সফর মাসের করণীয় বর্জণীয়
লিখেছেন লিখেছেন মুফতি আইয়ুব ধর্মপুরী ২০ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:২৩:৩০ সকাল
সফর মাসের করণীয় ও বর্জণীয়
সফর মাসের জন্য কোনো বিশেষ নামাযও নেই, রোযাও নেই।এই মাসের কোনো দিবসে বা রাত্রে বিশেষ কোনো প্রকারের নামায আদাযের বিশেষ সওযাব বা ফযীলত কোনো হাদীসে বর্ণিত হয় নি। অনুরূপভাবে এই মাসের কোনো দিনে রোযা পালনেরও কোনো বিশেষ ফযীলত কোনো হাদীসে বর্ণিত হয় নি। এ বিষয়ে যা কিছু বলা হয় সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা। এই মাসকে কেন্দ্র করে অনেক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা মুসলিম সমাজে প্রচলিত হয়েছে। এগুলোকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমতঃ সফর মাসের অশুভত্ব ও বালা-মুসিবত বিষয়ক,
দ্বিতীয়তঃ সফর মাসের প্রথম তারিখে বা অন্য সময়ে বিশেষ নামায বিষয়ক
তৃতীয়তঃ আখেরি চাহার শোম্বা বা শেষ বুধবার বিষয়ক।
প্রথমতঃ সফর মাসের অশুভত্ব বা এ মাসের বালা-মুসিবতঃ-
কোনো স্থান, সময়, বস্তু বা কর্মকে অশুভ, অযাত্রা বা অমঙ্গলময় বলে মনে করা ইসলামী বিশ্বাসের ঘোর পরিপন্থি একটি কুসংস্কার। এখানে লক্ষনীয় যে, আরবের মানুষেরা জাহেলী যুগ থেকে সফর মাসকে অশুভ ও বিপদাপদের মাস বলে বিশ্বাস করত।রাসূল্লাহ(সা) তাদের এই কুসংস্কারের প্রতিবাদ করে বলেন,“…কোনো অশুভ –অযাত্রা নেই ।…(বুখারী, ৫/২১৫৮,২১৬১,২১৭১,২১৭৭; মুসলিম ৪/১৭৪২-১৭৮৫)।
অথচ এর পরেও মুসলিম সমাজে এক শ্রেণীর লোক প্রচার করছে যে, এ মাসে বিয়ে শাদী অশুভ।বড় কোন কাজে নামা অশুভ ইত্যাদি । তারা জালিয়াতি করে রাসূলুল্লাহ(সা) এর নামে বলেছে, এই মাস বালা মুসিবতের মাস। এই মাসে এত লক্ষ এত হাজার বালা নাজিল হয়। এ মাসে আদম আ. ফল খেয়েছিলেন। এ মাসে হাবিল নিহত হন। এ মাসে নূহ আ. এর কউম ধংস হয়। এ মাসে ইবরাহীম আ.কে আগুনে ফেলা হয়। এই মাসের আগমনে রাসূলুল্লাহ ব্যাথিত হতেন। এই মাস চলে গেলে খুশি হতেন। তিনি বলতেন: যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করবে আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করার সুসংবাদ প্রদান করব। ইত্যাদি অনেক কথা বানিয়েছে। আর অনেক সরলপ্রাণ মানুষরাও তাদের এ সকল জালিয়াতি কথাবার্তা হাদিস নামে বিশ্বাস করে ফেলছেন। অথচ মুহাদ্দিসগণ একমত যে, সফর মাস সম্পর্কে এ সকল কথা ভিত্তিহীন, জাল হাদিস ও মিথ্যা। (দেখুন আল্লামা সাগানীর আল মাউদুআত পৃ.৬১;মোল্লা আলী কারীর আল-আসরার.,পৃ ২২৫;তাহের ফাটনীর তযকীরা,পৃ১১৬; আজলূনীর কাশফুল খাফা ২/৩০৯;শাওকআনীর আল-ফাওয়াইদ ২/৫৩৯ নিযামুদ্দীন আউলিয়ার রাহাতুল মুহিব্বীন,পৃ.১০১ রাহাতুল কুলুব,পৃ.১৩৮)।
সুতরাং নিম্নোক্ত কাজগুলো কুসংস্কার বা পরিত্যাজ্য। কারন ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই।
* পেচায় ডাকলে অশুভ মনে করা।
* খালি কলসি দেখলে যাত্রা অশুভ মনে করা।
* পরীক্ষাকালীন ডিম খাওয়া অশুভ মনে করা।
* রাত্রে কোন জিনিস দেওয়া যাবেনা মনে করা।
* যাত্রাকালীন পেছনে কেউ ডাকলে অশুভ মনে করা।
* হলদে পাখী ডাকলে মেহমান আসবে মনে করা।
* করি পোকা দেখলে বা ডান হাত চুলকালে টাকা আসবে, আর বাম হাত চুলকালে টাকা খরচ হয়ে যাবে মনে করা।
* মাথার সাথে মাথা লাগলে শিং উঠবে মনে করা।
* পোড়া ভাত খেলে বিয়ের সময় ঝড় হবে মনে করা।
* ডেকচির কাচানো ভাত-তরকারী খেলে মেয়ে হবে মনে করা।
* জোড় কলা খেলে জোড় সন্তান হবে মনে করা।
* পোকায় খাওয়া আম খেলে সাতার কাটতে পারবে মনে করা।
* কারো কথা আলোচনা হওয়া মাত্র সে উপস্থিত হলে অনেকদিন বাচবে মনে করা।
* সফর মাসে বিয়ে শাদী খারাপ মনে করা। অথচ এক বর্ণনা মতে জান্নাতি রমণীদের সর্দার ফাতেমা রজি.'র বিয়েও এ মাসে হয়েছে।
* প্রথম কাষ্টমারকে ফিরিয়ে দিলে পুরাদিন কাষ্টমার ফিরে যাবে মনে করা।
* প্রথম কাষ্টমারকে ও রাত্রে বাকী দেওয়া যাবেনা। বা কাঊকে রাত্রে সুচ দেওয়া যাবেনা মনে করা
* শুভ-অশুভ (ছাত-কুছাত) বিশ্বাস করা। অথচ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা মুসলমানের প্রত্যেক কাজই শুভ।
* ঝাড়ু কারো গায়ে লাগলে অর্ধেক ভেঙে ফেলে দিতে হবে মনে করা।
* কাউকে দেখে ভয় ফেলে, তাকে স্পর্শ করা (ছুই দেওয়া) জরুরী মনে করা।
* প্রসূতীর ঘরে ঢুকলে আগে আগুন ধরতে হবে মনে করা।
* নববধুকে আগে পানি দেখতে দেওয়া।
* শশুর বাড়ি থেকে আসার সময় কথা বললে বউ বাচাল হবে মনে করা। ইত্যাদি।
-
দ্বিতীয়তঃ সফর মাসের ১ম রাতের সালাতঃ-
উপরুক্ত জাল হাদীসগুলোর মতই একটি ভিত্তিহীন জাল হাদীস বর্ণনা করা হয় যে, কেউ যদি সফর মাসের ১ম রাত্রিতে মাগরিবের পরে বা ইশার পরে চার রাকা’আত সালাত আদায় করে, অমুক অমুক সূরা বা আয়াত পাঠ করে তবে সে বিপদ থেকে রক্ষা পাবে, এত পুরষ্কার পাবে..ইত্যাদি।এগুলি সবই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা।
তৃতীয়তঃ সফর মাসের শেষ বুধবারঃ-
বিভিন্ন জাল হাদীসে বলা হয়েছে, বুধবার অশুভ এবং যে কোনো মাসের শেষ বুধবার সবচেয়ে অুশুভ দিন।আর সফর মাস যেহেতু অশুভ, সেহেতু সফর মাসের শেষ বুধবার বছরের সবচেয়ে বেশি অশুভ দিন। এবং এই দিন সবচেয়ে বেশি বালা মুসিবত নাযিল হয়। এ সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা অনেক সরলপ্রান লোকে বিশ্বাস করেন। একজন লিখেছেন:সফর মাসে এক লাখ বিশ হাজার বালা নাজিল হয়। এবং সবদিনের চেয়ে আখেরী চাহার শুম্বা-তে (সফর মাসের শেষ বুধবার) নাজিল হয় সবচেয়ে বেশি। সুতরাং ঐ দিনে যে ব্যাক্তি নিম্নোক্ত নিয়মে চার রাকা’আত নামাজ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ঐ বালা থেকে রক্ষা করবেন এবং পরবর্তী বছর পর্যন্ত তাকে হেফাজতে রাখবেন। (খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া, রাহাতুল কুলুব,পৃ.১৩৯)।
এগুলি সবই ভিত্তিহীন কথা।তবে আমাদের দেশে বর্তমানে আখেরী চাহার শুম্বা-র প্রশিদ্ধ এই কারনে নয়, অন্য কারনে। তা হল প্রশিদ্ধ আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর মাসের শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে পরেন। তিনি সফর মাসের শেষ দিকে কিছুটা সুস্থ হন এবং গোসল করেন। এরপর তিনি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই অসুস্থতাতেই তিনি পরের মাসে ইন্তিকাল করেন। এজন্য মুসলমানেরা এই দিনে তাঁর সর্বশেষ সুস্থতা ও গোসলের স্মৃতি উদযাপন করেন।
এ বিষয়ক প্রচলিত কাহীনির সার সংক্ষেপ প্রচলিত একটি পুস্তক থেকে উদ্ধৃত করছি: হযরত নবী করিম (সা.) দুনিয়া হইতে বিদায় নিবার পূর্ববর্তী সফর মাসের শেষ সপ্তাহে ভীষনভাবে রোগ আক্রান্ত হইয়া ছিলেন।অতঃপর তিনি এই মাসের শেষ বুধবার সুস্থ হইয়া গোসল করত: কিছু খানা খাইয়া মসজিদে নববী তে হাযির হইয়া নামাযের ইমামতি করিয়াছিলেন।ইহাতে উপস্তিত সাহাবীগণ অত্যাধিক আনন্দিত হইয়াছিলেন।আর খুশির কারণে অনেক অনেক দান খয়রাত করেছিলেন।বর্নিত আছে হযরত আবু বকর (রজি.) খুশিতে ৭ হাজার দীনার এবং হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রজি.) ৫ সহস্র দীনার, হযরত ওসমান (রজি.) ১০ সহস্র দীনার, হযরত আলী (রজি.) ৩ সহস্র দীনার, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রজি.) ১০০ উট ও ১০০ ঘোড়া আল্লাহর ওয়াস্তে দান করিয়াছিলেন।তারপর হইতে মুসলমানগণ সাহাবীগণের নীতি অনুকরন ও অনুসরন করিয়া আসিতেছে । হযরত নবী করিম (সা.) এর এই দিনের গোসল ইহ জীবনের শেষ গোসল ছিল। ইহার পর আর তিনি জীবিতকালে গোসল করেন নাই। তাই সকল মুসলমানের এই দিনে ওযু-গোসল করতঃ ইবাদত বন্দেগী করা উচিত। এবং নবী করিম (সা.) এর প্রতি দরূদ শরীফ পাঠ করতঃ সাওয়াব রেছানী করা কর্তব্য। (মুফতি হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফজীলত,পৃ.১৫)।
উপরের এই কাহীনিটিই কমবেশি সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন গ্রন্থে লেখা রয়েছে। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেও কোনো সহীহ বা যয়ীফ হাদীস ও তারীখের কিতাবে এই ঘটনার কোনো প্রকারের উল্লেখ পাইনি। ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোনো মুসলিম সমাজে সফর মাসের শেষ বুধবার পালনের রেওয়াজ বা কাহীনি প্রচলিত আছে বলে আমার জানা নেই।
ক. রাসুল্লাহ(সা)-এর সর্বশেষ অসুস্থতা
রাসুল্লাহ(সা)সফর বা রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখে অসুস্থ হয়ে পরেন এবং কত তারিখে ইন্তিকাল করেন সে বিষয়ে হদীস শরীফে কোনো ইঙ্গিত নেই। অগনিত হাদীসে তাঁর অসুস্থতা, অসুস্থতাকালীন অবস্থা, কর্ম, উপদেশ,তাঁর ইন্তিকাল ইত্যাদির ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।কিন্তু কোথাও কোনো ভাবে কোনো দিন, তারিখ বা সময় বলা হয়নি।কবে তাঁর অসুস্ততার শুরু হয়,কতদিন অসুস্থ ছিলেন,কত তারিখে ইন্তিকাল করেন, সে বিষয়ে কোনো হাদীসে বা তারীখে নিশ্চিত কোন তারিখ উল্লেখ করা হয় নাই।
২য় হিজরী শতক থেকে তাবি ও তাবিয়ী আলিমগণ রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জীবনের ঘটনাবলী ঐতিহাসিক দিন তারিখ সহকারে সাজাতে চেষ্টা করেন।তখন থেকে মুসলিম আলিমগণ এ বিষয়ে অনেক মত পেশ করেছেন।
তাঁর অসুস্থতা সম্পর্কে অনেক মত রযেছে। কউ বলেছেন সফর মাসের শেষ দিকে তাঁর অসুস্থতা শুরু।কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাস থেকে তার অসুস্থতা শুরু। দ্বীতিয় হিজরী শতকের প্রখ্যাত তাবেয়ী ঐতিহাসিক ইবনু ইসহাক বলেন:
রাসুলুল্লাহ(সা) যে অসুস্থতায় ইন্তিকাল করেন, সেই অসুস্থতার শুরু হয়েছিল সফর মাসের শেষ কযেক রাত থাকতে, অথবা রবিউল আউয়াল মাসের শুরু থেকে। (দেখুন ইবনু হিশামের আস-সীরাহ আন নববিয়্যাহ৪/২৮৯)।
কি বার থেকে তাঁর অসুস্থতা শুরু হয়েছিল, সে বিষয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন শনিবার, কেউ বলেছেন বুধবার এবং কেউ বলেছেন সোমবার তাঁর অসুস্থতা শুরু হয়। (কাসতালানীর আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া৩/৩৭৩;যারকানী,শারহুল মাওয়াহিব ১২/৮৩)।
কয়দিন অসুস্থতার পর তিনি ইন্তিকাল করেন , সে বিষয়েও মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন ১০ দিন, কেউ বলেছেন ১২ দিন, কেউ বলেছেন ১৩ দিন, কেউ বলেছেন ১৪ দিন অসুস্থ থাকার পর তিনি ইন্তিকাল করেন। (কাসতালানীর আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া৩/৩৭৩;আল-লাদুন্নিয়া৩/৩৭৩;যারকানী,শারহুল মাওয়াহিব ১২/৮৩)।
সর্বাবস্থায়, কেউ কোনোভাবে বলছেন না যে, অসুস্থতা শুরু হওয়ার পরে মাঝে কোন দিন তিনি সুস্থ হয়ে ছিলেন।বরং অসুস্থ অবস্থাতেই ইন্তিকালের
কয়েকদিন আগে তিনি গোসল করেছিলেন বলে সহীহ হাদীসে বর্ণীত হয়েছে। বুখারী সংকলীত হাদীসে, আয়েশা (রা) বলেন:
রাসুল্লাহ(সা.) যখন আমার গৃহে প্রবেশ করলেন এবং তার অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি বললেন,তোমরা আমার উপরে ৭ মশক পানি ঢাল, যেন আরাম বোধ করে লোকদের নির্দেশেনা দিতে পারি। তখন আমরা এভাবে তাঁর দেহে পানি ঢাললাম। এরপর তিনি মানুষদের নিকট বেরিয়ে গিয়ে তাদেখ রকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং তাদেরকে খুতবা প্রদান করলেন বা ওয়াজ করলেন। (বুখারি ১/৮৩,৪/২৬২৪,৫/২১৬০;হাকেমের আল-মুসতাদরাক ১/২৪৩;ইবনু হিব্বান ১৪/৫৬৬)।
এখানে স্পষ্ট যে, রাসুল্লাহ(সা) তাঁর অসুস্থতার মধ্যেই অসুস্থতা ও জরের প্রকোপ কমানোর জন্য এভাবে গোসল করেন, যেন কিছুটা আরাম বোধ করেন এবং মসজিদে গিয়ে সবাইকে নসীহত করতে পারেন।
এই গোসল করার ঘটনাটি কত তারিখে বা কী বারে ঘটেছিল তা হাদিসে কোনো বর্ণনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।তবে আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অন্যান্য হাদীসের সাথে এই হাদীসের সমন্বয় করে উল্লেখ করেছেন যে, এই গোসলের ঘটনাটি ঘটেছিল ইন্তিকালের আগের বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ইন্তিকালের ৫ দিন আগে। (ফাতহুল বারী ৮/১৪২)। ১২ই রবিউল আউয়াল ইন্তিকাল হলে তা ঘটেছিল ৮ ই রবিউল আউয়াল।
উপরের আলোচনা থেকে আমাদের নিকট প্রতিয়মান হয় যে, সফর মাসের শেষ বুধবার রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুস্থ হওয়া, গোসল করা এবং এজন্য সাহাবীগণের আনন্দিত হওয়া ও দান সদকা করার এ সকল কাহিনীর কোনোরুপ ভিত্তি নেই। আল্লাহই ভাল জানেন। যেহেতু মূল ঘটনাটিই প্রমানিত নয়, সেহেতু সেই ঘটনা উদযাপন করা বা পালন করার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। এরপরেও আমাদের বুঝতে হবে যে, কোন্ আনন্দ বা দুঃখের ঘটনায় আনন্দিত বা দুঃখিত হওয়া এক কথা। আর প্রতি বছর সেই দিনে আনন্দ বা দুঃখ করা বা আনন্দ দিবস বা শোক দিবস উদযাপন করা সম্পূর্ন অন্য কথা। উভয়ের মধ্যে আসমান জমিন পার্থক্য।
রাসুলুল্লাহ(সা)-এর জীবনে অনেক আনন্দের দিন বা মূহর্ত এসেছে, যখন তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হযেছেন, শুকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য আল্লাহর দরবারে সেজদা করেছেন। কোনো কোনো ঘটনায় তার পরিবারবর্গ ও সাহাবীগনও আনন্দিত হয়ে বিভিন্নভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পরের বছর বা পরবর্তী কোনো সময় সেই দিন বা মূহুর্তকে তারা বাতসরিক আনন্দ দিবস হিসাবে উদযাপন করেন নি। এজন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশ বা সাহাবীদের কর্ম ছাড়া এইরূপ কোনোদিন বা মুহুর্ত পালন করা বা এগুলিকে বিশেষ ইবাদত বা বিশেষ সওয়াবের কারণ বলে মনে করার কোনো সুযোগ নেই।
খ.আখেরী চাহার শোম্বার নামাযঃ
উপরের আলোচনা থেকে জানতে পেরেছি যে,সফর মাসের শেষ বুধবারের কোনো প্রকার বিশেষত্ব হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয়নি। এই দিনে কোনোরূপ ইবাদত, বন্দেগি, সালাত , যিকির, দোয়া, দান, সদকা ইত্যাদি পালন করলে অন্য কোনো দিনের চেয়ে বেশি বা বিশেষ কোনো স্ওয়াব বা বরকতলাভ করা যাবে বলে ধারনা করা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা।এজন্য আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী রহ. লিখেছেন যে, সফর মাসের শেষ বুধবারে যে বিশেষ নফল সালাত বিশেষ কিছু সুরা বা আয়াত ও দোয়া পাঠের মাধ্যমে আদায় করা হয় তা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। (আব্দুল হাই লখনবীর আল-আসার,পৃ১১১)।
বিষয়: বিবিধ
১৯৩৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন