যে ধর্মের উৎপত্তি ঢাকার চারুকলায়’
লিখেছেন লিখেছেন ওয়েলকামজুয়েল ১৭ এপ্রিল, ২০১৮, ০১:০০:১০ রাত
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র আইডিয়াটা বের করেছে ৮০ দশকের ঢাকা চারুকলার ছাত্র শিক্ষকরা। বিষয়টা তখন স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সাথে সাথে একধরণের সংস্কৃতিক কর্মসূচীর মতই পালিত হত। প্রথম দিকে এটার নাম ছিল ‘বর্ষবরন আনন্দ শোভাযাত্রা’। যার সাথে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির কোন সম্পর্ক নেই। এমন কি কলকাতার বাবুরাও এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ আগে কখনো পালন করেনি। জানা গেছে এবছর থেকে কলকাতার যাদবপুরে সেটা শুরু হবে।
সমস্যা হল ৮০র দশকের উদ্ভাবিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ কে ‘হাজার বছরের বাঙ্গালি সংস্কৃতি’ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যদিও বাংলা বর্ষের বয়স মাত্র সারে চারশ বছর। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
আমাদের সংস্কৃতি কি এতই দেউলিয়া যে সেটাকে একটা মিথ্যার উপরে দাড়াতে হবে। আর ইউনেস্ক সেই মিথ্যা বিষয়টিকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ’ হিশেবে তাদের তালিকায় স্থান দিয়ে বাঙ্গালির নয়া কর্পোরেট কালচারের হুজুগ কে আরও উস্কে দিয়েছে। সেই খুশিতে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্কুলার পাঠিয়ে এই উৎসব পালন করাটাকে বাধ্যতামুলক করেছে। কোন কিছু পালনে যখন বাধ্য করা হয় তখন বুঝতে হবে সেই বিষয়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা নেই।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ অর্থাৎ মঙ্গল লাভের জন্য বিভিন্ন প্রানি এবং ভয়ঙ্কর দানবের মূর্তি ও মুখোশে শোভা বর্ধন করে যে মিছিল সমাবেশ বা পথযাত্রা হয় তাকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বলে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ‘মঙ্গল’ আমরা কার কাছে কামনা করছি বা প্রার্থনা করছি? তার মানে এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রাটি’ একটা প্রার্থনা রীতি। তবে সেটি কোন ধর্মের? প্রার্থনা রীতিটি এদেশের হিন্দু মুসলিম খৃষ্টান বোদ্ধ কোন ধর্মের প্রার্থনা রীতির সাথে মেলেনা। এই প্রার্থনা রীতি বা ধর্মের উদ্ভাবক হল সেই ৮০র দশকের ঢাকা ইউনিভারসিটির চারুকলা বিভাগ। এই ধর্মের নির্দিষ্ট করে কোন পুরোহিতের নাম জানা যায় না, যেমন টি ভ্যালেন্টাইন ডে র পুরোহিত হিশেবে শফিক রহমানের নাম আছে। সুতরাং যতই বাধ্য করা হোক, এমন ‘ধর্মীয় সমাবেশে’ একজন প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ তার সন্তানকে কোন ভাবেই যেতে দিতে পারে না। এছাড়াও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারটি সংবিধানের ৪১(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে বলা আছে- ‘কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোনও ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হলে তাকে কোনও ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশ নিতে বা যোগদান করতে হবে না’। অর্থাৎ এই সার্কুলার জারি করে রাষ্ট্র নিজেই নিজের আইন ভঙ্গ করছে।
এদেশের স্যেকুলারদের উপর বাংলা সনের প্রবর্তক বাদশা আকবরের প্রেতাত্মার ভর আছে। আকবর তার ক্ষমতাকে দির্ঘায়িত আর নিরাপদ রাখার স্বার্থে ইসলাম ধর্মের সাথে, হিন্দু ধর্ম থেকে কিছু, খৃষ্টান ধর্ম থেকে কিছু, জৈন ধর্ম থেকে কিছু আর প্রকৃতি পূজারিদের থেকে কিছু কিছু নিয়ে একটা জগাখিচুড়ি ধর্ম তৈরি করেছিলো, সেই ধর্মের নাম ছিল ‘দ্বীন এ এলাহি’।ইতিহাস বলে- আকবর ভারতের সকল ধর্মের মধ্য থেকে প্রায় ৩৫৫ জন নারীকে বিয়ে করেছিল । তাই সকল স্ত্রী ও আত্মীয়দের মন রক্ষার জন্য সে এই নতুন ধর্মের প্রবর্তন করে। আবুল ফজল নামক এক দুরাত্মা এই কাজে তাকে প্ররোচনা দেয় । এই ধর্মের কালেমা ছিল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবারু খলিফাতুল্লাহ । তার এই ধর্মের মাত্র ১৭ জন অনুসারী ছিল ।
বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ধার্মিক, অধার্মিক, সেকুলার, নাস্তিক সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে সেই একই জগাখিচুড়ী পাকিয়ে ফেলছে, বাধ্য করছে নতুন উদ্ভাবিত এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামক রীতি পালন করতে। যা এদেশের সকল ধর্মের মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাঙালি সংস্কৃতিতে পহেলা বৈশাখের হালখাতা সহ একটা সার্বজনীন উৎসবের রূপ আছে, সেটি নিয়ে কখনই কোন বিতর্ক ছিল না। নিজ বিশ্বাস ঠিক রেখে সব ধর্মের মানুষ পহেলা বৈশাখ পালন করেছে। আমরা সেই সার্বজনীন পহেলা বৈশাখটাকেই চাই।মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে চাপিয়ে দেয়া ‘নয়া কর্পোরেট দ্বীন এ এলাহি’ নয়।
লতিফুল ইসলাম শিবলী
বিষয়: বিবিধ
৬৬৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন