রাজনীতির ভিতর বাহিরঃ আন্দোলন
লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ২১ এপ্রিল, ২০১৮, ১১:৫৪:০৪ সকাল
মনে করেন, আপনি একটা মেয়েকে চুমু খেতে চান। তার সাথে আপনার হালকা খাতির, তাটির হইছে।
তো আপনি যখন তার সাথে ঘোরেন, এক দিন তাকে আপনি বলবেন, এই তুমি কি পামিস্ট্রিতে বিশ্বাস করো? আমি কিন্ত হাত দেখতে জানি।
সেও খেলাটা জানে, তাই তার যদি আগ্রহ থাকে সে বলবে, হুম বিশ্বাস করি দেখেন আমার হাত।
তো আরেক দিন আপনি রিক্সায় উঠে আসতে করে, তার হাতে হাত দিলেন, দুই জন এক সাথে হাত হাত ধরে ঘুরলেন।
পর দিন আপনি তার কোমর জরায় ধরে রিক্সায় ঘুরলেন। তারপরে আপনি একদিন তারে, কোমর জরায় ধরে চুমু দিলেন।
এই যে স্লো এস্কেলেশান এটার একটা টার্ম আছে দুইটা ইন্ডাস্ট্রিতে একটা পারসুয়েশান আরেকটা সাইকোলজি।
কিন্ত পয়েন্টটা আশা করি ক্লিয়ার যে, আপনি যখন কিছু চাইবেন তখন সেইটা ধাপে ধাপে চাইলে, আপনার পারসুয়েড করার আশা বেশী।
কথাটা আমি বললাম বিএনপি এবং জন নৈতিকতা প্রশ্নে। বিএনপির জন্যে পাবলিক কেন রাস্তায় নামে না বা বিএনপি কেন মিডিয়ার সাপোর্ট পায় না যেটা কোটা বিরোধী আন্দোলন পায় সেই প্রসঙ্গে।
ইটস জাস্ট লাইক দ্যাট কিস।
আপনাকে সেই ক্ষেত্রটা তৈরি করতে হবে। আপনি পাব্লিকের সঙ্গে শেয়ার মার্কেটের লুটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নাই, আপনি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নাই, আপনি তেলের দাম কমানোর আন্দোলনে নাই, আপনি খাদ্যে ভেজালের আন্দোলনে নাই, আপনি ডাক্তারদের টেস্ট ব্যবসার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নাই- পাবলিক যদি আপনার গার্ল ফ্রেন্ড হয় তার মানে আপনি ধাপে ধাপে তাকে এঙ্গেজ করেন নাই।
আপনি হঠাৎ করে তাদেরকে বলবেন, আমাদের সাথে তারেক জিয়ার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্যে মামলা প্রত্যাহারে আন্দোলনের নামো, আমাদের ক্ষমতায় নিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্যে আন্দোলনে নামো- সেই গার্ল ফ্রেঞ্জ চুমু এনালজিতে এইটা এমন হবে যে আপনি হঠাৎ করে, রাস্তায় একটা মেয়ের হাত ধরে তাকে বললেন এই আমাকে চুমু খাবে? -পুরা নারী নির্যাতন হয়ে যাবে না?
বাংলাদেশের একজন খুবই আন্ডার রেটেড ইন্টেলেকচুয়াল সাফায়েত আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, প্রশ্নটি শুধু মাত্র কয়েনের এক সাইড। আরেক সাইড হচ্ছে, হোয়াট ইজ এট স্টেক।
উনি যেইটা মিন করেছেন, সেইটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কাছে যখন ক্ষমতা একটা স্টেক তখন সে যে রকম ব্রুটাল হয়, কোটা বিরোধী মুভমেন্ট বা রামপাল প্রশ্নে বা ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে সে তেমন ব্রুটাল হয় না।
এটা বিএনপির বন্ধুরাও বলেছেন, যে এই আন্দোলন বা যে কোন আন্দোলন বলুক যে তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়, দেখি তাহলে কি অবস্থা হয়।
পয়েন্ট টেকেন, কিন্ত , লেট আস বি ক্লিয়ার আপনি যখন ক্ষমতা এবং রাজনীতি নিয়ে কথা বলছেন এই পয়েন্টটাকে আপনি কখনো নইতিকতার প্রশ্ন বাদ দিয়ে আলাপ করতে পারবেন না।
কারন ক্ষমতার মূল প্রশ্ন হচ্ছে নৈতিকতা।
শেখ হাসিনার শাসন থেকে মুক্তির জন্যে আপনারা গন আন্দোলন চান, সেটার নৈতিক ভিত্তি কি? আপনার লেজিটিমিসি বা বৈধতা কি? পাবলিক কেন তার পিতৃ প্রদত্ত জান, আপনার জন্যে দিবে।
শেখ হাসিনা তো এই বার ৭% গ্রোথ দিয়েছে । সেই গ্রোথ যে ফেক সেইটা আপনারা পরিষ্কার করেছেন কিনা? আপনারা প্রমান করেছেন কিনা আপনারা লেসার অফ দা টু ইভিল।
আপনারা আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো কাউন্টার দিয়েছেন কিনা। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ সেইটার কি হবে? বিএনপির যে পদে পদে আরেকটা মিনি আওয়ামী লীগের লুটের কাঠামো সাজানো তার কি হবে?
রাজনীতি এট ফার্স্ট নৈতিকতার প্রশ্ন। ক্ষমতা এট ফার্স্ট নৈতিকতার প্রশ্ন। ক্ষমতাকে ধরা যায় না, হাত দেয়া যায়না, এইটা পাবলিক গিভ আপ করে, সরকারের কাছে।
যে কোন সরকার বিরোধী মুভমেন্ট তাই এট ফার্স্ট নৈতিকতার প্রশ্ন।
জিন শার্প- যাকে নন ভায়োলেন্ট মুভমেন্টের গুরু বলা হয়। আরব স্প্রিং থেকে চায়নার তিয়েন্মান স্কয়ার সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এক নায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে মুভমেন্টে যার নন ভায়লেন্ট কোয়েরশান টেকনিক সজ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে ব্যবহার করা হয়, এমন কি এই কোটা বিরোধী আন্দোলন জিন শার্পের টেমপ্লেটের বাহিরে যায় নাই ( উনি চরম ভাবে গান্ধী ইন্সপায়ারড)- সেই জিন শার্প বার বার বলেছে, ডিক্টেটর ভায়োলেন্ট হবে, সে যদি তার ক্ষমতা ছেড়ে যেতে দেখে তখন সে চরম ব্রুটাল হবে। এইটা নতুন কিছু না। কিন্ত,প্রথমে নৈতিকতার প্রশ্ন ক্লিয়ার করতে হবে।
প্রতিটা শাসক কিন্ত, একটা নৈতিক জায়গা থেকেই টিকে থাকে। মনে করেন, বর্তমান আওয়ামী লীগের শাসন কিন্ত শাসনতান্ত্রিক সাংবিধানিক ভাবে বৈধ শাসন, যদিও এইটা স্পিরিটে অবশ্যই অবৈধ।
রাস্তায় নামার আগে সবার আগের মুভমেন্ট হচ্ছে নৈতিকতার শাসক যে অবৈধ এবং তার আন্দোলন যে বৈধ সেইটা প্রমানের ইন্টেলেকচুয়াল কাজ। সেইটা কি বিএনপি করেছে?
টু বি ফেয়ার, শেখ হাসিনার চেয়ে অনেক অনেক ব্রুটাল ডিক্টেটর এই পৃথিবীতে এসেছে। ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া ব্রুটালিটি কি জিনিষ এবং বিশ্বের দেশে দেশে মানুষ কি পরিমান স্যাক্রিফাইস করেছে গণতন্ত্রের জন্যে।
এরশাদ আমলে ওপেন মিছিলে গুলী করে, ২০ জনকে মেরে ফেলেছিল, খোলা মিছিলে ট্রাক তুলে দেয়া হয়েছিল।
কিন্ত, পাবলিক যখন মাঠে নামে, ক্ষমতার নৈতিকতা যখন পরিষ্কার হয় এবং সেইটার জন্যে যখন নন ভায়লেন্ট এক্টিভিজম হয় এমন এক দলের হাতে যাদের নিজের নৈতিকতা পরিষ্কার তখন যে জোয়ার আসে জনগণ নিজেই জান দিতে প্রস্তুত হয়।
মিডিয়া সাথে নাই, এইটা বর্তমান সময়ে আর গ্রহন যোগ্য এক্সিউজ না। কোটা বিরোধী মুভমেন্টেও মিডিয়া সাথে ছিল না। এইটা বরং একটা প্লাস পয়েন্ট- বর্তমান সময়ে ট্রাডিশানালা মিডিয়া এতো ঘৃণিত যে -মিডিয়ার সাথে না থাকা জন নৈতিকতা তৈরি করে। এইটার এডভান্টেজ কি বিএনপি নিয়েছে?
এই ডিস্কাশন গুলোতে এজইউম করে নেয়া হচ্ছে যে, রাস্তায় জন সমাবেশ ঘটানোর সক্ষমতাটাই প্রধান ইস্যু। এইটা ফরহাদ মযহার, ওবায়দুল কাদের সহ অনেকেই মনে করেন। যে রাস্তায় মানুষ নামিয়ে সরকারকে ক্ষমতা পতন করাতে হবে।
ফলস। প্রথমে ক্ষমতা যে অবৈধ তার গন নৈতিকতা তৈরি করতে হবে, দল মত নির্বিশেষে কন্সেন্সাস তৈরি করতে হবে।
রাস্তায় নামার ক্ষমতা হচ্ছে নুইসেন্সের কাপাসিটি। এইটা আওয়ামী লীগ বিএনপি সহ সবার আছে। ইসলামী দল গুলোর আরো বেশী আছে।
কিন্ত এইটা শাসককে ক্ষমতা থেকে নামানোর গননৈতিকতা তৈরির পরের প্রশ্ন আগে না। আগে মাল্টি পার্টি কন্সেন্সাস তৈরি করা যখন ক্ষমতা যে পিলার গুলোর উপরে দাড়ায় থাকে, মনে করেন জনগণ, এলিটস, বুদ্ধিজীবী, প্রশাসন, ইন্সটিটিউশান, বা আন্তর্জাতিক মতামত তাদের সবার কাছে ইন্টেলেকচুয়ালি এই অবস্থান আসতে হবে এই শাসক আর এক দিনের জন্যেও বৈধ নয়।
ক্ষমতা তখন এমনিতেই তাসের ঘরের মত পরে যায়। এইটাকে যারা ওভার সিমপ্লিফিকেশান মনে করতেছেন, সরি, এইটা ক্লাসিক জিন শার্পের ফ্রম ডিক্টেটরশিপ থেকে ডেমোক্রেসি বইয়ের মূল প্রেমিস যাকে হবসের পরে সব চেয়ে গুরুত্তপুরন পাওয়ার থিওরেশিয়ান বলে ধরে নেয়া হয়।
বিএনপি কি সেই কাজটা করেছে ?
না।
সো এই ধাপে ধাপে এস্কেলশান গুলোতেই জরুরী পাবলিক ইস্যুতে এঙ্গেজ হওয়া। পাবলিককে এঙ্গেজ করা।
বিএনপি, সেই চুমু রেটরিক ব্যবহার করলে, বলা যায়, জাস্ট দুই দিনের পরিচিত একটা মেয়েকে বলেছে, এই আমাকে চুমু খাবে।
বিএনপি যে পাব্লিকের থাপ্পর খায়নাই, সেইটা বরং পাব্লিকের দয়া।
লেখনী জিয়া হাসান।
বিষয়: বিবিধ
৬১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন