বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ১০ম পর্ব (ডিভাইড এন্ড কঙ্কার)
লিখেছেন লিখেছেন তট রেখা ০১ মে, ২০১৬, ১০:০২:৩১ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
فَمَا آمَنَ لِمُوسَى إِلاَّ ذُرِّيَّةٌ مِّن قَوْمِهِ عَلَى خَوْفٍ مِّن فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِمْ أَن يَفْتِنَهُمْ وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِي الأَرْضِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الْمُسْرِفِينَ
অর্থঃ আর কেউ ঈমান আনল না মূসার প্রতি তাঁর কওমের কতিপয় বালক ছাড়া-ফেরাউন ও তার সর্দারদের ভয়ে যে, এরা না আবার কোন বিপদে ফেলে দেয়। ফেরাউন দেশময় কর্তত্বের শিখরে আরোহণ করেছিল। আর সে তার হাত ছেড়ে রেখেছিল। (সুরা ইউনুসঃ আয়াত-৮৩)
৯ম পর্ব
৯ম পর্বের পর------
ইসলামী স্কলাররা বলেন দাজ্জালের রূপক হলো ফেরাউন, যে মুসা আলায়হি আসসালাম এর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছিল। ফেরাউন ছিলো স্বৈরাচারী শাসক, যে নিজেকে এমন এক অবস্থানে উন্নীত করেছিল, যেখান থেকে সে নিজেকে ঈশ্বর বলে ঘোষণা দেয়। সে যাদুকরদের ব্যবহার করে মায়াজাল তৈরী করে মানুষকে বিভ্রান্ত করত এবং যারা তার মিথ্যা ধর্ম মেনে নেয়নি, তাদের নির্যাতন করত। আজ ফ্রি-মেসন্সরা অন্য ধরনের যাদুর প্রয়োগ করেন । যে মায়া তারা তৈরী করেন তা গোপণ অথবা প্রকাশ্যে চলচ্চিত্র, টিভি, কার্টুন, সঙ্গীত বা অন্য কোনো উপাদানের মাধ্যমে তাদেরই জ্বালানীতে চালিত মিডিয়া যন্ত্রে প্রচারিত হয়, এবং এই মিডিয়া যন্ত্রই সার্বক্ষণিক ভাবে ইসলামের চরিত্রকে ধ্বংস করার জন্য অপপ্রচার করে যাচ্ছে।
দাজ্জালের আর একটি পন্থা অবলম্বন করে তারা আল্লাহর বিরূদ্ধেও সরাসরি কুৎসা গায়ছে। যারা তাকে অনুসরন করবেনা, তাদের জন্য দাজ্জাল হবে একজন অত্যাচারী জালিম। আল্লাহ তাকে এই ক্ষমতা দেবেন যে, সে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করতে পারবে বা প্রয়োজনে ফসল পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারবে, এবং মানুষ তাকে অনুসরণ করছে, কি করছেনা এর সাপেক্ষে সে তাই করবে।
একই ভাবে যদি তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলো যদি কথা না শুনে ফ্রি-মেসোনীয় পাশ্চাত্য বিশ্ব-ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তাদের জিম্মি করছে। আই এম এফ এর দেয়া অসংখ্য উন্নয়ন ঋন দিয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলো মুঠোয় নিয়ে আসা হচ্ছে, এবং এমন সুদের হার আরোপ করা হচ্ছে , যাতে করে তারা আর কখনো হাতের মুঠো থেকে বেড়িয়ে না আসতে পারে। তাদের হয় সমর্পনে বাধ্য করা হছে, নতুবা অভাব ও দারিদ্রের গ্লানি বরণ করতে হচ্ছে। এছাড়াও আরো একটি পথ নির্মিত হচ্ছে, যাতে করে দাজ্জাল খাদ্য শস্যের নিয়ন্ত্রণ নিজের মুঠোয় নিতে পারে। আর তাহলো বহু জাতিক কোম্পানীগুলোর মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে, এই বীজের বৈশিষ্ট্য এমন যে, কৃষকরা এই বীজ দ্বারা উৎপাদিত ফসল থেকে পরবর্তী মৌসুমের জন্য বীজ সংগ্রহ করতে পারবেনা যা তারা আবহমান কাল ধরে করে আসছে, তাদের আবার বহুজাতিক কোম্পানী গুলোর কাছে ধর্না দিতে হবে। এই ভু জাতিক কোম্পানীগুলোর অধিকাংশই ইহুদী নিয়ন্ত্রিত। দাজ্জালের আগমণের পুর্বে বা পরে কোনো সময় কৃষকরা তাদের শর্ত না মানলে বীজের সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে, আর এই ভাবে খাদ্য শস্যের নিয়ন্ত্রন সরাসরি দাজ্জাল বা দাজ্জালের পুরোগামীদের হাতে চলে যেতে পারে। আরো একটি পথে দাজ্জাল মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করবে আর তা হলো দাজ্জাল তাদের মায়া জালে বিভ্রান্ত করবে ( এটা যাদু বিদ্যা বা প্রযুক্তি উভয়ের মাধ্যমেই হতে পারে) অথবা তাদেরকে শক্তি প্রয়োগে কিংবা রোগের বিস্তার ঘটিয়ে বাধ্য করবে তার প্রতি অনুগত হতে। তার সামর্থ্য থাকবে রোগ ছড়ানোর বা নিরাময়ের। প্রকৃত পক্ষে সে ঈশ্বরের ভুমিকায় অভিনয় করবে এবং তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে মায়াজালে বিভ্রান্ত করে মানুষকে তার মিথ্যা ধর্মের দিকে নিয়ে আসবে। ফ্রি-মেসন্সরা একই ভাবে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে । প্রাপ্ত তথ্যাদি প্রমাণ করে যে, অনেক ভাইরাস আছে যে গুলো সামরিক গবেষনাগারে প্রস্তুত বা বিবর্তিত করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে তা মানুষের উপর পরীক্ষা মূলক ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে , এবং এটা এখন প্রমাণিত যে, এইডস হলো মেসনীয় পাশ্চাত্যের তৈরী জীবানু অস্ত্র যা তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে।
দাজ্জাল আল্লাহর সকল সিফাত বা গুণগুলোকে অস্বীকার করবে এবং তা নিজের বলে দাবী করবে। এই ঔদ্ধত্য ফ্রি-মেসন্সরাও প্রদর্শন করছে, তারা আল্লাহর তৈরী আইনকে মানুষের তৈরী আইন দ্বারা প্রতিস্থাপনের চেষ্টায় লিপ্ত এবং এর দ্বারা তারা সারা পৃথিবীতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দাবী করে । তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখছে মানুষ কি করছে, কি শুনছে। তারা জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করছে , যাতে করে তারা তাদের নির্ধারিত মিথ্যা মানে পৌঁছতে পারে। তাদের ঔদ্ধত্যের কোনো সীমা নেই, তারা নিজেদের তৈরী আইন ছাড়া কোনো আইন মানেনা। এরা হলো দাজ্জালের পুরোগামী, এরা হলো ফ্রি-মেসন্স।
মহানবী সাল্লাহি আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, এমন এক সময় আসবে যখন সারা পৃথিবী একত্রিত হয়ে মুসলমানদের ধ্বংসের জন্য পরিকল্পণা করবে, তা এমন হবে যে, যেন তারা ভোজের আয়োজনে একটি খাবার টেবিলের চারপার্শ্বে একত্রিত হবে। আজকে বিশ্বের জাতি গুলো জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদের গোল টেবিলের চারিদিকে বসে তাই করছে। তিনি আরো বলেন দাজ্জালের সময়ে বছর গুলো হবে বিশৃংখলার, মানুষ মিথ্যাকে সত্য মনে করবে এবং সত্যবাদীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, এবং যে আল্লাহর বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করবে, জনজীবনে তাদের কথা গ্রহণযোগ্যতা পাবে। আজ যখন দাজ্জালকে উপলব্ধি করার সময় , তা একটি বিশৃংখল সময়ও বটে। দাজ্জালের পুরোগামীদের দ্বারা সজ্জিত এই বিশ্বব্যবস্থা বহু মুসলমানকে সম্পদ ও ইন্দ্রিয়জাত সুখ-স্বাচ্ছন্দ দিয়ে মোহাবিষ্ট করে সত্য থেকে দুরে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বস্তুতান্ত্রিকতার জালে আবদ্ধ করেছে। এটি একটি কষ্টদায়ক বিশ্বাসঘাতকতা। ফিতনা ও পরিক্ষার এই সময়টি এমন যেন, এক জন অতিকায় দৈত্য মুরতাদ এবং মুনাফিকদের থেকে সত্যিকার বিশ্বাসীদের আলাদা করছে। অনেকেই দাজ্জালের দর্শন অনুযায়ী তাদের জীবন যাত্রাকে বেছে নিয়েছে, তাদের মুসলমান নামটুকু সম্ভবত পোশাকের মত বা ব্যাজের মত পরিচিতি বহন করছে, কিন্তু অন্য সবদিক দিয়ে সর্বান্তকরণে সেই পদ্ধতি বেছে নিয়েছে, যা ইসলামকে নির্মূল করতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই পদ্ধতি গ্রহণ তাদের কোনো কাজে আসেনি, যখন সার্বরা গর্ভবতী নারীদের পেট চিড়ে গর্ভের শিশুকে বের করে নিয়ে আসে এবং তাদের হত্যা করে। সেই একই ব্যবস্থা কাশ্মীরে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকে মহিলা এবং যুবতীরা ধর্ষনের শিকার হয়, সেই ব্যবস্থা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে, যখন অসহায় মায়ের সামনে থেকে তার সন্তানকে রাত্রে টেনে- হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়, যে কখনো আর ফিরে আসেনা । একই ঘটনা ইরাক, সিরিয়া কিংবা ফিলিস্তিনে। তাদের দোষ হলো তারা শুধু প্রতিবাদ করেছিলো, নিজ গৃহে কেন তারা আজ শরনার্থী। সেই ব্যাবস্থা সেই স্বৈরাচারীদের কিছুই বলেনি যারা নারী ও শিশুদের নিপীড়ন করেছে, কারণ তারা মেসনদের সুরের তালে তালে নৃত্য করেছে। যারা এই ব্যাবস্থাকে পছন্দ করেছে আবার দাবি করে তারা আল্লাহ এবং তার রসুলকে ভালোবাসে, কিন্তু তারা তাঁর আনিত ( রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ) জীবন ব্যবস্থা ইসলাম কে ঘৃণা করে। তারা তাদের জীবনে দাজ্জালীয় শয়তানী ব্যবস্থাকে ভাড়া করেছে, তারা আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করে সেখান থেকেই বিধান তালাশ করে, সেখান থেকেই পার্থিব পুরস্কার খোঁজে। তারাই ঐ সকল লোক, যারা নিজেদের উপর আল্লাহর ক্রোধকে আমন্ত্রন জানায়।
দাজ্জালের পুরোগামীরা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে , যাতে করে তারা ইসলাম কে হয় প্রত্যক্ষ ভাবে সামরিক পন্থায় বা অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমে ধ্বংস করতে পারে, নতুবা পরোক্ষ ভাবে আদর্শিক লড়াইয়ে পরাস্ত করতে পারে। তারা মুসলিম উম্মাহর অন্তরে জাতীয়বাদ এবং বর্ণবাদ প্রবিষ্ট করে তাদের বিভক্ত করে বিজিত করেছে। তাদের সবচেয়ে বড় ভয় মুসলমানদের একতা এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর আনিত পয়গাম এর পুণর্জাগরণ যা মানব জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছে, আর তাই তারা যা কিছু করে, তার উদ্দেশ্য এ কে প্রতিরোধ করা। তারা মুসলিম দের মধ্যে বিরোধ জাগ্রত করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারা তাদের নিজস্ব ভাষাকে সার্বজনীন ভাষা হিসাবে চালু করে, তা সবাইকে শিখতে বাধ্য করেছে। অপরদিকে আরবী ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনোয়তা উপেক্ষা করে একে এর শিক্ষা বন্ধ করে বা গুরুত্ব কমিয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির ভাষায় নামিয়ে এনেছে। তারা মুসলমানদের শুধু তেল প্রাপ্তির খনি হিসেবেই ব্যবহার করেছে।
র্যা ন্ড কর্পোরেশন নামক একটি আমেরিকান NGO যার কাজ আমেরিকার বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে সহায়তা করা, তারা মুসলমানদের চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের কি ভাবে মোকাবেলা করতে হবে তার পদ্ধতি বাতলে দিয়েছে। চারটি শ্রেণী হলোঃ
১। FUNDAMENTALIST বা মৌলবাদী
২। TRADITIONALIST বা রক্ষণশীল
৩। MODERNIST বা আধুনিক
৪। SECULARIST বা ধর্মনিরপেক্ষ ( ধর্মহীন)
(চলবে ইন শা আল্লাহ)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় - ১ম পর্ব ( ছায়ার ভেতরে বসে)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়-২য় পর্ব ( রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অর্জন)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় -৩য় পর্ব ( মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৪র্থ পর্ব ( সাহিত্য ও চলচ্চিত্র)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৫ম পর্ব ( মানবজাতির এলিয়েন তত্ত্ব)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় - ৬ষ্ঠ পর্ব (বৈশ্বিক নিরাপত্তা বাহিনী)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৭ম পর্ব ( সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৮ম পর্ব ( অর্থনীতি ও জনসংখ্যা)
বিঃদ্রঃ লেখাটি আগে ভিন্ন নামে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু সিরিজটি সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। নতুন অনেক পাঠকের জন্য তাই পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
RELATED READINGS:
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন- ইহুদী? ফ্রী-মেসন? - শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-৩)
বিষয়: বিবিধ
১৭২৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন