তোমরা যারা নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছো

লিখেছেন লিখেছেন ছোটন ২১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১০:০৭:২২ সকাল

একবার এক জুনিয়র সেকেন্ড সেমিস্টারের ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমার ফার্স্ট সেমিস্টারের রেজাল্ট কি?? তার জবাব সন্তোষজনক ছিলোনা। আমি বললাম, এতো খারাপ কেন? ও জবাব দিলো- ভাইয়া বুঝেন না, প্রথমবার ফার্স্ট সেমিস্টারে ভর্তি হইছি ----! আমি বললাম- ফার্স্ট সেমিস্টারে কেউ কি দুইবার ভর্তি হয়নি।

মূল আলোচনায় ৮০।

কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে ২০১৫ সালে এইচ এস সি পাশকৃত ছাত্রছাত্রীদের কাংখিত ভার্সিটি লাইফের প্রথম ক্লাস। প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোতে হয়তো অলরেডি ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। আমার ব্যক্তিগত গবেষনা অনুযায়ী, প্রায় ৭০ ভাগ ছাত্র ছাত্রীই ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পূর্বেই ক্লাস শুরূর পর প্রেম করার পরিকল্পনা করে। একথা ঠিক এসময় ছাত্র ছাত্রীদের এই চাহিদা থাকে টপ লেভেলে। কিন্তু আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার কারনে এ বয়সে বিয়েসাদী দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে এখন এক প্রকার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে ছাত্র ছাত্রীদের। তার উপর আবার কো-এডুকেশান সিস্টেম। স্কুল কলেজে বসার সারি ভিন্ন থাকলেও ভার্সিটিতে সাধারনত তাও নেই। স্রোতের গতিতে চলতে গিয়েই তখন জুটি বাঁধে অনেকেই। সাধারনত প্রত্যেক ব্যাচ শুরুর প্রথম কিছুদিনের মধ্যেই কয়েকটি জুটি তৈরী হয়ে যায়। ক্যান্টিনে, ল্যাবে, লাইব্রেরীতে সব জায়গায় এরা একসাথে। বলে- ফ্রেন্ডশীপ। আমার সাথে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে, তবে আমি মনে করি- একটা ছেলে এবং একটা মেয়ের মধ্যে শুধুমাত্র ফ্রেন্ডশীপ হওয়া সম্ভব না। প্রত্যেক ব্যাচেই সাধারনত তিন চারটি জুটি তৈরী হয়ে যায়। আমি বলি- তিন দুকুনে তিন। এরা প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করে। আর যারা বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের সাথে জড়িত থাকে তারা প্রকাশ্যে কিছু করতে পারেনা। প্রকাশ্যে করা তাদের জন্য বিভিন্ন দিক থেকে বিপদের উৎস। একটি ইসলামী সংগঠনের সাথে জড়িত এমন এক ছাত্রকে (যে প্রকাশ্যেই করতো) অফশান দেয়া হয়েছিলো- হয় সংগঠন ছাড়বা। নাহয় প্রেম করা ছাড়বা। সে সংগঠন ছেড়েছিলো। আল্লাহর মেহেরবানীতে কিছুদিন পর মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়।

তবে এ সকল ক্লাসমেটদের মধ্যে প্রেম বালির বাঁধের মত। খুব কাছ থেকে দুই জোড়ার প্রেম দেখেছিলাম। শুধুমাত্র ফার্স্ট সেমিস্টার লাস্টিং করেছে। সেকেন্ড সেমিস্টার থেকে কেউ কারো চেহারাই সহ্য করতে পারেনা।

এ সময় বয়স থাকে কম। তাই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েও অনেকে হয়ে যায় পরাজিত। এমনকি ইসলামিক মাইন্ডের হলেও। কেমন সিদ্ধান্ত নেয়??? আমি ছেলেদের কথাই বলি।

ওমুক মেয়েটিকে খানিকটা ভালো মনে হয়। তাই তার সাথে পড়াশুনার বিষয় নিয়ে আলাপের জন্য যায়। যদি অন্য কোণ উপায় না থাকে তাহলে এটাকে আমি দোষ বলছি না। কিন্তু যখন আরো অনেক ছেলের কাছ থেকেই হেল্প নেয়ার সুযোগ আছে, তখন তার কাছ থেকে হেল্প নেয়ার উদ্দ্যেশ্য কি?? সম্ভবত এর কুরআনিক একটা টার্ম আছে- খুতওয়াতুত শাইতয়ান। শয়তান এভাবে মানুষকে পথ দেখায়। একজন ইমানদার ছেলে বা মেয়েকে শয়তান প্রথমেই জেনার কথা বললে সে নিঃসন্দেহে তা করতে অস্বীকার করবে। এভাবে শয়তান প্রথমে একজনকে আরেকজনের সাথে পরিচয় করায়। এদের মধ্যে ভাব সৃষ্টি করে। এরা একসাথে গ্রুফ স্টাডি করে। ক্যান্টিনে একসাথে খায়। এরপর হাতধরাধরি করে। একজন আরেকজনকে আদর করে দেয়। এভাবে শয়তান তার অভিস্ট লক্ষ্যে এদের কিভাবে পৌঁছিয়ে দেয়, তা তারা ধরতেই পারেনা।

এ ধরনের পরিবেশের মধ্যে থেকে নিজেকে সেইফ রাখার জন্য আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ থাকবে, কোন না কোন একটা ইসলামী ছাত্র সংগঠনের সাথে নিজেকে যুক্ত করা। হোক সেটা ছাত্র শিবির বা আহলে হাদীস যুব সংঘ বা তাবলীগ জামায়াত বা যার যেটা ভালো লাগে। এসব সংগঠনের সাথে থাকলে কুরআন হাদীস চর্চার একটা ধারা বজায় থাকে। আর এটা চলমান থাকলে শয়তান সহজে কাউকে কাবু করতে পারেনা। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যখনই কুরআন হাদীস চর্চা কমে গেছে, তখনই কোণ না কোন মেয়ের কথা মাথায় বেশ খুঁটখুঁট করেছে। কারন এটা স্বাভাবিক। এক সাইডে না যেতে পারলে আপনাকে অপর পাশে যেতেই হবে। পৃথিবীতে প্রেম করে নাই, এমন লোক বহু পাবেন। কিন্তু প্রেমে পড়ে নাই এমন কাউকে খুজে পাবেন কিনা আমার সন্দেহ।

দ্বিতীয় কথা হলো- যে যেই সাবজেক্টের, তার সেই সাবজেক্টের ব্যাপারে মিনিমাম নলেজ থাকা বাঞ্চনীয়। ফার্মেসীতে গ্র্যাজুয়েশান কমপ্লিট করা আমার পরিচিত একজন একবার প্রশ্ন করলো, স্ট্রোক কোথায় হয়েছে??- হার্টে? নাকি মাথায়??

একজন এম বি বি এস ডাক্তার এক ফার্মাসিউটিক্যালসের এরিয়া ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলো-HDL কি কাজ করে??

অথচ ওনারা যে সাবজেক্টের উপর ডিগ্রিধারী, এগুলো সে সাবজেক্টের একেবারে ওয়ান-টু। ওনাদের কাছ থেকে এ প্রশ্নগুলো আসার মানে হচ্ছে ওনারা দেশ ও জাতির শত্রু। এরা যেখানটায় যাবে, সেখানেই জাতির ক্ষতি করবে।

ভার্সিটির সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো ফেল করা। এ কঠিন কাজটিও কেউ কেউ করে। সাধারনত পরীক্ষার আগের কিছুদিন পড়াশুনা করলেই মোটামুটি রেজাল্ট করা যায়। কিন্তু এবোকাগুলার সে সময়টুকুও থাকেনা। তাই হয় ফেল করে অথবা রেজাল্ট একেবারে খারাপ করে। যে রেজাল্ট নিয়ে চাকুরীর বাজারে গিয়ে প্রতি পদে পদে ধরা খায়। কিন্তু তখন আর ফিরে আসার অফসান থাকেনা।

একটা প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে ফার্মেসীতে গ্র্যাজুয়েশান কমপ্লিট করা একজন এখন তার লেভেলের অনেক নীচের পোস্টে চাকুরী করে। আমাকে মাঝে মধ্যে ফোন দেয়- অল্প বেতনের হলেও তাকে যদি কোথাও একটু ব্যবস্থা করে দেয়া যায়!!! বাট, ওর যে রেজাল্ট তা দিয়ে একেবারে শেষ দিকের পজিশানের ফার্মাসিউটিক্যালসগুলোতেও এপ্লাই করা সম্ভব হবে বলে মনে হয়না। খুব স্ট্রং লবিং থাকলে ভিন্ন কথা। ওর ওটা নাই। ও এখন হয়তো বুঝতে পারছে পড়াশুনার গূরুত্ব। তবে এখন আর ফিরে যাবার সুযোগ নাই।

শুধুমাত্র ভার্সিটিতে আসলো আর গেলো। এটা ওয়ান টু’র পোলাপানের কাজ। পরবর্তী জীবনের জন্য নিজেকে গঠন করে নিতে হয় এ ভার্সিটি লাইফে। তাই এখানকার ছাত্রসমাজকে ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি জাতি গঠনেও ভূমিকা রাখতে হবে।

এ ভার্সিটির ছাত্ররাই পারবে যুদ্ধবিহীন কোন একটা জাতিকে ধ্বংস করতে। জাতির মেরূদন্ড ভেঙ্গে দিতে। বিরোধীরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে। ছাত্র সমাজ সচেতন না হলে সিগারেটের ধোঁয়ার মতই উড়ে যাবে- ধর্ম, দেশ ও জাতি।

সর্বশেষ কথা হচ্ছে- নিজ সেক্টরে সব চাইতে ভালো চাকুরীটি পাবার জন্য ভার্সিটিতে ভর্তির প্রথম দিন থেকেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। সিনিয়রদের সাথে এবং এখান থেকে পাশ করে যারা বিভিন্ন সম্মানজনক পদে আছে তাদের সাথে স্ট্রং সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। নারী লোভী ও লুইচ্চা টাইপের সিনিয়রদের সাথে সম্পর্ক ভালো রেখে তাদের কৌশলে এড়িয়ে চলতে হবে। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে শালা-দুলাভাইয়ের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

আল্লাহর রহমত ও নিজের চেষ্টা থাকলে অতীতের ফলাফল যেমনই হোক না কেন, এ অনার্স লাইফের ফলাফলই একজন ছাত্রকে সফলতার শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।

লেখা শেষ করে ফেললাম। তবে হঠাত আরেকটি কথা মনে হলো। আমার এক বড় ভাই। তিনি বলেছিলেন, তিনি যেদিন ভার্সিটিতে ভর্তি হলেন, সেদিনই চিন্তা করলেন- এখানে ওনাকে পাঁচ বছর থাকতে হবে। এ পাঁচ বছরে উনি পবিত্র কুরআন হিফজ করবেন। ওনার রূমমেট বলেছিলো- রাতের পর রাত জেগে উনি কুরআনের তাফসীর পড়তেন। উনি যখন কোণ ইসলামিক আলোচনা করতেন, তখন মনে হতো উনি মাদ্রাসা শিক্ষিত অনেক বড় আলেম। অথচ আমাদের মতই উনি একজন ভার্সিটি পড়ুয়া ছিলেন।

বিষয়: বিবিধ

১৯১৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357358
২১ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:২৮
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

পড়লাম, যথার্থ বলেছেন, সহমত

দোয়া করি, জাযাকাল্লাহ..
357367
২১ জানুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০১:২৪
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন : আমি বললাম- ফার্স্ট সেমিস্টারে কেউ কি দুইবার ভর্তি হয় নাকি ??


কিন্তু যখন আরো অনেক ছেলের কাছ থেকেই হেল্প নেয়ার সুযোগ আছে, তখন তার কাছ থেকে হেল্প নেয়ার উদ্দ্যেশ্য কি?? সম্ভবত এর কুরআনিক একটা টার্ম আছে- খুতওয়াতুত শাইতয়ান

যখনই কুরআন হাদীস চর্চা কমে গেছে, তখনই কোণ না কোন মেয়ের কথা মাথায় বেশ খুঁটখুঁট করেছে। কারন এটা স্বাভাবিক। এক সাইডে না যেতে পারলে আপনাকে অপর পাশে যেতেই হবে।

ফার্মেসীতে গ্র্যাজুয়েশান কমপ্লিট করা একজন একবার প্রশ্ন করলো, স্ট্রোক কোথায় হয়েছে??- হার্টে? নাকি মাথায়??



নারী লোভী ও লুইচ্চা টাইপের সিনিয়রদের সাথে সম্পর্ক ভালো রেখে তাদের কৌশলে এড়িয়ে চলতে হবে। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে শালা-দুলাভাইয়ের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
;Winking
হা হা হা.

মজার মধ্যে দিয়ে বেশ ভালোভাবে বুঝি্য়ে দিয়েছেন

জাঝাক আললাহ খাইরান
357391
২১ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : একেই বোধ হয় বলে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File