বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৮ম পর্ব (অর্থনীতি ও জনসংখ্যা)
লিখেছেন লিখেছেন তট রেখা ২৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৫৫:৫০ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
وَإِذْ نَجَّيْنَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوَءَ الْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَاءكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءكُمْ وَفِي ذَلِكُم بَلاء مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ
অর্থঃ আর (স্মরণ কর) সে সময়ের কথা, যখন আমি তোমাদিগকে মুক্তিদান করেছি ফেরআউনের লোকদের কবল থেকে যারা তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দান করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদিগকে অব্যাহতি দিত। বস্তুতঃ তাতে পরীক্ষা ছিল তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, মহা পরীক্ষা।
(সুরা বাকারাঃ আয়াত ৪৯)
৭ম পর্ব
৭ম পর্বের পর-----
একক বৈশ্বিক সরকারের মাধ্যমে পুরো বিশ্ব নিয়ন্ত্রণে ফ্রিমেসন্সদের পরিকল্পণা বাস্তবায়নে যা দরকার, তা হলো সমগ্র বিশ্বে একটি একক অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করা, পূর্ণ বিশ্ব আইন ব্যাবস্থা, একক রাজনৈতিক আদর্শ এবং একটি একক সামরিক ব্যাবস্থা গড়ে তোলা। ১৯৫৭ সালের ২৫শে মার্চ ইউরোপীও ইউনিয়ন(EEC) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একক বিশ্ব সরকার প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ অর্জিত হয়। তখন থেকেই EEC নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার (NWO) প্রতিষ্ঠার একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র হিসাবে কাজ করছে। চলাফেরার স্বাধীনতার মৌলিক ব্যাপারটা এখানে গ্রহণ করা হয় এবং সদস্য রাস্ট্রের নাগরিকেরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে একটি একক রাস্ট্রের মতই চলাচল করতে সক্ষম। একটি একক অর্থ ব্যাবস্থা সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ইউরো কে তাদের মুদ্রা হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে, একটি কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট আছে যা সদস্য রাস্ট্রের সার্বভৌম সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে থাকে, একটি একক রাজনৈতিক ও শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় তারা অনেক ক্ষেত্রে অগ্রসর হয়েছে। এর অর্থ ইউরোপীয়রা একটি একক রাস্ট্র, একক মুদ্রা, একক শাসনতন্ত্র, একক অর্থনীতি সর্বোপরী একটি একক সরকার পেতে যাচ্ছে, আর সে সরকারটি অবশ্যই হবে মেসন্সদের সরকার। EEC এর প্রধান তিন খেলোয়াড় হচ্ছে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানী ( যদিও অতি সম্প্রতি ব্রিটেন EEC থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছে, এটা সম্ভবত পরিকল্পণার সাময়িক পরিবর্তন) । ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বহু আগে থেকেই ফ্রিমেসন্সদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেন এবং ফ্রান্স পুরো জার্মানী দখল করে নেয়, এদের সাথে আরো ছিলো আমেরিকা ও রাশিয়া ২টি মেসোনিক রাস্ট্র। দেশকে দুই ভাগ করে পশ্চিম জার্মানীকে নিয়ন্ত্রণ করত ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং যুক্তরাস্ট্র অপর দিকে পূর্ব জার্মানী নিয়ন্ত্রিত হতো সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারা। বার্লিন ওয়াল পতনের মাধ্যমে দুই জার্মানী একত্রিত হয়েছে। ইউরোপ শুধু নিজে মেগা রাস্ট্র হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে তা নয়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এরকম অর্থনৈতিক এলাকা তৈরী হয়েছে যা এক একটি মেগা রাস্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যেমন, উত্তর আমেরিকাতে আছে NAFTA , দক্ষিণ –পূর্ব এশিয়া তে ASEAN ইত্যাদী যা হয়ত কালের পরিক্রমায় EEC এর পথে হাঁটছে। NAFTA এবং EEC একত্রিত হলে, তা ফ্রিমেসন্সদের জন্য হবে অনেক বড় অর্জন এবং তা অবশিষ্ট বিশ্বকে তাদের সাথে যুক্ত হতে বাধ্য করবে।
টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে যুক্তরাস্ট্র সেই কাজটি এগিয়ে রাখছে। বিশ্ব-বাণিজ্য সংস্থা এখানে প্রভাবকের ভূমিকায় কাজ করছে। ফ্রিমেসন্সরা এই বিশ্বরাস্ট্রের কর্ণধার হতে চাইলে তাদের আর একটি বাঁধা আছে, আর তা হলো তাদের জনসংখ্যা। ১৯৭০ দশকে এটা পরিস্কার হতে থাকে যে, আমেরিকা এবং ইউরোপের শেতাংগ জনসংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে , কিছু করা না গেলে তৃতীয় বেশ্বের জনসংখ্যা অনেক বড় পর্যায়ে পৌছাবে যা মেসনিক রাস্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেবে। পশ্চিমা রাস্ট্রের উৎপাদন শক্তি ও ভোক্তা উভয়ই কমে যাবে যা তাদের তৃতীয় বিশ্বের উপর নির্ভরশীল করে তুলবে। যে কোনো ভাবে এই গ্যাপ পুরণ করতে হবে যাতে করে তৃতীয় বিশ্বের জনসংখ্যার উপর পশ্চিমা বিশ্ব তথা ফ্রিমেসন্সদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় থাকে।
১৯৭০ দশকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার গ্লোবাল ২০০০ রিপোর্ট স্বাক্ষর করেন, এই রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বের সকল সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে অশ্বেতাংগ জনগোষ্ঠির জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। পশ্চিমাদের শ্রেষ্ঠত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য রিপোর্টে ২০০০সালের মধ্যে অন্তত পক্ষে ২ বিলিয়ন মানুষকে এই ধরা পৃষ্ঠ হতে নির্মূল করার কথা বলা হয়। এটা কৌতুহলোদ্দীপক যে, ৭০ এর দশকে এইডস মহামারি হিসাবে ছড়িয়ে পরে এবং তৃতীয় বিশ্বে এক বিরাট সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারায়, তা ছাড়া তা যুক্তরাস্ট্রে ক্রমবর্ধ্মান কৃষ্ণাঙ্গ এবং হিস্পানিক জনগোষ্ঠির মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায়। এটা বলা হয়ে থাকে যে, এ রোগের উৎপত্তির কারন আফ্রিকার এক প্রজাতির সবুজ বানর, পরবর্তিতে এই বানরএর সাথে যৌনক্রিয়া এবং তাদের খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার জন্য মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পরে। সেখান থেকে এই প্রাণঘাতি ব্যাধিটি দাবানলের মত পুরো আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে এবং তার পর বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। এই গল্পটি আসলে ছিল উদ্গিরিত ধোঁয়ার উপরিভাগ। ১৯৮৮ সালের ২রা জুন লস এনজেলেস টাইমস একটি নিবন্ধ ছাপে, তাতে এইডস এর আফ্রিকার সবুজ বানর থেকে উৎপত্তির তত্ত্বকে প্রত্যখান করা হয়। পত্রিকাটি জানায় যে এইডস এর DNA এর গঠণ প্রণালী আফ্রিকান সবুজ বানরের DNA এর সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়, প্রকৃত পক্ষে ভাইরাস্টি প্রাকৃতিক ভাবে কোনো স্থানেই পাওয়া সম্ভব নয় এবং তা শুধুমাত্র মানব দেহের জৈবিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই বেঁচে থাকতে পারে। যদি এই ভাইরাসটি প্রকৃতিতে কোথাও না-ই পাওয়া যায়, তাহলে প্রশ্ন উঠে এই ভাইরাস্টি কোথায় উৎপত্তি লাভ করল ? ৪ঠা জুলাই ১৯৮৪ সালে নয়া দিল্লিতে ‘ The Patriot’ নামক সবাদ পত্রে সর্ব প্রথ এইডস এর উপর সর্ব প্রথম পূর্ণাংগ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, সেখানে বলা হয় এইডস ভাইরাস এক প্রকার জীবানু অস্ত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিজ্ঞানীর বরাতে বলা হয়, এইডস ভাইরাস মার্কিন সেনাবাহিনীর এক গবেষণাগারে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে তৈরি করা হয় এর মূল মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবানু অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করা। এর পর ৩০ শে অক্টোবর ১৯৮৫ সালে সোভিয়েত জার্নাল “Glitter a Liternia Gazetta” একই কথার পুণরাবৃত্তি করা হয় এবং তা আন্তর্জাতিক বিতর্কের সূচনা করে। পশ্চিমা মেসন্সরা এটা একটা কম্যুনিস্ট প্রোপাগান্ডা হিসাবে উড়িয়ে দেয়। যাই হোক ১৯৮৬ সালের ২৬শে অক্টোবর “the Sunday Express” প্রথম পশ্চিমা সংবাদপত্র হিসাবে প্রথম পাতায় কাভার স্টোরী হিসাবে ভারতীয় এবং সোভিয়েত পত্রিকার রিপোর্টকে সত্য বলে প্রকাশ করে, হেডিং ছিল "AIDS made in lab shocks" এই নিবন্ধে ডঃ জন সিল এবং অধ্যাপক জ্যাকব সিগাল বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক এই সিদ্ধান্তে উপণিত হন যে, এইডস ভাইরাস মনুষ্য তৈরি।
এইডসের বিস্তার সারা বিশ্বে একটি টিকা দান প্রোগ্রামের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। ১১ ই মে ১৯৮৭ সালে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বিকৃত সংবাদ পত্র লন্ডন টাইমস একটি নিবন্ধ ছাপে যার শিরোনাম ছিল "Small Pocks Vaccine Triggered AIDS" নিবন্ধটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক মধ্য আফ্রিকার ৭০-৮০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর জন্য সরবরাহ কৃত গুটি বসন্তের প্রতিষেধকের সাথে এই অঞ্চলে এইডসের মহামারির সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে । জাতি সংঘ্যের মেডিকেল শাখা হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রমাণ রয়েছে যে, এইডস হলো জেনেটিক প্রোকৌশলের মাধ্যমে উৎপাদিত ভাইরাস যা বিভিন্ন প্রতিষেধক প্রকল্পের মাধ্যমে তৃতীয় বেশ্বের দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এটা হলো নির্দোষ দুর্বলদের সাথেএকটি জীবাণু যুদ্ধ যার উদ্দেশ্য হলোএকটি পূর্ণাংগ জনগোষ্ঠীকে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে নিশ্চিহ্ন করা। এইডস আধুনিক যুগের চুড়ান্ত সমাধান যার দ্বারা পশ্চিমা মেসন্সরা সমগ্র বিশ্বে তাদের অর্থনৈতিক ভাবে চুড়ান্ত কর্তৃত্ত্ব অর্জন করতে পারে। ফ্রি মেসন্সদের অর্থনৈতিক কর্তৃত্ত্ব অর্জনই শুধু যথেষ্ট নয়, বৈশ্বিক নেতৃত্বের চুড়ায় মেসনিক সরকার সমূহের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য তাদের প্রয়োজন অর্থনৈতিক কর্তৃত্বের পাশাপাশি নিরঙ্কুশ সামরিক কর্তৃত্ব অর্জন করা আর সেটা শুধুমাত্র সম্ভব জাতিসংঘকে ব্যাবহার করে, জাতি সংঘ শান্তিরক্ষী বাহিণীর মাধ্যমে তা করার চেষ্টা চলছে।
৯ম পর্ব
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় - ১ম পর্ব ( ছায়ার ভেতরে বসে)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়-২য় পর্ব ( রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অর্জন)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় -৩য় পর্ব ( মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৪র্থ পর্ব ( সাহিত্য ও চলচ্চিত্র)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়- ৫ম পর্ব ( মানবজাতির এলিয়েন তত্ত্ব)
বিশ্ব কিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় - ৬ষ্ঠ পর্ব (বৈশ্বিক নিরাপত্তা বাহিনী)
বিঃদ্রঃ লেখাটি আগে ভিন্ন নামে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু সিরিজটি সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। নতুন অনেক পাঠকের জন্য তাই পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
RELATED READINGS:
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন- ইহুদী? ফ্রী-মেসন? - শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-৩)
বিষয়: বিবিধ
১৯৪১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন