোটা সিস্টেম সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত -সেহেতু এইটা কোনোভাবেই অরাজনৈতিক বিষয় নয়। এবং আপনারা আন্দোলন করছেন।একটা রাজনৈতিক সিস্টেমের বিরুদ্ধে। লজিক্যলি আন্দোলনটা রাজনৈতিক। কিন্তু আপনারা প্রচারণা চালাচ্ছেন "অরাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে। "ব্যাপারটা এমন যে -

ভ্যালাঃ আজকে আমার কুত্তায় ডিম পেড়েছে।

জগলুঃ মাথা ঠিক আছে তো? কুত্তা কবে থেকে ডিম পাড়া শুরু করেছে?

ভ্যালাঃ এইটা আমার স্টাইল। আমি আমার মুরগীর নাম রেখেছি কুত্তা। কিচ্ছা খতম।

মরালঃ আপনারা মুরগীর নাম কুত্তা ডাকলেই মুরগী কুত্তা হয়ে যাবে না। অর্থাৎ রাজনৈতিক বিষয় রাজনৈতিক ই থাকবে - অরাজনৈতিক হয়ে যাবে না। তাহলে রাজনৈতিক একটা বিষয়কে, কীভাবে অরাজনৈতিক আন্দোলন দিয়ে সংস্কার করা যায়?

নাকি আপনারা রাজনীতি বলতে শুধু বুঝেন যে - আওয়ামী -বিএনপি? পক্ষ -বিপক্ষ? সরকারি দল বিরোধীদল?

প্লিজ বইলেন না - হ্যাঁ।

আমরা বিশ্বাস করতে চাই না সর্বচ্চো বিদ্যাপীঠে অবস্থান করা আমাদের ভাইয়েরা এতোটা stupid।

তো রাজনৌতিক আন্দোলন কেমন হওয়া উচিৎ?

Let me give you an example -

বাংলা ছেড়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হবে এইটা সাংবিধানিক নিয়ম ছিলো না। In fact তখন সংবিধানই প্রনয়ণ করতে পারছিল না এই ইস্যুটি সুরাহা না করে। উর্দু রাষ্ট্র ভাষা হবে এই দাবিটা ছিলো কতিপয় নেতাদের। পাকিস্তানের জনক জিন্নাহ্ ঢাকায় এসে রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে প্রধান অতিথির ভাষণে যখন বলেন যে -" উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা" এবং ‘বাংলা ভাষা আন্দোলনের পিছনে পঞ্চম বাহিনীর অস্তিত্ব রয়েছে "- তখনও ছাত্ররা কার্জন হলের অভ্যন্তরে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল। তার সামনেই। instantly. তারা জাতির পিতার বক্তব্যের বিরোধিতা করতে গিয়ে কৌশল অবলম্বন করে নাই। সত্য সত্যিই। চাই তা জাতির পিতার বিরুদ্ধেই যাক না কেন!

তাদের দৃঢ়তা ছিলো এমন। পাকিস্তানি হওয়া সত্ত্বেও, পাকিস্তানের জনকের বিরুদ্ধে সামনে দাঁড়িয়ে নায্য দাবী আদায়ে কুন্ঠাবোধ করেনি সেদিনের বীরেরা! অথচ সেখানে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিলো না। বাংলাকে বাদ দিবে -তা রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ণীত সর্বজনগ্রাহ্য কোন সিদ্ধান্ত ছিলো না। তুলনামূলক বিচারে ভাষা আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটা বিষয় ছিলো।

কিন্তু আন্দোলন কেমন ছিলো?

- দেশব্যাপী ধর্মঘট।

সারাদেশে সর্বদলীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন। সরকারের প্রতিবন্ধকতা, ধরপাকড়, এমনকি ১৪৪ ধারা জারি সত্ত্বেও মাঠে নেমে পিকেটিং করেছে।

Interesting fact is -পিকেটিং-এর জন্য আলাদা গ্রূপও হয়েছিল।

কেন আমরা বরকত, রফিক, জাব্বারদের শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করি?

কারণ তারা সেদিন বলে নাই আমরা অরাজনৈতিক, আমাদের আন্দোলন অরাজনৈতিক। তারা শুধু দেখেছে জাতীয় আবেগ। শুধু আবেগ রাখতে গিয়েই তারা লড়েছে।আপনাদের আন্দোলন তো আবেগী নয়! আর আপনারা কুত্তার সঙ্গে লড়াই করতে নেমে জেন্টেলম্যান সাজের চেষ্টা করছেন?

Oh c'mon man!

আন্দোলন যেমন হওয়া উচিৎ-

শুধু ঢাবি না- সারা দেশের সমস্ত কলেজ-ভার্সিটিগুলোতে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলুন। সবাই একইসময়ে সমস্ত শহরের কেন্দ্রে জমায়েত হবেন। আপনাদের অতিক্রম করে এম্বুলেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের গড়ি ছাড়া কোনো গাড়ি চলতে দিবেন না।

জনগণের প্রতি বার্তা পাঠান আপনাদের সাপোর্টের জন্য। believe me, সবাই আপনাদের পাশে থাকবে। আপনাদের অবিভাবককেও আপনাদের কাতারে শামিল করান। কারণ আপনার মেধা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হলে, আপনার পরিবারও beneficiary হবে।

সুতারং এইটা তাদেরও responsibility.

আমি বলছি না আপনারা সহিংস হোন। সেইটা করবে অন্য পলিটিক্যাল সংগঠনগুলো। টুকটাক পুলিশের উপর হামলা, দু-একটা গাড়ি পোড়ানো, মতিয়ার কুশপুত্তলিকা দাহ, ইত্যাদি তারাই করবে। আপনারা তাৎক্ষণিক সরকারকে ব্লেইম করবেন।

আপনাদের অসহিংস আন্দোলনকে সহিংস রূপ দিতেই এই ষড়যন্ত্র করছে সরকার।

মানে counter attack.

Because counter attack is the greatest art in any fighting, the art of the champion - Bruce Lee

পাশাপাশি আওয়াজ তুলুন -ভিসির বাসায় হামলাকারীদের বিচার চাই বলে। মিডিয়ার কথা আজকাল কেউই বিশ্বাস করে না। আমরা জানি মিডিয়া কার ইশারায় চলে, আমরা জানি সাংবাদিকেরা নেমেছে বেশ্যাবৃত্তিতে , আমরা জানি বুদ্ধিজীবীরা হয়ে গেছে দালাল।

আপনাদের হাতে আছে social media - which is enough to bring a revolution

বিএনপির মতো আন্দোলন কইরেন না। মামলা-হামলার ভয়ে মাঠ ছেড়ে পিছু হঠতে হঠতে তাদের দলের যে 'প্রাণ' সেটাও আজ জেলে।

কারণ তারা তাদের নেতাদের বাঁচাতে মাঠে নাম নাই। ফলে আজ নেত্রীও নাই। অথাৎ আম-আমের আঁটি, পুরো গাছটাই নাই হয়ে গেছে।

Stay on the battlefield. প্লিজ মাঠ ছাড়বেন না

আবারো বলছি - এইটা সবাই জানে আপনারা কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে মাঠে নামেন নাই। আপনাদের focus নির্দিষ্ট। সুতরাং তাদের blame game -এ যোগ দিয়ে আন্দোলন স্তিমিত কইরেন না। জানুন আপনাদের পূর্বসূরিরা কীভাবে আন্দোলন করেছেন।অনুসরণ করুন তাঁদের। তাঁরা ব্যর্থ হননি কিছুতেই! প্রচার করুন তাঁদের উৎসাহমূলক বক্তব্যেগুলো!

আন্দোলিত করুন সব স্টুডেন্টদের। আপনারা পারবেন ইনশাআল্লাহ!

বিষয়: বিবিধ

৭৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File