লাল সালাম তোমাদের
লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ০৬:৫৬:৩৫ সন্ধ্যা
আজ ১৮ এপ্রিল, বাংলাদেরশের ইতিহাসে একটি বিজয়ের দিন। ২০০১ সালের এই দিনে স্বাধীনতার ৩০ বছর পর বাংলাদেশ বহির্শত্রু দ্বার প্রত্যক্ষ আক্রমনের শিকার হয় এবং সৈন্য সংখ্যা এবং অস্ত্র অনেক কম থাকার পরও পরিপূর্ন বিজয়ী অর্জন করে। কিন্তু আমরা এতোই আত্মবিস্মৃত জাতী এই দিনটিকে মনে রাখারও প্রয়োজন মনে করিনি।
ঘটনার শুরু ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে যখন তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল (আব) Alm Fazlur Rahman জানতে পারেন যে ভারতীয় বিএসএফ নোম্যান্স ল্যান্ডের উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করে বাংলাদেশের এলাকা পদুয়াকে কানেক্ট করছে আর পদুয়াতে অস্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প করেছে। বিডি’আরের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিবাদ করার পরও ভারতীয় পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা করা হলোনা এমনকি ফ্ল্যাগ মিটিং-এও রাজি হলো না। বাংলাদেশের সার্বভৌম এলাকার উপরে এই রকম আচরণে এপ্রিলের ১৫-১৬ তারিখ রাতে মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানের নির্দেশে চার শ’র মতো ফোর্স পদুয়াতে মুভ করে আর পদুয়ায় ভারতীয় বিএসএফ ক্যাম্প ঘেরাও করে ফেলে।
বিএসএফের ওখানে প্রায় ৭০ জনের মতো সোলজার ছিল, ছয়টা মাত্র ফায়ার করার পরেই বিএসএফ সৈন্যরা সেখানে সারেন্ডার করে। বিডি’আর পদুয়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৬ তারিখে নেগসিয়েশন শুরু হলো ইন্ডিয়ার সংগে। কথা ছিল নেগোসিয়েশন চলাকালিন কোন পক্ষই সামরিক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে। এই নেগসিয়েশন যখন ডাহুকীতে চলছিল- তখন ভারত বিশ্বাসঘাতকতা করে বাংলাদেশের অজান্তে ১৮ এপ্রিল ভোরের আলো ফোটার আগেই, ওখান থেকে প্রায় দুশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বরাইবাড়ী এলাকার বিডিআর ক্যাম্প ও ঐ এলাকাকে দখলে নেবার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিএসএফের সমন্বয়য়ে গঠিত প্রায় ৫০০ ফোর্স বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে আগ্রাসন চালায়।
৩০ বছরের মাথায় এটাই ছিল বহিঃশত্রু দ্বারা আমাদের দেশ প্রথম আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। সেখানে তখন বিডি’আরের মাত্র ১১ জন সদস্য ছিল। ভারতীয় সৈন্যদের আকস্মিক গুলিতে শহীদ হন বিড’আরের ল্যান্স নায়েক মোঃ ওহিদুজ্জামান। এতে ভয়ের পরিবর্তে আগুনের মতো জ্বলে ওঠেন বিডি’আরের বাকি ১০ জওয়ান। দুইটা মাত্র সাব মেশিন গান আর অন্য সাধারণ অস্ত্র নিয়ে দুই দিক থেকে ভারতের বিশাল বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পরেন তাঁরা। প্রথম প্রতিআক্রমনেই ভারতীয় বাহিনীর ১৭/১৮টা লাশ পরে যায়। ভারতীয় হানাদার বাহিনীকে ওখানেই আটকে রাখা হয়। এরই মধ্যে মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানের নির্দেশে ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনা থেকে প্রায় চারশো’ ফোর্স সেখানে মুভ করে এবং দশটার দিকে ওখানে পৌঁছে যায়। ওপেন গ্রাউন্ডে ভারতীয় বাহিনীর সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ভারতীয় বাহিনী আগেই থমকে গিয়েছিল, বিডি’আরের পূর্ণ প্রতি আক্রমণে দিশাহারা হয়ে তারা পালাতে থাকে। বাংলাদেশের সীমানায় ফেলে যায় ১৮টা মৃতদেহ আর আর সাথে নিয়ে যায় আরো প্রায় ১৭৪ টি মৃতদেহ। আরো কিছু ভারতীয় সৈন্য দ্বি-বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক হয়। বাংলাদেশ পক্ষে তিনজন শাহাদত বরণ করেন। ভারতীয় বাহিনী পূর্ণ পরাজয় মেনে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়।
আজ সেই ১৮ই এপ্রিল। আমরা কেউ হয়তো স্মরণ করিনি আমাদের সেই বীরদের যারা দেশের জন্যে আল্লাহ্র নামে বুক টান করে দাঁড়িয়েছিল পাঁচগুণ বড় শত্রু বাহিনীর সামনে আর ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিজয়। কিন্তু ইতিহাস একদিন ঠিকই মূল্যায়ন করবে এই বীরদের: নায়েব সুবেদার আবদুল্লাহ, হাবিলদার নজরুল ইসলাম, ল্যান্স নায়েক ফজলুল হক, ল্যান্স নায়েক ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহি মোয়াজ্জেম হোসেন, ইদ্রিস আলী, আবদুল হামিদ, লিটন মিয়া, বদরুজ্জামান, এফএসের নায়েক জালালউদ্দিন মিয়া ও সিপাহি ইছহাকআর তাদের যোগ্য নেতা মেজর জেনারেল ফজলুর রহমানকে। সালাম তোমাদের ১৬ কোটি মানুষের পক্ষ থেকে।
বিষয়: বিবিধ
৬৪৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের কাছে নিহতের সংখ্যা যতটা না পীড়াদয়াকছিল তার চেয়ে বেশী পীড়াদয়াক ছিল বিডিআরের অল্প সংখ্যক জওয়ানদের হাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভারী একটা অংশ অপদস্থ হয়েছিল।
যার কনসিক্যুয়েন্স আমরা জানি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন