ইফতার নিয়ে কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন তট রেখা ০৮ জুন, ২০১৬, ১০:০৮:৫৫ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সতেজ খেজুর দিয়ে সাওম ভঙ্গ করে সালাতে যেতেন। যখন সতেজ খেজুর পাওয়া যেতনা, তখন তিনি শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যখন শুকনো খেজুরও পাওয়া যেতনা, তখন তিনি কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন [ সুনান আবু দাউদ (২৫৩৬) ]
উপরোক্ত হাদিসে জানা যায় যে, কি দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইফতার করতেন। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, তিনি ইফতার করতে তড়িঘড়ি করতেন, যখনই মাগরিব সালাতের সময় উপনীত হতো বা সুর্য অস্ত যেত তখনই ইফতার করতেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু পরিস্কার ভাবে বলেছেন যে, তিনি খেজুর খেয়েছেন, “মাগরিবের সালাতে যাওয়ার আগে।”
প্রকৃতপক্ষে, নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাওম ভঙ্গ করতে উৎসাহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “মানুষ ততদিন পর্যন্ত কল্যাণের উপর থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তারা ইফতার তাড়াতাড়ি করবে।
তিনি ইফতারের সময় নিম্নের দোয়া পড়তেনঃ “ আল্লাহর রহমতে তৃষ্ণা নিবারন হয়েছে, রক্ত পরিশুদ্ধ হয়েছে এবং পুরস্কার মঞ্জুর করা হয়েছে” [ সুনান আবু দাউদ (২৩৫৭), আলবানি সহীহ সুনান আবু দাউদে একে হাসান হাদীস বলেছেন ]
রসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর অভ্যাস ছিলো, তিনি খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, যেমন আমরা আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদিসে দেখতে পেয়েছি। এটা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি যে, বিজোড় সংখ্যক খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত।
কিন্তু, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের সকালে কখনোই কিছু খেজুর না খেয়ে বাইরে যাননি, এবং সেই খেজুর গুলো সংখ্যায় বিজোড় হতো। [ সহীহ আল বুখারী (৯৫৩) ]
আরো একটি হাদিস আছে যার বর্ণনা কারী হিসাবে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাম বলা হয়ে থাকে, তা হলো এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ যে খেজুর পেলো সে যেন, খেজুর দিয়ে সাওম ভঙ্গ করে, আর যে তা পেলোনা, সে যেন পানি দিয়ে সাওম ভঙ্গ করে, আর নিশ্চয়ই পানি হলো পবিত্র করার মাধ্যম। ” [ সুনানে তিরমিযী (৬৯৪) ]
তবে হাদিসটি দুর্বল।
তবে যাই হোক না কেন, এটা নিশ্চিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর অনুকরণে খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত, যদি তা পাওয়া যায়। তবে একজন মুসলিম চাইলে অন্য যে কোনো হালাল খাদ্য দিয়ে ইফতার করতে পারেন।
মাগরিবের আগে ইফতারে খাদ্যের ধরণ এবং পরিমান নিয়ে কোনো কঠিন কোনো বিধি- নিষেধ নেই, যদিও এটা পরিস্কার যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সেই সময় অল্পই খেতেন।
কিছু মানুষের কাছে এটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সালাতের আগে, খেজুরের সাথে সাথে ফাস্ট ফুডের মত আরো কিছু খাবার যেমন, সিঙ্গাড়া, সামোচা কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খাওয়া। এই খাদ্য গুলো খেজুরের সাথে নানা মসজিদে, এমনকি মদীনায় নবীর মসজিদেও ইফতারে পরিবেশন করা হয়। এই রীতিতে কোনো সমস্যা নেই। মূল কথা হলো একজন মুসলিম সময় সম্পর্কে সচেতন হবে। তারা পানাহারে নিজেদের এতটাই মশগুল করে রাখবে না যে, সালাত পরে আদায় করতে হয় কিংবা এর প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা হয়। পুরুষদের জন্য এটা একটি ভুল যে, শুধু মাত্র ইফতার খেতে ব্যাস্ত থাকার কারণে মসজিদে জামাতে সালাত আদায় না করা। ইফতার হলো তা যা মুসলিমদের সালাতের পূর্বে সাওম ভঙ্গের জন্য খাওয়া উচিৎ। সালাতের পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত তারা যে কোনো হালাল খাদ্য ভক্ষন করার ব্যাপারে স্বাধীন।
আল্লাহ বলেনঃ
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَآئِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُواْ مَا كَتَبَ اللّهُ لَكُمْ وَكُلُواْ وَاشْرَبُواْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّواْ الصِّيَامَ إِلَى الَّليْلِ وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَقْرَبُوهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
অর্থঃ রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরন কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।
[সুরা বাকারাঃ আয়াত নং-১৮৭]
খাবার গ্রহণের অগ্রাধিকার ভিত্তিক কোনো সময় নেই, শুধু মাত্র সেহরী খাওয়ার সময় ব্যাতিত। অন্যথায় রাতের যে কোনো সময় মুসলিমরা খাবার গ্রহণ করতে পারে। কিছু মানুষ মাগরিব এর সালাত এর পর পেট পুরে খেতে পছন্দ করে। আবার অনেকে তারাবী পড়ার পর মূল খাবার খায়। মানুষের নানা রকম ব্যাক্তিগত পছন্দ থাকে। এ ব্যাপারে পরিবার ও সংস্কৃতি ভেদে নানা রকম রীতি পরিলক্ষিত হয়। তবে একজন মুসলিম রমজানে খাবার ব্যাপারে নুন্যতম সেই পরিমিতি বোধ দেখাবে যা সে, বছরের অন্য সময় দেখিয়ে থাকে, যদি সে এর চেয়ে বেশী পরিমিতি বোধ দেখাতে না পারে। তারা রমজানের রাত্রী গুলোতে খাবার নিয়ে অধিক ব্যস্ত থাকা পরিহার করবে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আদম সন্তান পেটের চেয়ে এমন কোনো পাত্র নাই, যা তারা জঘন্য ভাবে পূর্ণ করে। আদম সন্তানের পিঠ সোজা রাখার জন্য কয়েকটি দানায় যথেষ্ঠ। তাকে যদি বেশী খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ তার খাদ্যের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ বাতাসের জন্য নির্ধারণ করে নেয়। [ সুনানে তিরমিযী (২৩৮০) এবং মুসনাদে আহমদ (১৭১৮৬)। আলবানী তার সহীহ আল জামীতে হাদিস দুটিকে সহীহ বলেছেন ]
সুত্রঃ http://www.islamtoday.com
(ইংরেজী থেকে অনুদিত)
বিষয়: বিবিধ
১৬১১ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
@রিদওয়ান কবির সবুজ
যথার্থ বলেছেন, সহমত
যাহোক, হালাল খাবার ভরপেট খেলেও কোন সমস্যা নেই- সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে যার যেমন শারীরিক প্রয়োজন, ইসলাম এতে আপত্তি করেনা- যতক্ষণ অন্যান্য ইবাদাতে অসুবিধার কারণ না হয়।
এই রমজানে খেজুরে দাম রাখা উচিত ছিলো, পানির দামে। ( হাফ লিটার -১০ টাকা)
কিন্তু খেজুরের যেই দাম, খাবে দুরের কথা,
হাত ই দেয়া যায় না।
মগুনির হাত বড়
আমি যখন আপনাকে দাওয়াত দেই, তখন ধরেই নিয়েছিলাম আপনি আসবেন না, তবুও কিঞ্ছিত আশা নিয়ে দাওয়াত করেিছলাম। আর আপনি এসে ধন্য করলেন।
আর কি বলবো, এখন ভালো করে মনে হচ্ছে রোজা আছি।
খুব মন দিয়ে পড়েছি। ভালো লিখেছেন। আপনাদের প্রতিটি লেখা থেকেই কিছু না কিছু শিখছি।
তাহলে আল্লাহ আপনাদের ভালো রাখুন এই দোয়া
আপনার যেখানে শুরু, সেখানে আমাদের শেষ। ইফতারের প্রস্তুতি নেয়া করবো।
আচ্ছা, আসলেই কি আপনি সাত সমূদ্র তেরো নদী দূরে? আহ, কথাটা প্রেমের ক্ষেত্রে কত চমৎকার ভাবেই না বিবৃত হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন